প্রণয়িনীর হৃদয়কোণে পর্ব-৭+৮

0
1958

#প্রণয়িনীর_হৃদয়কোণে
#আফসানা_মিমি
| সপ্তম পর্ব |
❌ কোনভাবেই কপি করা যাবে না।❌

পৃথিবীর সব গোবর তোর পায়ে পড়ুক সাদা কইতর। আসমানে উড়া সাদা বক পায়খানা করুক তোর গায়ে। আমার মতো ভোলা ভালা মেয়েকে দিয়ে কাজ করাচ্ছিস! তোর বউ তোর ঘার মটকাবে। শান্তিতে থাকতে দিবে না।

” আমাকে বকাঝকা করে লাভ নেই, আয়মান। দোষ করলে শাস্তি তো পেতেই হবে।”

” তোর মুখে পোকা ধরবে, সাদা কইতর।”

সাদা কইতর উচ্চ স্বরে হাসছে। যেন আমাকে শাস্তি দিয়ে প্রাণভোমড়া উড়ুউড়ু করছে। অভিশাপ দিলাম সাদা কইতর! তোর বউ তোকে সারারাত নাচাবে, কাকের মতো চিল্লিয়ে গান গাইতে বলবে।

দীর্ঘ এক ঘণ্টা যাবত লেকের পানি দিয়ে সাদা কইতরের জুতা পরিষ্কার করছি যেটা গোবরের উপর পড়েছিল। নির্দয় সাদা কইতর আমার মাথার এক বিনুনি ধরে টানতে টানতে এখানে নিয়ে আসে। আড়চোখে সাদা কইতরকে দেখছি। ছাই রঙের টি-শার্টে ছাই রাঙা কইতর লাগছে। মাথার লম্বা লম্বা চুলগুলো একটু পর পর পিছনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে আর আমার কাজ দেখে বাঁকা হাসছে। ইশ শরীরটা জ্বলে গেল সাদা কইতরের হাসি দেখে।

” এই যে ধোয়া শেষ। এখন যদি বলো যে পরিষ্কার হয়নি তাহলে ধাক্কা দিয়ে লেকের পেনিতে ফেলে দিব।”

রাগ কী শুধু সাদা কইতরেরই আছে? এই আয়মান তুবার নাই? অনেক সহ্য করেছি। একা অবলা মেয়েকে পেয়ে মানসিক অত্যাচার!

” রাগ হয়েছে বুঝি?”

এমনিতেও রাগ উঠেছে তারপর গা জ্বালানো কথা! সাদা কইতরের কাছাকাছি এসে কোমড়ে হাত রেখে বলি,

” রাগ হয়েছে। এখন কী রাগ ভাঙাবেন?”

” তোমার মতো টিকটিকির ছানার রাগ ভাঙাতে আমার বয়েই গেছে। জুতা পরিষ্কার হয়েছে। এবার আমি চলি। এই নাও আমার পক্ষ থেকে বকশিশ।”

হাতে একটা কাগজ গুঁজে সাদা কইতর চলে গেল। বকশিশের কথা শুনলেই খুশিতে চোখ চিকচিক করে। বকশিশ মানেই টাকা। তবে সাদা কাগজে টাকা বিষয়টা সেন্দহজনক। তাড়াহুড়ো করে কাগজ খুললাম। একটা এক টাকা দামের চকলেট সাথে কিছু লেখা। লেকের পাশের বেঞ্চে বসে পড়তে শুরু করলাম,

” দুষ্টুর রাণী আয়মান। আঁখিদ্বয়ের মায়ায় ডুবে গেছে এই মন। ”

একটা চকলেট দিয়ে মানুষ এমন কঠিন ভাষায় লিখে? সাদা কইতরের দ্বারাই এমন সম্ভব। আমি বাপু কঠিন ভাষা বুঝি না। আমার মনে,মস্তিষ্কে শুধু দুষ্টুমির বাস।
তবে সাদা কইতরকে তো এত তাড়াতাড়ি ছাড়ছি না এই দুই লাইনের মানে তো জিজ্ঞেস করতেই হবে। আর মনে আরেকটাপ্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে আর সেটা হলো, সাদা কইতর কি অন্যের দেওয়া চিঠি আমাকে দিয়ে দিয়েছে? না না তা হবে কেন, চিঠিতে তো সুন্দর করে আমার নাম লিখা। যাক গে। বাসায় চলে যাই। আজ একটা স্পেশাল জিনিস নেংটি কইতরের জন্য রেখেছি সেটা নিয়ে যেতে হবে তো!
—————-

বিকেলের ডুবো কিরণ চোখে এসে লাগছে। চারপাশ সতেজ লাগছে। চারপাশে কোন কোলাহল নেই। আজ নতুন হোটেলের সামনে ভীড় নেই। ম্যানেজার বসে মশা মাছি তাড়াচ্ছে। কর্মচারীরা মানুষদের ডেকে যাচ্ছে তাঁদের হোটেলে খাবার খেতে। আমরা সাধারণত নতুনত্বে আকর্ষণ বেশি। হোটেল যখন নতুন ছিল তখন অনেক মানুষের আনাগোনা ছিল কিন্তু এখন কিছুদিন যেতে না যেতেই পুরনো হয়ে গিয়েছে যেন।

হাতে কাঁচের বক্স নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। রাস্তা পেরোলেই সাদা কইতরের বাড়ি। এই বক্সে রয়েছে জলপাইয়ের আচার যা আমি গত সপ্তাহে বানিয়েছিলাম
শুনেছি নেংটি কইতরের জলপাইয়ের আচার খুবই প্রিয়। আমি শুধু বার্তা বাহকের মাধ্যমে শুনেই যাই। কিন্তু প্রতিবার যখন কিছু একটা তৈরি করে নিয়ে যাই তখন দেখি এটা আসলে তাদের পছন্দই ছিল না।

যাইহোক আজ যদি আচার দুই কইতর না খায় তাহলে সব আচার পেট মোটা আনারস আঙ্কেলের পেটে ঢুকিয়ে চলে আসব।
গলিতে ঢুকবো তখনই সেই মেয়েটা আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। যেই মেয়েটা সাদা কইতরকে চিঠি দিয়েছিল। আমাকে দেখে লম্বা সালাম জানায় এরপর লজ্জামুখে বলে,

” আপু কোথায় যাচ্ছেন, রাদের বাসায় বুঝি?”

এই মেয়েটার জন্য আজ আমি শাস্তি পেয়েছি। একে যদি আলু ভর্তা না বানিয়েছি তো আমার নাম তুবা না।
কোমড়ে হাত রেখে প্রত্যুত্তরে বললাম,

” হ্যাঁ রে শাকচুন্নি! তোর রাদকে পড়া পানি খাওয়াতে যাচ্ছি যেন তোর মত পেত্নীদের বোনের নজরে দেখে।”

” কি বললে আপু?”

কথা বুঝে না। কি করি বলুন তো? একে আমার স্টাইলে বলতে হবে।

” ওই পেত্নী, আরেকটা কথা বলবি তো তোর ঘাড় মটকে দিব। জানিস আমি কে? আমি হচ্ছি সাদা কইতরের বউ। সম্মান দিয়ে কথা বলবি। আর এই কথা যদি বাহিরে কাউকে বলিস তাহলে তোর সেদিনই শেষ দিন হবে। বুঝেছিস!”

মনে শান্তি তো সব শান্তি। মেয়েটাকে ইচ্ছেতো বকে এখন সেই আনন্দ লাগছে। আনন্দের সহিত নাচতে নাচতে সাদা কইতরের বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
বাড়ির ভিতরে ঢুকে প্রতিবারের মতো এবারও পেট মোটা আনারস আঙ্কেলকে সোফার উপর বসে থাকতে দেখতে পেলাম। আজকে পেট মোটা আনারস আঙ্কেল বই পড়ছেন।
পিছন গিয়ে ভাও করে উঠলাম। অবশ্যই পেট মোটা আনারস আঙ্কেল ভয় পেয়েছে। হাত থেকে বই ফেলে দিয়েছে। পেট মোটা আনারস আঙ্কেলের ভয় পাওয়া দেখে আমি খিল খিল করে হাসছি। এতে মনে পেট মোটা আনারস আঙ্কেল আরো ক্ষুব্ধ হয়ে যায়। আমাকে ধমকে বলে,
” এই মেয়েটা কেন যে আমার বাসায় আসে, বুঝি না।”

” এই পেট মোটা আনারস আঙ্কেল। তোমার প্রেশার ভালো হয়ে গেছে নাকি? দেখি তো তোমার হাতটা দাও মেপে দেখি এখন কি অবস্থা!

পেট মোটা আনারস আঙ্কেল ভয় পেলেন। মিনমিন করে কি যেন বলছেন। সেদিকে নজর দিলাম না। উনার হাতের দিকে হাত বাড়াতে নেওয়ার ছলে বলি,

” প্রেশার বাড়লে তো শুনেছি আচার খায়। আপনার মাথা তো আজীবন গরম থাকে। একটু আচার দেই! খাবেন?”

” এই পাজি মেয়ে! আমি কি বলেছি আমার প্রেশার মেপে দিতে? মাথা ঠিক আছে? নিজের কাজ করতে যাও।”

পেট মোটা আনারস আঙ্কেলকে ক্ষ্যাপাতে অনেক মজা লাগে।
” তুমি আমাকে বকছো পেটে মোটা আনারস আঙ্কেল? তুমি জানো আমি কত ভালো মেয়ে! তোমার জন্য আমি নিজের হাতে জলপাইয়ের আচার বানিয়ে নিয়ে এসেছি। আমি জানি তোমার হাই প্রেশার। আমার অত্যাচারে কয়েকদিন পরপরই সেটা বেড়ে যায়। এই নাও আচার খাও।”

পেট মোটা আনারস আঙ্কেলের মাথায় এবার আইস ব্যাগ লাগাতেই হবে। আগের থেকে আরো বেশি চিৎকার করে বলে,

” এখান থেকে যাবে ইতর মেয়ে! এই রাদের মা, এই মেয়েটাকে আমার কাছ থেকে সরাও তো। এই মেয়েটা যখনই আসে তখনই আমার প্রেশার বেড়ে যায়।”

মুখ ফুটে প্রেশার বাড়ার কথা বলেও আবার মুখ চেপে ধরে পেট মোটা আনারস আঙ্কেল। তা দেখে আমি হাসি চেপে রাখতে পারি না। আজ এই পর্যন্তই। আর পেট মোটা আনারস আঙ্কেলকে জ্বালাব না। এখন জ্বালাতন করব নেংটি কইতরকে।

এদিকে একবার সাদা কইতরের মায়ের অবস্থান দেখে নিলাম। বেচারী মহিলা একা একা কাজ করছে। কিছু না বলে চুপিচুপি নেংটি কইতরের ঘরের দিকে আগাচ্ছি। নেংটি কইতরের ঘর চেনির কারণ হল, এর আগেও আমি নেংটি কইতরের ঘরে নানান বাহানায় এসেছি, তাকে জ্বালাতন করেছি।
ছোট বাচ্চার ঘরে প্রবেশ করতে আবার অনুমতি প্রয়োজন হয় নাকি? না হয় না, ঠাস করে দরজা খুলে ঘরে প্রবেশ করতেই দেখতে পেলাম নেংটি কইতর প্যান্ট পরিবর্তন করছে। আমাকে দেখে আআআআআআ বলে চিৎকার দিয়ে ওঠে।

আমার প্রতিক্রিয়া ছিল একদম স্বাভাবিক। যেন একটা ছোট্ট বাচ্চাকে এক পোশাকে দেখেছি। আচারের বক্স হাতে নিয়ে বিছানির উপর আরাম করে বসলাম। নেংটি কইতর আতঙ্কে তখনো প্যান্ট পরিবর্তন করেনি। শুধু সামনে হাত দিয়ে কাঁচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বেচারাকে দেখে ভীষণ হাসি পেল। হাসি কোনরকম চাপিয়ে বললাম,

” আগে প্যান্ট তো পড়ে নে নেংটি কইতর! তোকে প্যান্ট ছাড়া একদম চেঙ্গিস খান লাগছে।”

আমার কথায় বেচারা বড্ড লজ্জা পেল। প্যান্ট নিয়ে একদম চলে গেল পর্দার আড়ালে। প্যান্ট পরে এসে বলে,

” তোমার মধ্যে কি ভদ্রতা বলতে কিছুই নেই। একজন ছেলের ঘরে আসতে হলে নক করে আসতে হয় জানো না?”

” ওরে আমার ছেলেরে? বড় ভাইয়ের পার্ট ধরিস আবার বড়ো কথা, তাই না! নাক টিপলে এখনো দুধ বের হবে আবার এখন সে বড়ো ছেলে হয়ে গেছে। তোর জন্য জলপাইয়ের আচার এনেছি। চেকে দেখতো কেমন হয়েছে?”

” ইয়াক। জলপাইয়ের আচার মানুষ খায় নাকি? আমার তো মিষ্টি পছন্দ। তোমাকে কে বলেছে আমার টক পছন্দ? আর তুমি বারবার এই টক জিনিসটা নিয়ে আসো কেন? একবার বাসি জিনিসটা নিয়ে আসো তো একবার ভালো জিনিস নিয়ে আসো। মিষ্টি আনতে তাহলে খেতে পারতাম।”

” ঐ নেংটি কইতর, তোমার টক পছন্দ না?’

” না তো! টক তো ভাইয়ার পছন্দ।”

নেংটি কইতরের কথায় ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেলাম। আমি জানি, টক সাদা কইতরের কিছুটা হলেও পছন্দ কিন্তু আমার বার্তা বাহক তো বলেছিল টক নেংটি কইতরের পছন্দ। তাহলে কি সে আমাকে ভুল বলেছিল? হয়তো, আমার ভাবনার মধ্যে নেংটি কইতর আমার পাশে এসে বসে। আমার মত বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে পা ঝোলাতে থাকে,

” তুমি কি ভাইয়াকে পছন্দ করো?”

যত বড়ো মুখ নয় তত বড়ো কথা! নেংটি কইতরের যত মাথা ব্যথা! প্রেমে পড়ব তাও আবার সাদা কইতরের? কখনো না। আমার কি মাথা খারাপ!

” মারিয়াকেও তো তুমি পছন্দ করো। আমি একবারও জিজ্ঞেস করেছি। মারিয়া শুনলে তোমাকে আস্ত রাখবে তো? দাঁড়াও আমি মারিয়ার আম্মুকে কল দিচ্ছি।”

মারিয়া হচ্ছে নেংটি কইরের তথাকথিত বন্ধু। এই বয়সে বাচ্চারা খুব আপডেট। বার্তা বাহক থেকে খবর পেয়েছি নেংটি কইতর তার ক্লাসমেট মারিয়ার সাথে একটু বেশি মেলামেশা করতে চায়। তার মানে সেখান থেকেই তাই এত কিছু শেখা।

” তুমি মারিয়ার কথাও জানো? আল্লাহ তুমি কি আমাকে শান্তি দিবে না।’

এইতো ব্যাটা লাইনে এসেছ! এটাই মোক্ষম সুযোগ নেংটি কইতরকে আমার দলে নিয়ে আসার। একটু ভাব ধরে বললাম,

” আমার দলে চলে আসলে তোমার সব কথা আমার পেটের ভেতরে গোপন থাকবে। বল আসবে?”

নেংটি কইতরের হাসিমাখা মুখখানা মলিন হয়ে গেল। মুখখানা একটুকু করে আমাকে উত্তর দিল,

” আজ থেকে আমি তোমার দলে। তুমি যা বলবে তাই হবে।”

সুযোগ পেয়ে গেলাম। সাথে সিথে সদ্ব্যবহার করতেও চলে আসলাম। হামিকে সাথে নিয়ে চুপিচুপি সাদা কইতরের ঘরে প্রবেশ করলাম। আজ এই প্রথম আমি সাদা কইতরের ঘরে প্রবেশ করেছি।
অন্যবার অবশ্য ঘথে প্রবেশ করবই বা কি করে? আমি যতবারই আসি ততবারই সাদা কইতর বাসায় থাকে। আমি বুঝি না, একটা ছেলেমানুষ এত বাসায় থেকে কি করে? কিন্তু সে তো খেলতেও যায়। খেলার সময় তো আমি তাকে কে জ্বালাতন করি। আচ্ছা সেসব চিন্তা বাদ দিই। সাদা কইতর পাশে নেই এটাই সুযোগ। গোয়েন্দাগিরি শুরু করলাম। বাহ খুব সুন্দর পরিপাটি ঘর। আমি মেয়ে হয়েও এত গোছাতে পারিনা। টেবিলের উপর একটা সুন্দর চশমা দেখতে পেলাম ওটা ধরতে নিলি নেংটি কইতর বলে উঠে,

” ভুলেও চশমাটা ধরিও না। এ চশমা ভাইয়ার খুব পছন্দের। আমাকে ধরতে দেয় না।”

” ওরে আমার নেংকটি কইতর! তুই তো ছোট মানুষ, এজন্য তোকে ধরতে দেয় না কিন্তু আমি তো বড়ো মানুষ, আমি ধরলে কিছুই হবে না। এ দেখ আমি চশমাটা খুলে নিলাম, মুছে নিলাম ,এরপর চোখে পরলাম। কেমন লাগছে আমাকে?”

নেংটি কইতরের মাথায় হাত বারবার সাবধান করছে যেন আমি চশমাটার কোনো ক্ষতি না করি। বলে না! যে জিনিসটা নিষেধ করা হয় সে জিনিসটা ঘুরে ফিরে ঘটে যায়। আমার বেলাও তাই হয়েছে। চোখ থেকে চশমা খুলতে গিয়ে ঠাস করে জমিনে ফেলে দিলাম।

বেচারা নেংটি কইতর এবার কেঁদেই দিল। নাক টানতে টানতে বলল,
” আজ তোমার রক্ষা নেই দুষ্টু মেয়ে। এতক্ষণে ভাইয়ার কাছে এই কাজের কথা পৌঁছে গিয়েছে। ভাইয়ার ঘরে কেউ প্রবেশ করেছে যে তো সিসিটিভি ক্যামেরার সাহায্যে দেখে নিল। তুমি এমন অকাজ করেছ! ওই যে দেখো তোমার মাথার উপর সিসিটিভি লাগানো।”
ঘরের কোনায় তাকিয়ে দেখতে পেলাম সত্যি সত্যি সিসিটিভি ক্যামেরাযুক্ত করা হয়েছে। এবার সত্যি সত্যিই ভয় পেলাম। পিছনে যেতে যেতে একদম দেয়ালের সাথে লেগে গেলাম। এবার আমার কি হবে! আমাকে কে বাঁচাবে, পরপর শুনতে পেলাম কলিংবেলের আওয়াজ। চলে এসেছে সাদা কইতর চলে এসেছে

চলবে…….

#প্রণয়িনীর_হৃদয়কোণে
#আফসানা_মিমি
| অষ্টম পর্ব |
❌ কোনভাবেই কপি করা যাবে না।❌

সারা ঘর জুড়ে পায়চারি করছি। আমার সিদ্ধান্তে আমাকে অটুট থাকতেই হবে। কিন্তু আমার কিউট পিউট ঘরবাড়ি ছেড়ে কীভাবে দূরে চলে যাই! আফসোস! আমাকে যেতেই হবে। নয়তো সাদা কইতর আমাকে পেলে কাচ্চা চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে। আমি ঘর বাড়ি ছেড়ে বনবাসে চেলে যাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করেছি। কারণ অবশ্যই আছে! সাদা কইতরের চশমা ভেঙেছি। হয়তো এতক্ষণে জেনেও গিয়েছে। ভাগ্যিস তখন নেংটি কইতরের বন্ধু এসেছিল। গেইটের আওয়াজ শুনে তো আমার প্রাণ ভোমরা উড়ে যাওয়ার অবস্থা হচ্ছিল। নেংটি কইতর আমাকে রেখেই ভয়ে ঘরে থেকে বের হয়ে গিয়েছিল। ভাগ্যিস তখন নেংটি কইতরের বন্ধু এসেছিল। আমি তো পালিয়ে আসি। চশমা ভেঙে আমি তখন দাঁত দিয়ে নখ কে’টে ভাবছিলাম কী করব! অবশেষে আমার বিখ্যাত কাজ করতে আসতে হলো। সাদা কইতরের টেবিলের উপর থেকে একটি খাতা বের করে লিখে দিয়ে আসি,

” তোমার সাদা চশমা ভেঙেছি আমি,
এবার আমাকে কি করবে শুনি!
সাদা কইতর পরবে কালা
দেখতে লাগবে আস্ত ভালা
ও সাদা কইতর!
বকবে আমায়?
আমি না তোমার একমাত্র আয়মান!”

এত সুন্দর কবিতা নির্দয় সাদা কইতরের পছন্দ হয় না। ঠিকই আমাকে শাস্তি দিতে চলে আসে। আজকে সেই সুযোগ দিব না। বাবাকে ফোন করেছি। লিজা অসুস্থ মিথ্যা বলে এই সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়েছি। আগামী একমাস লিজার বাসায় থাকব।
ভুলেও সাদা কইতরের সামনে পড়ব না। লোকচক্ষুর আড়ালে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসলাম। রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাড়ির দিকে ফিরে টলমল চোখে বললাম,

” তুমি ঘুমাও, শান্তিতে থাকো। আমি যাই। বিদায়, বিদায়।”

অনেকেই আমাকে পাগল বলবে। কিন্তু কেউ তো জানে না, আপনভূমির মায়া যে অনেক। নিজ বাড়ি, নিজ ঘরে ঘোরাফেরা করার মতো শান্তি কোথাও নেই।
একটা রিকশা ডেকে উঠে পড়লাম। নিজাকে এখনো জানাইনি যে আমি তাদের বাসায় যাচ্ছি। ব্যাপার না, ব্লেকমেইল করে থাকতে পারব।
রাতের শহর দেখতে ভীষণ ভালো লাগে। শা শা করে একটার পর এক গাড়ি চলে যাচ্ছে সুদূরে। বাওআসের ঝাপটা গায়ে লাগতেই শরীর শিরশির করে উঠছে। কিছু পথ এগোতেই কর্ণধারে একজন রমণীর স্বর ভেসে আসে,

” তুমি আমার পরাণের পরাণ। তোমারে ছাড়া আমার নিশ্বাসই চলে না।”

দগ্ধ ভালোবাসার কথন! পাশ ফিরে তাকালাম। ওমা! এই যে মইনুল আঙ্কেল। পাশে কে? মইনুল আঙ্কেলের বউ নয় তো? তাদের মাঝে সব ঠিকঠাক হয়েছে! ভালোভাবে তাকিয়ে দেখলাম পাশের রমণীটি অন্য কেউ। রিকশা ওয়ালা মামাকে থামাতে বললাম। ভাড়া পরিশোধ করে সেদিকে এগিয়ে গেলাম। আমি আবার ভীষণ কৌতূহলী। একটা বিষয়ে পরিপূর্ণ না বুঝলে মাথা কিলবিল করে। আড়পেতে শোনা খারাপ অভ্যাস কিন্তু আমি তো তুবা! তুবাকে কে কী বলবে? শুনতে পাচ্ছি মহিলাটা আবার বলছে,

” তোমারে আমি অনেক বছর আগে থেকেই ভালোবাসি। কিন্তু আমি মোটা দেখে তোমার সামনে যাইতাম না।”

ভালবাসা প্রদান হচ্ছে এদিকে অপরজনের কোন সাড়াশব্দ নেই। ব্যাপারটা একটু কষ্টকর। আমার ভাবনার মাঝেই মইনুল আঙ্কেলের ক্রন্দনরত স্বর শোনা যায়,

” আমিও তো মোটা। আমার বউ মুটা দেখে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।”

আহারে দুই প্রেমিক যুগলের প্রেমময় কথন শুনে কষ্ট লাগছে।
” তোমার বউ তো তালাক চায়। আমাকে বিয়ে করবা?”

সর্বনাশ! বিয়ে পর্যন্ত চলে গেছে! এবার কি হবে। মইনুল আঙ্কেল আবারও কি একই ভুল করবে? আমার কাছে মনে হয় বিয়ে মানেই ভুল। কোন স্বাধীনতা নাই।
এরা যা ইচ্ছে করুক। আমি বরং কিছু খেয়ে নেই।
এক হাতে চিপ্স আরেক হাতে এক লিটারের কোকাকোলার বোতল। হাঁটছি আর খাচ্ছি। আহা কি স্বাদ! ইচ্ছে করছে চিপ্স কোকাকোলার ভিতর ঢুকিয়ে নরম করে খেতে। রাস্তায় তো আর সম্ভব না! লিজার বাড়িতে গিয়ে মনের এই আশা পূরণ করব।
কেন যেন মনে হচ্ছে আমাকে কেউ ফলো করছে। পিছনে অনেকবার তাকিয়েছি কিন্তু কেউ নেই। যা ইচ্ছে হোক তাতে আমার কি?

লিজার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। দুই তিনবার কলিং বেল বাজিয়েছি। কেউ খুলছে না। আরেকবার সুইচে চাপ দিব তখনই দরজা খুলে যায়। লিজা হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে। আমি খুব করেই জানি লিজা জোর করে হাসছে। একটু স্টাইল করে লিজাকে জড়িয়ে ধরলাম।
” বান্ধবী! চলে এসেছি। তোর বাসায় এক মাসের জন্য। যা আমার জন্য চা নাস্তার ব্যবস্থা কর।”

বন্ধুর বাড়িতে নিজের দাপট। একেই বলে, চোরের মার বড়ো গলা। ডাইনিং টেবিলের উপর থেকে একটি গ্লাস কোকাকোলা নিয়ে নিলাম। চিপ্সের প্যাকেটে বেঁচে থাকা চিপসগুলো গ্লাসে ঢেলে সুন্দর করে নাড়াচাড়া করে নিলাম। ব্যাস আমার স্পেশাল খাবার তৈরি।
আজ এটা দিয়েই আমার ডিনার হবে।

লিজা মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। থাকবেই না কেন? তার ঘর আমি দখল করে কবরখানা বানিয়ে রেখেছি যে! সাউন্ড বক্স ছেড়ে নাচছি। গান চলছে,
“মে তেরা বয়ফ্রেন্ড তু মেরা গার্লেফ্রন্ড
নো মেনু কেন্দি না না না”

এত সুন্দর গানটা আমার গলায় গেয়ে আরো সুন্দর হয়ে যাবে। গানটার দ্বিতীয় লাইন জোরে জোরে গাইছি,
” খাঁড়া আজ তোর ঠ্যাং ভাঙ্গি
জীবন করমু ত্যানা ত্যানা
সাদা কইতরের চশমা কিনে দিমু
তাহলে আর লুকাতে হবে না।
লা লা লা লা লা লা লা লা”

” তুবা সাউন্ড বন্ধ কর। প্রতিবেশীরা সবাই বকতেছে।”

লিজার কথায় পাত্তা দিলাম না। সাউন্ড আরো বাড়িয়ে গান শুনছি। আমার এমন করার পিছনে কারণও আছে। আমার ক্লাসমেট রুমা। বাড়ি পাশের গলিতে। লিজা তার বাড়িতে গিয়ে সারাদিন থেকেছিল। রুমা মধ্যবিত্ত। তার বাবা যা আয় করে সংসার এবং রুমার পড়াশোনার পিছনে খরচ হয়ে যায়। লিজা সেবার রুমার বাসায় গিয়ে বাড়ির সকলকে কাজের লোকেদের মতো খাটিয়েছে। রুমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছিল। সাদা কইতরের হাত থেকে বাঁচার এবং লিজাকে উচিত শিক্ষা দিতে আজ আমার এখানে আসা।

সাদা কইতরের কথা বলায় মনে পড়লো। সাদা কইতর বাসায় এসে যখন দেখল তার চশমাটা ভাঙ্গা তখন তার রিএকশন কেমন ছিল? আমাকে পেলে কি করত? নিশ্চিত আমাকে জবাই করে ফেলতো। নেংটি কইতর তাই তো বলল। আমি এখানে এসেছি সাদা কইতর টেরই পাবেনা। আন্দাজও করতে পারবেনা।

আমি জানি সাদা কইতর আজ রাতে সেদিনের মতো রাতের আঁধারে আমার বাসায় যাবে। গিয়ে দেখবে বিছানার উপর তুবার পরিবর্তে কোলবালিশ হা হা হা। আমি কত চালাক মেয়ে। সবাইকে বোকা বানাতে পারি। বিশেষ করে সাদা কইতরকে।

সাউন্ড বক্স বন্ধ করে দিয়েছি। এখন আমি গানের প্র্যাকটিস করব। তিন নিশ্বাসে পানি পান করে গলাটাকে একটু ভিজিয়ে নিলাম এরপর শুরু করলাম গানের প্র্যাকটিস,

” তুমি কাছে আসলে
শয়তান নাড়ে আমাকে
তুমি তো জানো না
সাদা কইতর ভাল না।
ও সাদা কইতর রে
যা যা তুই উড়াল দিয়া যা!”

” সাদা কইতর ভাল না কিন্তু সাদা কইতরের জিনিসপত্র খুব ভাল। তাই না আয়মান?”

মনে হচ্ছে ভুল শুনছি। কানে মিথ্যা কোন স্বর এসেছে। আবারও গান গাইতে শুরু করলাম,

” ওই ব্যাটা কেডা
আমার এসে জ্বালা।
আমি যদি রাগি রে ভাই,
ছাড়ব না তোমায়।”

” ছাড়তে হবে না মিস আয়মান তুবা। আপনাকে ধরে বেঁধে তুলে নেওয়ার জন্যই আমি এসেছি। বাবার কাছে মিথ্যা বলে আসা, তাই না! কি যেন বলেছিলে, গ্রুপ স্টাডি করতে এসেছ কিন্তু আমি তো এখানে দেখছি অন্য কিছু। গ্রুপ স্টাডির পরিবর্তে এখানে তো গানের স্টাডি হচ্ছে। তাও সুর ছাড়া গান।”

একটু আরাম করে বসে ছিলাম তা আর হলো না। বসা থেকে বাংলা সিনেমার নায়িকাদের মত উঠে দাঁড়ালাম। ভয় পেলাম বটে! আমার সামনে যে সাদা কইতর দাঁড়ান।
” সাদা কইতর কীভাবে জানলে আমি এখানে?”

আমার মত ইনোসেন্ট মেয়ে পৃথিবীতে একটাও নেই। ঠোঁট টাকে ভোঁতা, চোখগুলোকে ছোট ছোট করে পিটপিট করে সাদা কইতরকে দেখছি। তখনই সাদা কইতর পিছনে ফিরে কাকে আসতে যেন ইশারা করে। আবরারের ডাব্বা এখানে কি করছে? সাদা কইতর আবদারের ডাব্বার দিকে ইশারা করে আমাকে বলল,

” ইনি যদি আজকে তোমাকে অনুসরণ না করতো! তাহলে জানতেই পারতাম না যে,তুমি আমার চশমা ভেঙে এসে এখানে লুকিয়েছ।”

” আমি লুকাই নাই। বান্ধবীর বাসায় দাওয়াত খেতে এসেছি।”

সাদা কইতর এতক্ষণে লিজার দিকে তাকাল কিন্তু সেদিকে তেমন পাত্তা দিল না। ব্যাপারটা হাস্যকর।
” দাওয়াত খেতে আসলে মানুষ ঘরের অবস্থা এমন করে? আর এসব কি গাইছো?”

” তুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছো সাদা কইতর। শুধু আমার না, আমার গানের অপমান করছো। তুমি জানো? আমার কণ্ঠস্বর কত ভাল। আমার কণ্ঠস্বর শুনে রাস্তার সকল মানুষের জড়ো হয়।”

” ওরা মানুষ না! গাধারা এসে জমা হয়।”

” উফ ভালো লাগেনা। সেখানে সে সেখানেই চলে আসে।”

” সারা জীবন সাদা কইতরের সাথেই থাকতে হবে।”

সাদা কইতরের সাথে কথায় পারছি না। আজকাল ঝগড়াও যখন তখন আসতে চায় না। মনে হয় ঝগড়া মামা বাড়ি সময়ে অসময়ে চলে যায়। লিজা দেখলাম দরজার কাছটায় দাঁড়িয়ে আছে। তার দৃষ্টি সাদা কইতরের উপর। যেন সাদা কইতর কোন মিষ্টির ছানা দেখেই লোভ হচ্ছে। সুযোগ পেলেই টুপ করে গিলে ফেলবে। লিজার দিকে রাগাশ্রিত চোখে তাকি বললাম,

” লিজা তোর বাপ মা বাসায় নাই রে! দুই দুইটা ধামরা ছেলে যে তোর বাসায় এসে প্রবেশ করেছে তুই কিছু বলবি না?”

লিজা কিছু বলবে তার আগেই সাদা কইতর এসে আমার কান মলে ধরে। আমি আহ করে চিৎকার করছি। সাদা কইতর কান ধরে টানতে টানতে বাড়ির বাহিরে নিয়ে যায়। আমি এত করে চিৎকার করে বলছি,
” কান ধরবেন না। আমার হাত ধরেন। চলেন একসাথে পথ হাঁটি।”
কিন্তু সাদা কইতর আমার কথা শুনছেই না। সকলের সামনে ভরা রাস্তা দিয়ে আমাকে কানে ধরে নিয়ে যাচ্ছে বাড়ির দিকে।

সাদা কইতরেরদিকে কটমট চোখে তাকাচ্ছা। হাতে যতটা পারছি চিমটি কাটছি। কিন্তু এই হাতির বাচ্চা আমাকে ছাড়ছেই না। অবশেষে সাদা কইতরের উদ্দেশ্যে বললাম,

” এই হাতির বাচ্চা, ছাড় আমাকে?”

চলবে…….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে