#প্রণয়িনীর_হৃদয়কোণে
#আফসানা_মিমি
|তৃতীয় পর্ব |
❌ কোনভাবেই কপি করা যাবে না।❌
” আমার মতো বিশ্বভদ্র মেয়েকে শাস্তি দিতে একটুও বুক কাঁপছে না সাদা কইতর?”
” মাথা কাঁপছে রাগে। ইচ্ছে করছে তোমাকে মেরে তক্তা বানিয়ে ফেলি। সাহস তো কম না, এই ফায়রাজ রাদকে তুমি জনসমক্ষে থাপ্পড় মারো?”
ছলছল চোখে নাক টানছি। আমার যে কান্না করা মানা। সাদা কইতরকে জনসমক্ষে থাপ্পড় মেরেছি বলে সে প্রতিশোধ নিচ্ছে। তবে সেটা তার স্টাইলে। এলকার সবচেয়ে ভয়ংকর গলিতে এনে দাঁড় করিয়েছে তাও কানে ধরে। বলছে, ‘উঠো আর বসো’ এটা করা যায়! তাও আবার আমার মতো বড়ো মেয়ে! একাকী শাস্তি দিবে নিয়ে এসেছে। উল্লিখিত উক্ত গলিতে সচরাচর কেউ আসে না। হাতে একটা ইয়া মোটা ক্রিকেট খেলার ব্যাট নিয়ে অগ্নিরুপ ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছে। উঁকি দিয়ে ঠিক দেখতে পাচ্ছি সাদা কইতরের চ্যালারা অদূরে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছে যেন এপাশে কেউ আসতে না পারে।
” ও সাদা কইতর।”
আমার ডাকে সাদা কইতর আরো ক্ষেপে যায়। হাতের ব্যাট তাক করে বলে,
” আমার একটা সুন্দর নাম আছে। ফায়রাজ রাদ সেই নামে আজ থেকে ডাকবে।”
” হ্যাঁ হ্যাঁ সাদা কইতরের নাম যে সাদা কইতর তা আমি জানি। আমি তো সেই নামেই ডাকি। সাদা কইতরকে নিয়ে আমি কতশত কবিতা লিখি। একটা শুনাই?
জবাবের অপেক্ষায় না থেকে আমার বানানো স্পেশাল কবিতা বলা শুরু করলাম,
” সাদা কইতর, সাদা কইতর
রাগে ম’রে মাসে বছর।
একা পেলে আমাকে,
সারাদিন শুধু বকে।
আহা! আমি নিষ্পাপ
কিন্তু সে জমের বাপ
রাগ থাকে নাকের আগায়
ও সাদা কইতর তুই বান্দরের ফাদার।”
আমার এত সুন্দর কবিতা শুনে সাদা কইতরের মাথা আরো গরম হয়ে গেল। হাতের ব্যাট জমিনে ফেলে দাঁড়িয়ে রাগে মাথার চুল ধরে টানতে লাগল। এটাই মোক্ষম সুযোগ পালানোর। কান ছেড়ে জুতা হাতে নিয়ে পা টিপে টিপে পিছনের রাস্তায় নেমে ভোঁ দৌড়।
বাড়ির সামনে এসে দৌঁড় থামিয়ে দেই। পিছনে ফিরে দেখে নিশ্চিত হই সাদা কইতর আছে কি নেই। নাহ! সাদা কইতর বা তার চ্যালারা কেউ নেই। জান বেঁচে ফিরে এসেছি। জমের মুখের সামনে থেকে ফিরে এসে নিজেকে গর্ভবতী মনে হচ্ছে। আনন্দে গান গাইতে ইচ্ছে করছে তাও আবার সাদা কইতরকে নিয়ে। আমার সেই ঐতিহাসিক গান গাইতে গাইতে বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়লাম।
” ও আমার সাদা কইতররে,
যা যা তুই উড়াল দিয়া যা!”
———————
রাতে পড়তে বসেছি। আমার পড়ার সময় রাত আটটা থেকে শুরু হয় আর শেষ হয় দশটায়। খুব মনোযোগ সহকারে পড়ি। আজ সকালে বাবাকে বলতে শুনেছি, আমার ইন্টার পরীক্ষার পর আমাকে নাকি বিয়ে দিয়ে দিবে। শুনে এত অবাক হয়েছি যে, আমার মুখ ইয়া বড়ো হা হয়ে যায় এতোই বড়ো যে একটা আস্তো কইতর ঢুকতে পারবে। ইয়া আল্লাহ্ এসব কী বলি! কইতর আবার মুখের ভেতর ঢুকবে কীভাবে। কইতরের বলায় সাদা কইতরের কথা মনে পড়লো। আজ কী কাণ্ডটাই না ঘটালাম। জনসমক্ষে সাদা কইতরের গালে চড় মেরেছি! অনুশোচনায় তো এখন কলিজা ফেটে যাচ্ছে। যাই হোক একটা চিঠি লিখে সাদা কইতরকে সরি বলে দেই। তার আগে আমার বিয়ের কথা শোনার পর আমার মনে অভিব্যক্তি প্রকাশ করি! এখন থেকে নিয়ত করেছি অনেক পড়বো ইন্টারে পাশ করব। পাশ না করলে তো আবার পড়তে হবে তাহলে আমার আর বিয়ে করা হবে না! না না না পড়বো। তার আগে চিঠি লিখব,
প্রিয় সাদা কইতর,
তোমাকে দেখে মনে হয় গাছে ঝুলে থাকা লাল টকটকে পাকা মরিচ। তোমকে কামড় দিতে প্রয়োজন হবে না, তোমার থেকে দশ হাত দূরে দাঁড়ালেই ঝাঁঝ বের হবে। সাদা কইতর, তোমার চোখ কয়টা? মনে হয় ছয়টা। এজন্যই তো আমার ভালো ভালো কাজ তোমার চোখেই পড়ে। তুমি জানো! তোমাকে দেখতে সাদা কইতরের মতো লাগে! আমি তো ভাবছি আমাদের ছাদে কইতর পালবো। সেখানে তিনটি বড়ো ঘর আরেকটি বড়ো ঘর তোমার জন্য বানাবো। একটিতে তুমি থাকবে আর বাকী তিনটিতে তোমার সহচরীরা। হে হে দারুণ হবে।
সাদা কইতর, তোমার ডানাতে একদিন ঘাপটি মেরে বসবো। তারপর বলবো, ‘উড়ে যা সাদা কইতর দূর আকাশে উড়ে যা।’
কলম চলছে না। ঘুম আসছে। দেয়াল ঘড়িতে সময় দশটার কাঁটায়। তাইতো আমার ঘুম পাচ্ছে! চিঠিতে যা লিখেছি পড়ে নিজেরই হাসি পাচ্ছে। আমি নিশ্চিত এই চিঠি সাদা কইতর দেখলে রাগ কমার পরিবর্তে আরো বেড়ে যাবে। পেইজ উল্টিয়ে এবার সুন্দর ভদ্র ভাষায় লিখলাম,
প্রিয় সাদা কইতর,
তুমি জানো! খোলা ডায়েরিটা আজ কালিহীন। কলম চলছেই না তুমিহীন! তোমায় জানাই নতুন সম্পর্কের শুভেচ্ছাবার্তা। ক্ষমা চাইবার আর্তনাদ মন করছে। সব ভুলে আমায় কী কবুল করবে?
ইতি,
আয়মান তুবা
বই খাতা না গুছিয়েই বিছানায় শুয়ে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালাম।
সকাল আটটা। কলেজ ড্রেস পরিধান করে তৈরি হয়ে নিয়েছি। এবার চিঠিটা ভাঁজ করে ব্যাগে ঢুকিয়ে নিব। খাতা খুলতেই দুইটা চিঠির কথা মনে পড়ে। খাতা থেকে দুইটা পেইজই ছিড়ে ভাঁজ করে নিলাম। যেই চিঠি সাদা কইতরকে দিব সেটা ব্যাগের উপরের ছোট পকেটে রেখে দিলাম। আজ লুকিয়ে নয়! বুক ফুলিয়ে, পা নাচিয়ে ভাইয়ার ঘরের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। ভাই আমাকে বলে আমি নাকি পড়া চোর আজ যে কলেজের পোশাক পরিধান করে তার ঘরের সামনে দিয়েই যাচ্ছি দেখে না! ভাইয়াকে দেখতেই হবে যে আমি পড়াশোনা করি তাই আবারও ভাইয়ার ঘরের সামনে দিয়ে হেঁটে গেলাম। নাহ্ ভাইয়ার কোন খবর নাই। এভাবে তিনচারবার ঘোরাফেরা করার পর পিছন থেকে কেউ এসে আমার কান মলে ধরে। তাকিয়ে দেখি তুরান ভাইয়া। জিহ্বা কেঁটে বড়ো একটা সালাম জানাই।
” আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।”
ভাইয়া অবাক সাথে চিন্তিত। ভূত প্রেতের নজরে আবার পড়িনি তো! আমার মতো ভদ্র বাচ্চা সালাম দিচ্ছে। কাজটা কী ভুল?
” আজ হঠাৎ বড়ো ভাইকে সালাম? কি লাগবে?”
” আমি বড়ো হয়েছি দিনদিন তা খেয়াল করেছো?”
” বড়ো হলে আদর কমে যায় নাকি?”
” পোড়া কপাল! আমার কথার মানে তুমি বুঝো নাই? আমি বলেছি আমি বড়ো হয়েছি বিয়ের ব্যাপারে চিন্তা করো। তুমি কিছু করো নয়তো আমি একাই সব করব।”
তুরান ভাইয়ার মাথায় হাত। চিৎকার করে বাবাকে ডাকছে
” বাবা! তুবা দেখো আবার উলটা পালটা কাজের চিন্তা করছে।”
বুঝেছি এখানে থাকা ঠিক হবে না। নিজের জান বাঁচাতে হলে পালাতে হবে। ভাইয়ার কাছ থেকে সরে গিয়ে খাবারের টেবিল থেকে দুইটা আপেল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলাম।
সকাল আটটা পাঁচ বাজে। সাদা কইতর এখনই এই পথে আসবে। আমার বাড়ির নিচে এসেই প্ল্যানের গতিতে দৌড় দিবে। কিন্তু আজ তো আমার পরিকল্পনা পরিবর্তন করেছি। আজ কোন জ্বালাতন না। আজকে আমি তিন মাথার মোরে দাঁড়িয়ে রয়েছি। যেখান থেকে আমাদের বাড়ি স্পষ্টত দেখা যায়। আমার ধারণাই সঠিক। আমাদের বাড়ির নিচ দিয়ে আসার সময় কইতরের মতো উড়ে উড়ে চলে আসে। এজন্যই তো আমি সাদা কইতর ডাকি।
এদিকে উওর পাশ থেকে লোকজন দৌঁড়ে ছুটে ভাগছে। কাহিনী কী? জটিল কিছু নয়তো? জটিল হলে আজও কলেজ মাফ দিব। ব্যাগের ফিতা দাঁত দিয়ে এক প্রকার চিবাচ্ছি। পিছনে মানুষের আনাগোনা। সকলের নাকে রুমাল। একসাথে সবাই জামাই সেজে গেল নাকি? ছেলেরা সেজেছে ভালো কথা, মেয়েদের কী হলো!
একজন পথচারীকে ধরে জিজ্ঞেসই করে বসি,
” কি হয়েছে গো? কোথাও আগুন ধরেছে কী?”
সেই মানুষটা কিছু বলতে পারল না তবে পাশ থেকে আমাদের পাড়ার একজন ঠিকই বলে ফেলল,
” মইনুল টেস্টি হজমী খেয়ে রাস্তায়ই সব হজম করে ফেলেছে।”
” কাম সারছে!” অপরজন শুনে বলে,
” হজমী একসাথে বিশটা খেয়ে এই অবস্থা, শুনেছি পঞ্চাশটা কিনেছিল বিশ্ব রেকর্ড করবে বলে। তা আর হলো না। এর আগেই কাম তামাম।”
এমন কষ্টমাখা কথা শুনলে না হেসে পারা যায়? এই পথে আর যাওয়া হবে না। অন্য পথে যাব। আমি জানি সাদা কইতরও ঐ পথ ধরবে।
আমরা শহরে থাকি। রাস্থার দুই বাঁক নিলেই স্কুল,কলেজ, ভার্সিটি। আগে আমার কলেজ তারপর সাদা কইতরের ভার্সিটি। ভাবছি কলেজে ঢোকার আগে সাদা কইতরকে চিঠি দিয়ে চলে যাব।
সাদা কইতরের জানের জিগার বন্ধু আবরার। আমার দুই চক্ষের দূরবর্তী শত্রু। সবসময় সাদা কইতরের পিছনে ঘুরঘুর করবে আর আমাকে দেখলেই মেয়েদের মতো পিছনে লেগে থাকবে। ঐ যে সামনেই দেখতে পাচ্ছি। কুঁড়িটা দাঁত বের করে হেসে এগিয়ে আসছে। সাদা কইতরের এখনো আমার অনেক পিছনে। সামনে গেলে বাঘ পিছনে চলে আসলে কইতর। আমি সাদা কইতরকেই বেছে নিলাম। সামনে না এগিয়ে পিছনে দৌড় লাগালাম। আমি জানি আবরারের ডাব্বা থমকে দাঁড়িয়ে ভাবছে কি হলো।
সাদা কইতরকে দূর থেকে দেখতে পাচ্ছি। পাশে একজন সুন্দরী রমণীর সাথে হেসে কথা বলে হাঁটছে। কেন যেন হিংসা হলো। আমার সাদা কইতরের সাথে শুধুমাত্র আমিই কথা বলব। এই পোকা, বিচ্ছু কোথায় থেকে আসে!
সাদা কইতরের সামনে গিয়েই দৌঁড় সমাপ্ত করলাম।চিঠি অনেক আগেই হাতে নিয়েছি। আমাকে আকস্মাত এভাবে দৌড় স্টপ করা দেখে দুজনেই থমকে দাঁড়ায়। হাঁপাতে হাঁপাতে কথাও বের হচ্ছে না। খুব কষ্টে চিঠি সাদা কইতরের হাতে দিয়ে বললাম,
” সাদা কইতর, নেও তোমার চিঠি। আমি চললাম। বিকালে নেংটি কইতরকে নিয়ে মাঠে এসো। চালতার পায়েস খাওয়াব।”
আর অপেক্ষা করলাম না। চলে আসতে নিলেই পাশের মাইয়া ভ্যাঁ করে উঠে। ন্যাকামি ভরা কণ্ঠস্বরে বলে,
” এই মেয়ে কে? আর সাদা কইতর কে? আর চিঠি কাকে দিল?”
রাগে শরীর ফেটে যাচ্ছে। কেন ফাটছে নিজেও জানি না। পিছনে ফিরে মেয়েটাকে ভেংচি কেটে প্রত্যুত্তরে বললাম,
” তোর আঙ্কেলকে দিয়েছি রে রা’ক্ষ’সী।”
ধেই ধেই করে সেখান থেকে চলে আসলাম। সামনে আবারো আবরারের ডাব্বার সাথে দেখা। আমাকে কিছু বলবে তার আগেই বললাম,
” চেইন আটকান।”
আবরারের ডাব্বা প্যান্টের চেইন ধরতে নিচ্ছিল। আমার হাসি চলে আসে। দৌড়ে কলেজে প্রবেশে পূর্বে চিৎকার করে বলে আসি,
” আহাম্মক, ব্যাগের চেইন খোলা।”
—————-
কলেজে আমার প্রাণের বান্ধবী কেউ নেই। তবে নিকটবর্তী বান্ধবীর মধ্যে লিজা একজন। দেখতে সুন্দরী তবে সেটা আটা ময়দার অবদানে। আমাকে দেখেই ঝাঁপিয়ে পড়ে।
” তুই এসেছিস রে!”
” না তোর সতিন এসেছে। বেশি বলবি না। নয়তো তোর চুল আবার কাটার ব্যবস্থা করব।”
আমার এক কথাতেই লিজা ঠিকঠাক হয়ে বসলো। লিজার চুলে একদিন সেন্টারফ্রুট লাগিয়ে দিয়েছিলাম। কারণও ছিল! সেদিন আমাকে আফগানিস্তানের ঝোপ ডেকেছিল। আমার মাথার চুল নিয়ে হাসি মজা করেছিল তাইতো মিষ্টি প্রতিশোধ নিয়েছি।
আগের কথা চিন্তা করে ব্যাগে হাত ঢুকালাম। এক নাম্বার চিঠি নাই। সারা ব্যাগ ঝেড়েও কিছু পেলাম না। শেষে ব্যাগের ছোট পকেটে হাত দিতেই আসল চিঠি খুঁজে পেলাম। তারমানে আমার প্রথম চিঠি সাদা কইতরের হাতে। এখন আমার কি হবে!
কলেজের জানালা দিয়ে রাস্তায় উঁকি দিলাম। সাদা কইতর এবং তার চ্যালারা দাঁড়িয়ে আছে। একে একে সকলেই চিঠি পড়েছে। এখন পড়ছে আবরারের ডাব্বা। আমি আরো দেখছি সকলেই কেমন উশখুশ করছে যেন বায়ু সকলেরই এসে আটকেছে কিন্তু লোকলজ্জার শরমে কেউ দূষণ করতে পারছে না।
অবশেষে আবরারের ডাব্বা বলে,
“এটা কী ভাই! চিঠি নাকি সাদা কইতরের পাখনা।”
মুহূর্তেই সকলের উশখুশ ভাব ছেড়ে হু হা হি হি করে হাসা শুরু করে দিল। কেউ কেউ তো রাস্তায় বসে ভিক্ষা করতে শুরু করল। এসব রং তামাশা দেখে একজনের শরীর জ্বলে উঠল সে আর কেউ না সাদা কইতর। চিৎকার করে উঠলো। আমাকে দারুণভাবে শাসিয়ে বলল,
” আয়মান, তোমাকে আমি ছাড়বো না।”
চলবে…………..
#প্রণয়িনীর_হৃদয়কোণে
#আফসানা_মিমি
| চতুর্থ পর্ব |
❌ কোনভাবেই কপি করা যাবে না।❌
চা পানীয় দ্রব্যের সাথে একটা সিগারেট ধরিয়ে আকাশে ধোঁয়া উড়ানোর সাইন্সটা আজও বুঝলাম না ভাই! রাজু মামার দোকানের মালাই চায়ের স্বাদ বছরের পর বছর পাড় হলেও জিহ্বায় লেগে থাকবে। কলেজ ভার্সিটির অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা এ দোকানে এসে আড্ডা জমায়। দোকানীর বেচা কেনা আরেকটু জমজমাট করার জন্য রাজু মামা দুইটা বেঞ্চ বসায়। ছাত্ররা যতক্ষণ থাকবে দোকানিদের ততই লাভ হবে।
সেই এক ঘণ্টা যাবত সাতজন মদনটেকদের কাজ করছি। আজ আমি কাজের বেটি জরিনা। একজনের চা তো আরেকজনের সিগারেট রাজু মামার থেকে আনা নেওয়া করতে করতে আমার পা ভেঙে যাচ্ছে। আপনারা ভাবছেন আমার মতো অতীব ভদ্র মেয়ে কেন মানুষের কাজ করে দিচ্ছি? তাহলে শুনুন এক ঘণ্টার আগের কাহিনী।
এক ঘণ্টা পূর্বে,
প্রায় দুই ঘণ্টা যাবত সাদা কইতরের চ্যালাদের ক্যা ক্যা শুনেছি। শেষে তো অধৈর্য হয়ে জানালা আটকে দিয়েছিলাম। এরপর থেকে সব নীরব। ক্লাসরুম থেকে উঁকি দিয়ে দেখি রাস্তা ফাঁকা। সবাই চলে গিয়েছে।
হাফ ছেড়ে বাচলাম বলে তখন শুকরিয়া আদায় করেছিলাম। আনন্দ হয়েছিলাম বটে! কিন্তু আমার সে আনন্দ বেশিক্ষণ টিকে থাকেনি। কলেজ ছুটির শেষে সাবধানতার সহিত গেট থেকে বের হচ্ছিলাম। আশেপাশে তাকিয়ে লক্ষ্য করছিলাম সাদা কইতর বা তার চ্যালাপেলারা কেউ আছে কি নেই। না কেউ রাস্তা নেই। শূন্য, একদম ফাঁকা। ধেই ধেই করে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। ভাবছিলাম, বিকেলে সাদা কইতরের বাড়িতে গিয়ে কী কী করব। কয়েক কদম যেতেই আবরারের ডাব্বা আমার পথ আটকে দাঁড়ায়। আমার তো ইচ্ছে করছিল তখন আবরারের ডাব্বার মাথায় ডাব ভাঙতে। তার কলাম না। ডানপাশে চলে যেতে চাইলাম একজন এসে পথ আটকায়। বাম পাশে চলে যেতে চাইলে আরেকজনের এসে দাঁড়ায়।
এভাবে ফাঁকা রাস্তার মধ্যে চার থেকে পাঁচজন ছেলে আমাকে ধরে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। মনে মনে ভয় পেয়ে যাই তবুও বুকে সাহস এনে বলি
” দৌঁড়ানি খেতে ইচ্ছে করছে?”
” সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছে গো খুকি! চলো চলো আজ তুমি আমাদের সিগারেট খাওয়াবে।’
” মগের মুল্লুক নাকি? আমার বাবার আব্বুর টাকা কী বেশি হয়েছে?”
” তোমার টাকা বেশি হয়েছে। এজন্যই তো প্রতিদিন হেঁটে হেঁটে আসো। আর রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভদ্র ছেলেদের বিরক্ত করো। আজ তোমাকে এজন্য উচিত শিক্ষা দিব।”
সাদা কইতরের আওয়াজ শুনে তার চ্যালারা সাদা কইতরের জন্য পথ ছেড়ে দিল। সাদা কইতরকে দেখে আমার কলিজার পানি অর্ধেক শুকিয়ে যায়, বাকি অর্ধেক আমার ব্যাগের ভিতর ঢুকে পড়ে। আজ না জানি সাদা কইতর আমাকে দিয়ে কি করায়! ভেবেই কষ্টে সমুদ্র বানাতে ইচ্ছে করছে।
” আপনি আমাকে মারবেন সাদা কইতর?”
ছল ছল চোখ, অনুনয়ের স্বর, বিনয়ের সহিত আচরণ করেও সাদা কইতরের মন গলাতে পারিনি। সাদা কইতর ঠিকই আমাকে খুচিয়ে খুচিয়ে রাজু মামার দোকানের সামনে নিয়ে আসে। আর সেই সময় থেকে আমি এই অসভ্য বাঁদরদের ফরমায়েস পূরণ করে যাচ্ছি।
বর্তমানে,
পাক্কা এক ঘন্টা! এক ঘন্টা যাবত খাদকের দলগুলো গিলে যাচ্ছে তো গিলে যাচ্ছে। থামার নাম নেই। এভাবে চলতে থাকলে আমার চৌদ্দগুষ্টি আমাদের জন্য যা যা রেখে গিয়েছে সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। না এভাবে তো আর বসে থাকা যাবে না। কোন উপায় তো খুঁজে বের করতেই হবে।
রাজু মামার চায়ের দোকানের পাশেই বাজার। মাছ থেকে শুরু করে মাংস কাঁচালঙ্কা থেকে শুরু করে শুকনো লঙ্কা সবই পাওয়া যায়। রাজু মামার দোকানের কাজের ছেলেটা একটু বোকা স্বভাবের। ট্যারা চোখ; আমার দিকে তাকিয়ে থাকলে মনে হয় আমার পিছনের গোয়ালঘরকে দেখছে। কিন্তু আসলে তেমন নয়, সে আমাকেই দেখে। এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন আমি আকাশ থেকে নেমে আসা কোন সাদা পরী। অবশ্য আমি পরীর চেয়ে কম কিসের। ফর্সা, চুল তো কাউয়ার বাসা। সে সব বাদ দিন, ছেলেটাকে হাতের ইশারায় কাছে ডাকলাম। এরপর কানে কানে আমার বুদ্ধিটা বলে দিলাম।
একটু দাঁড়িয়ে জেরিয়ে নিচ্ছিলাম। ঠিক তখন আবারও ডাক পড়ে যায়। আমাকে ডাকছে বলদগুলো। তাড়াহুড়া করে যেতে বলছে। গেলাম! তাদের সামনে দাঁড়ালাম। পাশে বসা সাদা কইতর আমার দিকে আড়চোখে তাকায়, তারপর বাঁকা হাসে। আবরারের ডিব্বা তখন আমাকে আদেশের স্বরে বলে,
” যাও আমাদের জন্য সাতটা সিগারেট নিয়ে আসো। আর একটা আমসত্ত্বের প্যাকেট।”
আমসত্ত্ব আবার কে খাবে? প্রশ্ন করার আগেই আবরারের ডাব্বা উত্তর দিল,
” তোমার সাদা কইতর খাবে গো ময়না! কইতররা যে শুধু দানা খেয়ে থাকবে সেটা কোন অভিধানে নেই। রাদের আমসত্ত্ব পছন্দ। যাও নিয়ে আসো।”
আপনা আপনি হাত চলে গেল মুখে। টক খাওয়া তো অন্য কিছুর লক্ষণ! আমাদের পাশের বাসার ফরিদা আপা ঐ সময়ে তো টকই খেত। এরপরই তো সাত আটমাস পর বাচ্চা হলো। পেটের ভেতর কথা রাখতে নেই। যদিও ব্যাপারটা আমার অজানা না। তবুও প্রশ্ন করতেই হয়। তাই জোরেই জিজ্ঞেস করলাম,
” আপনি কী গর্ভবতী, সাদা কইতর?”
সাদা কইতরের সাথে সাথে যেন যক্ষ্মা রোগী হয়ে গেছে। কাশতে কাশতে বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেছে। পাশের আবরারের ডাব্বা সহ সাথের সবাই হেসে কুটিকুটি। রাজু মামার দোকানের ছেলেটা তখনই সিগারেট নিয়ে হাজির হয়। এখানে আর থাকা যাবে না। রাজু মামার হাতে এক হাজার টাকা গুঁজে একটা আমসত্ত্বের প্যাকেট এবং পানি হাতে নিয়ে সাদা কইতরের সামনে দাঁড়ালাম। সাদা কইতর এখনো কাশছে। বোতলের ক্যাপ খুলে নিজেই পানি পান করিয়ে দিলাম। সাদা কইতরের কাশি থেমেছে। অন্যরকম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি সেসব পাত্তা দিচ্ছি না। আমসত্ত্বের প্যাকেট সাদা কইতরের হাতে রেখেই ভোঁ দৌড়। কিছু পথ অতিক্রম করতেই পিছনে ফিরে তাকাই। সকলেই সিগারেট জ্বালিয়েছে। মুখে দিতেই সিগারেট ফেলে এদিক সেদিক দৌঁড় লাগাচ্ছে। বিশ্বজয়ী হাসলাম। এই তুবাকে কাজ করানোর পরিণাম এবার পাক। সাদা কইতর অবাক চোখে সকলকে দেখছে। কিছু একটা ভেবে জমিনে ফেলে থাকা সিগারেট হাতে নিয়ে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে আয়মান বলে চিৎকার করে উঠে। আমি তো জোরে জোরে হাসছি। বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তাদের বলছি,
” আমি মিস তুবি,
করি সবার ঘষামাজা।
আমার সাথে লাগতে আসলে,
লঙ্কা খাওয়াব প্রতি বেলাতে।
ও সাদা কইতর,
তুমি ভালা না
তোমার বউ হবে আস্তো কানা।”
বিকেলবেলা গোসল করে পরিপাটি হয়ে বের হয়েছি। পরিধানে কালো একটি থ্রি পিস। মাথার চুলগুলোকে কি করব বুঝতে পারছি না। ইচ্ছে করছে একটা কেচি এনে ঘ্যাচঘ্যাচ করে সব চুল কেটে ফেলি। এরপর মনে হয় বিয়ের কথা। চুল ছাড়া টাক মাথাওয়ালাকে তো কেউ বিয়েই করতে আসবে না।
বাসায় আসতে আজকে বিকেল হয়ে গেল। রাস্তায় মানুষের চমক, ঠমক দেখেই হেসে কুটকুটে। এত দেরিতে বাসায় ফেরার জন্য বকার মানুষ আমার নেই। বাবা, ভাইয়া অফিসে। আমি একাই আমার রাজ্যে রাজত্ব করি। মা মারা গিয়েছেন সেই ছোটকালে তখন থেকে বাবার ভাইয়ার কোলে পিঠে মানুষ হয়েছি। এজন্য একটু দুষ্টু বটে। ভাইয়ার ভাষ্যমতে আমি ভদ্র দুষ্টু। মা’রা’মা’রি, কা’টা’কা’টি করি না। শুধু একটু দুষ্টুমিই করি। দুষ্টুমিতে আমি আনন্দ খুঁজে পাই। এখন অনেকেই বলবে বয়সের তুলনায় আমি ছোট বাচ্চাদের মতো দুষ্টুমি করি। যা ইচ্ছে বলুক তাতে কি? আমি আমার এই জীবন নিয়ে খুব সুখে আছি। আপাতত মাথার চুলগুলো উল্টাপাল্টা করে খোঁপা করে নিলাম। সামনে কিছু চুল এনে রেখে দিলাম। সামান্য স্টাইল করার প্রচেষ্টা আর কি। নয়তো পাঁচ হাত কপাল থেকে সবাই ভয়ে পালাবে। কোকড়া চুলের যন্ত্রণায় কিছুই করা যায় না। আমার ইচ্ছে আমার এই জীবনে আমার বিপরীত কেউ আসবে। কিন্তু সে কোথায়? আমার জামাই কোথায়! সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে ঘর থেকে বেরিয়ে আসলাম। উদ্দেশ্য ভাঙ্গা বিল্ডিংটার পাশের মাঠ। সেখানেই রয়েছে আমার সাদা কইতর এবং নেংটি কইতর। আজকে নেংটি কইতরের জন্য ভালো জিনিস নিয়ে এসেছি। সেটা হচ্ছে ফালুদা। নেংটি কইতর অনেক পছন্দ করে। সাদা কইতরের সামনে তো আজ পরবোই না। যেচে কে বাঘের সামনে পড়তে চায়! নেংটি কইতরের সাথে কথা বলে একটু দুষ্টুমি করে আবার বাড়িতে চলে আসব।
আমাদের বাড়ির থেকে কিছু দূরে একটি নতুন হোটেল খুলেছে। নাম ‘ভর্তা ভাতে বাঙালি হোটেল।’
তার নিচে সুন্দর করে লিখা,’ এখানে বাঙালি সব খাবার অর্ডার করলেই পেয়ে যাবেন।’
এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে আমরা বাঙালিরা সাধারণত বাঙালি খাবার রোজই খাই। কষ্ট করে শুধু শুধু হোটেলে যাওয়ার প্রয়োজন কি?
এসব চিন্তা বাদ দিলাম, হয়তো কোন ফ্রি সার্ভিস দিচ্ছে! হোটেলের সামনে অনেক লোক জড়ো হয়ে আছে। তাদের পেরিয়ে আমায় যেতে হবে। দেখি, দেখছি, এক্সকিউজ মি বলেও পথ খুঁজে পাচ্ছি না। অবশেষে একজন লোককে ধরে জিজ্ঞেস করলাম,
” ভাই এখানে কি হচ্ছে? ফ্রিতে খাবার বিতরণ করা হচ্ছে নাকি?”
পাশ থেকে একজন লোক তখন জানাল,
” আমাদের মইনুল খাবারের প্রতিযোগিতা করতে নেমেছে। পাশের এলাকার মফিজ ভাইয়ের সাথে। সাত প্লেট ভাত সাথে চার প্লেট গরুর মাংস খাওয়া! শেষ কে জয়ী হয় তা দেখার জন্য আমরা অপেক্ষা করছি।”
এই মইনুল আঙ্কেলের পাল্লায় যতবার পড়ি ততবারই আমার বিপদ আসে। মানুষদের ধাক্কাতে এই তুবা এক্সপার্ট। সবগুলোকে ধাক্কিয়ে সামনে আগাতে থাকলাম। পেছন থেকে তখন একটি বিকট ঘটনা ঘটল, হোটেলের আশেপাশে জড়ো হয়ে থাকা মানুষ সকল এদিক সেদিক দৌঁড়াতে শুরু করল। ” কাহিনী কী ভাই?” একজনকে ধরে প্রশ্ন করলাম। প্রতিউত্তরের সে বলল,
” মইনুল তো আজ সব উড়িয়ে দিল রে ভাই! সাত প্লেট খতম কইরা সাথে সাথে বায়ু দূষণ! আট নাম্বারটা আর খাওয়া হইলো না শা’লা’র। এই মইনুলের আশেপাশে আর থাকা যাবে না। বয়কট মইনুল বয়কট!”
আহারে! বেচারা মইনুল আঙ্কেল। প্রতিদিন একটা না একটা তাণ্ডব বাঁধায় সে। এজন্যই তার সাথে ভালো হয় না। আমার মতো ভদ্র হতো তাহলে সুখী হতো।
মাঠের দিকে যাচ্ছি। আজ মন ফুরফুরে। গুনগুন করে গান গাইছি,
” আমি যে তোমার!
শুধু যে তোমার!
মেরে রাস্তাতে যো, রুকেঙ্গে মুজকো।
জিন্দা রাহেঙ্গা নেহি ওহ লোক কাভি!
তা না না না তা না না না
তা না তা না তে রে তা না তা না তে রে নাআআআআআআআ!!!
———————————-
ক্রিকেট খেলার মাঠে ব্যাটিংয়েরা বেশ খেলছে। মাঠে না পৌঁছেও বেশ বুঝতে পারছি আমার সাদা কইতর ব্যাটিং করছে। আমার ধারণাই সঠিক! সাদা শার্ট পরিহিত সাদা কইতরকে একদম সাদা কইতর লাগছে। মাঠের একপাশে নেংটি কইতরকে দেখতে পেলাম। তিন চারজন ছেলেকে নিয়ে মাটিতে কি যেন আঁকছে। সেখানে পৌঁছালাম। আমাকে দেখে নেংটি কইতরের বন্ধু স্বজন পালিয়ে গেল। এতে অবশ্য আমার কোন হাত নেই! বাচ্চাদের দেখলেই আমার হাত চুলকায়! তখন তাদের গাল ধরে টেনে ধরি নয়তো তাদের সাথে খেলতে বসে পড়ি। আর খেলাতে জিততে না পারলে তাঁদের খেলার জিনিস সব আওলে চলে আসি।
নেংটি কইতরের পাশে দাঁড়াতেই সে আমাকে দেখে পালাতে নেয়। আমি সেই সুযোগ দেই না তার আগেই খপ করে হাত ধরে ঘাষের উপর বসাই।
” এই নেংটি কইতর, একদম নড়াচড়া করবে না। তোমার গুরুর আদেশ।”
” আমার গুরু আবার কে?”
” কেন? আমাকে দেখা যাচ্ছে না?”
নেংটি কইতর ভ্রু যুগল কুঁচকে নেয় ঠিক সাদা কইতরের মতো। এরপর চিন্তিত ভঙ্গিতে বলে,
” তুমি তো অকাজের বস্তা। কোন কাজ ঠিকমতো করো! আমাকে কবে কী শিক্ষা দিলে। উলটো আমি তোমাকে খালি ঘরের ঐ অংকটা শিখিয়েছি।”
বড়ো ভাই তো সেয়ানা ছোট ভাই মহা সেয়ানা। আমাকে নাকে মুখে চুবানি খাওয়াতে চায়। তা আর হতে দিচ্ছি না।
ফালুদা ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে মাটিতে কি কাজ করছিল তা দেখতে চলে আসি। সুন্দর একটা ভাল্লুকের ছবি এঁকেছে। মানতেই হবে ছেলেটার হাত মাশাআল্লাহ। অনেক সুন্দর আর্ট পারে। একটু উঁকি দিয়ে দেখলাম নেংটি কইতর ফালুদা খাচ্ছে। এই সুযোগে আমি আমার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।
হাত দিয়ে ভাল্লুকের নাকের নিচের দুইপাশে গোঁফ এঁকে দিলাম। এবার দেখতে সুন্দর লাগছে।
” তুমি কী আর মানুষ হবে না আয়মান? ছোট বাচ্চাদের না জ্বালালে হয় না?”
দাঁত দিয়ে জিহ্বা কাটলাম। নিচের দিকে তাকিয়েই বুঝলাম, আমার পাশে সাদা কইতরের সব বন্ধুরা দাঁড়িয়ে আছে। মাথা আর উপরে তুললাম না। বসে বসে হাতের নখ কামড়াচ্ছি। এই বদ অভ্যাসটা আমার চিন্তা করার সময় চলে আসে।
” ছিহ্ আয়মান! খচ্চর মেয়ে? এতো বড়ো মেয়ে হয়েও নখ কামড়াচ্ছো? এজন্যই মাথায় শয়তানি বুদ্ধি ঘুরে।”
” নখ কাটলে বুদ্ধি আসে।”
” গোবর আসে। এখন বলো কী শাস্তি নিবে?”
” শাস্তি কেন? আমি কি চোর! নাকি ডাকাত। আমি তো নিতান্তই ভদ্র বাচ্চা।”
” ভদ্র না ছাই। রাদ! এই মেয়েকে দিয়ে তোর পা টিপা। নয়তো আমাদের পা টিপে দিতে বল!”
” তোর গ’লা টি’পে দিব রে, আবরারের ডাব্বা।”
আবরারের কথায় রাদ বিরক্ত প্রকাশ করল। ইশারায় আমাকে কাছে ডাকলো। আমিও উঠে দাঁড়িয়ে তাই করলাম। হয়তো সাদা কইতর আজ কোন শাস্তি দিবে না। আর পা টিপে দেওয়া! সেটা কোন ব্যাপার না।
“আয়মানকে নিয়ে আজ আমি ক্রিকেট খেলবো। চলো আয়মান। বোলিং করতে পার তো?”
তুরান ভাইয়ার সাথে আগে ক্রিকেট খেলতাম। সেই সুবাদে অনেককটাই জানি। রাজি হয়ে গেলাম। বোলিং করব আমি আর বেটিং করবে সাদা কইতর।
প্রথমবার বোলিং করাতে বল ব্যাটে না লেগে সরাসরি আবরারের ডাব্বার মেইন পয়েন্টে গিয়ে লাগে।
সব শেষ। সাদা কইতর ব্যাট ফেলে দৌড়ে আসে সাথে বাকী সবাই। একজন তো বলছেই,
” মামা রে! তোর যৌবন শেষ।”
আলেকজন বলছে,
” বাচ্চার বাপ হবি না?”
সকলের মাঝে সাদা কইতর তেতে উঠে। আমার দিকে তাকিয়ে অগ্নিরুপ ধারণ করে। আমার কী দোষ! শুধু করেই আমার খোঁজ!
সাদা কইতর এগিয়ে আসছে আর বলছে,
” আয়মান, তোমাকে আজ ছাড়ছি না।”
আমি উল্টো পথে দৌঁড় লাগাই। বিড়বিড় করে বলি,
” আমার কি দোষ খেলাতে,
সাদা কইতর ইচ্ছে করেই আমার পিছনে পড়ে আছে।
ও মোর খোদা, তুমি দেখো না!
এই ছেলেকে একটু সুবুদ্ধি দাও না!”
চলবে…………