#প্রণয়সন্ধি– ০৬ পর্ব
#তাসনিম_তামান্না
সূর্য ঠিক মাথার ওপরে মানে এখন ১২ টা বাজে বন্ধুমহল থেকে অনবরত ফোন আসছে। শানায়া একপ্রকার বিরক্ত হয়ে ফোন স্যাইলান্ট করে রাখছে। এই কয়েকমাস হলো অর্নাস শেষ করেছে মাস্টার্সে তেমন ক্লাস হয় না তাছাড়া এখন সবাই যে যার অফিস, বিভিন্ন জায়গায় ইন্টারভিউ নিয়ে ব্যস্ত বিধায় এই ছুটির দিন ছাড়া ওদের আড্ডা দেওয়ার সময় হয় না। বাসার সামনে গিয়ে কলিং বেল বাজাতে মিলি এসে দরজা খুলে দিল। রেগে বলল
–‘ আসছেন মহারানী। তা এতো তারাতাড়ি আসলেন কেনো? ‘
শানায়া মিলির গাল টিপে বলল
–‘ রাগ করে না পলির আম্মু ‘
–‘ সর তো একদম আদিক্ষেতা করবি না’
শানায়া রুমে ডুকে মিলির আর সুমনের বাচ্চাটাকে আদর করে চকলেট দিলো। এই ফ্ল্যাটটা তেমন বড় না দুইটা রুম আর টা বাতরুম আর রান্নাঘর। মিলি বা সুমনের বাড়ি থেকে কেউই ওদের বিয়ে টা মেনে নেয় নি। কারণটা ওদের ভুল বিয়ের আগেই মিলি প্রেগন্যান্ট করে যায় না এসমাজের মানুষ মেনে নেয় না। তাই বন্ধুমহল মিলে ওদের বিয়ে দিয়ে দেয় ওদের খারাপ ভালো সময় পাশে থেকে সবটা সামলিয়ে দেয়। শানায়া পাশের রুমে গিয়ে দেখল সকলে চলে এসেছে ও লেট হয়েছে। সকলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে সকলের মুখে চিন্তার ছাপ শানায়া ভ্রু কুঁচকে বলল
–‘ তোদের আবার কি হলো?’
–‘ আজ রাহির বিয়ে!’
শানায়া অবাক হলেও পরে মজা করছে ভেবে বলল
–‘ অযথা ফাজলামি করিস না’
–‘ সত্যি বলছি বান্ধবী ‘
–‘ রাহির বিয়ে হলে নোমান এখানে শান্ত হয়ে বসে আছে কেনো?’
–‘ বিয়েটা অন্য ছেলের সাথে হচ্ছে ‘
–‘ ও তাই তো আশা ছেড়ে দিয়ে ছেঁকা খেয়ে দেবদাস হয়ে বসে আছে?’
নোমান মলিন কণ্ঠে বলল
–‘ এছাড়া আমার কি-ইবা করার আছে বল এছাড়া ওর বাবা তো আর বেকার ছেলের হাতে মেয়েকে তুলে দিতে পারে না। বেকার ছেলের হাতে তুলে দেওয়া মানে মেয়েকে পানিতে ফেলে দেওয়া ‘
–‘ এসব তোকে কে বলেছে রাহি না-কি তার বাবা-মা? ‘
–‘ আমার বিবেক বলেছে’
–‘ তোর আবার বিবেকও আছে!’
নোমান চোখ ঘুরিয়ে সকলকে দেখে বলল
–‘ কেন আমাকে কি মানুষ মনে হয় না?’
–‘ অবশ্যই না’
নোমান হতভম্ব হয়ে গেলো। সবাই তাকে একটুও ভালোবাসে না কই এই দূর সময় ওকে সাপোর্ট করবে তা না করে সবাই মজা নিচ্ছে। নোমান চুপচাপ ঘুর্নায়মান ফ্যানের দিকে তাকিয়ে শুয়ে রইল। সুমন বলল
–‘ থাক ব্যাটাকে আর নাড়িস না। এই কষ্ট নিয়ে ও ঘুমাতে পারছে না’
সিয়াম বলল
–‘ বন্ধু তুমি থেমে যা-ও। ব্যাটা শুয়ে ওদিকে ওর গার্লফ্রেন্ড নিয়ে যাচ্ছে ওনি শোক পালন করছে আমি হলে ওকে তুলে এনে বিয়ে সেরে ফেলতাম তারপর যা হয় পরে দেখা যেত’
শানায়া সিয়ামের বাহুতে চাপড় মে’রে বলল
–‘ সাবাশ বন্ধু তুই তো বাঘের বাচ্চা ‘
সিয়াম ভাব নিয়ে বলল
–‘ আই নৌউ’
জুন ফোন টিপতে টিপতে বলল
–‘ গাইস গুগলে সাস দিলাম কিভাবে বন্ধুর গার্লফ্রেন্ডে বিয়ে ভাঙা যায় কিন্তু ভালো কিছু পেলাম না’
–‘ আরে ছেমরি রাখ তোর গুগল ‘
শানায়া সবাইকে ইশারায় চুপ করতে বলে বলল
–‘ নোমান তুই শুয়ে আছিস। এভাবে শুয়ে থাকলে লাভের লাভ কিছুই হবে না উল্টো ভালোবাসার মানুষটাকে হারিয়ে ফেলবি সারাজীবনের জন্য। চাকরি পাওয়ার জন্য তো তোর সারাজীবন পড়ে আছে। চাকরি তুই পেয়ে যাবি কিন্তু রাহিকে একবার হারিয়ে ফেললে আর পাবি না। ‘
নোমান এবার উঠে বসে বলল
–‘ তাহলে আমাকে কি করতে বলছিস?’
–‘ পালা’
–‘ হোয়াট! পাগল হয়ে গেছিস তোরা রাহিও এমনটাই বলছিল’
–‘ শেষ মূহুর্তের একটা অপশন ছাড়া কোনো উপায় নেই ‘
–‘ কিন্তু কীভাবে? ‘
–‘ রাহির বিয়ে কখন?’
–‘ সন্ধ্যায়’
–‘ ওকে। শোন তাহলে…
সবাই মনোযোগ দিয়ে শানায়ার কথায় মন দিল
–‘আমরা মেয়েরা যাব রাহি ফেন্ড হয়ে আর তোরা ছেলেরা রাহির বাড়ির পিছনে গেট থেকে কিছু দূরে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবি গাড়িটা ভাড়া করতে হবে কিন্তু আর শোন গাড়ি থেকে নামবি না কেননা রাহির ভাই নোমানকে ভালোভাবে চিনে আর বাকি দায়িত্ব আমাদের। ‘
নোমান অবাক হয়ে বলল
–‘ এই না তোরা আমার জন্য এতো বড় ঝুঁকি নিস না ওর বাবা ভাই জানতে পারলে একেবারে পুলিশে দিয়ে দিবে’
জুন বলল
–‘ চিল ব্রো বন্ধুর জন্য জেল থেকে ঘুরে আসব ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রবে ‘
মিলি বলল
–‘ আহ কত দিন পর আমরা এডভেঞ্চার করতে যাচ্ছি ‘
শানায়া বলল
–‘ ও হ্যালো ম্যাডাম আপনি কোথাও যাচ্ছেন না। আপনি কাজী অফিসে সব রেডি করবেন’.
–‘ ইম্পসিবল আমি তোদের সাথে যাব…’
দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষ করে কলাকৌশলে বন্ধুর জন্য তার বান্ধবীরা সেজেগুজে বাঘের খাঁচায় ডুকল। নোমানের বুক দুরুদুরু করছে। সেই কখন গিয়েছে এখনো তাদের খোজ নেই। শানায়া, জুন রাহির পাশে গিয়ে বসতেই রাহি অশ্রু সিক্ত নয়নে তাকালো ওরা চোখ দিয়ে আশাশ দিল। সন্ধ্যা যখন বরে এসেছে বলে ছোটাছুটি শুরু হলো রাহির পাশ থেকে উঠে বরকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল শানায়া জুন এই সুযোগটাই লুফে নিল। রাহির বেলকনির পাশে একটা মই ছিল জুন সেটা দিয়ে আগে নেমে গিয়ে দেখল কেউ আছে কি-না বাড়ির পিছন দিকে হওয়ায় কেউ নেই ওদের কে ইশারা করতেই ওরাও নিচে নেমে গেলো। বিপদের ওপরে বিপদ হয়ে দাড়ালো দৌড়াতে গিয়ে ওর জুতা ছিঁড়ে গেলো ওতোসব না ভেবে জুতা হাতে তিনটা মেয়ে দৌড় দিল গাড়ির কাছে আসতেই নোমান দৌড়ে এসে রাহিকে জড়িয়ে ধরলো।
সব বাধা বিপত্তির পর ওদের বিয়ে শেষ হলো নোমান ওদের ট্রিড হিসাবে আইসক্রিম খাওয়াবে বলল। সকলে মেনে নিয়ে আইসক্রিম পার্লারে দিকে গেলো। শানায়া হাঁটতে পারছে না পায়ে ইট পাথর ফুটে গিয়েছে। সিয়াম খেয়াল করে বলল
–‘ বান্ধবী তোর কি হলো আবার’
–‘ আরে তোর মাথা হয়েছে ‘
সিয়াম ফাজলামি করে বলল
–‘ খোরা মঞ্চুরের খোদা বউ ‘
শানায়া রেগে হাতে থাকা জুতা ছুড়ে মারল।
জুবরানের আজকের দিনটা মটেও ভালো যায় নি। শানায়াকে একপলক দেখার জন্য মনটা ছটফট করছেন। শানায়ার বাসার সামনেও গিয়েছিল ওকে দেখতে পাওয়ার আশায় কিন্তু সন্ধ্যা হয়ে গেলেও ওর দেখা মেলে নি। হতাশ হয়ে মন ভালো করার জন্য শপিংয়ে এসেছিল। কিন্তু কিছু কিনতে পারল না। নিজের ওপর বিরক্ত হয়ে শপিংমল থেকে বের হয়ে শানায়ার কণ্ঠ কানে এসে বাজল তড়িৎ গতিতে পিছনে ফিরল। শানায়াকে বাসন্তি রাঙা শাড়িতে দেখে চমকালো। ওকে বেশ সুন্দর লাগছে। ছোটাছুটি করার জন্য মুখে বিন্দু বিন্দু জলরাশি জমে আছে। ডান হাতে আইসক্রিম খাচ্ছে আর ফোনে কথা বলছে। শানায়া তখন শায়লা হাসান কে বোঝাতে ব্যস্ত
–‘ ও মামনি গো প্লিজ আজকের দিনটা থাকি না প্লিজ প্লিজ কাল অফিস করে বাসায় যাব।… প্লিজ আমার লক্ষীসোনা মামনি যানো কি কি হয়েছে আজ সবটা বাসায় গিয়ে বলত’
অনেক জোরাজোরি পর শায়লা হাসান রাজি হলেন। জুন বলল
–‘ বান্ধুবী ফুল সজ্জায় ফুল কিনবি না?’
–‘ অবশ্যই।’
সিয়াম বলল
–‘ এই ফুল কেনার দায়িত্ব আমার’
–‘ বন্ধু আমার একটা জুতা কিনে দে না আমার জানেমান’
–‘ তোর জানেমানের গুলি মা’রি আমারে একটু আগে জুতা ছুড়ে মারলি। ‘
–‘ তুই আমাকে না রাগালে এমন হতো না’
জুবরান হেলমেট পড়ে থাকায় শানায়া চিনতে পারল না।
–‘ ওকে যা ফকিন্নিকে একটা জুতা গিফট করলাম আমার জন্য দোয়া করে দে যেনো আমি সুন্দরী বউ পাই ‘
–‘ দোয়া করি তোর বউ যেনো তোকে টাইট দিয়ে সোজা করে ফেলে।’
সিয়াম রাগি চোখে ধমক দিল। জুন শানায়া ওকে পাত্তা দিল না।
শানায়া শাড়ির কুঁচি ধরে হাটা লাগিয়ে বলল
–‘ তোরা ফুল কিনে আন আমি চলে যাচ্ছি
–‘ এ ম্যান্টাল দাঁড়া
–‘ থাপ্প*ড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিব’
–‘ তুই মিলি, সুমন ওদের সাথে গেলেই পারতি’
–‘ আমি কি জানতাম তোরা দাড়িয়ে ঢং করবি। এমনিতেই পালাতে গিয়ে আমার পা শেষ জ্বালা করছে। তাছাড়া আমাকে আর জুনকে যদি ঔ লোকগুলো দেখে ফেলে তাহলে কোনো কথায়ই নেই বন্ধুর জন্য সত্যি সত্যি জে’লে যেতে হবে ‘
জুবরানের এদের কোনো কথায় বোধগম্য হচ্ছে না। কিন্তু এটা বেশ বুঝতে পারছে এরা কোনো একটা গন্ডগোল পাকিয়ে আসছে।
চলবে ইনশাআল্লাহ
#প্রণয়সন্ধি– ০৭ পর্ব
#তাসনিম_তামান্না
কাল রাতে দেরিতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমানোর কারণে সকলে এখনো ঘুমাচ্ছে। শানায়া ঘুম থেকে উঠে দেখল সকলে বেঘোরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুমাচ্ছে। মিলি, পলি আর সুমন খাটে শুয়ে আছে। সিয়াম সোফায়। শানায়া আর জুন ফ্লোরে। উঠে দাড়িয়ে বুঝতে পারল পায়ের অবস্থা খুব একটা ভালো না। ফ্রেশ হয়ে সকলের জন্য চা বানালো। তারমধ্যে সকলে উঠতে লাগল। সকলে মিলে গল্প করতে করতে চা শেষ করল। সিয়াম নবদম্পতির রুমে কান পেতেও কিছু শুনতে না পেয়ে বলল
–‘ এদের কি এখনো বাসর শেষ হয় নি? না-কি… ‘
ওর কথা শেষ করতে পারল না তার আগে সুমন বলল
–‘ বেফাঁস কথা বলিস না রাহি বেচারি লজ্জায় পড়বে’
–‘ বারে ওরা আমাদের জানিয়ে বাসর করতে পারবে আর আমরা বললেই দোষ’
–‘ একটু আধটু লজ্জা না দিলে জমে না-কি ‘
নোমান রুম থেকে বের হয়ে আসল সকলকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে নড়েচড়ে বলল
–‘ কিছু হয়েছে?’
–‘ সেটা তো তুই ভালো জানিস ‘
–‘ ফাজলামি করিস না সিরিয়াস হয়ে আমার কথা শোন হুট করে বিয়ে করছি আমার বাসার কেউ তো জানে না বাবা জানলে আমাকে পিটিয়ে ছাল তুলবে। আমি কি করব বুঝতে পারছি না। সকালের নাস্তা করে আমরা বাসায় যাবো তোরাও সাথে যাচ্ছিস।’
সবাই বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বলল
–‘ ইম্পসিবল! ‘
–‘তোর বাপকে ভয় লাগে যেই রাগি।
–‘ দেখ আমি না শুনতে চাই না তোরা থাকলে আমি একটু সাহস পাব’
শানায়া একটু ভেবে বলল
–‘ আমার অফিস আছে নতুন বস’
–‘ প্লিজ বান্ধুবী একটু ম্যানেজ করে নে ‘
–‘ আচ্ছা দেখছি’
সকালের নাস্তা শেষ করতে করতে সকলে প্লান করে নিল কিভাবে ওখানে গিয়ে কি বলবে। বেফাঁস কথা বললে তো সমস্যা। এদিকে শানায়া টেনশন হচ্ছিল জুবরানকে কথাটা কীভাবে বলবে যদি রেগেমেগে উল্টো পাল্টা বলে তখন শানায়ারই কষ্ট হবে। শানায়া বেশি না ভেবে ফোন দিল জুবরানের ফোনে দুই বারের বার ফোন ধরল। কেননা জুবরান অবাক হয়েছিল শানায়া হঠাৎ ফোন দিচ্ছে কেনো?
–‘ আ আসসালামু আলাইকুম স্যার’
জুবরান গম্ভীর কণ্ঠে বলল
–‘ ওয়ালাইকুম আসসালাম’
–‘ স্যার ফোন দিয়ে কি ডিস্টার্ব করলাম?’
শানায়ার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে জুবরান বলল
–‘ কোনো দরকারে কি ফোন দিয়েছেন?’
–‘ জী স্যার আসলে… আমি আজ অফিসে আসতে পারব না আজ দিন টা আমাকে ছুটি দিবেন প্লিজ’
–‘ আপনি কয়দিন হলো যেনো অফিসে জয়েন্ট করছেন?’
–‘ জ্বি চারমাস’
–‘ আগে কয়বার ছুটি নিয়েছেন?’
–‘ একবার ও না। আজ আমার কিছু প্রবলেমের জন্য ছুটি চাইছি’
–‘ ওকে কাল থেকে যেনো মিস না হয়’
–‘ ওকে থ্যাংকিউ স্যার’
ফোন কেটে শানায়া হাফ ছেড়ে বলল ‘যাক ছুটি পাইলাম’
সুমন বলল
–‘ নোমান বেবি তুমি যেনো বাবার ভয়ে প্যান্টে ১ নম্বর ২ নম্বর করে দিও না’
নোমানের মুখ চুপসে গেলো। জুন বলল
–‘ আচ্ছা থাক বেচারাকে আর পঁচাস না।’
শানায়া বলল
–‘ চল বেরিয়ে পড়ি আমি আবার বাসায় যাব শরীরটা ভালো লাগছে না।’
শানায়া, মিলি,সুমন,জুন, সিয়াম, নোমান আর রাহি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে নোমানের বাবার সামনে তিনি কঠিন চোখে সবাইকে পর্যাবেক্ষণ করছে। গম্ভীর কণ্ঠে বলল
–‘ কী সকলে একসাথে কোন মতলবে’
নোমান আমতা আমতা করে বলল
–‘ বাবা আমি আসলে…’
–‘ কি বলতে চাও সোজাসাপটা বলো’
নোমান জোরে শ্বাস নিয়ে বলল
–‘ বাবা আমি বিয়ে করে ফেলেছি’
নোমানের বাবা-মা হতভম্ব হয়ে ছেলের দিকে তাকিয়ে রইলো। এমন কিছু শুনবে আশা করে নি। নোমানের বাবা কটাক্ষ করে বলল
–‘ বাহ! বিয়ে করেছ তা বউকে কি খাওয়াবে শুনি? নিজে তো কিছু করতে পারো না। আবার একজন বিয়ে করে নিয়ে এসেছ? বিয়ে মানে বুঝ তুমি? আর তোমরা তোমাদের বন্ধু কে কীভাবে সাপোর্ট করলে মেয়ের বাবা-মা জানে ও বেকার তা না-কি তুলে এনে বিয়ে করেছ’
শানায়া বলল
–‘ আঙ্কেল ছোট মুখে বড় কথা বলছি ক্ষমা করবেন ওরা দু’জন দু’জনকে ভালোবাসে চাকরির জন্য তো গোটা জীবন পড়ে আছে আল্লাহ দিলে ইনশাআল্লাহ ও চাকরিও পেয়ে যাবে। কিন্তু ভেবে দেখুন তো ও যদি একবার ভালোবাসার মানুষটাকে হারিয়ে ফেলে ও কি ফিরে পাবে? পাবে না সে-তো তখন অন্য কারো তখন চাকরি নিয়ে আপনাদের চাপে বিয়ে করবে কিন্তু সে সংসারে সুখ বা ভালোবাসা নামক কী কিছু থাকবে? কিছু ভুল বললে ক্ষমা প্রার্থী ‘
–‘ তোমাদের আবেগের বয়স… ‘
সুমন বলল
–‘ আঙ্কেল আমরা আবেগের বয়স পেরিয়ে এসেছি লাইফের অনেক ভুল করেছি কিন্তু ভালোবাসার মানুষটার হাতে ধরেছি মাঝ পথে ছেড়ে দেওয়ার জন্য নয়’
নোমানের বাবা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল
–‘ মেয়ের বাবা-মা জানে?’
জুন বলল
–‘ বা আঙ্কেল পরিস্থিতিটা এমন ছিল যে ওদের এভাবে বিয়ে করতে হয়েছে।’
রাহির সামনে গিয়ে বলল
–‘ নাম কী?’
–‘ জ্বি রাহি সুলতানা’
–‘ নোমানের মা ওকে রুমে নিয়ে যা-ও ‘
সকলের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। রাহিকে নিয়ে যেতেই নোমানের বাবা বলল
–‘ যত তাড়াতাড়ি পারো চাকরি খুঁজো না হলে ব্যবস্থা শুরু করো। এতোক্ষণে মেয়ের বাবা-মা নিশ্চয়ই পুলিশে কমপ্লেন করছে’
নোমানের বাবার ভয়ে কারণ বুঝতে পেরে সকলে মুখ টিপে হাসল। নোমান বলল
–‘ বাবা ও এডাল্ট ও নিজের ইচ্ছাতে চলে আসছে কিছু হবে না।’
–‘ তোমরা বসো মিষ্টি খেয়ে যেও’
বাসায় এসে সব ঘটনা শায়লা হাসান আর মিরাজ হাসানের সাথে গল্প করছে। ওনারা অবাক হয়ে শুনছে পুরাই সিনেমাটিক ব্যাপার। পাপড়িও যোগ দিল ওদের সাথে। সবশুনে ও বলল
–‘ তোদের মতো পাগলদের দ্বারাই এসব সম্ভব ‘
বিকালে শায়লা হাসানের সাথে রায়হানের মা রহিমা বেগম গল্প করতে আসলেন। শানায়া পাশেই বসে ফোন টিপছিল। কথায় কথায় ওনি পাপড়ির বিয়ের কথা বললেন। ওনার ভাইয়ের ছেলে না-কি ইন্জিনিয়ার ছেলের বেশ বয়সও হয়েছে ওনার জন্য মেয়ে খুঁজছে তাই পাপড়িকে ওনার পছন্দ বয়সের দিক দিয়েও পারফেক্ট। মেয়ের বিয়ের কথা শুনে শায়লা হাসানের মুখে আঁধার নেমে আসল। শানায়া বুঝতে পেরে বলল
–‘ আন্টি লাইফটাতো পাপড়ি আপুর তাই আপুর কাছ থেকে তার মতামত নিয়ে এ ব্যাপারে এগোনো উচিৎ।’
–‘ সে না হয় বুঝলাম। আর পাপড়ি ও তো বয়স হয়েছে বিয়ে তো করাই উচিৎ। দেখ ওর মতামত নিয়ে ও কী বলে তাছাড়া বড় বোনের পর তুমি ছোট তোমার ও তো বিয়ে দিতে হবে তুমি যদি রাজি থাকো তাহলে রায়হানের সাথে তোমার… আসলে তোমাকে আমার বেশ পছন্দ ‘
চলবে ইনশাআল্লাহ