প্রণয়সন্ধি পর্ব-৩১ এবং শেষ পর্ব

0
773

#প্রণয়সন্ধি– ৩১ পর্ব / শেষ পর্ব
#তাসনিম_তামান্না

সারারাত জুবরান বাড়ি ফিরল না। সেহেরিতে এসে দেখল শানায়া সব রেডি করছে তার চোখ মুখ ফোলা। জুবরান শানায়ার তাকালো না ওর দিকে। শানায়া ওর অগোছালো অবস্থা দেখে মনটা কেমন করে উঠল। জুবরান বলল

–‘ এতো আগ বাড়িয়ে কাজ করার কিছু নেই। এ বাড়িতে তুই অতিথি তাই অতিথি হিসেবে থাকলে খুশি হবো। আর কাল সকালে যেনো তোকে এবাড়িতে না দেখি’

শানায়া কিছু বলল না নিজের মতো কাজ করতে লাগল। খাবার দাওয়া শেষ করে। আবার যে যার রুমে চলে গেলো। আজান দিলে নামাজ পড়তে গেলো ছেলেরা। জুবরান এসে শুয়ে পড়ল। শানায়া আর ঘুমাল না আজ সারাদিনের রান্না করে। ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল বাড়ি ছেড়ে। এই ক’দিন এই বাড়ি, এই বাড়ির মানুষটার ওপরে বড্ড মায়া পড়ে গেছে ওর ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না আবার থাকতেও ইচ্ছে করছে না।

শানায়াকে দেখে মিরাজ হাসান, শায়লা হাসান খুশি হয়ে গেলো। শানায়া মলিন হাসি মুখে বাঁধিয়ে রেখেছে। টিউলিপ, ডেইজি বেশ অনেকটা বাংলা শিখে ফেলেছে। ওদের সাথে কথা বলতে শানায়ার বেশ মজা লাগছে। টিউলিপকে দেখে খুশি লাগছে আগে দিনের মতো বিষণ্ণতায় ছেঁয়ে নেই। তাকে দেখে প্রকৃত সুখী মনে হচ্ছে। শানায়া জিজ্ঞেসা করেই ফেলল

–‘ এতো খুশি যে নিউ মেম্বার আসছে না-কি? ‘

টিউলিপ লজ্জা পেলো ভাঙা বাংলায় বলল
–‘ টুমিও না কীযে বলো! টোমার ব্রাদার আমাকে আগের চেয়ে কট লাভ করে। কটো ভালোবাসে, আমিও ভালোবাসি। আমাকে প্রোয়োরিটি দেয়, টাইম দেয়। আগে তো শুধু মানি বুঝত। ইউ নোউ, টার আইসে আমি আমার জন্য কটো ভালোবাসা দেখি’

হাবিব টিউলিপ ভালোবাসে শুনে ভালো লাগলো। শানায়ার মনটা খুশিতে ভরে উঠল। শানায়া সারাদিন ঘুরে ফিরে জুবরানের কথা মনে পড়ছে। কিছুতেই লোকটাকে মাথা থেকে সরাতে পারছে না। ফোন নিয়ে বসে আছে মনে মনে চাইছে লোকটা ফোন দিক জোর করে নিতে আসুক কিন্তু আসল না। শানায়া লোকটাকে সরাতে পাপড়ির সাথে দেখা করতে গেলো। এখন সে শশুড়বাড়িতে থাকে রায়হানরা এখনে তাদের নিজেদের বাড়ি বানিয়েছে সেখানেই উঠেছে। বাড়ির কাজ অনেক দিন ধরেই চলছিল। তাই তারা কাছেপিঠে ভাড়ায় উঠেছিল পাপড়িদের বাসায়। পাপড়িকে হাসিখুশি দেখাচ্ছে সে খুশি। শানায়ার হিংসা হচ্ছে ওর লাইফে কেনো সুখ নাই? চাইলেও কিছু মেনে নিতে পারছে না। ইফতার করে শায়লা হাসান নামাজ পড়ে তাসবী পড়ছিলেন। শানায়া ওনার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ল। শায়লা হাসান ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। শানায়া বলল

–‘ মামণি সালুশন দাও। আমার সব কিছু কেমন এলোমেলো লাগছে কিছু ভালোলাগছে না।’

শায়লা হাসান বুঝেছিল শানায়ার কিছু হয়েছে নাহলে যে মেয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে গেলো বলল আর আসবে না। কত জোড় করল সবাই মিলে কিছুতেই আনা গেলো না। সেই কিছু না বলে চলে আসল! তাই শানায়ার বলার জন্য অপেক্ষায় ছিল। বলল

–‘ আমি তো চিরকাল থাকব না। তুমি কবে নিজের সমস্যা গুলো সমাধান করতে পারবে?’

শানায়া অসহায় ছলছল চোখে তাকালো। বলল
–‘ একদম খারাপ কথা বলবে না। তুমি সবসময় আমার সাথে থাকবে। আমি হারাতে হারাতে ক্লান্ত’

–‘ কী হয়েছে? ঝগড়া করছ জুবরানের সাথে?’

শানায়া অবাক হলো না। ও জানে পাপড়ি সব বলে দিয়েছে শায়লাকে তাই সবটা বলে হালকা হলো। শায়লা হাসান বলল

–‘ দেখ আমার সবাই ভুল করি। তোমাদের বয়স তখন অল্প ছিল। তোমরা ভুল করেছ। বড়দের কথা বলছি না ওটা তোমার সিদ্ধান্ত। আমি তোমার আর জুবরানের কথা বলছি। তুমি ফিরে যা-ও, মানিয়ে না-ও, সংসার করো। তুমি ওকে ভালোবেসে ফেলছ। শুধু তোমার মধ্যে দ্বিধা কাজ করছে সবটা মেনে নিতে। কমতো শাস্তি পেলে না দুজনে! অনেক বছর আলাদা থেকেছ, অনেক কষ্ট পেয়েছ। ও যখন তোমার সাথে তোমার কষ্ট গুলো ভাগ করে নিতে চাইছে তাহলে ক্ষমা করে দিতে ক্ষতি কী? আমার মনে হয় ও তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছে নাহলে তোমার সাথে থাকতে চাইত না। আর তাছাড়া জুবরান যদি না ফিরত, ফিরে এসেও যদি খারাপ ব্যবহার করত তাহলে আমি তোমাকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিতাম। আমি তোমাকে সুখী দেখে ম*রে শান্তি পেতাম। সুখ যখন নিজে পায়ে এসেছে তাহলে কেনো দূরে ঠেলে রাখছ?’

–‘ আমি ওদের কাউকে ক্ষমা করব না প্রশ্নই আসে না। ভয় হচ্ছে যদি জুবরান যদি আবার ঠ*কা-ই’

–‘ একটা কথা মাথায় রাখবি মানুষ সব পাপের শাস্তি ইহকালে পায় না পরকালে পায় তাই ধৈর্য্য ধর নিশ্চয়ই তাদের সকল শাস্তি পাবে। আর ন্যাড়া বেল তলায় কিন্তু একবারই যায়। যদি জুবরান এমন করে তোকে আমি অন্য জায়গায় ওকে দেখিয়ে দেখিয়ে বিয়ে দিব তোর বিয়ে তে জুবরান চিফগেস্ট হিসাবে থাকবে’

শানায়া ফিক করে হেসে ফেলল। শায়লাও তাল মিলালো। শানায়া দুই দিন এ বাড়িতে থাকল নিজেকে শান্ত করে ও বাড়িতে গেলো। জুবরান তখন অফিসে। শানায়া দুদিন খোঁজ নিয়েছে রাহাতের কাছ থেকে। জুবরান না-কি অফিসে খুব হমড়িতমড়ি করে সবাইকে দৌড়ের ওপরে রাখছে। অফিসের সবাই জুবরানকে গালি দিয়ে ধুয়ে দিচ্ছে। শানায়া বাবা, জুবরানের বাবা, নুবাহান বাসা ফিরে গেছে। জিনিয়া নাকি বলেছে ওবাড়িতে আর ফিরবে না ছেলের সাথে থাকবে। জুবরান বাসায় এসে শানায়াকে দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলো। পরক্ষণে মনের ভুল ভেবে এড়িয়ে গেলো। শানায়ার ভ্রু কুঁচকে গেলো। রাগে মাথা দপদপ করে উঠল। জুবরান ফ্রেশ হয়ে এসে আবার মনে ভুল ভেবে চলে যাচ্ছিল। শানায়া জুবরানের টিশার্টের কলোয়ার টেনে ধরতেই জুবরান চমকে বলল

–‘ তুমি? এখানে? তুমি সত্যি এখানে?’

–‘ তো আমি নয় তো কী আমার ভুত? আমাকে ইগনোর করছ? ‘

জুবরান থতমত খেয়ে গেলো। শান্ত হয়ে কিয়ৎ তাকিয়ে থেকে। শানায়ার কোমড়ে চেপে নিজের কাছে টানল। শানায়া পিটপিট করে তাকিয়ে রইলো।

–‘ ফিরে আসলে কেনো? মিস করছে বুঝি?’

শানায়া ভেংচি কেটে বলল
–‘ আপনাকে না আপনার বাড়িটাকে ভিষণ মিস করছিলাম।’

–‘ ওহ আই সি!’

–‘ কী?’

–‘ তোমাকে হ**ট লাগছে!’

কথাটা বলে জুবরান শানায়ার গালে টপাটপ চু*মু খেলো। শানায়া বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে বলল
–‘ ছিঃ রোজার মাসে এসব কী?’

–‘ শুকনো চু**মু খেলে কিছু হয় না’

শানায়া ইতস্তত করে বাচ্চা বাচ্চা ফেস করে বলল
–‘ আই পেয়ার ইউ। উইল ইউ পেয়ার মি?’

জুবরান গম্ভীর কণ্ঠে বলল
–‘ কী বললে? শুনতে পাই নি। আবার বলো!’

শানায়া রাগ করে জুবরানকে ধাক্কা দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল
–‘ শুনতে হবে না বয়রা মুরগি’

জুবরান ভ্রু কুঁচকে বলল
–‘ তুমি আমার কী পুরোনো ফর্মে চলে গেলে না-কি? গেলে আমারই ভালো। কেননা সেই আমার তুমি টাকেই আমি ভালোবেসেছিলাম’

শানায়া গম্ভীর কণ্ঠে বলল
–‘ আমার সাথে শুধু ভাব নেওয়া না?’

–‘ তো আমার একমাত্র বউ না? ভাব তো দেখাতেই হবে!’

শানায়া জুবরানকে জড়িয়ে ধরল জুবরান বলল
–‘ সরি… সরি ফর এভরিথিং’

–‘ সরি ঠু! এন্ড লাভ ইউ সো মার্চ…’

#সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে