#প্রণয়সন্ধি– ০৪ পর্ব
#তাসনিম_তামান্না
কাল ক্লান্তির কারণে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে ফলস্বরূপ অফিসে আসতেও দেরি হয়ে গেছে। ডেক্সে এসে বসে স্বতির নিঃশ্বাস ছাড়তেই স্যার নাকি ডেকে পাঠিয়েছে। শানায়া প্রথমে বুঝতে সময় লাগলো স্যারটাকে পরে জুবরানের কথা মনে পড়তেই ভয়ে ভয়ে গেল। নক করতেই জুবরান বলল
–‘ কামিন ‘
শানায়া কেবিনে গিয়ে কাচুমাচু করে বলল
–‘ জী স্যার’
–‘ এখন কয়টা বাজে এখন কি অফিস টাইম? আপনি কি নিজের ইচ্ছে মতো অফিসে আসেন প্রতিদিন? ‘
–‘ সরি স্যার ‘
–‘ ফাইলগুলো নিয়ে যান কাজ ঠিকঠাক ভাবে টাইমলী চাই আমার।’
–‘ জী স্যার ‘
শানায়ার যাওয়ার দিকে শক্ত চোখে তাকিয়ে রইল জুবরান। শানায়া ডেক্সে গিয়ে মাথা চেপে ধরে বসল। বড্ড মাথা ব্যথা করছে। তার ওপরে আবার জুবরানের অর্ডার। শানায়া বেশ বুঝতে পারছে জুবরান ওকে কাজ দিয়ে টাইট দিতে চাইছে। রাহাত এসে বলল
–‘ বিউটি কুইনের মাথা ব্যাথা না-কি? চলো কফি খেয়ে আসি ‘
–‘ না ঠিক আছি রাহাত ভাই’
–‘ নামের শেষে ভাই লাগাও কেনো বলো তো বিরক্তি কর লাগে’
শানায়া হাসল কিছু না বলে কাজে মন দিল। জুবরান প্রথম দিন অফিসে এসে সবাইকে দৌড়ের ওপরের রাখছে। সবাই বিরক্ত হচ্ছে আবার ভয় ও পাচ্ছে।
শানায়া বেশ কয়েকটা জায়গায় জবের এপ্লাই করেছে ও ভেবেই ফেলেছে এখানে কাজ করবে না। কিন্তু ঢাকা শহরের একটা ভালো বেতনের চাকরির বড্ড অভাব।
শানায়া ফাইলের কাজ শেষ করে জুবরানের রুমে যেতেই জুবরান বলল
–‘ আজ শারমিন চৌধুরির মেয়ের বিয়ের প্রডাক্ট সেল করার কথা ছিল করেছেন সেটা? ‘
–‘ স্যার ওটার একটু ফিনিশিং বাকি… ‘
শানায়া কথা শেষ না হতেই জুবরান চেচিয়ে উঠলো
–‘ হোয়াট! আজ সেল করার কথা ছিল এখনো সেটার ফিনিশিং বাকি! এভাবে কাজ করছেন আপনার? ‘
শানায়া ভয়ে পেয়ে শুকনো ঢোক গিলে বলল
–‘ সরি স্যার ব্যাপারটা দেখছি ‘
–‘ আজকের মধ্যে যেনো তাদের হাতে প্রডাক্ট পৌঁছে যায়। এই বড় অর্ডারটা আপনারা গুরুত্ব সহকারে করতে পারলেন না? এমন করে বিজনেস লাটে উঠাবেন বলে ভেবেছেন আপনারা? ‘
শানায়া বাঘের খাচা থেকে বেড়িয়ে শো রুমে গিয়ে কাজে তাড়া দিতে বলল। ভয়ের চোটে দুপুরের খাবার খেতেও ভুলে গেলো। প্রডাক্টটা সেল করে ৪টার দিকে ক্যান্টিনে গিয়ে বসে অর্ডার দিতেই বসতেই আবার জুবরানের ডাক পড়ল অর্ডার ক্যান্সাল করে জুবরানের কেবিনে যেতেই জুবরান বলল
–‘ কাজটা কি হয়েছে? ‘
–‘ জী স্যার ‘
–‘ কালকের অর্ডার গুলো আজকের মধ্যে শেষ করে রিচেক করে কাল সকাল সকাল পাঠিয়ে দিতপ বলুন ‘
–‘ জী স্যার’
সকলে ভেবেছিল জুবরান নরম মনের হবে কিন্তু প্রথম দিন অফিসে এসে যে ভেলকি দেখালো তাতে সকলে ভয়ে আছে কখন ভুল করে আর কখন ফাই’য়ার করে দেয়।
–
পাপড়ি আজ অফিস থেকে দুপুরের চলে এসেছে। অফিসেও এখন আর শান্তি পাচ্ছে না বাঁদর ছেলেটাকে সবাই দেখতে চাইছে। পাপড়ি সত্যি কথাটা বলতেও পারছে না। কীভাবে বলবে! তার বয়সের ছোট ছেলে তার পিছনে পড়ে আছে সকলে কিভাববে। তাই আর অফিসে টিকতে না পেড়ে বাসা এসেছে বিকালে রায়হানকে ধরে ইচ্ছে মতো চ’ড়িয়ে নিবে! পরিকল্পনা অনুযায়ী বিকালে ছাদে গিয়ে দেখল রায়হান আছে কিন্তু বিপত্তি বাদলো রায়হানের মা’কে নিয়ে পাপড়িকে দেখে হাসি মুখে গল্প জুড়ে দিলেন। রায়হান ভদ্র ছেলের মতো বসে আছে। মাঝে মাঝে মায়ের চোখের আড়ালে পাপড়িকে চোখ মে’রে জ্বালাচ্ছে। রায়হানের মা অন্য দিকে ফিরতেই পাপড়ি রায়হানের পিঠে দুম করে বসিয়ে দিল। রায়হান ব্যথাতুর শব্দ তুলতেই রায়হানের মা প্রশ্ন করল
–‘ কি হয়েছে? ‘
রায়হান মুখে কৃত্রিম হাসি টেনে বলল
–‘ কই কিছু না ‘
পাপড়ি মুখ টিপে আসলো। বেশ শান্তি শান্তি ফিল হলো ওর রায়হান বিরবির করে বলল
–‘ গুন্ডি’
কথাটা পাপড়ি শুনতে পেল না বলে কিছু আর বললও না। খুশি মনে কিছুক্ষণ বাদে চলে গেলো।
এ বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তালার দুষ্টু বাচ্চাটা দেখেছে পাপড়ি যে রায়হানকে মে’রেছে। তাই পাপড়ি চলে যেতেই রায়হানের পাশে এসে বলল
–‘ কেমন খেলে?’
রায়হান বুঝতে না পেরে বলল
–‘ কি কেমন খেলাম?’
–‘ দুম ‘
রায়হান চোখ পাকিয়ে তাকালো। বাচ্চাটা ফিসফিস করে বলল
–‘ বলে দিব কিন্তু! ‘
রায়হান মুহূর্তে পাল্টি খেয়ে বলল
–‘ তুই তো অনেক কিউট চকলেট খাবি?’
–
শানায়া বাড়ি ফিরে বিছানায় শুয়ে পড়লো আর উঠার শক্তি নেই ওর। শায়লা হাসান ভাত এনে নিজের হাতে খাইয়ে দিল শানায়াকে।
–‘ কীভাবে বুঝে যাও বলো তো!’
–‘ মায়েরা বুঝতে পারে!’
–
অফিস থেকে ফিরে ঘুম দিয়ে উঠে কফি বানিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো জুবরান। পুরো ফ্ল্যাটে ও ছাড়া কেউ নেই। অথচ দিনগুলো অন্যরকম হওয়ার কথা ছিল। সেই যে বাড়ির থেকে অভিমান করে চলে আসল আজ ৬ বছর আর কারোর সাথে দেখা হয় নি। কিন্তু কথা হয়েছে মা কান্না কাটি করে ফিরে যাওয়ার জন্য কিন্তু ও ফিরে নি। জুবরান কফি খেতে খেতে ব্যস্ত শহরবিলাস করছিল তখনই ওর ফোনে কল আসে বড় ভাই নুবাহানের থেকে ফোন রিসিভ করে কুশলাদি বিনিময় করে নুবাহান বলল
–‘ দেশে ফিরছিস?’
জুবরান সোজাসাপ্টা উত্তর দিলো
–‘ হ্যাঁ’
–‘ অনেক তো হলো এবার বাসায় ফির’
–‘ যেটা সম্ভব না সেটা বলবে না!’
–‘ তুই যখন বাসায় ফিরবি না তাহলে আমাদের সবার জন্য গিফট পাঠিয়েছিস কেনো?’
জুবরান এ প্রশ্নের উত্তর দিলো না উল্টো প্রশ্ন করল
–‘ শানায়া কোথায় ভাইয়া?’
ফোনটা লাউডস্পিকারে দেওয়া ছিল সবাই বসে বাড়ির আদরের ছেলের কথা শুনছিল কিন্তু হঠাৎ এতো গুলো দিন পর শানায়ার কথা শোনায় সবাই চমকে গেলো। নুবাহান একটু সময় নিয়ে উত্তর দিল
–‘ আছে’
–‘ কোথায় দাও তো কথা বলি!’
–‘ রুমে আছে পরে বলিস ‘
–‘ মিথ্যা বলা আমি পছন্দ করি না ভাইয়া রাখছি ‘
রাগে জুবরানের শরীর কাঁপছে কিভাবে এতোগুলা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবে বুঝতে পারছে না। ফোনের গ্যালারিতে গিয়ে হাসিখুশি পরিবারের ছবি জুম করে দেখছে। ওর কাছে মনে হচ্ছে এতো কিছু দিন আগেও সবাই একসাথে ছিল।
।।অতীত।।
সময়টা তখন জানুয়ারির প্রথম শীতের কুয়াশায় ঢাকা ছোট সাতক্ষীরা শহরে চারতালা বাড়িটা জুড়ে জয়েন্ট ফ্যামেলি থাকে। আজকালে এমন জয়েন্ট ফ্যামিলি খুজে পাওয়া যায় না সকলে এপরিবারের গুনগান করে শুনতে বেশ লাগে। সকালে উঠতেই বাচ্চাকাচ্চাদের কান্না কাটি এই শীতের সকালে লেপ ছেড়ে কিছুতেই উঠবে না বাড়ির গিন্নিরা বাচ্চাদের ঠেলেঠুলে স্কুলের জন্যে রেডি করছে। জুবরান ভোররাতে উঠে পড়তে বসছে তার ইয়ার চেজ্ঞ পরিক্ষা চলছে। জুবরান শানায়ার রুম ক্রস করছিল তখন ঘুমাচ্ছে দেখে গিয়ে শানায়ার গায়ে পানি ঢেলে দিল। শানায়া চিৎকার দিয়ে উঠে বসে বলল
–‘ পাপা বাঁচাও পানিতে ডুবে গেলাম ‘
পরক্ষণে জুবরানকে দেখে রাগি চোখে তাকিয়ে বলল
–‘ আআআ জুবরানের বাচ্চা এটা কি করলি শীতে আমি ম’রে গেলাম’
–‘ নাটক বন্ধ করে স্কুলে যা ‘
শানায়ার চিৎকার শুনে জুলেখা এসে শানায়ার অবস্থা দেখে বলল
–‘ জুবরান একটা ভালো কাজ করছিস। নাহলে এই মেয়েকে উঠাতে আমার সময় শেষ হয়ে যেত’
–‘ আম্মু তুমি জুবরানের মা না-কি আমার মা ‘
–‘ অবশ্যই আমার মা! আর তুই আমার নাম ধরে ডেকেছিস তার জন্য তোর পারনিসমেন্ট তুলে রাখা রইল’
–‘ তুই যা বাবা তোর এক্সাম ওর ওপরে আর মাথা গরম করিস না’
প্রতিদিন সকালে এমন দুষ্টু মিষ্টি কাটতো। সন্ধ্যায় পড়াশোনা শেষ করে সবাই একসাথে গল্প হাসিমজায় মেতে উঠত।
জুলেখা জিনিয়া জমজ বোন আবার দুইজা জিনিয়ার বিয়ে টা এরেজ্ঞম্যারেজ হলেও জুলেখা বিয়েটা প্রেম করেই করেছিল তাও ভাগ্যক্রোমে একবাড়িতেই হয়। সব সুখের হলেও জিনিয়ার দুইটা ছেলে হয়ে গেলেও জুলেখার প্রেগ্ন্যাসিতে কমপ্লিকেশন থাকায় অনেক কষ্টে পর শানায়া হয়। সেজন্য শানায়ার আদরের শেষ নেই।
এমন একদিন স্কুল থেকে এসে শানায়া আবদার করল তার ফোন লাগবে ক্লাসের সবার ফোন আছে শুধু ওর নেই। কেউ দিতে রাজি হলো না। শানায়া কান্নাকাটি করে রাজি করিয়ে নিল কিন্তু বেঁকে বসে রইল জুবরান সে কিছুতেই শানায়াকে ফোন কিনতে দিবে না।
চলবে ইনশাআল্লাহ
#প্রণয়সন্ধি– ০৫ পর্ব
#তাসনিম_তামান্না
শানায়ার ফোন কিনে দিবে না সেই শোকে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দরজা বন্ধ করে বসে রইল ফোন কিনে না দিলে না-কি রুম থেকে বের হবে না। জুবরানের মন গোলে গেলো। রাজি হলো ফোন কিনে দিতে। ফোন কিনে এনে শানায়ার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলল
–‘ শানায়া দরজা খোল ফোন কিনে এনেছি ‘
শানায়া প্রথম বিশ্বাস না করে বলল
–‘ মিথ্যা বলছ আমি জানি’
–‘সত্যি কি মিথ্যা দরজা খুলেই দেখ’
শানায়া দরজা খুলে শুকনো মুখে হাসি ফুটলো ফোন দেখে। শানায়াকে দরজা খুলতে দেখে সকলে চলে গেলো ও খুশিতে হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে জুবরানকে জড়িয়ে ধরে বলল
–‘ থ্যাংকিউ। থ্যাংকিউ ভাইয়া’
জুবরান চমকে শানায়া সরিয়ে দিয়ে বলল
–‘ কি করছিস বড় হয়েছিস কোনো সেন্স নাই তোর’
শানায়া ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে বলল
–‘ কেনো কি করেছি আমি! ‘
জুবরান গম্ভীর মুখে বলল
–‘ যখন তখন জড়িয়ে ধরবি না ‘
–‘ কেনো তুমি তো আমার মিষ্টি ভাইয়া’
–‘ আমি তোর ভাইয়া না
শানায়া মন খারাপ হয়ে গিয়ে ও ফোন কেড়ে নিয়ে বলল
–‘ যাও আমার ভাইয়া হতে হবে না আমার নুবাহান ভাইয়া আছে’
জুবরান সে কথার প্রতিত্তোর না করে বলল
–‘ ফোনে জিমেইল ফেসবুক সব খুলে দিয়েছি। ‘
–‘ আচ্ছা ‘
জুবরান চলে যেতে নিয়েও ফিরে এসে বলল
–‘ কোনো উল্টো পাল্টা কিছু না দেখি যদি দেখি ফোন নিয়ে নিবো তুই কাঁদতে কাঁদতে ম’রে গেলেও আর ফোন দিব না ‘
শানায়া ভেংচি কেটে বলল
–‘ দেখা যাবে
শানায়া নতুন ফোন পেয়ে মহাখুশি হয়ে ফেন্ড ফেসবুকে এড করছে। শানায়া তো জানে না ও ফোনে যা করবে জুবরান সেটা দেখতে পারবে এমনকি ফেসবুকের পাসওয়ার্ড ও জুবরানের জানা। বোকা মেয়ের মাথায় এসব কিছু আসে নি। ফেসবুকে যারা ফেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠিয়েছে সব একসেপ্ট করে মেসেজ দিলে সবার সাথে কথা বলে তার অধিকাংশ সব ছেলে। জুবরান চুপচাপ সবটা সহ্য করে শানায়াকে কিছু বলে না। ফোন পেয়ে শানায়া পড়াশোনায় মন নেই সারাদিন ফোন নিয়ে থাকে পড়ার বইয়ের মধ্যেও লুকিয়ে ফোন চালায়। হঠাৎ একদিন রাতে সকলে খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়েছে জুবরান পড়াশেষ করে ফোন হাতে নিয়ে শানায়ার ফোন এক্সেস চালু করল দেখল শানায়ার ফোনে এ’ডা’ল্ট ভি-ডিও দিয়েছে কোন এক আইডি থেকে জুবরান চমকে গেলো দেখল শানায়ার প্রতিক্রিয়া কি হয়!
শানায়া বা’জে ভি-ডিও পেয়ে রেগে গিয়ে বলল
–‘ এসব কি? এসব দিচ্ছো কেনো?’
শানায়ার ফেন্ড বলল
–‘ দেখ ম-জা পাবে ‘
–‘ না এসব খারাপ ‘
–‘ আরে খারাপ হবে কেনো? ভালোই দেখ ‘
শানায়া আর তার মেসেজের রিপ্লাই করল না। নিরবতায় সম্মতির লক্ষ্মণ ভেবে। জুবরান রুম থেকে বের হয়ে শানায়ার রুমে নক করল শানায়া রুম লক করে না আর বাবা-মা ছাড়া কেউ আসলে নক করে আসে।
–‘ কে আসো’
জুবরান দরজা ঠেলে ভিতরে গিয়ে বলল
–‘ কি করছিলি?’
শানায়া ভয় পেয়ে গেলো বলল
–‘ ঘুমাব’
–‘ ফোনে কি করছিলি?’
–‘ কই কিছু না তো!’
–‘ নিজেকে এতোটাও চালাক ভাবিস না তোর বাবা-মা আমি কিন্তু এখনো কিছু বলে নি। তুই যে কতটা বিয়া*দ্দপ হয়ে গেছিস ‘
–‘ এসব কি বলছ
–‘ তোর ফেন্ড লিস্টে এতো ছেলে কেনো তাদের সাথে তোর এতো কি কথা?… কি হলো কথা বলছিস না কেনো? চুপ করে আসিস কেনো বল!’
–‘ আসলে…’
–‘ ফেসবুক চালানোর দরকার নেই’
শানায়া চোখ ছলছল করে তাকিয়ে বলল
–‘ সরি আর হবে না এমন ‘
–‘ সব ক’টা’কে ব্লক মা’র ‘
শানায়া ফোন এগিয়ে দিয়ে বলল
–‘ তুমি দিয়ে দাও। আম্মু পাপাকে বলো না প্লিজ’
জুবরান কিছু বলল না। শানায়া কয়দিন ভালো ভাবে ছিল। কিছুদিন পর তার মাথায় আবার ভুত চাপলো ও টিকটক করবে রিং লাইট কিনে দিতে হবে। সবাই বুঝতে পারছিল শানায়া দিন দিন উৎচ্ছন্নে যাচ্ছে আবার কিছু বললেই খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দরজা বন্ধ করে দেয়। আদুরে মেয়ে না আবার কোনো ভুল স্টেপ নিয়ে বসে ভয়ে আর কেউ কিছু বলে না। দিন যাচ্ছে শানায়ার পাগলামি বাড়ছে। জুবরান গ্রাজুয়েট হয়ে বেড়িয়ে এসেছে আর কিছু দিন পর দেশের বাইরে যাবে উচ্চশিক্ষার জন্য। তখন শানায়া মাত্র ক্লাস টেনে
–‘ভদ্রবাড়ির কোন মেয়েটা এভাবে ক্যামেরার সামনে ধেই ধেই করে নাচে দেখাতে পারবি আমাকে? আর তোর না সামনে এসএসসি পরিক্ষা সারাদিন পড়াশোনা না করে নাচানাচি করলে ফেল করবি ফেল তখন তোর এই টিকটক এসে সান্ত্বনা দিবে না উল্টো হাসাহাসি করবে মজা নিবে”
শানায়া দেখলো রিংলাইট স্টান্ডে বসানো ফোনের টাইম সেট করা ৩০ সেকেন্ডের নাচের ভিডিওর জায়গায় থাপ্পড় মারার ভিডিও হয়ে গেছে। সেটা দেখে শানায়া গালের ব্যাথা ভুলে গিয়ে জোরে চিৎকার দিয়ে বলল
–‘এই তোমার সাহস কেমন করে হয় আমার ভিডিও নষ্ট করার আবার আমাকে মারছে”
–‘সাহসের আর দেখলি কি? বাসার কেউ কিছু বলে না দেখে মাথায় চড়ে বসেছিস? আবার অভদ্রের মতো চিল্লাস!”
–‘সেটাই তোমারর সমস্যা কি আমার পিছনে কেনো পড়েছ? আমি তোমার ব্যাপারে কোনো কথা বলি তুমি কেনো আমার ব্যাপারে আগ বাড়িয়ে তোমার ১৪ ইঞ্চি লম্বা হাতির সুরের মতো নাকটা আমার কাজে বাগড়া দেও”
–‘আমি তো তোর মত অভদ্রতা করি না আর না তোর মতো থ্রাড ক্লাস ওয়াড ইউস করি তাই স্কোপ পাস না কিছু বলার। কিন্তু তুই তো সেকেন্ডে সেকেন্ডে অকাজ করিস তাই আমি তোর কাজে বাগড়া দিতে বাধ্য হই। আর যেখানে তোর মতো রাস্তা থেকে কুড়িয়ে আনা মেয়েকে বাসার মেয়ে বলে সবার পরিচয় দিয়েছে তাই এসব অকাজ করলে আমার পরিবারের সম্মান যাবে সেজন্য তোকে বাগড়া দি”
কথাটা বলে জুবরান আর দাড়ালো না গটগট করে চলে গেলো। শানায়া রাগে সাপের মতো ফোঁস ফোঁস করতে লাগলো। ফোনটা নিয়ে ভিডিওটা ডিলিট করে দিলো। আয়নার সামনে গিয়ে গালটা ভালো করে দেখলো জুবরান যে গালে চড় মারছে সে গালে ৩ আঙ্গুলের ছাপ বসে গেছে। শানায়া রাগে দুঃখে কান্না পাচ্ছে মনে মনে বলল “এই গাল নিয়ে কিভাবে ভিডিও বানাবো এই দাগ ডাকার জন্য মেকাআপ করে ভুত হতে হবে। না এই জুবরানের বাচ্চা’কে কঠিন থেকে কঠিন শাস্তি দিতে হবে না হলে এই কু*ত্তা, বিলাইটার দিন দিন সাহস বেড়ে যাইতাছে যখন তখন আমার সুন্দর গালটায় ঠাস ঠাস করে মেরে লাল করে দিচ্ছে। আজই এর বিচার চাই-ই চাই”
–‘মামনি মামনি ও মামনি…ও মামনি গো…”
জিনিয়া বেগমের কাছে গিয়ে আচ্ছা করে বিচার দিল তিনিও জুবরানকে বকে দিল তাতে অবশ্য জুবরানের কিছু যায় আসল না। জুলেখা মেয়ের বিরুদ্ধে গিয়ে জুবরানকে সাপোর্ট করল তাতে শানায়া রেগে কান্না করতে করতে রুমে চলে গেলো।
বর্তমান
জুবরান হেসে ফেলল শানায়ার বাচ্চামির কথা ভাবতে ভাবতে।
আজ ছুটির দিন শানায়া প্রতিবার ছুটির আগের দিন ভাবে কাল সারাদিন ঘুমাবে কিন্তু সেটা সম্ভব হয় না ওর ফেন্ডদের জন্য এবার ও তাই হলো সকাল ফোন দিয়ে ওর মিষ্টি ঘুম ভাংগিয়ে দিল ফোন তুলতেই মিষ্টি কণ্ঠে বাচ্চা মেয়েটা বলল
–‘ ফুপিমণি তুমি আচবা না?
ওর পাশ থেকে বলল
–‘ ফুপি না খালামনি বলো মা’
–‘ এই না মা তুমি ফুপিমনি বলবা’
শুরুহলো ঝগড়া বাচ্চাটা ভয়ে কেঁদে দিল বাবা-মার ঝগড়া দেখে। শানায়া বিরক্ত হয়ে বলল
–‘ মামনি কাদে না মনি আসছে ওকে কাদে না বাচ্চা’
শানায়া হেলতেদুলতে ফ্রেশ হতে গেলো।
আজ ছুটির দিন হলেও পাপড়ির ছুটি নেই সাংবাদিকদের ছুটি থাকে না তাদের খবর খুজতে বের হতে হয় এগলি সেগলি। তাদের হাড়ির খবর বের করে ফাঁস করতে হয় আবার মাঝে মাঝে ভুল খবরও ছাপিয়ে ফেলে অজান্তেই।
পাপড়ি প্রতিদিনের মতো আজ ভোরেও ছাদে আসল। রায়হানকে দেখে একটু চমকালো এতো সকালে ও এছেলে ছাদে আসে না। সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বলল
–‘ এখানে এখন কি করছ?’
–‘ তাহার অপেক্ষায়! ‘
–‘ আমার সাথে বিয়া*দ্দবি করবা না!’
–‘ কেনো আপনি কোন দেশের প্রেসিডেন্ট! ‘
পাপড়ি রাগি চোখে তাকিয়ে বলল
–‘ কি সমস্যা তোমার জন্য আমার সবজায়গায় ফেসলস হতে হয়। তোমার আইডিয়া আগে কোনো সবসময় সবজায়গায় মজা মানায় না। তুমি তো বাচ্চা নও যে বুঝবে না’
–‘ ভালোবাসি মেনে নিলেই হয় ‘
–‘ সকাল সকাল মেজাজ খারাপ করো না রায়হান’
–‘ ইশশ! তোমার মুখে আমার নাম শুনে মে তো মা’র গেয়া’
পাপড়ি রেগে ‘ধ্যৎত’ বলে চলে গেলো।
চলবে ইনশাআল্লাহ