#প্রণয়সন্ধি– ১৬ পর্ব
#তাসনিম_তামান্না
প্রগাঢ় রাত ঝড়ের তীব্রতা বেড়েই চলছে ঝুম শীলা বৃষ্টি পড়ছে। শানায়া আজ কতদিন পর এ বাড়িতে আসল তা-ও এমন একটা পরিস্থিতিতে। পাপড়ি থম মেরে বসে আছে। শানায়া এতো কথা বললেও ও তার উত্তর দিল না। তাই শানায়া হাল ছেড়ে দিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে। আলোচনা তখনো চলছে।
সকল আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো বিয়ে যখন হয়েই গেছে তখন থাক ওরা একসাথে সংসার করুন। ছেলেমেয়ে যেটাতে সুখী হয় সেভাবেই থাকুক। তাছাড়া বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধন তো আর হেলাফেলা করা জিনিস নয়। মন চাইলো বিয়ে করল আবার ভেঙে ফেললো এমন তো নয়!
তবুও রায়হানের মা ক্ষুদ্ধ হয়ে রইলো মনে মনে। একমাত্র ছেলে তাকে নিয়ে কত আশা ভরসা সব পানিতে গেলো। সব রাগ গিয়ে পড়ল পাপড়ির ওপর অথচ তার কিনা কোনো দোষ নেয়।
রায়হানের বাবা নরম মনের মাটির মানুষ তিনি মেনে নিয়েছে। তার সাদা মনে কোনো কাঁদা নেয়। তিনি ফ্রিজ থেকে মিষ্টি করে সবাইকে মিষ্টি মুখ করালেন। রায়হায় অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ও ভাবি নি সবাই মেনে নিবে। এতোক্ষণ মনে মনে ছক কষছিল এখান থেকে বেড়িয়ে কি কি করবে। কিন্তু সকলের সিদ্ধান্ত শুনে মনে শান্তি পেলো। বাবা-মা কে ছাড়া থাকতে ওর ভীষণ কষ্ট হতো!
সবার সিদ্ধান্ত শুনে শানায়াও খুশি হলো। পাপড়ি সে সিদ্ধান্ত শুনে উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল। তার মনে কি যে চলছে সেটা কেউ বুঝতে পারল না। শানায়া কাচুমাচু করে রুমের বাইরে আসল। হাবিবকে দেখে অস্বস্তি অনুভব হচ্ছে কখন আবার কীভাবে অপমান করে।
শায়লা হাসান শানায়াকে দেখে বলল
–‘ কী হয়েছে খুদা লাগছে? আয় খেতে দি। ঠিক মতো খাস না নাকি? মুখ শুকিয়ে গেছে’
–‘ না এখন চলে যাব।
শায়লা হাসান আর মিরাজ হাসান অবাক হয়ে বলল
–‘ এই রাতের বেলা কোথায় যাবি?’
–‘ ফ্ল্যাটে যাবো। আসলে না গেলে বাড়িওয়ালা সমস্যা করবে’
–‘ আজ রাতটা থাক কাল যাস’
–‘ বাবাই তুমি বুঝতে পারছ না…’
হাবিব গম্ভীর কণ্ঠে বলল
–‘ বড়রা একটা কথা বললে সেটা শুনতে হয় জানিস না?’
শানায়া চমকে হাবিবের দিকে তাকিয়ে বলল
–‘ আসলে ভাইয়া এক্সাম চলছে, আবার কাল অফিস আছে। যেতেই হবে’
শায়লা হাসান বলল
–‘ এখান থেকে অফিসে যাস। আর কোনো কথা শুনতে বা বুঝতে চাইছি না আমি’
অনেক বুঝিয়ে ও রাজি করাতে পারল না কাউকে। এ-তো কিছুর মধ্যে হাবিব কোনো রকম শানায়ার সাথে বাজে ব্যবহার করে নি। শানায়া ডেইজির সাথে বন্ধুত্ব হলো মেয়েটা ভারী মিষ্টি। শানায়া এটাও খেয়াল করল। হাবিবের স্ত্রী টিউলিপ কম কথা বলে একটু একটু বাংলা পারে তা-ও স্পষ্ট না। শশুড় শাশুড়ির কথাও মেনে চলে। শানায়া অবাকই হলো কেননা বাইরের দেশের মেয়েরা লিভ ইনে থাকলেও সংসার করতে চাই না। সেখানে টিউলিপ বাংলাদেশ এসে সংসার করছে শশুড় শাশুড়ির কথা শুনছে ব্যপারটা চোখে লাগার মতোই।
শানায়া কথার ছলে টিউলিপের কাছে শুনল ব্যপারটা যা বুঝল ব্যাপারটা এমন। টিউলিপ হাবিবকে প্রচন্ড ভালোবাসে আর হাবিবও এই দূর্বলতার সুযোগ নিয়েছে। হাবিবের ছলনা করার ব্যাপাটা টিউলিপ বুঝেও চুপ থাকে বড্ড ভালোবাসে তো! শানায়ার মনের ভুল ধারণা ভেঙে গেলো এতো দিন ভাবত বিদেশি মেয়েদের চরিত্র খারাপ কিন্তু তারা যে বাঙালি মেয়েদের মতোও ভালোবাসতে যানে তা অবিশ্বাস্য ছিল। তবে মনে মনে টিউলিপের জন্য বেশ মন খারাপ হলো হাবিবের ওপরে রাগ লাগল। মানুষ এতো খারাপ কীভাবে হতে পারে? তার মনুষ্যত্ববোধ নাই!
পরের দিন ফ্ল্যাটে ফিরতেই শানায়ার দিকে অন্য রুমমেটরা বাঁকা চোখে তাকাতে লাগলো। শানায়ার রাগে চিৎকার দিয়ে উঠে বলল
–‘ কী সমস্যা তোমাদের? এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? আমি কী খু’ন করে আছসি?’
সবার বড় যে মেয়েটা সেই মেয়ে রিনা বলল
–‘ চিৎকার করছ কেনো? সারারাত কোথায় ছিলে? একা একটা মেয়ে… আবার মাঝে মাঝে দেখি ফ্ল্যাটের সামনে থেকে ছেলেপেলে তোমাকে বাইকে নিয়ে যায় ব্যাপার কী? এখানে থাকতে হলে এসব নষ্টামি চলবে না বুঝছ?
ওর সাথে সকলে মত দিল সাথী অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলো। শানায়া হতভম্ব হয়ে গেলো। এগুলো কী শুনলো ওর নামে? মানুষের মনের মধ্যে যঘন্য চিন্তা ভাবনা। ভাই, বন্ধু সাথে বের হলেও তারা ভাবে প্রেমিকের সাথে বের হয়েছে। কী দিন আসলো। শানায়া শান্ত কণ্ঠে বলল
–‘ যারা আসে তারা আমার ফেন্ড ভাইয়ের চেয়ে বেশি বৈয়ি কম নয়। আর কাল বৃষ্টিতে আটকা পড়ছিলাম। চিন্তা করো না আমার এক পরিচিতর বাসায় ছিলাম। বিশ্বাস না হলে আমার সাথে চলো। তবুও আমার নামে এসব বলবে না।’
শানায়া আজ পরিক্ষা শেষ। এই ক’দিন জুবরান শানায়াকে তেমন জ্বালানি। শানায়া এক্সাম দিয়েছে ভালো করে। এক্সাম শেষের দিন রাতেই লাগেজ গোছানো শেষ। শানায়া এখান থেকে চলে যাওয়া নিয়ে সাথী ছাড়া আর কেউ জানে না। শানায়া জানাতেও চাইছে না ও জানে জানালে কেউ ওকে যেতে দিবে না। আজ ভেবেছে শায়লা হাসান আর মিরাজ হাসানের সাথে দেখা করে সময় কাটিয়ে আসবে। আর পাপড়ির সংসারের কী খবর সেটা দেখে আসবে আবার কবে না কবে দেখা হবে ঠিক নাই।
যে-ই ভাবা সে-ই এবাড়িতে আসতেই সকলে খুশি হাবিবও ভালো ভাবে কথা বললো। শানায়া এসে অনেকক্ষণ শায়লা হাসানকে জড়িয়ে ধরে বসে রইল বুকটা কাঁপছে সবাইকে ছেড়ে কত দূরে চলে যাবে। ইশ! এই মা রূপী আরেক মাকে বড্ড মিস করবে। নিজের মা’কে তো কবেই হারিয়ে ফেলেছে। আর বাবা…! সারাদিন গল্প, মজা, হৈ-হুল্লোড়ের সারাবাড়ি মাতিয়ে রাখলো। পাপড়ি আগের মতোই নিজের ঘরে অফিস এসব নিয়ে আছে। বিয়ে যে হয়েছে যেনো এতে ওর লাইফে কোনো ইফেক্ট পড়ে নি কিছুই যায় আসে না। রায়হানকেও যতসম্ভব ইগনোর করে। শানায়া ছলেবলে একটু বোঝাতে গিয়ে নিজে ঝাড়ি খেয়ে মুখ গোমড়া করে বসে রইলো। সারাদিন গিয়ে বিকালে পাপড়ির কাছে গিয়ে বলল
–‘ তোমাকে জ্ঞান দিতে আসি নাই। শুধু একটু জড়িয়ে ধরবে? তারপর চলে যাবো। জানি না আবার কবে দেখা হবে’
পাপড়ি শানায়ার কথার মর্মাথ বুঝতে পেড়ে ঝাপটে ধরে বলল
–‘ না গেলে হয় না? এ বাড়ি থেকে তো চলেই গেছিস। এ শহর ছেড়ে না গেলে হয় না? যতটুকু চোখের দেখা দেখতে পেতাম তাও পাবো না’
–‘ তোমরা সকলে মিলে চলে যেও আমার কাছে আমার খুব ভালো লাগবে।’
–‘ ওখানে গিয়ে আমাকে ফোন দিবি রোজ। আমি অপেক্ষায় থাকব’
–‘ আচ্ছা। মামনি, বাবাইকে এখন বলার দরকার নেই আমি ওখানে চলে যাবার পর বলো’
শানায়ার আজ সন্ধ্যায় ট্রেন রাতে ট্রেন জার্নি না-কি অনেক ভালো লাগে ও কখনো যায় নি ফেন্ডদের মুখে শুনেছে তাই আজ ট্রাই করবে। আবার মনের মধ্যে ভয় কাজ করছে একা একটা মেয়ে।
ও যে আজ চলে যাবে এটা ফেন্ডদের ও বলে নি। শুধু রাহাতের কাছে একটা খামে করে অফিসের রিজাইন লেটার দিয়েছে। রাহাতকে বার বার সাবধান করেছে এটা যেনো কেউ না জানে ও চলে যাবার পর যাকে খুশি যানাক।
চলবে ইনশাআল্লাহ
#প্রণয়সন্ধি– ১৭ পর্ব
#তাসনিম_তামান্না
চারিদিকে মানুষ জনের সমাগম। স্ট্রেশনে বিভিন্ন মানুষ বিচিত্র তাদের জীবনধারা। সবার কাজকর্ম বসে বসে অবলোকন করছে শানায়া।
কমলাপুর রেলস্টেশন সন্ধ্যা সাতটার দিকে ট্রেন আসার কথা থাকলেও এলো আধাঘন্টা পরে। শানায়া বিরক্ত হলো না বরং সময়টাকে এনজয় করল। মনের কোণে সেই বাসা ছেড়ে আসার সন্ধ্যার সৃতি উঁকি দিলো। খারাপ চিন্তা পাখিরা এসে জানান দিল সেই দিনের কথা একটু একটু করে ভয় জমতে লাগল। আবার মনে সাহস আনল এখন ও বড় হয়েছে সেদিনের মতো ছোটটি আর নেই। ট্রেন আসতেই লোকজন হুড়মুড়িয়ে উঠতে লাগল। শানায়া এতো ধাক্কাধাক্কিতে হকচকিয়ে গেলো। নিজেকে সঘন্য মানুষের হাতের স্পর্শ থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে গিয়ে অনুভব করল কেউ ওকে আগলে জড়িয়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। পরমূহুর্তে খেয়াল করল এটা সিন্ধু রাঙা চোখের জুবরান। শানায়া একটু ঘাবড়ে গেলো জুবরানের থেকে ছাড়া পাওয়ার পাইতাড়া করতে লাগল। কিন্তু সফল হলো না।
–‘ কী করছেন? কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? আপনি আমার হাত ছাড়ুন’
জুবরানের চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট হিসহিসিয়ে বলল
–‘ আমি তোকে বারণ করছিলাম। শুনিস নি। তাই তোর কথা শুনতে আমি বাধ্য নই’
শানায়ার কোনো কথা না শুনে গাড়ির ফ্রন্ট সিটে একপ্রকার ছুড়ে ফেলল। লাগেজটা গাড়িতে উঠেয়ে নিজেও গাড়িতে উঠল। শানায়া এতো ধাক্কাধাক্কি করেও গাড়ির দরজা খুলতে পারি নাই। জুবরান যে লক করে দিয়েছে।
–‘ বেল লাগা’
শানায়া রাগে শব্দ করে ফোঁস ফোঁস করছে। জুবরান ওর দিকে ঝুঁকে আসল। শানায়া বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে পিছয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল কিছু জায়গার সংকুলান থাকায় আর পিছাতে পারল না। জুবরান বেল টেনে লাগাতে লাগাতে বলল
–‘ এতো রাগ শরীরের জন্য ভালো না। আর যেখানে আমার রাগ করার কথা সেখানে তোর রাগটা তুচ্ছ’
–‘ আপনি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছেন। আমাকে যেতে দিন’
জুবরান গাড়ি ঘোরাতে ঘোরাতে বলল
–‘ কোথায় যাবি’
–‘ যেখানেই যায় আপনার তাতে সমস্যা কী?’
–‘ ট্রেন চলে গেছে এখন যেখানে যাচ্ছিলি চাইলেও যেতে পারবি না’
শায়ানা রাগে দুঃখে কেঁদে চিৎকার চেচামেচি করল। জুবরান চুপচাপ শুনলো। উত্তর দিল না। শানায়াও ক্লান্ত হয়ে থেমে গিয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুম ভাঙতেই তখন নিয়েকে বিলাশ বহুল রুমে আবিষ্কার করল। শানায়া বুঝল এটা জুবরানের ঘর। রুম ফাঁকা কেউ নেই তাড়াহুড়ো করে দরজার দিকে এগিয়ে রুম ছেড়ে বাইরে চলে আসল।
জুবরান তখন কিচেনে খাবার রান্না করছে। চাইলেই ও খাবার অর্ডার দিতে পারত কিন্তু আজ ওর ইচ্ছে হয়েছে নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াবে যদিও ও ওতো ভালো রান্না পারে না নিজের চলার মতোই পারে। শানায়াকে আসতে দেখে বলল
–‘ উঠে গেছিস? ফ্রেস হয়েছিস?’
শানায়া উত্তর দিল না। দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করল না। ও ভ্রু কুঁচকে জুবরানের দিকে তাকিয়ে আছে। কয়েক পল পর বলল
–‘ আমি বাসায় যাব’
জুবরান কাজ করতে করতে বলল
–‘ এটা তোর বাসা এখানেই থাকবি। অন্যর বাসায় আর কত থাকবি?’
শানায়া দাঁতে দাঁত চেপে বলল
–‘ দ্যাটস ন্যান অফ ইউর বিজনেস। আমার লাইফ… আমার ইচ্ছে’
জুবরান শানায়ার দিকে একপলক তাকিয়ে কাজ করতে করতে বলল
–‘ তোর সাথে আমার লাইফ টাও জড়িয়ে আছে। তাই আমাকেও বুঝতে হবে।’
শানায়ার খুব জিদ লাগছে। জুবরানের এমন গা ছাড়া ভাব আরো ওর গা জ্বলিয়ে দিচ্ছে। শানায়া দুপদাপ করে পা ফেলে নিজের রাগ জানান দিয়ে বরাদ্দ করা সেই রুমে চলে এসে বিছানার এক কোণে বসে কাঁদতে কাঁদতে জুবরানকে ইচ্ছে মতো বকতে লাগল। কিছুক্ষণ পর কান্না থামিয়ে ভাবল এভাবে কিছু হবে না যা করতে হবে ভেবে চিনতে করতে হবে। রুমের দক্ষিণ দিকে একটা বারান্দা চোখে পড়লো ওর ধীর পায়ে থাইগ্লাস ঠেলে রেলিং ধরে দাড়ালো। নিচের দিকে তাকাতেই দেখল ও অনেক উপরে মানে এটা কোথায়? ভেবে পেলো না। রাস্তায় রংবেরঙের আলো, গাড়ির জ্যাম, রাস্তায় পাশে বেলুন দেখতে অসাধারণ লাগছে। জুবরান কাজ শেষ করে রুমে আসল শানায়াকে ডাকল রুমে, ওয়াসরুমে না পেয়ে ভয় পেয়ে গেলো। ততক্ষণা বারান্দার কথা মাথায় আসতে ছুটে গেলো। শানায়াকে ঝুঁকে থাকতে দেখে ওকে টেনে এনে ঠাস করে থা’প্প’ড় দিয়ে দিল। শানায়া গালে হাত দিয়ে হতভম্ব হয়ে তাকালো জুবরানের দিকে ও রক্ত চক্ষু নিয়ে বলল
–‘ কি করছিলি তুই?’
–‘ কি করব?’
–‘ এখনি তো পড়ে যেতি’
শানায়া গালে হাত দিয়ে অভিমানি ছলছল চোখে তাকিয়ে রইলো জুবরানের দিকে।
–‘ পড়লে ম’রে যেতাম। আপনার জ্বালা জুড়িয়ে যেত’
জুবরান শানায়াকে বুকে আগলে নিল। শানায়া আল্লাদে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে বলল
–‘ তুমি এমন করছ কেনো? জুবরান ভাইয়া। আমাকে যেতে দাও প্লিজ আমি থাকতে চাই না তোমাদের সাথে। আমি তোমার সাথে আছি শুনলে বাসার সবাই, মামনি কষ্ট পাবে। সবাই আমাকে ভুল বুঝবে। আমি যে দোষ না করেও দোষী হই। এ বোঝা আমি আর বইতে পারছি না। নিজেকে নিজের কাছে কেমন লাগে। প্লিজ আমাকে যেতে দাও প্লিজ’
জুবরান সবটা শুনে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল
–‘ আমি জানি না; আমি আসার পর তোর সাথে কী হয়েছে! কিন্তু এটা বেশ বুঝতে পারছি ভালো কিছু অনন্ত হয় নি। তুই আমাকে সবটা বল আমি সব ঠি করে দিব। কিন্তু আমাকে ছেড়ে চলে যাবার কথা বলবি না’
শানায়া জুবরান কে ছেড়ে দিয়ে চোখে পানি মুছে বলল
–‘ কেনো পাগলামি করছ? বাসায় ফিরে যাও। মামনি খুব কষ্টে আছে তোমাকে ছাড়া’
–‘ আমি গেলে তোকে সাথে নিয়েই ফিরব’
শানায়া তাচ্ছিল্যের সাথে হেসে বলল
–‘ একটা কথা কী জানো ভাইয়া যেখানে মা নেই সেখানে আপন কেউ নেই এমন কী বাবাও না।’
জুবরান স্থির চোখে তাকিয়ে রইলো শানায়ার দিকে। সেই বাচ্চা জেদি মেয়েটা আজ অনেক ম্যাচুয়োড হয়ে গেছে।
শানায়া ফের বলল
–‘ তুমি আমাকে করুণা করছ না? চিন্তা করো না আমি একটা সরকারি চাকরি পেয়েছি। ওটাতে আমার নিজের খরচ ভালো ভাবে চলে যাবে।’
–‘ রাগাস না কে তোকে করুণা করছে? তোর স্বামী হই, তোর অধিকার আছে; আমার ওপর, আমার যা তোরও তাই’
–‘ আমার এসব কিছু চাই না; আমি শান্তি চাই। ‘
–‘ দিবো। আয় খাবি কষ্ট করে রান্না করছি।’
–‘ খুদা নেই’
শানায়াকে জোর করে খাইয়ে দিল জুবরান নিজেও খেলো। রাতে শানায়া জেদ ধরলো কিছু তেই জুবরানের সাথে শুবে না। জুবরান ধমকি-ধামকিয়ে রাখল। শানায়া এপাশ ওপাশ করে ঘুমাল। শানায়া ঘুমালে জুবরান ওর মুখে দিকে তাকিয়ে আছে। বিড়বিড় করে বলল
–‘ আমার বউ! আমার বউ!’
চোখের সামনে ভেসে উঠল অতীত, ডুব দিল সৃতিচারণে।
।।অতীত।।
তখন বছরের শেষের দিকে প্রচন্ড হাড়কাঁপানো শীত জুবরান দেশ ছেড়ে যাবার সকল কার্যক্রম শেষ। কয়দিন বাদেই ফ্লাইট এমন সময় জুবরানের মা বেঁকে বসল…
চলবে ইনশাআল্লাহ