#প্রণয়সন্ধি– ১৪ পর্ব
#তাসনিম_তামান্না
পশ্চিম অম্বরিতে কমলাটে মেঘের ছাপ সূর্য্যি মামা চলে গেছে সেটারই জানান দিচ্ছে। আজ অনেক গুলো দিন পর ছাদে আসল পাপড়ি সাথে ভাইয়ের মেয়ে ছোট্ট ফর্সা, চুল গুলো সোনালী রংয়ের একেবারে মায়ের মতো হয়েছে। ফুলের নামে নাম তার ডেইজি। ভাইয়ের সাথে যতই যু*দ্ধ থাকুক না কেনো ভাইয়ের মেয়েকে নিজের মেয়ে ভাবা ফুপুদের জন্মগত অধিকার। সেই অধিকারের ভিত্তি ধরেই দু’জনের বেশ ভাব হয়েছে। পাপড়ি ডেইজিকে ছাদের ফুলগুলোর সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিল কখন যে রায়হান এসেছে ছাদে সেটা খেয়াল করে নি। খেয়াল হতেই দেখল ছেলেটার উশখুশ চুল, মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি গজিয়েছে, মুখের লাবণ্য কমে গেছে। সেটা দেখে পাপড়ির ললাট কুঞ্চিত হবে কয়েকটা ভাজ পড়ল। জিব্হা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে কয়েক কদম রায়হানের দিয়ে এগিয়ে গিয়ে বলল
–‘ কি ব্যাপার তোমার এই সন্যসী দশা কেনো?’
রায়হান একটু সময় নিয়ে ধীরে সুস্থে বলল
–‘ জানো না কেনো?’
পাপড়ি দ্বি-প্রণয় ঘটেছিল সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার সাথে। একপ্রকার বাধ্য হয়েছিল প্রেমে পড়তে। কিন্তু ওদের এক হওয়া অসম্ভব। সমাজ, পরিবার, বয়স! কিন্তু এই ছেলেটা এসব বুঝতে চাই না। প্রথম প্রথম পাপড়ি মনে করত ছেলেটা মজা করছে কিন্তু দিন পর দিন যেতে বুঝল এই ছেলেটা তাকে মন থেকে চাই। সবকিছু ভেবে নিজের অনুভূতিগুলোকে দমিয়ে রেখেছি। কিন্তু রায়হান তো রায়হান ই কিছুতেই পিছু ছাড়ে না।
পাপড়ি কিঞ্চৎ হেসে বলল
–‘ তুমি যথেষ্ট ম্যাচিউড তাই মরিচীকার পিছনে ছুটে নিজের মুল্যবান সময়টাকে নষ্ট করো না’
রায়হান শান্ত, নিঃপ্রাণ কণ্ঠে বলল
–‘ আমার বেঁচে থাকার একমাত্র ঔষধকে যদি তুমি বলো মরিচীকা তাহলে আমি সেই মরিচীকাকেই চাই।’
পাপড়ি কি বলবে ভাষা হারিয়ে ফেলল। রায়হানের দিকে তাকিয়ে পিটপিট করে তাকালো। রায়হান পাপড়ির দৃষ্টিতে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল
–‘ তুমি যতটা ইনোসেন্ট দেখাও ততোটা ইনোসেন্ট কিন্তু নও’
পাপড়ি মুখ গম্ভীর করে বলল
–‘ রায়হান আমি নিজের সম্পর্কে অন্যর সাথে বলতে কমফোর্টেবল ফিল করি না। কিন্তু তোমার পাগলামি দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে বলে তোমাকে বলতে বাধ্য হচ্ছি আশা করি এটা শোনার পর তুমি আর আমার পিছু নিবে না। নিজের মায়ের মতে বিয়ে করে নিবে’
রায়হান ভ্রু কুঞ্চিত করে পাপড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। এই দৃষ্টির মানে কি এমন যা তোমার থেকে আমাকে দূরে করে দিবে!
–‘ আমি ডিভোর্সি, সাথে কখনো মা হতে পারব না।’
রায়হান চমকানো! থমকানো! চোখের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল পাপড়ির মুখপানে। পাপড়ি মুখে হাসির রেখা টেনে বলল
–‘ আমি জানি আমার আগেই বলা উচিৎ ছিল। কিন্তু ব্যাপারটা যে এতো দূর গড়াবে সেটা জানাছিল না। তোমার ফ্যামিলির তোমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন সেগুলো পূরণ করার দায়িত্ব তোমার তাই অযথা আমার পিছনে পড়ে থেকে সময়টা নষ্ট করো না’
পাপড়ি কথাগুলো বলে ডেইজির দিকে তাকালো ও বাংলা ভাষা বুঝে না তাই ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তার মিষ্টি সুরেলা কণ্ঠে জিজ্ঞেসা করল
–‘ হু ইজ দিস ফুপি’
–‘ আঙ্কেল’
পাপড়ি ডেইজিকে নিয়ে চলে আসলো পিছনে ফেলে আসল এক দুঃখী পুরুষকে। তার চোখে ছিল জলে ভরা ছলছল। দৃষ্টিতে ছিল এক বুক তৃষ্ণা, কাতর, না পাওয়ার বেদনা! পিছনে ফিরে চাইলে হয়ত পাপড়ি নিজেকে আর সামলাতে পারত না।
–
রাত তখন দশটার ওপাশে শানায়া পড়াশেষ করে খেয়াল হলো অফিসে বলা হয়নি যে তার এক্সাম ছুটি দরকার এদিকে রাতও হয়েছে বেশ। ফোন হাতে নিয়ে ভাবছে ফোন দিবে কি না? দোনোমোনো করে ফোন দিয়েই ফেললো জুবরানের কাছে। জুবরান তখন মায়ের সাথে কথা শেষ করেছে। মা বেশ কান্না কাটি করছে বাড়ি ফেরানোর জন্য এদিকে একগুঁয়ে জুবরান কিছুতেই তার কথার নড়চড় হতে দিবে না। এতোরাতে শানায়ার ফোন পেয়ে কপালে ভাজ পড়ল।
–‘ আসসালামু আলাইকুম স্যার’
জুবরান একটু সময় নিল শানায়া তো ওর কাছে অকারণে ফোন দেওয়ার পাত্রী নয় তাই কণ্ঠ শুনে মেজাজ কেমন সেটারই বোঝার চেষ্টা করল যখন বুঝল মেজাজ স্বাভাবিক তখন দুষ্টুমি ভরা কণ্ঠে বলল
–‘ ওয়ালাইকুম আসসালাম। আর স্যার কী হ্যাঁ আ’ম ইউর হাসবেন্ড একটু তো জান, বাবু, সোনা বলে ডাকতে পারো না-কি!’
–‘ আপনার সাথে পুতুপুতু কথার ইচ্ছে বা সময় কোনোটাই নেই’
জুবরান চোখমুখ কুঁচকে বলল
–‘ হোয়াট? পুতুপুতু কী?’
—
শানায়া হকচকিয়ে গিয়ে ভাবল পুতুপুতু নাকি লুতুপুতু?
–‘ আই মিন নেকামি করার কথার বলছি!’
জুবরান দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ল অফিসে কথাটা মাথায় আসতেই বলল
–‘ তোমাকে সেদিন কে চ’ড় মে’রে ছিল?’
শানায়া ভড়কে গিয়ে বলল
–‘ কই কেউ না তো!’
–‘ তাই! কিন্তু আমি যে শুনলাম তোমার কোন বোন…’
–‘ হ্যা বোন মা’রতেই পারে তার অধিকার আছে’
–‘ ওহ কিন্তু আমার অধিকার কিন্তু তুমি দিচ্ছ না’
শানায়া বুঝতে না পেরে বলল
–‘ আপনার আবার করিসের অধিকার? ‘
–‘ কেনো বউকে আদর করার অধিকার কিন্তু সে দিচ্ছে না।’
শানায়া হকচকিয়ে গিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল
–‘ আমি আপনার সাথে প্রেমালাপ করতে ফোন দি নাই। তাই অযথা মথা নষ্ট করবেন না’
–‘ আচ্ছা তা কী বলবে বলো’
–‘ আমার কাল থেকে এক্সাম আমি অফিসে আসতে পারব না’
–‘ কয়দিন? ‘
–‘ যেদিন যেদিন এক্সাম শুধু সেদিনই যাব না’
–‘ ওকে। আর শুনো রাহাতের থেকে দূরে থাকবা’
–‘ আপনি এতো ফালতু কথা কই থেকে পান বলেন তো! দেখছেন আমি ইম্পরট্যান্ট কথা বলছি তার মধ্যে বা হাত ঢুকিয়ে দিলেন। আর আমি কার সাথে কথা বলব না তার কাছে যাব সে ব্যাপারে আপনার মাথা আর নাক না গলালেই খুশি হবো’
–‘ শুনো বেশি মাতবারি করবা না। আমার বউ আমি নাক, মাথা, হাত, পা সব গলাব তাতে তোমার কী? স্বামীর কথা মতো চললে সওয়াব পাবে।’
শানায়া ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে বলল
–‘ রাখছি’
বলে ফোন কেটে দিল।
—-
প্রথম পরিক্ষা দেওয়ার পরের দিন শুক্রবার পড়েছে ছুটির দিন হওয়ায় বন্ধমহল সকলে এক জায়গায় হলো। হৈচৈ হৈ-হুল্লোড়ে মেতে রইল। রাহি ও এবারের যোগ দিলো রাহির পরিবার নাকি ওদের বিয়ে মেনে নিয়েছে। মিলি, সুমন শানায়াকে বলেছে ওদের বাসা এসে থাকতে কিন্তু শানায়া সেটাতে নারাজ হয়ে বলেছে।
–‘ দেখ কেউ কারোর সংসারে উটকো ঝামেলা সহ্য করতে পারে না। প্রথম কয়দিন হয়ত ভালো লাগবে তারপর অসহ্য লাগবে। আর আমি সেই অসহ্যর কারণটা আর হতে চাই না। আর আমি যেখানে আছি ওখানে একটু সমস্যা হলেও মানিয়ে নিয়েছি’
ওরা কথায় না পেড়ে হাল ছেড়ে দিয়েছে।
দুপুরের দিকে আননোন নম্বর থেকে ফোন আসল। দুইবার বাজার পর শানায়া ধরল। ওপাশ থেকে রায়হান বলল
–‘ শানায়া তোমার বোনকে বিয়ে করছি সাক্ষী হিসেবে তোমাকে লাগবে আরো কয়জন হলে ভালোই হতো’
শানায়া হতভম্ব হয়ে গেলো কথার খেই হারিয়ে ফেলল
–‘ আপু রাজি বিয়েতে আর বাসার লোক…’
–‘ তোমাকে কাজী অফিসের ঠিকানা দিচ্ছি জলদি চলে এসো এখন এতো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছি না।’
এটা কোনো কথা? শানায়া যতদূর জানে তার বোনের মনে যত অনুভূতির ফুল ফুটুক না কেনো নিজে থেকে একপা ও বাড়াবে না আর না মুখ ফুটে কাউকে বলবে তাহলে কীভাবে কী করে সম্ভব হলো! এসব ভাবতে ভাবতে বন্ধুদের সবটা জানিয়ে ওদের সাথে নিয়েই রওনা হলো। ওখানকার পরিস্থিতি তো এখান থেকে কিছুই বুঝতে পারছে না। কিন্তু পরিস্থিতি যে সুবিধার নয় সেটা বেশ বুঝতে পারছে। শানায়ারা জ্যাম ঠেলে যখন গিয়ে পৌঁছালো তখন বিকালের শেষ প্রহর পাপড়িকে হাত-পা-মুখ বেঁ’ধে চেয়ারে বেঁ’ধে রেখেছে কাজীর মাথায় ব’ন্দু’ক ঠেকানে। এমন পরিস্থিতি দেখে ওরা হকচকিয়ে গেল। বোনের এমন অবস্থা দেখে পাপড়ির কাছে গিয়ে হাত খুলতে নিলে রায়হান বলল
–‘ স্টপ শানায়া।’
শানায়া রেগে বলল
–‘ এসব কি রায়হান ভাই? একটা মানুষ বিয়ে করবে না যেনেও জোর করে ধরে বেঁধে বিয়ে করা কোন ধরনের অসভ্যতা।’
–‘ যাকে ভালোবাসি তার জন্য এটুকু তো করতেই পারি’
–‘ রায়হান ভাই আপনি পাগল হয়ে গেছেন। এভাবে জোর করে ভালোবাসা পাওয়া যায় না’
–‘ তোমার বোন আমাকে ভালোবাসে তার চোখে আমার জন্য আমি ভালোবাসা খুঁজে পাই। কিন্তু তোমার বোন সমাজ, পরিবার, বয়সের জন্য পিছিয়ে আছে আমাকে কষ্ট দিচ্ছে। শুনো প্রথম প্রথম লোকে কথা শোনাবে একটু কষ্ট হবে কিন্তু ভালোবাসা হারিয়ে গেলে আমি ম’রে যাবো’
পাপড়ির চোখ দিয়ে অনর্গল অশ্রু ঝরছে। রায়হান আবার বলল
–‘ আমার তোমার বোনের অতীত নিয়ে কোনো ইন্টারেস্ট নাই। আমার শুধু তাকে পেলেই চলবে’
–‘ আপনি যা বলছেন ভেবে বলছেন তো রায়হান ভাই পড়ে পিছিয়ে যাবেন না তো? আমার বোনকে কষ্ট দিবেন না তো?’
–‘ ছেড়ে যা-ওর হলে এখন এইখানে থাকতাম না শানায়া’
চলবে ইনশাআল্লাহ
#প্রণয়সন্ধি– ১৫ পর্ব (বোনাস)
#তাসনিম_তামান্না
সন্ধ্যা তখন ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে শহরতলীর নাজেহাল অবস্থা। এই অল্প পানিতে সব ভিজে একাকার। শানায়া বন্ধুদের বিদায় দিয়ে সিদ্ধান্ত নিল আজ পাপড়ির সাথে থাকবে। বিয়ের কবুল বলার সময় পাপড়ি চিৎকার চেচামেচিতেও লাভের লাভ কিছুই হয় নি। রায়হান হু’ম’কি ধামকি দিয়ে পাপড়িকে কবুল বলিয়েছে।
বিয়ের সকল কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর বাসায় বউ নিয়ে আসতেই সকলের মাথায় বাজ পড়লো! রায়হানের মা জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়লো। রায়হান মাকে জ্ঞান ফেরানোর জন্য চোখেমুখে পানি দিল। তিনি জ্ঞান ফিরতেই আবারও চেঁচাতে লাগলো। এতো চিৎকার চেচামেচিতে পাপড়ির বাবা-মা, ভাই-ভাবি-ভাতিজি, নিচে নেমে আসল। শানায়াকে এতোদিন পর দেখে অবাক হলো সাথে পাপড়িকে শুকনো মুখে ছলছল করে তাকিয়ে থাকতে দেখে ওনারা ভড়কে গেলেন সকলে।
যেদিন পাপড়ির ডিভোর্স হয়ে সংসার ভেঙে চলে এসেছিল সেদিন তার মেয়ে নিজেই নিজেকে সামলিয়ে ছিল। এক ফোঁটা চোখের পানি ফেলে নি। নিজেকে দূর্বলতা দেখিয়ে সহানুভূতি চাই নি। এমনকি বাবা-মার কাছেও না। পাপড়ির সেদিনের পর আর কাঁদে নি। মুচকি হাসলেও সেই খিলখিলিয়ে প্রাণ খোলা হাসি আর শোনা যায় নি। মেয়ের এই পাথর হয়ে যা-ও বাবা-মাকে যে কতক্ষণি কষ্ট দিয়েছে তা হয়ত পাপড়ি বুঝতে পেরেও কিছু বলে নি। নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে ছিল।
কিন্তু এতোদিন পর মেয়ের এমন ছলছল, অসহায় দৃষ্টি দেখে বাবা-মায়ের বুকে মোচর দিয়ে উঠল। শায়লা হাসান দৌড়ে মেয়ের কাছে এসে বলল
–‘ কী হয়েছে মা কাঁদছিস কেনো?’
মিরাজ হাসানও মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
–‘ কী হয়েছে আম্মু? বল মা! কষ্ট পেয়েছিস? বাবা আছে তো বাবাকে বল’
বাবা-মায়ের আল্লাদ পেয়ে পাপড়ি আদুরে বিড়াল ছানার মতো বাবার বুকে মাথা গুঁজে ডুকরে কেঁদে উঠলো।
এমন দৃশ্য দেখে শানায়ার নিজের বাবা-মা’র কথা মনে পড়ে অক্ষিকোটর অশ্রুসিক্ত হলো। ওরও একটা সুন্দর পরিবার ছিল কিন্তু সেখানে বিশ্বাস ছিল না! ইশ! কত মিস করছে সবাইকে…
রায়হানের মা হুংকার দিয়ে এসে বলল
–‘ মেয়েকে আল্লাদ দিয়ে মাথায় উঠিয়েছেন। এখন নিজের চেয়ে ছোট বয়সী ছেলেকে ফুসলিয়ে বিয়ে করেছে। কেমন শিক্ষা দিয়েছেন মেয়েকে?’
পাপড়ির বাবা-মা হতভম্ব হয়ে গেলেন। এ কী কথা শুনলেন? তাদের মেয়ে তো এমন না। পাপড়ি বাবা-মায়ের অপমান হতে দেখে আর চুপ করে থাকতে পারল না। চেচিয়ে উঠে বলল
–‘ আপনি আপনার ছেলেকে শিক্ষা দিতে পারেন নি। গু’ন্ডা তৈরি করেছেন মাথায় ব’ন্দু’ক ঠেকিয়ে বিয়ে করে’
রায়হান তেজি মনোবল নিয়ে বলল
–‘ মা আমি ওকে ভালোবাসি। ও আমাকে বিয়ে করতে চায় নি৷ আমি জোর করে করেছি। আম…’
রায়হানের মা রায়হান কে থা’প্প’ড় মা’র’ল। পরিবেশ থমথমে হয়ে গেলো। বাতাসে শুধু নিঃশ্বাসের শব্দ। জানালার কাছ থেকে পাখির ডানা ঝাপটানোর শব্দ শোনা গেলো। রায়হানের মা হিসহিসিয়ে বলল
–‘ বেশি বড় হয়ে গেছ তুমি? আমার একটা সমাজে বাস করি সেখানে এসব জানাজানি হলে কি হবে ভাবতে পারছ? লোকজন হাসি-তামাশা করছে, ছিঃ ছিঃ পড়ে যাবে। কোনো কিছু না ভেবে কি করেছ এসব?’
–‘ আমি ভালোবাসি পাপড়িকে আর ভালোবাসলে হাত ছাড়তে নেই। শক্ত করে ধরে রাখতে হয়।’
রায়হানের মা ছলছল চোখে ছেলের দিকে তাকিয়ে রইলো। ছেলে তার অনেক বড় হয়ে গেছে। মায়ের মুখে মুখে কথা বলতেও শিখে গেছে। এই তো সেদিন আঁচল ধরে ঘুরত। ‘মা দুই টাকা দাও লজেন্স খাবো’ বলে সারাবাড়ি মাথায় তুলে ফেলত। আর আজ সে কি-না মায়ের কথার ওপর কথা বলছে তাও কি-না একটা মেয়ের জন্য। বিয়ে হয়ে গেছে ছেলের তার ছেলে তার তার নেই অন্যর স্বামী। মা’কে আর ভালোবাসবে না। ভাবতেই রাগে দুঃখে কেঁদে দিলেন তিনি। কাঁদতে কাঁদতে বলল
–‘ এই মেয়ে কি জাদু করেছে তোকে? যে তুমি ওকে ছাড়া ভাবতেই পারছিস না?’
–‘ ওকে দোষারোপ করে কোনো লাভ নেই আম্মু। দোষটা আমার ‘
–‘ তোর মতো ছেলে জন্ম দিয়েছিলাম এই দিন দেখার জন্য?’
হাবিব বলল
–‘ এতোক্ষণ আমার বোনকে বলছিলেন তাকে নাকি মানুষ করতে পারে নি এখন নিজের ছেলেকে দেখুন’
মিরাজ হাসান বলল
–‘ আহ হাবিব বড়দের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয় জানো না? ভাবী ব্যাপারটা কিন্তু আমরা বসে মিটিয়ে দিতে পারি। আপনি হাইপার হবেন না’
রায়হান কাঠকাঠ গলায় বলল
–‘ তোমরা যেই সিদ্ধান্তই নেও না কেনো আমি আর পাপড়ি আলাদা হবো না। চাইলে আমরা আলাদা ফ্ল্যাটে থাকতে পারি। সেটাতে নিশ্চয়ই তোমাদের অসুবিধা হবে না? আর মা তুমি ভেব না আমি তোমাদের ছেলে হয়ে বউ পেয়ে তোমাদেরকে ভুলে যাবো। আমি ছেলে হয়ে আমার দায়িত্ব কর্তব্য পালন করে যাবো’
সকলে ভাষা হারিয়ে ফেলল কি বলবে? শানায়া রায়হানের ভালোবাসা দেখে মুগ্ধ হচ্ছে। রায়হানের মেন্টালির মানুষ যদি সমাজের প্রতিটা ঘরে ঘরে থাকত তাহলে হয়ত দেশটা পাল্টে যেত।
রায়হানের মা একটু আগের ভেবেছিল ছেলেকে হারিয়ে ফেলেছে ছেলের এমন ধারা কথা শুনে তার কান্না বন্ধ হয়ে গেলো। ছেলে তার বদলায় নি। এছেলের আরেক রূপ।
রায়হানের কথা শুনে হাবিবের কী যেনো হলো। এতোদিন টাকা পয়সা, বড় লোক বউ, গ্রীন কার্ড পেয়ে বাবা-মায়ের কথা ভুলে জীবন কাটাচ্ছিল। তাদের কথা মনের কোণে উঁকি দিলেও পাত্তা দেয় নি। কিন্তু রায়হানের কথা শুনে মনে অপরাধ বোধ জাগলো।
বড়রা সকলে মিলে বসলো ততক্ষণে রায়হানের বাবাও বাড়ি ফিরে এসেছে। পাপড়িকে নিয়ে শানায়া পাপড়ির রুমে গেলো। রায়হান সিদ্ধান্ত জানার জন্য খুঁটি হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। যদি তাদের বিচ্ছেদ সিদ্ধান্ত নেয় ততক্ষণা বাড়ি ছেড়ে বেড়িয়ে যাবে। বড় কোনো কিছু না করলেও একটা ব্যাংকের চাকরি তো আছে। এই দিয়েই ওদের টোনাটুনির সংসার পাতবে। অভাব হলেও তা ধীরে সুস্থে মিটিয়ে ফেলবে তবুও বিচ্ছেদ ঘটতে দিবে না।
রায়হানের মা সিদ্ধান্তে চুপ ছিলেন। কিছুই বলেন নি। তিনি আসলে ভাবছিলেন ছেলের যেহেতু ভুল সেখানে মেনে নেওয়াটাই শ্রেয়। মেয়ে এতোটাও খারাপ নয়। আবার সমাজ, আত্মীয়স্বজনদের কথা ভেবে পিছনে যাচ্ছিলেন।
চলবে ইনশাআল্লাহ