#প্রণয়সন্ধি– ০১ পর্ব
#তাসনিম_তামান্না
হঠাৎ লোডশেডিংয়ে শানায়া ভীতগ্রস্ত হয়ে গলো। হাতড়ে ফোন খুঁজে পাওয়ার বাটনে চাপ দিয়ে দেখলো চার্জ নাই। শানায়া ভয়ে ভয়ে হেটে কিছু দূর যেতেই কারোর সাথে স্বজোরে ধাক্কা খেয়ে দু’কদম পিছনে গেলো। সম্ভবত আগন্তুকটি ছেলে! শানায়া ভয়ে কি করবে বুঝতে পারল না কাঁপা কণ্ঠে বলল
–‘কে এখানে’?
আগন্তুক ফোনের ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে শানায়ার মুখশ্রীর দিকে তাক করলো। হঠাৎ তীব্র আলোয় ওর চোখমুখ কুঁচকে গেলো বলল
–‘ কি সমস্যা চোখে লাইট দিচ্ছেন কেনো?’
অপর ব্যাক্তি থেকে কোনো উত্তর আসলো না। ইতি মধ্যে লাইট জ্বলে চারিপাশ আলোকিত হয়ে গেলো। শানায়া সস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে। ব্যাক্তিটির দিকে খেয়াল হতেই চমকে গেলো!
অনাকাঙ্ক্ষিত জায়গায়, অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষটাকে এতো গুলো বছর পরে দেখে যে-কেউই চমকে যাবে। শানায়া শুকনো ঢোক গিলল। ও কী ভুল দেখছে? এটা নিশ্চয়ই হ্যালুসলুশন হবে না হলে ব্যাক্তিটি এখানে আসবে কীভাবে? সে তো দেশের বাইরে তাহলে!
ওদের দৃষ্টি বিনিময়ের মাঝে মিস. তানিয়া এসে বলল
— ‘ জুবরান তুই এখানে কি করছিস?’
শানায়া শিওর হলো ব্যাক্তিটি আসলেই তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। শানায়া দৃষ্টি সরিয়ে নিল। তানিয়া জুবরানের দৃষ্টি অনুসরণ করে শানায়াকে দেখে বলল
–‘ দাঁড়িয়ে আছো কেনো? ফাইলটা পেয়েছ?’
–‘ জী ম্যাম!’
কথাটা বলে ফাইলটা এগিয়ে দিল। ফাইলটা নিয়ে তানিয়া বলল
–‘ ফাইলটার জন্য দেরি হয়ে গেলো তোমার, রাত হয়ে গেছে একা যেতে পারবে? না-কি ড্রাইভারকে বলি পৌঁছে… ‘
তানিয়া কথাটা শেষ করতে দিল না শানায়া বলল
–‘ ম্যাম আমি ক্যাব বুক করে চলে যাব ‘
–‘ আচ্ছা তাহলে যা-ও। আর ইনি এস.জে ফ্যাশন এন্ড গ্লামার ওয়াল্ড এর এমডি জুবরান আহমেদ তোমাদের বস ‘
জুবরান তখন শানায়ার দিকে আর্শ্চয্য হতে তাকিয়ে আছে। শানায়া অস্বস্তি নিয়ে বলল
–‘ আসসালামু আলাইকুম স্যার ‘
জুবরান শানায়ার সালামের জবাব দিল কিনা বোঝা গেল না।
–‘ তানিয়া আমাদের যেতে হবে!’
শানায়া কিছুটা অপমানিতবোধ করল।
–‘ ম্যাম আসছি’
শানায়া চলে গেলো জুবরানের দিকে আর তাকলো না। ও চলে যেতে জুবরান বলল
–‘ মেয়েটা কে? ‘
–‘ কেনো পছন্দ হয়েছে না-কি? যেভাবে তাকিয়ে ছিলি!’
–‘ ফালতু কথা বলিস না। যেটা শুনেছি সেটার উত্তর দে’
–‘ মেয়েটা বেশ কয়েকমাস হলো অফিসে জয়েন্ট করেছে। মেয়েটা আমার বেশ পছন্দের শান্ত-শিষ্ট, কাজে মনোযোগী। তা মেয়েটা কি তোর পছন্দ হয়েছে? অবশ্য তোর থেকে মেয়েটা অনেকটা বাচ্চা কিন্তু ব্যপার না তুই বললে…’
জুবরান তানিয়া’কে ধমকে উঠে বলল
–‘ সবসময় এডভান্স বুঝিস কেনো? চল বাসায়!’
শানায়া অফিস থেকে বেশ কিছু দূর হাটতে হাটতে চলে এসেছে। একটা সিএনজি পাচ্ছে না সকলের একসাথে কি হয়েছে বুঝতে পারছে না মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। ফোনে চার্জ ও নেই যে ক্যাব বুক করবে। শানায়া দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিএনজি দাঁড় করাচ্ছে আর সকলে মানা করে চলে যাচ্ছে। শানায়া ফোন চাপাচাপি করছিল যদি ফোনটা অন করতে পারে।
তানিয়ারা এদিক দিয়ে যাচ্ছিল শানায়াকে দেখে গাড়ি থামিয়ে বলল
–‘ শানায়া এখানে দাঁড়িয়ে আছ কেনো? ‘
শানায়া চমকে বলল
–‘ আসলে ম্যাম ফোনের চার্জ শেষ ‘
–‘ আমাদের সাথে আসো আমরা এদিক দিয়েই যাচ্ছি ‘
–‘ না ম্যাম ঠিকাছে আমি যেতে পারব তাছাড়া আমার বাসা অন্য রাস্তা দিয়ে ‘
তানিয়া একটু মুখ গম্ভীর করে বলল
–‘ গাড়িতে উঠ কাম ফাস্ট… শানায়া দিস ইজ মাই অর্ডার ‘
শানায়া দোনোমোনো করে গাড়িতে উঠে বসল। গাড়ি চালাতে চালাতে জুবরান হঠাৎ বলল
–‘ সারাদিন টিকটক করলে ফোনে চার্জ থাকবে কি করে!’
জুবরানের এমন কথায় শানায়া ঘবড়ে গেলো।তানিয়া একটু অন্যমনস্ক ছিল তাই জুবরানের কথা শুনতে না পেয়ে বলল
–‘ কিছু বললি?’
–‘ নাহ!’
তানিয়া শানায়াকে বলল
–‘ শানায়া তোমার বাসায় কে কে আছে?’
–‘ জী ম্যাম?’
–‘ বলছি তোমার বাসায় কে কে আছে?’
শানায়া দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল
–‘ সবাই আছে। মামনি, বাবাই, ভাইয়া, ভাবি, আপু’
–‘ বাহ! তুমি সবার ছোট? ‘
–‘ জী’
জুবরানের ভ্রু কুঁচকে গেলো। মনে মনে ভাবল ‘ওর ভাইয়া, ভাবি, আপু কোথা থেকে আসলো?’ কিন্তু মুখে কিছু বলল না।
–‘ খুব আদুরে নিশ্চয়ই ‘
শানায়া মুচকি হেসে বলল
–‘ হ্যাঁ’
কিছুক্ষণ পর কাঙ্ক্ষিত জায়গায় এসে বলল
–‘ ব্যাস ব্যাস এখানেই ‘
গাড়ি থেকে নেমে বলল
–‘ কষ্ট করে আপনাদের এতদূর আসতে হলো’
–‘ আরে সমস্যা নেই আজ আমার জন্যই তোমার দেরি হয়ে গেলো ‘
শানায়া বাসায় ডুকতেই দেখলো শায়লা হাসান আর মিরাজ হাসান চিন্তিত হয়ে বসে আছে। শানায়া গিয়ে বলল ‘কি হয়েছে? ‘
ব্যাস কয়েক মূহুর্তের মধ্যে যেনো টর্নেডো বয়ে গেলো। মিরাজ স্ত্রী’কে শান্ত করে বলল
–‘ আরে ওকে বকছ কেনো? ও তার ইচ্ছে করে এমনটা করে নি। একটা দিন দেরি হতেই পারে’
–‘ মানলাম দেরি হতে পারে তাই বলে ফোনটা অফ করে রাখবে? ও জানে না আমাদের টেনশন হয়’
শানায়া ঠোঁট উল্টে কানে ধরে বলল
–‘ সরি আমার মামনি আমার ফোনে চার্জ ছিল না’
শায়লা অভিমানে চুপটি করে রইল। শানায়া বলল
–‘ ও মামনি কথা বলবে না আমার সাথে? বললাম তো সরি আর এমন হবে না’
–‘ থাক থাক হয়েছে আর ঢং করতে হবে না। ফ্রেশ হয়ে আসো খেতে হবে’
–‘ তুমি একটা মিষ্টি করে হাসি দাও তারপর যাচ্ছি!’
শায়লা রাগ করে থাকতে পারল না হেসে বলল
–‘ হয়েছে যা এবার’
রুমে যেতেই দেখলো পাপড়ি ওর দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে শানায়া শুকনো ঢোক গিলল
–‘ আসছেন মহারানী।’
–‘ আসলে আপু… ‘
–‘ সাট আপ ‘
শানায়া চুপ করে রইলো।
–‘ এবার থেকে আমার পাওয়াব্যাঙ্কটা সাথে করে নিয়ে যাবি’
শানায়া বিস্ময় ভরা চোখে তাকালো পাপড়ির দিকে পাপড়ি পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। শানায়া এই পাপড়ি নামক মানবীটাকে বুঝতে উঠতে পারে না এই ভালো আবার এই খারাপ। শানায়াকে যখন এই বাড়িতে প্রথম আসে তখন পাপড়ি সন্দিহান চোখে তাকিয়ে থাকত যেনো ও চোর আর পাপড়ি পুলিশ। তখন শানায়ার এই কঠোর মানবীকে ভিষণ ভয় লাগত। পাপড়ি ওর সাথে প্রথম কথা বলছি
–‘ তুই টিকটক করিস তাই না?’
শানায়া ভয়ে ভয়ে বলেছিল।
–‘ করতাম আর করব না’
–‘ কেনো করবি না?’
–‘ এমনিতেই ভালো লাগে না!’
প্রথম কথোপকথনে বুঝে গেছিল। পাপড়ি খুব স্ট্রিক। কঠোর পার্সোলানিটির, বুদ্ধিমতি মেয়ে। সহজে কাউকে বিশ্বাস করে না। মা-বাবার পুরা উল্টো। ভাবতে ভাবতে ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে আসল। খেয়ে দেয়ে এক জম্পেশ ঘুম দিবে মাথা ব্যাথায় আর কাউকে নিয়ে কিছু ভাবতে পারছে না।
আজ ৬ বছর পর দেশে ফিরে শানায়াকে দেখে জুবরানের মাথা থেকে শানায়া নামক ছলনাময়ী মানবিটি কিছুতেই সরছে না। পুরোনো ক্ষ’ত গুলো জ্বলে উঠছে। সবচেয়ে বড় কথা শানায়া ঢাকায় কীভাবে? কেনো আসলো। কেউ তাকে এ ব্যাপারে কিছু জানানোর প্রয়োজনবোধ করল না! জুবরানের মাথায় প্রশ্নেরা ঘুরঘুর করছে। কীভাবে এতো প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবে?
তানিয়া এসে বলল
–‘ জুবরান ঠিক আছিস? তোকে চিন্তিত দেখাচ্ছে ‘
–‘ ঠিক আছি’
–‘ চল খাবি আর শোন পরশু পার্টিতে সকলের সাথে তুই পরিচয় হয়ে নিবি আমি আর তোর অফিস টফিস করতে পারব না। আমার সংসার, বাচ্চা সামলিয়ে তোর অফিস করতে গিয়ে আমি হিমসিম খেয়ে যায়।’
–‘ হুম ‘
–‘ কি হয়েছে বলত ‘
–‘ কিছু হয় নি চল ‘
চলবে ইনশাআল্লাহ