প্রজাপতির রং পর্ব-২৯+৩০

0
1167

#প্রজাপতির_রং🦋
#Part_29
#Writer_NOVA

চোখ দুটো টেনে মেলতে পারছি না।মনে হচ্ছে কেউ সুপার গ্লু আঠা দিয়ে লাগিয়ে রেখেছে। তার সাথে মাথা ঝিম ঝিমানি তো আছেই। কারো উচ্চস্বরের কথা এসে কানে বারি খাচ্ছে। এত জোরে কেউ কথা বলে? বাপরে!!! আমার কান ধরে যাচ্ছে। মাথাব্যাথা আজ আমার অবস্থা খারাপ করে দিবে।ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও চোখ দুটো পিটপিট করে খুললাম।এক ঝাঁক তীব্র আলো এসে চোখে লাগতেই সাথে সাথে চোখের পাতা বন্ধ করে ফেললাম।কিন্তু লোকটার কথা থামছে না।আমাকে তো তাকিয়ে দেখতে হবেই সে কে?বিশাল বড় একটা রামধমক না দিলে শান্তি হবে না।কারো কানের সামনে এত জোরে চেচিয়ে বকবক করা কোন ধরনের ম্যানারের মধ্যে পরে? আবারো চোখ খোলার চেষ্টা করলাম।এবার আমি সফল হলাম।বিশাল বড় রুমের মতো একটা জায়গায় নিজেকে আবিষ্কার করলাম।দেয়ালগুলো বেশ পুরনো,জায়গায় জায়গায় থেকে চুন খসে পরেছে।তবে চারিদিকটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন।হাই পাওয়ারের দুটো লাইট জ্বালানো।আমার থেকে কিছুটা দূরে একটা চেয়ার ও ছোট টেবিল রাখা।পুরো রুমে দুটো চেয়ার ও একটা টেবিল।টেবিলের ওপর ল্যাপটপ, পাওয়ার ব্যাংক আরো হাবিজাবি জিনিসপত্র রাখা।চেয়ারে বসে উল্টো দিকে ঘুরে সিগারেট টানতে টানতে মোবাইলে খোশগল্পে মেতে আছে একজন।দৃষ্টি যদিও তার সামনের ল্যাপটপে নিবদ্ধ।আপাদমস্তক কালো পোশাকে মোড়ানো।বুকটা ধুক করে উঠলো।এরকম সাজে তো আমি তায়াং ভাইয়াকে দেখেছিলাম।তাহলে কে এটা তায়াং ভাইয়া?

আমি আসলে কোথায়?কিছু সময় লাগলো সেটা বুঝে উঠতে।যখন পূর্বের সব কথা মনে হলো তখন ধরফরিয়ে উঠার চেষ্টা করলাম।কিন্তু বিধি বাম!
হাত দুটো যে শক্ত করে বাঁধা আছে চেয়ারের মধ্যে। আমি নড়েচড়ে উঠতেই চেয়ারটা কিঞ্চিত শব্দ করে উঠলো।তখুনি সেই কথা বলা ব্যাক্তিটা আমার দিকে ঘুরলো।হাতে থাকা, শেষ হওয়া সিগারেটের অংশটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বললো।

—-জ্ঞান ফিরলো তবে ভাবীজীর??

গলার কণ্ঠস্বরটা পরিচিত মনে হলো।চট করে তার দিকে তাকাতেই ৪৪০ ভোল্টেজে শর্কড খেলাম।কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে শুধু উচ্চারণ করলাম।

আমিঃ সসসসাইমমন আপনি????

সাইমনঃ ইয়েস আই এম। মিসেস এনাজ আহমেদ। ওরফে আমার ভাবীজী।

আমিঃ তার মানে এই সবকিছুর পেছনে আপনি রয়েছেন??

সাইমনঃ আমি একটা বাচ্চা ছেলে। একা এতকিছু সামলাবো কি করে বলেন তো?আমার সাথে আমার বড় ভাই ও লোকরা আছে তো।

আমিঃ আমাকে এখানে কেন তুলে এনেছেন? (কঠিন গলায়)

সাইমনঃ কারণ ছাড়া তো আনিনি।নিশ্চয়ই কারণ আছে।জানেন,আপনাকে আমাদের আরো আগে তুলে আনা উচিত ছিলো।

আমিঃ আমাকে অজ্ঞান করার লোকটা তাহলে আপনি ছিলেন?

সাইমনঃ জ্বি হ্যাঁ।

আমিঃ আপনার সাথে আমার কি শত্রুতা?আপনাকে তো আমি ভালো করে চিনিও না।

সাইমনঃ আপনার সাথে আমাদের অনেক পুরনো শত্রুতা।আপনাকে সেই কবে মেরে ফেলতাম।শুধু ভাইয়ের কথায় সেদিন বাচিয়ে দিয়েছিলাম।আমি ঐদিনের কথা বলছি।যেদিন আপনার প্রাণপ্রিয় স্বামীকে আপনার চোখের সামনে জ্বালিয়ে দিয়েছিলো আমাদের লোকেরা।আপনাকে তুলে আমাদের ডেরায় নিয়ে এসেছিলো।আপনি প্রেগন্যান্ট ছিলেন বলে কেন জানি ভাইয়ের একটু দয়া হয়েছিলো।ভাইয়ার কোন বাচ্চা ছিলো না বলে আপনার ওপর দয়া করে,
আপনাকে ছেড়ে দিয়েছিলো।এমনি আপনি বাকি জীবনটা জিন্দা লাশ হয়ে কাটাবেন।তাই এই মরাকে আমরা আর মারতে চাইনি।সহিসালামত আপনার বাসায় পৌঁছে দিয়ে এসেছিলাম।কিন্তু এখন দেখছি সেটাই আমাদের বিরাট ভুল।

আমিঃ আপনারা আমার এনাজকে মেরেছিলেন?

সাইমনঃ হ্যাঁ গো ভাবিজী।

সাইমনের মুখে বারবার ভাবী ডাক শুনে আমার রাগটা যেনো আরো বেড়ে গেল।তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে তুই-তুকারি করে রুক্ষ গলায় বললাম।

আমিঃ আমি তোর কোন রিস্তায় ভাবি লাগি? তোর ঐ পাপী মুখে আমাকে ভাবী বলে ডাকবি না।আরেকবার ডাকলে ঠোঁট সেলাই করে দিবো।ফালতু লোক কোথাকার,শয়তান বেডা।(রেগে)

সাইমনঃ আমার বড় ভাইয়ের ভাবী লাগেন বলে আমারও ভাবী হোন।আমার ডেরায় বসে আমাকেই গালিগালাজ করছেন।আপনার তারিফ করতে হয়।চাইলে আপনাকে মেরে আমি এতগুলো টুকরো করতে পারি যে কেউ আপনার হদিসও পাবে না।

আমিঃ তোর এতবড় সাহস আছে নাকি?তুই কিছু করতে পারলে এতক্ষণে করে ফেলতি।

আমার না একটুও ভয় করছে না।বরং কোথা থেকে যে এত সাহস আসছে আল্লাহ মালুম। অনেক হয়েছে। এবার এদের একটা ব্যবস্থা করা দরকার।সাইমন আমার দিকে ক্রুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। পারলে এখুনি চিবিয়ে খেয়ে ফেলে।

সাইমনঃ মুখে খই ফুটছে দেখি।

আমিঃ বাইক থেকে আমার শরীরে পেট্রোল ছুঁড়ে মারা মানুষগুলোর মধ্যে একটা ছেলে তুইও ছিলি তাই না?

সাইমনঃ জ্বি।আমি ও আমার লোক ছিলাম।কিন্তু মাঝখান থেকে তায়াং ফেঁসে গেলো।আসলে তায়াংকে ফাঁসাতেই তায়াং-এর মতো গেটআপ নিয়েছিলাম আমরা।যাতে আপনার সন্দেহ হয়ে যায় সেটা তায়াং ছিলো।

আমিঃ আমার ভাইকে আমি তোদের থেকে বহুগুণ ভালো করে চিনি।ও এমন কাজ জীবনেও করতে পারে না।তাই তো আমার মনে হচ্ছিলো কোথাও একটা ভুল হচ্ছে আমার।

সাইমনঃ আপনার পেছনে যে ছেলে দুটোকে আগুন নিয়ে ছুটতে পাঠিয়ে ছিলাম সেই লোকগুলোকে তায়াং মোটেও টাকা দিচ্ছিলো না।সেটাও সাজানো পুরো প্ল্যান ছিলো।ঐ লোকগুলো তায়াং-কে থামিয়ে কতগুলো বান্ডিলের টাকা দেখিয়ে জিজ্ঞেস করছিলো সেগুলো জাল নোট কিনা।তায়াং সেগুলো হাতে নিয়ে মস্তবড় ভুল করে ফেললো।সে বান্ডিলটা নেড়েচেড়ে উত্তর দিলো এটা আসল।আর যখুনি লোক দুটোকে টাকার বান্ডিল দুটো ফিরিয়ে দিচ্ছিলো তখুনি তুমি সরি আপনি দেখে নিলেন।আর তায়াং-কে ভুল বুঝে ফেললেন।এত ভালো ছেলেটাকে আপনি এমন ভাবলেন কি করে?

আমিঃ এসব করে কি লাভ হলো?এখন তো আমি জেনেই গেলাম যে তায়াং নির্দোষ।

সাইমনঃ লাভ তো অবশ্যই হয়েছে। আপনাকে একটু ভয় দেখালাম।কাছের মানুষটাকে একটু অবিশ্বাস করলাম।রিয়েলাইজ করালাম কাছের মানুষটা বিশ্বাস ঘাতকতা করলে কিরকম লাগে?অনেক বেশি কষ্ট হয় তাইনা।তেমনি আমাদের সাথেও আপনার গুণধর স্বামী কাছের মানুষ হয়েও বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।

আমিঃ কি বলছেন আপনি? আমার স্বামী কেন বিশ্বাস ঘাতকতা করবে আপনাদের সাথে?ওর কে হোন আপনারা?

সাইমনঃ অনেক কাছের মানুষও নই, আবার অনেক দূরের মানুষও নই। তা আপনার স্বামী এনাজের কি খবর?(ভ্রু নাচিয়ে)

আমিঃ মমমমাননে!!!(ভয় পেয়ে)

সাইমনঃ আরে ভাবীজী,এতখন তো বেশ তেজ দেখালেন।এখন চুপসে গেলেন কেন? আপনার স্বামী এনাজ ওরফে তাজরান তাজওয়ারের খবর চাইলাম,আর আপনি ভয়ে চুপসে গেলেন।গত দুই দিন আগে যে আপনার সাথে দেখা করতে এসেছিলো সকাল সকাল। আমি তো দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে সবই দেখলাম।

আমিঃ তুই ছিলি দরজার আড়ালে?তোকে আমার প্রথম থেকেই সন্দেহ হয়েছিল। তুই যে গভীর জলের মাছ তা আমি বহু আগে বুঝে গেছি। জেনেই যখন গেছিস তাহলে লুকিয়ে লাভ কি? এবার না হয় তৈরি থাক নিজেদের পাপের শাস্তির জন্য। আমার স্বামী আর ভাই খুব শীঘ্রই তার ব্যবস্থা করবে।

সাইমনঃ কে কার ব্যবস্থা করে তা না হয় পরেই দেখবো।কান টানলে মাথা আসে।তাই তো ওদেরকে আনতে তোমায় এখানে নিয়ে এসেছি। এখানে এলে একসাথে না হয় মেরে দিবো।এর জন্যই এত কিছু করা।সেদিন তাজ ওরফে এনাজ রেডিও স্টেশনে না আসলে আমি তো জানতামই না যে এনাজ বেঁচে আছে। তাই তো দুই দিনে সব ইনফরমেশন জোগাড় করে আপনাকে টোপ হিসেবে বেছে নিলাম।

আমিঃ আমার স্বামী ও ভাইয়ের সাথে তোদের কিসের শত্রুতা?কেন ওদের জীবন নিয়ে পরেছিস?

সাইমনঃ অনেক বড় শত্রতা।তোমার স্বামীকে শুধু শেষ করতে চেয়েছিলাম।সেদিন শেষ করেই দিতো আমাদের লোক।শুধু বৃষ্টি এসে সব চৌপট করে দিলো। তারপর মুরাদ সাহেব তাকে বাঁচিয়ে দিলো।এই তায়াং-এর সাথে কোন শত্রতা নেই আমাদের। কিন্তু ও যেচে এসে আমাদের কাজে বিঘাত ঘটালো।পুনরায় এনাজের মার্ডার কেস ওপেন করলো।আমার ভাইকে সন্দেহ করা শুরু করে দিলো।সবকিছুতে ওর নজরদারি ওকে বিপদে ফেলে দিলো।তাই দুজনকে শেষ করে দিবো।বুঝতে পারছি না। আমার ভাইটা যে এত দেরী কেন করছে?

আমিঃ আপনার ভাই কে?

সাইমনঃ আসলেই দেখতে পাবে।

আমিঃ তায়াং ভাইয়া একবার শুধু আমার খবরটা জানুক।দেখবি তোদের কি করে?

সাইমনঃ কি করে তা নাহয় পরেই দেখা যাবে।শুনলাম আপনার তায়াং ভাইয়া নাকি গোয়েন্দা সংস্থার লোক।সত্যি নাকি??

🦋🦋🦋

চোখ দুটো মার্বেল বানিয়ে সাইমনের দিকে তাকালাম।এরা দেখছি সব নারি-নক্ষত্র জেনে গেছে। আমি তো কখনও কাউকে ভুলেও বলিনি যে তায়াং ভাইয়া গোয়েন্দা সংস্থার লোক।আমি,এনাজ,তায়াং ভাইয়ার বাবা-মা, বোন ছাড়া এই কথাটা কেউ জানে না। তাহলে এরা জানলো কি করে?

আমিঃ কককে বললেছছে আপনাকে?(তুতলিয়ে)

সাইমনঃ সব খবরা-খবর রাখতে হয় ভাবীজী।তায়াং, এনাজ দুজনেই একসাথে আইন বিভাগে পড়াশোনা করছে।একজন যদি সিবিআই অফিসার হয় আরেকজন তো এই আইন সংস্থায় থাকবে।এটা কি খুজতে হয় নাকি?এটা তো কমোন সেন্স।

আমিঃ আমাকে ছেড়ে দেন এখান থেকে। নয়তো খুব খারাপ হয়ে যাবে।

আমার কথা শুনে সাইমন উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। তারপর আফসোসের সুরে বললো।

সাইমনঃ জানো ভাবিজী,আমার না খুব ইচ্ছে ছিলো তোমার ছেলেটাকেও তোমার সাথে তুলে আনতে।কিন্তু ভাইয়ার নিজের কোন বাচ্চা নেই বলে সে বাচ্চাদের ওপর একটু বেশি দূর্বল।তাই তুলে আনতে দিলো না। মা-ছেলে কে একসাথে দেখতে মন্দ লাগতো না।

আমিঃ খবরদার,আমার ছেলের দিকে তাকাবি না।তাহলে তোর চোখ তুলে ফেলবো।শত্রুতা থাকলে সেটা আমার সাথে ওর বাবার সাথে আছে। কিন্তু তার মধ্যে ওকে টেনে আনবি না বলে দিলাম।

সাইমনঃ বড় ভাইয়াও তাই বলে।কিন্তু আমার তো আপনাদের পুরো ফ্যামেলীটাকেই ধ্বংস করে দিতে ইচ্ছে হয়।ঠিক যেভাবে আপনার স্বামীর কারণে আমার পুরো পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে।

আমিঃ কিন্তু কিভাবে? আমার জানা মতে এনাজ কারো ক্ষতি কখনো করতেই পারে না।

সাইমনের চোখ দুটো রক্তবর্ণ হয়ে গেছে। উল্টো দিকে ঘুরে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছিলো। আমার কথা শুনে দ্রুত এসে আমার মুখ চেপে ধরে, দাঁতে দাঁত চেপে বললো।

সাইমনঃ ন্যাকা সাজা হচ্ছে। কিছুই জানো না। আমার মেজু ভাইয়াকে তোমার স্বামী ইনকাউন্টার করে মেরে ফেলেছে। না হয় তাদের থেকে পালিয়ে যেতে চাইছিলো।তাই বলে এভাবে মেরে ফেলবে।আমার বড় ভাই তোমার এনাজের পায়ে অব্দি ধরেছিলো।যাতে আমার ভাই তুষারকে জানে না মারে।বড় ভাইয়ার বিশ্বাস ছিলো এনাজ, তুষার ভাইয়াকে আর যাই করুক জানে মারবে না।তাই সে নিশ্চিন্ত ছিলো।কিন্তু সেই রাতেই তুষার ভাইয়া পালানোর চেষ্টা করায় বড় ভাইয়ার চোখের সামনে ওকে সোজা ইনকাউন্টার করে দিলো।আমাদের বিশ্বাসটাকে ভেঙে চুরমার করে দিলো।তাই মাস দুই পরেই লোক দিয়ে তোমার প্রাণপ্রিয় স্বামীকে তোমার চোখের সামনে শেষ করে দিয়েছি।যাতে সেই কষ্টটা তুমিও অনুভব করতে পারো।নিজের চোখের সামনে নিজের প্রিয় মানুষ হারানোর বেদনা কিরকম হয়।কিন্তু সেবার ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও এবার বাঁচবে না।তোমার চোখের সামনে তোমার প্রাণপ্রিশ ভাই ও স্বামী শেষ। তা এবার সহ্য করতে পারবে তো??

সাইমন আমাকে ছেড়ে কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। ওর চোখ দিয়ে পানি পরছে। কিন্তু আমার মনে হয় না এনাজ কোন কারণ ছাড়া ওদের ভাইকে মেরেছে। ক্রিমিনাল না হলে তো মারবেই না। আমি আমার স্বামী কি খুব ভালো করেই চিনি।

আমিঃ আপনার তুষার ভাইয়া নিশ্চয়ই কোন বড় ক্রিমিনাল ছিলো।তাই মেরেছে।

সাইমনঃ কি এমন অপরাধ করেছিলো আমার ভাই? দুটো মেয়েকে রেপই তো করেছিলো।কোন মানুষকে তো খুন করেনি। এর থেকে বড় অপরাধ কেউ কি করে না?দুটো মেয়েকে রেপ করার কারণে মেরে ফেলতে হবে। অন্য সাজাও তো দেয়া যেতো।তাছাড়া আমরা ওর জামিনের সব ব্যবস্থা করে ফেলেছিলাম।কিন্তু এনাজ সব বরবাদ করে দিলো।ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে বাবা হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেলো।মা ট্রমার মধ্যে চলে গেল।বছর না ঘুরতেই মা-ও আমাদের ছেড়ে পরপারে চলে গেল। আমরা তিন ভাই ছিলাম।মেজু ভাইয়ার মৃত্যুতে আমরা দুই ভাইও জিন্দা লাশ হয়ে গেলাম। আমাদের পুরো পরিবার তছনছ হয়ে গেলো।তাই আমরা দুই ভাই শপথ করেছি এনাজকে জানে বাঁচতে দিবো না।

রেপ কেসের কথা শুনে আমার মাথায় রক্ত উঠে গেলো।তার ভাই দুটো মেয়ের ইজ্জত শেষ করে দিয়েছে তারপরেও তাদের কাছে ফেরেস্তা হয়ে আছে। আমি জোরে চেচিয়ে বললাম।

আমিঃ তাহলে আমার স্বামী একদম ঠিক করেছে।ঐরকম নরকীটের বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই। একে বাচিয়ে রাখলে তো ঠিক টাকা দিয়ে বের করে নিতিস।না জানি আরো কত মেয়ের ইজ্জত শেষ করে দিতো ঐ মানুষরূপী জানোয়ারটা।ওকে মেরে অনেক ভালো করেছে।এতদিনে আমার মনে হচ্ছে আমার স্বামী কাজের কাজ করেছে। যে ধর্ষণ করবে সে বুক ফুলিয়ে স্বাধীনভাবল জীবন-যাপন করবে।আর যে ধর্ষিত হবে সে গলায় দড়ি দিবে।এটা তো হতে পারে না। তবে এখন সেটাই হচ্ছে। শুধুমাত্র টাকার জোরে পার পেয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার ধর্ষক। আর আত্মহত্যা করতে হচ্ছে ধর্ষিতাদের।সব আইন শৃঙ্খলা বাহিনীদের এনাজের মতো হওয়া উচিত। ধর্ষণের শাস্তি একমাত্র মৃত্যু ছাড়া অন্য কিছু হতে পারে না।

সাইমন এগিয়ে এসে আমার গালে জোরে দুটো থাপ্পড় দিলো ।২য় থাপ্পড়ের সময় চেয়ারের কোণার ওপর পরে গেলাম।যার কারণে ঠোঁটের কোণা কেটে গেলো।সাইমন এখন রেগে বোম হয়ে আছে।ওকে অন্য সময় দেখলে আমি নিশ্চয়ই ভয় পেতাম। কিন্তু এখন ভয়ের বিন্দুও খুঁজে পাচ্ছি না। আমার গলা চেপে ধরে বললো।

সাইমনঃ খুব বেশি বড় গলা হয়ে গেছে। এখন ন্যায়-অন্যায়ের বিচার করছিস।তোকে আমি এখনি শেষ করে দিবো।আমার ভাইকে মেরে তোর স্বামী যখন ভালো কাজ করছে। তাহলে আমিও তোকে মেরে ভালো কাজ করে ফেলি।

আমার খুব বলতে ইচ্ছে করছিলো।উচিত কথা বললে তো তোদের রাগ উঠবেই। কিন্তু গলা চেপে ধরে রাখায় তা বলতে পারলাম না।এমনভাবে গলা চেপে ধরেছে যে আমার চোখ উল্টে আসছে।চোখ, মুখে অন্ধকার দেখছি।তখুনি একজনের গলার স্বর পেলাম।সাইমনকে শাসিয়ে বলছে।

—-সাইমন করছিসটা কি?ছেড়ে দে ওকে।মরে যাবে তো।

সাইমনঃ বড় ভাইয়া,ওকে আজ আমি মেরেই ফেলবো।কত বড় সাহস ওর।ও বলে আমার ভাইকে মেরে নাকি এনাজ ভালো কাজ করছে।

—-ওকে ছাড় বলছি।ও মারা গেলে তায়াং,
এনাজকে এখানে আনতে পারবো না।

আগুন্তক আমার গলার থেকে সাইমনের হাত দুটোকে টেনে সরিয়ে দিলো।সাইমন ফোঁস ফোঁস করছে।আবারও আমার দিকে এগিয়ে আসতে নিলে আগুন্তক ওকে আটকে ফেললেন।আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো।আমি জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি।

—-সাইমন, রিলেক্স।অনেক কষ্ট করে এত প্ল্যান করেছি।সামান্য ভুলে সব নষ্ট করে দিস না।এই নোভার ওপর নজর রাখতেই তো তোকে রেডিও স্টেশনে কাজ করতে পাঠিয়ে ছিলাম।তা কি তুই ভুলে গেছিস?

সাইমনঃ একটুও ভুলিনি বড় ভাইয়া।কিন্তু ওকে আমার জ্যন্ত সমাহিত করতে ইচ্ছে হচ্ছে।

—- মাথা ঠান্ডা কর।রোশানকে কল লাগা।এই এমপি সাহেবকে, আমি তোর থেকে নোভার খোঁজ খবর নিয়ে শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে সব খবর দিতাম।ভেবেছিলাম একে দিয়ে তায়াংকে শেষ করবো।
দুইবার কল করে ভয় দেখিয়ে ছিলাম।কিন্তু সে আমার কথা শুনলোই না।তার ক্ষতি যে না করে তাকে মারে না। তাই তো বাধ্য হয়ে এতসব করতে হলো।এখন এই মেয়েকে মেরে ফেললে রোশানকেও হেনেস্তা করা যাবে না। তাই শান্ত হো।

আগুন্তকের কণ্ঠটা চেনা চেনা লাগছে। কোথায় জানি শুনেছি। গলায় প্রচন্ড ব্যাথা পেয়েছি বলে এতক্ষণ সামনের দিকে তাকাইনি।চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছিলাম।যেহেতু সাইমন একে বড় ভাইয়া বলছে তার মানে আগন্তুকটা সবকিছুর মূলে। তাই তাকে তো আমার দেখতেই হবে।চোখ খুলে আমি যাকে দেখলাম, তাতে আমি জীবনেও ভাবতে পারি নি যে সবকিছুর পেছনে সে থাকতে পারে । স্পষ্ট সুরে আমার মুখ দিয়ে আপনাআপনি বের হয়ে গেলো।

আমিঃ আআআআপপপপনি!!!!

#চলবে

#প্রজাপতির_রং🦋
#Part_30
#Writer_NOVA

——আআআআপপপপনি!!!!

সামনে থাকা মানুষটা দেখে আমি আৎকে উঠলাম। আমি তো কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি পুরো কাহিনীর পেছনে সে থাকতে পারে। তাকে তো ভালোর খেতাবি দিয়ে বসে ছিলাম।আমার চোখ, মুখে বিস্ময় দেখে সে কিছুটা এগিয়ে এসে বললো।

—– মনে হচ্ছে ভাবী আমাকে দেখে অনেক বেশি অবাক হয়েছেন।হওয়ারি কথা।আমরা সবসময় যা দেখি আর যা ভাবি তা কিন্তু ঠিক হয় না।

আমিঃ মোরশেদ ওয়াসিম ভাই!!!! আপনি ছিলেন সবকিছুর মূলে?

মোরশেদঃ জ্বি ভাবী।

আমিঃ অনেক বড় ভুল করে ফেলেছেন।এর মাশুল খুব বাজেভাবে দিতে হবে আপনাদের। একটু অপেক্ষা করুন।আমার ভাই ও স্বামীকে আসতে দিন।

সাইমনঃ তোমার ভাই,স্বামী ও প্রেমিক তিনজনই আসবে।তাদের সবাইকে আলাদা করে ইনভাইট করা হয়েছে। তুমি একটু অপেক্ষা করো।তাহলে সবার মৃত্যুটা নিজের চোখেই দেখবে।

আমিঃ রোশানের সাথে কি শত্রুতা আপনাদের? ওকে এসবে টানছেন কেন?

মোরশেদঃ বেশি ভালো সাজতে চেয়েছে সে।দুইবার কল করে হুমকি-ধমকি দিয়েও আমি ঐ এমপি সাহেবকে তায়াং-কে মারার জন্য রাজী করাতে পারিনি।ও যদি তায়াং-কে মারতে রাজী হতো তাহলে কি আমাকে এতকিছু করতে হতো?তাই ব্যাটাকে জানে না মারলেও এমন ডোজ দিবো, যাতে সারাজীবনের জন্য কোমায় চলে যায়।

আমিঃ দেখা যাক কি হয়?কে হারে কে জিতে?

আমি মোরশেদ ভাইয়ের কথা শুনে বেশ কয়েকবার হাই তুলে কথাগুলো বললাম।যার মানে তাদের কোন কথা আমি গুরুত্ব দেই নি।এতে সাইমন বেশ চটে উঠলো।হুংকার ছেড়ে তার ভাইকে বললো।

সাইমনঃ বড় ভাইয়া, দেখছো কি সাহস?একটুও ভয় পাচ্ছে না।ওকে তো আমরা এখন মেরে গুম করেও ফেলতে পারি। কিন্তু তার কোন ভাবান্তর নেই। আর তুমি আসার আগে কি বলেছে জানো?এনাজ নাকি তুষার ভাইয়াকে মেরে অনেক ভালো কাজ করছে। তুমি না আসলে এতক্ষণে আমি ওকে গলা টিপে মেরে ফেলতাম।

আমিঃ আমার হাত দুটো যদি খোলা থাকতো না,তাহলে সবার প্রথমে তোকে কষিয়ে দুটো চড় মারতাম।তোর ভাই দুটো মেয়ের জীবন শেষ করে দিয়েছে আর তুই বলিস কোন অপরাধ করে নি তোর ভাই ।আমার স্বামী তোর ভাইকে মেরে একদম ঠিক কাজ করেছে। ঐরকম অমানুষের পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই।

মোরশেদঃ মুখের বুলি দেখছি ভালোই ফুটছে।অবশ্য ফুটবেই তো।স্বামী সিবিআই অফিসার মরতে মরতে বেঁচে ফিরেছে,গোয়েন্দা ভাই আছে। এমপি প্রেমিক আছে। তাদের পাওয়ার তো আপনার মধ্যে মজুদ আছে তাই না।

সাইমনঃ ওকে তো আমি আজ মেরেই ফেলবো।ও আবারো তুষার ভাইয়াকে নিয়ে কথা বলছে।

সাইমন তেড়ে আমার কাছে আসতে নিলেই মোরশেদ ওয়াসিম তাকে আটকে ফেললো।

মোরশেদঃ ঠান্ডা হো ভাই। মাথা গরম করে কোন কাজের সমাধান হয় না।

আমিঃ কি রে অমানুষ, থামলি কেন? আমাকে মারবি তুই? আয় পারলে মার।আমিও দেখি তোর কত সাহস আছে। তোদের মরার সময় হয়েছে তো তাই এতো উড়ছিস।একটু অপেক্ষা কর।তোদের উপরে পাঠানোর জন্য লোক আসছে তো।

রাগে আমার সারা শরীর কাঁপছে। এদের ওপর প্রচন্ড ঘৃণা হচ্ছে। মানুষ কতটা নিচ মন-মানসিকতার হতে পারে তা এদের না দেখে বুঝতেই পারতাম না।মোরশেদ ওয়াসিম রেগে আমার সামনে এসে নিজের মুখে আঙ্গুল দিয়ে বললো।

মোরশেদঃ চুপ, একদম চুপ।ভদ্রলোকের মতো ব্যবহার করছি বলে পার পেয়ে গেছিস।গলায় পারা দিয়ে আওয়াজ বন্ধ করে দিবো।খুব সাহস বেড়েছে তোর তাই না।আরেকটু সময় পর তোর এই গলার সাউন্ড কোথায় যায় তা আমিও দেখবো।

আমিঃ আওয়াজ নিচে।আওয়াজ নিচু করেন মোরশেদ সাহেব।কুকুরের কাজ কি জানেন? এরা শুধু ঘেউ ঘেউ করতে পারে। তারা ভাবে বড় গলায় চেচিয়ে ঘেউ ঘেউ করতে পারলে সে বড় হয়ে যাবে। আপনারা দুজনও না সেই কুকুর। সারাদিন ঘেউ ঘেউ করলেও কোন লাভ হবে না। পৃথিবীতে জয় সবসময় ন্যায়েরই হয়।চিল্লাইয়া মার্কেট পাবেন না।

কথা শেষ হতে দেরী কিন্তু আমার গালে সজোরে থাপ্পড় পরতে দেরী না।সামনে তাকিয়ে দেখি থাপ্পড়টা মোরশেদ সাহেবই দিয়েছে। রক্ত চোখে দুই ভাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। পারলে এখুনি খেয়ে ফেলে।এদের রাগাতে পেরে মনের ভেতর একটা পৈশাচিক আনন্দ অনুভব করছি।তাই থাপ্পড়ের ব্যাথাটা গায়ে লাগেনি।আবারো জোরে চেচিয়ে বলে উঠলাম।

আমিঃ উচিত কথা কারোই ভালো লাগে না। তাই তোদের যে এই কথাগুলো গায়ে লাগবে তা আমি ভালো করেই জানি।

মোরশেদঃ একে চুপ করতে বল সাইমন।আমার আর সহ্য হচ্ছে না। ও যদি চুপ না করপ তাহলে হয়তো আমি একে উল্টো পাল্টা কিছু করে ফেলতে পারি।

সাইমন এগিয়ে এসে জোরে আমার মুখ চেপে ধরলো। রাগে ওর মুখ লাল হয়ে আছে।দাঁতে দাঁত চেপে বললো।

সাইমনঃ খুব বেশি ন্যায়বাদী হয়ে গেছিস তাই না?তোর ন্যায়বাদীতা ছুটাচ্ছি আমি।আবার অজ্ঞান হয়ে পরে থাক।যতদিন এখানে থাকবি খাবার তো দূরে থাক একফোঁটা পানিও পাবি না।তখন দেখবো কথার এতো জোর আসে কোথা থেকে।

সাইমন কথাগুলো বলতে বলতেই আমার নাকে তখনকার মতো টিস্যু চেপে ধরলো। আমি কিছুক্ষণ ওর হাত থেকে ছোটার জন্য ছটফট করতে করতে শক্তিহীন হয়ে গেলাম।ধীরে ধীরে চোখ দুটো বন্ধ হয়ে এলো।

🦋🦋🦋

মোরশেদ ওয়াসিম তখন ট্রান্সফার হয়ে নতুন করে এনাজের টিমে জয়েন করেছে।এনাজ ছিলো তার সিনিয়র অফিসার। তুষারের কেসটা প্রথমে পুলিশের কাছে ছিলো।মোরশেদ সাহেব বহু ছলচাতুরী করে সেটা নিজেদের আন্ডারে নিয়ে আসেন।সে ভেবেছিলো এসব ছোটখাটো ব্যাপারে এনাজ মাথা ঘামাবে না।বরং তার হাতে তুষারের ফাইল তুলে দিবে।যাতে করে সে অনায়াসে তুষারকে বাইরে বের করে ফেলতে পারবে।আর সব দোষ ঐ মেয়ে দুটোর দিয়ে দিবে।ঐ মেয়ে দুটো উশৃংখল ড্রেস পরে বয়ফ্রেন্ডের সাথে চলাচল করতো।যার কারণে তাদের বয়ফ্রেন্ডের হাতে ধর্ষণ হয়েছে। কিন্তু মাঝখান দিয়ে শুধু শুধু তার ভাইকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। কিন্তু মোরশেদ সাহেব এনাজকে চিনতে ভুল করে ফেলছে। এনাজের কাছে কেস ছোট হোক কিংবা বড় সেটা দেখার বিষয় নয়। সে প্রত্যেকটা কেস কে সমান গুরুত্ব দেয়।তাই তুষারের কেসটাকে সে নিজের হাতে তুলে নেয়।

এতে মোরশেদ সাহেব কিছুটা দিশেহারা হয়ে যায়।এনাজের সাথের সহকর্মীদের থেকে জানতে পারে এনাজ সব কেস নিয়ে বেশ কড়াকড়ি। অপরাধী যেই হোক তাকে তার শাস্তি অবশ্যই দেয়।এসব শুনে মোরশেদ সাহেব চোখে মুখে অন্ধকার দেখা শুরু করে। তাই সে ভাবে এনাজের হাত-পায়ে ধরে টাকার লোভ দেখালে হয়তো সে রাজী হয়ে যাবে। যেমন ভাবা তেমন কাজ।এনাজকে আলাদা ডেকে পায়ে ধরে টাকা দেখিয়ে নিজের দলে নিতে চায়।কিন্তু এনাজের মাথায় চলছিলো অন্য কিছু। সে এই সুযোগের স্বদ্যবহার করে মোরশেদ সাহেবের মুখ থেকে সত্যি ঘটনা স্বীকার করিয়ে নেয়।মোরশেদ সাহেব ভাবেন যদি সে এনাজকে সবকিছু খুলে বলে তাহলে হয়তো এনাজ ওকে হেল্প করবে।তাই সে জানিয়ে দেয় সব দোষ তার ভাইয়ের। সব শুনে এনাজ চুপ করে ছিলো।এতে মোরশেদ সাহেব ভেবে নেয় এনাজ তার কথায় গলে গেছে। এনাজ কিন্তু তখন অন্য ফন্দি আঁটছিলো।তাই সে মোরশেদ সাহেবকে বিশ্বাস করাতে টাকাগুলো নিয়েছিলো।যাতে মোরশেদ সাহেব বিশ্বাস করে নেয় এনাজ তুষারকে কিছু করবে না। এর মধ্যে মোরশেদ সাহেব তুষারের জামিনের ব্যবস্থা করার তোড়জোড় শুরু করে দেয়।

এনাজের কাছে সবসময় মনে হতো ধর্ষণের শাস্তি একমাত্র মৃত্যু ছাড়া অন্য কিছু নয়।তাই সে তুষারকে মেরে ফেলার প্ল্যান করে। কারণ একে ছেড়ে দিলো ভবিষ্যতে আরো অনেক মেয়ে তার সম্ভ্রম হারাবে।যার জন্য এনাজ নিজেকে কখনও ক্ষমা করতে পারবে না। তাই দিন দুই পর রাত ১০ টার দিকে তুষারকে ছেড়ে দিয়ে বলে পালিয়ে যেতে। আর সে মোরশেদের লোক।তুষার রিমান্ডে থেকে যেই পরিমাণ মার খেয়েছে তাতে সে ভয়ে পুরো আধপাগল হয়ে গিয়েছিল। পালানোর কথা শুনে কোনকিছু না ভেবে ছুট লাগায়।এনাজ তো এটাই চেয়েছিলো।এই একটা ক্ষেত্রে খুব সুন্দর করে একটা মিথ্যে বলা যায়। আসামি পালিয়ে যাওয়ার সময় গুলিয়ে নিহত।তারপর এনাজ নিজেই আবার মোরশেদ সাহেবকে খবর দেয় তুষার পালিয়েছে।তাকে এখন সেভ কোন জায়গায় নিতে হবে। তাই মোরশেদ ও এনাজ দুজন তুষারের পেছনে ছুটে।একসময় ওকে ধরেও ফেলে।আর কয়েক কদম এগিয়ে গেলে মোরশেদ সাহেব তুষারকে ধরে ফেলবে।কিন্তু তখুনি একঝাঁক বুলেট এসে তুষারের গা ঝাঝরা করে দেয়।ঘটনার আকস্মিকতায় মোরশেদ ওয়াসিম হতভম্ব হয়ে যায়।নিজের চোখের সামনে নিজের প্রাণপ্রিয় ভাইকে মারা যেতে দেখে। এনাজ তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তুষারের মৃত্যুটা নিয়ে ততটা জল ঘোলা হয় না।এনাজ সব শান্তপর্ণে সামলে নেয়।মোরশেদ নানা কিছু করেও প্রমাণ করতে পারে না যে তার ভাইকে এনাজ মেরে ফেলছে।কারণ এনাজ সব এভিডেন্স নষ্ট করে ফেলে।

কয়েক দিন এটা নিয়ে তোলপাড় হলেও পরবর্তীতে শান্ত হয়ে যায়।তবে মোরশেদ সাহেব এনজকে শেষ করে দেওয়ার শপথ নেন।এনাজ তার দেওয়া টাকাগুলো ফেরত পাঠিয়ে জানায়।কেন সে টাকাগুলো গ্রহণ করেছিলো।শুধুমাত্র ওর মুখের থেকে সবকিছু জানতে ও এনাজকে বিশ্বাস করার জন্য যে এনাজ টাকাগুলো নিয়েছিলো তা শুনে রাগে ফেটে পরে।তবে সে পুরোপুরি চুপ হয়ে যায়।চুপ থেকে এনাজকে মেরে ফেলার ফন্দি আঁটে। সুযোগ খুঁজতে থাকে এনাজকে মারার জন্য। একদিন পেয়েও যায়।সেদিন নোভা ও এনাজ হাঁটতে বের হয়েছিল। ভাড়া করা লোক দিয়ে এনাজকে মেরে ফেলার চেষ্টা করে।যদিও সেদিন ভাগ্যক্রমে এনাজ বেঁচে যায়।

মোরশেদ ওয়াসিমের নিজের কোন সন্তান নেই। তার স্ত্রী কখনো মা হতে পারবে না জেনেও সে তাকে এখনো ছাড়েনি।ভীষণ ভালোবাসে তার স্ত্রীকে।সব মানুষের ভালো-মন্দ দুটো দিক আছে। তেমনি মোরশেদের ভালো দিক এটা বলা যায়। রেস্টুরেন্টে সেদিন(পর্ব-০৩) নাভানকে দেখে তার পিতৃসুলভ মন জেগে ওঠে। তাই সে নাভানকে আদর করে নানাকিছু কিনে দেয়।অনেকটা গরু মেরে জুতা দান প্রবাদের মতো কাজটা করেন তিনি।তার এই ভালো মানুষী মন দেখে নোভা তাকে ভালোর দলে ফেলে দেয়। কিন্তু নোভা জানতো না এই লোকটাই তাকে সাদা রঙে রাঙিয়ে ছিলো।তার স্বামীকে তার কাছ থেকে তার বাচ্চার কাছ থেকে আড়াই বছর দূরে রেখেছে। এতকিছুর মধ্যে সাইমন তার বড় ভাইকে পুরোদমে সাহায্য করেছে।

তায়াং যখন পুনরায় এনাজের কেস ওপেন করেছিলো তখন বারবার সন্দেহটা মোরশেদ সাহেবের দিকে যাচ্ছিলো।এতে মোরশেদ সাহেব খুব ঘাবড়ে যায়।তাই রোশনকে বলে তায়াং-কে মেরে ফেলতে।সাথে তায়াং-এর ওপর নজর রাখার মানুষ রেখে দেয়।কিন্তু রোশান তায়াংকে মারতে রাজী হয় না।ততদিনে তায়াং বের করে ফেলে মোরশেদ সাহেবকে।ঠিকানাবিহীন বাড়িতে যেদিন যায় সেদিন একটা কল পেয়ে তায়াং তাড়াহুড়ো করে চলে আসে।বলে আর্জেন্ট একটা কাজ আছে। সেই আর্জেন্ট কাজটা ছিলো মোরশেদ সাহেব যে সবকিছুর পেছনে তার প্রমাণ জোগাড় করা।যেই ভাড়া করা লোকদের দিয়ে এনাজকে মেরেছিলো তাদের মধ্যে থাকা একজনকে তায়াং-এর আন্ডারে থাকা লোকজন খুঁজে পেয়ে যায়। তাকে আটকে রেখে তায়াংকে কল দেয়।আর তায়াং সেদিন কল পেয়ে তাড়াহুড়ো করে চলে আসে।পৃথিবীর সবার কাছে যেহেতু এনাজ মৃত সেহেতু ওর খুনীকে হাতেনাতে ধরে সকল প্রমাণের ভিত্তিতে ওদের বড় সাজা হবে।সেটা মোরশেদ সাহেব ও সাইমন যখন সব জেনে যায় তখন নোভাকে গুটির চাল বানাতে তুলে আনে।জয় কার হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।

🦋🦋🦋

সাইমন ও মোরশেদ সাহেব খুব মনোযোগ সহকারে সামনের সি সি টিভি ফুটেজে তাকিয়ে আছে। তাদের ধারণা এখনই রোশান,তায়াং,এনাজের মধ্যে কেউ একজন চলে আসবে।কিন্তু সিসিটিভি ফুটেজের সামনে বসে থাকতে থাকতে তাদের কোমড় ধরে যাওয়ার উপক্রম। কিন্তু কারো দেখা নেই।

মোরশেদঃ তুই সবাইকে কল করে জানিয়ে দিয়েছিস তো? ওরা খবর পেলে তো এতক্ষণ চলে আসার কথা। তাহলে আসছে না কেন?

সাইমনঃ আমিও বুঝতে পারছি না। ওদের আসতে দেরী আছে। ততক্ষণে অন্য কাজ করি।সিসিটিভি ফুটেজের সামনে এভাবে ভ্যাবলাকান্তের মতো বসে থাকার কোন মানে হয় না।

সাইমনের মুখে স্পষ্ট বিরক্তি দেখা যাচ্ছে। সেটা দেখে মোরশেদ সাহেব একটা মুচকি হাসি দিলেন।তবে সেই হাসিটা তার মুখে দীর্ঘস্থায়ী না হওয়ায় সাইমনের দৃষ্টিগোচর হলো না। স্বাভাবিক কণ্ঠে মোরশেদ উত্তর দিলো।

মোরশেদঃ এরা প্রচুর চালাক।এদের বোকা ভেবে নিজে বোকা হস না।ওদের কে কাবু করতে হলে সাবধান থাকতে হবে। নয়তো আমাদের ফাঁসিয়ে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নোভাকে নিয়ে চলে যাবে।প্রত্যেকজন যদি ধূর্ত না হতো তাহলে এমপি, গোয়েন্দা সংস্থা কিংবা অফিসারের পদে কাজ করতে পারতো না।

সাইমনঃ তা ভুল বলো নি।এনাজের বউয়েরই জানের ভয় নেই। সাহস দেখে আমি অবাক।

মোরশেদঃ সত্যি কথা বলতে আমিও বিষয়টাই ভীষণ অবাক হয়েছি।আড়াই বছর আগে এনাজের মুখে নোভার যে বিবরণ শুনেছিলাম তার সাথে আজকের নোভার আকাশ-পাতাল পার্থক্য।অবশ্য ওকে দেখে আমার একটা কথা মনে হচ্ছিলো যে,শামুক যেমন প্রতিকূল আবহাওয়ায় নষ্ট না হয়ে যায়, তার জন্য তাকে শক্ত খোলস দেওয়া হয়েছে। তেমনি কিছু কিছু মেয়ে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নরম থেকে শক্ত হয়ে যায়।

সাইমনঃ হয়েছে ওর গুণগান গাইতে হবে না তোমাকে।একে আমি একটুও সহ্য করতে পারি না।রেডিও স্টেশনে সময়ে অসময়ে শুধু আমাকে অপমান করতো।ওর ওপর প্রচুর ক্ষোভ আছে আমার।ওর কোন ক্ষতি ছাড়া আমি এত সহজে ছাড়ছি না।

মোরশেদ ওয়াসিম খুব মনোযোগ সহকারে ভাইয়ের কথা শুনছিলো।সাইমন খুব একগুঁয়ে ও জিদ্দি টাইপের ছেলে।খুব সহজে রেগে যাওয়া এর জন্মগত অভ্যাস।কিন্তু গত ছয় মাস ধরে যে ও নোভার এত অপমান সহ্য করে রেডিও স্টেশনে কাজ কিভাবে করেছে সেটা আল্লাহ মালুম। কারণে অকারণে নোভা সাইমনকে শুধু অপমানই করতো না।সাথে সবার সামনে হেনেস্তাও আছে। তারপরেও গুপ্তচর হওয়ায় বেহায়ার মতো ওর সাথে লেগে থাকতো সাইমন।সেই পুরনো অপমানগুলো আজ মনে পরে গেছে। তাই মনের মতো করে দুটো চড় মেরেছিলো।আরেকটু হলে রাগের বশে নোভার গলা টিপে মেরেই ফেলতো।কিন্তু মোরশেদের কারণে তা সম্ভব হলো না।

সাইমনঃ ভাইয়া দেখো একটা ব্লাক কার এসেছে।

উৎফুল্ল মনে সাইমন চেচিয়ে উঠলো। মোরশেদ এতক্ষণ মন দিয়ে কিছু একটা ভাবছিলো।যার কারণে তার দৃষ্টি ছিলো শূন্যে।সাইমনের কথা শুনে চটজলদি সেদিকে তাকিয়ে বললো।

মোরশেদঃ এটা তো ওদের গাড়িই।দ্রুত আমাদের লোকদের তৈরি থাকতে বল।সবাই যাতে অস্ত্র নিয়ে ওদের ঘেরা দিয়ে ফেলে।

সাইমন দ্রুত গতিতে পকেট থেকে মোবাইল বের করে তার লোকদের কল করতে শুরু করলো। মোরশেদ ওয়াসিম কিছুটা গভীরভাবে গাড়িটা পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো।অনেক সময় হয়ে যাওয়ার পরেও গাড়ি থেকে কেউ বের হচ্ছে না। তাই সাইমন ও মোরশেদ দৌড়ে বাইরে বের হয়ে গেলো।বাইরে যাওয়ার পরই তারা দেখলো একজন আড়াল থেকে বের হয়ে ওদের সামনে এক হাতে রিভেলবার তাক করে দাঁড়ালো।

—-হাত উপরে উঠা।নয়তো গুলি করে উপরে পাঠিয়ে দিবো।কি বললাম শুনতে পাসনি?হাত জলদী উঠা।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে