#প্রজাপতির_রং🦋
#Part_23
#Writer_NOVA
এরিন সামনে থেকে সরতেই আমি সেই মানুষটাকে দেখতে পারলাম।তাকে দেখেই আমি অবাক।সেও যে আমাকে দেখে অবাক হয়েছে তা তার চোখ, মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আমি অবিশ্বাস্য চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছি। এ এখানে কি করছে??? এ কি আজ অফিসে যায়নি।মনে হয় তো গেছে। নয়তো অফিসের ড্রেসআপে থাকতো না।আমি স্পষ্ট সুরে বলে উঠলাম।
আমিঃ আরিয়ান আপনি?
এরিনঃ তুই একে চিনিস?
আমিঃ হ্যাঁ আমাদের কোম্পানির ওনারের ছোট ভাই। উনিও কোম্পানির ওনার। আরিয়ান আজওয়ার। কিন্তু তুই একে কি করে চিনিস?
এরিন মুচকি হাসলো।আমি ওর হাসির অর্থ বুঝতে না পেরে বিস্মিত চোখে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।আরিয়ান এগিয়ে আসলো।
আরিয়ানঃ আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন?
আমিঃ আলাইকুমুস সালাম।আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আপনি?
আরিয়ানঃ জ্বি, আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি।
আমিঃ কি রে এরিন বললি না উনাকে চিনলি কিভাবে?
আরিয়ানঃ আমি বলছি।আসলে আমাদের বিয়ের কথাবার্তা চলছে। উনার সাথে সামনাসামনি কথা বলার প্রয়োজন ছিলো।একে অপরকে বিয়ের আগে জানাশোনার প্রয়োজন। তাই আমি আপনাদের বাসায় চলে এসেছি। কিছু মনে করেননি তো?
আমিঃ আরে না কি মনে করবো? এরিন তো আমাদের কিছুই বলেনি।তাই এরকম পরিস্থিতিতে পরতে হলো।
এরিনঃ আমি তোদের বলতে চেয়েছিলাম।কিন্তু আরিয়ান বললো একেবারে বাসায় এসে সবাইকে সারপ্রাইজ দিবে।তাই আমিও কিছু বলেনি।কিন্তু আকার ইঙ্গিতে বুঝিয়েছি।কিন্তু তোরা বুঝতে পারিস না।তাছাড়া তুই সারাদিন অফিস, শো করে এসে টায়ার্ড হয়ে যাস।ফ্রেশ হয়ে নাভানকে খাইয়ে ঘুমিয়ে পরিস।তোকে তখন কিছু বলতে ইচ্ছে করে না।সারাদিনের ক্লান্ত মানুষটাকে বকবক করে বিরক্ত করতে আমার ইচ্ছে হয় না।
এরিনের ওপর প্রথম প্রথম একটু রাগ হলেও এখন আর নেই। ও তো ভুল বলেনি।সারাদিন অফিস, শো করে কার ভালো লাগে আবার বকবক শুনতে। আমি মুচকি হেসে এরিনকে জড়িয়ে ধরলাম।
আমিঃ শুভকামনা নতুন জীবনের জন্য। আমি সত্যি অনেক বড় সারপ্রাইজ পেয়েছি।
আরিয়ানঃ বিয়েটা কিন্তু আপনার ও আমার ভাইয়ার দেওয়া ডেটেই হবে।প্লিজ জলদী বিয়ের ডেট ফেলেন।বউ ছাড়া আর কত দিন থাকবো🥺।
আরিয়ানের কথা শুনে উচ্চস্বরেই হেসে উঠলাম।এরিন আরিয়ানের হাতে একটা চাপর মেরে লজ্জারাঙা মুখ করে বললো।
এরিনঃ যা: এভাবে বলে কেউ।
আমিঃ এরিন লজ্জা পেয়েছে। ওকে লজ্জা পেলে কিন্তু অনেক সুন্দর লাগে।গাল দুটো পিচ ফলের কালারের মতো রক্তিম হয়ে যায়।
আরিয়ানঃ একদম ঠিক বলছেন।তখন আমার কিন্তু জোড়ে একটা কামড় মারতে ইচ্ছে করে।
এরিনঃ চুপ করবেন।নোভা যে সামনে আছে সেটা কি চোখে দেখছেন?
আরিয়ানঃ উনি এসব বহু আগের থেকে জানে।তার দুই বছরের একটা ছেলে আছে।ছেলেটা নিশ্চয়ই অনলাইন থেকে অর্ডার করেনি।তাই না ভাবী
সাহেবা😉?? আমি কি কিছু ভুল বলেছি?
আরিয়ানের কথায় আমি মিটমিট করে হাসছিলাম।এই ছেলে এখন আমাকে ও এরিন দুজনকেই লজ্জা দিচ্ছে। তবে ভাবী সাহেবা ডাকটা শুনে আমি চোখ দুটো বড় বড় করে আরিয়ানের দিকে তাকালাম।
আমিঃ ভাবী সাহেবা কে?
আরিয়ানঃ আপনি।
আরিয়ানের সহজ সরল উত্তর শুনে আমি ও এরিন দুজনেই অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি।আরিয়ান কি তাহলে জানে তাজের বউ আমি!!!!
এরিনঃ নোভা আপনার ভাবী কি করে হলো?
আরিয়ানঃ আমি এখন বানিয়ে নিলাম।আরে আরে তোমরা দুজন এতো সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছো কেন? আমি তো এমনি বললাম।নাভানের চাচ্চু আমি।তাহলে তো নোভা আপু আমার ভাবীই হবে।আমি তার হাসবেন্ডকে ভাই ডেকে নিলাম।ব্যাস হিসাব বরাবর।
এর ভাবী বলার যুক্তি শুনে আমি থ মেরে আছি।কি সুন্দর যুক্তি।সে হাত বাড়িয়ে আমার থেকে নাভানকে কোলে তুলে নিলো।
আরিয়ানঃ চাচ্চুটা কি করছে? চাচ্চু কি কিছু খেয়েছে? নাকি এমনি টো টো করে ঘুরছে।
আমি মুগ্ধ চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে রইলাম।এনাম থাকলে হয়তো এমনি নাভানকে আদর করতো।যেদিন জানতে পেরেছিল আমি প্রেগন্যান্ট সেদিন সারা বাড়ি দুই ভাই মাথায় তুলে ফেলেছিলো।কে জানে কোথায় আছে ছেলেটা। আদো বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে। তবে আমি চাই আল্লাহ ওকে বাচিয়ে ও ভালো রাখুক।শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে এনামের কথা ভাবছিলাম।আরিয়ান আমার চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বললো।
আরিয়ানঃ কোথায় চলে গেলেন ভাবী সাহেবা?
আমিঃ কোথাও না তো।
আরিয়ানঃ কত কিছু বললাম।কিন্তু আমার তো মনে হলে আপনি কিছুই শুনেননি।হুটহাট কোথায় চলে যান ভাবী সাহেবা? এক মিনিট,, আমি বারবার ভাবী সাহেবা বলছি বলে আবার রাগ করছেন না তো?
আমিঃ আরে না রাগ করবো কেন? বরং খুশি হয়েছি।অনেক দিন পর কেউ ভাবী বলে ডাকলো।এরিন কোথায়? ও তো এখানেই ছিলো।
আরিয়ানঃ ও তো মাত্রই বাইরে গেলো আপনার সামনে দিয়ে। আপনি দেখেননি?
আমিঃ হয়তো খেয়াল করিনি।
আরিয়ানঃ তা করবেন কি করে আপনি তো মহাকাশে ছিলেন ভাবী সাহেবা। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলবেন।বসুন প্লিজ।
আমিঃ না বসে লাভ হবে না। নাভানকে গোসল করাতে হবে। তারপর কিচেনে যেতে হবে। আপনি বিশ্রাম নিন।আমি আসছি।
আরিয়ানের কোল থেকে নাভানকে নিয়ে নিজের রুমে চলে এলাম।সবাই কে এখন রহস্যময় মনে হয়। আরিয়ানকেও রহস্যময় মনে হচ্ছে।কারণ নাভানকে ওর কোলের থেকে আনার সময় ওর মুখে অদ্ভুত রকমের একটা রহস্যময়ী হাসি দেখেছি আমি।কি জানি কিসের ছিলো ঐ হাসি।তাছাড়া হঠাৎ ও এখানে কেন এলো? এরিনের সাথে দেখা করতে, কথা বলতে চাইলে তো কফি শপেই এলেই পারতো।কিন্তু সোজা বাসায়।বিষয়টা একটু ভাবার। আপাতত এসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে নাভানকে গোসল করাতে ওয়াসরুমে ঢুকে গেলাম।
🦋🦋🦋
বিকেলের পড়ন্ত আলোটায় সারা ভুবনে ছড়িয়ে একটা মায়াবী আবেশ তৈরি করে রেখেছে। মিষ্টি রোদের আলোয় অন্যরকম ভালো লাগা সৃষ্টি হয়েছে। অফিস ছুটি হয়েছে মিনিট দশেক আগে। কিন্তু তাজ এখনো কেবিন থেকে বের হয়নি।সামনের কাচের দিকে তাকিয়ে বাইরের পরিবেশ উপভোগ করছে।এই মিষ্টি রোদটা তাজের বেশ লাগে।নেই কোন তেজ,নেই কোন অসহ্যকর গরমের অনুভূতি। বরং একরাশ ভালো লাগায় ঘেরা। সারাদিন বহু কাজের চাপ গিয়েছে।একটু দম নেওয়ার সময় ছিলো না।শেয়ার ব্যবসার জন্য অনুমোদন, চুক্তিপত্র,অবলেখক,ব্যাংক ঝামেলা করতে করতে সে পুরো টায়ার্ড।সারাদিনে নোভার একটু খোঁজও নিতে পারেনি।নিশ্চয়ই গাল ফুলিয়ে রেখেছে এখনো।মেয়েটা অনেক বেশি অভিমানী। এই কারণে তাজ ওকে বেশি পছন্দ করে। পূর্বের অনেক কথা ভেবে মিটমিট করে হাসছিলো তাজ।আদরের ডাকে ওর হুশ ফিরে।
আদরঃ স্যার, বাসায় যাবেন না?
তাজঃ হুম যাবো তো।
আদরঃ তাহলে চলুন একসাথে বের হই।
তাজঃ একটু পরে।তোমার ম্যাডাম কি বের হয়ে গেছে?
আদরঃ আসলে স্যার আপনাকে একটা কথা বলতে আমি একদম ভুলে গিয়েছিলাম।
তাজ চোখ দুটো ছোট ছোট করে আদরের দিকে তাকিয়ে রইলো। আদর জিহ্বায় কামড় দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আদর যে ওকে ভয় পাচ্ছে তা ভেবে মনে মনে হাসলো তাজ।তবে উপরে তা প্রকাশ করলো না। ছেলেটা শুধু শুধু ওকে ভয় পায়।আজ অব্দি কখনও তাজ ওর সাথে ধমক দিয়ে কথা বলা তো দূরে থাক জোরে চেচিয়েও কথা বলে নি।তারপরেও ওকে যে কেন এতো ভয় পায় তার লজিক খুঁজে পায় না তাজ।
তাজঃ কি কথা?
আদরঃ আসলে স্যার হয়েছে কি?(ভয়ে আমতা আমতা করে)
তাজঃ কি হয়েছে নির্ভয়ে বলতে পারো।
তাজের আশ্বাস শুনে আদর কিছুটা স্বাভাবিক হলো।তারপর কোন ভনিতা ছাড়া বলে উঠলো।
আদরঃ আসলে স্যার, ম্যাম সকালে চলে গেছেন।তার নাকি শরীরটা ভালো লাগছিলো না।আমাকে বলে চলে গেছে। আমি বলেছিলাম আপনার সাথে কথা বলতে।কিন্তু সে নাকি আপনার সামনে আসবে না। তাই আমাকে বলেছে।
তাজঃ ওহ্ এই ব্যাপার।(দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে)
আদরঃ আপনাদের মধ্যে কি কিছু হয়েছে?
তাজঃ আমাদের সম্পর্ক এখনো স্বাভাবিকই হয়নি আর কি হবে বলো?
আদরঃ ম্যামকে সব সত্যিটা বলে দিন।তাহলেই তো সব ভেজাল কেটে যায়।
তাজঃ হুম তাই করতে হবে।ও অনেক অভিমানী মেয়ে, আদর।সামান্য কিছুতে গাল ফুলিয়ে ফেলে।সেখানে আড়াই বছর ওর থেকে দূরে থেকেছি আমি।ওর অভিমান জমে পাহাড়ের আকার ধারণ করেছে। এই অভিমান সামান্য কিছুতে ভাঙ্গবে না।
আদরঃ যেভাবে পারেন ভেঙে ফেলেন স্যার।নয়তো সম্পর্কে দূরত্ব সৃষ্টি হবে।
তাজঃ দূরত্ব তো বহু আগেই সৃষ্টি হয়েছে। এখন আর নতুন করে কি সৃষ্টি হবে?
আদরঃ ম্যাম, আপনাকে অনেক ভালোবাসে স্যার।কিন্তু আপনার ওপর রাগ করে তা স্বীকার করে না।আপনাকে যদি সে ভালো না বাসতো তাহলে প্রথম দিন আপনাকে এক দেখায় চিনে ফেলতো না।
তাজঃ তা আমি জানি আদর।দেখি কি করা যায়।
আদর স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।যাক বাবা,তাজ রাগেনি।নোভা যে তাজের স্ত্রী তা বহু আগের থেকে জানে আদর।তাজের মানিব্যাগে নোভার ছবি দেখেছিলো একদিন।আরেকদিন তাজের কেবিনের টেবিলের ড্রয়ার ভর্তি নোভার ছবি দেখে বেশ অবাক হয়ে গিয়েছিল। ভয়ে ভয়ে তাজকে জিজ্ঞেস করেছিলো মেয়েটা কে? সেদিন তাজ ওর সব অতীত ওকে বলে দিয়েছিলো।তাজ, আদরকে অনেক বিশ্বাস করে। আর আদর সেই বিশ্বাসের মর্যাদাও রাখে।তারপর যেদিন চাকরীর CV চেক করেছিলো সেদিন আদর নোভার CV দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিল। তাজকে দেখাতে তাজের চোখ,মুখ কুঁচকে ফেললোও মুখে ছিলো বিশ্ব জয় করা হাসি।তাই তো আদর ইন্টারভিউয়ের দিন নোভার দিকে আলাদা কেয়ার ও নজর রেখেছে। তাছাড়া নোভা জয়েন হওয়ার পর সারাদিন নোভার ওপর খেয়াল সে রাখে।আর সারাদিনের আপডেট কিছু সময় পরপর তাজকে দেয়।আজকে শুধু কাজের চাপে ভুলে গিয়েছিল।
আদরঃ স্যার,চলেন।
তাজঃ তুমি চলে যাও আদর।আমার একটা ফাইল কমপ্লিট করা বাকি আছে। একটু দেরী হবে।
আদরঃ আমি আরেকটু সময় অপেক্ষা করবো?
তাজঃ না,তার দরকার নেই। তুমি দুপুরে কিছু খাওনি।জলদী করে বাসায় গিয়ে কিছু খেয়ে নেও।
আদরঃ আমার খিদে নেই স্যার।আমি আপনার সাথে থাকতে পারবো।
তাজ ভ্রু কুঁচকালো।ছেলেটা একদম ওর ভক্ত। ওকে এক মিনিটের জন্যও একা ছাড়তে চায় না।না চাইতেও আদরের প্রতি ভালোবাসাটা বেড়েই যাচ্ছে তাজের।ওর সবদিকে খেয়াল আদরের।তাজ ওকে ভাগাতে চাইলো।সকালে অল্প কিছু খেয়ে চলে এসেছে। দুপুরেও খায়নি।এভাবে তো আদর অসুস্থ হয়ে যাবে। তাই একটু রাগী স্বরে তাজ বললো।
তাজঃ আমি চলে যেতে পারবো আদর।তুমি বাসায় চলে যাও।যদি এখন আমার সাথে থাকতে চাও তাহলে কাল থেকে অফিসে আসার দরকার নেই।
তাজের কথায় কাজ হলো।ওর কথায় আদর ভয় পেয়ে গেলো।সে তো চাকরিটা হারাতে চায় না।মুখ গোমড়া করে বললো।
আদরঃ আচ্ছা স্যার, আমি চলে যাচ্ছি। তবে আপনি বেশি দেরী করবেন না।জলদী বাসায় চলে যাবেন।আপনি তো আবার কাজে ডুবে গেলে অন্য কিছুর ধ্যান থাকে না।
কথা শেষ করে আদর দ্রুত পায়ে কেবিন থেকে বের হয়ে গেলো। তাজ মুচকি হেসে চেয়ার টেনে ফাইল নিয়ে বসে পরলো।আদর একটু বেশি কাজপাগল ছেলে।আর তাজ তো ওর সবকিছু।
তবে আদরের কথাই সঠিক হলো কাজ করতে করতে কখন যে পশ্চিম দিগন্তে সূর্য ডুবে গেছে সেদিকে খেয়াল নেই তাজের।কাজ করতে আজ কেন জানি ভালো লাগছিলো।তাই অনেকগুলো ফাইল কমপ্লিট করে ফেলেছে। মাগরীবের আজানের সুর না শুনলে তাজের হুশ ফিরতো না।হাতে থাকা এ্যাশ কালার চামড়ার ওয়াচের দিকে তাকিয়ে আৎকে উঠলো।
তাজঃ আল্লাহ, এতো সময় চলে গেল কিভাবে?এই জন্য আদর আমাকে বারবার সাবধান করেছিলো।আমি কাজে ডুব দিলে অন্য দিকে খেয়াল দেই না।এখন উঠতে হবে।আর থাকা চলবে না।
পুরো অফিসের সব কিছু চেক করে লিফটের সামনে এসে দাঁড়ালো। পিয়নও যে ওকে বলে চলে গেছে তখনও ওর খেয়াল ছিলো না।কাজের মধ্যে ডুবে থেকে সে নিজেই পিয়নকে চলে যেতে বলেছে।সবকিছু আবারো চেক দিয়ে এসেছে। লিফটে ঢুকে বাটন টিপে চুপ করে দাঁড়ালো। লিফট থামলো নিচের ফ্লোরে এসে।শব্দ করে লিফটের দরজা খুলে গেল।তাজ বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।তখুনি তাজ কিছু বুঝে উঠার আগে এক জোড়া হাত এসে তাজের গলা শক্ত করে চেপে ধরলো।
#চলবে
#প্রজাপতির_রং🦋
#Part_24
#Writer_NOVA
আমরা এখন তাজের বাসার সামনে বাইক থামিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।ভেতরে ঢোকার আগে গেইটের পাশের নেমপ্লেটের মধ্যে ঠিকানাবিহীন নামটা দেখে বেশ অবাক হলাম।এরকম নাম আমি কখনো দেখিনি। দারোয়ান গেইট খুলে দিতেই তায়াং ভাইয়া বাইক নিয়ে সোজা বাসার ভেতরে ঢুকলো।নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশের মাঝে দোতলা একটা ডুপ্লেক্স বাড়ি।সামনে ছোট একটা বাগান।পরিবেশটাও মনোমুগ্ধকর। ছোট বাগানের মাঝে ছোট একটা টেবিল পাতা।তার সাথে চারটা চেয়ার।সেখানে বসে আছেন মধ্যবয়স্ক এক লোক।আমি ধারণা করে নিলাম উনিই মুরাদ আঙ্কেল হবেন।তিনি গভীর মনোযোগ দিয়ে পত্রিকা পড়ছেন।এখন যদি সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায় তাও বোধহয় উনি পত্রিকার থেকে চোখ সরাবেন না।বাইকের শব্দই তার ধ্যান ভাঙেনি অন্য কিছুতে ভাঙ্গবে বলে মনে হয় না। সামনে থাকা চায়ের কাপ থেকে খুব ধীরে ধোঁয়া উঠছে।সকাল ১১ টা বাজে চা খাওয়ার কোন লজিক আমি খুঁজে পেলাম না।সম্ভবত উনি প্রচুর চা-খোর টাইপের মানুষ হবে।তায়াং ভাইয়ার সাথে আমিও বাইক থেকে নেমে গুটি গুটি পায়ে সামনে এগিয়ে গেলাম।তায়াং ভাইয়া বেশ জোরেই তাকে সালাম দিলো।
তায়াংঃ আসসালামু আলাইকুম।
মুরাদঃ অলাইকুমুস সালাম।
উনি পত্রিকার থেকে চোখ না তুলেই সালামের উত্তর দিলেন।এক ধ্যানে খবর পড়ার মাঝখানে তায়াং ভাইয়ার দিকে না তাকিয়েই জিজ্ঞেস করলো।
মুরাদঃ কি চাই?
তায়াংঃ জ্বি, আমাদের একটু দরকার ছিলো।
মুরাদঃ দরকার ছাড়া তো কেউ আসে না। কোন চাকরী-টাকরী লাগবে নাকি? যদি সেরকম কিছু হয় তাহলে আমার বড় ছেলের সাথে যোগাযোগ করুন।
উনার কথা শুনে তায়াং ভাইয়া আমার দিকে কটমট করে তাকালো।যার মানে হলো, উনি আমাদের কে ভাবছেন চাকরির খোঁজে আসা অসহায় মানুষ। আমি তায়াং ভাইয়াকে চোখ দিয়ে আস্বস্ত করলাম।আমি দেখছি বিষয়টা।
আমিঃ আসলে আঙ্কেল আমরা কোন চাকরীর জন্য আসিনি।আমাদের কিছু জানার ছিলো।
মুরাদঃ কেন, তোমরা কি আইনের লোক নাকি?
এতক্ষণ পর উনি আমাদের দিকে তাকালো।অবশ্য আমার কণ্ঠ পেয়ে যে তাকিয়েছে সেটাই বুঝলাম।আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার পত্রিকায় ডুব দিতে নিয়েছিলো।কিন্তু কিছু একটা কপাল কুঁচকে ভেবে আবারো আমার দিকে তাকালো। তবে সেটা ছিলো বিস্মিত চাহনী।উনি আমাকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছে তা তার মুখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। আমি একবার তায়াং ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করলাম।উনি হাতের পত্রিকা রেখে আমাদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরলো।
মুরাদঃ তোমরা? আরে দাঁড়িয়ে আছো কেন?বসো, বসো।আমি তোমাদের খেয়ালই করিনি।কই গো জুলেখা জলদী এসো।দেখে যাও কে এসেছে? তুমি এতদিন ধরে যাকে দেখার জন্য মরিয়া হয়ে গিয়েছিল সে আজ নিজে আমাদের বাসায় এসেছে। জুলেখা জলদী এসো।
আমি ও তায়াং ভাইয়া একে অপরের দিকে অবাক চোখে তাকাচ্ছি।তায়াং ভাইয়া আমার কানের সামনে এসে নিচুস্বরে বললো।
তায়াংঃ কি হচ্ছে বল তো?উনি আমাদের দেখে এত খুশি হচ্ছে কেন?এনাজকে যদি উনি সত্যি কোন স্বার্থের জন্য ব্যবহার করতো তাহলে তো আমাদের দেখে ভয় পাবার কথা। কিংবা আমাদের না চেনার ভান করার কথা।
আমিঃ আমিও তো বুঝতে পারছি না।
উনি এত খুশি কেন হচ্ছে? তাহলে কি এই বাড়ির সবাই জানে আমি তাজের বউ।তায়াং ভাইয়া আর আমি চেয়ারে বসে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরে গেলাম।
মুরাদঃ কি খাবে তোমরা বলো? সকালের নাস্তা করেছো? না করলে এখানে করবে।দুপুরে না খেয়ে কোথাও যেতে পারবে না।
মুরাদ আঙ্কেল আবারো জুলেখা নাম ধরে ডাকলো।আমাদের কে দেখে তার চোখ খুশিতে চকচক করছে।বহুদিন প্রতিক্ষার পর আমরা যখন কাঙ্ক্ষিত বস্তুটা পাই তখন আমাদের যেই খুশিটা লাগে আমিও মুরাদ আঙ্কেলের মুখে সেম হাসিটা দেখছি।যার মধ্যে নেই কোন ভেজাল কিংবা স্বার্থ।বরং নিখাঁদযুক্ত এক প্রশান্তির হাসি।
—- এত ডাকাডাকি কিসের তোমার? একটু আগেই তো চা করে দিয়ে গেলাম।এখন আবার কি লাগবে?সবেমাত্র রান্নাঘরে ঢুকেছিলাম এর মধ্যে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করা শুরু করলে।বলি,সারাদিন কি তোমার সাথে গল্পগুজব করে কাটালে চলবে?দুপুরের রান্নাটাও তো বসাতে হবে নাকি।
আঁচলে হাত মুছতে মুছতে ভেতর থেকে এক মহিলা বের হলো।উনি জুলেখা হবেন।আরিয়ানের মা আরকি।সুশ্রী মুখমণ্ডলে বিন্দু বিন্দু ঘামগুলো জানান দিচ্ছে উনি এতখন কিচেনে ছিলেন।গায়ে ছাই কালার পাড়ের হালকা ঘিয়া কালার শাড়ি।উনি যে যৌবনে অনেক রূপসী ছিলেন তা যে কেউ এক পলক দেখেই বলে দিতে পারবেন।আন্টি মুরাদ আঙ্কেলকে কথা শুনাতে এতই ব্যস্ত ছিলেন যে আমাদের দিকে খেয়াল করেননি।
মুরাদঃ আরে থামো থামো।এখুনি কি সব বলে ফেলবে?কালকের জন্য কিছু জমিয়ে রাখো।সামনে তাকিয়ে দেখো কে এসেছে?
জুলেখাঃ কে আবার আসবে এখন………..
পুরো কথা শেষ করার আগেই উনি আমাকে দেখলেন।ওমনি তার মুখ অটোমেটিক হা হয়ে গেলো।ছুটে আমার কাছে এসে তার দুই হাত আমার গালে আলতো করে রেখে মুরাদ আঙ্কেলকে উদ্দেশ্য করে বললেন।
জুলেখাঃ হ্যাঁ গো আরিয়ানের বাবা।আমি কি ঠিক দেখছি।যার খোঁজে আমরা পাগল হয়ে গেলাম।সে আজ নিজে আমাদের বাড়ি।আমি স্বপ্ন দেখছি না তো।
মুরাদঃ না গো স্বপ্ন নয় সত্যি। আমি নিজের হাতে চিমটি কেটে দেখেছি।
সবকিছু আমার আর তায়াং ভাইয়ার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। মুখে হাসি রেখে তাকে জিজ্ঞেস করলাম।
আমিঃ আসসালামু আলাইকুম আন্টি।কেমন আছেন?
জুলেখাঃ আমি ভালো আছি রে মা।তুই কেমন আছিস? তোকে যে কত খুঁজেছি।আমার এখন নিজের চোখকেই বিশ্বাস হচ্ছে না তুই আমাদের বাড়িতে এসেছিস।(তায়াং ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)
তায়াং বাবা কেমন আছো?
তায়াং ভাইয়া নিজের নাম তার মুখ থেকে শুনতে পেয়ে বিস্ফোরিত চোখে তার দিকে তাকালো। তায়াং ভাইয়ার রিয়েকশন দেখে আমার পেট ফেটে হাসি আসছে।তায়াং ভাইয়া কোনরকম শব্দ করে বললো।
তায়াংঃ জ্বি আন্টি ভালো আছি।আপনি কেমন আছেন?
জুলেখাঃ এতক্ষণ ভালো না থাকলেও এখন ভালো আছি।আমার বড় ছেলের বউকে নিজের চোখের সামনে দেখে কি খারাপ থাকতে পারি?
এতক্ষণে আমাদের কাছে সব ক্লিয়ার হলো।তার মানে তারা জানে আমি তাজের বউ। কিন্তু তায়াং ভাইয়াকে কি করে চিনলো?
তায়াংঃ আমাদের চিনলেন কি করে আন্টি?
জুলেখাঃ শোনো ছেলের কথা।আমাদের তাজের জানের প্রাণের বন্ধু তুমি। তোমাকে চিনবো না তো কাকে চিনবো বলো।তাজ তো প্রায় তোমার কথা বলে।তাছাড়া তোমার আর তাজের আগের ছবি দেখেছি। সেখান থেকে চিনি।আর এই লক্ষ্মী মেয়েটা হলো আমার তাজের অর্ধাঙ্গিনী।আমাদের বড় বউ।
মুরাদঃ কথা না বলে ওদের জন্য খাবার ব্যবস্থা করো।
জুলেখাঃ হ্যাঁ, আমি যাচ্ছি। মুসকানকেও পাঠিয়ে দেই।ওর কত ইচ্ছে তাজের বউকে নিজের চোখে দেখবে।(আমার দিকে তাকিয়ে) তুই এখানে থাক।আমি আসছি।
আমিঃ না না আন্টি কোন ঝামেলার দরকার নেই। আমাদের সাথে এখানে বসুন।
জুলেখাঃ এই প্রথম শ্বশুর বাড়িতে এসেছিস।আর আমি খালি মুখে যেতে দিবো কি করে ভাবলি?চুপ করে বসে থাক।আমি তোর শ্বাশুড়ি তুই নস।তোকে তুই বলছি দেখে আবার রাগ করিসনি তো।
আমিঃ রাগ করবো কেন?শ্বাশুড়ি মা তো তুই করে বলতেই পারে।
উনি আমাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে গাল দুটো টেনে দিলো।তারপর কিছু সময় শাসিয়ে ভেতরে চলে গেলো।আমি ও তায়াং ভাইয়া দুজনের কেউই এখনো বিস্ময়কর অবস্থা থেকে বের হতে পারিনি। আমরা দুজনে কি ভেবেছিলাম আর হচ্ছেটা কি?
🦋🦋🦋
—– বড় ভাবী-ই-ই-ই-ই-ই-ই-ই-ই-ই-ই-ই!!! অবশেষে তুমি আসছো।আমার তো খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে।
চিৎকার করে ভাবী বলে ডাকতে ডাকতে একটা মেয়ে এসে হুট করে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।মেয়েটা আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।মুরাদ আঙ্কেল ওকে ঝাড়ি মেরে উঠলেন।
মুরাদঃ মুসকান করছিস কি? আরে ছাড় মেয়েটাকে।এভাবে কেউ ধরে।মেয়েটা নিশ্বাস নিতে পারছে না।
— কতদিন পর ভাবীকে পেলাম।তাই খুশিতে সবকিছু ভুলে গিয়েছিলাম।
মেয়েটা আমাকে ছেড়ে অপর চেয়ারে গিয়ে বসলো।আমার দিকে হাত বাড়িয়ে বললো।
—- আমি মুসকান। তাজরান ও আরিয়ান ভাইয়ার একমাত্র বোন।
আমি মুসকানের দিকে তাকিয়ে চোখ দুটো বড় বড় করে ফেললাম।এই মুসকানই তো ছিল সেদিন।যে তাজকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলো।তাজকে ও বড় ভাই ভাবে।আর আমি কত হাবিজাবি ভেবে বসলাম।নিজের ওপর এখন রাগ হচ্ছে।
মুসকানঃ কি হলো ভাবী? কোথায় হারিয়ে গেলে?
আমিঃ তুমি সেদিন অফিসে গিয়েছিল? তাজকে জড়িয়ে ধরেছিলে।
মুসকানঃ হ্যাঁ আমি ছিলাম।আমাদের ভার্সিটি থেকে জাফলং ট্যুরে যাবে সামনের সপ্তাহে। কিন্তু বাবা যেতে দিবে না। তাই ভাইয়ার অফিসে গিয়েছিলাম।যাতে ভাইয়া বাবাকে কনভিন্স করে।ভাইয়া কনভিন্স করতে পেরেছিলো।বাবা যাওয়ার অনুমতি দিয়ে দিয়েছিলো।তাই খুশিতে ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরেছিলাম। কিন্তু তুমি এসব জানলে কি করে? তুমি আবার আমাদের একসাথে দেখে ভাইয়াকে খারাপ ভেবে বসোনি তো?
আমিঃ এই রে কি করেছি আমি😖।মেয়েটার সম্পর্কে খোঁজ না নিয়েই আমি এনাজকে খারাপ ধরে বসে আছি।এটা কি ঠিক হলো? আমি ভাবলাম কি করে এনাজ এমন কাজ করতে পারে? ভাই-বোন সম্পর্ক হিসেবে তো মুসকান এনাজকে জড়িয়ে ধরতেই পারে।কিন্তু আমি না জেনে কতকিছু ভেবে বসলাম।এসব জানলে তাজ কি আমায় ক্ষমা করবে?(মনে মনে)
মুসকানঃ ও ভাবী কোথায় হারিয়ে যাও?
আমিঃ তুমি আমায় চিনলে কি করে?
মুসকানঃ কি যে বলো না ভাবী?তোমার ছবি দেখতে দেখতে পুরো মুখস্থ হয়ে গেছে। তাছাড়া ভাইয়ার রুমে তোমার বিশাল বড় একটা ফ্রেম বাঁধানো ছবি টাঙানো আছে। সেটা দেখে যে কেউ তোমাকে চিনতে পারে।
আমিঃ ওহ্ এই কারণে আরিয়ান আমাকে ভাবী সাহেবা বলে সম্বোধন করেছিলো। (মনে মনে)
মুসকানঃ আমার যদি ভুল না হয় তাহলে আপনি তানভীর রহমান।নিক নেম তায়াং।এম আই রাইট।
তায়াংঃ জ্বি।
মুসকানঃ আপনার কথা বড় ভাইয়ার কাছে অনেক শুনেছি। আর ছবিতে আপনাকে দেখেছিও।আপনি ছবিতে দেখতে যতটা হ্যান্ডসাম, বাস্তবে তার থেকে অনেক বেশি।
আমিঃ আমাদের ছবি কোথায় পেলো তোমার ভাইয়া?
মুসকানঃ তোমাদের পুরনো ফ্ল্যাট বাসা থেকে। ভাইয়ার নিজস্ব যে ফ্ল্যাট-টা ছিলো সেখান থেকে নিয়ে এসেছে।
আমিঃ আমার জানা মতে সেটা তো আমার দেবর বিক্রি করে দিয়েছে।
মুসকানঃ বিক্রি করার আগে গিয়ে নিয়ে এসেছে ভাইয়া।তোমরা থাকো আমি একটু আসছি।আম্মু ডাকছে আমায়।
আমি আরো কিছু জিজ্ঞেস করতাম।কিন্তু তার আগেই মুসকান উঠে চলে গেল। তায়াং ভাইয়া ও মুরাদ আঙ্কেল নিজেদের মধ্যে টুকটাক কথা বলছিলো।
মুরাদঃ বড় বউমা কোথায় ছিলে এতদিন? তোমাকে খুজতে খুজতে আমরা হয়রান হয়ে গিয়েছিলাম।তাজ ঠিকই বলেছিলো।যতদিন তুমি নিজ থেকে ধরা না দিবে ততদিন তোমাকে খুঁজে পাবো না।তাজ আরো বলেছিল, দেখেন বাবা আমার বউ নিজে একদিন এই বাসায় আসবে।আমার সব খোঁজ নিতে।তাই হলো।তুমি নাকি আমাদের কোম্পানিতে চাকরী নিয়েছো?তাজ বলেছিলো।তখন তোমার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলাম।কিন্তু তাজ বলেছে কিছু দিন অপেক্ষা করুন।আপনাদের বউমা আপনাদের সাথে দেখা করতে আসবে।অনেক খুশি হয়েছি তোমাকে দেখে।
আমিঃ আঙ্কেল আপনারা এনাজকে পেলেন কি করে?ওকে তো আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
মুরাদঃ আমি জানতাম তুমি এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ঠিক আসবে।আচ্ছা বলছি।তবে তুমি হয়তো ভাবতে পারো আমি তোমার স্বামীকে নিজের স্বার্থের জন্য বাঁচিয়েছি।কিন্তু তা নয়।আমি ওর ওপর কৃতজ্ঞ ছিলাম।সেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশেই ওকে এখন অব্দি নিজের ছেলের পরিচয়ে রেখেছি। এনাজ যখন সিবিআই অফিসারের পদে ছিলো তখন বহু আগে একবার আমাকে জানে বাঁচিয়ে ছিলো।তার কৃতজ্ঞতা বোধে আমি ওকে নিজের ছেলে করে রেখেছি।
আমি উনার কথার মাথামন্ডু কিছুই বুঝলাম না।আঙ্কেলের কথা শেষ হওয়ার আগেই তায়াং ভাইয়া থমথমে গলায় বললো।
তায়াংঃ নোভা একটু ঐদিকে আয়।তোর সাথে কথা ছিলো।
আমিঃ আঙ্কেল, আমি একটু আসছি।
মুরাদঃ আচ্ছা যাও।
তায়াং ভাইয়া ও আমি বাগানের অন্য পাশটায় চলে এলাম।তায়াং ভাইয়ার মুখে রাগ দেখা যাচ্ছে। কিন্তু কি কারণে তা খুজে পেলাম না।
আমিঃ কি হয়েছে তোর?এখানে নিয়ে এলি যে।
তায়াংঃ তুই সিউর এই মেয়েটাই সেদিন এনাজকে জড়িয়ে ধরেছিলো।
আমিঃ হ্যাঁ রে।এখন আমার নিজের ওপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। সবসময় দুই লাইন বেশি বুঝি।
তায়াংঃ তুই দুই লাইন নয় চার লাইন বেশি বুঝিস শাঁকচুন্নি। ইচ্ছে করছে তোর চুল ছিড়তে।
আমিঃ কেন আমি কি করলাম আবার?(অবাক হয়ে)
তায়াংঃ তোর এই দুই লাইন বেশি বোঝার কারণে আমি গতকাল সন্ধ্যায় তাজের গলা টিপে ধরছিলাম।
আমিঃ কি বলছিস তুই? তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে। যদি ওর কিছু হয়ে যেতো?আর ওকে তুই পাইলি কোথায়?
তায়াংঃ গতকাল সন্ধ্যার আগে তাজের অফিসের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম।তখন ওর পিয়নকে দেখতে পাই।কি মনে করে পিয়নের কাছে তাজের কথা জিজ্ঞেস করলাম।সে বললো তাজ এখনো অফিসেই আছে।তখুনি মেজাজ বিগড়ে গেলো।রাগ নিয়ে তাজের অফিসে ঢুকে গেলাম।কিন্তু লিফটের কাছে এসে দেখলাম লিফট ওপর থেকে নিচে নামছে।আমার কেন জানি মনে হচ্ছিলো তাজাই নিচে নামছে।হলোও তাই।লিফট খুলতেই দেখলাম তাজ দাঁড়িয়ে। দিকপাশ না তাকিয়ে ওর গলা চেপে ধরলাম।ও প্রথমে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও পরবর্তীতে আমাকে দেখে থেমে গেল।নিষ্পলক চাহনিতে তাকিয়ে ছিলো আমার দিকে।ইচ্ছে করছিলো ওকে শেষ করে দিতে।কিন্তু জানে জিগার দোস্ত তো। তাই কখনো সম্ভব নয় ওর ক্ষতি করা।ওর ওপর খুব রাগ হয়েছিলো জানিস।ও আমায় শক্ত করে কেন জড়িয়ে ধরেনি তার জন্য। আগে কখনও ওর গলা চেপে ধরলে হাত ছাড়িয়ে জড়িয়ে ধরতো।ওর গলার থেকে হাত সরিয়ে দ্রুত বের হয়ে গিয়েছিলাম।আমার চোখ পানিতে টলমল করছিলো।ওর সামনে থাকলে কান্না করে দিতাম।ও পেছন থেকে অনেক ডেকেছে কিন্তু আমি পিছু ফিরে দেখিনি।
আমিঃ ওরে পাঠারে😤!!! হারামজাদা, আমাকে আবার বিধবা বানানোর ব্যবস্থা করছিলি তুই। আজকে তোর একদিন কি আমার একদিন।
তায়াংঃ আমার রাগ উঠছিলো তো আমি কি করবো?একে তোকে ও কষ্ট দিচ্ছিলো।দুইয়ে আমার সাথে কোন যোগাযোগ কেন করেনি?এই ছিলো ওর বন্ধুত্ব।
আমিঃ তোরে আমার ফ্রাই করতে মন চাইতাছে পাঠা।আমার জামাই মারার ষড়যন্ত্র করছিলি তুই।
তায়াংঃ ঝগড়া পরেও করতো পারবি।যে কাজে এসেছি সেই কাজ আগে করি।এনাজ কি করে বাচলো সেটা আমাদের জানার দরকার।
আমিঃ হুম চল।
আমি ও তায়াং ভাইয়া দুজনেই আবার মুরাদ আঙ্কেলের কাছে চলে এলাম।ছোট টেবিলটায় বাহারী খাবারের সমহার।মুসকান ভেতর থেকে ট্রে ভর্তি করে নানাকিছু নিয়ে এসে টেবিলের ওপর রেখে যাচ্ছে।আরিয়ান বা তাজ কেউ বাসায় নেই।দুজনেই অফিসে। আমি আজ অফিসে যাইনি।সকালপর শো শেষ করে সোজা তায়াং ভাইয়ার সাথে এখানে চলে এসেছি।আমার পরনে আজ ফুল ব্লাক ড্রেস।সাদা পরে আসলে আমি নির্ঘাত আজ বিপদে পরতাম।মাঝে মাঝে কালো ড্রেস পরি বলে হিমি বা এরিন কারো কাছে জবাবদিহি দিতে হয়নি।
মুরাদঃ খাবার নেও তোমরা।
তায়াংঃ আঙ্কেল, আপনি ব্যস্ত হবেন না।আপনি বরং আমাদের সবকিছু খুলে বলুন।এনাজকে কি করে পেলেন?আর তারপর কি হয়েছিলো।
আমিঃ হ্যাঁ, আঙ্কেল বলুন আমাদের। কি করে বাচলো আমার স্বামী।
মুরাদ আঙ্কেল বড় করে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে আমাদের দিকে তাকালো।তার মুখটা থমথমে দেখাচ্ছিলো। কিছু সময় নিরব থাকলেন। তারপর বলতে শুরু করলো।
মুরাদঃ সেদিন ___________
#চলবে