প্রজাপতির রং পর্ব-১২+১৩

0
1155

#প্রজাপতির_রং🦋
#Part_12
#Writer_NOVA

আমিঃ এনাজ!!!!!!

আমি এনাজ বলে ডাকতেই তাজরান কপাল কুঁচকে আমার দিকে ঘুরে তাকালো। সে আমার দিকে ঘুরতেই আমি আরেকটা বড়সড় ঝাটকা খেলাম। চেহারাতো এনাজের নয়। তাহলে এত মিল কি করে হতে পারে এনাজের সাথে।তাজ আমাকে দেখে কেঁপে উঠলো। আমি তার চোখের দিকে গভীরভাবে তাকালাম।তার চোখে একটা ছটফটানির ভাব দেখতে পেলাম।আর চোখ দুটো অবিকল এনাজের।কিন্তু আমি অঙ্ক মিলাতে পারছি না।

তাজঃ সরি, আপনি আমায় কি বলে ডাকলেন?

আমিঃ এনাজ!!!!

তাজঃ সরি, আমি তাজরান তাজওয়ার 😊।

কথাটা বলে এনাজের মতো ভ্রুর কিছুটা ওপরে চুলকালো তাজ।তারপর চেয়ারে বসে ল্যাপটপের দিকে নজর দিলো। এক হাতে ল্যাপটপে কাজ করছে আরেক হাতে কপালে স্লাইড করছে। যেমনটা এনাজ ল্যাপটপে কাজ করার সময় করতো।উনি কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললো।

তাজঃ প্লিজ সিট ডাউন।

আমি তাজের সরাসরি চেয়ারে বসে চোখ দুটো ছোট ছোট করে তাকে পর্যোবেক্ষণ করতে লাগলাম।উনি খুব অস্বস্থি বোধ করছে।সামনে থাকা কাচের গ্লাস থেকে একটু পরপর পানি খাচ্ছে। গ্লাস ধরার সময় তার হাত অসম্ভব কাঁপছিলো।

আমিঃ আর ইউ ওকে মিস্টার তাজ?

তাজঃ ইয়াহ।হোয়াট ইজ ইউর নেম?(ব্যস্ত হয়ে)

আমিঃ মিসেস এনাজ আহমেদ।

আমার নামটা শুনে উনি আবারো চমকে উঠলো। উনার চোখ দুটো খুব অস্থির লাগছে। মনে হচ্ছে সে এখন আমার থেকে পালাতে পারলে বেচে যাবে।মাত্র একবার আমার চোখে তার চোখ পরেছে।তারপর থেকে ভুলেও আমার দিকে তাকাচ্ছে না।আমার সন্দেহটা আরো জড়ালো হলো।তাই আমি সামনে থাকা পেপার ওয়েট-টাকে ইচ্ছে করে ধাক্কা মেরে তাজের সামনেই টেবিলের নিচে ফেলে দিলাম।আমার উদ্দেশ্য হলো তার হাত দেখা। এটা যদি আমার এনাজ হয় তাহলে তার ডান হাতের উপর দিকে কোণার কাছে একটা বড় তিল থাকবে।

আমিঃ আই এম সো সরি।আমি আসলে দেখতে পাইনি।এক্সট্রিমলি সরি।(ব্যস্ত হয়ে)

তাজঃ ইট’স ওকে।

আমার দিকে না তাকিয়ে উবু হয়ে পেপার ওয়েট উঠিয়ে যথাস্থানে রাখলো।আমিও চট করে তার হাতের দিকে তাকিয়ে অবাক।হ্যাঁ,ডান হাতের কোণার দিকে বড় একটা তিল।উনি আবারো গ্লাস থেকে বেশ কয়েক ঢোক পানি খেলো।চেহারা এনাজের নয় ঠিক আছে। কিন্তু পেছনের দিক,চোখ, স্বভাব, হাতের তিল, কন্ঠস্বর,মুখের অঙ্গিভঙ্গি এক কি করে হতে পারে? মানুষ চেহারা পাল্টালেও এগুলো তো পাল্টাতে পারে না।আমার মন বলছে এটাই এনাজ।ওর চেহারা পাল্টিয়ে ফেলেছে। কিন্তু স্বভাবগুলো এখনো বদলাতে পারেনি।আমার হৃৎপিণ্ডটা ধপধপ করে লাফাচ্ছে।আচ্ছা, তাহলে কি এনাজ সেদিন বেঁচে গিয়েছিল। আগুনে হয়তো ওর মুখ নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো।তাই প্লাস্টার করে নতুন চেহারা দিতে হয়েছে।

তাজঃ আমি আপনার নাম জিজ্ঞেস করেছিলাম।

আমিঃ আমি বলেছিলাম।

তাজঃ আপনার নাম বলেন নি।

আমিঃ নোভা ইসলাম। মিস্টার এনাজ আহমেদের ওয়াইফ।

এবারো উনি হালকা কেঁপে উঠলো। আমি যতবার এনাজের নাম নিলাম ততবারই এমন হলো।উনি আমার সার্টিফিকেট দেখায় মনোযোগ দিলেন।আর আমি আড়চোখে তার কার্যকলাপ।তখুনি চট করে আমার মাথায় একটা শয়তানি বুদ্ধি খেলে গেল।আমি ইচ্ছে করে টেবিলের পায়ার সাথে নিজের পা বারি দিয়ে জোরে চিৎকার করে উঠলাম।

আমিঃ আহ্ পা টা জ্বলে গেলো রে।এত শক্ত কেন টেবিলের পায়া।একটু নরম হলে কি হয়?

তাজঃ কি হয়েছে আপনার?

তাজ হন্তদন্ত হয়ে চেয়ার থেকে উঠতে নিয়েও আবার ধপ করে বসে পরলো।আমি তীক্ষ্ম চোখে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।

তাজঃ ব্যাথা পেয়েছেন নাকি?

আমিঃ নাহ আমি ব্যাথা পাইনি।তবে টেবিল ব্যাথা পেয়েছে।

দাঁতে দাঁত চেপে কথাগুলো বললাম।যে জন্য করলাম তাতো হলোই না উল্টো আমি ব্যাথা পেলাম।পা জ্বলে যাচ্ছে। ব্যাথাটা ভালোই পেয়েছি। তাজ আমার দিকে পানির গ্লাসটা বারিয়ে দিয়ে বললো।

তাজঃ পানি দিয়ে ব্যাথার জায়গায় হালকা করে ম্যাসেজ করে দিন। ব্যাথা কমে যাবে।

আমি পানির গ্লাসটা নিলাম না।ভীষণ রাগ হচ্ছে আমার।গাল ফুলিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বসে রইলাম। তাজ হয়তো আমার দিকে খেয়াল করেছে।কারণ ও একগালে মিটমিট করে হাসছে।সেইম এনাজের হাসি।এনাজও এভাবে একগালে হাসতো। যখন আমি ওর সাথে অভিমান বা রাগ করতাম।তখন একগালে অদ্ভুত রকম করে হাসতো।আমার এই হাসিটা ভীষণ পছন্দের ছিলো।এক ধ্যানে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি ইতস্ততায় পরে গেলো।আমার দিকে না তাকিয়ে একের পর এক ব্যবসা সম্পর্কিত প্রশ্ন করতে লাগলো।আমি এক ধ্যানে তার দিকে তাকিয়ে উত্তর দিতে লাগলাম।উনি আড়চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছে। তাকিয়ে যেই দেখতে পাচ্ছে আমি তার দিকে দুগালে হাত রেখে তাকিয়ে আছি। ওমনি সে সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। আমি ফাঁকের মধ্যে মোবাইল বের করে ফ্লাশ বন্ধ করে দুটো ছবি তুলে নিলাম।তায়াং ভাইয়াকে দেখাতে হবে তো।মোবাইল ব্যাগে রেখে পূর্বের মতো স্বাভাবিক হলাম।মোবাইল বের করার সময় যে ব্যাগ থেকে আমার প্রিয় নীল মলাটের ডায়েরীটা বের করেছিলাম তা ব্যাগে ঢুকাতে ভুলে গেলাম।যার ফলে সেটা টেবিলে ফাইলের একপাশে পরে রইলো।কি মনে করে যেনো গতকাল ব্যাগে ঢুকিয়ে রেখেছিলাম।কিন্তু কাজের সময় ভুলে গেছি।তাজের চোখে এখনো অস্থিরতা লুকিয়ে আছে।ভুলেও আমার চোখের দিকে তাকাচ্ছে না। আমার মুখে হাসি ফুটে উঠছে।

তাজঃ আপনি এখন আসতে পারেন।আপনি যদি জবটা পান তাহলে আমরা আপনাকে রাতে কল করে জানিয়ে দিবো।আর দু-এক দিনের মধ্যে জয়েনিং লেটারও পেয়ে যাবেন।

আমিঃ শুকরিয়া।

তাজঃ আরেকটা প্রশ্ন ছিলো।যদিও সেটা প্রশ্ন নয় আমার অনুরোধ। সেটা আপনার পার্সোনালি বিষয় । তাও যদি অনুমতি দেন তাহলে আমি অনুরোধটা কি করতে পারি?

আমিঃ হুম করতে পারেন।

তাজঃ আপনাকে সাদা রঙে একটুও মানায় না।এই রঙে নিজেকে আর রাঙাবেন না।আপনি সম্ভবত আগে অনেক শৌখিন ছিলেন।আমি আন্দাজে ঢিল মারলাম।জানিনা কতটুকু সঠিক।

আমি তাচ্ছিল্যের সাথে হাসলাম।হুট করে এনাজের ওপর একরাশ অভিমানের পাহাড় জমে গেলো।কি সুন্দর করে সে আমাকে এই অনুরোধটা করে দিলো।সে কি জানে এই অনুরোধটা যে আমার হৃৎপিণ্ডটাকে বিধ্বস্ত করে দিতেই যথেষ্ট। আমি শান্ত কণ্ঠে উত্তর দিলাম।

আমিঃ “যেখানে জীবনের রংটাই ফিকে
সেখানে শখ করা নিত্যান্ত মূল্যহীন”

চোখের পানিটা আড়ালে মুছে নিলাম।কথাটা বলে চেয়ার থেকে উঠে পরলাম।সার্টিফিকেট গুলো গুছিয়ে ফাইলে ভরে নিলাম।কিন্তু ডায়েরীটা একটুও খেয়াল করলাম না।তাজ আবারো উল্টো দিকে গিয়ে কাচে বাইরের ব্যস্ত নগরী দেখতে মনোযোগ দিলো।দরজার সামনে দাঁড়াতেই আমি থমকে দাঁড়ালাম চিরচেনা একটা ডাক শুনে।

তাজঃ বাটারফ্লাই!!!!

বাটারফ্লাই, ডাকটা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম।এই নামে শুধু আমাকে এনাজ ডাকতো।তাজ কি তাহলে এখন স্বীকার করবে ও আমার এনাজ।খুশি মনে দৌড়ে তাজের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।

আমিঃ আপনি কি বললেন?

তাজঃ বাটারফ্লাই বললাম।

আমিঃ আপপপপনননি কি আআআমাককে বলললেন??( কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে)

তাজঃ আপনাকে কেন বলবো?আমিতো এই প্রজাপতিটাকে দেখে বললাম।

এক নিমিষেই আমার মুখের হাসি বিলীন হয়ে গেল।সামনে তাকাতে দেখলাম সত্যি কাচের বাইরে ছোট একটা প্রজাপতি। আবার আমার দু চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পরেই গেলো।রাগে,অভিমানে কাঁদতে কাঁদতে কেবিন থেকে দৌড়ে বেরিয়ে গেলাম।

🦋🦋🦋

কফি হাউসে মুখ গোমরা করে বসে আছি। শূন্য দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে আছি। তায়াং ভাইয়া খুটিয়ে খুঁটিয়ে আমার মোবাইলে তাজের ছবি দেখছে।অফিস থেকে বের হয়েই তায়াং ভাইয়াকে ইমিডিয়েটলি কল করে এখানে আসতে বলেছি।তারপর তাজের সব ঘটনা খুলে বললাম।সেই কখন থেকে তায়াং ভাইয়া তাজের ছবি দুটোকে পর্যোবেক্ষণ করছে।আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো।

তায়াংঃ তুই সিউর এটা এনাজ?

আমিঃ হ্যাঁ,আমি সিউর।পুরো একটা বছর তার সাথে আমি সংসার করেছি।তাকে চিনতে আমি ভুল করবো না।

তায়াংঃ কিন্তু চেহারায় একফোঁটাও মিল নেই।

আমিঃ চোখ দুটো দেখ।অবিকল এনাজের চোখ।

তায়াংঃ হুম,চোখ দুটো মনে হচ্ছে। কিন্তু আর কিছু নয়।

আমিঃ তুই ছবিতে দেখে এসব বলছিস।কিন্তু সামনাসামনি দেখলে তুইও সিউর হয়ে যাবি এই তাজই এনাজ।একটা মানুষের চেহারা পাল্টাতে পারে,ধরলাম স্বভাবও পাল্টাতে পারে। কিন্তু কন্ঠস্বর কিংবা চোখ কি করে পাল্টাবে।তাছাড়া হাতের সেম জায়গায় বড় তিল, এটাও তো অবিশ্বাস্য ব্যাপার। পেছন থেকে বডিও অবিকল একিরকম দেখতে।এনাজের মতো একগালে হাসিটাও।

তায়াংঃ তোর কথা শুনে তো আমারও সন্দেহ হচ্ছে এই তাজের ওপর।

আমিঃ আমি যতবার এনাজের নাম নিয়েছি ততবার কেঁপে উঠেছে ও।আমি সিউর এনাজ বেঁচে আছে। আর এই তাজই আমার বাচ্চার বাবা এনাজ।

তায়াংঃ তুই কি এনাজকে সেদিন আগুনে পুড়তে দেখেছিস? ভালো করে মনে করে তারপর বলবি।

আমিঃ না, আমি ওকে আগুনে পুড়তে দেখিনি।তবে ওর গায়ে যখন আগুন ছুঁড়ে মারলো।তখন দাউদাউ করে আগুন জ্বলে উঠেছিলো।তারপর আমি অজ্ঞান হয়ে যাই।

তায়াংঃ এমন হয় নি তো।সেদিন ওকে কেউ বাঁচিয়ে নিয়েছিলো।আর ওর চেহারা আগুনে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় প্লাস্টিক সার্জারি করে ওকে নতুন চেহারা দিতে হয়েছে।

আমিঃ আমিও এমনটা ভাবছি।সেদিন কোনভাবে এনাজ বেঁচে গিয়েছিল। আর ওর চেহারা আগুনে পুড়ে যাওয়ায় প্লাস্টিক সার্জারি করে নতুন চেহারা দিয়েছে। যদি এটা এনাজ হয় তাহলে আমার থেকে কেন নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে? ও তো জানতো আমি প্রেগন্যান্ট ছিলাম।ওর বাচ্চাকে কেন দেখতে এলো না। তুই তো জানিস এনাজ আমাকে কতটা ভালোবাসে।আমাকে না পেলে মরে যাবে এমনটা হুমকি দিয়েছিলো তোকে।যার জন্য তুই, আম্মু,আব্বু আমাকে জোর করে বিয়েটা দিয়েছিলি।

তায়াংঃ সেটা আমিও ভাবছি।এমনটাও তো হতে পারে যে, এনাজ সবার থেকে আড়ালে থেকে নিজের খুনীকে খুজছে।তবে আমি কি এই তাজের সাথে সামনাসামনি দেখা করবো?

আমিঃ না, এখন করিস না।তুই বরং এই তাজের খোঁজ-খবর নে।কোথায় থাকে? কি করে? বাসায় কে কে আছে? এখন থাকে কোথায়? আগে কোথায় ছিলো? কোন অতীত আছে কিনা।সবকিছুর তথ্য জোগাড় কর।এগুলো হাতে পেলেই আমরা বুঝতে পারবো এটা সত্যিই আমার এনাজ কিনা।আমার মন বলছে এটা আমার এনাজ।

তায়াংঃ আচ্ছা আমি সব খোঁজ নিচ্ছি। সাথে তাজকে ফোলো করবো।যদি কোন শক্ত প্রমাণ পেয়ে যাই।

আমিঃ এনাজের চেহারা পাল্টালেও স্মৃতি শক্তি হারায়নি।যদি স্মৃতি শক্তি না থাকতো তাহলে আমাকে দেখে ওভাবে চমকাতো না।আমাকে ও বাটারফ্লাই বলে ডেকেছে। এই নামে তো শুধু এনাজই আমাকে ডাকতো।আমি খুশি হয়ে ওর কাছে যেতেই ও বলে কাচের ওপর প্রজাপতি দেখে ও বাটারফ্লাই নাম নিয়েছে। কিন্তু আমি জানি ও আমাকে ডেকেছে। ওর চোখে আমি অপরাধী ভাব দেখেছি,অস্থিরতা দেখেছি। আমি যখন ব্যাথা পেলাম তখন আৎকে চেয়ার থেকে উঠতে চেয়েছিল।কিন্তু উঠেনি।যদি ধরা পরে যায়।আমার জন্য অন্য রকম কিছু অনুভব করতে দেখেছি।
ও যদি এনাজ হয় তাহলে অবশ্যই আমাকে চাকরীটা দিবে।এটাও আমি চোখ বন্ধ করে বলে দিতে পারি।

তায়াংঃ আর কিছু??

আমিঃ ও আমার চোখের দিকে ভুলেও তাকাচ্ছিলো না।তুই তো জানিস আমার চোখ দুটো ওর সবচেয়ে বেশি পছন্দের ছিলো।আমার চোখের দিকে তাকালে ও নাকি সব গুলিয়ে ফেলে।আজ যেনো আমার সামনে নিজেকে গুলিয়ে না ফেলে তাই আমার চোখের দিকে তাকায়নি।

তায়াংঃ ও হয়তো অপরাধবোধে ভুগছিলো।যার কারণে তোর চোখের দিকে তাকাতে পারছিলো না। চোখের দিকে তাকালে নিজের ওপর রাগ হবে তার জন্য।

আমিঃ হতে পারে। তোকে দায়িত্ব দিলাম।তুই এই তাজের পুরো বায়োডাটা বের করবি।আজ তাহলে উঠি।নাভানকে সকালে তাড়াহুড়ায় কিছু খাওয়ানো হয়নি।বাসায় গিয়ে খাওয়াতে হবে। জানি না এরিন,হিমি আদোও ওকে কিছু খাওয়াতে পেরেছে কিনা।

তায়াং ভাইয়া ও আমি কফি হাউস থেকে বেরিয়ে গেলাম।ভাইয়া আমায় বাসায় পৌঁছে দিলো।রাতে কল এলো আমার চাকরিটা হয়ে গেছে। দুদিন পর জয়েন হতে হবে।আমি খুশিতে এরিন ও হিমি কে জড়িয়ে ধরলাম।

পরেরদিন সকালে………

একটানা কোলিং বেল বেজে যাচ্ছে। নাভান ঘুমিয়েছে।এরিন সম্ভবত ওয়াসরুমে আর হিমি ঘুমে।আজ শো করতে যাইনি।সকালে উঠতে দেরী হয়ে গেছে। তাই আটটার দিকে উঠে রান্না বসিয়েছি।

আমিঃ এই অসময়ে আবার কে এলো?

কিচেন থেকে ওড়নায় হাত মুছতে মুছতে দরজার সামনে গেলাম।দরজা খুলতেই আমার মুখটা রাগে লাল হয়ে গেলো।দরজার ওপর পাশের ব্যাক্তিটাকে দেখে রাগে মাথা গরম হয়ে গেছে।কিন্তু সেই মানুষটা হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে। পরনে তার সাদা কোর্ট-প্যান্ট।কোর্টের ভেতরে গাঢ় বেগুনি কালার মখমোলের শার্ট।কোর্টের ওপর দিয়ে গলার দুই পাশে বেগুনি রঙের মখমোলের ছেলেদের ওড়না ঝুলানো।হাতে বিশাল এক ফুলের তোড়া।এক হাতে ফুলের তোড়া আরেক হাতে কোর্ট ধরে স্টাইল নিয়ে দাড়িয়ে আছে। তোড়ার ভেতরে দিকটা নীল গোলাপ আর চারিদিকে সাদা গোলাপের গোল ঘেরা দিয়ে তৈরি ।কিন্তু এই লোকটা আমার খোঁজ কি করে জানলো?

নীল রঙ আমার পছন্দ। কিন্তু নীল গোলাপ থেকে লাল গোলাপ আমার বেশি পছন্দ। তার থেকেও বেশি বকুল ফুল।এই বকুল ফুল দেখলে আমার হুশ থাকে না।বকুলের মালাও আমার ভীষণ পছন্দ। বকুলের ঘ্রাণ আমার অনেক অনেক ভালো লাগে ।আগে প্রায় এনাজ আমার জন্য বকুলের মালা নিয়ে আসতো।যদিও এটা পাওয়া অনেক কঠিন ছিলো।কিন্তু আমার জন্য সে এই কঠিন কাজটাও অনায়াসে করে নিতো। আমি ফুলের দিকে তাকিয়ে অন্য ধ্যানে চলে গিয়েছিলাম।সামনে থাকা ব্যাক্তিটা আমার চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বললো।

— ভেতরে কি ঢুকতে দিবে না,পাখি? এভাবেই বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখবে ?

#চলবে

#প্রজাপতির_রং🦋
#Part_13
#Writer_NOVA

— ভেতরে কি ঢুকতে দিবে না? এভাবেই বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখবে পাখি?

রোশানের মুখে পাখি ডাকটা শুনে আরো রাগ উঠে গেল।কিন্তু নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করছি।আমার সামনে আর কেউ নয় রোশান দেওয়ান দাঁড়িয়ে আছে। আমি কিছু বলবো তার আগেই এরিন এসে হাজির।

এরিনঃ কে আসছে রে নোভা? এতো সকাল সকাল কে আবার আমাদের স্মরণ করলো?

কথাগুলো বলতে বলতে দরজার সামনে আসতেই রোশানকে দেখে এরিন ভ্রু কুঁচকে ফেললো।জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো। আমি মুখে কৃত্রিম হাসি টেনে নিলাম।

এরিনঃ কে উনি? উনাকে তো চিনতে পারলাম না।তোর পরিচিত কেউ নাকি?

আমিঃ হুম অনেক পরিচিত। (দাঁতে দাঁত চেপে)

রোশানঃ হাই শালিকা সাহেবা।আমি আপনাদের নতুন দুলাভাই। নোভার ভবিষ্যৎ জামাই।

এরিনঃ মানে???

আমিঃ আশায় থাকে কাউয়া,পাকলে খাইবো ডেওয়া।(বিরবির করে)

এরিনঃ এই নোভা কি বলে উনি? কি হয় তোর? এটা তো এনাজ নয়।তাহলে দুলাভাই কেন বলে?

আমিঃ এর কথায় তুই কিছু মনে করিস না।এই ব্যাটা পাগল।মাথায় একটু সমস্যা আছে। কয়েক মাস পাবনায় ভর্তি ছিলো।এই সপ্তাহে ছাড়া পেয়েছে। কিন্তু পাগলামি এখনো যায়নি।মনে হচ্ছে আবার ভর্তি করতে হবে।

এরিনঃ দেখে তো পাগল মনে হয় না।

রোশানঃ কি বললে তুমি পাখি? আমি পাবনায় ভর্তি ছিলাম।এমন কথা তুমি বলতে পারলে? অবশ্য তোমায় খুঁজে না পেলে সত্যি ভর্তি হতে হতো।যাক গে সেসব কথা। আমি কিছু মনে করি নি।মেহমান এলে কি এভাবেই দরজার কাছে দাঁড়া করিয়ে রাখো তোমারা?ভেতরে তো ঢুকতে দেও।পা ব্যাথা হয়ে গেলো।

আমি এরিনের সামনে কোন ধরণের সিনক্রিয়েট করতে চাইছি না।তাই সৌজন্যতা রক্ষা করার জন্য বললাম।

আমিঃ ভেতরে আসুন।

এরিনঃ এই লোক কে তাতো বলবি।বলা নেই কওয়া নেই একজন অচেনা লোককে তো আমরা ভেতরে ঢুকতে দিতে পারি না। এমনি আমাদের পেছনে শত্রুর অভাব নেই। এই দালানেই তো দুই কুটনি বুড়ি আছে।তারা যদি জানে আমরা কোন অপরিচিত ছেলেকে ঘরে ঢুকিয়েছি তাহলে তিলকে তাল বানিয়ে চরিত্রে দাগ লাগাবে।বাড়িওয়ালা তখন ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দিবে।আমরা তিনটা মেয়ে থাকি।কোন ছেলে মানুষ নেই। এখন যদি কোন ছেলে দেখে তবে কেলেংকারী হয়ে যাবে।

আমিঃ যা বোইন তুই একটু পানি খেয়ে আয়।এতবড় বক্তৃতা দিতে গিয়ে তোর গলা শুকিয়ে গেছে। গলা ভিজিয়ে নে।আমি কাউকে এখন ভয় পাই না।তাই এতসব আমাকে বলে কোন লাভ নেই। (রোশানের দিকে তাকিয়ে) কি ভেতরে কি ঢুকবেন? নাকি বাইরে থেকে চলে যাবেন? বিনা দাওয়াতে যখন ডেং ডেং করে নাচতে নাচতে চলে আসতে পেরেছেন, তাহলে ভেতরে ঢুকতে এত শরম কেন?

রোশানঃ অপমান করছো পাখি? কোন সমস্যা নেই। তুমি আমাকে যা বলো বা করো তাতে আমার একটুও খারাপ লাগে না। কারণ তোমাকে সেই অধিকার আমি দিয়েছি।তুমি ছাড়া আর কারো সাধ্যি নেই এই রোশান দেওয়ানের সামনে গলা উঁচু করে কথা বলার।আর অপমান তো অনেক দূরের কথাই।

রোশান ধীর পায়ে ভেতরে ঢুকলো।ওকে সোফায় বসতে বলে আমি আর এরিন আপ্যায়নের ব্যবস্থা করতে ব্যস্ত হলাম।শত হোক উনি এখন আমার অতিথি। তার আপ্যায়ন তো করতেই হয়।আর এরিন বা হিমি কাউকে আমি আমাদের বিষয় কিছু জানাতে চাইছি না।তাই নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টায় আছি।ঘরে তিন আইটেমের ফল,বিস্কুট চানাচুর ছিলো।জলদী করে তাই বের করলাম।যদিও সকালবেলা ফল দিলে কিরকম দেখায়।কিন্তু ঘরে আপাতত এগুলো ছাড়া আর কিছু নেই।

মিনিট পনের পর খাবারের ট্রে হাতে নিয়ে আমাদের ছোট ড্রয়িং রুমে আসতেই, আমি রোশানকে পেলাম না।ছোট টি-টেবিলে ফুলের তোড়া রাখা।কিন্তু রোশান নেই। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলাম দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। তার মানে রোশান ভেতরেই আছে।আমার রুমে উঁকি মারতেই আমার চোখ ছানাবড়া। রোশান নাভানকে কোলে তুলে ওর সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।

আমিঃ আপনি আমার বেডরুমে কি করছেন?

রোশানঃ নাভান উঠে গিয়েছিলো।তাই আমি এসে কোলে তুলে নিলাম।

আমিঃ দিন, আমার কোলে দিন।

রোশানঃ থাকুক না একটু আমার কোলে।

রোশান পুরো ইনোসেন্ট ফেস করে কথাটা বললো। আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে মানা করতে পারলাম না।তাছাড়া নাভানও ওর কোলে চুপ করে আছে।

আমিঃ এদিকে আসুন।

রোশান ভদ্র ছেলের মতো আমার পিছু পিছু ড্রয়িং রুমে এলো।নাভানকে কোলে নিয়েই সোফায় বসলো।কিছু সময় পর পর ওর গালে, কপালে চুমু খাচ্ছে। ওর সাথে হাত নাড়িয়ে খেলছে।নাভান খিলখিল করে হাসছে।রোশানের মুখেও হাসি।আমার কেন জানি এই চিত্রটা ভীষণ ভালো লাগলো।এনাজ থাকলে হয়তো এভাবেই নাভানের সাথে খেলতো।

আমিঃ মিস্টার রোশান, কিছু একটা খেয়ে নিন।

রোশানঃ শুধু শুধু এসব করতে গেলে পাখি।আমি এখন কিছু খাবো না। ব্রেকফাস্ট তোমার সাথে করতে চাই। যদি তুমি কিছু মনে না করো।

আমিঃ ব্রেকফাস্ট পরে করবেন।আগে কিছু তো একটু মুখে দিতেই হবে।

রোশানঃ আমার পাখি যখন বলছে তাহলে তো কিছু একটা মুখে দিতেই হয়।

হাত বাড়িয়ে এক পিস বিস্কুট নিয়ে মুখে পুরলো।তারপর আঙুরের থোকা থেকে কতগুলো আঙুর ছিঁড়ে একটু একটু করে নাভানকে খাওয়াতে মনোযোগ দিলো।আশ্চর্য বিষয় হলো নাভান কোন ঝামেলা ছাড়া তা লক্ষ্মী ছেলের মতো করে খাচ্ছে। আমি অবাক চোখে তাকিয়ে রইলাম।খুব সহজে রোশান নাভানের সাথে মিশে গেছে। এরিন আবার পড়তে চলে গেছে।ওর একটা টিউটোরিয়াল এক্সাম আছে। হিমি এখনো ঘুমে।আমি নিশ্চিন্ত মনে কিচেনে চলে গেলাম।

রোশানকে কেন জানি এখন আমার একটুও খারাপ লাগছে না। কিচেন থেকে এখন আমি ওদের দুজনের হাসির ঝংকার শুনতে পারছি।উঁকি মেরে দেখতে পেলাম রোশান আর নাভান দুজনে ফ্লোরে পা ছড়িয়ে বসে একসাথে খেলছে।তাও নাভানের খেলনা দিয়ে। আমার কাছে দুটোকেই বাচ্চা ছেলে মনে হচ্ছে। রোশানকে আমি অন্যরূপে আবিষ্কার করলাম।ওর চোখ, মুখে কোথাও নেই কোন ক্ষোভ বা হিংস্রতা।বরং একটা বাচ্চার সাথে খেলতে গিয়ে ও নিজেও বাচ্চা হয়ে গেছে। নাভানও ওর সাথে এমন আচরণ করছে না জানি কত আগের থেকে রোশান ওর চেনা।আমার মনটা খুশির সাথে সাথে নতুন এক আশংঙ্কা হানা দিচ্ছে। রোশান আবার নতুন কোন চাল চালবে না তো।নইলে হুট করে এভাবে আমার এখানে কেন?তবে ওর মধ্যে কোন ভেজাল আমি খুঁজে পাচ্ছি না। তারপরেও নিজের মনটা তো ওকে বিশ্বাস করতে পারছে না।রোশান পলিটিশিয়ান।উদ্দেশ্য ছাড়া কোন কাজ করে না।ওর সব কাজের পেছনে কোন না কোন উদ্দেশ্য জড়িত থাকে।আবার যদি কোন ঝামেলা পাকায়??

🦋🦋🦋

নিজের কেবিনে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে তাজ।দুদিন ধরে কিছুই তার ভালো লাগছে না। নোভার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। সেদিন যখন টুম্পা নামের মেয়েটির থেকে বকুল ফুলের মালা কিনেছিলো।তখন সামনে তাকিয়ে নোভাকেই দেখতে পেয়েছিলো।ব্যাগ হাতে একা দাঁড়িয়ে আছে। এদিক সেদিক তাকিয়ে কাউকে খুজছিলো নোভা।ওকে দেখেই ওর হাত-পা ঠান্ডা হওয়া শুরু করছিলো।অন্যরকম একটা ফিলিংসের মুখোমুখি সে হয়েছিলো।আর গতকাল ওর সামনে ছিলো।তাহলে বুঝুন কতটা নার্ভাস সে ছিলো।যদিও উপরে উপরে তার কিছুই বুঝতে দেয় নি কাউকে। কোনকিছু ভালো লাগছে না তাজের।টেবিলে থাকা ফাইল ঘাটতে শুরু করলো।তখুনি ওর চোখ গেলো টেবিলে থাকা নীল মলাটের এক ডায়েরির দিকে।ডায়েরী হাতে নিয়ে ও সিউর হলো এটা নোভার।কারণ গতকাল নোভাকে এটা ব্যাগ থেকে বের করতে দেখেছিলো।

ডায়েরি খুলতে কিছুটা ইতস্তত বোধ করলো তাজ।অন্যের ডায়েরি না বলে ধরা উচিত নয়।আর সেখানে তাজ এটা পরবে।ডায়েরি খুলবে কি খুলবে না তা নিয়ে এখন দ্বিধাদ্বন্দে পরে গেছে।মস্তিষ্ক বলছে অন্যের ডায়েরি খোলা উচিত নয় তাজ।আর মন বলছে খুলে দেখ না কি আছে?তুই তো আর কোনকিছু চুরি করছিস না।অবশেষে মনের কথায় সায় দিয়ে ডায়েরিটা খুলেই ফেললো তাজ।খুলতেই নিচের লেখাগুলো পেলো।প্রথম পৃষ্ঠায় বড় বড় করে ছন্দের আকারে লিখা।

“”ডায়েরির পাতায় পাতায়🍁
লিখা আছে তোর নাম🌹
আমি না হয়, হয়ে রইলাম🍃
তোর নামের বদনাম🍂🍂””

~~~~~~~ভালোবাসি এনাজ,খুব বেশি ভালোবাসি।তোমায় ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ। আরেকবার ফিরে আসো না আমার জীবনে।কথা দিচ্ছি আমি কোন দুষ্টুমি করবো না।আমি তো এখন লক্ষ্মী মেয়ে হয়ে গেছি।পরিস্থিতি সামলে নিতেও শিখে গেছি।তবুও কি তুমি ফিরে আসবে না। এক বাচ্চার মা হয়ে তো জীবন থেকে অনেক শিক্ষা পেয়ে গেলাম।এখনো কি আসবে না আমার জীবনে?আমার বিশ্বাস তুমি আসবে।আমার সাথে আর কত অভিমান করে থাকবে?আমার যে এখন তুমি হীনা দম নিতেও খুব কষ্ট হয়।পুরো পৃথিবীর সাথে যুদ্ধ করতে করতে আমি যে হাঁপিয়ে গেছি।আমি সত্যি ক্লান্ত হয়ে পরেছি।আর কত কষ্ট দিতে চাও আমায়?এবার চলে আসো না প্লিজ।আমি তোমার সব কথা শুনবো।~~~~~~~~~~

প্রথম পৃষ্ঠা পরে নিজের মনে বিরবির করে উঠলো তাজ।তার ভেতরটা কিরকম জানি ছটফট করছে।কিন্তু কিসের জন্য তা সে বুঝতে পেরেও আবার বুঝতে পারছে না।

ডায়েরির দিকে তাকিয়ে আবার পৃষ্ঠা উল্টাতে লাগলো।তখুনি চোখ যায় আরেক জায়গায়। লেখাগুলো মনে হয় আগের।কারণ কালিগুলো কিরকম ছড়িয়ে গেছে।সম্ভবত লেখাটা নোভার বিয়ের আগের হবে।প্রথমে সম্ভবত বলে ধরে নিলেও পৃষ্ঠার কোণার দিকে তাকিয়ে তাজ সিউর হয়ে গেলো লেখাটা নোভার বিয়ের আগেরই।কারণ সাল লেখার জায়গায় আজ থেকে আরো চার বছর আগের সাল লেখা। চেয়ারে আরাম করে বসে পড়তে লাগলো তাজ।সেখানে নিচের কথাগুলো লিখা আছে।

🍂🍂🍂

একটু আগে একটা কাহিনি হয়ে গেছে।যেটা না লিখলে আমার পেটের ভাত হজম হবে না।তাই লিখতে বসে পরেছি।কথা না বলে কাহিণীতে ফেরা যাক।

আম্মু সবসময় পরার জন্য সিটি গোল্ডের দুটো চুড়ি কিনে আনছে।আগের গুলো পুরনো হয়ে রং নষ্ট হয়ে গেছে বলে।আম্মু বরাবরই নতুন কিছু আনলে আগে আমাদের দুই বোনকে দেখাবে।তারপর নিজে পরবে।হোক সেটা আমাদের দুই বোনের জন্য কিংবা আব্বু অথবা নিজের জন্য।যথারীতি আম্মু আমাদের দেখিয়ে নিজের হাতে চুড়ি দুটো পরছে।

আমার আবার একটা বাজে অভ্যাস আছে। আম্মু যখুনি আমার সামনে চুড়ি খুলবে তখুনি টুপ করে খুলে রাখা চুড়ি দুটো আমার দুই হাতে পরে নিবো।আমার এই কাজটা করতে ভীষণ ভালো লাগে।আমার মুঠ ভর্তি চুড়ি পরার থেকে দুই হাতে দুটো সিটি গোল্ডের চুড়ি পরা বেশি পছন্দ।কিরকম বিবাহিত বিবাহিত মেয়ে দেখা যায়।এই বিষয়টা আমি বেশ ইনজয় করি। তাই আম্মু চুড়ি খুললেই আমি টুপ করে পরে নেই।

তো সেই চুড়িগুলে সন্ধ্যা থেকে পরে ঘুরছি।মাঝে মাঝে হাত ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছি। ভালো লাগছিলো না,ভাবলাম এক কাপ চা খেলে ভালো লাগবে। তাই চা বানাতে চলে যাই।এক কাপ আম্মুকে দিয়ে আর দুই কাপ নিয়ে ছোট বোন ইভার কাছে চলে আসছি।আমরা দুই বোনের একটা অভ্যাস আছে।যেটা হলো চা খাওয়ার সময় কখন খাটের ওপর বসবো না।দুজনেই নিচে ফ্লোরে বসে, হাত-পা ছড়িয়ে আরাম করে চা খাবো।তো তোমনটা করেই বসে চায়ে বিস্কুট ভিজাচ্ছি। আমার বোন ওর পেছনে খাটে থাকা বালিশে হেলান দিয়ে রেখেছে।

বিস্কুট চায়ে ভিজিয়ে খেতে খেতে হঠাৎ ইভা বলে উঠলো,”বোইনে চুড়ি দুটো খোলো।”আমি বললাম “কেন?”ও বলে, “না তুমি চুড়ি দুটো খুলবা।”আমি বললাম, “যা ভাগ।”ওর কথায় পাত্তা না দিয়ে চায়ে চুমুক দিলাম।কিন্তু ও চা না খেয়ে বিস্কুট হাতে নিয়ে ওর সামনে থাকা বালিশে মুখ গুঁজে বসে রইলো।আমি ভাবলাম হয়তো এমনি করছে।একটু পর ঠিক হয়ে যাবে।মাঝে মাঝে এরকম অদ্ভুত বায়না করে ও।তাই আমি এসবকে পাত্তা দেই না।

চা শেষ হতেই কাপটাকে ধুয়ে যথাস্থানে রেখে আবার ফিরে এসে দেখি ইভা এখনো বালিশে মুখ গুঁজে রেখেছে। এবার একটু খোটকা লাগলো।ও তো কখনো এরকম করে এত সময় থাকে না।দুই হাত দিয়ে মাথাটা সামান্য উঁচু করতেই দেখতে পেলাম নাকের পানি, চোখের পানি এক করে ফেলেছে। কোনকিছু বলেই ওর মাথা উঠানো যাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে আমার চুড়ি দুটো খুলতেই হলো।চুড়ি খোলার সাথে সাথে চোখ মুছে হাসি দিয়ে চা খেতে ব্যস্ত হয়ে পরলো।আমি তো অবাক, এই মেয়ের কান্ড দেখে। তারপর জিজ্ঞেস করলাম, “এমন করলি কেন?”তারপর যা বললো তাতে আমি হো হো করে হেসে উঠলাম।ও কান্না করছে এজন্য যে,আমি দুই হাতে চুড়ি পরলে ওর নাকি মনে হয় আমি ওকে ছেড়ে শ্বশুর বাড়ি চলে যাবো।তাই চুড়ি খুলতে বলেছে।কথাগুলো বলতে বলতেই আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মুখ গুজে আবারো কাঁদতে লাগলো।এবার আমি হাসতে হাসতে ওকে রাগাতে লাগলাম।বললাম,”আমি চলে গেলেই তো তুই খুশি।সবসময় তো তুই বলিস আমাকে কবে তুমি শ্বশুর বাড়ি যাবা।আর কবে তোমার জ্বালা থেকে রেহাই পাবো।আর পুরো রুমটা আমার হবে।তাহলে এখন কাঁদছিস কেন?আমি চলে গেলেই তোর শান্তি।” এতে ওর সামান্য হেলদোলও দেখলাম না। ও তো আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই যাচ্ছে। অবশেষে অনেক দুষ্টামী করে ওর কান্না বন্ধ করতে পেরেছি।

কিন্তু ইভার হঠাৎ এমন বিহেভিয়ারে আমি অনেক অবাক হয়েছি।সচারাচর ও এমন করে না।আমি জানি, আমি চলে গেলে ও প্রথম প্রথম অনেক কান্না করবে।কারণ আমি ছাড়া ওর প্রিয় বন্ধু আর কেউ নেই। সবকিছু আমার সাথে শেয়ার করবে।আমি শ্বশুর বাড়ি চলে গেলে ও পুরো একা হয়ে যাবে।তখন হয়তো ওর সময় কাটানোর মানুষটাও থাকবে না।আম্মুর কাছে কিছু সময় পর পর আমার নামে বিচারও দিতে পারবে না। অবশ্য সময়ের স্রোত একসময় ঠিক মানিয়ে নিবে।কিন্তু প্রথম দিকে ওর খারাপ লাগবে মনে হলেই আমার মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে যায়।

শত ঝগড়া, মারামারি, কিংবা মনমালিন্যর পর আমিই ওর সব।ইভার সাথে রাগ করে যেমন আমি থাকতে পারি না। তেমনি ইভাও পারে না।আমি একটু অসুস্থ হলে পাগল হয়ে যায়।কি রেখে কি করবে?একটা কাজও তখন করতে দিবে না। ও আমার বিশ্বস্ত একজন বন্ধুও।যে কথাটা আমি বলতে মানা করবো কখনো সেটা কাউকে বলবে না।কখনো বা আম্মু-আব্বুর বকার থেকে বাঁচিয়ে দিবে।আব্বু আমাকে বকলে ওর মুখ কালো হয়ে যাবে।আমার চোখে পানি দেখলে ও কেঁদে অস্থির হয়ে যাবে।মায়ের পর এই ছোট বোনটা আমার চোখের পানি সহ্য করতে পারে না। আমার চোখে পানি আসতে দেরী।ওর আসতে দেরী নয়।কিন্তু আমার চোখের পানি পরার আগে ওর চোখের পানি আগে পরে যাবে।

মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যাই ওর কাজে।মনে হয় আমি ওর বড় বোন নই।ও আমার বড় বোন।সত্যি নিজেকে আমি খুব ভাগ্যবতী মনে করি।নয়তো ওর মতো এতো কেয়ারিং, আমাকে বোঝে এমন একটা বোন পেতাম না।তবে আমি ওর মতো ভালোবাসার প্রকাশটা করতে পারি না।তবে নিরবে,ধমকে কিংবা শাসনে ওকে আমি ভালোবাসি।

🍂🍂🍂

ডায়েরিটা বন্ধ করলো তাজ।নীল মলাটের মোটা ডায়েরির পাতাগুলো উল্টাতে উল্টাতে চোখে আটকে যায় এক জায়গায় এসে।যেখানে লিখা ছিলো “বোন”।নোভা তার ছোট বোন ইভাকে নিয়ে একটা কাহিনি ও মনের অনুভূতি গুলো লিখে রাখছে।পড়তে পড়তে কখন যে চোখের কোণে পানি জমে গেছে তা নিজেও বুঝতে পারেনি তাজ।ডান হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে পানিটুকু মুছে নিলো।তারপর আবার ডায়েরির পাতা উল্টোতে লাগলো।দুই বোনের জীবন গল্প পড়তে পড়তে নিজের ভাইয়ের কথা মনে পরে গেছিলো।তাই না চাইতেও চোখের কোণে জল এসে ভিড়ছে। কারো হাঁটার শব্দ পেয়ে দ্রুত ডায়েরিটা টেবিলে থাকা ফাইলের ভিড়ে লুকিয়ে ফেললো।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে