@পূর্ব-রোদ?
#পর্ব_২৫
#লেখিকা_আমিশা_নূর
মুহুর্তে পূর্বের মুখটা অন্ধকারে ডেকে গেলো।তার মায়ের দেওয়া শর্তের কথা মনে পড়ে গেলো।তার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য তো সে রোদের সাথে ভালো ব্যবহার করেছিলো।আর এখন সে তার মায়ের দেওয়া শর্ত পূরণ করেছে এখন তার মায়ের কথা রাখার সময়!কিন্তু পূর্ব-রোদ তো একজন-আরেকজন’কে ভালোবেসে ফেলেছে তাহলে পূর্ব কী করে তার স্বপ্ন পূরণ করবে?কোথাও তার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে না তো!
পূর্বের মুখ কালো দেখে রোদ ভ্রু-কুচকে নিলো।পূর্বের মুখের সামনে থুরি বাজিয়ে বললো,
“কী ভাবছো?”
“হু?নাহ কিছু না।তুমি সব কিছু গুছিয়ে নাও।”
“তিহান ভাইয়া চলে যাবেন?”
“নাহ।তিহান আর নাবিলা দুদিন পর যাবে।”
“তাহলে আমরাও দু’দিন পর যাই।প্লিজ প্লিজ!”
পূর্ব প্রথমে না না করলেও রোদের শুকনো মুখ দেখে রাজি হয়ে গেলো।তখন রোদ লাফিয়ে উঠে বললো,
“এই দু-দিন ঘুরে আসি চলো।”
“কোথায় যাবে?”
“কাম অন হরিচন্দন!সিলেটে জায়গার অভাব আছে নাকি?”
“ওকে।”
“তিহান,রাফিয়া আর নাবিলাপু কে বলি?”
“আমাদের সাথে যাওয়ার জন্য?”
“হুম।”
“আচ্ছা।আমি ওদের’কে বিকেলে আসতে বলছি।”
“হু।”
।
।
বিকেলে নাবিলা পূর্বের বাসায় যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলো।তখন সে রুম থেকে শুনতে নিচের চেচামেচি শুনতে পেলো।নাবিলা উপর থেকে দাঁড়িয়ে দেখলো নিলয় তার মায়ের সাথে কথা বলছে।আর অনেক জোরে কথা বলার কারণে চেচামেচি’র মতো লাগছে।নিলয়কে দেখে নাবিলা’র বুকটা ধক করে উঠলো।আগে যাকে দেখে ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটতো আজ তাকে দেখে অচেনা মনে হয়।নাবিলা নিলয়কে একটুও ঘৃণা করে না।সে এখনো ভালোবাসে তবে সেটা একতরফা!নাবিলা জানে নিলয় অনেক মেয়ের সাথে মেলামেশা করে কিন্তু তার সাথে তিনটি বছর খুব আনন্দে কেটেছে।তার জন্য নাবিলা তার কাছে কৃতজ্ঞ!”হোক না সবটা তার অভিনয়।তবুও ভালোবাসার অভিনয় করে নাবিলা’র হাসির কারণ তো হয়েছিলো!”
নাবিলা রুমে এসে হাত কচলাতে লাগলো।নিলয়ের সামনে দিয়ে কিছুতেই বের হওয়া যাবে না এখন।কিন্তু এদিকে ধেরি হয়ে যাচ্ছে।নাবিলা পর্যাপ্ত পরিমাণ সাহস নিয়ে রুম থেকে বের হলো।নিচে নামতে তার মা জিজ্ঞেস করলো,
“নীরা,কোথায় যাচ্ছিস?”
“মা,পূর্বের বাসায় যাচ্ছি একটু।রাতে চলে আসবো।”
নাবিলা’র কথা শুনে মেঘ আর নিলয় দুজনে তার দিকে তাকালো।নিলয়ের চাহনিতে নাবিলা হেঁচকিয়ে উঠলো।নাবিলা’র মা তার পাশে এসে বললো,
“নিলয়,এটা হলো আমার মেয়ে নাবিলা।আর আমার নীরা!”
“পরিচয় হয়ে গেছে আন্টি।”
“সে কি!কখন?”
“কাল রাতে।”
নিলয়ের কথা শুনে নাবিলা তার মায়ের দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হাসি দিলো।নিনা হাসান থেকে বিদায় নিয়ে নাবিলা বাইরে চলে এলো।বাইরে আসার পর নাবিলা যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো।
।
।
“এসময় দূরে যেতে পারবো না।আশেপাশে কোথাও যায় কাল।”
“একদিন আপু?”
“হুম।সকালে যাবো বিকেলে চলে আসবো।”
“ইন্না-লিল্লাহ!সকাল-বিকাল কোথায় যাবো?”
নাবিলা পরিষ্কার বলে দিয়েছে একদিনের বেশি ঘুরতে পারবে না।নাবিলা’র কথায় বাকিরা সবাই নারাজ।কিন্তু নাবিলা তার কথা ফিরিয়ে নিবে না।শেষে সবাই সিদ্ধান্ত নিলো একদিন ঘুরবে অন্যএকদিন সবাই একসাথে এবাড়িতে আড্ডা দিবে।তারপর ওরা সবাই ঢাকা চলে যাবে।
রোদ আর রাফিয়া রান্না ঘরে গিয়ে ব্রেড পাকোড়া বানাচ্ছিলো।তখন রাফিয়া পাউরুটির চারদিক কাটতে কাটতে বললো,”পূর্বের সাথে তোর সব কীভাবে ঠিক হলো?”
রোদ সব উপকরণ গোলার মতো বানাতে বানাতে উত্তর দিলো,”আমাদের সবকিছু ঠিক হওয়ার পেছনে নাবিলাপু অনেক বড় অবদান আছে।”
“ওহ।তবে তোরা যে নরমাল বিহেভ করবি এইটা শুধু আমি স্বপ্নেই ভাবতাম।”
রাফিয়া কথা শেষ করে দাঁত কেলিয়ে হাসলো।রাফিয়ার দিকে তাকিয়ে রোদ হেসে দিলো।তখন রোদের মনে পড়লো কাল রাতে নাবিলা’র সাথে নিলয়ের দেখা হয়েছিলো।এরপর নিলয়ের সাথে কী হয়েছে তা রোদ জানে না।রোদ পাউরুটি গোলায় ডুবিয়ে তেলে দিয়ে মনেমনে ঠিক করে নিলো নাবিলা’র থেকে সবটা জিজ্ঞেস করবে।
।
।
“ইয়াম্মি!উফ রোদ যা বানিয়েছো না।”
“ও হ্যালো আপু,আমিও বানাইছি।” (রাফিয়া)
“এ্যাঁহহ,তুই শুধু পাউরুটি কেটে দিছিস।”(রোদ)
“আমি পাউরুটি কাটলাম দেখে মজা হয়েছে নাহলে হতো না।”
রাফিয়া’র কথা শুনে সবাই হেসে উঠলো।রোদ গম্ভীরভাবে নাবিলা’র দিকে তাকিয়ে বললো,”কাল নিলয়ের সাথে কথা বলেছো আপু?”
রোদের একটি বাক্য পুরা পরিবেশটা পাল্টে দিলো।নাবিলা পাকোড়া মাত্র সসে লাগাচ্ছিলো।রোদের কথা শুনে পাকোড়া রেখে দিলো।নাবিলা কিছু বলার আগে পূর্ব একসাথে বললো,
“নিলয়?”
“ইন্না-লিল্লাহ!নিলয় কোথা থেকে?”
“হাহ!”(নাবিলা)
নিলয় নাম শুনে নাবিলা থমকে গেলেও কিছু সময় নিয়ে নিজেকে ডোন্ট কেয়ার করলো।শান্ত স্বরে নাবিলা বললো,
” নিলয় কাল পার্টিতে এসেছিলো।”
“হুয়াট?”(পূর্ব)
“হুম।”
“ইন্না-লিল্লাহ!কিছু বলেছে ও?”
“ও আমাকে কি বলবে?আমাকে তো চিনতেই পারেনি।”
“মানে?” (পূর্ব)
নাবিলা গতরাতে ঘটনা খুলে বললো।এতে করে পূর্ব ভিষণ রেগে গেলো।রাগান্বিত স্বরে পূর্ব বললো,
“ও কে মেরে আমি…তোর সাথে ফ্লার্ট করে ও?”
“রাগিস ক্যান ইয়ার?ওর যা ইচ্ছে করুক।আই ডোন্ট কেয়ার।”
“তুই ওর সাথে কথা বলবি না।”
“ঠিক আছে রে।”
নাবিলা’র ঠিক আছে বলা দেখে সবাই হেসে ফেললো।নাবিলা সবার সামনে হাসলেও ভিতরে ভিতরে অস্থির।নিলয় তার সামনে এলে কিছুতেই নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না।অতিতের সব দৃশ্য তার সামনে ভেসে উঠে।তখন নাবিলা’র মনে হয় নিলয় তার সবকিছু!
।
।
“ইন্না-লিল্লাহ!”
“কী ইন্না-লিল্লাহ?” (রোদ)
“ইন্না-লিল্লাহ।রাফিয়া তোমাকে আমি কী বলেছিলাম?”
“কী বলছিলা?”
“পকোড়া’র সাথে কী আমার বলা কথা গুলাও খেয়ে ফেলেছো?”
তিহানের কথা শুনে রাফিয়া ভাবার ভান করলো।বাকি তিন মূর্তি তিহান আর রাফিয়া’র কান্ড দেখছে।তখন তিহান বললো,
“আম্মু কী বলেছিলো মনে নেই?”
“ওওওও।হ্যাএএএ”
“কী ও আ করছিস?বল তো কী হয়েছে?” (রোদ)
“তিহান বলো।”
“আম্মু বলেছে তোদের বাসায় নিয়ে যেতে?”
“আমাদের?”(পূর্ব)
“আমি যাবো।”(নাবিলা)
“নাবিলা আপু তুমি আমার ফিউচার শাশুড়ীকে কী জাদু করেছো?”
“মানে?” (রোদ)
“রোদ তুই বিশ্বাস করবি না শাশুড়ী আম্মা দিনে কতো হাজার বার নাবিলা আপুর নাম নেয়।শেষমেশ তিহানকে বললো তোদের তিনজনকে নিয়ে যেতে।”
“আন্টির সাথে আমি কয়েক বার কথা বলেছি।”(নাবিলা)
“আমরা তো দুদিন আছি সিলেট।তাহলে?” (পূর্ব)
“কাল আমরা সারাদিন ঘুরবো।পরশু তিহানের বাসায়।ওকে?” (নাবিলা)
“ওকে।”
।
।
রান্না ঘরে রোদ রাতের জন্য রান্না করছিলো।তিহান,রাফিয়া আর নাবিলা কিছুক্ষণ আগে চলে গেছে।রোদ গুনগুন গান করে রান্না বসাচ্ছিলো।তখন পেছন থেকে পূর্ব এসে জড়িয়ে ধরলো।রোদের হাতে থাকা চামচ নিয়ে পূর্বের গায়ে আলতো করে বারি দিলো।ব্যাথা পাওয়ার ভান করে পূর্ব রোদকে ছেড়ে দিলো।রোদ জিহ্বা দেখিয়ে আবারো রান্নায় মনোযোগ দিলো।পূর্ব রোদের হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দুহাতে কোমর জড়িয়ে ধরলো।রোদ বিরক্ত হয়ে বললো,
“কী করছো কী?রান্না করতে দিবে না নাকি?”
“উহু।চলো আজকে বাইর থেকে খেয়ে আসি।”
“রান্না এখন প্রায় শেষ।তুমি ছাড়ো আমি শেষ করি।”
“রান্না রাখো বাইরে যাবো।নাহলো এভাবে ধরে থাকবো।”
“কী বাচ্চামো করছো বলতো?”
পূর্ব জেদ ধরেছে সে কোনোমতেই রোদকে ছাড়বে না।শেষে রোদ বাইরে খেতে যাওয়ার জন্য রাজি হলো।
।
।
নাবিলা নিজের রুমে শুয়ে শুয়ে ফেইসবুকে ঘুরাঘুরি করছিলো।তখন “নি লয়” নামের আইডি থেকে রিকুয়েষ্ট এলো।নিলয় নামটা দেখে নাবিলা থমকে গেলো।আইডিটার রিকুয়েষ্ট এক্সপেক্ট করার আগে আইডিটা চ্যাক করলো। আইডি’টার প্রোফাইলে নিলয়ের থাকা ছবিটা বুঝা না গেলেও আইডিতে আরো অনেক ছবি আছে।এই ছবি দেখলে নিসন্দেহে যে কোনো মেয়ে গলে যাবে।আর নিলয়ের মিষ্টি কথা শুনে আরো একটু পা পিছলে প্রেমে পরতে বাধ্য।কী মনে করে নাবিলা রিকুয়েষ্ট এক্সপেক্ট করলো।নাবিলা’র আগের আইডি থাকলে হয়তো নিলয় বুঝতে পারতো আসলে সে কোন নাবিলা।কিন্তু নাবিলা আগের আইডি আর নেই।এখন এইটা নতুন আইডি।নাবিলা রিকুয়েষ্ট এক্সপেক্ট করার পরের মুহুর্তে মেসজ এলো।নাবিলা ইনবক্স চেক করে দেখলো ঐ আইডি থেকে মেসেজ।
“হাই বিউটি!”মেসেজটার দিকে নাবিলা এক পলকে তাকিয়ে রইলো।নাবিলা একবার ভাবলো মেসেজের রিপ্লে দিবে না।আবার ভাবলো নিলয় কী করতে চায় সেটার শেষ দেখে ছাড়বে।নাবিলা মেসেজের রিপ্লে দিলো,” হুয়াট?”
“ও এম জি!তোমার মতো হট গার্ল আমার মেসেজের রিপ্লে দিবে তা ভাবিনি।”
“আই সিই!”
এসব মেসেজ দেখে নাবিলা’র গা জ্বলে যাচ্ছে।তবুও নিজেকে শান্ত রেখে নিলয়ের কান্ডে সায় দিচ্ছে।
।
।
“খাবার কেমন ছিলো?” (পূর্ব)
“ভালো।তবে আমার চেয়ে ভালো রাঁধতে পারে না।”
“হাহাহাহা।”
রোদের কথায় পূর্ব হাসতে হাসতে রাস্তা বসে পরলো।পূর্বের হাসি দেখে রোদ প্রথমে রাগ করলেও পরে সেও হেসে দেয়।রেস্টুরেন্ট থেকে খেয়ে ওরা চাদের আলো’তে হেঁটে আসছে।দুজনে হাসতে হাসতে সামনে হাটা শুরু করলো।একে অন্যজনের হাত ধরে জোসনায় হাটছে।নিসন্দেহে যে কেউ দেখলে বলবে কতো সুখি দম্পতি!
[চলবে]