@পূর্ব-রোদ?
#পর্ব_২৪
#লেখিকা_আমিশা_নূর
রোদ শুধু কাঁদছে।পূর্বকে এতোটা শক্ত করে ধরে রেখেছে যে পূর্ব নড়তেও পারছে না।রোদের এমন কান্ডে পূর্ব হতবাক।পূর্ব যেনো রোবট হয়ে গেলো!রোদের থেকে এই মুহুর্তে এমন কিছু পূর্ব একদম আশা করেনি!
।
।
“মেঘ,বল কী হয়েছে?”
“নাবিলা কোথায় বলো তুমি?”
“মেয়েটা মাত্র এখন ঘুমাতে গেলো।”
“ওহ।”
মেঘ শান্ত হয়ে সোফায় বসলো।মেঘের মধ্যে অস্থিরতা বেড়ে যাচ্ছে।রোদ’কে ফলো করতে করতে মেঘ রোদের বাড়ির সামনে পৌঁছে যায়।আর পূর্বকে জড়িয়ে ধরার দৃশ্য পর্যন্ত দেখে মেঘ নিজেকে শান্ত রাখতে পারে না।মেঘের মধ্যে এখন শুধু একটা প্রশ্নই জেগেছে।তা হলো,”পূর্বের সাথে রোদের কী সম্পর্ক?”তখনি তার সামনে নাবিলা’র নাম ভেসে উঠে।তাই সে সোজা বাসায় আসে।মেঘের অস্থিরতা বুঝে নিনা হাসান গ্লাস ভর্তি জল এগিয়ে দিলো।মেঘ প্রথমে জল খেতে না চাইলেও পরের বার খেয়ে নেয়।নিনা হাসান মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,”কী হয়েছে?”
মুহুর্তে মেঘের সামনে পূর্ব-রোদের মিলন দৃশ্য ভেসে উঠলো।সাথে সাথে মেঘ দুহাত দিয়ে নিজের মুখ মুছে নিলো।নিনা হাসান আবার বললো,
“রোদের সাথে কিছু হয়েছে?”
“মা ভালো লাগছে না।ঘুমাতে গেলাম।”
নিনা হাসান পেছন থেকে দুবার ডাকলো।কিন্তু মেঘ সাড়া না দিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।নিনা হাসান চিন্তায় ডুব দিলো।একটু আগে নাবিলা’কে দেখে নিনা হাসান বুঝতে পেরেছে নাবিলা’র মন খারাপ!যদিও বাহির থেকে কেউ দেখলে বলবে নাবিলা’র কিছু হয়নি।কিন্তু তিনি মা তো!
আর মেঘ?মেঘ তো তার শিক্ষাতে বড় হয়েছে।তাহলে মেঘ’কে কেনো বুঝবেন না?
হোক না সৎ বা দূরে থাকুক!দুজনের মা তো!
।
।
“রোদ তোমার ফোন বাজছে।”
“বাজুক!”
“মেঘ কল করছে।”
“করুক!”
“রিসিভ করবে না?”
“নাহ!”
“এভাবে কতক্ষণ থাকবে?”
পূর্বের প্রশ্ন শুনে রোদ তার দিকে চোখ তুলে তাকালো।অনেকক্ষণ ধরে দুজনে সোফায় বসে আছে।মূলত পূর্বকে রোদ কেথায়ও যেতে দিচ্ছে না।রোদের মনে হচ্ছে পূর্বকে ছেড়ে দিলে এক্ষুনি পালিয়ে যাবে।পূর্ব রোদের চোখের নিচে জমে থাকা অশ্রুর কণা মুছে দিয়ে বললো,
“আমি ডিভোর্সের কথা আর তুলবো না প্রমিস!আমি ভেবেছিলাম তুমি মেঘ’কে ভালোবাসো তাই ডিভোর্সের কথা বলি।”
“আমি মেঘ’কে ভালেবাসলে তুমি ডিভোর্স দিবে?”
“হ্যা!তোমার হ্যাপির জন্য।”
রোদ মুখ গোমড়া করে নিলো।তার কাছে রিজন না পূর্ব ডিভোর্স দিবে সেটাই বড় মনে হচ্ছে।রোদের ইচ্ছে করছে পূর্বকে কান ধরে ওঠবস করাতে।
“আবার মুখ গোমড়া করলে?আর বলবো না তো ডিভোর্স…”
“আমি মেঘ’কে ভালোবাসলে তুমি তাতে সাপোর্ট করতে?তোমার ওয়াইফ অন্যকারো সাথে প্রেম করলে তুমি তাকিয়ে দেখতে?একবারও আটকাতে না?”
“যদি আমার বউ আগেই আমাকে বলতো সে আমাকে ভালোবাসে তাহলে কখনো মেঘের হাতে তুলে দিতাম না।”
রোদ করুন চাহনিতে পূর্বের দিকে তাকালো।সে আগে কেনো বুঝেনি পূর্বকে ভালোবেসে ফেলেছে?তাহলে এতোকিছু হতো না।রোদের চাহনি দেখে পূর্ব রোদের মাথা নিজের কাঁধে রেখে হাত দুটো নিজের মুঠোয় নিয়ে বললো,
“ভালোবাসি শঙ্খপুষ্পি!”
।
।
এলার্মের শব্দে নাবিলা ঘুমের রাজ্য থেকে বেরিয়ে এলো।আজ রাতে নিলয়’কে স্বপ্নে দেখেছে।কিন্তু নিলয়ের সাথে কোন দৃশ্য দেখেছে তা মনে পড়ছে না।নাবিলা বিছানায় বসে অনেকক্ষণ ধরে মনে করার চেষ্টা করলো যে স্বপ্নে কি দেখেছে?কিন্তু নিলয়ের চেহেরা ছাড়া সামনে আর কিছুই ভাসছে না।বিরক্ত হয়ে নাবিলা নিচে নেমে গেলো।নিচে গিয়ে দেখলো তার মা উদাস মনে বসে আছে।নাবিলা গিয়ে তার মায়ের সামনে বসে শান্তভাবে জিজ্ঞেস করলো,
“কী হয়েছে?মুখটা শুঁকনো করে রেখেছো কেনো?”
“তোর কী হয়েছে?মেঘের কী হয়েছে?তোরা দুজন ঠিক না থাকলে আমি ভালো থাকবো?”
নাবিলা’র মনে পরে গেলো কাল রাতে একটা প্যাঁচ লাগিয়ে ছিলো।আর প্যাঁচটা না খুলে নিজে শান্তি মতো ঘুমিয়ে গেলো।নাবিলা তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
“কাল মেঘ উদাস হয়ে বাড়ি ফিরেছে?”
“হ্যাঁ!কিন্তু তুই কী করে জানলি?”
“মা শুনো..”
“কী?”
“তোমার রোদকে কী খুব বেশি পছন্দ?”
“রোদ?হ্যা রোদ তো যথেষ্ট লক্ষী একটা মেয়ে।তার চেয়ে বড় কথা মেঘ রোদকে পছন্দ করে!”
তার মায়ের কথা শুনে নাবিলা বিড়বিড় করে বললো,”ঝামেলা তো ঐখানে!”
“কী বললি?”
“কিছু না।মেঘ ঘুম থেকে উঠেছে?”
“নাহ!রুমের দরজা বন্ধ।”
“ওহ।আচ্ছা আমি একবার ডেকে আসি।”
“যাহ!”
নাবিলা একটুখানি সামনে এগোতেই নিনা হাসান পেছন ডাকলো।নাবিলা পেছনে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,”কি হয়েছে?”
“মেঘ তোর তিন বছরের বড় হয়।ভাই বলে ডাকবি।”
নাবিলা মুখ চ্যাত করে বললো,”ভাই?”
“হ্যা!”
“আচ্ছা ডাকবো।”
নাবিলা শুধুমাত্র তার মায়ের খুশির জন্য মেঘ’কে ভাই ডাকতে রাজি হলো।মেঘ যে কোন লেভেলের ছেলে তা নাবিলা খুব ভালো করে জানে।নাবিলা মেঘের দরজায় ততক্ষণ পর্যন্ত টুকা দিলো যতক্ষণ না পর্যন্ত মেঘ দরজা খুললো।মেঘ দরজা খুলে সামনে দাঁড়াতে নাবিলা দাঁত বের করে হাসলো।তা দেখে মেঘ জিজ্ঞেস করলো,
“কী হয়েছে?”
“কতো ঘুমাবে?কয়টা বাজে জানো?তোমাকে বলে কী লাভ?তুমি তো আর কথা শুনবে না।”
বিজ্ঞদের মতো কথা বলতে বলতে নাবিলা মেঘের রুমে ঢুকে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসলো।মেঘকে ইশারায় বসতে বললো।মেঘ ভ্রু-কুচকে নাবিলা’র সামনা-সামনি বসলো।শীতল কন্ঠে নাবিলা বললো,”রোদ ম্যারিড!”
নাবিলার কথা মেঘের কর্ণ অবধি পৌঁছাতে খুব দ্রুত চমকে উঠলো।তখন মেঘের মাথায় হাজারো প্রশ্ন জমা হলো।তার মধ্যে একটি প্রশ্ন হলো,”রোদের স্বামী কী পূর্ব?”অদ্ভুত ভাবে নাবিলা তার প্রশ্নের উত্তর দেয়,”পূর্ব রোদের স্বামী!জানি ওদের সম্পর্কের কথা শুনে তুমি অবাক হচ্ছো কিন্তু এটাই সত্যি।ছোট বেলায় বিয়ে হয় ওদের কিন্তু তখন তারা কেউ বিয়ে মানতো না যার ফলে রোদ তোমার সামনে পূর্বকে ফ্রেন্ড হিসাবে পরিচয় দেয়।কিন্তু এখন ওরা দুজন-দুজনকে ভালোবাসে!”
নাবিলা’র শেষ কথাটি মেঘের মনে তীরের মতো সুক্ষ্মভাবে ঢুকে গেলো।মেঘের মনে হচ্ছে সে অন্য গ্রহে আছে।যেখানে রয়েছে অসীম কষ্ট!রোদকে তো সে নিজের অর্ধাঙ্গিনী হিসাবে পেতে চাইছিলো কিন্তু রোদ এখন অন্যকারো অর্ধাঙ্গিনী!
“দেখো মেঘ রোদ তোমাকে শুরু থেকে বন্ধু মনে করতো কিন্তু সেটাকে অন্যদিকে নিয়ে গেছো যেটা তোমার ভূল।”
“ভালোবাসলে সেটা ভূল?”
“ভালোবাসাটা ভূল না কিন্তু তোমার ভালোবাসার পদ্ধতিটা ভূল।ধরতে গেলে তুমি রোদকে ঠকিয়েছ ওর বন্ধুত্ব নষ্ট করেছো।”
“এইটা কেমন কথা?রোদকে কেনো আমি ঠোকাবো?ও কে ভালোবেসে আপন করতে চেয়েছিলাম।তাহলে তাতে ভূল কোথায়?আমি আগে থেকে নিশ্চয়ই জানতাম না যে রোদ ম্যারিড?”
“এখন তো জেনে গেছো?সো স্টে এওয়ে ফ্রম সী।”
নাবিলা’র কথায় মেঘ কোনো উত্তর দিলো না।তার মাথায় শুধু ঘুরছে রোদ!রোদ তাকে বিয়ের কথা না বলে ঠকিয়েছে।আর তার প্রতিশোধ মেঘ নিয়েই ছাড়বে।নাবিলা অনুসন্ধানি দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ মেঘের দিকে তাকিয়ে তার উদ্দেশ্য জানার চেষ্টা করলো।নাবিলা’র মন বলছে মেঘের মতো ছেলে রোদকে অতো সহজে ছেড়ে দিবে না।
।
।
“হরিচন্দনের বাচ্চা উঠবি নাকি লাত্থি দিবো?”
“উফ!”
রোদের কথা পাত্তা না দিয়ে পূর্ব তার কাঁধে মাথা গুঁজে দিয়ে আবারো চোখ বন্ধ করে নিলো।রোদ ভিষণ ক্ষেপে গেলো।সেই আধঘন্টা আগে থেকে পূর্ব নড়েচড়ে উঠছে।কিন্তু এখনো বিছানা থেকে উঠার নাম নেই।সাথে রোদ কেও উঠতে দিচ্ছে না।রোদের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি আসায় পূর্বের হাতে একাধারে চিমটি কাটতে লাগলো।ব্যাথা পেয়ে পূর্ব হালকা আওয়াজ করছে।
“উফ,রোদ!কী করছো?ব্যাথা পাচ্ছি তো।”
“নয়টা বাজছে।তুমি কলেজ যাবে না?”
“গুড নাইট!”
পূর্ব আবারো চোখ বন্ধ করে নিলো।তার কান্ডে রোদ হা করে রইলো।রোদ মুখ ফুলিয়ে উপরে দিকে তাকিয়ে রইলো।তখন কিছু একটা মিস হয়েছে মতো করে পূর্ব তাড়াতাড়ি রোদের কপালে চুমু দিলো।রোদ আড়চোখে পূর্বের দিকে তাকালো।পূর্ব হাই দিয়ে বললো,”গুড মর্নিং শঙ্খপুষ্পি!”
“এটা কী হলো?”
“কোনটা?”
“কিছু না।ছাড়ো না এবার।”
“কোথায় যাবে ছেড়ে দিলে?”
“ডান্স করবো।ছাড়বি তুই?”
রোদের রাগান্বিত কথা শুনে পূর্ব ফিক করে হেসে দিলো।এতে করে রোদ আরো রেগে গেলো।পাশ থেকে বালিশ নিয়ে ইচ্ছে মতো পূর্বকে মারতে লাগলো।এতে করে পূর্বের কোনো পরিবর্তন হলো না।সে আগের মতো করে হাসতে লাগলো।একসময় রোদ বিরক্ত হয়ে হাল ছেড়ে দিলো।তখন পূর্ব তাকে ছেড়ে দিলে রোদ হাঁপ ছেড়ে বাচলো!
।
।
“মেঘ,তোমাকে সবকিছু নাবিলাপু বললো?”
“হুম।”
মেঘের হ্যা বোধক উত্তর শুনে রোদ চুপ করে রইলো।রোদের নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।যদি রোদ আগেই মেঘকে বলে দিতে সে ম্যারিড তাহলে হয়তো মেঘ তার প্রেমে পরতো না।অপরাধ বোধের কারণে রোদ চুপ থাকলো।ওপাশ থেকে মেঘ বললো,
“তুমি পূর্বের সাথে আগে হ্যাপি ছিলে না তাহলে এখন কীভাবে হ্যাপি থাকবে?”
“আগে আমরা হ্যাপি ছিলাম না কে বললো?আমরা ঝগড়া করতাম,এক জন অন্যজনের প্রতি বিরক্ত ছিলাম কিন্তু তখন আমরা বুঝতাম না এসবের মধ্যে ভালোবাসা লুকিয়ে আছে।আর এখন সেটা বুঝতে পারছি।”
“তারমানে তুমি পূর্বের থেকে আলাদা হবে না?”
“প্রশ্নই আসে না!”
“আর যদি কোনোদিন পূর্ব ধোঁকা দেয়?”
“সরি?পূর্ব আমাকে ধোঁকা কেনো দিবে?”
মেঘের কথায় রোদ আকাশ পরিমান অবাক হলো।রোদ বুঝতে পারছে না মেঘ তাকে নেগেটিভ কথা কেনো বলছে?এসব কথা শুনে রোদ কিঞ্চিৎ অবাক হলো!রোদের প্রশ্ন শুনে মেঘ বললো,
“যদি পূর্ব রোদকে ত্যাগ করে তাহলে মেঘ রোদের জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করবে!”
রোদকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে মেঘ ফোন কেটে দিলো।রোদ এক পলক মোবাইলের দিকে তাকালো।মেঘের কথা আগা-মাথা রোদ কিছুই বুঝলো না।তখনি হাতের স্পর্শ পেয়ে রোদের ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটলো।রোদ ভালোকরেই জানে এইটা পূর্ব!তখন তার কানে আসলো,”ঢাকা চলে যাবো!”
“কীহ?কেনো?”
“ও হ্যালো!তিনমাস হয়ে গেছে।”
“তোমার ইন্টার্নিং?”
“শেষ!এখন কা..”
মুহুর্তে পূর্বের মুখটা অন্ধকারে ডেকে গেলো।তার মায়ের দেওয়া শর্তের কথা মনে পড়ে গেলো।তার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য তো সে রোদের সাথে ভালো ব্যবহার করেছিলো।আর এখন সে তার মায়ের দেওয়া শর্ত পূরণ করেছে এখন তার মায়ের কথা রাখার সময়!কিন্তু পূর্ব-রোদ তো একজন-আরেকজন’কে ভালোবেসে ফেলেছে তাহলে পূর্ব কী করে তার স্বপ্ন পূরণ করবে?কোথাও তার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে না তো!
[চলবে]