@পূর্ব-রোদ?
#পর্ব_১৮
#লেখিকা_আমিশা_নূর
তিহানের কথা শুনে পূর্ব-নাবিলা সামনে তাকালো।একজন মহিলা তাদের দিকে পিট করে দাঁড়িয়ে আছে।তাদের তিনজনের মনে প্রশ্ন জাগলো মহিলাটি কে?
“আসসালামু আলাইকুম আন্টি।”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম।মাশাল্লাহ!নাম কী তোমার।”
“রোদেলা রোদ!”
“বাহ!নামটাও তোমার মতো মিষ্টি!”
“ধন্যবাদ আন্টি।”
“আমার ছেলেটা যখন তোমার কথা বলতো ভাবতাম হয়তো বড্ড বেশি বকে।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ও খুব কম বলেছে।”
“মেঘ আমার কথা আপনাকে বলতো?”
“হ্যা।র…”
নিনা হাসান’কে আর কিছু না বলতে মেঘ ইশারায় মানা করলো।নিনা হাসান থতমত করে বাকি কথাটা শেষ করতে পারলো না।রোদ তাদের মা-ছেলের কান্ডে অবাক হলো।পরক্ষণে মেঘ বললো,
“রোদ তুমি জানো মা অনেক ভালো রাঁধে।”
“তাই আন্টি?”
“ধ্যাত!ও বেশি বলে।”
কথা বলতে বলতে নিনা হাসান পূর্বদের দিকে মুখ করে ফিরে।মুহুর্তে নাবিলা’র মুখের রং পাল্টে গেলো।বুকের ভিতরটা যেনো জল খুজে পেলো।মুখ থেকে আপনা-আপনি বেরিয়ে এলো,”মা!”
পূর্বের দিকে জলভর্তি চোখ নিয়ে বললো,”পূর্ব মা।ঐটা মা।”
বলতে বলতে নাবিলা কেঁদে দিলো।পূর্বকে বার বার ঝাঁকাতে লাগলো।পূর্ব অবাক হয়ে নাবিলা’র দিকে তাকিয়ে আছে।গত দু’মাসে নাবিলা’কে কোনো ইমোশনাল পর্যন্ত হতে দেখেনি আর এখন কাঁদছে?যখন নাবিলা তার অতীত খুলে বলছিলো তখনো এরকম করেনি।পূর্ব সামনে তাকিয়ে দেখলো মহিলা’টি মেঘের সাথে চলে যাচ্ছে।আর রোদ হাত নাড়াচ্ছে।নাবিলা আড়াল থেকে বেরিয়ে মহিলাটি’কে ডাকতে যাবে তখনি পূর্ব তাকে ধরে ফেলে।সেন্টারে ওদের তিনজন’কে দেখে রোদ অবাক হয়।তার চেয়েও বেশি অবাক হয় নাবিলা’কে কাঁদতে দেখে।
।
।
“বাবা-মা’র ডিভোর্স হওয়ার পর আমি বাবা’র সাথে আমেরিকা চলে যায় আর বাবা আমেরিকা’তে সেকেন্ড ম্যারেঞ্জ করে।কিন্তু মা’র কোনো খবর আমি জানতাম না।ছোট বেলা থেকে বাবা আদুরে ছিলাম।আমার বাবা’র দ্বিতীয় বউ বাঙালি ছিলো।কিন্তু তারপরও আমাকে নিজের মেয়ের মতো মনে করতো না।প্রথম প্রথম সব ঠিক থাকলেও পরে উনি সৎ মায়ের মতো আচরণ করেন।যেটা আমি নিতে পারি না।তাই আমি একবছর আগেই বাংলাদেশ চলে আসি।কিন্তু তখন ভাবি’নি এখানে এসে মায়ের দেখা পাবো।”
“কিন্তু তুমি বাংলাদেশে তোমার মাকে খুঁজতে না আসলে এমনি এমনি কেনো আসলে?”
রোদের প্রশ্নের কোনো উত্তর নাবিলা বা পূর্ব দিলো না।কারণ পূর্ব জানে নাবিলা বাংলাদেশ কেনো আসছে।নাবিলা’র চোখে এখনো হালকা জল লেপ্টে আছে।রোদ তার প্রশ্নের কোনো উত্তর না পেয়ে বললো,
“মেঘ’র মা উনি।কিন্তু…”
“তাহলে কী তোর মা দ্বিতীয় বার বিয়ে করেন?”(পূর্ব)
” দ্বিতীয় বিয়ে করলে মেঘ নাবিলা’র বড় হয় কি করে?”(রোদ)
“বুঝছি না আমি কিছু।”
নাবিলা কথা শেষ করে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো।পাশ থেকে রোদ জলের গ্লাস এগিয়ে দিলো।
“রোদেলা তুমি মেঘের সম্পর্কে কী কী জানো?” (পূর্ব)
“কী জানবো আবার?যাস্ট ওর নাম মেঘ এইটা জানি।”
“আর কিছু জানো না?”
“নাহ।আর জানলেও তোমাকে বলার প্রয়োজন মনে করি না।”
“কাম অন ইয়ার।এখানে আমার বিষয় না নাবিলাকে নিয়ে কথা হচ্ছে।”
“স্টপ ইয়ার।” (নাবিলা)
নাবিলা’র ধমকে পূর্ব-রোদ কথা বন্ধ করলো।রোদকে উদ্দেশ্য করে নাবিলা বললো,
“মেঘ সম্পর্কে কোনো ইম্পর্টেন্ট কথা জানো রোদ?”
“না আপু।আমরা যাস্ট ভালো বন্ধু।”
“ওহহ।তাহলে মেঘ মা’কে কেনো তোমার সাথে দেখা করালো?”
“জানি না।আন্টি নাকি আমার সাথে দেখা করতে চাইলো যাস্ট এটুকু।”
“মেঘ শুধুমাত্র তোমার ফ্রেন্ড হলে ওর মায়ের সাথে কেনো দেখা করাবে?” (পূর্ব)
“আমি তো জানি না।”
রোদের ভাবহীন উত্তর দেখে পূর্ব রাগ বেড়ে গেলো।রাগের চোটে বললো,
“মেঘের সাথে অন্য সম্পর্ক নেই তো?” (পূর্ব)
পূর্বের কথার মানে রোদ ভালোভাবে বুঝতে পেরে রেগে বললো,
“হুয়াট ডু ইউ মিন বাই অন্য সম্পর্ক?”
“অন্য সম্পর্ক নাহলে…”
“গাইস স্টপ দিস ননসেন্স।পূর্ব,মেরে তোকে তক্তা বানাবো।চুপ করে থাকবি একদম।রোদ?”
“হুম।বলো আপু..”
“তুমি আমাকে হেল্প করবে?মেঘ থেকে সব কথা আস্ক করবে?”
“মেঘ’র সাথে তেমন ক্লোজ সম্পর্ক নেই।বাট..”
“তো ক্লোজ সম্পর্ক করো।”
“মানে কী বলছিস নাবিলা?”
“প্লিজ প্লিজ!”
“আমার কোনো সমস্যা নেই আপু।”
পূর্ব রেগে বাড়ির বাইরে চলে গেলো।রোদের উত্তর শুনে নাবিলা সস্তির হাসি হাসলো।এতে করে দুটো কাজ হবে।প্রথমটা তার মাকে আবার ফিরে পাবে।দ্বিতীয় পূর্ব অনুভব করবে সে রোদকে ভালোবাসে।পূর্ব’কে জেলাসি করাটা এখন অন্যতম কাজ।
।
।
“”পূর্ব,তোর এতো জ্বলে ক্যান বুঝি না।”
“আজব!আমার জ্বলবে ক্যান?মেঘ’কে আমার পছন্দ না তুই জানিস।”
“সেটা কী আমার জন্য?নাকি রোদ ওর সাথে ক্লোজ বলে?”
“মা..মানে?তোর জন্য।”
“আচ্ছা।আমি যাই তাহলে।”
নাবিলা বাকা হেসে গেইটে বাইরে চলে গেলো।কিন্তু পূর্ব ভাবনায় মগ্ন।সত্যি রোদ মেঘের সাথে কথা বললে তার এমন হয় কেনো?কেনো মনে হয় রোদ শুধু তার?রোদ কে দেখলে একটা ঘোরের মধ্যে ডুবে যায় কেনো?
পূর্ব এসব ভাবছিলো তখনি নাবিলা আবার ফিরে এলো।পূর্ব তার দিকে ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করবে তা আগে নাবিলা বললো,
“পূর্ব,রোদ আগের থেকে সুন্দর হয়ে গেছে দেখেছিস।”
“হ্যা।তো?”
“তারমানে তুই খেয়াল করেছিস?”
“এতো প্যাঁচাল না করে কী বলতে চাস বল।”
“বলছিলাম যে,তুই রোদের রাগ ভাঙাতে চাস?”
“হ্যা।ওর এমন ভাব ভালোলাগে না।”
“তাহলে একটা টিপস দিই।”
“কী?”
“একদম পারফেক্ট হাসবেন্ড হবি রোদের সামনে দেখবি ওর সব রাগ বরফের মতো গলে যাবে।”
“দূর!ও আরো রেগে যাবে।”
“রাগবে না।প্রথম প্রথম একটু ঘাড়ত্যাড়ামি করবে।কিন্তু কী জানিস তো সব মেয়ে একজন পারফেক্ট হাসবেন্ড খুজে আর রোদের মিললে ও অখুশি হবেনা।”
“বলছিস?”
“একদম বস।”
।
।
“টেবিলে খাবার রাখা আছে কারো খেতে ইচ্ছে করলে খেয়ে নিবে।”
রোদের কথা শুনেও না শুনার ভান করে পূর্ব সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যাচ্ছিলো।রোদ আবারো বললো,
“কথা কী কানে যাচ্ছে না?খেতে আসতে বললাম তো।”
“খেতে ইচ্ছে করছে না।”
“খেতে ইচ্ছে না করলে আমাকে দিয়ে রাধালেন কেনো?যত্তসব!খাবার শেষ নাহলে আমি তিনদিন খাবার দিবো না বলে দিলাম।”
রোদের কথা শুনে পূর্ব খাবার টেবিলে আসলো।যদিও এখন খাওয়ার কোনো মুড ছিলো না।কিন্তু রোদের কথা শুনে খেতে এলো।নাহলে সত্যি সত্যি তিন নাহলেও একদিনের খাবার দিতো না।
।
।
সকালে রোদের ঘুম ভাঙ্গতে চোখের পাতা হালকা খুলে দেখলো পূর্ব কফির মগ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।রোদ নিজের চোখে ভূল দেখছে মনে করে চোখ কচলে নিলো।কিন্তু আবারো একই দৃশ্য দেখলো।রোদ’কে চোখ খুলতে দেখে পূর্ব বললো,
“শুভ সকাল শঙ্খপুষ্পি!”
“এ্যাএএ!কী পুষ্পি?”
“শঙ্খপুষ্পি!নাও কফি নাও।”
“কী হয়েছে আজকে?এভাবে কফি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?”
“আজকে একটা শুভ কাজে যাচ্ছো তাই বউ!”
“হুয়াট রাবিশ।কে বউ?”
“সেটা তুমি জানো।এখন ফ্রেশ হয়ে কফি খেয়ে নাও।”
“খাবো না।”
“তাহলে মা’কে বলে দিচ্ছি।”
রোদ বিড়বিড় করে বললো,”হরিচন্দন!সারাক্ষণ আম্মির ভয় দেখাস।”
হঠাৎ রোদ বিছানা থেকে নামতে গেলে পূর্ব তার দিকে এগিয়ে আসে।রোদ কিছু বলতে গেলে পূর্ব তার ঠোঁটে আঙ্গুল দে।রোদের শ্বাস-প্রশ্বাস খুব দ্রুত হচ্ছে।বুকের ভিতর কেউ যেন হাতুড়ি দিয়ে টক টক আওয়াজ করছে।চেয়েও রোদ পূর্ব’কে সরিয়ে দিতে পারছে না।যেন হাত দু’টো কেউ শক্ত করে আবদ্ধ করে রেখেছে।পূর্ব আরো এগিয়ে এসে রোদের কপালে আলতো করে চুমু দিলো।আবেশে রোদ চোখ বন্ধ করে নিলো।রোদের হুস এলো পূর্বের হাসির শব্দে।চোখ খুলে দেখলো পূর্ব অনেকটা দূরে সরে আছে।রোদ রেগে গিয়ে কিছু বলতে যাবে তখন পূর্ব তার কথা কেড়ে নিয়ে বললো,
“আমার বউ তাই তার কপালে চুমু দেওয়াটা সম্পূর্ণ বৈধ্য।ওকে?”
“যত্তসব!”
।
।
রোদ বিড়বিড় করে ওয়াশরুমে গেলে পূর্ব মুচকি হাসলো।রোদের সাথে বর্তমানে কাটানো মুহুর্তগুলা পূর্বের বেশ লাগে!তবে মনের কোনো এক কোণে ভয় থেকে যায়।পূর্ব কল্পনা’তেই আনতে পারে না যে একদিন রোদ কে ছাড়া থাকতে হবে।সেখানে সে বাস্তবের সাথে কীভাবে মিল করবে?
।
।
“মেঘ,আন্টি কী বাড়িতে একা থাকেন?”
“হুম।তবে রহিমা খালা মানপ একজন কজের মহিলাও থাকেন।”
“ওহ।”
“কেনো জিজ্ঞেস করছো বলতো?”
“ভাবছিলাম আন্টি’র সাথে দেখা করবো।”
“রিয়েলি?”
“হুম।”
রোদের হ্যাঁ বোধক উত্তর শুনে মেঘ খুশিতে লাফিয়ে উঠলো।মেঘ আগেও অনেক বার চেয়েছিলো রোদ’কে তাদের বাসায় নিয়ে যেতে।কিন্তু সংকোচের কারণে বলতে পারেনি।তবে গত কয়েকদিনে তাদের সম্পর্ক অনেকটা ভালো হয়েছে।মেঘ যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে।রোদ’কে মেঘ বেশ পছন্দ করে।পছন্দ বললে ভূল হবে।মেঘ রোদকে জীবনসঙ্গিনী হিসাবে পেতে চাই।তাই তো সে রোদের কথা বাড়ি’তে বলে।আর আজ যদি রোদ তার বাড়িতে যায় তাহলে মা কিছু একটা নিশ্চয় করে নিবে।
“কী ভাবছো মেঘ?”
“কিছু না।ক্লাস তো শেষ।এখনি যাবে?”
“হুম।তুমি যদি কিছু মনে না করো তাহলে আমার দুজন ফ্রেন্ড’স যাবে সাথে?”
“ওকে,নো প্রবলেম।”
মেঘ রোদের সামনে মুচকি হাসলেও মনের ভিতর খচখচ করলো।শুধুমাত্র রোদের কথা রক্ষার্থে মেঘ হ্যা বলেছে।নাহলে মেঘ’র কোনো ইচ্ছে ছিলো না।
[চলবে]