@পূর্ব-রোদ?
#পর্ব_১০
#লেখিকা_আমিশা_নূর
“আচ্ছা বলছি কীভাবে তৈরি করে।”
“হু বল”
“গাজরের স্যুপের জন্য গাজর কুচি করে নে।”
“সব একসাথে বল।”
“আচ্ছা।পিঁয়াজ কুচি সিকি কাপ,মাখন সিকি কাপ,
মরিচগুঁড়া ২ চা চামচ,
ধনেগুঁড়া সিকি চা চামচ,
গরম মসলা গুঁড়া আধা চা চামচ,লবঙ্গ গুঁড়া সিকি চা চামচ,এলাচ গুঁড়া সিকি চা চামচ,ক্রিম আধা কাপ।ক্রিম আছে?”
“দাড়া!”
পূর্ব ফ্রিজ খুলে দেখলো ক্রিম আছে।ইশরায় রোদকে আছে বলে কন্টিও করতে বললো।
“ভেজিটেবল স্টক ৩ কাপ,
আর লবণ স্বাদমতো।ওটা আমি দিবো।তারপর অপশনাল পুদিনা পাতা।পুদিনা মনেহয় পেছনে আছে?”
“ফ্রিজে আছে।মনে হয় আগে থেকে ছিড়ে রাখছে।”
“ওকে।তুই সবকিছু রেডি কর।”
কিছুক্ষণের মধ্যে পূর্ব সবকিছু রেডি করলো।পেয়াজ কাটা’র সময় পূর্বের চোখের জল আসছিলো।তা দেখে রোদ চুইংগাম চিবোতে বললো।কারণ চুইংগাম চিবোলে চোখে জল আসে না।সব তৈরি হয়ে গেলে পূর্ব কীভাবে রান্না করবে তা জিজ্ঞেস করলে রোদ গড়গড় করে বললো,
“স্টক এর জন্য ৩ কাপ পানিতে ২ কাপ পরিমান সবজি মানে অন্যরকম সবজি, পিঁয়াজ টুকরো, কয়েক কোয়া রসুন, আদাকুচি, আস্ত গোলমরিচ, অল্প লবণ দিয়ে কম আঁচে ১ ঘণ্টা রান্না কর।তারপরে পানিটা শুকিয়ে ১ কাপ পরিমাণ থাকা অবস্থায় নামিয়ে নিতে হবে।”
“হুম।দেন?”
“শুধু পানিটা ছেঁকে নিলেই হল ভেজিটেবল স্টক।রয়ে যাওয়া সবজি অন্য যেকোনো খাবারে ব্যবহার করতে পারবো।”
“কী করবো?”
“সেটা আমি দেখবো।”
“আচ্ছা তারপর?”
“আপাতত যা বলছি তা কর।আমি ফোন নিয়ে আসি।”
রোদ আস্তে আস্তে হেটে ফোন নিয়ে আসলো।ফোন হাতে নিয়ে দেখলো রাফিয়া’র অনেকগুলা কল।রোদ রান্না ঘরে আসতে আসতে কল ব্যাক করলো।দুবার রিং হতেই রিসিভ হলো,
“রোওওওওওওওওদ।লাভ ইউ।উম্মাহহহ!”
রাফিয়ার চিৎকারে রোদ কান থেকে মোবাইলটা দূরে সরালো।পরক্ষণে বললো,
“কুত্তার মতো চিল্লাস ক্যান?কান টাই ফেটে গেলো।”
“রোওওদ।আই এম সো হ্যাপি।”
“ক্যান?”
“আরে ইয়ার ফুফির বাড়িতে ঘুরতে আসছিলাম এসেই আমি শকট!”
“উফ!এতো না পেঁচিয়ে বল না আসল কারণটা।”
“ইন্না-লিল্লাহ আমার ফুফির জা’য়ের ছেলে।ওয়াহহহ!”
“কীহ?ইন্না-লিল্লাহ তোর ফুফির জা’য়ের ছেলে?আর তুই আগে জানতি না?”
“ফুফির বাড়ি সিলেট জানিস।আর অনেক বছর পর এখানে এলাম।আমি কীভাবে জানবো ও ফুফির আত্মীয় হয়?”
“তুই সিলেট?”
“হ্যা।দুদিন হলো আসলাম।ইন্না-লিল্লাহ’কে আজকে দেখলাম।”
“রাফিয়াআআ আমিও সিলেট।ওয়াওওও!”
“হুয়াট?”
“হুম।…..”
সিলেটে আসার পুরা ঘটনা রাফিয়া’কে খুলে বললো।সব শুনার পর রাফিয়া বললো,
“বাহ।এত্তো কিছু?জিজু তোর কেয়ার করছে?সিরিয়াসলি?”
“হাহ!”
রাফিয়া’র সাথে কথা শেষ করে পূর্বের কাছে গেলো।গিয়ে দেখলো পূর্বের কাজ মোটামুটি শেষ।রোদকে দেখতে পেয়ে পূর্ব বললো,
“আর কী বল?”
“এবার প্যানে মাখন গরম করে নে।তাতে পিঁয়াজকুচি দিয়ে হালকা বাদামী করে ভাজতে হবে। এবার গাজরকুচি দিয়ে আবার কিছু সময় ভাজতে হবে। গাজর ভাজা হলে তাতে মরিচগুঁড়া, লবঙ্গগুঁড়া, ধনেগুঁড়া, এলাচগুঁড়া, গরম মসলাগুঁড়া মিশিয়ে নাড়তে থাকবি। মিনিট দুয়েক পরে ভেজিটেবল স্টক ও লবণ মিশিয়ে অল্প আঁচে ২০ মিনিট রান্না করবি।তার হয়ে গেলে পুদিনা পাতা দিবি।শেষ।”
“ওকে।”
রান্না শেষ হওয়ার পর পূর্ব রোদকে খেতে বললে সে চিল্লিয়ে উঠে।কিন্তু পূর্ব জোর করে খাইয়ে দে।দুপুর গড়িয়ে আসতে রোদে জ্বর কমে গেলো।রোদ বাইর থেকে বাড়ির ভিতর ঢুকতে দেখলো পূর্ব কোথাও যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে।তা দেখে রোদ প্রশ্ন করলো,
“কোথায় যাচ্ছিস তুই?”
“সিলেটে তো আর ঘুরতে আসি নি।যে কারণে এসেছি সেটা করতে যাচ্ছি।”
“ওহ।আমাকে নিয়ে যা।”
“তোর যেতে হবে না।আমি ফর্ম নিয়ে আসবো আসার সময়।”
“তাইলে এতো বড় বাড়িতে আমি একা থাকবো?”
পূর্ব কিছুক্ষণ চিন্তা করলো।তাদের বাড়ির আশেপাশে কোনো বাড়ি নেই।পূর্ব ডিপ্লোমা শেষ করে তিন মাসের জন্য সিলেট ইন্টার্নিং করতে এসেছে।হয়তোবা ছয়মাসও লাগতে পারে।তাদের ক্যাম্পাসের থেকে একটু দূরে কম্পিউটার সেন্টার।যেখান থেকে রোদ কম্পিউটারের কাজ শিখতে চাইছে।পূর্ব ভাবলো রোদকে সাথে করে নিয়ে যাওয়া টাই উত্তম।তাই রোদকে রেডি হতে বললো।দুজনে একসাথে বাড়ি থেকে বের হয়ে তাদের গন্তব্য স্থানের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়লো।রোদের কম্পিউটার সেন্টার আগে তাই রোদ আগে নেমে গেলো।গাড়ি থেকে নেমে পূর্ব বললো,
“তুই একা করতে পারবি?”
“আমি কী বাচ্চা?এক করতে পারবি মানে?”
“উফ!যা।কাজ শেষ করে আমাকে টেক্সট করিস।”
“ঠ্যাকা পরে নি আমার।”
রোদ কোচিং-সেন্টারের ভিতরে ঢুকে গেলে পূর্ব তার কলেজে গেলো।এদিকে রোদ কোচিং সেন্টারের ভিতর এসে এদিক-ওদিক তাকাতে লাগলো।তখনি তার কানে ভেসে এলো,
“হেই হাই!”কন্ঠ স্বর অনুসরণ করে রোদ পেছনে ফিরতেই ছয় ফিট লম্বা কিছুর সাথে ধাক্কা খেলো।রোদ পড়ে যাওয়ার ভয়ে চোখ বন্ধ কারো জ্যাকেট আঁকড়ে ধরলো।তার চেহেরা ভয়ার্ত হয়ে আছে।রোদ চোখ বন্ধ অবস্থায় অনুভব করলো কেউ একজন তার দিকে তাকিয়ে আছে।চোখ পিট পিট করে রোদ চোখের পাতা খুললো।খোঁচাখোচা দাঁড়ি,হালকা নীল রংয়ের চোখের মনি,ডান পাশের চোখের নীচে গাড় কালো রংয়ের তিল চিহ্ন,ঠোঁটের রং গোলাপি।মনে হয় কোনোদিন সিগারেট টাচ করেনি।উপরের ঠোঁটের বা’পাশে ছোট একটি গর্তের মতো,চুলের ডিজাইন অনেকটা হিরোদের মতো।চেহেরার আকৃতি লম্বাটে।ছেলেটাকে দেখে রোদ হা করে তাকিয়ে রইলো।ওর সামনে যেনো কোনো সিনেমার হিরো আছে।তখনি তুড়ির শব্দে রোদ কল্পনা থেকে বেরিয়ে এলো।
” হ্যালো মিস?কোথায় হারিয়ে গেলেন?”
“না না।হারিয়ে যায় নি।”
“এভাবে আশেপাশে তাকিয়ে দেখছিলেন যে?দরকার ছিলো?”
“না মা..মানে হ্যা।আমি এখানে কম্পিউটার ক্লাসের জন্য ফর্ম নিতে এসেছি।”
“ওহ।নাম কী আপনার?”
“মিসে..রোদেলা রোদ!”
“ওহ।কাম উইথ মি।”
“কেনো?”
রোদের ‘কেনো’ শুনে ছেলেটা ভ্রু-কুঁচকে তাকালো।ছেলেটা দৃষ্টি দেখে রোদ আমতা আমতা করে বললো,
“না..মানে আপনি কে?আপনার সাথে কোথায় যাবো?”
“আমি মেঘ।কম্পিউটার ক্লাস আমার টিম শিখাবে।”
“ওহ।সরি বুঝতে পারিনি।”
“ইট’স ওকে।”
কথা শেষ করে ছেলেটা মুচকি হাসলো।রোদ খেয়াল করলো হাসা’র সময় ছেলেটার ঠোঁট বেকে যায়।যেটা তার চেহেরা’কে আরো সুন্দর করে তোলে।রোদ ছেলেটার সাথে নিঃশব্দে হেটে আসছিলো।তখন ছেলেটা প্রশ্ন করলো,
“কোন ক্লাসে পড়েন আপনি?”
“এইচএসসি দিলাম।”
“নিজ বাড়ি এখানে?”
“নাহ।ঢাকা।”
“ওহ।”
কথা বলতে বলতে তারা কক্ষে এসে পৌঁছায়।তখন ছেলেটা নিজে সামনের চেয়ারে বসে রোদকেও বসতে বললো।পাশ থেকে একটা ফর্ম নিয়ে রোদের হাতে দিয়ে বললো,
“ফর্মটা পূরণ করে দিন তারপর কালকে ক্লাস শুরু করতে পারবেন।”
“আচ্ছা।”
ফর্মটা ডান দিকে ছবি লাগবে দেখে রোদ ছেলেটাকে বললো,
“আমি তো পিক আনলাম না।”
“ইট’স ওকে।আপনি বাকিসব পূরণ করে রাখেন পিক কাল জমা দিলে হবে।”
“ওকে স্যার।”
“উহু ডোন্ট কল মি স্যার।কল মি স্যার।”
“ওকে বাট আপনার আমাকে তুমি করে বলতে হবে।”
“ওকে।”
ছেলেটা আবার হাসি দিলো।রোদ সম্পূর্ণভাবে গলে গেলো সেই হাসিতে।রোদ চলে আসতে গেলে মেঘ বললো,
“কাল কয়টাই আসবে জানো?”
“ইশ!সেটা জিজ্ঞেস করতে ভূলে গেছি।”
“হাহাহা!কাল দশটাই।”
রোদ বিড়বিড় করে বললো,
“কথায় কথায় হাসার কী আছে?হায় মে মার গেয়া!”
মুহুর্তে মেঘ আবার বললো,
“তুমি কী একা এসেছো?”
“নাহ।আমাকে আমার…”
কথাটি পূর্ণ করতে রোদ থেমে গেলো।কী বললে সে?তার হাসবেন্ড নিতে আসবে?কিন্তু ওরা তো মানে না সম্পর্ক’টা।রোদকে চুপ থাকতে দেখে মেঘ প্রশ্ন করলো,
“থেমে গেলে কেনো?কে নিতে আসবে?”
“আমার ফ্রেন্ড!”
“ওহ।ওকে।”
মেঘ পাশ এড়িয়ে চলে গেলো।রোদ মোবাইল নিয়ে পূর্বকে টেক্সট করতে যাচ্ছিলো তখনি পূর্ব গাড়ি নিয়ে হাজির হলো।রোদকে দেখে পূর্ব একগাল হাসলো।কিন্তু রোদ মুখ ভার করে গাড়িতে বসলো।পূর্ব রোদকে খুঁচা দিয়ে বললো,
“জাদুমন্ত্রী!কালো জাদু দিয়ে সব কাজ হাসিল করে নিছিস?”
“হুম।”
রোদ ঝগড়া না করার পূর্ব অবাক হলো।কিন্তু বিষয়টা পূর্ব দেখেও যেনো এড়িয়ে গেলো।
।
।
“তোর কালকে জ্বর ছিলো বলে বিছানায় শুতে দিছি।আজকে কিছুতেই দিবো না।”
“আমি বিছানায় থাকবো মানে থাকবো।”
“আমি কোথায়ই থাকবো তাহলে?”
“আমি কী জানি?গুড নাইট।”
“জাদুমন্ত্রী দিস ইজ টু মাচ।তোকে আমি হেল্প করলাম আর তুই কি’না….”
“সরি রোদ এখন ঘুমিয়ে পড়েছে।”
মুখের উপর ছাদর জড়িয়ে রোদ চোখ বন্ধ করে রাখলো।কান পেতে বুঝার চেষ্টা করলো পূর্ব কী করে?রোদকে অবাক করে দিয়ে পূর্ব বিছানায় তার পাশে শুয়ে পড়লো।তা বুঝতে পেরে রোদ লাফিয়ে উঠলো।চেচামেচি করে রোদ বললো,
“তোর লজ্জা করে না একটার মেয়ের সাথে এক বিছানায় থাকতে?”
“তোর লজ্জা করে না একটা ছেলের সাথে এক বিছানায় থাকতে?”
“এখানে আমি আগে ঘুমিয়েছি।পরে তুই আসলি।”
“আমার কী?গুড নাইট।”
“তোকে আমি…”
রোদ হালকা ধাক্কা দিয়ে পূর্বকে বিছানা থেকে ফেলে দিলো।রেগে গিয়ে পূর্বও একইভাবে রোদকে ফেলে দে।পূর্ব বিছানায় উঠতে গেলে রোদ পেছন থেকে টেনে পূর্বকে সোফায় ফেলে দে।আবার উঠে গিয়ে পূর্ব রোদকে ফেলে দে।দুজন দুজনকে কিছুতেই বিছানায় উঠতে দিচ্ছে না।একজন আরেক জনের দিকে বালিশ ছুড়াছুড়ি করলো।একসময় বালিশের ভিতর থেকে তুলা বেরিয়ে এলো।দুজনের চোখেমুখে তুলা লেগে গেছে।কিন্তু তবুও কেউ থামছে না।এমন করতে করতে রাতের একটা বেজে গেলো।শেষ পর্যন্ত দুজনের চোখের পাতা যখন নিবুনিবু তখন একজন আরেকজনের গায়ের উপর পা তুলে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো মাটিতে।কারণ কেউ কাউকে বিছানায় উঠতে দিচ্ছিলো না।
।
।
সকাল বেলা পাখির কিচিরমিচির শব্দে রোদের ঘুম ভাঙ্গলো।চোখ মেলতেই গত দিনের মতো নিজেকে পূর্বের বাহুডোরে আবিষ্কার করলো।মাথায় হাত দিয়ে রোদ আশেপাশে তাকিয়ে গতরাতের কথা মনে করতে লাগলো।চারপাশটা তুলায় সাদা হয়ে আছে।মুখের ভিতর আঁশযুক্ত কিছু অনুভব হওয়ায় “ফুওও” করলো।তখন মুখ থেকে থুতুতে ডুব দেওয়া কিছু তুলা বেরিয়ে এলো।পাশের তাকিয়ে দেখলো পূর্বের পুরা শরীর সাদা তুলা ঘিরে রেখেছে।দেখেই রোদ ফিক করে হেঁসে দিলো।
ঝুনঝুনির মতো খিলখিল হাসির শব্দে পূর্ব চোখ মেললো।পাশ ফিরে তাকাতেই দেখলো রোদ হেসেই চলেছে।পূর্ব রোদের ঠোঁট দুটা হাত দিয়ে চেপে ধরলো।হাসতে না পেরে রোদ “উমম,উমম” করছিলো।রোদকে এভাবে রেখেই পূর্ব শরীরে তুলা পরিষ্কার করলো।হঠাৎ রোদ পূর্বের হাতে চিমটি দিলো।ব্যাথা পেয়ে পূর্ব রোদকে ছেড়ে দিলো।
“সারারুমের কী অবস্থা করছিস দেখ পেত্নী!”
“সব তুই করছিস।”
“তোর জাদু দিয়ে তুই করছিস।”
“তুই।”
“তুই”
“তুই”
“আমি?”
“আমি।”
কথা বলে রোদ নিজেই বোকাবনে গেলো।পূর্ব দাঁত দেখিয়ে হাসলো।রোদ উঠে গিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেলো।তখন হঠাৎ রোদের মেবাইল ফোনটা মেসেজের টোনে বেজে উঠলো।পূর্ব মজার ছলে রোদের মোবাইলের দিকে তাকাতেই দেখলো একটি আননোন নাম্বার দেখে মেসেজ এসেছে,”শুভ সকাল।”মেসেজটা দেখে পূর্বের ভ্রু-কুচকে হাসি থেমে গেলো।নিজের অজান্তেই পূর্ব রোদের মেসেজ বক্স চেক করলো।
[চলবে]