পূর্ণিমা_সন্ধ্যায় পর্ব_৩৪

0
965

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_৩৪
#লেখিকাTasneem Tushar

তিয়াশাকে বাংলাদেশে ফেলে রেখে আফরান চলে যাওয়ার প্রায় একমাস হয়ে যায়। এই এক মাসে আফরান একবারও তিয়াশাকে ফোন দেয়নি। এদিকে তিয়াশার ইউনিভার্সিটিতে নতুন সেমিস্টারের ক্লাসও শুরু হয়ে যাবে। তিয়াশা এখন মরিয়া প্রায় ফিরে যাবার জন্য আমেরিকাতে। তিয়াশার শশুরবাড়ির লোকজনের সাথে আফরানের রোজই কথা হয়, কিন্তু তিয়াশা তাদের কাছ থেকে ফোন চেয়েও আফরানের সাথে কথা বলতে পারেনা। ঘরবন্দি হয়ে দুঃসহ যন্ত্রনায় ভুগছে সে। ভূগবেই না কেন? প্রতিনিয়ত শশুরবাড়ির মানুষেরা যে তিয়াশার বেঁচে থাকা দুর্বিষহ করে তুলেছে নানা ভাবে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করে।

*“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন


অন্যদিকে আফরান আমেরিকায় পৌঁছলে তিয়াশার মা নীলিমা হাবিব অনেকবার জিজ্ঞাসাবাদ করেও কোন উত্তর পায়না আফরানের কাছে যে কেন তিয়াশাকে নিয়ে আসা হয়নি। বরং আফরান বলেছে তিয়াশা স্বেচ্ছায় ফিরে আসেনি। নীলিমা হাবিব আফরানের বাবা মাকে ফোন দিলেও কোনো সদুত্তর পায়না। এদিকে তার ছোট দুই ছেলেমেয়েকে রেখে নিজে বাংলাদেশে যাবে সেই সুযোগও নেই। সেই সাথে আফরানের দুর্ব্যবহারও নীলিমা হাবিবের সহ্যের সীমা অতিক্রম করতে থাকে।

একদিন নীলিমা হাবিব তার এক পরিচিতের মাধ্যমে জানতে পারে আফরান অন্য কারো সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে। সেদিন আফরান বাড়িতে ফিরলে নীলিমা হাবিব বেশ রাগারাগি করে এবং বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলে। আফরান তখন উল্টো নীলিমা হাবিবকে চাপ দেয় তারা যেই বাড়িটিতে থাকে সেটা যেন আফরানের নামে লিখে দেয় এবং এই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। যদি না লিখে দেয় তাহলে তিয়াশা বিপদে পড়বে।

নীলিমা হাবিব ভেবে পায়না কি করবে? একদিকে তার মেয়ে তিয়াশা আর অন্যদিকে তার স্বামীর কষ্টের উপার্জনে কেনা এই বাড়িটি। নীলিমা হাবিব আফরানকে জানায় বাড়িটি লিখে দিবে এবং কিছু সময় চায়। তারপর খুব সাবধানে বাংলাদেশে তার এক আত্মীয়ের সাথে যোগাযোগ করে এবং সেই আত্মীয়ের সাহায্যে অনেক চড়াই উৎরাই পার করে তিয়াশা সক্ষম হয় আমেরিকান দূতাবাস থেকে তার পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে।

আফরান তিয়াশাকে বাংলাদেশে রেখে যাবার প্রায় তিনমাস পরে জীবন মরণ সংগ্রাম করে বহু কষ্টে তিয়াশা আমেরিকাতে পৌঁছায়। এত কিছুর পরেও তিয়াশা বাসায় পৌঁছে ভাবে আফরানের সাথে দেখা হলে আফরান তাকে দেখে খুশি হবে। হয়তো বুঝিয়ে আবার নতুন করে শুরু করতে পারবে।

কিন্তু না, সুখ তিয়াশার কপালে নেই। তিয়াশাকে দেখে প্রচন্ড রেগে যায় আফরান এবং দুর্ব্যবহার করতে থাকে তিয়াশা ও তার পরিবারের সাথে। তিয়াশাকে বলে তাদের বাড়ি আফরানের নামে লিখে দিতে নাহয় ডিভোর্স দিবে তাকে। তিয়াশা অনেক চেষ্টা করে আফরানকে বোঝানোর। কিন্তু বিধিবাম, আফরান অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে, এখন আর সে বোঝার পাত্র নয়।

তিয়াশা ধীরে ধীরে জানতে পারে আফরানের সাথে একাধিক মেয়ের সম্পর্ক এবং একদিন নিজেই সরাসরি দেখতে পায় তাকে অন্য মেয়েদের সাথে অন্তরঙ্গ অবস্থায়। আফরানের সাথে আবারও কথা কাটাকাটি হয় এ বিষয় নিয়ে এবং সে মোটেও অনুতপ্ত নয় তার কৃতকর্মের জন্য। দিন রাত কাঁদতে থাকে তিয়াশা, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে থাকে যেন সবকিছু ঠিক হয়ে যায়।

পুরো বাড়িতে অশান্তি। নীলিমা হাবিব অসুস্থ হয়ে পড়েন, ছোট ভাইবোন দুটোর মুখের দিকে তাকানো যায়না। তিয়াশার পড়াশোনাও এগোয় না। এদিকে আফরান তিয়াশাকে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকে বাড়ি লিখে না দিলে তাকে ডিভোর্স দিবে। তিয়াশা আর সহ্য করতে পারেনা, দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তার।

কিছুদিন এভাবে কান্নাকাটির পর তিয়াশার বোধদয় হয় যে আফরান তার ও তার পরিবারের জীবনে ক্যান্সার স্বরূপ। সে তার জীবনে থাকলে কখনোই তার পরিবারে শান্তি আসবেনা। বাবাকে হারিয়েছে অনেক আগে, এখন মাকে হারাতে চায়না। ছোট ভাই বোন গুলোরও ভবিষ্যৎ আছে। সেই সাথে বাবার ব্যবসা আর বাড়িটাই তাদের শেষ সম্বল, এগুলো একজন লোভীর প্রাপ্য নয়। সেই সাথে তার নিজেকেও নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে, প্রতিষ্ঠিত হতে হবে যাতে নিজের পরিচয় তৈরি করতে পারে।

তিয়াশার সীমাহীন ভালোবাসার কদর যখন আফরান বুঝলনা বরং বারবার সুযোগ নিচ্ছে এবং তারই পরিবার বারবার হেনস্তা হচ্ছে, তখন বুকে হাজার কষ্ট চেপে রেখে আফরানকে ডিভোর্স দিতে বাধ্য হয় তিয়াশা। আর এভাবেই সমাপ্তি ঘটে আফরান আর তিয়াশার বিবাহিত জীবনের।

কিন্তু জীবন থেমে থাকে না, তিয়াশার জীবনও আবার চলতে শুরু করে। তিয়াশা মনোযোগী হয় আবার পড়াশোনায়। ধীরে ধীরে তিয়াশা ও তার পরিবারের উপর থেকে আফরান নামক কালো ছায়াটা সরে যায় এবং তাদের জীবন যাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে থাকে। আপাতদৃষ্টিতে স্বাভাবিক মনে হলেও তিয়াশার জীবনে যেই গভীর ক্ষত হয়েছে তা এখনো মাঝে মাঝে তাকে পোড়ায়।

*

তিয়াশা চোখ মুছে তাকিয়ে দেখে আদিলের চোখেও জল।

“আপনি কাঁদছেন কেন?”

আদিল চোখ মুছে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,

“নাহ আর কাঁদবনা। আর আমার পরীটাকেও কাঁদতে দিবোনা।”

আদিল তার হাতটা বাড়িয়ে দেয় তিয়াশার দিকে,

“আমি কী বলবো ঠিক বুঝতে পারছি না, শুধু এতটুকুই বলবো যে তোমার জীবনে যা ঘটেছে, তুমি তার প্রাপ্য নও। এবং অন্য কারো জীবনেও যেনো এত খারাপ অভিজ্ঞতা না দেয় আল্লাহ।”

তিয়াশা আদিলের হাতটা ধরে বলে,

“আসুন আমার সাথে। আপনি একেতো অসুস্থ আর এখন কেঁদে কেটে কি অবস্থা করছেন। আপনি গোসল সেরে নিন। বাকি কথা পরে হবে। চলুন তো।”

আদিল বাধ্য ছেলের মতো তিয়াশাকে অনুসরণ করে।

চলবে…

আগের পর্ব: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/947465892350797/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে