পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_৩৩
#লেখিকাTasneem Tushar
সে বছরই শীতে ঘরোয়া ভাবে তিয়াশা ও আফরানের বিয়ে হয়ে যায়। বেশ হাসি খুশিতেই কাটছিল তাদের সংসার। আফরান যেন তিয়াশাকে সবকিছুতে আগলে রাখে ও প্রচুর কেয়ার করতে থাকে। আফরানের অফুরন্ত ভালোবাসায় সিক্ত হয় তিয়াশা। আফরানের প্রতি তিয়াশার ভালোবাসা পরিণত হয় অন্ধ ভালোবাসায়।
ছয় মাস পর তিয়াশা ও আফরানের জন্য ভীষণ খুশির একটা দিন আসে। বিয়ের পরপরই আফরান পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি পাবার জন্য আবেদন করেছিল। যেহেতু আফরান তিয়াশাকে মানে একজন মার্কিন নাগরিককে বিয়ে করে তাই ছয়মাস পরেই পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি কার্ড পেয়ে যায় এবং জবের জন্য আবেদন করলে একটি ভালো জবও পেয়ে যায়। তাদের সংসারে নামে খুশির জোয়ার।
ধীরে ধীরে আফরান ব্যস্ত হয়ে যায় কাজে। তিয়াশাকে আগের মতো আর সময় দিতে পারেনা। তিয়াশাও মেনে নেয় যেহেতু আফরান দিনরাত খেটে কাজ করে তাই সেও নিজেকে অভ্যস্ত করে নেয় তাতে এবং নিজের পড়াশোনায় মনোযোগ দেয়।
একদিন রাতে আফরান বাসায় ফিরে দেখে তিয়াশা পড়াশোনা করছে। বেশ কয়েকবার ডাকলে তিয়াশা তাড়াহুড়ো করে আফরানের সবকিছু গুছিয়ে, সাথে খাবার তৈরি করে দিয়ে এসে আবার পড়তে বসে, কারণ পরদিন তার সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা। আফরান হঠাৎ এসে তিয়াশাকে অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করতে থাকে তিয়াশার চরিত্র নিয়ে, যে সে পড়াশোনার নামে ইউনিভার্সিটিতে ছেলেদের সাথে ঘনিষ্ঠ হয় তাই তার স্বামী রাতে ঘরে ফিরলে তাকে সময় দেয়না তিয়াশা। তিয়াশা ভীষণ কষ্ট পায় আফরানের মিথ্যা অপবাদে। প্রতিবাদ করতে গেলে আফরান গায়ে হাত তুলে বসে তিয়াশার।
কিছুদিন পরপরই এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকে যখন তিয়াশা রাতে পড়তে বসে। তিয়াশা কাউকে কিছু না জানিয়ে মুখ বুজে সব সহ্য করে যায় ভালোবাসার খাতিরে। ভাবে আফরানের উপর দিয়ে কাজের অনেক স্ট্রেস যাচ্ছে তাই হয়তো রাগ করছে। হয়তো সময়ের সাথে সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো আফরান তিয়াশার সাথে খারাপ ব্যবহার করেও এর জন্য কখনো অনুতপ্ত বোধ করেনা। তিয়াশা বুকের চাপা কষ্ট নিয়েই ধীরে ধীরে চেষ্টা করে আফরান বাড়ি ফেরার আগেই পড়াশোনা, এসাইনমেন্ট সব সেরে রাখতে। কিন্তু আফরানের রাত করে বাড়ি ফেরার মাত্রা দিনকে দিন বাড়তে থাকে। তিয়াশা জানতে চাইলে তাকে আরও অকথ্য ভাষায় কথা শোনায়। অল্পতেই গায়ে হাত তোলে।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
আফরানের প্রমোশন হয়। এরপর নতুনভাবে শুরু হয় আফরানের অফিস শেষে কলিগদের সাথে বার-এ হ্যাংআউট করা আর মধ্যরাতে ড্রিংকস করে বাড়ি ফেরা। পশ্চিমা সংস্কৃতিতে গা ভাষায় আফরান এবং দিনকে দিন উগ্র ও উশৃঙ্খল হয়ে উঠতে থাকে। তিয়াশা মধ্যবিত্ত ঘরের মুসলিম বাঙালি মেয়ে, তাই এসব মেনে নিতে কষ্ট হলেও আফরানের প্রতি ভালোবাসা তার যেন কমেনা। আফরানকে আগের মতো করে পেতে দিনরাত চেষ্টা করে। তিয়াশা চেষ্টা করে আফরান যেন ড্রিংকস করা ছেড়ে দেয়। তার ভালোবাসায় আস্তে আস্তে আফরানও কিছুটা আগের মতো তিয়াশাকে কেয়ার করতে শুরু করে।
তিয়াশা তাতেই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানায় এবং অসম্ভব খুশি হয় তার ভালোবাসার মানুষটিকে আংশিক ভাবে হলেও ফিরে পেয়েছে সে জন্যে।
এভাবে যখন তাদের তিন বছর পার হয়ে তাদের জীবনে আরও একটি খুশির দিন আসে। আফরান সিটিজেনশিপ পেয়ে যায় আমেরিকার। এখন সেদেশের যেকোনো কাজ অথবা বিজনেস দাড় করাতে তার কোনো সমস্যা নেই। আমেরিকার নাগরিক হয়ে এখন সে সেই দেশের সব সুযোগ সুবিধাই পাবে। ধীরে ধীরে একটি বিজনেস দাড় করায় আফরান এবং খুব অল্প সময়েই দ্রুত সাফল্য লাভ করতে থাকে।
আফরানের মাঝে আবারও পরিবর্তন দেখা দেয়। সময়ে অসময়ে তিয়াশার সাথে দুর্ব্যবহার করে সেই সাথে সাথে দুর্ব্যবহার শুরু করে তিয়াশার মা ও ভাইবোনদের সাথেও। তিয়াশার মা নীলিমা হাবিবও বেশ কষ্ট পায়, যে ছেলের কোনো লিগ্যাল কাগজ পত্র ছিলোনা তাকে নিজের মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে তার এই দেশে থাকার উপায় করে দেয়, সেই সাথে নিজের বাড়িতে নিজের সন্তানের মতো আদর ও স্নেহ করে রাখে। অথচ সেই কিনা এখন ব্যাবসায়ী হয়ে রাতারাতি লাভের মুখ দেখে তার আচার ব্যাবহারের এত অধঃপতন। তবুও মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আফরানকে কিছু বলেনা নীলিমা হাবিব। বরং তিয়াশাকে বোঝায় যেন আফরানের সাথে আরও সহনশীল হয় এবং আফরানকে তার ভালোবাসা দিয়ে সঠিক পথে নিয়ে আসে। তিয়াশা তার মায়ের কথা মতন চেষ্টা চালিয়ে যায়, কিন্তু এবার যেন কোন কিছুতেই আর কাজ হয়না।
এরই মাঝে হঠাৎ একদিন দেখা যায় আফরান ভীষণ খোশ মেজাজে বাসায় ফিরে, সাথে বাংলাদেশে যাওয়ার জন্য দুটো টিকেট। তিয়াশাও ভীষণ খুশি হয়, বিয়ের পর এই প্রথম শশুর বাড়ি যাবে। তাছাড়া সেখানে পরিবারের সবার সাথে কিছুদিন থাকলে হয়তো আফরানের মাঝেও পরিবর্তন আসবে। লাগেজ গুছিয়ে কিছুদিন পরেই বাংলাদেশের ফ্লাইট ধরে ঢাকায় পৌঁছায় তিয়াশা ও আফরান।
শশুর বাড়িতে যেয়ে বেশ কিছুদিন ভালোই কাটে তিয়াশার। আফরান ও তিয়াশা সেখানে একমাস থাকে। একমাস পর আমেরিকা ফিরে আসার সময় ঘটে বিপত্তি। হঠাৎ দেখা দেয় আফরানের মাঝে পরিবর্তন। সে সাফ জানিয়ে দেয়, তিয়াশা আমেরিকাতে ফেরত যেতে পারবেনা। আফরান আমেরিকাতে ফিরে যাবে আর তিয়াশা বাংলাদেশে আফরানের বাবা মায়ের সাথে থেকে তাদের দেখাশোনা করবে।
তিয়াশা মেনে নিতে পারেনা। যাকে এত ভালোবাসে তাকে ছাড়া থাকবে কিভাবে? আর বিয়ে করেছে একসাথে থাকার জন্য, তবে কেন এখন আফরান তিয়াশাকে রেখে চলে যেতে চাইছে? এমন যদি হতো যে বিদেশে যাবার জন্য তিয়াশার কোনো কাগজ পত্র নেই, তবুও নাহয় তিয়াশার একটা কারণ ছিল বাংলাদেশে থেকে যাওয়ার। আর তিয়াশার পড়াশোনাও বাকি। কিন্তু আফরানকে কোনো ভাবেই বোঝাতে সক্ষম হয়না তিয়াশা। তিয়াশার পাসপোর্ট তার কাছ থেকে নিয়ে নেয় যাতে সে আমেরিকাতে ফেরত যেতে না পারে। শুরু হয় শশুরবাড়ীর মানুষেরও অমানুষিক অত্যাচার। তারাও তিয়াশাকে যেতে দিবেনা।
আফরান তিয়াশাকে জোড় করে বাংলাদেশে রেখেই ফিরে যায় আমেরিকা। এদিকে তিয়াশার পাসপোর্ট ও নেই তার কাছে। কিভাবে উদ্ধার করবে তাও সে জানেনা। সেই ছোটবেলায় আমেরিকায় পাড়ি দিয়েছিল তিয়াশা, বাংলাদেশের কোনো কিছুই সে এখন ভালোমতো চিনেনা। এদিকে শশুরবাড়িতেও শুরু হয়েছে নরক যন্ত্রনা।
তিয়াশা ভেবে পায় না এখন কিভাবে সে আমেরিকায় ফিরবে আফরানের কাছে? তার মা, ভাইবোনের দেখা পাবে কিভাবে?
চলবে…
আগের পর্ব: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/947465892350797/