পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_৩১
#লেখিকাTasneem Tushar
নাদিম মুজদাহীর আদিলকে বাসায় না পেয়ে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছেন। নওরীন মুজদাহীর ঘরের এক কোণায় চুপ করে বসে কাঁদছেন আর আদনান তার বাবাকে থামানোর চেষ্টায় ব্যার্থ হয়ে এখন তর্কে জড়িয়ে গেছে।
“নওরীন, আদিল কোথায় গেছে? কিছু বলে যায়নি কেন? আজ তার সাথে আমার বন্ধুর মেয়ে সুহানির দেখা হওয়ার কথা। কোথায় গেছে সে?”
নওরীন মুজদাহীর চোখ মুছতে মুছতে বলছে,
“ছেলেটার মন ভালোনা। কেমন পাগলামি করছে ক’দিন ধরে। বিয়ে এখন করতে চাইছেনা। কিছুদিন সময় দাও, আমি বুঝিয়ে বলবো।”
“অতশত বুঝিনা। আমার বন্ধুকে কথা দিয়ে দিয়েছি সুহানির সাথেই আদিলের বিয়ে হবে। যদি সম্ভব হয় আলিয়া ও আদিলের বিয়ে একই দিনে সম্পন্ন হবে। কিন্তু আজ আদিলের সুহানির সাথে দেখা করাটা দরকার। আদিলকে যেভাবেই হোক আজকে সুহানির সাথে দেখা করতে পাঠাবে। এর যেন নড়চড় না হয়।”
আদনান আর নিশ্চুপ থাকতে না পেরে বলে উঠে,
“বাবা, ভাইয়ার মনটা কদিন ধরে বেশ খারাপ। প্লিজ ওর মনটা একটু বোঝার চেষ্টা করো। আঙ্কেলের সাথে কথা বলে জানাও যে সুহানির সাথে আরেকদিন দেখা করবে। তাহলেই তো হয়। এত রাগ করো না বাবা।”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
“তুমি কোনো কথা বলবেনা। বেয়াদব ছেলে একটা। আমার কোনো কথাই তো মান্য করোনা। এখন আদিলও কি তোমার পথে পা বাড়িয়েছে? কিসের এত মন খারাপ ওর? এসব কিছু দেখবোনা আমি। যা বলেছি তাই ফাইনাল। আজই আদিল দেখা করতে যাবে।”
আদনান আর নিজেকে সামলাতে না পেরে বলে উঠে,
“নিজেরটা ছাড়া কি তুমি কিছুই বুঝোনা বাবা? চিরটাকাল সব তোমার কথায় হতে হবে। না হলেই তাকে বেয়াদব, অবাধ্য বলে আখ্যায়িত করো। বাসা থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দাও। তুমি ছাড়া পরিবারের আর কাউকে কি তোমার মানুষ মনে হয়না? সবাই কি তোমার হাতের পুতুল? আমি মানলাম আমি অবাধ্য, কিন্তু ভাইয়াতো তোমার খুশির জন্য নিজের স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিয়েছে। তুমি কিসে খুশি হও তার জন্য যা বলেছ তাই করেছে। আজ একটা বার সে তার মন খারাপ প্রকাশ করেছে। তাও মুখে বলেনি। একটাবার তোমার জানতে ইচ্ছে হয়না, তোমার সেই ভালো ছেলেটার কী হয়েছে?”
“আদনান, আর একটা কথাও তুমি বলবেনা। মুখে মুখে শুধু তর্ক করতে শিখেছো। সুহানির সাথে বিয়ে হতেই হবে আদিলের। নাহলে অনেক বড় লোকসান হয়ে যাবে।”
আদনান কিছু বলতে নিবে, তখন নওরীন মুজদাহীর আদনানকে থামিয়ে দিয়ে তার স্বামীকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“ঠিক আছে। তুমি যা বলেছ তাই হবে। আমার ছেলে মরুক বাঁচুক তাতে কার কি? তোমার ব্যবসায় লাভের জন্য ছেলের সুখ বিসর্জন দেয়াবো এবং তোমার মান সম্মান রাখানোর চেষ্টা করবো।”
নাদিম মুজদাহীর কোনো কথা না বলেই রাগে গজগজ করতে করতে ঘর প্রস্থান করে।
*
আদিল ও তিয়াশা বসে আছে মুখোমুখি নাস্তার টেবিলে। তিয়াশা সকালের নাস্তা তৈরি করবে কি, সকাল বেলা উঠে দেখে টেবিলে নাস্তা তৈরি এবং সে আদিলের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে। তিয়াশা খাবার এগিয়ে দিয়ে, নিজের প্লেটে খাবার নিতে নিতে বলে,
“আপনি তো বললেন না, আমি কিভাবে সোফায় গেলাম? আর আপনি কখন নাস্তা তৈরি করলেন? কিছুই তো উপলব্ধি করতে পারলাম না।”
আদিলের চোখে মুখে এখনো অসুস্থতার ছাপ। মুখে ম্লান হাসি টেনে এনে বলে,
“আমি সোফায় আরামে শুয়ে আছি, আর আমার প্রাণ পাখিটা মাটিতে বসে আছে, কষ্ট করছে, সে আবার আমারই কারণে, সেটা আমি কিভাবে সহ্য করি বলো?”
“তাই আপনি নিজে উঠে আমাকে শুইয়ে দিলেন আপনার জায়গায়? আপনি অসুস্থ ছিলেন, আমি তো হয়নি।”
“এত কষ্ট করলে তুমিও অসুস্থ হতে আর কতক্ষন? তাই তুমি যাতে অসুস্থ না হও তার আগেই তোমার খেয়াল রাখলাম।”
“আপনি তো আচ্ছা পাগল?”
“হুম তোমার জন্য। আমার ঘুমন্ত পরীটির মায়ামাখা মুখটি দেখতে যেই সুখ সেটা থেকে বঞ্চিত হতে চাইনি।”
তিয়াশা একটু লজ্জা পেয়ে কথা এড়িয়ে বলে উঠে,
“আর সকালের নাস্তা? আপনি আমার বাসায় অতিথি আর আপনি কেন তৈরি করলেন? সবচেয়ে বড় কথা এই অসুস্থ অবস্থায়?”
আদিল এবার হেসে দিয়ে মজা করে বলে,
“উম, আসলে… তোমার হাতের রান্না খুব একটা মজা না।”
তিয়াশা মুখ হা করে বড় বড় চোখ করে তাকায়। আদিল তিয়াশার অবস্থা দেখে হেসেই খুন।
“মজা করছি বাবা। এমন সুযোগ আর কবে পাবো তাতো জানিনা। ভাবলাম পেয়েই যখন গেছি, আমার ঘুমকুমারী ঘুমোক আর আমি এই ফাঁকে তাকে একটা সারপ্রাইজ দেই। তুমি খুশি হওনি?”
“না মোটেও খুশি হইনি। হতাম যদি আপনি সুস্থ থাকতেন। আর আমি যদি আপনার বাসার অতিথি হোতাম তাহলে।”
“যাবে আমার সাথে? আমাদের বাড়িতে? অতিথি হয়ে নয়, সেই বাড়ির রানী হয়ে। রাজরানী করে মাথায় তুলে রাখবো তোমায়। ওয়াদা করছি।”
তিয়াশা বিষম খেয়ে কেশে উঠে। আদিল তিয়াশার দিকে পানি এগিয়ে দিলে তিয়াশা ঢকঢক করে পানি পান করে নেয়। আদিলের কথা গুলো যেন সব বিশ্বাস করতে মনে চায় তিয়াশার। কিন্তু সে এসব স্বপ্নে আর বিশ্বাস করেনা। ঢের হয়েছে, মিষ্টি কথার ফাঁদে পড়েছে এবং তার মূল্য জীবন দিয়ে দিয়েছে। এখন মিষ্টি কথায় ভোলার মেয়ে নয় তিয়াশা।
পৌষী সেকেন্ড ফ্লোর থেকে নিচে নেমে বাইরে যেতে যেতে তিয়াশাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“আপি, আমি আর ইশরাক একটু লাইব্রেরিতে যাচ্ছি। চলে আসব শীঘ্রই।”
“আচ্ছা, ঠিক আছে যা। সাবধানে যাস। আর তাড়াতাড়ি ফিরে আসবি কিন্তু।”
“ঠিক আছে।”
তারপর পৌষী আদিলকে উদ্দেশ্য করে এক চোখ টিপে বলে উঠে,
“ভাইয়া, ইটস এ চান্স ফর ইউ…। বাই দা ওয়ে, আজ কিন্তু আপনি কোথাও যাচ্ছেন না। বাসায় এসে যেন দেখতে পাই আপনাকে। দুপুরে একসাথে খাবো। বাই ফর নাও।”
আদিল ও হেসে হাত নাড়িয়ে বিদায় জানায় পৌষীকে। পৌষী যাওয়ার সাথে সাথেই আদিলকে জিজ্ঞেস করে তিয়াশা,
“কিসের চান্সের কথা বললো ও আপনাকে?”
“ও…ও তুমি বুঝবেনা। এসব ছোট মানুষদের বুঝতে নেই।”
তিয়াশা উঠে কিচেন গুছাতে থাকলে আদিল ও তিয়াশার সাথে কাজে হাত লাগায়। এবার তিয়াশা রেগে যেয়ে বলে,
“আপনি কি বসবেন?”
“আপনার পাশে থাকতে যে ভালো লাগছে।”
“এতো ভালো লাগতে হবে না।”
তারপর হাত ধরে টেনে নিয়ে আদিলকে সোফায় জোর করে বসিয়ে দিয়ে কপালে হাত দিয়ে জ্বর মেপে বলতে থাকে,
“জ্বর এখনো আছে।”
জ্বরের ঔষধ ও পানি দিয়ে আদিলকে বলে খেয়ে নিন। আদিল তখন বলে উঠে,
“আমি তো অসুস্থ, খাইয়ে দাও।”
তিয়াশা অগত্যা খাইয়ে দিয়ে বলতে থাকে,
“একদম উঠবেন না এখান থেকে। আমি হাতের কাজ সেরে চা নিয়ে আসছি।”
বলেই চলে যেতে নিলে আদিল তিয়াশার হাত টেনে ধরে নিজের গালে স্পর্শ করিয়ে বলে,
“প্লিজ, তাড়াতাড়ি এসো।”
তিয়াশার গায়ে শিহরণ বয়ে যায়। হাত সরিয়ে নিয়ে মনে মনে ভাবে নাহ এই অনুভূতি আর বাড়তে দেয়া যাবেনা। গড়া যাবেনা কোনো সম্পৰ্ক। আদিলকে এখান থেকেই ফেরাতে হবে, আর এর জন্য তাকে সত্যিটা বলে দিলেই ভালো। হুম আজই সে সবকিছু বলে দিবে আদিলকে।
চলবে…
আগের পর্ব: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/947465892350797/