পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_২৫
Tasneem Tushar
তিয়াশা প্রাণপনে হাত পা ছুড়ছে। মনে হচ্ছে কেউ টেনে হিঁচড়ে তাকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে যাচ্ছে। এবার বোধহয় জমেই টেনে নিবে। এ যাত্রায় তিয়াশা বোধ হয় আর বেঁচে বাড়ি ফিরবেনা। কেউ তাকে বাঁচাতেও আসবেনা। একেবারেই নিরাশ হয়ে যায় তিয়াশা।
হঠাৎ চোখে একরাশ আলোর ঝলকানি এসে লাগে। হঠাৎ এত আলোয় চোখ ঝলসে যাওয়ার অবস্থা, সব কিছু ঝাপসা লাগছে। আলো ঠেকাতে চোখের সামনে আপনা আপনি তার হাতটা চলে যায়, তখন তিয়াশা বুঝতে পারে যে তার চোখের সেই বাঁধন আর নেই, মুখেও কারো হাত চেপে ধরে নেই। মনের মধ্যে বাঁচার একটা আশা জেগে ওঠে তিয়াশার, অমনি অন্ধের মতো সামনের দিকে দৌড় দেয়। তার মনে এখন একটাই চিন্তা, যেভাবেই হোক দুর্বৃত্তদের হাত থেকে পালাতে হবে।
কিন্তু হুট করে দৌড়াতে যেয়ে কিছু একটার সাথে হোঁচট খেয়ে আচমকা পড়ে যেতে নেয় সে। ঠিক তখনই আবার কে যেনো তাকে ধরে ফেলে। তিয়াশার হৃদপিন্ড যেন ড্রাম পিটাচ্ছে। নাহ শেষ রক্ষা আর বুঝি হলোনা, সব শেষ। এসব যখন ভাবছে ঠিক সেই মুহূর্তেই শুনতে পায় সম্মিলিত চিৎকারে পুরো বাড়ি প্রতিধ্বনিত হচ্ছে,
“হ্যাপি বার্থডে টু ইউ…
হ্যাপি বার্থডে টু ইউ
হ্যাপি বার্থডে ডিয়ার তিয়াশা
হ্যাপি বার্থডে টু ইউ!!!”
ভুল শুনছেনা তো তিয়াশা? তীব্র আলো এখনো চোখে বিধছে, এখনো ঝাপসা দেখছে। ঝাপসা দৃষ্টিতে মনে হলো সামনে অনেক গুলো মানুষ। নাহ হ্যালুসিনেশন হচ্ছে বোধহয়। এই নির্জন বাড়িতে এত মানুষ কোথা থেকে আসবে এখন? আর বার্থডে কিসের? কার?
অতি দ্রুত ঘটছে যেন সবকিছু। তিয়াশার সারা শরীরে এবার একটা ঝাঁকুনি খায়। তখনই মনে পড়ে যে সে পড়ে যেতে নিলে কেউ তাকে ধরে ফেলে। এবার মুখ তুলে তাকাতেই এক ঝলক দেখে মনে হলো সে আদিলকে দেখতে পেলো। এইবার পেয়েছি তাকে, ভেবেই রাগে ক্ষোভে এলোপাতাড়ি কিল ঘুষি দিতে থাকে সমানে।
“আরে বাবা! কি হয়েছে? থামো, থামো!”
তিয়াশা মুখ তুলে তাঁকিয়ে কিছু বলতে নিবে খেয়াল করে সামনে আসলে আদিল নয় আদনান দাঁড়িয়ে। দুই ভাইয়ের চেহারাতে মিল থাকার কারণে আলো আঁধারিতে গুলিয়ে ফেলেছিল সে। কিছুক্ষন স্তম্ভিত হয়ে থাকে, তারপর আদনানকেই আবার পিটাতে শুরু করে। উপস্থিত সবাই হেঁসে যাচ্ছে তিয়াশার কান্ড দেখে। আদনান আহ্.. ওহ্.. করতে করতে কোনরকমে বলে,
“বাপরে, বার্থডে গার্লের হাতে মাইর খাবো সেটা তো চিন্তাও করিনি।”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
আদনান হাত দিয়ে তিয়াশার মাইর ঠেকানোর চেষ্টা করছে আর এদিক ওদিক তাকিয়ে কি যেন খুঁজছে। একটু পর আদিলকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“ভাই, দেখ তোর জন্য এখন আমার মাইর খেতে হচ্ছে।”
আদিল স্মিত হাসে,
“কেমন লাগছে মাইর খেতে? মাইর তো খাওয়াই উচিৎ তোর।”
“আ..আমি কি করলাম? আমি তো শুধু সারপ্রাইজ দিব বলেছি। বাকি তো সব…”
তিয়াশা এবার থামে। আদনানের চোখ অনুসরণ করে তাকিয়ে দেখে আদিল দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসছে। তিয়াশা চোখ গরম করে আদিলের দিকে তাকায়, তাতে হাজার অভিমান স্পষ্ট।
তৎক্ষণাৎ তিয়াশার ছোট বোন ও ভাই ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে,
“হ্যাপি বার্থডে আপি।”
এবার কিছুটা সম্বিত ফিরে পায় তিয়াশা। এত সব আয়োজন ওর জন্মদিন উপলক্ষে করছে সবাই, আর কি ভয়টাই না পাচ্ছিলো ও এতক্ষণ!
হাতের মোবাইল ফোনটা তিয়াশাকে ধরিয়ে দেয় পৌষী,
“এই নে কথা বল।”
তিয়াশার মা নীলিমা হাবিব তখন ভিডিও কলে ছিলেন, তিয়াশাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
“হ্যাপি বার্থডে সোনা বাচ্চা আমার। তোর জন্য অনেক দোয়া মা। আল্লাহ তোর জীবনটা সুখে ও শান্তিতে আবার ভরে তুলুক।”
“ধন্যবাদ আম্মু। তুমি কোথায়?”
“আমি কাজে আছি। ব্যস্ততার কারণে আসতে পারিনি। তোরা আনন্দ কর।”
“তুমি জানো মা কি হয়েছে?”
“কি হয়েছে, বল?”
“ওরা যা করেছে আজ…”
নীলিমা হাবিব মুখ চেপে হেসে যাচ্ছে।
“আমি তো জানি।”
তিয়াশা হা করে তাকিয়ে থাকে মায়ের কথা শুনে। একটু অভিমান করে বলে,
“তুমি জানো? তাহলে আমাকে কেন জানাও নি?”
“যাহ বোকা মেয়ে, বলে দিলে কি আর সারপ্রাইজ হতো?”
“শুধু সারপ্রাইজ? আজ তো মনে হয় ম..রে..”
কথা শেষ করতে পারেনি তিয়াশা, তার আগেই পৌষী এসে হাত থেকে ফোন নিয়ে তার মাকে বলে,
“মা, লাভ ইউ। পরে কথা হবে। এখন আমরা একটু পার্টিটা উপভোগ করি। তোমাকে খুব মিস করছি মা।”
“আচ্ছা, সাবধানে থাকিস। দুষ্টুমি করিস না। পানিতে বেশি লাফালাফি করিস না।”
“আচ্ছা। তুমিও সাবধানে থেকো। রাখি। আল্লাহ হাফেজ।”
বলেই দ্রুত ফোনটা কেটে দেয় পৌষী। ম্যাথিউ, আদনান, প্যাট্রিসিয়া ও আরো চার পাঁচজন বন্ধু বান্ধব সবাই তিয়াশাকে নিয়ে বার্থডে পার্টিতে মেতে উঠে। তিয়াশাও সে আনন্দের জোয়ারে ভাসে সবার সাথে মিলে। তিয়াশা কল্পনাও করেনি যে ওর জন্মদিনে এতো চমক পাবে সে, সত্যি বলতে কি ও নিজেরই খেয়াল ছিল না যে আজকে ওর জন্মদিন। অনেক অনেক বছর পর ওর জন্মদিন এত উচ্ছাস নিয়ে উদযাপন করা হচ্ছে, আর সেও অনেক দিন পর তাই প্রাণ খুলে হাসছে। বুকে জমে থাকা কষ্টের ভারী পাথরটা যেন নিমিষে মিলিয়ে যাচ্ছে।
তিয়াশার এই হাসি মাখা মুখ, প্রাণচঞ্চলতা আদিল শুধু দূরে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে অবলোকন করছে।
“কিরে ভাইয়া, আয় এদিকে। সবার সাথে যোগ দে।
আদনানের কথায় সংবিত ফিরে পায় সে। তারপর সেও যোগদান করে। অনেক খাওয়া দাওয়া হয়। রাত জেগে বন্ধুরা মিলে কার্ড গেম উনো, মিউজিক পিলো, কাগজের চোর-পুলিশ খেলে। খেলতে খেলতে কখন যে গভীর রাত হয়ে যায় কে জানে।
এই পুরোটা সময় তিয়াশা সবার সাথে হাসি আনন্দে মেতে থাকলেও আদিলকে এড়িয়ে চলে। যদিও আদিল অনেকবার চেষ্টা করেছে খেলার মাঝে মজা করে তিয়াশার সাথে স্বাভাবিক হতে। একেকবার তিয়াশাও গেইম খেলার মাঝে দুষ্টুমি, খুনসুটি করেছে, আবার পরক্ষনেই আদিলকে দেখে না দেখার ভান করেছে।
আদিল তিয়াশার বাচ্চামিতে বেশ মজাই পাচ্ছে। তিয়াশা এই মজা করছে তো এই অভিমান চেহারায় প্রকাশ পাচ্ছে। আদিল জানে তিয়াশা ভীষণ রাগ করেছে। যা ঘটেছে তাতে রাগ হবারই কথা।
আদিল আনমনেই মুচকি হাসে তারপর, আদনানকে উদ্দেশ্য করে আদিল বলে উঠে,
“তোরা আনন্দ কর। আমার ঘুম পাচ্ছে। আমি যাই।”
“ভাইয়া ঐদিকে কোথায় যাস?”
“ওহ”
আদিলের খেয়াল হয় সে বাইরে যাওয়ার দরজা খুলে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তারপর বলে,
“ওই, আমাদের রুম তো ওদিক টাতেই। ভুলে গেছিস?”
“উপস, আসলেই তো। আচ্ছা যা।”
আদিল চলে যায়। তিয়াশা আড় চোখে একবার দেখে নেয় যে আদিল চলে যাচ্ছে। একবার মনে মনে খুশি হয় আদিল চলে যাচ্ছে, আবার মনটাও যেন কেমন করে উঠে। এ কেমন টানাপোড়েন? যাই হোক, ভীষণ অভিমান হয়েছে তার আদিলের প্রতি, সেই সাথে হাজারো প্রশ্ন। যদি কষ্টও হয় তারপরেও কথা বলবনা এই পণই করে তিয়াশা মনে মনে। অনেক ভোগান্তি দিয়েছে আজকে আদিল। তার শাস্তি তাকে পেতেই হবে!
এদিকে আদিল রুম থেকে বেরিয়ে একবার জানালা দিয়ে তিয়াশাকে দেখে নেয়। ঠোঁটে তার রহস্যের হাসি। মনে মনে কিছু একটা ফন্দি আটছে আবার কোনো।
কী ফন্দি করছে আদিল? আবারও কি তিয়াশাকে বিপদে ফেলবে? নাকি অভিমান ভাঙ্গাবে? আদিল কি পারবে তিয়াশার মান ভাঙাতে?
চলবে…
আগের পর্বের লিংক:
পর্ব ২৪: https://www.facebook.com/107665540875368/posts/138964491078806/