পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_২১
Tasneem Tushar
“সুহানি।”
সুহানি খুশি হয়ে যায়, বোধ হয় আদিল তার মনের কথাটি বলার জন্যই তার নাম ধরে ডেকেছে। সুহানি পুলকিত হয়ে দ্রুত বলে উঠে,
“হুম, বলনা।”
“আমি একটু আসছি। তুমি বস।”
“উত্তর দিলে না?”
“একটু… একটু আসছি রেস্টরুম থেকে। এসে বলি?”
কথা শেষ করেই আদিল দ্রুত সুহানির সামনে থেকে সরে আসে। পকেট থেকে ফোন বের করে বার বার কল দিয়েই যাচ্ছে একটি নাম্বারে, কিন্তু অপর পাশ থেকে ফোনটি রিসিভ করছেনা। আদিল অধর্য্য হয়ে পায়চারি করছে ফোন ধরছেনা দেখে। দশ মিনিট চেষ্টা করার পর ফোন ধরলে আদিল চেঁচিয়ে উঠে,
“এই ফাজিল, কি কথা ছিল তোর সাথে আমার?”
ফোনের অপরপাশ থেকে আদনান সজোরে হেসে বলে,
“শান্ত হও ভাই। কি হয়েছে?”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
“কি হয়নি? এক ঘন্টা যাবৎ এখানে বসে আছি। তোকে না বলেছি সুহানির সাথে দেখা করার আধা ঘন্টার মধ্যেই আমাকে ফোন দিয়ে জরুরি কাজ আছে বলে তাগাদা দিবি?”
“রিলেক্স ভাইয়া। আমি তো কল করতামই।”
“কখন করতি? আমি শহীদ হয়ে গেলে?”
“কি ব্যাপার ভাইয়া? হবু ভাবী কি তোমাকে ঘায়েল করে ফেললো নাকি?”
“ওই, কিসের হবু ভাবী?”
“আরে বাবা মজা করছি। তুমি যাও আমি দশ মিনিটের মধ্যে কল করছি।”
“দশ মিনিট কেন? দুই মিনিটের মাঝে কল করবি।”
“ম্যাথিউ এর সাথে একটা জরুরি বিষয়ে কথা বলছিলাম। ওর সাথে বাকি কথাটুকু সেরেই তোমাকে কল দিচ্ছি।”
“ওর সাথে পরে কথা বলিস। আগে আমাকে উদ্ধার কর।”
“উফ! ভাইয়া, একটা পরিকল্পনা করছিলাম আমরা। আর এর মাঝেই তুমি ফোন দিয়ে বারোটা বাজালে।”
“কিসের পরিকল্পনা?”
“আছে, একটা সারপ্রাইজ প্ল্যান।”
“কিসের প্ল্যান? জলদি বল।”
“আচ্ছা বলবো পরে। আগে কথা সেরে নেই ম্যাথিউ এর সাথে।”
“ওই, তুই আগে আমাকে কল দিয়ে এখান থেকে বের কর। আমি…” একটু ভেবে আদিল আবার বলে উঠে, “আমি তাহলে তোর প্ল্যানে সাহায্য করবো।”
“সত্যি? তোমাকে আসলে লাগতো… প্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য…।”
“আমি তো জানি আমাকে ছাড়া কিছু করতে পারিস না তুই।”
“হুম, এই সাহায্যের জন্য তো আবার ভর্তুকি ও দিতে হয়।”
“আরে বাপ, এখান থেকে উদ্ধার কর। কোনো ভর্তুকি দিতে হবেনা।”
আদনান বেশ খুশি হয়ে যায় এবং বলে উঠে,
“আর ইউ শিওর? ওকে, যাও আমি এখুনি তোমাকে কল করে তোমার প্রাণ ভ্রমরার হাত থেকে রক্ষা করছি তোমাকে।”
*
দুপুর দুইটা। তীব্র রোদ।
তিয়াশা ম্যাকডোনাল্ডে সকালের শিফটের কাজ সেরে ড্রেস পাল্টিয়ে বের হয়ে মেইন রোডে দাঁড়িয়ে আছে, উদ্দেশ্য উবার কল করবে। তীব্র রোদ হওয়ার দরুন সে চোখে সানগ্লাস আর মাথায় পাতলা স্কার্ফ দিয়ে মুখ ঢেকে আছে।
হঠাৎ তার সামনে একটি গাড়ি সজোরে এসে ব্রেক কষে। আচমকা (লেখিকা-তাসনীম তুষার) গাড়ি সামনে চলে আসাতে তিয়াশা ভয় পেয়ে লাফ দিয়ে পেছনে সরে যায়। হৃদপিন্ড যেন খুলে বের হয়ে আসবে তার। হাপাতে থাকে সে, তারপর গাড়ি চালকের উদ্দেশ্যে চেঁচিয়ে বলে উঠে,
“এই যে, চোখ কি কপালে তুলে গাড়ি চালান? এক্ষুনি তো মেরে ফেলতেন আমাকে।”
গাড়ি থেকে বের হয়ে আসে একটি ছেলে আর একটি মেয়ে। হাত ধরাধরি করে হাঁটছে তারা। তিয়াশাকে যেন তারা দেখতেই পায়নি। তিয়াশা ও আর কথা না বাড়িয়ে উলটো পথে হাঁটা দেয়। হয়তো আসলেই তিয়াশাকে দেখতে পায়নি। কিন্তু ছেলে ও মেয়ে দুজনকেই তিয়াশার খুব পরিচিত লাগছিল। কিন্তু ভালো করে দেখতে পারেনি।
“এক্সকিউজ মি?”
হঠাৎ ডাক শুনে তিয়াশা পেছন ফিরে তাকায়। দেখতে পায় সেই ছেলেটি ডাকছে। ছেলেটির পাশে থাকা মেয়েটি হেঁটে আরো সামনে চলে গিয়েছে। ছেলেটির দিকে তাকিয়ে তিয়াশা বলে উঠে,
“জ্বি, আমাকে বলছেন?”
ছেলেটি তার চোখে থাকা সানগ্লাস সরিয়ে বলে উঠে,
“আপনি কি বলতে পারেন, এখানকার ফেমাস ইটালিয়ান রেস্টুরেন্টটা কোন দিকে?”
তিয়াশা যেন একটা ধাক্কা খায় ছেলেটিকে দেখে। বিষন্নতায় ছেয়ে যায় তার মুখ। স্কার্ফ দিয়ে তার মুখটা আরো ভালো ভাবে ঢেকে হাতের ইশারায় আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বলে,
“ওদিক টায়।”
“ধন্যবাদ।”
তিয়াশা কোনো কিছু না ভেবেই হুট করে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটিকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করে বসে,
“উনি কে?”
“আমার ফিয়ন্সে।”
“ওহ”
বলেই এক মুহূর্ত দেরি না করে সেখান থেকে দৌড়ে ছুটে সরে যায় তিয়াশা। তার চোখ দিয়ে নীরবে পানি ঝরছে। পাশেই একটা পার্ক। সেখানে গাছের নিচে মন খারাপ করে বসে পড়ে সে। কেন বারবার দেখা হয়ে যাচ্ছে তার সাথে। আমাকে দেখে কি চিনতে পারেনি? আমার কণ্ঠস্বর? কিছুই চিনতে পারলোনা?
তারপর মনে পড়লো তার মাথায় স্কার্ফ আর সানগ্লাস থাকাতে হয়তো চিনে নি। মাথা থেকে স্কার্ফ সরিয়ে অঝোরে কাঁদতে থাকে আর ভাবে, ভালোই হয়েছে চিনতে পারেনি তাকে।
তিয়াশার কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পড়লে, আনমনেই কাঁধের হাতটি ধরে সজোরে হু হু করে কেঁদে উঠে তিয়াশা।
চলবে…
আগের পর্বের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/942637466166973/