পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_২৯
#লেখিকাTasneem Tushar
দুজনই বেশ কিছুক্ষন নীরবে নিভৃতে একসাথে সমুদ্রের পাড় ধরে হেঁটে বেড়ায়। এক সময় হাটতে হাটতে তিয়াশার কানে ফিসফিস করে হঠাৎ আদিল বলে উঠে,
“ভালোবাসি।”
“আমিও।”
আদিল তার কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা। নাহ্ গলা দিয়েও কোন স্বর বের হচ্ছেনা এখন। তিয়াশা খুব সহজে ভালোবাসি বলে দিবে সেটা আদিল কখনো কল্পনাও করেনি।
হঠাৎ আকাশের দিকে নিশানা করে দেখায় আদিল। তিয়াশা আদিলের আঙ্গুল অনুসরণ করে দেখতে পায় দ্রুত গতিতে একটি তারা ছুটে যাচ্ছে। খুশিতে হাততালি দিয়ে উঠে তিয়াশা,
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
আদিল তৎক্ষণাৎ তিয়াশার চোখে হাত দিয়ে ঢেকে বলে,
“কোন মুভিতে যেন দেখেছি, শুটিং স্টার দেখে কিছু প্রার্থনা করলে সেটা নাকি ফলে যায়।”
“আপনি বিশ্বাস করেন?”
“উহু করিনা, কিন্তু আজ খুব ইচ্ছে হচ্ছে কিছু একটা উইশ করতে। চেষ্টা করে দেখি, কি বলো?”
তিয়াশারও বিষয়টা বেশ মজা লাগে এবং বলে উঠে,
“ঠিক আছে।”
দুটি হৃদয় শুটিং স্টার দেখে মনে মনে কিছু প্রার্থনা করে। কিন্তু কী প্রার্থনা করে এই দুটি হৃদয় তা শুধু তারাই জানে। তবে অনুমান করা যায় আদিল মনে মনে তিয়াশাকেই চেয়েছে। কিন্তু তিয়াশার মন কী চাইলো?
*
পরদিন সকালে সবাই যার যার ব্যাগ গুছিয়ে তৈরি হয়ে নেয়। আজই তারা এখান থেকে চলে যাবে। চেক আউট টাইম সকাল ১১টা। ম্যাথিউ, প্যাট্রিসিয়া, পৌষী, আদনান সবাই তৈরি। তিয়াশা তৈরি হয়ে বের হচ্ছে তার রুম থেকে তখন আদনান দরজায় নক করলে, তিয়াশা ঠোঁটের কোণে হাসি টেনে বলে উঠে,
“সরি, দেরি করে ফেললাম। তোরা চেক আউট করে ফেল। আমি ব্যাগ নিয়ে আসছি।”
“না দেরি হয়নি। আসলাম তোর কোনো সাহায্য লাগবে কিনা দেখতে।”
“হুম, লাগবে তো।” ব্যাগপ্যাক এগিয়ে দিয়ে বলে,
“নে এটা ধর?”
“বুঝছি তো, তোর এখন হেল্পার লাগবে।”
“হুম, তুই তো হেল্পারই।”
একজন আরেকজনের সাথে খুনসুটি করতে করতে বাহিরের দরজার কাছে এসে দাঁড়ায়। সেখানে সবাই উপস্থিত। কিন্তু আদিল নেই। তিয়াশা আদনানকে জিজ্ঞেস করে,
“এই মিঃ আদিল কইরে?”
“কি যেন এখানেই তো ছিল একটু আগে। চলে আসবে হয়তো এখুনি।”
“তোর ভাই মিঃ আদিল একটা উদ্ভট মানুষ। সারাক্ষন দুষ্টু বুদ্ধি মাথায় তার।”
“হা হা, তা তুই বলতে পারিস। ভীষণ দুষ্ট। তো তুই কতক্ষন এভাবে মিঃ আদিল, বলে সম্বোধন করবি? আমার ভাই তো তোরও ভাই। ভাই বলেই ডাক না।”
“তাইতো, তুই তো ভালো কথা বলেছিস। আমি তো ভাইয়া বলে ডাকতেই পারি।”
ওদের কথোপকথনের মাঝেই আদিল বাইরে থেকে ঘরে ফিরে। তিয়াশা আদনানকে দেখিয়ে বলে উঠে,
“ওই তো ভাইয়া এসেছে।”
হঠাৎ তিয়াশার মুখে ভাই ডাক শুনেই একটা ভিমড়ি খায় আদিল। তিয়াশার দিকে ভ্রু কুঁচকে একবার তাকিয়ে, তারপর সবার উদ্দেশ্যে বলে,
“আজকে যাচ্ছিনা আমরা। আগামীকাল যাবো। আজকের দিনটা এক্সটেন্ড করা হয়েছে।”
আদনান বলে উঠে,
“ওয়াও। দ্যাট ইস গ্রেট। আমার তো এখান থেকে এমনিতেই যেতে ইচ্ছে হচ্ছেনা।”
পৌষী, প্যাট্রিসিয়া, ম্যাথিউ সবাই খুশিতে হই করে উঠেছে। নিশ্চুপ আছে শুধু তিয়াশা। আদিল তাকিয়ে আছে তিয়াশার দিকে আর ভাবছে, যার জন্য করলাম সে কেন কিছু বলছেনা? তারপর একটু পরেই তিয়াশা চিন্তিত কন্ঠে বলে উঠে,
“কিন্তু আমাকে যে কাজের জন্য আগামীকাল যেতে বলেছে ম্যানেজার। আমিও তো হ্যাঁ বলে দিয়েছি।”
আদিল বলে উঠে,
“এখনই ফোন দিয়ে বলে দাও, যে তুমি যেতে পারবেনা।”
“আমিতো কিছুক্ষন আগেই কনফার্ম করলাম। আবার এখুনি মানা কিভাবে করি?”
আদিল বলে উঠে,
“এক কাজ কর, কাল সকালে সিক কল দিবে। বলবে তুমি অসুস্থ কাজে আসতে পারবেনা। ব্যাস তাহলেই তো হয়ে যায়।”
তিয়াশা একটু চুপ করে থেকে বলে উঠে,
“হুম, এটা কিন্তু একটা ভালো বুদ্ধি দিয়েছেন মিঃ আদিল। আই মিন আদিল ভাইয়া।”
আদিল সবার সামনে কিছু বলছেনা, কিন্তু বুকটা যেন জ্বলে যাচ্ছে। একটু কেশে বলে উঠে,
“সবাই তো রেডিই আছো। তাহলে ব্যাগ যার যার রুমে রেখে এসে চলো আমরা বাইরে ঘুরতে যাই। গতকাল তো আমি বেশিক্ষন থাকতে পারিনি। আজকে অনেক আনন্দ করবো ইচ্ছা সবার সাথে।”
*
সারাদিন প্রচুর ঘুরাফেরা, খাওয়া দাওয়া, কেনাকাটা আর ফান এক্টিভিটিস করে বিকেলের দিকে সবাই কটেজে ফিরে আসে। আজ গরমও পড়েছে প্রচন্ড, তাই কটেজে ফিরেই সবাই ঝাঁপ দেয় সুইমিং পুলে।
দেখতে দেখতে সূর্য ডুবে আসছে প্রায়। কটেজের বাগানে আগুন জ্বালিয়ে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। আর সবাই সুইমিংপুল থেকে উঠে গোসল সেরে ফ্রেশ হয়ে বাগানে বসেছে ক্যাম্পফায়ার ঘিরে। আদিলের হাতে গিটার, সে তিয়াশার দিকে তাকিয়ে গান ধরে,
“দো দিল মিল রাহে হ্যায়
মাগার চুপকে চুপকে
সাবকো হো রাহি হ্যায়
খাবার চুপকে চুপকে।”
আস্তে আস্তে সন্ধ্যা গাঢ় হয়ে আসলে চারদিকে অন্ধকার নেমে আসে, আকাশে দেখা দেয় বিশাল এক পূর্ণিমার চাঁদ। মোহনীয় একটি সন্ধ্যা, চাঁদের আলো এসে পড়েছে কটেজের আঙিনায়। সুইমিংপুলে চাঁদের আলো প্রতিফলিত হয়ে নীলাভ আলো ছড়াচ্ছে চারপাশে। প্যাট্রিসিয়া ও ম্যাথিউ তিয়াশাকে অনুরোধ করে এমন মোহনীয় সন্ধ্যায় যেন একটি গান ধরে সে। তিয়াশা অনুরোধ রাখতে গেয়ে উঠে,
“নীল চাঁদোয়া।।
আকাশটাকে আজ লাগছে যেন
মাঝে মাঝে কিছু কিছু তাঁরা বোনা বৃষ্টি ধোয়া।।
জড়োয়ার ঘোমটা পড়ে ফুলের বাসরে
সেজেছে সুন্দরী রাত জোছনা শিশিরে।
এই মিষ্টি রাতে আমি চাই তোমার ছোয়া।।
মধুয়ার গন্ধ ধরে রাতের আঁচলে
বসেছে মনের ময়ুর চোখের কাজলে।
ঐ বৃষ্টি থেকে আমি চাইপ্রেম ছোয়া।।”
তিয়াশা যখন গানটি গাওয়া শুরু করে, আদিলও তখন তার সুরে সুর মিলিয়ে গেয়ে উঠে এবং দ্বৈত কন্ঠে গানটি শেষ করে।
*
রাতের খাবার শেষে কিছুক্ষন গল্প করে যে যার রুমে ঘুমোতে চলে যায়। তিয়াশাও বেডে শুয়ে ভাবছে আদিলের কথা। হুম আদিলের কথাই তো। আদিলের দেয়া প্রত্যেকটা সারপ্রাইজ সত্যি তিয়াশাকে ভীষণ পুলকিত করেছে। সাথে কিছু অভিজ্ঞতা তাকে সাহসীও করেছে। কিন্তু এমন অনুভূতির সৃষ্টি কেন হচ্ছে তার মনে আদিলের জন্য? নাহ এই অনুভূতি বাড়তে দেয়া যাবেনা। এটা যে জীবন ধ্বংস ছাড়া আর কিছু করতে পারেনা। হঠাৎ তিয়াশার ফোনে একটি মেসেজ আসে,
“একটু বাইরে আসবে কি?”
তিয়াশা ফোনে তাকিয়ে দেখে রাত এগারোটা বাজছে। যাবে কি যাবেনা ভাবছে। কিছু একটা চিন্তা করে সে পা টিপে টিপে বাহিরে পা বাড়ায় যাতে তার পায়ের শব্দে কারো ঘুম না ভেঙে যায়।
তিয়াশাকে দেখেই আদিলের চোখেমুখে উচ্ছাস দেখা দেয়। আদিল বলে উঠে,
“কেমন আছো?”
তিয়াশা হেসে দেয়। আজ সারাদিনই তো একসাথে সবাই মিলে ঘুরাফেরা করলো। মজা করলো। আদিল ও ছিল। তাহলে এখন এই প্রশ্ন কেন করছে বুঝতে পারছেনা তিয়াশা। হেসে উত্তর দেয়,
“ভালো আছি। আপনি?”
“যেমন রেখেছো।”
কথা বলতে বলতে দুজনে যেয়ে বসে কটেজের দোলনায়।
“মানে?”
“আমার চোখের দিকে তাকাও।”
তিয়াশা আদিলের চোখে দেখতে পায় এক ধরণের মাদকতা। এ চোখ যেন কিছু বলতে চাইছে। আজ সারাদিনই তিয়াশা লক্ষ করেছে আদিলের চাহনি, যা হৃদয়ে কম্পন সৃষ্টি করে। কি হয়েছে আদিলের? আদিল আবার বলে উঠে,
“কি? কিছু বুঝলে?”
তিয়াশা লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে মাথা নাড়ায় যে সে কিছুই বুঝেনি।
আজ বাতাসটা একটু ঠান্ডা, তিয়াশা দুই হাত জড়ো করে বসে আছে। আদিল খেয়াল করে এবং তার গায়ে থাকা পাতলা জ্যাকেট খুলে তিয়াশাকে অনুরোধ করে,
“এটা নাও।”
“লাগবেনা, ভাইয়া।”
আদিল জোর করে তিয়াশার গায়ে দিয়ে বলে,
“এই মেয়ে কিসের ভাইয়া তোমার?”
“কেন? আদনানের ভাইতো আমারও ভাই।”
“শ…শ…মাইর দিবো ভাই বললে।”
“ঠিক আছে, মিঃ আদিল। এখন ঠিক আছে?”
আদিল মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে বলে,
“আপাতত আছে। পরে পরিবর্তনও হতে পারে।”
তিয়াশা মুচকি হাসে। তারপর দুজন পাশাপাশি বেশ কিছুক্ষণ নীরবে বসে থাকে। কেউ যেন কোনো কথা খুঁজে পাচ্ছেনা। তিয়াশা হাতের নখ খুটছে, কিন্তু ঠিকই খেয়াল করেছে আদিল অপলকহীন ভাবে তাকিয়ে রয়েছে তার দিকে। তিয়াশার তার চাহনি দেখলে হৃদপিণ্ডের গতি বেড়ে যায়। কিছুক্ষন পর তিয়াশা বলে উঠে,
“উঠি তাহলে?”
“আরেকটু বসো না।”
“রাত হয়ে গেছে অনেক। এখন যাই। আপনিও ঘুমিয়ে পড়ুন।”
বলেই উঠে চলে যেতে নিলে আদিল তিয়াশার হাত টেনে ধরে বলে,
“তোমাকে ভালোবাসি, তিয়াশা।”
তিয়াশা চমকে উঠে, নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছেনা। আদিল পরক্ষনেই বলে উঠে,
“তুমি বলবেনা? আরেকটিবার বলোনা! আমার তো বারবার শুনতে ইচ্ছা করছে।”
তিয়াশার চোখে প্রশ্নবোধক চাহনি দেখে আদিল বলে উঠে,
“গতকালের মতো।”
তিয়াশার মাথা এখন কাজ করছেনা। গতকালের মতো? সে কখন বললো আদিলকে ভালোবাসে? ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে বলে উঠে,
“মিঃ আদিল, আপনি আবার মজা করছেন আমার সাথে, তাইনা? এবার কিন্তু এত সহজে বোকা হবোনা।”
আদিল তিয়াশার চোখে চোখ রেখে গলায় গাম্ভীর্য এনে বলে,
“তোমার মনে হচ্ছে আমি মজা করছি?”
তিয়াশা যেন গোলক ধাঁধায় পড়ে যায়। মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছেনা। গতকালের এমন কোনো কথোপকথন কিছুই তো মনে পড়ছে না তার।
চলবে…
আগের পর্বের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/947465892350797/