পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_২০
Tasneem Tushar
আদিল চুপটি করে মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে, আর তার মা নওরীন মুজদাহীর আদিলের চুলে পরম স্নেহে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
“কি হয়েছে বাবা, এত চুপচাপ কেন? মন খারাপ?”
“এমনি মা। কিছু ভালো লাগছেনা।”
“কেন? তিয়াশাদের বাসা থেকে আসার পর থেকে মনমরা দেখছি তোমার। কিছু কি হয়েছে?”
“মা, তুমি শুধু মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাও।”
“আমার পাগল ছেলে। মায়ের কাছে কিছু লুকোতে হয়?”
“মা তোমাকেই তো বলবো। কিন্তু এখন না।”
“আচ্ছা তোর যখন ইচ্ছা তখনই বলিস। এখন বলতো, তিয়াশা গিফ্ট পেয়ে খুশি হয়েছে কিনা? মেয়েটা কিন্তু ভীষণ মিষ্টি।”
তিয়াশার কথা শুনেই, আদিল উঠে বসে পরে। তার মুখ (লেখিকা-তাসনীম তুষার) খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠে। ঠোঁটের কোণে হাঁসি ফুটিয়ে বলে,
“মা সেতো ভীষণ খুশি হয়েছে। তোমাকে ধন্যবাদ ও দিয়েছে। ওহ তোমাকে তো একটা জিনিস দিতে ভুলেই গেছি। দাঁড়াও এক্ষুনি নিয়ে আসছি।”
বলেই আদিল তার টেবিলে রাখা ব্যাগ থেকে একটা গ্রিটিংস কার্ড বের করে নওরীন মুজদাহীরের হাতে দেয়।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
“তোমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে এই গ্রিটিংস কার্ডটি দিয়েছে। দেখো মা কি সুন্দর করে ফুলের কাজ করা। জানো? এটা সে নিজে বানিয়েছে।”
নওরীন মুজদাহীর খুশি হয়ে হাতে কার্ডটি নিয়ে বলে,
“বাহ! খুব চমৎকার একটি কার্ড। সত্যি তিয়াশা নিজ হাতে বানিয়েছে? মেয়েটির গুন আছে বলতে হয়।”
“হুম, নিজে বানিয়েছে।”
“মাঝে মাঝে মনে হয়, তিয়াশার মতো যদি আমার মেয়ে থাকতো। তাহলে আমার দুটো মেয়ে থাকতো। আলিয়া চলে যাবে। বুকটা আমার খালি হয়ে যাবে।”
আদিল তখন মজার ছলে কৌশলে মাকে তার মনের কথা জানায়,
“আম্মু, তুমি চাইলে কিন্তু তিয়াশাকে মেয়ে বানিয়ে তোমার কাছে এনে রেখে দিতে পারো। আলিয়া আপি চলে গেলেও তিয়াশা কিন্তু তখন তোমার কাছেই রয়ে যাবে।”
নওরীন মুজদাহীরের কি যেন কি মনে হতেই সাথে সাথে বলে উঠলো,
“ভালো কথা মনে পড়লো। আচ্ছা শোনো, তোমার বাবা চাইছিল তুমি ডা. সামিরের মেয়ে সুহানির সাথে দেখা সাক্ষাৎ করে একে অপরকে ভালো করে চেনো ও জানো।”
আদিলের মুখটা সাথে সাথে কালো হয়ে যায়। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে মুখে হাসি হাসি ভাব ফুটিয়ে রেখেছে। মাকে বললাম কি আর মা বলছে কি। আম্মু কি আসলেই আমার ইঙ্গিত বুঝেনি। আদিলকে চুপ থাকতে দেখে নওরীন মুজদাহীর বলে উঠে,
“চুপ করে আছো যে?” আদিলের পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলে, “সুহানির সাথে কথা বললেই তো তাকে বিয়ে করতে হবেনা। তোমার ভালো লাগলে তবেই। কিন্তু আপাতত তোমার আব্বুর নির্দেশ এটা।”
“ঠিক আছে আম্মু। আমি দেখা করবো।”
কথাটি বলেই কোনো রকম মুখে হাসি ফুটিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় আদিল। নওরীন মুজদাহীর ছেলের চোখের ভাষা ও ইঙ্গিত ঠিকই বুঝতে পেরেছে। কিন্তু সে যে নিরুপায়। নাদিম মুজদাহীরের কথার অমতে গেলেই যে আদিলের উপরে অসন্তুষ্ট হবে সে। ছেলের ব্যাথিত হৃদয় যে তাকেও কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।
*
এক সপ্তাহ পর।
আদিল ও সুহানি বসে আছে মুখোমুখি স্টারবাকস কফি শপে। আদিল তার বাবা নাদিম মুজদাহীরের নির্দেশে ও তার মা নওরীন মুজদাহীরের অনুরোধে অনিচ্ছা সত্ত্বেও এসেছে সুহানির সাথে কথা বলতে। টেবিলে কফি ও মাফিন নিয়ে বসেছে দুজনে। আদিলের মুখে কোনো কথা নেই। ক্যাফেতে হালকা মিউজিক বাজছে, তার সাথে সাথে কফি কাপে চুমুকের শব্দ। নীরবতা ভাঙতে কফি কাপে চুমুক দিতে দিতে সুহানি বলছে,
“আদিল, কথা বলবে না?”
আদিল কফি কাপ থেকে একবার মাথা তুলে সুহানির দিকে তাকায়। তারপর আবার মনোনিবেশ করে কফি পান করাতে। শুধু প্রত্যুত্তরে বলে,
“কি জানতে চাও? বলো।”
“সেই কখন থেকে হুম হুম করে যাচ্ছ।” হুট করে সুহানি আদিলের হাতের উপর হাত রেখে বলে, “আচ্ছা শোনো, চলো আমরা লং ড্রাইভে যাই। দূরে কোথাও লেকের পাড়ে মনোরম দৃশ্য দেখতে দেখতে কথা বলি।”
আদিল একটু বিব্রত হয়। মেয়েটির গায়ে পড়া স্বভাব তার একটুও ভালো লাগছেনা। হাত সরিয়ে বলে,
“অন্য কোনদিন। আজকে একটু তাড়া আছে।”
“মাত্রই তো এলাম। আর তুমি তো কোনো কথাই বলছো না।”
“আজ নাহয় নিঃশব্দতায়ই হোক আমাদের কথা।”
“কি বলো এসব? কিছুই বুঝিনা।”
আদিল ধীরে ধীরে অধর্য্য হয়ে উঠে। এখানে বসে থেকে সুহানির সাথে কোনো কথাই বলতে ইচ্ছে করছেনা। বারবার তিয়াশার কথাই মনে পড়ছে। তিয়াশার সাথে রেস্টুরেন্টে যাবার ব্যাপারটা এখনো ফাইনাল হলোনা। তিয়াশাকে একটা ফোনে দিব। আদিল যখন তিয়াশার ধ্যানে মগ্ন ঠিক তখন সুহানি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
“বুঝেছি তুমি কিছু বলবেনা। আমিই বলি, শোনো।”
“হুম শুনছি।”
“আমি তোমাকে খুব পছন্দ করি।”
আদিল হেসে শান্ত কন্ঠে বলে,
“সুহানি, তুমি আরেকটু ম্যাচিউরড হও। তারপর ভেবে চিন্তে বলো।”
সুহানি হেসে দৃঢ়তার সাথে বলে,
“আমি যা বলছি ভেবে চিন্তেই বলছি। আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
আদিল কি বলবে বুঝতে পারছেনা। ভালোভাবেই ফেঁসে গেছে সে। এখান থেকে পালাতে মন চাইছে তার। কি করে সুহানির হাত থেকে বের হবে সে? সুহানি আবার বলে উঠে,
“তুমি এখনো কিছু বলবেনা?”
আদিল বারবার তার ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকাচ্ছে। যেন উপায় খুঁজছে কিভাবে এখান থেকে বের হতে পারে আবার সুহানিও যেন তার ব্যাবহারে আঘাত প্রাপ্ত না হয়।
আদিল ভাবতে থাকে, কি করা যায় এখন।
চলবে…
আগের পর্বের লিংক:
পর্ব ১৯: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/941159789648074/