পূর্ণিমা_সন্ধ্যায় পর্ব_১৯

0
1065

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায় পর্ব_১৯
Tasneem Tushar

ছেলেটি তিয়াশার চোখের সামনে তুড়ি মারলে, সংবিত ফিরে পায় সে। তিয়াশা তোতলাতে তোতলাতে বলে উঠে,

“আ…আপনি…?”

“হুম আমি। একটা ব্যাপার লক্ষ করলাম, কি জানেন?

“জ্বি?”

“আমি যে এত সুন্দর সেটা জানতাম না।”

তিয়াশা আমতা আমতা করে বলে,

“মা…মানে?”

“এই যে তুমি আমাকে যেভাবে হা করে তাকিয়ে দেখছিলে তাতে মনে হলো আরকি।”

তিয়াশা হেসে কথা উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টায় বলে,

“আপনি ভীষণ মজা করে কথা বলতে পারেন, মি. আদিল।”

“চিনতে পেরেছ তাহলে?”

“হুম। পেরেছি। কিন্তু আপনি তো আমাদের বাসাতেই এসেছেন, তাহলে ফোন করেছিলেন কেন?”

“বোঝার জন্য যে আমাকে তুমি মনে রেখেছো কিনা।”

তিয়াশা কথা এড়িয়ে হেসে বলে,

“চলুন। সবাই অপেক্ষা করছে আপনার জন্য।”

তিয়াশাকে অনুসরণ করে আদিল হাঁটছে আর বলছে,

“আর তুমি?”

“আমি…মানে?”

“মানে তুমিও কি আমার জন্য অপেক্ষা করছিলে?”

তিয়াশা নিশ্চুপ থাকে। তখন আদিল বলে উঠে,

“আচ্ছা একটা কথা বলি?”

“জ্বি বলুন।”

“কিছু মনে করবে না তো?”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



“বলেই দেখুন।”

“আপনাকে অগোছালো ভেজা চুলে কিন্তু অনেক স্নিগ্ধ লাগে।”

তিয়াশা এ কথাটিরও কোনো উত্তর দেয় না। কেউ তাকে সুন্দর (লেখিকা-তাসনীম তুষার) বললে এখন আর পুলকিত হয়না সে। এক বুক দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ঠোঁটে স্মিত হেসে কথা ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করে,

“কেমন আছেন আপনি?”

“এখন খুব খুব ভালো আছি। আর তুমি?”

“আলহামদুলিল্লাহ, ভালো।”

“সত্যি…? তাহলে মুখ এত মলিন কেন?”

তিয়াশা নীরবে হাসে। সে ভেবে পায়না ছেলেটি কিভাবে তার প্রত্যেকটা জিনিস বলার আগেই বুঝে যায়। পরে ভাবে যেহেতু সে ডাক্তার, ডাক্তাররা বোধ হয় এমনি হয়, রোগী দেখেই তার রোগের কথা বলে দিতে পারে।

“কিছু বলুন।”

“চলুন আমার সাথে।”

আদিল বিড়বিড় করে বলে,

“তোমার সাথেই তো চলতে চাই।”

তিয়াশা আদিলকে নিয়ে তাদের ড্রইংরুমে আসে। নীলিমা হাবিব তিয়াশার বন্ধু সহ আদিল ও আদনানকে খাবার পরিবেশন করে। অনেকক্ষন ধরে গল্প করেন তিনি আদিল ও আদনান দুই ভাইয়ের সাথে। সেই ফাঁকে তিয়াশা তার নিজের ঘরে এসে চুলগুলো আঁচড়িয়ে, চোখে হালকা কাজল দিয়ে একটু পরিপাটি হয়ে ফিরে আসে ড্রইংরুমে। তিয়াশাকে দেখে নীলিমা হাবিব বলে,

“এসেছিস? বসে কথা বল ওদের সাথে। আমি একটু আসছি।”

আদিল নীলিমা হাবিবকে যেতে দেখে বলে উঠে,

“আন্টি, আপনি থাকুন। আপনার সাথে গল্প করতে ভালোই লাগছে।”

“একটু আসছি বাবা, তোমরা গল্প করো। আজ দুপুরের খাবার কিন্তু খেয়ে যাবে।”

“আন্টি, আজ নয়। আরেকদিন হবে। একটু পরেই বেরিয়ে যাবো।”

আদনান ও আদিলের কথায় সায় দিয়ে বলে,

“জ্বি আন্টি, আরেকদিন আসবো। তখন এসে আপনার হাতের আরও মজাদার খাবার খাবো। আসলে এখানে একটা কাজে এসেছি।”

“কি কাজ বাবা?”

আদনান তার ব্যাকপ্যাক থেকে কিছু একটা বের করতে করতে বলে,

“আসলে আন্টি, আমার আম্মুর তিয়াশাকে খুব পছন্দ হয়েছে”

“বুঝলাম না।”

“মানে আমার আম্মুও বাংলাদেশি। অনেকদিন পর নিজের মনের মতো কাউকে পেয়ে অর্থাৎ তিয়াশাকে দেখে অনেক আবেগাপ্লুত হয়ে গিয়েছেন। তাই আমাদেরকে পাঠালো তিয়াশাকে উনার ভালোবাসা প্রদর্শন স্বরূপ ছোট্ট একটি উপহার দিতে।”

কথাটি বলার পর হাতে থাকা গিফ্টটি বের করে তিয়াশার দিকে এগিয়ে দেয় আদনান।

“তিয়াশা, এটা তোমার জন্য। আম্মু খুব খুশি হয়ে তোমাকে দিয়েছে।”

তিয়াশা ইতস্তত হাতে গিফ্টটি হাতে নিয়ে ধন্যবাদ জানায়। আদিল ও আদনানের অনুরোধে তিয়াশা বক্সটি খুলে দেখতে পায় স্বরভস্কি স্টোনের সুন্দর একটি লকেট আর কানের দুল। আদিল জিজ্ঞেস করে,

“পছন্দ হয়েছে আপনার?”

“আন্টি ভালোবেসে একটা জিনিস দিয়েছে, পছন্দ না আসার প্রশ্নই আসেনা। খুব পছন্দ হয়েছে। আন্টিকে আমার ধন্যবাদ জানাবেন। আর আপনাদেরকে ও অসংখ্য ধন্যবাদ।”

“এটা তেমন কিছুই নয়।”

“আমার কাছে এটি আশীর্বাদ স্বরূপ।”

*

নাদিম মুজদাহীর দুপুরের দিকেই তার অফিস থেকে বের হয়ে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে আসে। নওরীন মুজদাহীর দুপুরের খাবারের আয়োজনে যখন ব্যাস্ত তখন তিনি কিচেনে প্রবেশ করে,

“নওরীন?”

“আরে তুমি এত তাড়াতাড়ি ফিরে এলে আজ?”

“হুম, মনটা আজ ভীষণ খুশি।”

“কেন? কি হয়েছে?”

“আজ ডা. সামিরের সাথে অনেকক্ষণ গল্প হলো।”

“সেটা তো তোমাদের প্রায়ই হয়।”

“আজ একটা বিশেষ বিষয়ে কথা হয়েছে।”

“তাই, তো বলো শুনি কি এমন কথা হয়েছে যার জন্য এত খুশি তুমি?”

“আজ ডা. সামির নিজে থেকেই তার মেয়ে সুহানির বিয়ের জন্য ইঙ্গিত দিয়েছে আমাদের ছেলের সাথে।”

“উত্তম প্রস্তাব। তো কোন ছেলের সাথে? আমাদের তো দুটো ছেলে।”

“কোন ছেলে আবার। অবশ্যই আদিল। আমার ডাক্তার ছেলের জন্য তো ডাক্তার বউই উপযুক্ত। কি বলো?”

“তোমার যেমনটা ইচ্ছে। তবে ছেলের ও তো পছন্দ থাকতে পারে তাইনা?” কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার নওরীন মুজদাহীর বলে উঠে, “আপাতত আদিলের বিয়ের চিন্তা বাদ দাও। আগে আলিয়ার বিয়েটা সুন্দর ভাবে সম্পন্ন করে নেই, তারপর নাহয় আদিলের টা নিয়ে ভাববো।”

“ছেলেকে তো পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম সুহানির সাথে। ওকে জিজ্ঞেস করো কেমন লেগেছে তার। আমার কিন্তু মেয়েটিকে আদিলের জন্য ভীষণ পছন্দ হয়েছে।”

মুজদাহীর দম্পতি যখন এসব আলাপ করছিল, তখন দুই ভাই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তাদের কথোপকথন শুনে ফেলে।

সেসব শুনে আদিলের চেহারা মুহূর্তে বিষন্ন হয়ে যায়। আদনান দুষ্টুমির ছলে আদিলকে কিছু বলতে যেয়ে দেখে আদিলের চোখ ছলছল করছে।

ভাইয়া কেন এত কষ্ট পাচ্ছে? সেতো বাবা মায়ের সব ইচ্ছাই মাথা পেতে নেয় খুশি মনে। আজ কি এমন হলো যে তার ঠোঁটে হাসি থাকলেও চোখ দুটো অন্য কথা বলছে। নাহ ভাইয়ার ব্যাপারটা কী, জানতে হবে।

চলবে…

আগের পর্বের লিংক:

পর্ব ১৮: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/940399226390797/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে