পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_১৩
#লেখিকা_তাসনীম_তুষার
সুদর্শন তরুণদ্বয়ের হৃদয় যেন হঠাৎ থমকে গেছে। অপলক দৃষ্টিদ্বয় নিবদ্ধ নির্দিষ্ট কোন একদিকে। মন্থর গতিতে মৃদু বায়ু বইছে। পাতার খসখসে শব্দের সাথে একজোড়া নুপুর আর কাচেঁর চুড়ির রুনঝুন মিলে সৃষ্টি করেছে অনবদ্য মোহনীয় ঝংকার। সেই ঝংকারের তালে তালে বাতাসে উড়ছে কারুকাজপূর্ণ সাদা শাড়ির আঁচল। পূর্ণিমা সন্ধ্যায় তাকে লাগছে যেন আকাশ থেকে নেমে আসা এক অপ্সরা সুন্দরী।
*
আদনান আদিলকে স্টেজের কাছে নিয়ে আসলে, তাদের বাবা নাদিম মুজদাহীর ও মা নওরীন মুজদাহীর আদিলকে সাথে নিয়ে স্টেজে থাকা মাইকের সামনে দাঁড়ায়। নাদিম মুজদাহীর সবার উদ্দেশ্যে,
“আজকের এই সন্ধ্যাটি আপনাদের সকলের উপস্থিতিতে হয়েছে মুখরিত ও সম্মানিত। এই সন্ধ্যাটিকে আরো সুন্দর ও স্বর্ণালী করতে আমি সবার উদ্দেশ্যে জানাতে চাই যে, আমার বড় ছেলে আদিল মুজদাহীর একজন ডাক্তার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া থেকে “ডক্টর অফ মেডিসিন” ডিগ্রি নিয়ে গ্রাজুয়েশন করেছে। পাশাপাশি, পরিবারে আরো একজন ডাক্তার সদস্য হিসেবে যুক্ত হয়ে মুজদাহীর পরিবারের সুনাম বৃদ্ধি করেছে। আমার এই আনন্দ আপনাদের সবার সাথে ভাগ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি এবং আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি আমার এই অনুষ্ঠানে আপনাদের উপস্থিতির জন্য। সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।”
নওরীন মুজদাহীর আদিলকে জড়িয়ে ধরে কপালে আলতো চুমু একে মাইক হাতে নিয়ে বলে,
“আমার ছেলে আদিল। খুব ছোট বেলা থেকেই ভীষণ শান্ত ও ভালো মনের মানুষ। কারো দুঃখ কষ্ট বা বিপদ দেখলে নিজ দায়িত্বে এগিয়ে যায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে। প্রয়োজনে নিজের সুখ বিলিয়ে অন্যের মুখে হাসি ফুটোতে পিছপা হয়না।
আজ সে একজন ডাক্তার হিসেবে বের হয়েছে। আমি জানি তার কাছে কোনো সুস্থ অথবা অসুস্থ মানুষ আসলে খালি হাতে ফিরে যাবে না। সে তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে সেই মানুষটিকে সঠিক সাহায্য করতে। আমার বিশ্বাস সে তার দায়িত্ব, মনুষ্যত্ব ও ভালোবাসা দিয়ে তার কাজ সঠিকভাবে করে যাবে। আমি তার গর্বিত মা।”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
কথা শেষ করে আদিলের হাত ধরে বলে,
“অনেক বড় হও বাবা।”
নাদিম মুজদাহীর ও আদিলের পিঠে চাপড় দিয়ে বলে,
“আই এম রিয়েলি প্রাউড অফ ইউ, মাই সান।”
সবার দিকে তাকিয়ে নিজের শ্যাম্পেনের গ্লাসটি হাতে নিয়ে উপরে তুলে বলে,
“তো হয়ে যাক এই আনন্দে, চিয়ার্স।”
সকল অতিথিবৃন্দ তাদের টেবিলে রাখা শ্যাম্পেনের গ্লাস তুলে একে অপরের গ্লাসের সাথে ঠুকে চিয়ার্স বলে উল্লাসে মেতে উঠে।
(এখানে উল্লেখ্য, এই প্রোগ্রামে সকল স্বদেশী ও বিদেশী অতিথিদের জন্য সব ধরণের পানীয় /কোমল পানীয় এর ব্যাবস্থা রয়েছে, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে। যে যার পছন্দ অনুযায়ী পানীয় তার তার গ্লাসে নিয়ে চিয়ার্স করেছে।)
*
আদনান ও তার কিছু বন্ধুরা স্টেজে উঠে আসে এবং আদিলের হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। আদনানের হাতে গিটার। অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র গুলোও গুছিয়ে নিচ্ছে তার বন্ধুরা যা বার্তা জানাচ্ছে গান বাজনার। আদিল নেমে যাচ্ছে ঠিক এমন সময় মাইকের সামনে এসে আদনান বলে উঠে,
“আজকের সন্ধ্যায় আপনারা সবাই জেনেছেন যে আমার ভাই আদিল ডাক্তারি ডিগ্রি নিয়ে বের হয়েছে। তবে, তার একটি সুপ্ত প্রতিভাও আছে। তা হচ্ছে সে বেশ ভালো গানও গাইতে পারে।”
আদনানের কথায় আদিল চমকে যায়। এমন কিছু সে মোটেও আশা করেনি আদনানের মুখ থেকে। ওদিকে আদনান বলেই যাচ্ছে,
“কে কে আমার এই ডাক্তার ভাইয়ার কাছ থেকে তার গান শুনতে চান?”
উপস্থিত সবাই তখন চিৎকার করে বলতে থাকে,
“আ..দিল, আ..দিল।”
আদিলের ঠোঁটে লাজুক হাসি। মাইকটি সে হাতে নেয়। আদনানের হাতেও গিটার আর তার অন্য বন্ধুরাও প্রস্তুত।
হঠাৎ দুই ভাইয়ের চোখ আটকে যায় একটি আলোর দিকে। দুই ভাইয়ের চোখ অনুসরণ করে বাকি সকলের চোখ ও তাদের পেছনে সেই আলোর দিকে তাকিয়ে।
*
চারপাশের হরেক রকমের বর্ণিল পোশাকের ঝলকানির মাঝে হঠাৎ শুভ্র সাদামাটা রংটি বড্ড বেমানান লাগছে দূর থেকে। ধীরে ধীরে সেই সুসজ্জিত আলোটি সামনে আসতে থাকলে তা যেন সবার চোখের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। সকল বর্ণিল রঙও যেন ম্লান হয়ে গিয়েছে সেই সাদা আলোর রঙের ছটায় এবং স্বমহিমায় ঘোষণা করছে নিজের জয়জয়কার।
একি সত্যি নাকি কল্পনা?
সাদা সুক্ষ কারুকাজপূর্ণ মোহনীয় শাড়ি পরণে এগিয়ে আসছে সে। সবকিছু যেন মন্থর গতিতে এগোচ্ছে। তার শাড়ির আঁচল উড়ছে বাতাসে, দুলছে তার ঝুমকো কানের দুল, হাতের চুরি ও পায়েলের রিনিকঝিনিক ঝংকার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সবার, কিন্তু…
কিন্তু দুটি যুবকেরই হৃদয় যেন স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আর কোনো যুবকের এমন হচ্ছে কিনা কে জানে? হঠাৎ কারো কথায় যেন সংবিত ফিরে পায় আদনান ও আদিল।
আদিলের হাতে মাইক, আপনাআপনি যেন গলা দিয়ে তার বেড়িয়ে আসে,
“এ এমন পরিচয়, অনুমতি প্রার্থনা
সবিনয় নিবেদন কিছুই যে লাগে না
নিজেরই অজান্তে, হৃদয়ের অনন্তে
কিছু কথা ভালো লাগা
করে যায় রচনা।।
নিরালায় একা একা, এলোমেলো ভাবনায়
কত কথা বলে যাই, শুধু তারই সাথে।
এ যেন কল্পনা, মিলন মোহনা।
রঙীন চাদর বোনা।।
এ এমন বিনিময়, কিছু শুভ সূচনা
এ এমন পরিচয়, অনুমতি প্রার্থনা
আঁধারে চুপি চুপি, আঁকা বাঁকা তুলিতে
কত ছবি এঁকে যাই, এত আপন করে
এ যেন প্রভাতে, গভীর আবেশে
স্নিগ্ধ শিশির ছোঁয়া
এ এমন গীতিময়, কিছু শুভ সূচনা
এ এমন পরিচয়, অনুমতি প্রার্থনা।”
কে সে, পরিণত হলো সবার দৃষ্টিবিন্দুতে? স্তম্ভিত করে দিলো যুবকদ্বয়ের হৃদয়?
চলবে…
আগের পর্বের লিংক:
পর্ব ১২: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/933450670418986/