পূর্ণিমা_সন্ধ্যায় পর্ব_১১

0
1128

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_১১
#লেখিকা_তাসনীম_তুষার

আজ মুজদাহীর পরিবারে উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। বিশাল বাড়িটি জমকালো আলোক সজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে। আত্মীয় স্বজন, পাড়া পরিজন, বন্ধুবান্ধবের উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে আছে পরিবেশ। আয়োজন দেখে মনে হচ্ছে বিয়ে বাড়ি।

বিয়ে বাড়িই বৈকি, এ বাড়ির বড় মেয়ের আজ বিয়ের ঘোষণা দেয়া হবে, তাছাড়া বড় ছেলে আজ ডাক্তারী ডিগ্রী নিয়ে বের হয়ে পরিবারের সুনাম আরও বৃদ্ধি করেছে।

নাদিম মুজদাহীর ও বেশ চাঙ্গা মুডে আছে।

“বুঝলে আদিলের মা, ছেলে আমাদের হীরের টুকরো। এই একটা মাত্র সন্তান যে আমার কখনো অবাধ্য হয়নি। আমার গর্ব সে।”

“হঠাৎ আদিলের মা, আজ সকাল অব্দী তো মিসেস মুজদাহীর ছিলাম।”

“ছেলেটা আমার মন জয় করে নিয়েছে।”

“তাতো করছেই বটে। আমাদের বাকি দুই সন্তান ও কিন্তু চেষ্টার ত্রুটি রাখছেনা।”

“আলিয়া আমাদের প্রথম সন্তান, সবচেয়ে বেশি আদরের। সেও সুনামধন্য ডাক্তার আজ। তবুও বিয়ে করতে চাইছে এক ব্যাবসায়ীকে। মেনে নিয়েছি, তবে খুব বেশি খুশি নই।”

“এভাবে কেন বলছো? ছেলেকে তো আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে।”

“হুম ছেলে ভালোই। তাইতো মেনে নিয়েছি। কিন্তু বলে রাখছি, আদিলের জন্য আমি ডাক্তার বউ-ই চাই।”

নওরীন মুজদাহীর একটু চুপসে যেয়ে শান্ত কণ্ঠে বলে,

“ছেলেটার যদি নিজের কোনো পছন্দ থাকে?”

“পছন্দ থাকুক বা না থাকুক, এ বাড়ির বউ ডাক্তার বউ-ই হবে।”

“ছেলেটার পছন্দ… অপছন্দ…”

কথাটি শেষ করবার আগেই নাদিম মুজদাহীর তার স্ত্রী নওরীন মুজদাহীরকে থামিয়ে দিয়ে বলে,

“আর কোনো কথা নয়। আজ অনুষ্ঠানে অনেক স্বনামধন্য ইন্ডিয়ান ডাক্তার ও তাদের পরিবার আসবে। সেখান থেকে আদিলকে বলবে ডাক্তার মেয়ে দেখে পছন্দ করে নিতে।”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



নাদিম মুজদাহীর কথাটি শেষ করেই তার বেডরুম প্রস্থান করেন। নওরীন মুজদাহীর অনুষ্ঠানের জন্য অর্ধেক তৈরি হয়ে মনমরা হয়ে বিছানায় বসে পরে। তিনি মনে প্রাণে বাংলাদেশি, তার ও কত সখ, ঘরে নিজ দেশের নিজ সংস্কৃতি জানা বউ আসবে। সন্তানদেরকেও যে সে নিজের দেশের ভাষা সংস্কৃতির শিক্ষাই দিয়েছে। কিন্তু তার স্বপ্ন যে সারাজীবন জলাঞ্জলি দিতে হয়েছে। এখন দিতে হচ্ছে তার সন্তানদের। আলিয়া বিয়ে করে বেঁচে যাবে। এখন বাকি ছেলে দুটোই। কি যেন কি ভাগ্যে আছে তাদের। আদনান সবার ছোট, নিজের মন মর্জিতে চলে আর তাইতো চক্ষুশূল হয়ে আছে তার বাবার। আদিলটা শান্ত, পরোপকারী, নিজের সব ইচ্ছা লুকিয়ে বাবা যেভাবে চেয়েছে তাই করে আসছে। কিন্তু তার ও তো জীবন আছে।

এসব যখন ভাবছে, তখন ঘরে প্রবেশ করে তার পুত্রদ্বয়। দুজনকেই কোনো রাজপুত্রের চেয়ে দেখতে কম লাগছেনা। পরনে তাদের ব্ল্যাক টুক্সেডো, শুভ্র সাদা শার্ট, গলায় ব্ল্যাক বো টাই, হাতে সিলভার চেইনের রোলেক্স ব্র্যান্ডের ঘড়ি আর পলিশড ব্ল্যাক শু।

“মা দেখতো আমাদের দুজনকে দেখতে কেমন লাগছে?”

নওরীন নুজদাহীর দু বাহু সামনের দিকে প্রসারিত করে ছেলেদের দিকে,

“কাছে আয় তো, আমার লক্ষী বাচ্চারা।”

আদিল ও আদনান দুজনেই দ্রুত পায়ে তাদের মায়ের কাছে পৌঁছলে নওরীন মুজদাহীর জড়িয়ে একে একে দুজনের কপালে চুমু খায়।

“তোদের দুজনকেই হলিউডের নায়কের মতো লাগছে। কি যেন নাম ০০৭ এজেন্ট….বন্ড…।”

দুই ভাই তৎক্ষণাৎ একে অপরের পিঠে পিঠ লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আঙ্গুল দিয়ে পিস্তল ধরার ভঙি করে সমস্বরে বলে উঠে,

“দ্যা নেইম ইস বন্ড…. জেমস বন্ড।”

হাসিতে ফেটে পরে মা ছেলেরা। এমন সময় ঘরের দরজায় উকি দেয় একটি মিষ্টি মুখ। কেউ দেখার আগে পেছন থেকে দৌঁড়ে এসে আদিল আদনান কে জড়িয়ে ধরে। তারপর আদিল কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,

“কংগ্রাচুলেশনস মেরি ভাই।”

দুই ভাই পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে তাদের বড়ো বোন আলিয়া মুজদাহীর কারুকাজ পূর্ণ লেহেঙ্গা পরে দাঁড়িয়ে। পরীর মতো সুন্দর লাগছে দেখতে তাকে। তার হাসি মুখ থেকে উজ্জ্বল আভা ছড়াচ্ছে। ছড়াবেই না কেন? আজ যে তার প্রিয়মানুষের সাথে এক মেলবন্ধনের সৃষ্টি হবে।

আলিয়া লেহেঙ্গাটি পরে চারপাশে একবার ঘুরে জিজ্ঞেস করে,

“মা, দেখতো আমাকে কেমন দেখাচ্ছে?”

“তোকে খুব খুব সুন্দর দেখাচ্ছে মা।”

আদিল ও আদনান দুজনেই বলে উঠে,

“তোকে একেবারে শাকচুন্নির মতো লাগছে।”

“মা… দেখতো কি বলে?”

“এই আমার মেয়েকে অনেক সুন্দর লাগছে, পঁচা কথা বলবিনা। তবে শাড়িতে তোকে আরও বেশি মানাতো।”

“উফফ মা, শাড়ি টারি আমি সামলাতে পারিনা। আমার জন্য এটাই ঠিক আছে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে, এখন নীচে যাও। মেহমানরা চলে আসলে তাদের সাথে সময় দাও। আমি তৈরি হয়ে আসছি।”

“ঠিক আছে, আম্মু।”

বলে সবাই চলে যেতে নিলে, তখন আদিল কে ডেকে নওরীন মুজদাহীর বলে,

“বাবা এদিকে আয় তো।”

আদিল হাটু গেড়ে তার মায়ের সামনে মেঝেতে বসে। মায়ের কোলে মাথা দিলে তখন নওরীন মুজদাহীর চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বলে উঠে,

“বাবা, আমি অনেক খুশি তুমি ডাক্তার হয়ে বের হয়েছ। মানুষের সেবায় নিঃস্বার্থ ভাবে সদা নিয়োজিত থাকো এই দোয়া করি।”

“হুম আম্মু। সে চেষ্টাই করবো।”

“আর..”

“বলো, কি বলবে মা।”

নওরীন একটু ঢোক গিলে নির্লিপ্ত কন্ঠে বলে,

“নিজের জীবনেও চলার পথে একজন সঙ্গী দরকার। তোমার বাবা চায় আজকের অনুষ্ঠানে তুমি সেই সঙ্গীটি খুঁজে নাও।”

আদিল চুপ করে থাকে। নওরীন মুজদাহীরের চোখ চিকচিক করছে, হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছে তিনি বলেন,

“সঙ্গীটি যেন ডাক্তারই হয়। এটা তোমার বাবার আদেশ।”

আদিল আর কোনো কথা না বলে দ্রুত সেই ঘর প্রস্থান করে। একবুক ভারী নিশ্বাস নিয়ে ছেলের ছুটে চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে নওরীন। চোখের নোনা জল আদিল ও তার মাকে দেখাতে চায়না, তাই সে নিজ ঘরে ছুটে যায়।

*

তিয়াশা গুটিশুটি মেরে বিকেল ৫ টায় তার ঘরে শুয়ে আছে মনমরা হয়ে। ওদিকে প্যাট্রিসিয়া ও ম্যাথিউ তৈরি হয়ে এসেছে তিয়াশার বাসায় সাথে করে নিয়ে যাবার জন্য।

তিয়াশার মা নীলিমা হাবিব তিয়াশাকে ডেকে তুলতে রুমে গেলে দেখতে পায় তিয়াশা ফুঁপিয়ে কাঁদছে। আজকাল যে তার কিছুই ভালো লাগেনা। ইদানিং অতীতের স্মৃতি গুলো খুব পীড়া দিচ্ছে তাকে।

“কিরে মা, কাঁদছিস কেন?”

“আমার যে কিছু ভালো লাগেনা মা।”

চোখ মুছে দিয়ে তিয়াশাকে ধরে উঠে বসায় নীলিমা হাবিব।

“মা শক্ত হও। তোমাকে শক্ত হতে হবে। সাহসী হতে হবে। অতীতের কথা ভুলে নতুন করে শুরু কর মা।”

তিয়াশা তার মায়ের বুকে মাথা রাখে, নীলিমা হাবিব মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বলে,

“আমি তোমার পাশে সবসময় আছি মা। তোমাকে এই কঠিন সময় পার করে নিজ পায়ে দাঁড়াতেই হবে।”

তিয়াশার মুখের আঁধার কাটতে শুরু করে তার মায়ের কথায়। বুকে স্বল্প সাহস সঞ্চয় হলে সে হাত দিয়ে নিজের অশ্রুধারা মুছে ফেলে।

“হুম মা। আমি আর কষ্ট পাবোনা মা। আমি শক্ত হবো।”

কপালে চুমু একে বলে,

“এইতো লক্ষী মেয়ে আমার। এখন বন্ধুরা এসেছে তোমাকে নিতে। তৈরি হয়ে তাদের সাথে যাও। ঘুরতে গেলে একটু হালকা লাগবে মনটা।”

বলতে না বলতেই ঘরে প্যাট্রিসিয়া প্রবেশ করে, আর তিয়াশাকে ধরে দাড় করিয়ে একটা সজোরে ঝাঁকুনি দিয়ে বলে,

“মাইর দিব ফাজিল মেয়ে। জীবনে দুই একটা দুর্ঘটনা ঘটলেই কি সেখানে জীবন থেমে যাবে? এখন না গেলে আমাদের সাথে তোর খবর আছে।”

তিয়াশা তাও গোঁ ধরে বসে পরে, আর বলে,

“যাবোনা আমি।”

“তুই যাবিনা তোর ঘাড় যাবে।”

ওদিকে তিয়াশার ছোটবোন পৌষী ও এসে তিয়াশাকে জড়িয়ে ধরে বলে,

“আপু, তুমি অবশ্যই যাবে।”

তিয়াশা নাছোড়বান্দা, কোনো নরণ চরণ নাই। বসে আছে ঠায়।

তিয়াশাকে কি আদৌ রাজি করিয়ে নিয়ে যেতে পারবে অনুষ্ঠানে?

চলবে…

আগের পর্বের লিংক:

পর্ব ১০: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/930751060688947/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে