পূর্ণিমা_সন্ধ্যায় পর্ব_১০

0
1210

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_১০
#লেখিকা_তাসনীম_তুষার

মেয়েটি প্রানপনে আমার দিকে দৌড়ে ছুটে আসছিল। আমিও কোনো কিছু না ভেবে তার দিকেই ধাবিত হচ্ছিলাম। খেয়াল করলাম তার পেছন পেছন ছুটে আসছে আরেকটি ছেলে। মেয়েটির মুখে ছিল ভয়ের ছাপ, মনে হচ্ছিল তার থেকে বাঁচতেই আমার দিকে ছুটে আসা। কি যেন কি হলো মেয়েটি দৌড়ে আসতে আসতে হঠাৎ মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।

এভাবেই বর্ণনা দেয়া শুরু করে আদিল। আদনান অধর্য্য হয়ে বলে,

“ভাইয়া, ভনিতা বাদ দিয়ে প্রথম থেকে বল।”

আদিল মুখে সিরিয়াস ভাব নিয়ে আসে। তার চোখের সামনে যেন সব ভেসে উঠে এবং বলা শুরু করে ঘটনাটি।

গাড়ি চালিয়ে ম্যাকডোনাল্ডের পথে রওনা দিয়েছে আদিল মুজদাহীর তার ছোট ভাই আদনানের অনুরোধে তাদের বড় বোন আলিয়ার জন্য খাবার আনতে।

হাইওয়েতে গাড়ি উঠিয়ে কিছুদূর যাবার পর দেখতে পায় সামনে একটি গাড়ি থেমে আছে সার্ভিস লেইনে। থাকতেই পারে, গাড়ির কোনো সমস্যা হলে সার্ভিস লেইনেই গাড়ি থামানোর নিয়ম। তার গাড়িটি যখন ৮০ মাইল বেগে সার্ভিস লাইনের গাড়িটি অতিক্রম করছিল, ডান দিকের জানালা দিয়ে হঠাৎ চোখে পড়লো কারো হাত বারবার গাড়ির জানালায় জোরে আঘাত করছে। প্রথমে আদিল পাত্তা না দিলেও পরে খেয়াল করে বলিষ্ঠ কোনো পুরুষের হাত মেয়েটির হাত চেপে ধরে সরিয়ে নিয়েছে।

আদিলের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জানান দেয় যে পরিস্থিতি ভয়ানক। নিশ্চই কেউ বিপদে পড়েছে। তার গাড়িটি বহুদূর চলে এসেছে তবুও দ্রুত গাড়িটি একই সার্ভিস লেইনে জোরে ব্র্যাক কোষে দাড় করায়। গাড়ি থেকে নেমেই উল্টো দিকে সেই গাড়িটির দিকে দৌড়তে শুরু করে আদিল। ততক্ষনে মেয়েটা গাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়েছে এবং আদিলের দিকেই মেয়েটি প্রানপনে ছুটে আসতে শুরু করে। তারপরেই খেয়াল করে মেয়েটা হঠাৎ মাটিতে লুটিয়ে পরে। আদিল দ্রুত ছুটে যায় এবং মেয়েটির মুখ থেকে চুল সরিয়ে নিজের কোলে মেয়েটির মাথা রাখতে যেয়ে থমকে যায় সে। অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে আবিষ্কার করে বিপদগ্রস্থ মেয়েটি আর কেউ নয়, তিয়াশা। সাথে সাথেই পকেট থেকে মোবাইল ফোনটা বের করে ৯১১ এ কল করে আদিল।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন


আজ সেমিস্টার ফাইনাল এক্সামের শেষ দিন। তিয়াশা, ম্যাথিউ আর প্যাট্রিসিয়া তাদের ক্যালকুলাস এক্সাম শেষে তাদের সেই চিরচেনা সুবিশাল লনের নির্দিষ্ট গাছের পাশে নির্দিষ্ট স্থানে এসে বসেছে। তাদের মনে আজ ভালো মন্দ মিলিয়ে মিশ্র অনুভূতি, এই ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণ থেকে তারা আগামী তিনমাস দূরে থাকবে। কারণ আগামী তিনমাস গ্রীষ্মকালীন ছুটি।

তিয়াশার মন একটু বেশি খারাপ। দুই সপ্তাহ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি বার বার মনে পড়লেও নিজেকে ভুলিয়ে ব্যাস্ত রাখতে পেরেছিল ক্লাস ও সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার জন্য। এখন তো লম্বা অবসর, সেই ভয়ানক ঘটনার কথা যে বারংবার তার স্মৃতিতে এসে হানা দিবে।

তিয়াশা যখন চুপচাপ বসে এসব ভাবছে, তখন দূর থেকে একটা চেনা মানুষ হাসি হাসি মুখ করে তাদের দিকেই হেটে আসছে। তাকে দেখতে পেয়ে ম্যাথিউ তার দিকে হাত নাড়িয়ে বলে উঠে,

“হেই বাডি, কাম ওভার হেয়ার।”

আদনান ও হাত নাড়িয়ে বলে উঠে,

“আই ওয়াস লুকিং ফর ইউ গাইস। আই নিউ দ্যাট আই উইল ফাইন্ড ইউ হিয়ার।”

ম্যাথিউ এর পাশে বসে আদনান, তারপর আড় চোখে একবার তিয়াশার দিকে তাকিয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,

“কেমন আছ তিয়াশা?”

তিয়াশার বিষন্ন মুখে সৌজন্যতার হাসি এনে বলে,

“আলহামদুলিল্লাহ, আমি ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন? আপনার পরীক্ষা কেমন হলো?”

“আমার এক্সাম তো বেশ হয়েছে। এক্সাম শেষ, আমিও বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছি। লম্বা ছুটি সামনে, ভাবলেই মনটা খুশি হয়ে যাচ্ছে।”

প্যাট্রিসিয়া তখন ভ্রু কুঁচকে মজার ছলে বলে উঠে,

“হেই, এম আই ইনভিসিবল টু ইউ?”

“ওহ মাই, অফকোর্স নট। হাও আর ইউ ডিয়ার?”

প্যাট্রিসিয়া একটু ফ্লার্ট করে জবাব দেয়,

“আই এম ওকে নাও”

প্যাট্রিসিয়ার এই কথায় সবাই একসাথে হেসে উঠে, তিয়াশার ঠোঁটেও আলতো হাসি ফুটে। আদনান হাসি থামিয়ে ম্যাথিউ এর দিকে তাকায় এবং বাকি সবার দিকে তাকিয়ে বলে,

“ম্যাথিউ আমার বন্ধু, আর তার ক্লোজ বন্ধু তোমরা। আমিও অফিসিয়ালি তোমাদের বন্ধু হতে চাই।”

তিয়াশার দিকে আড় চোখে তাকায় আদনান তারপর আবার চোখ সরিয়ে ডান হাত বাড়িয়ে দেয় হ্যান্ডশেকের উদ্দেশ্যে এবং বলে,

“আমার সাথে বন্ধুত্ব করবে?”

প্যাট্রিসিয়া সাথে সাথে তার ডান হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করে আদনানের সাথে আর বলে,

“অবশ্যই বন্ধুত্ব করবো।”

প্যাট্রিসিয়া হাত সরিয়ে নিলে আদনান হাত বাড়িয়ে দেয় তিয়াশার উদ্দেশ্যে। কিন্তু তিয়াশা যেন অন্য জগতে বাস করছে। আদনান, প্যাট্রিসিয়া আর ম্যাথিউদের কোনো কথাই যে তার কানে যাচ্ছেনা। সেই তখন মাঠে আসার পর থেকে মাথা নিচু করে অন্যমনস্ক হয়ে আছে। আদনান গলা একটু পরিষ্কার করে আবার বলে,

“তিয়াশা, বন্ধু হবে আমার?”

তিয়াশা হকচকিয়ে উঠে, তখন প্যাট্রিসিয়া তিয়াশার পিঠে হাত বুলিয়ে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে ইশারায় কিছু বলে। তারপর তিয়াশার হাত টেনে আদনানের সাথে মিলিয়ে দিয়ে বলে,

“অবশ্যই বন্ধু হবে।”

আদনান খেয়াল করে তিয়াশা কেমন যেন অন্যমনস্ক রয়েছে। প্রথমদিন কথা বলার সময় তার মাঝে যেই প্রাণচঞ্চলতা ছিল সেটা নেই। মুখ শুষ্ক হয়ে আছে, হাসি নেই, চোখের নিচে কালো দাগ পরে আছে, দেখে মনে হচ্ছে সে কোনো বিষন্নতায় ডুবে আছে। প্যাট্রিসিয়া ও ম্যাথিউ দুজনই তিয়াশাকে খুব আগলে রাখছে। আদনান আন্দাজ করতে পারে কিছু একটা হয়েছে কিন্তু তা আর সবার সামনে জিজ্ঞেস করেনি। পরক্ষনেই বলে উঠে,

“তো বন্ধুগণ, এখন যখন বন্ধুত্ব হয়েই গেল; তখন এই বন্ধুর একটা আবদার রাখতে হবে।”

প্যাট্রিসিয়া ও ম্যাথিউ দুজনেই কৌতূহলী চোখে বলে,

“মানে?”

“মানে হচ্ছে, আমাদের বাসায় আগামী সপ্তাহের শুক্রবারে সন্ধ্যায় একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এবং সেখানে তোমাদের দাওয়াত।”

প্যাট্রিসিয়া জিজ্ঞেস করে,

“দাওয়াত? আই লাভ দাওয়াত। কিন্তু কি উপলক্ষে?”

“আমার ভাইয়ার গ্রাজুয়েশন উপলক্ষে। আমি চাই তোমরা সবাই সেখানে উপস্থিত থাকো।”

ম্যাথিউ ও প্যাট্রিসিয়া দুজনেই সমস্বরে বলে উঠে,

“অবশ্যই আমরা যাবো।”

আদনান তিয়াশার দিকে তাকিয়ে বলে,

“তুমি আসবে তো?”

তিয়াশা একটু ইতস্তত বোধ করে এবং বলে

“না…। আমি আসলে… আসতে পারবোনা।”

আদনানের একটু মন খারাপ হয়। মনে মনে ভাবে, যাকে নিতে চাচ্ছি বাসায় সেই যেতে চাইছেনা। তারপর আবার বলে,

“যদি সম্ভব হয়, এসো। ভীষণ ভালো লাগবে।”

তিয়াশা কোনো উত্তর দেয়না। তখন প্যাট্রিসিয়া বলে,

“আই উইল ট্রাই মাই বেস্ট টু ব্রিং হার টু দি প্রোগ্রাম।”

আদনান মুচকি হাসি দিয়ে বলে,

“তোমরা সবাই আসলে ভীষণ খুশি হব। এখন আমার একটু তাড়া আছে। যেতে হবে। আশা করি দেখা হবে সবার সাথে।”

এই বলে বিদায় নিয়ে চলে আসে আদনান। কিন্তু তার মন খচখচ করছে তিয়াশার বিষন্নতা দেখে। কি হয়েছে তিয়াশার? কেন এত বিদ্ধস্ত দেখাচ্ছে তাকে? সে নাহয় ম্যাথিউ এর কাছ থেকে জেনে নেয়া যাবে।

কিন্তু এখন তার আসল চিন্তা,

তিয়াশা অনুষ্ঠানে আসবে তো? পারবে তো প্যাট্রিসিয়া তিয়াশাকে ম্যানেজ করে নিয়ে আসতে?

চলবে…

আগের পর্বের লিংক:

পর্ব ০৯: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/929224704174916/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে