পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_০৯
#লেখিকা_তাসনীম_তুষার
তিয়াশার চেহারা চোখের সামনে বারবার ভেসে আসছে আদিলের। পড়ার টেবিলে বসেও মনযোগ দিতে পারছেনা।
তিয়াশাকে তার বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে এসেছে কিন্তু সে আর বাড়ির ভেতরে যায়নি। নিজের বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে পড়ার টেবিলে বসেছে এখন। আর দুই সপ্তাহ পরেই ইয়ার ফাইনাল, আর তার পরের সপ্তাহেই ইউনিভার্সিটিতে তার গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠান। এখন পড়াশোনা করাটা তার জন্য অত্যাবশ্যক।
কিন্তু ভীষণ অস্থির লাগছে তার। একমাস আগে তিয়াশাকে প্রথম দেখেছিল এরপর আজ এভাবে দেখা হওয়াটা একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল। এই নিয়ে বহুবার গিয়েছে ম্যাকডোনাল্ডস-এ, আজ ও সে ম্যাকডোনাল্ডস এর দিকেই যাচ্ছিল শুধুমাত্র তিয়াশাকে একবার দেখার জন্য।
পড়ার টেবিল ছেড়ে বারান্দায় ইজি চেয়ারে বসে চোখ বন্ধ করে দুলতে থাকে আদিল। চোখের পাতায় ভেসে আসে, এইতো মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগের ঘটনা। আদনান কল করে আদিল কে বলে,
“হেই ব্রো, তুই কি আমাকে একটা হেল্প করতে পারবি?
“না, পারবো না। এখন সোজা বাসায় যাবো। আমার অনেক পড়াশোনা বাকি।”
“ভাইয়া প্লিজ একটাই হেল্প চাচ্ছি মাত্র। তারপর তোর এক্সাম পর্যন্ত আই উইল নট বদার ইউ।”
“আচ্ছা সাহায্য করবো, তবে একটা শর্ত আছে।”
“ধুর এত শর্ত কেনো?”
“শর্ত না মানলে আমি নাই। রাখলাম।”
“ওয়েট ব্রো, লিসেন…তুই তো প্রায়ই ইউনিভার্সিটির কাছের ম্যাকডোনাল্ডে যাস।”
“হুম যাই। তো কি হয়েছে?”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
আদিল তখন ভাব নিয়ে ভারিক্কি স্বরে বলে,
“কেন? আজ কেন যেতে হবে?”
“একটু যাবি আরকি আমার জন্য।”
“তুই কবে থেকে ম্যাকের খাবার খাওয়া শুরু করলি?”
“ধুর, নট ফর মি। আপি কলড এন্ড ব্ল্যাকমেইলিং মি টু গেট ফুড ফ্রম ম্যাক। আমি না নিলে সে মাইশাকে কল করবে বাসায় আসার জন্য।”
আদিল হা হা করে হেসে বলে,
“তুই আর তোর মাইশা?”
“ভাইয়া প্লিজ তুই ম্যাকে যেয়ে আলুর জন্য চকোলেট সানডে আর আর… কি যেন বললো?”
“আর ফ্রেঞ্চ ফ্রাই…?
“হুম এ দুটো নিয়ে বাসায় এসে আমার হাতে দিবি। আমি সেটা তখন আলুপিকে যেয়ে দিয়ে আসবো। ও মনে করবে আমি নিয়ে এসেছি।”
“কেন তুমি কোন চুলোয় যাচ্ছ? নিজের কাজ নিজে করো।”
“ভাইয়া প্লিজ একটু করে দেনা। এখন আমরা বন্ধুরা মিলে গিটারে একটু গান বাজনা করবো। গান তুলব। সামনে তোর গ্রাজুয়েশনের অনুষ্ঠান না?”
“হুম বুঝেছি। আচ্ছা যা আমিই নিয়ে আসবো। কিন্তু তোরও তো সেমিস্টার ফাইনাল। একটু মন দে পড়াশোনায়।”
“ভাইয়া প্লিজ শুরু করে দিওনা এখন। শুধু এই কাজটা করে দাও। দোয়া করি তুমি সুন্দর একটা বউ পাও। ওহ ডাক্তার বউ।”
“মাইর খাবি। এবারের জন্য করছি। ছোট বলে সবসময় পার পেয়ে যাস। একটু দায়িত্ব নিতে শিখ।”
“ভাইয়া… আই এম গোয়িং নাও। ফ্রেন্ডস আর হেয়ার।”
আদনান টুক করে ফোন কেটে দিলে আদিল হেসে দেয় কারণ সে জানে আদনান একটা পাগলাটে ছেলে, ও নিজে থেকে কিছু করতে না চাইলে সেটা করানো সহজ না। তবে আদিলের জন্য ভালোই হয়েছে। আজ ভেবেছিল যাবে না, পড়ায় মন দিবে। কিন্তু একটা অজুহাত পেয়ে গেল যাবার, দেখা যাক তিয়াশার দেখা পাওয়া যায় কিনা।
আদিল গাড়িতে উঠে রওনা দেয় ম্যাকডোনাল্ডের উদ্দেশ্যে। সবে মাত্র হাইওয়েতে উঠেছে গাড়ি নিয়ে।
আদিলের স্মৃতিচারণে ছেদ পরে হঠাৎ সিগারেটের ধোঁয়ার গন্ধে। চোখ মেলে তাকায় এবং অবাক ও বিস্মিত কণ্ঠে বলে উঠে,
“কিরে আদনান, তুই আবার সিগারেট ধরেছিস?”
আদনান উত্তর না দিয়ে রেলিং এ হেলান দিয়ে, আকাশের দিকে তাকিয়ে সিগারেটে সুখটান দিয়ে ধোয়া তুলতে থাকে। আদিল এবার উঠে দাঁড়ায়। আদনানের পাশে যেয়ে কাঁধে স্পর্শ করে জিজ্ঞেস করে,
“সিগারেটের মরণ নেশা থেকে তোকে অনেক কষ্টে বের করে আনা হয়েছিল। ভাই আমার, তোর সিগারেট খাওয়া যে তোর জীবনে ভালো কিছু বয়ে নিয়ে আসেনা। তাকি ভুলে গেছিস?”
“আজ মনটা খুব ভালো”
“তো? ভালো হলে সিগারেট খেতে হবে?”
“আচ্ছা যা আর খাবোনা”
বলেই সিগারেটের আগুন নিভিয়ে ট্র্যাশক্যানে ফেলে দিয়ে হনহন করে হেঁটে ঘর থেকে বের হয়ে যায়।
“এই আদনান, বলে তো যা কি হলো? রাগ করলি কেন?”
আদনান ঘরের বাইরে থেকে চেঁচিয়ে জবাব দেয়,
“তোকে তো বলতেই এসেছিলাম। দিলি তো মুড টা নষ্ট করে।”
আদিল আনমনে হেসে দেয়, কারণ সে জানে আদনান একটু পরেই আবার ফিরে এসে পেটের সব কথা এসে বলে দিবে তাকে। কিন্তু হঠাৎ সিগারেট খাওয়ার ব্যাপারটা বেশ ভাবাচ্ছে তাকে। কি এমন ঘটলো যে সিগারেট খেতে হলো তার? নাহ খেয়াল রাখতে হবে।
*
আদনান নিজের রুমের বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে আছে। বিছানা বরাবর সরাসরি দেয়ালে টাঙানো বিশাল এক ৬০ ইঞ্চি টেলিভিশনে “আয়রন ম্যান” সিনেমা চলছে। কিন্তু আদনানের তাতে কোনো মন নেই। সে ভাবছে আজকে তিয়াশার সাথে কলেজ ক্যাম্পাসে দেখা ও কথা হওয়ার ব্যাপারটা। তিয়াশার চোখের চাহনি, চোখের নিচে দেয়া কালো কাজল, তার ঠোঁটের হাসি, বাতাসে খেলা করা উন্মুক্ত চুল, সবই যেন তার মন কেড়ে নিয়েছে। আহ তাকে দেখলেই মনে এক শীতল হাওয়া মনে দোলা দিয়ে যায়।
ঘণ্টাখানিক বাদে এসব ভাবতে ভাবতে সে আবার আদিলের ঘরে যায় এবং তার বিছানায় ধুপ করে শুয়ে পরে। আদিল তখন নিজের বিক্ষিপ্ত মনকে শান্ত করতে বিভোর হয়ে চোখ বন্ধ করে বারান্দায় বসে রবীন্দ্র সংগীত শুনছিলো,
“সখী ভাবনা কাহারে বলে
সখী যাতনা কাহারে বলে
তোমরা যে বলো দিবস রজনী
ভালোবাসা, ভালোবাসা…
সখী ভালোবাসা কারে কয়
সেকি কেবলই যাতনাময়”
চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে আদনানও বিছানায় শুয়ে মনোযোগ দিয়ে গান শুনছে। আদিল মুচকি হেসে বারান্দা থেকে উঠে এসে আদিলের পাশে বসে তার চুলে স্পর্শ করতেই আদনান চোখ মেলে তাকায়, তারপর বলে,
“ভাইয়া, ভালোবাসা কারে কয়?”
“আমি কি করে বলবো? আমার কি অভিজ্ঞতা আছে?”
“তা ঠিক, তোর নেই।”
“হুম, তোর তো ছিল, তুই বল।”
“ধুর সেটা কি আসলেই ভালোবাসা ছিল? সেটা ছিল অল্প বয়সের মোহ।”
“ভালো কথা বলেছিস, তোর সেই গার্লফ্রেন্ডের কি খবর? যোগাযোগ আছে এখনো?”
“আরে নাহ। হাইস্কুলেই শেষ। আর বারবার প্রেম বলিস নাতো। ওটা যে কি ছিল নিজেই তো এখনো বুঝে পাইনা।”
“তাই?”
“হুম তাইতো? শোন পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, স্প্যানিশ অথবা ভিনদেশীদের প্রেমে পড়িস না কখনো। ওরা একসাথে অনেকগুলো প্রেম করে। আর সবচেয়ে বেশি ঝামেলা হচ্ছে ওরা পারলে প্রথমদিনই শারীরিক মিলন করতে চাইবে।”
“সেই ভিনদেশীদের পাল্লায় পরেই তো সিগারেট খাওয়া ধরলি, নেশা করা শুরু করলি। কতো কষ্টে এসব ছাড়ানো হলো। ভুলে গেছিস? কেমন গাঁজাখোরের মতো ব্যাবহার করতি তুই।”
“আবার শুরু করলে?”
“তাহলে কেন আবার সিগারেট ধরলি? আর খাবিনা বল? নয়তো বাবাকে বলে দিব।”
“বলেছি তো আর খাবোনা।”
“যাই হোক, এবার তুই বল তুই আবার ফিজিক্যাল কিছু করিস নিত তোর স্প্যানিশ গার্লফ্রেন্ডের সাথে?”
“মাথা খারাপ! আমার এসবে কন্ট্রোল আছে।”
“সম্পর্কটা যেন কেন ভাঙলো তাহলে?”
“ওই যে বললাম, একাধিক প্রেম ছিল তার আর… এ জন্যই তো পালালাম।”
“খুব ভালো হয়েছে যে তুই ফিরে আসতে পেরেছিস। আমার কি মনে হয় জানিস, ভালোবাসলে আমাদের ভাষাভাষীর মানুষকেই ভালোবাসা উচিত।”
“হতে পারে।”
“আচ্ছা এবার বল তখন কি বলতে এসেছিলি?”
আদনান আদিলকে থামিয়ে দিয়ে উল্টো প্রশ্ন করে,
“তার আগে বল? তুই দেরি করে বাড়ি ফিরলি কেন? আমি তো আপির কাছে ধরা খেয়ে গিয়েছিলাম। কত কি বলে ম্যানেজ করে তারপর বাড়ির কাছের ম্যাক থেকে খাবার নিয়ে আসি। তাও আলুর রাগ কমেনা, বলে ক্যাম্পাসের কাছের ম্যাকের খাবার নাকি বেশি মজা। এবারতো তাও কোনোরকম পার পেয়ে গেছি।”
“ওহ গড। আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। ভালোই হয়েছে তোর কাজ তুই নিজেই করেছিস। আসলে রাস্তায় একটা একসিডেন্ট এর প্রত্যক্ষদর্শী ছিলাম আমি। সেখানেই ছিলাম।”
“কি বলিস? তোর কোনো সমস্যা হয়নি তো?”
“আলহামদুলিল্লাহ, আমি ভালো আছি।”
“কি একসিডেন্ট হয়েছিল? আর কিভাবে হলো?”
“আটেম্পট টু রেপ। ভাগ্গিস মেয়েটার কোনো ক্ষতি করতে পারেনি।”
“ওহ মাই গড। সিরিয়াসলি? পুরো ঘটনাটা বল।”
তিয়াশার নাম পরিচয় গোপন রেখে পুলিশের কাছে জবানবন্দিতে ঘটনার যেই নির্মম বর্ণনা দিয়েছিল তিয়াশা, আদিল হুবুহু তা আদনানের কাছে জানায়। আদনান সবটা শুনে খুবই দুঃখিত হয় এবং আদিলকে সাধুবাদ জানায় এমন ভয়ানক সময়ে সেই মেয়েটাকে সাহায্য করতে পেরেছিল বলে। তারপর আদিলকে বলে,
“আই এম প্রাউড অফ ইউ মাই ব্রো। হ্যাটস অফ টু ইউ।”
“মানুষের বিপদেই তো মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত। এটাই তো মনুষ্যত্বের পরিচয়।”
আদনান আদিলের কথায় হেসে দেয় এবং কিছুক্ষন থেমে বলে,
“একটা প্রশ্নতো রয়েই গেল। তুই ঘটনাস্থলে পৌঁছলি কিভাবে ভাইয়া?”
আদিল একটু চুপ করে থেকে উত্তরে বলে,
“ইটস রিয়েলি আ মিরাক্যাল। আল্লাহ বোধহয় আমাকে সঠিক সময়ে সেখানে পৌঁছতে সাহায্য করেছিলেন। কিছুটা সহযোগিতা তুই ও করেছিস অবশ্য।”
“আমি? কিভাবে?”
“ম্যাকডোনাল্ডে পাঠিয়ে। ওই রাস্তাতেই তো হয়েছে।”
“ওহ মাই গড। সিরিয়াসলি? এখন আসল কথা বল, দুর্ঘটনাটি তোর চোখে পড়লো কীভাবে?”
“আচ্ছা বলছি। শোন তাহলে…”
পর্ব ১০ আসছে…
আগের পর্বের লিংক:
পর্ব ০৮: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/927920380972015/
[গল্পটি পড়ে কেমন লাগছে, কমেন্টে আপনাদের মতামত জানাতে ভুলবেন না।]
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন