পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_০৫
#লেখিকা_তাসনীম_তুষার
প্রাসাদসম ডুপ্লেক্স বাড়িটার দোতলায় নিজের বেডরুমের বারান্দায় পায়চারী করছে আদিল। তার মনটা আজ বেশ অশান্ত। তিয়াশার সাথে দেখা করার জন্য আজ সে ম্যাকডোনাল্ড’স এ গিয়েছিল কিন্তু পায়নি তাকে সেখানে। অন্য কর্মচারীদের কাছে তিয়াশার ফোন নাম্বার ও ঠিকানা জানতে চাইলে প্রাইভেসি পলিসির কারণে তাকে সেই তথ্য জানায়নি।
তিয়াশার কথা ভাবতে ভাবতে সিঁড়ি দিয়ে নেমে আদিল তাদের বাসার সুইমিং পুল এর হালকা গরম পানিতে পা ডুবিয়ে বসে পরে। পূর্ণিমার চাঁদ সুইমিং পুল এর পানিতে প্রতিফলিত হয়ে চারপাশে অন্যরকম আলোছায়ার সৃষ্টি করেছে। সুইমিং পুল এর পানিতে একটি চেহারা ভেসে উঠলে আদিলের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে এবং সেদিকে তাকিয়ে বলে,
“তিয়াশা, এসেছ তুমি? এসো কিছুক্ষন বসো আমার পাশে।”
পিঠে হাতের স্পর্শ পেয়ে পেছনে তাকায় আদিল। দেখতে পায় তার ছোট ভাই আদনান মুজদাহীর তার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।
“কিরে ভাইয়া, কার সাথে কথা বলিস?”
“আরে ধুর, কার সাথে কথা বলবো?”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
“Nope. Something is wrong , bro. You are just not telling me.” (নাহ্। কিছু তো একটা রহস্য আছে ভাইয়া। তুই শুধু আমাকে বলছিস না।)
“হুম, তোর মাথা।”
“আমার মাথাই তো? দেখিস এই মাথা দিয়েই আমি খুঁজে বের করবো।”
“আচ্ছা করিস।”
“আচ্ছা শোন। মা খেতে ডাকছে। চল এখন।”
“তুই যা আমি একটু সাঁতার কেটে মাথাটা ঠান্ডা করে আসছি।”
“ঠিক আছে। চল দেখি সাঁতার কেটে কে আগে ওই পাড়ে যেতে পারে।”
বলেই আদনান হাসতে হাসতে তার টি শার্ট খুলে সুইমিং পুল এ লাফ দেয়। আদিল ও তার শার্ট খুলে আদনান কে অনুসরণ করে পানিতে লাফ দিয়ে সাঁতার কাটার প্রতিযোগিতায় নেমে যায়।
আদিল ও আদনান আপন দুইভাই। ঠিক দেড় বছরের ছোট বড়। দেখতে প্রায় একই রকম, সুঠাম দেহ, সুদর্শন, হলুদ ফর্সা গায়ের বরণ, চেহারাতে ও বেশ মিল এবং উচ্চতাও কাছাকাছি। হঠাৎ করে দেখলে বোঝা যায়না কে কোনজন। শুধু পার্থক্য হচ্ছে আদনান চোখে চশমা পরে আর আদিলের নাক খাড়া ও হাসলে এক গালে টোল পরে। দেড় মাস পরেই ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ডক্টর অফ মেডিসিন ডিগ্রি নিয়ে গ্রাজুয়েশন করবে আদিল। আর আদনান বিবিএ ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে একই ইউনিভার্সিটি তে, আর ওর পড়াশোনা শেষ করে বের হতে আরও এক বছর লাগবে।
খাবার টেবিলে বসে আছে আদিল, আদনান তাদের বড় বোন আলিয়া, মা নওরীন মুজদাহীর এবং বাবা ডাক্তার নাদিম মুজদাহীর। নাদিম মুজদাহীর একজন ভারতীয় বাঙালি মার্কিন নাগরিক, লস এঞ্জেলেস শহরের বেশ সুনামধন্য ও সুপরিচিত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ। আলিয়া মুজদাহীরও তাঁর বাবার মতোই হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ হয়ে বের হয়েছে ২ বছর আগে এবং বাবার চেম্বার এই বসে রোগী দেখে।
আদিলও তাদের বাবার পদচিহ্ন অনুসরণ করে তার অনুপ্রেরণাতে ডক্টর অফ মেডিসিন ডিগ্রী নিয়ে বের হওয়ার পথে। এদিকে আদিল একেবারে স্রোতের বিপরীতে গিয়ে ডাক্তারী না পড়ে বিজনেস এডমিনিষ্ট্রেশন বেছে নিয়েছে এবং তার জন্য বেশ অসুন্তষ্ট বাবা নাদিম মুজদাহীর। তাদের মা নওরীন মুজদাহীর একজন খাঁটি বাংলাদেশি মার্কিন নাগরিক এবং পুরোদস্তুর একজন গৃহিণী।
রাতের খাবারের সময়ই শুধু মাত্র নাদিম পরিবারের সবার একসাথে দেখা হয় এবং বিভিন্ন প্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা হয়। আজ পরিবেশ বেশ থমথমে, মনে হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা হবে।
খাবার খাওয়ার মাঝে নাদিম মুজদাহীর একটু কেশে গলা পরিষ্কার করে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং বলেন,
“সবার উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আগামী মাসে আদিলের গ্রাজুয়েশন উপলক্ষে আমাদের বাসায় একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করবো। সেখানে আমার অনেক বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, স্বনামধন্য ডাক্তার ও তাদের পরিবারকে দাওয়াত দেয়া হবে।”
নওরীন মুজদাহীর সমর্থন জানিয়ে বলেন,
“খুব ভালো একটা কথা বলেছ। আমাদের পরিবারে আরোও একজন ডাক্তার হয়ে বের হচ্ছে এর মতো আনন্দের খবর আর হয়না। উদযাপন তো করতেই হবে। তবে এবার আদিলের জন্য একটি মিষ্টি ডাক্তার মেয়ে দেখে বিয়েও দিতে হবে।”
“তাতো অবশ্যই। এই অনুষ্ঠানে একসাথে দুটো কার্যসম্পাদন হবে। এক আমাদের ছেলের ডাক্তার হয়ে বের হওয়া সবার সাথে উদযাপন করা হবে এবং সেই সাথে আমাদের মেয়ে আলিয়া’র বিয়ের ঘোষণাও দেয়া হবে।”
একটু থেমে নাদিম মুজদাহীর আবার বললেন,
“সেদিন যেহেতু অনেক পরিবার উপস্থিত থাকবে, তোমার ছেলেকে বলে দিও সেখান থেকে কোনো মেয়েকে পছন্দ করতে। তবে বলে রাখছি আমি কিন্তু আদিলের জন্য ডাক্তার বউ-ই চাই।”
তারপর মেয়ে আলিয়ার দিকে তাকিয়ে বলেন,
“আলিয়া তো আর কথা শুনলোনা, ডাক্তার ছেলে বিয়ে না করে পছন্দ করলো এক ব্যবসায়ী ছেলেকে। আমাদের প্রথম সন্তান তাই মেনে নিয়েছি।”
আলিয়া খুশি হয়ে আহ্লাদে বলে উঠে,
“সত্যি বাবা, তুমি আমাকে ভীষণ ভালোবাসো।”
ওদিকে আদিল ভীষণ বিরক্ত হচ্ছে এসব কথা শুনে। ইচ্ছা ছিল ইঞ্জিনিয়ার হবার, কিন্তু বাবা মায়ের ইচ্ছায় বাধ্য হয়ে ডাক্তারি পড়ে। এখন ডাক্তার মেয়ে বিয়ে করার বিষয় টা চাপিয়ে দিচ্ছে দেখে তার ভীষণ মেজাজ খারাপ হচ্ছে। খাবার শেষ না করেই সে উঠে চলে যায়।
তাদের মা নওরীন আদিলের উঠে যাওয়া দেখে হেসে বলে,
“আমাদের ছেলেটা বিয়ের কথা শুনে লজ্জা পেয়েছে।”
আদনান ও খাওয়া কোনোরকম শেষ করে যেতে যেতে তাদের বাবাকে জিজ্ঞেস করে,
“বাবা, আমার বন্ধুবান্ধবদের দাওয়াত দিতে পারব তো?”
তাদের বাবা নাদিম মুজদাহীর একটু বিরক্তি নিয়েই উত্তরে জানায়,
“তা পারবে বৈকি। তোমার আর কি, যা মনে চায় তাই করে বেড়াচ্ছ।”
আদনান পরের কথাটি শুনেনি এমন ভাব করে বাবা নাদিম মুজদাহীর কে ধন্যবাদ জানিয়ে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে চলে যায় তার রুমে।
আদিল ও আদনান দুজনই যার যার ঘরে, কিন্তু দুজনই কোনো বিষয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন।
আদিল তার বারান্দায় ইজি চেয়ার এ বসে চোখ বন্ধ করে দুলতে দুলতে ভাবছে, কিভাবে তিয়াশার সাথে আরেকটি বার দেখা করা যায়। তাকে কি দাওয়াত দিবে? দাওয়াত দিলেই কি সে আসবে? আচ্ছা তিয়াশা কি নিয়ে পড়াশোনা করছে? কিছুই তো জানিনা তিয়াশা সম্পর্কে।
আগের পর্বের লিংক:
১. https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/915622528868467/
২. https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/917622012001852/
৩. https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/918995701864483/
৪. https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/920508638379856/