পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_০৩
#লেখিকা_তাসনীম_তুষার
ছেলেটিকে এতক্ষনে ভালো করে দেখার সুযোগ পেলো তিয়াশা। ছেলেটি আনুমানিক ৬ ফুট লম্বা, সুঠাম দেহ, হলুদ ফর্সা গায়ের বরণ ছেলেটি দেখতেও বেশ সুদর্শন। খাড়া নাক, হাসলে একগালে টোল ও পরে। ছেলেটির মাঝে কি যেন কি আছে চোখ ফেরানো যায়না। তবুও তিয়াশা চোখ সরিয়ে ধাতস্থ হয়ে বলে,
“Not again today, sir. I have heard it already.” (আজকের আর নয় জনাব। ইতিমধ্যে একবার শোনা হয়ে গেছে।)
কথাটি বলেই তিয়াশা হেসে দেয়, এবং ছেলেটিও তিয়াশার হাসি দেখে সাথে সাথে হেসে দেয়। তিয়াশা তারপর বলে উঠে,
“Jokes apart. I am really thankful to you for helping me that time.” (আর নয় রসিকতা। আমি আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই তখন আমাকে সাহায্য করার জন্য।)
“No problem at all. It was my pleasure. Every gentleman should do that.” (এটা কোনো সমস্যাই নয়। আমি এর জন্য আনন্দিত।প্রত্যেকটা ভদ্রলোকেরই সে সময় সাহায্য করা উচিত।)
“Thank you once again. Now tell me sir how can I help you? What would you like to order here?” (আপনাকে আবারও ধন্যবাদ। এখন বলুন জনাব আমি আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি? আপনি কি অর্ডার করতে চান?)
ছেলেটি তার পছন্দানুযায়ী খাবার অর্ডার করে সেগুলো সাথে নিয়ে একটি হাই টেবিলে এ যেয়ে বসে যেখান থেকে তিয়াশা কে সরাসরি দেখতে পাওয়া যায়। তার খাবার শেষ করে হাতে কফির কাপ নিয়ে তাতে চুমুক দিতে দিতে ছেলেটি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তিয়াশা কে দেখছে আর ভাবছে আজকালকার যুগেও একটা মেয়ে এতটা সাদামাটা কিভাবে হতে পারে? মুখে না আছে কোনো মেকআপ, না আছে লিপস্টিক তবুও কত স্নিগ্ধ লাগছে মেয়েটাকে। কাজের সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট , কালো ক্যাপ ও বর্ণিল টাই তেও মেয়েটির রূপ যেন আরও জ্যোতি ছড়াচ্ছে। নাহ ছেলেটি চোখ সরাতে পারছেনা। কেন এত ভালো লাগছে তিয়াশা কে দেখতে তার?
রাত ৯ টা। তিয়াশার ম্যানেজার এলবাস ট্রয় তিয়াশাকে আজকে কাজে আসার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে এক ঘন্টা আগেই ছুটি দিয়ে দেয়। তিয়াশাও খুব খুশি হয়ে কাজের জামা বদলে ম্যাকডোনাল্ড’স এর প্রধান দরজার কাছে গেলে দেখতে পায় ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। ব্যাগ থেকে ফোনটি বের করে প্যাট্রিসিয়াকে কল দেয়, কিন্তু দুই তিনটা রিং হবার পরেই রিং হওয়া বন্ধ হয়ে গেলে তিয়াশা আবার কল করার জন্য ফোনটি কানের থেকে নামালে দেখে এক ফোটাও চার্জ নেই। আর তারপরেই ফোনটি বন্ধ হয়ে যায়।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
তিয়াশা খুব অসহায় বোধ করে। কি করবে বুঝতে পারছেনা। সাথে ছাতাও নেই যে এই বৃষ্টির মাঝে বের হয়ে গাড়ি ডাকবে। দরজার সামনে কিছুক্ষন পায়চারি করে সাতপাঁচ ভেবে বৃষ্টির মাঝেই বের হয়ে যায় মনে প্রত্যাশা নিয়ে যদি কোনো ট্যাক্সি পাওয়া যায়।
বাইরে বেশ অন্ধকার, শুধু দুইটা স্পটলাইট জ্বলছে, আর সামনেই ম্যাকডোনাল্ড’স এর ট্রেডমার্ক লোগো প্রায় ৩০ ফুট লম্বা খাম্বার উপরে বিশাল একটা M লেখা। আধো আলো, সাথে বৃষ্টি আর ক্ষনে ক্ষনে ঝড়ো বাতাসে প্রায় ভূতুড়ে লাগছে পরিবেশটা। তিয়াশার শরীর হটাৎ কেন জানি শিরশির করে কেঁপে উঠে। ঠান্ডা বাতাসে, নাকি এই ভুতুড়ে অনুভূতি তে? কারন যেটাই হোক না কেন, তিয়াশা জলদি বাসায় যাওয়ার তাগিদ অনুভব করে।
তিয়াশা এই সাতপাঁচ ভাবে আর দাঁড়িয়ে আছে গাড়ির আশায়। হঠাৎ অনুভব করে যে মাথার উপরে কে যেন একটা ছাতা ধরেছে। তিয়াশা ভড়কে যায়, সাথে সাথে ঘুরে দেখতে গেলে একটি ছেলের বুকে যেয়ে ধাক্কা খায়। মুখ সরিয়ে দেখতে পায় তখন সাহায্য করা সুদর্শন ছেলেটি। তিয়াশা লজ্জা পেয়ে একটু সরে এসে বলে,
“Sorry, I didn’t see you. What are you doing here?” (দুঃখিত, আমি আপনাকে দেখতে পাইনি? আপনি এখানে কি করছেন?)
“I am here at your service mam. I guess you need a lift. If you want I can drop you off at your address.” (আমি এখানে আপনাকে সহযোগিতা করার জন্য ম্যাডাম। আমার ধারণা আপনার লিফ্ট লাগবে। আপনি চাইলে আপনাকে আমি আপনার গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারি।)
“Sorry, I cant take your help all the time.” (দুঃখিত, আমি সবসময় আপনার কাছ থেকে সাহায্য নিতে পারিনা।)
তারপর তিয়াশা একটু কিছু ভেবে বলে,
“If you really want to help me, could you please call me a taxi? My phone is dead.” (আপনি সত্যি যদি আমাকে সাহায্য করতে চান, অনুগ্রহ করে একটি ট্যাক্সি ডেকে দিতে পারবেন কি? আমার ফোনটি বন্ধ হয়ে গেছে।)
“Of course, I can do that. But are you sure you don’t want me to drop you off?” (অবশ্যই পারবো। কিন্তু আপনি নিশ্চিত যে আপনি চান না আমি আপনাকে আপনার গন্তব্যে পৌঁছে দেই?)
“Yeah I’m sure. I don’t want to give you hard time. Just call a taxi. I would really appreciate your help.” (জ্বি আমি নিশ্চিত। আমি আপনাকে কষ্ট দিতে চাইনা। শুধু একটি ট্যাক্সি ডেকে দিন। আমি তাতেই সাধুবাদ জানাই আপনাকে।)
ছেলেটি কথা না বাড়িয়ে পকেট থেকে ফোন বের করতে গেলে অন্য হাতে ধরে রাখা ছাতাটি বাতাসের চাপে একপাশে কাত হয়ে যায়। তিয়াশা কিছু না ভেবেই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সাথে সাথে ছাতা টি ধরে সোজা করে। হঠাৎ ঠান্ডা নরম স্পর্শ পেয়ে ছেলেটি কেঁপে উঠে। তিয়াশা ও ছেলেটির দৃষ্টি অনুসরণ করে দেখতে পায় সে ছেলেটির হাতের উপর হাত রেখে ছাতা টি ধরে আছে। তৎক্ষণাৎ তিয়াশা হাত সরিয়ে ফেলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। ছেলেটিও কিছু হয়নি এমন ভাব নিয়ে ট্যাক্সি কল করে এবং জানায় গাড়িটা আসতে ১০ মিনিট সময় লাগবে।
এদিকে বৃষ্টি বেড়ে চলেছে। গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে দুজনে ম্যাকডোনাল্ড’স এর ভেতর দরজার সামনে দাঁড়ায়। মুখোমুখি দুজন দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু কারো মুখে কোনো সাড়া নেই। ছেলেটি মনে মনে কত কথা ভাবছে মেয়েটিকে বলবে কিন্তু গলায় এসে সব আটকে যাচ্ছে।
ঠিক ১০ মিনিট পরে গাড়িটি আসলে তিয়াশাকে গাড়িতে তুলে দিয়ে বিদায় জানায় ছেলেটি।
গাড়ির ইঞ্জিন চালু হতেই তিয়াশা চিৎকার করে জিজ্ঞেস করে,
“Hey stranger! I didn’t get to know your name.” (এই যে অপরিচিত। আপনার নামটি তো জানা হলোনা।)
“It’s Adil. Adil Muzdahir.” (আদিল। আদিল মুজদাহীর।)
“Thank you Mr. Muzdahir. I will never forget this day.” (ধন্যবাদ মিস্টার মুজদাহীর। আমি আজকের দিনটি কখনো ভুলবোনা।)
আদিল ও হেসে আনমনে উত্তর দেয়,
“I will never forget you too.” (আমিও আপনাকে কখনো ভুলবোনা)
চোখের পলকে গাড়িটি অন্ধকারে মিলিয়ে যায় আর আদিল একবুক নিঃশ্বাস নিয়ে তাকিয়ে রয় তিয়াশার চলে যাওয়ার দিকে।
পর্ব ০৪ আসছে…
আগের পর্বের লিংক:
১. https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/915622528868467/
২. https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/917622012001852/
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন