পূর্ণতার মাঝেও অপূর্ণতার ছোয়া পর্ব-১৩

0
859

#পূর্ণতার মাঝেও অপূর্ণতার ছোয়া
#লেখিকাঃশুভ্রতা শুভ্রা
#পর্বঃ১৩

পরের দিন গুলোতে শুভ্রার আর কিছুই মনে ছিলো না। কিছু মনে করাতে গেলেই তার মাথা ব‍্যথা করতো আর সে অজ্ঞান হয়ে যেতো। আর অতিরিক্ত অজ্ঞান হলে তার কোমায় চলে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিলো। ডাক্তার বলেছিলেন একটু জন‍্য শুভ্রা বেঁচে যায় কারণ ওর ক্ষতটা ততটাও গভীর ছিলো না। সামান্য ছুয়ে গিয়েছিলো গুলি। গুলিতে শুভ্রার কিছু হয়েছিলো না। কিন্তু ও অতিরিক্ত আতঙ্কিত হয়ে যখন অজ্ঞান হয়ে পরে তখন নিচের পাথর দিয়ে ওর মাথায় লাগে। যা আদিলরা বুঝতে পারেনি।

————-

আদিল প্রতিদিন রাতে শুভ্রাকে দেখে যেতো সবসময় শুভ্রার আশেপাশে লোক রাখতো দেখে রাখার। আর আবির ছিলো আদিলের লোক। যে সবসময় শুভ্রার খেয়াল রাখতো যখন আদিল কাজে থাকতো। অনিক জেল থেকে ছাড়া পেতেই আদিলের মনে শুভ্রাকে হারানো ভয় জেগে উঠে। সে শুভ্রাকে আবার বিয়ে করে নেয়।

—————–

আদিল একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে অতীত থেকে বেরিয়ে আসে। সে শুভ্রার দিকে তাকিয়ে দেখে শুভ্রার চোখ ছলছল করছে। আদিল শুভ্রাকে একপাশ থেকে আলতো করে জরিয়ে ধরে বলল, -” আরে পাগলি কান্না করো কেন?”

শুভ্রা কাদোকাদো মুখে বলল, -“আপনি আমাকে এতো ভালোবাসেন।”

আদিল মুচকি একটা হাসি দিয়ে শুভ্রার কপালে গভীর একটা ভালোবাসার পরশ দিয়ে বলল, -” ফজরের আজান দিয়েছে চলো দুইজন মিলে নামাজ পরে একটু রেস্ট নেই। সকালে আবার রাজিবের বাবাকে দেখতে যেতে হবে।”

শুভ্রাও মাথা নাড়িয়ে হ‍্যাঁ বোধক উত্তর দিলো।

তারপর দুইজন একসঙ্গে নামাজ পরে ঘুমাতে গেলো। আজ আদিল আর অন‍্যরুমে যাইনি। অন‍্যদিনের মতোও চুপিচুপি আর শুভ্রার কাছে আসেনি সে। শুভ্রা আজ নিজে থেকেই আদিলের বুকে মাথা রেখেছে। আদিলের আনন্দে চোখ ছলছল করছে।

আদিলের চোখে পানি দেখে শুভ্রা বলল, -“একি আপনি কান্না করছেন কেন?”

আদিল মুচকি হাসি দিয়ে বলল, -“ধুরু কান্না করবো কেন এমনি কিছু না।”

শুভ্রা আর কিছু না বলে আদিলকে জরিয়ে ঘুমিয়ে পরলো।

অন‍্যদিকে সকালের মিষ্টি রোদ লুভা চোখে পরতেই সে পিটপিট করে চোখ খুলে দেখলো ও বসা অবস্থায় ঘুমিয়ে গিয়েছিলো আর রাজিব ওর পেটে মুখ গুজে ঘুমিয়ে আছে। লুভা কেমন যেন অসস্থি লাগছে আবার লজ্জাও করছে। ও মৃদু কন্ঠে ডাকতে লাগলো রাজিবকে উঠার জন‍্য।

রাজিব ধরফরিয়ে উঠলো। সামনে লুভাকে বসে থাকতে দেখে ও বলল, -” তুমি সারারাত এরকম করে বসেই ছিলে। ওহ সিট তোমাকে অনেকটা কষ্ট দিয়ে ফেললাম তাই না। আসলে আমি বুঝতে পারিনি।”

লুভা বলল, -“বাদ দেন তো সব এখন ফ্রেস হয়ে রেডি হয়ে খাবার খেতে চলুন। আমি খাবারের ব‍্যবস্থা করছি।”

শুভ্রার আর আদিল সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে খেয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্য রওনা দিলো। ওরা হাসপাতালে পৌঁছে দেখলো অভ্র অনুভব রাজিব আর লুভা ওখানে রয়েছে। আদিল গিয়ে বলল, -“কি অবস্থা এখানে।”

অনুভব বলল, -“আঙ্কেল জ্ঞান ফেরার পর রাজিব আর লুভা গিয়েছিলো ওনার কাছে ওনি খুব খুশি হয়েছেন। ডাক্তার বলছেন, দুইজন পর ওনাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া যাবে।”

আদিল বলল, -“আলহামদুলিল্লাহ্ আর লুভার বাড়িতে কি খবর?”

অভ্র বলল, -“আমি সেখানে গিয়েছিলাম সব ঠিক করে এসেছি। ওনারা বলেছেন আঙ্কেল একদম সুস্থ হয়ে গেলে ওনারা রাজিব আর লুভার ধুমধাম করে বিয়ে দিবেন।”

আদিল বলল, -“বাহ বাহ কি শোনালি ভাই অবশেষে বন্ধুর বিয়ে খেতে পারবো।”

আদিলের কথা শুনে সবাই হাসলো।

আদিল বলল, -“তাহলে ভাবছি আরেকটা বিয়েও দিবো এরসাথে।”

অনুভব বলল, -“কার বিয়ে ভাই?”

আদিল বলল, -“কেন আমাদের নুসরাতের।”

অভ্র উত্তেজিত হয়ে বলল “মানে”

আদিল হেসে বলল, -“আরে ভাই এতো উত্তেজিত হওয়ার কিছু নেই তোর সঙ্গেই দিবো।”

সবাই আরেক দফা হাসলো আর অভ্র লজ্জায় পরে মাথা চুলকিয়ে বলল, -“আমার এখন যেতে হবে একটা কাজ মনে পরে গেছে।” বলেই কাউকে কিছু না বলতে দিয়ে অভ্র চলে গেলো।

আদিল হাসতে হাসতে বলল, -“আমাদের ও যেতে হবে ভার্সিটি। তাহলে এবার আসি।”

রাজিব আদিলকে জরিয়ে ধরে বলল, -“দোস্ত আসলে তুই অনেক ভালো রেএ কিন্তু অনিক তা বুঝলো না।”

আদিল বলল, -“বাদ দে তো ওইসব আর কে বলেছে আমি ভালো? দেখ না আমি তোদের না বলেই বিদেশ গিয়ে কতো আনন্দ করে আসলাম।”

রাজিব বলল, -“যাহ শালা একটু প্রশংসা করলেও তোর গায়ে লাগ। যাহ ভাগ এখান থেকে।” বলে দুইজনই হাসলো।

অনুভব বলল, -“ভাই এবার আমাকে সেট করে দে। আর কতোদিন এমন সিঙ্গেল সিঙ্গেল ঘুরবো। সবগুলো বউ নিয়ে ঘুরবি তখন আমার কি হবে?”

আদিল বলল, -“তুই সিঙ্গেলই মরবি। এখনো পযর্ন্ত একটা মেয়েকেও পটানো তো দূরে কথা পছন্দও করতে পারলি না। তোর দ্বারা কিছু হবে না।”

অনুভব বলল, -“হুম ভালো আমি বাসায় গেলাম। আমার ঘুম ধরছে। থাক তোরা।” বলেই হনহন করে চলে গেলো।

অনুভবের এমন রেগে যাওয়ায় ওরা হাসলো। আদিল বলল, -“তাহলে থাক আমরা যাই।”

রাজিব বলল, -“হুম সাবধানে যাস।”

অনুভব গাড়ি চালিয়ে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলো। হঠাৎ করে তার গাড়ির সামনে কেউ চলে আসায় সে তাড়াতাড়ি করে গাড়ি থামালো। সে গাড়ি থেকে নেমে দেখে একটা মেয়ে। অনুভব রাগী কন্ঠে বলল,

-“চোখ কি বাসায় রেখে আসেন নাকি! এইরকম করে মাঝ রাস্তায় হাটার মানে কি? কি হলো কথা বলছেন না কেন? বো…..আর কিছু বলতে পারলো না অনুভব কারণ তার চোখ আটকে গেছে মেয়েটির দিকে। মেয়েটি তেমন ফর্সা না শ‍্যামলা তবে তার চোখ মায়া ভরা একবার তাকালে আর ফেরানো যায় না। অনুভবের ক্ষেএেও একি অবস্থা। হঠাৎ করেই মেয়েটি অনুভবকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে বলল, -“অনুভব ভাই বাঁচাও আমাকে। ও আমাকে মেরে ফেলবে।”

মেয়েটির এমন আচমকা কাজে অনুভব থতমত খেয়ে যায়। অনুভব নিজেকে ছাড়িয়ে বলে, -“এই মেয়ে তুমি আমাকে চেনো কিভাবে? আর কে ও যে তোমাকে মারতে চায়।”

মেয়েটি পিছনে ইশারা করতেই অনুভব দেখলো একটা পাগল। সে তাড়াতাড়ি করে মেয়েটির হাত ধরে গাড়িতে উঠে দ্রুত গাড়িটি একটু দূরে নিয়ে গেলো। গাড়ি থামিয়ে বল, -“এবার বলো তুমি এই পাগলের দৌড়ানি কিজন‍্য খেলে আর তুমি আমার নাম জানো কিভাবে?”

মেয়েটি বলল, -“আসলে আমি আপনার বাসার পাশের ফ্লাটেই নতুন এসেছি আমি আপনাকে চিনলেও আপনি আমাকে চেনেন না। সে যাইহোক আমি বাসা থেকে একটু বের হয়েছিলাম হঠাৎ করেই ওই পাগল রহিমা বলে আমার দিকে ছুটে আসতে লাগে। আর আমি ভয়ে দৌড় দেই।” বলেই মেয়েটি মাথা নিচু করে থাকে।

কিছুক্ষণ নিরব বসে থেকে অনুভব অট্টহাসিতে ফেটে পরে আর মেয়েটি কিছু না বুঝতে পেরে ফেলফেল করে শুধু অনুভবের দিকে তাকিয়ে থাকে। অনুভব অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে বলে, -“আচ্ছা তুমিই কি সেই ভীতু সারা। আর ওই পাগল তোমাকে ওর বউ মনে করছিলো আল্লাহ্ গো” বলেই আবার হাসতে লাগলো।

এইদিকে সারা তো রেগে আগুন অনুভব তার ক্রাশ তাকে ভীতু বলল। নিশ্চিত ওর ছোট ভাই পুরো পাড়া বলে বেরিয়েছে যে ও ভীতু ও খালি একবার ওর ভাইকে কাছে পেয়ে নিক।

অনুভব বলল, -“এখন যাও কোথায় যাবে ওই পাগল সরে গিয়েছে। এরপর থেকে একটু সেফলি চলাফেরা করবে কখন আবার পাগলটা তোমাকে বউ ভেবে তুলে নিয়ে যায় বলা যায় না।” বলেই আবার হাসতে লাগলো।

সারা গাড়ি থেকে নেমে ঠাস করে দরজা গাড়ির লাগিয়ে হনহন করে চলে গেলো।

ভার্সিটিতে আদিল আর শুভ্রাকে একসঙ্গে হেসে হেসে কথা বলতে দেখে অনিক তার হাতে থাকা খাতাটা জোরে ছুরে মারে।

আদিল আর শুভ্রা যখন ভার্সিটিতে আসছিলো তখন অনিক তার কেবিন থেকে ওদের দেখতে পায়। সে সঙ্গে সঙ্গে কল করে আর বলে, -“আমি আর সহ‍্য করতে পারছিনা ওদের একসঙ্গে। কিছু একটা বলো কি করবো ওদের?”

ওই পাশ থেকে কথা ভেসে উঠলো, -“কুল মাই বয় কুল এতো উত্তেজিত হতে নেই শান্ত থাকো। আমি ভাবছি কি করা যায়।”

অনিক ওর ফোন ছুড়ে ফেলে দিলো। আর বলল….

( চলবে )

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে