পুরোনো_ভালোবাসা   পার্ট: ৬

0
2206

পুরোনো_ভালোবাসা

পার্ট: ৬

#Rabeya Sultana Nipa

__নিশু বাসায় এসে নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।তা দেখে ইয়াসমিন বেগম দৌড়ে এসে দরজা ধাক্কানো শুরু করলো।
নিশু কি হয়েছে তোর দরজা খোল।নিশু! নিশু!
শিহাব এসে দেখে ইয়াসমিন বেগম দরজা ধাক্কাচ্ছে।
শিহাব-কি হয়েছে মা আপনি দরজা ধাক্কাচ্ছেন কেন?
ইয়াসমিন বেগম -দেখনা শিহাব নিশু বাহিরে থেকে এসেই দরজাটা বন্ধ করে দিলো। বাহিরে কি হয়েছে শিহাব?তোমাদের কি ঝগড়া হয়েছে?
শিহাব-না মা! আসলে আমার এক ফ্রেন্ডের সেথে অনেক দিন পর দেখা হয়েছে।ওর সাথে দেখা হওয়ার পর থেকেই নিশু এই রকম করছে।
ইয়াসমিন বেগম -তোমার কোন ফ্রেন্ড? নাম কি ওর?
শিহাব-ওর নাম অনিক।খুব ভালো ফ্রেন্ড আমার।অনেক দিন ওর সাথে কোনো যোগাযোগ হয় নাই।আজ হঠাৎ রেস্টুরেন্টে দেখা হয়েছে।
__অনিকের নামটা শুনেই ইয়াসমিন বেগম কি বলবে শিহাবকে বুজতে পারছেনা।
শিহাব! ওকে ডিস্টার্ব করনা ওর যখন মন ভালো হবে দেখবে নিজেই দরজাটা খুলে দিবে।তুমি আবিরকে আমার কাছে দাও।তুমি ফ্রেস হয়ে আসো।
আবির-বাবাই! আম্মুর কি হয়েছে। আম্মু কি তোমার সাথে রাগ করেছে?
শিহাব-না বাবা তোমার আম্মুর শরীর ভালো নেই তাই দরজা বন্ধ করে রেখেছে।দেখবে একটু পর তোমায় এসে আদর করে দিবে।
_মা! আমি একটু বাহিরে যাচ্ছি আবিরের দিকে খেয়াল রাখবেন বলে শিহাব বাহিরে চলে গেলো।
__নিশু সব শুনছে শিহাবের বলা কথা গুলো। হয়তো শিহাব কিছুটা বুজতে পেরেছে, নিশু কষ্ট পাবে বলে কিছু বলতে চাইছেনা।শিহাব তাকে পাগলের মতো ভালোবাসে।নিশু কষ্ট পাবে এমন কোনো কাজ শিহাব করে না। নিশুও শিহাবকে ভালোবেসে পেলেছে তাই নতুন করে সে শিহাবকে হারাতে চায় না।এইসব কথা ভাবতে ভাবতেই নিশু পুরোনো দিন গুলোর কথা মনে পড়ে গেলো।যেই দিন গুলো নিশুর অভিশাপ বলেই মনে হয়।কথা গুলো মনে পড়তেই চোখের পানি গুলো আর ধরে রাখতে পারছে না নিশু।
__কিরে অনিক দুই মাস ধরে দেখছি তুই একি সময় এসে এখানে বসে চা খাস। কাউকে পাহারা দেস নাকি? ব্যাপার কি ভাই নাকি প্রেমে পড়ছোস? অনিকের ফ্রেন্ড রাফি কথা গুলো বলছে আর হাসছে।
__অনিক অনেকক্ষণ রাফির দিকে তাকিয়ে থেকে বললো আমার একটা হেল্প করবি?
রাফি-বল তোর কি হেল্প লাগবে।তোর জন্য সব কিছু করতে রাজি।
__রাফির কথা শুনে অনিক নিশুর ব্যাপারে সব বললো।
রাফি-সব বুজলাম কিন্তু তুই মেয়েটাকে কেন বলিসনা তুই তাকে ভালোবাসিস।
অনিক-ওর সামনে গেলেই আমি সব গুলিয়ে পেলি। তাই সাহস করে বলতে পারিনা।
রাফি -ঠিক আছে।তুই শুধু দেখ আমি কি করি।কথাটা বলেই রাফি ওঠে গেলো।
__কলেজ শেষ করেই নিশু বাড়ি ফিরছিল এমন সময় কে জেন পিছন থেকে ডাকদিলো
__নিশু! এই নিশু! দাড়াও! তোমার সাথে আমার একটু কথা ছিলো।
নিশু-যাহ,,,, ,, বাবা এই লোকটা আমার নাম জানলো কিভাবে?
রাফি-আমি জানি তুমি কি ভাবছো। আমি তোমার নাম জানলাম কি করে তাইতো? জানবো না কেন বলোতো? আমার ফ্রেন্ড অনিক তোমার প্রেমে দেওয়ানা হয়ে গেছে।কিন্তু তোমাকে বলার সাহস পায়না।যদি তুমি চাও তাহলে ও তোমার সামনে এসে কিছু কথা বলতে চায়।

__রাফির কথা গুলো শুনে নিশু তো অবাক।এইতো মেঘ না চাইতে বৃষ্টি। ওকে দেখার পর এই দুই মাস শুধু ওকে ভেবেই সময় কেটেছে। আজ ও নিজেই কাছে আসতে চায়।( মনে মনে, নিশু হ্যাঁ বলে দে)

এমন সময় পিছন থেকে অনিক বললো আমি জানি নিশিতা তুমিও আমাকে ভালোবাসো।
__ পারবেন সারা জীবনের জন্য আমাকে ভালোবাসতেন? নাকি মাঝ পথে রেখে চলে যাবেন?
যদি সারা জীবনের জন্য হাত ধরতে পারেন তাহলে আমার সামনে আসবেন।কথা গুলো ভেবে দেখবেন। আজ আমি আসি।
__কথা গুলো বলেই নিশু চলে গেলো। অনিক আর রাফি দুজনে হাটছে।অনিক নিশুর কথা গুলো ভাবছে।
রাফি-কিরে এতো কি ভাবছিস? তবে মেয়েটা ঠিকে বলছে। কি বলিস তুই?
অনিক-হুম ঠিক বলছে।আচ্ছা আমি বাসায় যাই পরে দেখা হবে।

__নিশু অনিকের কথা গুলো ভাবছে। অনিক কি সব কিছু মেনে নিয়ে তার সামনে আসবে।নাকি আর কখনওই তাদের দেখা হবে না।কথা গুলো ভাবতে ভাবতে নিশু ঘুমিয়ে পড়লো।

__আনিকা! আনিকা! তুই কি ঘুমিয়ে গেছিস?
কথাটা বলতে বলতে অনিক আনিকার রুমে এলো।
আনিকা-না এখনো ঘুমাই নাই। কিন্তু কেনরে ভাইয়া?
অনিক-আচ্ছা! তোর কাছে নিশিতাকে কেমন লাগে? আনিকা-আমি জানি ভাইয়া তুই নিশিতাকে ভালোবাসিস।আর আজকে তুই তাকে প্রপোজ করেছিস তাই নারে?
__ভাইবোন মিলে কোন মেয়ের কথা বলছিস আমাকে শুনানো যাবে? কথা গুলো বলতে বলতে অনিকের মা রেহানা বেগম রুমে ডুকলেন।
অনিক-না মা! তেমন কিছু না।।
আনিকা-ভাইয়া! তুই মিথ্যা বলছিস কেন?
মা জানো! ভাইয়া আমার ফ্রেন্ড নিশিতাকে ভালোভাসে।
__কথাটা শুনেই রেহানা বেগম অনিকের মাথা হাত রেখে বললো তোদের বাবা অনেক কষ্টকরে তোদের মানুষ করেছে।তুই ভালো করে পড়ালেখাটা কর আমি ভালো মেয়ে দেখে তোর বিয়ে দিবো।অনিক কথাটা শুনে উঠে চলে গেলো তার রুমে।

আনিকা-মা! তুমি ভাইয়াকে এইসব কথা না বললেও পারতে।নিশিতা অনেক ভালো মেয়ে।তুমি বাবার সাথে কথা বলে দেখো হয়তো বাবাও রাজি হবে।

__কলেজে যাওয়া জন্য নিশু রিকশার জন্য অপেক্ষা করছে।এমন সময় একটা রিকশা তার সামনে এসে দাঁড়ালো। তাকিয়ে দেখে অনিক রিকশায় বসে আছে।

অনিক-আমার সাথে আসো কলেজে নামিয়ে দিবো।না আসলে তোমার কলেজের দেরী হয়ে যাবে।
__নিশুও ভাবছে একটা রিকশাও পাচ্ছি না।এমনিতে আজ অনেক দেরী হয়ে গেছে।তাই কিছু না বলে অনিকের পাশে বসলো।দুজনেই চুপচাপ বসে আছে। কিছু দূর যাওয়ার পরে অনিক নিশুর হাতটা ধরলো।নিশু-আরে কি করছেন আপনি?
অনিক-তুমিই তো কাল বললে যদি তোমায় সারাজীবনের জন্য ভালোবাসি তাহলে হাত ধরতে।তাই আমি ভেবে দেখেছি আমি তোমাকে মাঝ পথে না সারাজীবনেও ছাড়তে পারবোনা।
__নিশু কথাটা শুনে অনিকের দিকে তাকিয়ে আছে।অনকির কাঁধে মাথা রেখে বললো তুমি সারাজীবন আমাকে এইভাবে ভালোবাসবেতো?

__তোমার না কলেজের দেরী হয়ে যাচ্ছে?নিজেতো ইমোশনাল হয়ে যাচ্ছো আমাকেও ইমোশনাল বানিয়ে ফেলছো।একদম পড়ায় ফাঁকিবাজি চলবেনা।

নিশু-এই ছেলে এখনো প্রেম শুরুই করলাম না এর মাঝেই বকাবকি শুরু হয়ে গেছে।কি ছেলেরে বাবা।
অনিক-বেশি ভালোবাসি তোমায় তাই।

চলবে,,,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে