পুতুল বিয়ে পর্ব-০৫

0
1118

#পুতুল_বিয়ে
(এক আপুর জীবন কাহিনী)
#৫ম_পর্ব
#অনন্য_শফিক



উপায়হীন হয়ে কী করবো না করবো বুঝতে পারছিলাম না।তাই বাসার সামনে বারান্দায় বসে কাঁদছিলাম।আর একটা অজানা ভয়ে থরথর করে কাঁপছিলাম।
হঠাৎ একটা অলৌকিক ঘটনা ঘটে গেলো। বাসার সামনের উঠোন পেরিয়ে যে সরু রাস্তা ওখান দিয়ে আমার বড় বোনের মতো কাউকে হেঁটে যেতে দেখলাম। ওকে দেখেই কেমন চমকে উঠলাম আমি। যেখানে আগে ভয়ে ভয়ে ছিলাম ওরা যদি আমায় খুঁজে বের করে ফেলে তখন আমার কী হবে? সর্বনাশ তো হবেই। কিন্তু এখন এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে আমি হাতের নাগালে স্বর্গ পেয়েছি। বেঁচে থাকার একটা সম্বল হাতের নাগালে পেয়েছি।আমি দৌড় দিলাম।বসা থেকে উঠে এক দৌড়ে মেয়েটির কাছে গেলাম।হ্যা আপুই। আমার বড় আপু। আপুকে দেখেই দৌড়ে গিয়ে ওর বুকে হামলে পড়লাম।
আপু আমার দিকে তাকিয়ে রাগে চোখ লাল লাল করে আমার গালে দুটো চড় বসিয়ে দিলো। তারপর সে নিজে থেকেই আমায় বুকে টেনে নিয়ে কাঁদতে লাগলো।আর বলতে লাগলো,’এটা কীভাবে করতে পারলি তুই? জানিস তোর কথা ভেবে মা কতবড়ো অসুখ বাঁধিয়েছে!’
আমি কথা বলতে পারি না। শুধু কাঁদি। তারপর ওকে টেনে নিয়ে বাসায় আসি।
ও বলে,’আল্লার কী খোদরত দেখ! ভেবেছিলাম অত বড় শহরে তোকে কোথায় পাবো? কিন্তু আল্লাহ খুব সহজেই তোকে পাইয়ে দিলেন। আচ্ছা মিতুল কোথায়?’
হাঁটতে হাঁটতে বাসার দিকে যাচ্ছি।আপুর কথা শুনে বুকটা আমার ধ্বক করে উঠলো।আমি ভেজা গলায় বললাম,’ও আমায় রেখে চলে গেছে!’
আপু আশ্চর্য হওয়া গলায় বললো,’কী বললি!’
আমি কেঁদে ফেললাম। কেঁদে কেঁদে বললাম,’আপু,ও একটা প্রতারক।আমি ছাড়াও ওর আরেকটা গার্লফ্রেন্ড আছে।ওর সাথে রেগ্যুলার কথা বলে।’
আপু আমায় জড়িয়ে ধরলো। সান্তনা দিলো।বললো,’ব্যাপার না।যা হবার হয়ে গেছে। আল্লাহ ভালোর জন্যই সব করেন।ও চলে গেছে তাই তুই বেঁচে গিয়েছিস। ওদের পরিবার সম্পর্কে আমরা খোঁজ নিয়েছি।ওরা ধনী হলে কী হবে ওদের চরিত্র ভালো না।ওর বাবাও খারাপ মেয়েদের কাছে যায়!’
আমি কথা বলি না।চুপ করে শুধু শুনি।
আপু বলে,’আগামীকাল সকালের ট্রেনে আমরা চলে যাবো।ঠিক আছে? তারপর বাড়িতে গিয়ে আবার তুই পড়াশোনা করবি। এখানে যা ঘটেছে তা এখানেই রেখে যাবি। সাথে নিয়ে যাওয়া যাবে না এসব চিন্তা ভাবনা!’
আমি বললাম,’আপু,কাল তো যাওয়া যাবে না।আরো দু’দিন থাকতে হবে।অফিস থেকে স্যালারি দিবে আগামী পড়শুদিন।স্যালারি নিয়ে বাসা ভাড়া চুকাতে হবে। দোকানের পাওনা আছে।’
আপু বলে,’ঠিক আছে। দু’দিন থাকবো এখানে। কোন সমস্যা নাই। আচ্ছা তোর সাথে কী কী ঘটেছে বলতো?অত প্রেমের মাঝে সবকিছু এমন এলোমেলো হয়ে গেল কেন?’
আমি সবকিছু খুলে বললাম আপুর কাছে। এমনকি মঞ্জুর বিষয়টাও।আপু শুনে ভয়ে আঁতকে উঠলেন।আর বললেন,’এখানে রাতে কিছুতেই থাকা যাবে না।চল।আমরা সোনাপুর যাবো। ওখানে আমার এক বন্ধু থাকে। ওদের বাসায় দু’দিন থাকবো। তারপর ওখান থেকে এসে ভাড়া চুকিয়ে বাড়ি ফিরবো।’
আমি বললাম,’আচ্ছা।’

বাড়ি ফিরেছি আজ তিনদিন হলো।মা সত্যিই অনেক রোগা হয়ে গিয়েছেন। আমার জন্য অনেক কেঁদেছেন।কষ্ট পেয়েছেন খুব।মার জীবনটা সত্যিই কষ্টের।বাবা আমাদের ছোট্ট রেখে মারা গিয়েছিলেন।দাদু আমাদের সম্পদের ভাগ দিয়ে যাননি।দাদুর মৃত্যুর পর চাচারা মিলে আমাদেরকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। আমাদের পাওনা সম্পদটুকুও ওরা গ্রাস করে।মা তখন আমাদের নিয়ে মামার বাড়ি উঠে।এখানেও কত কষ্ট।মামীদের কত কথা যে শুনতে হতো তাকে।মামারাও অনেক সময় অনেক কিছু বলে বসতো।মা কাঁদতেন।সারা জীবন গেল তার কান্নায় কান্নায়। এখন আমরা বড় হয়েছি। এখন মার সুখ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমার জন্য হলো না।আমি মাকে কাঁদালাম। খুব করে কাঁদালাম।কষ্ট দিলাম আবারও।
মা তবুও আমায় বুঝালেন। বললেন,’যা হয়েছে হয়েছেই। এখন অতীত ভুলে ফেল। পড়াশোনা কর। পড়াশোনা শেষ হলে একটা চাকরি নিবি। তারপর দশটা ছেলে দেখে ভালো একটা ছেলের কাছে তোকে বিয়ে দিবো!’
মার এই কথাও রাখতে পারিনি আমি।বাড়ি ফেরার এক মাস পর মিতুল আমার সাথে যোগাযোগ করে।ও সরি বলে আমার কাছে। তারপর বলে,ও আমায় ওর বাড়িতে নিয়ে যেতে চায়। স্ত্রীর মর্যাদা দিতে চায়। তাছাড়া বলে, আগে তার রাগ হয়েছিল। কিন্তু এখন সে বুঝতে পেরেছে আমার সাথে এমন করা উচিৎ হয়নি। বাড়িতে এসে আমার জন্য সে অনেক কষ্ট পেয়েছে।আমায় ভুলে থাকতে পারে না সে।তাই আমায় নিতে এসেছে।
আমি বলি,’আমায় নিতে হলে ওই মেয়ের সাথে কোন যোগাযোগ রাখা যাবে না।’
মিতুল তখন বলে,’ওর সাথে কোন সম্পর্ক নাই আমার।কসম!’
তারপর মায়ের অবাধ্য হয়ে আবার ওর সাথে যাই
ওর বাড়িতে যাই।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে