#পুতুল_বিয়ে
(এক আপুর জীবন কাহিনী)
#৪র্থ_পর্ব
#অনন্য_শফিক
‘
‘
‘
মঞ্জুকে দেখে ভীষণ ভয় পেয়েছিলাম।আর তাকে খারাপ ভেবেছিলাম। কিন্তু দেখা গেল আমার ধারণা ভুল।সে এরপর আর ক’দিন আসেনি। একদিন পেঁয়াজ আর কাঁচা মরিচ আনতে দোকানে গেলাম। তখন মঞ্জু বললো,’বইন।আইতাম পারি না আগের মতন। সারাদিন এই কাম ওই কাম, দোকানে কাম কাজ ঝামেলা এইসব লাইগাই থাকে। তুমি আবার রাগ কইরো না।ভাইবো না তোমার ভাই তোমারে ভুইল্যা গেছে!আমি কিন্তুক তোমারে ভুলি নাই।আসবাম।আমি সময় পাগলেই আসবাম!’
মাস শেষ হতে আর তিনদিন বাকী। এরপর বোধহয় স্যালারি পাবো।স্যালারি পেলেই ওর টাকা বুঝিয়ে দিয়ে একটা হোস্টেলে উঠে যাবো। এখানে থেকে থেকে শুধু শুধু অত টাকা নষ্ট করে লাভ কি কী?
‘
কিন্তু রাতের বেলায় বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবি,এই বাসাটা বদলাতে পারবো না আমি কিছুতেই।বাসাটা বদলিয়ে ফেললে মিতুল আমায় কী করে খুঁজে পাবে? আমার দীর্ঘ বিশ্বাস মিতুল আসবে।আজ না হোক কাল।মিতুল আমার কাছে আসবেই! আমাকে ছাড়া ও থাকতে পারবে না!
‘
দু’দিন পর রাত আটটার দিকে চুলোয় রান্না চড়িয়েছি আর তখনই মঞ্জু এসে হাজির। মঞ্জু এসে বলছে,’বইন, আইজকা একটু টাইম পাইছি।ভাবছি বইন কী রান্ধাবারা করে দেইখা আইগা।পেডেও খিদা আছে।ভাই বইন একলগে বইয়া গাপ্পুস গুপ্পুস খাইবাম!’
বলেই হে হে হে করে হেসে উঠেছে মঞ্জু।
আমার আবার বিরক্তি লাগছে। কিন্তু করার তো আর কিছু নাই!সে আমার কাছে পাওনাদার।আমি তার কাছে ঋণী।ঋণের দায়ে হলেও তার সাথে আমার ভালো ব্যবহার করতে হবে!
আমি বললাম,’বসেন। বেগুন দিয়ে শুঁটকি মাছ রাঁধতেছি। খাবেন!’
মঞ্জু বললো,’বইন, তোমার কাছে গ্যাস্টিকের বড়ি আছে এক আড্ডা?’
আমি বললাম,’না ভাইয়া নাই!’
মঞ্জু মুখ কুঁচকে বললো,’পেটডাত বিরাট বেদনা করতাছে।’
বলেই সে পেটে ধরে শুয়ে পড়লো।
আমি ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেলাম। একটা লোক আমায় বোন বলে ডাকে,সে এসে আমার ঘরে অসুস্থ অবস্থায় পড়ে আছে তার জন্য আমি কিছু করতে পারছি না!
মঞ্জু ব্যাথায় কঁকাচ্ছে।কঁকাতে কঁকাতে বলছে,’বইন পেটডা ছিঁইড়া যাইতাছে।ও বইন বাঁচতাম না মনে হয়! আমার পেটডা ছিঁইড়া যাইতাছে!একটু ধরবা বইন চাপ দিয়া পেটডাত!’
একটা অসুস্থ মানুষ আমার সামনে এমন ভাবে অসুখে কাতরাচ্ছে! আমায় অনুরোধ করছে তার ব্যথার পেটে একটু চাপ দিয়ে ধরার জন্য। কিন্তু আমি অস্বস্তিতে ভোগছি। ওর পেট চেপে ধরবো,এটা কী করে সম্ভব!
কিন্তু ওর আহাজারি শুনেও খারাপ লাগছিলো।আমি যখন ওর পেটে চেপে ধরবো কী ধরবো না এমন দুটানায় ভোগছি ঠিক তখন আমার একটা হাত খপ করে ধরে ফেললো মঞ্জু।সেই হাত সে টেনে নিলো তার দিকে। একেবারে তার নাভীর কাছে। তারপর। তারপর হাতটা জোর করেই টেনে নিয়ে গেল নাভির নিচের দিকে!
সঙ্গে সঙ্গে আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বুঝিয়ে দিলো আসন্ন বিপদের কথা।আমি ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে ওর হাতে একটা কামড় দিয়ে ওর কাছ থেকে কোনমতে বাঁচলাম। কিন্তু এরপর কীভাবে বাঁচবো?
মঞ্জু লাফিয়ে উঠেছে বিছানা থেকে। তারপর আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলছে,’দৌড়ঝাঁপ দিও না।ভালাই ভালাই রাজি হইয়া যাও।এতে তোমার লাভ। জীবন ভরা দোকান থাইকা বাকী খাইবা টেকা শোধ করন লাগবো না!মাছ গোশতোও কিইন্যা দিবাম আমি!’
আমি ভয়ে থরথর করে কাঁপছি।মানুষটা মধ্য বয়স্ক। কিন্তু গায়ে বল অনেক! কেমন হিংস্রের মতো দেখাচ্ছে।আমি দৌড়াতে চাইলাম। কিন্তু এর আগেই সে আমায় খপ করে এক হাত ধরে ফেলেছে। তারপর বলছে,’ছুডাছুডি কইরো না।তোমরার চাহিদা আমি জানি। তোমার চেহারা সুরত ভালা। চাহিদা বেশি থাকবো এইডা স্বাভাবিক বিষয়। টেকার নেশা আমার নাই। আমার নেশা মাইয়া মাইনষের।’
বলেই সে তার পকেট থেকে তিন হাজার টাকার তিনটে নোট বের করে আমার উপর ছুড়ে মারলো।
আমি ওর ফেলে দেয়া টাকার উপর থুতু ছিটিয়ে ফেললাম।
মঞ্জু এবার বললো,’তুমি কী ভাবছো আমি সাধারণ ব্যবসায়ী? এইখানে দুই টেকার দোকান দেই বইলা এইরম ভাবতাই পারো! কিন্তু আমার আরো কাজ কারবার আছে। ওইসব শুইনা তোমার লাভ নাই। এখন ভালাই ভালাই রাজি হইয়া যাও। নাইলে কিন্তুক ভেজাল হইবো কইলাম!’
মঞ্জুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া খুব কঠিন।আমি তখন মনে প্রাণে আল্লাহকে ডাকছি। আল্লাহ ছাড়া আমায় রক্ষা করার মতো তখন আর কেউ নাই!
মঞ্জু আমায় পেছন থেকে জাপটে ধরে ফেলে।আর তখনই বারান্দার কলিং বেল বেজে উঠে।কে এসেছে জানি না।যেই আসুক আমার মনে একটা সাহস সঞ্চার হয়।আমি আশার আলো দেখতে পাই। মুহূর্তে ওর হাতে কুটুস করে একটা কামড় বসিয়ে দেই। মঞ্জু তখন আমায় ছেড়ে দিয়ে তার হাতের দিকে মনোযোগ দেয়।আর আমি সুযোগ পেয়ে দৌড়ে গিয়ে দরজাটা খুলে দেই।
দরজা খুলতেই দেখি আমার সামনে মিতুল দাঁড়ানো। সঙ্গে সঙ্গে আমি মিতুলের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ি।আর কাঁদতে থাকি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে। কাঁদতে কাঁদতে বলি,’ওর হাত থেকে বাঁচাও আমায়!ওই শয়তানটার হাত থেকে বাঁচাও!’
মঞ্জু একটুও ঘাবড়ে যায় না তখন।ভয়ও পায় না।সে এসে আমাদের সামনে দাঁড়ায় আর মিতুলকে সে বলে,’আপনের বউ আমার টেকা খাইছে।টেকার বিনিময়ে তার সাথে আমার শারিলীক সম্পরক্ষ করার ওয়াদা আছিলো। ওয়াদা রক্ষা করার লাইগা আইছিলাম।আপনে আইয়া দিলেন গিড়িঙ্গি বাজাইয়া!’
বলে মঞ্জু চলেই যাচ্ছিলো। ঠিক তখন মিতুল আমায় পেছনে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে দৌড়ে গিয়ে মঞ্জুর জামায় পেছন থেকে খামচে ধরলো। তারপর এক লাথি দিয়ে ওকে জমিনের উপর ফেলে দিয়ে ওর ঘাড় চেপে ধরে বললো,’তুই একটা নোংরা লোক। আমি আমার স্ত্রীকে চিনি।তোর কথা মিথ্যে। তোকে আমি পুলিশে দিবো!’
মঞ্জু খ্যাক খ্যাক করে হেসে উঠলো তখন।আর বললো,’তোর ইজ্জত থাকবো না ছেড়া!জনে জনে জানবো তোর বউ একটা নডি!’
মিতুল দাঁতে দাঁত কামড়ে ওকে ধাক্কা দিয়ে দূরে ছেড়ে দিল।
মঞ্জু ছাড়া পেয়েই দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে গেল।ও চলে যাওয়ার পর মিতুল আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল ঘরের ভেতর। তারপর বললো,’ওর সাথে তোর কী চুক্তি ছিল?’
আমি অবাক হওয়া গলায় বললাম,’কিসের চুক্তি?’
‘ওর কাছ থেকে বাকীতে বাজার এনে খেয়েছিস।আর বিনিময়ে—-
মিতুলকে কথাটা শেষ করতে দেইনি আমি।ও যেন শেষের নোংরা কথাগুলো না বলতে পারে তাই তার মুখে হাত চেপে ধরি।
মিতুল আমার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলে,’আমার আইডি কার্ড দে!’
আমি তখন জিজ্ঞেস করি,’তুমি কোথায় চলে গিয়েছিলে?’
ও বলে,’তুই কী আমার রাজা মহারাজা নাকি যে তোর প্রশ্নের জবাব দিতে হবে আমার! তোকে যা বলেছি তা কর।আইডি কার্ড দে।’
আমি তখন সহ্য করতে না পেরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠি।ওর বুকের কাছে ঘেঁষতে চাই। কিন্তু ও আমায় তার কাছে ঘেঁষতে দেয় না।বলে,’নষ্টা তুই।দূরে যা। আমার আইডি দে।দেরি করিস না।দেরি করলে তোকে এখন মারতে মারতে অবস্থা খারাপ করে ফেলবো!’
আমি বলি,’মারো। তবুও আইডি কার্ড দিবো না।আইডি কার্ড দিলে তুমি চলে যাবে আমায় ছেড়ে!’
মিতুল আমায় এক ধাক্কায় দূরে সরিয়ে ফেলে দেয়ালের সাথে ঠেস দেয়া লাগেজটা খুলে ফেলে।আর ওখান থেকে আইডি কার্ড বের করে নিয়ে চলে যেতে বের হয়। আমি ওর পথ আগলে দাঁড়ালে আমায় এমন ধাক্কা দেয় যে আমি ফ্লোরে পড়ে গিয়ে অনেকটা জখম হই।আর ওখান থেকে যতোক্ষণে উঠতে পেরেছি ততোক্ষণে দেখি মিতুল উধাও!ও চলে গিয়েছে।
এবার আমি আরো ভয়ংকর বিপদে পড়ে গেছি। একদিক মঞ্জু। মঞ্জু ওর প্রতিশোধ নিতে চাইবে। অন্যদিকে আমি একা।শুধুই একা।মিতুল শুধুমাত্র ওর আইডি কার্ড নিতে এসেছিল নাকি অন্য কাজ ছিল জানি না! কিন্তু ও যে আমায় ছেড়ে চলে গেছে শুধু তা জানি। এখন আমার গন্তব্য কোথায়? কোথায় যাবো আমি?নাকি মঞ্জুর শিকার হবো আবার?
‘
#চলবে