পুতুল ছেলেটি পর্ব-২+৩

0
1230

#পুতুল_ছেলেটি
#Part_02_03
#Writer_NOVA

সেদিনের কথা মনে করে মিটমিট করে হাসছে নীলাভ।
অল্পের জন্য রক্ষা হয়েছিলো।মেয়েটা ওকে দেখে ভয় না পেয়ে সুন্দর করে ওকে নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ করছিলো।হ্যাঁ সেই পুতুল ছেলেটি ছিলো নীলাভ সফওয়াত।চোখের রং নীল হওয়ার দরুন বাবা নাম রেখেছিলেন নীলাভ।চুলগুলো তার ধূসর বর্ণের হওয়ায় অসম্ভব সুন্দর লাগে দেখতে।আসলেই কিন্তু সে দেখতে একদম পুরো পুতুল ছেলে।

দুই দিন আগে…..

খুব দ্রুত পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে যাচ্ছে নীলাভ। আল্লাহ আজ তার সহায় ছিলো।নয়তো আর কয়েক সেকেন্ডে সে মেয়েটার কাছে ধরা পরে যেতো।যাদের ধরতে সে পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে ছিলো তাদের তো ধরতে পারলোই না।মাঝে থেকে বাচ্চা মেয়েটার সাথে দেখা হয়ে গেল।ওকে নিয়ে মেয়েটা কতকিছু ভেবে বসে আছে। সিঁড়ির শেষ প্রান্তে যেতেই ওর বন্ধু আকিবের সাথে দেখা।

আকিবঃ এতো দেরী হলো যে?ধরতে পেরেছিস।

নীলাভঃ কোথায় পারলাম?তার আগেই তো ঐ মেয়েটা সব গোলমাল করে দিলো।একটুর জন্য ধরা পরি নি।

আকিবঃ কোন মেয়েটা?

নীলাভঃ আর বলিস না।একটা বাচ্চা মেয়ে আমাকে নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলো।পুতুল সেজে দাঁড়িয়ে ছিলাম।অথচ মেয়েটা আমাকে নিয়ে কতকিছু ভাবলো।তবে আশ্চর্য ব্যাপার ও যখন আমার কাছে আসলো আমার হৃৎপিণ্ডটা খুব জোরে ধুকপুক করতে লাগলো।আমি না চাইতেও আমার নিশ্বাস ঘন হয়ে আসছিলো।জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছিলাম।চোখের পলক খুব দ্রুত পরছিলো।এক মুহূর্তের জন্য আমার পুরো পৃথিবী থমকে গিয়েছিলো।

আকিবঃ আমায় পুরো ঘটনা খুলে না বললে,আমি তোর কথার আগামাথা কিছুই বুঝবো না।

নীলাভ ওর বন্ধুকে সব কিছু খুলে বললো।আকিব মুচকি হেসে বললো।

আকিবঃ দোস্ত তুই প্রেমে পরে গেছিস।একে বলে লাভ এট ফার্স্ট সাইট।যাক, তোর মতো একটা ছেলেও যে কারো প্রেমে পরতে পারে তা আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। অবশ্য আল্লাহ তোকে পুরো পুতুলের মতো সৃষ্টি করেছে।এটা তে কোন ভুল নেই। তাহলে মেয়েটা তোকে কেন পুতুল বলবে না বল।তারপর আবার দাঁড়িয়েছিলি পুতুলদের মাঝখানে।

নীলাভঃ ধূর,তেমন কিছু নয়।এভাবেই হয়তো সকাল থেকে কিছু না খাওয়া বলে হয়েছে। তাছাড়া এতো কাছে একটা মেয়েকে আসতে দেখে নার্ভাস হয়ে গিয়ে ছিলাম।এছাড়া আর কিছু নয়।

আকিবঃ তুই কখনো কিছু স্বীকার করতে চাস না।চল,সামনের হোটেল থেকে কিছু খেয়ে নেই।

নীলাভঃ হুম চল।

নীলাভ ও আকিব সমান তালে একসাথে হাঁটতে লাগলো।বাইরের পরিবেশে পা রাখার আগে নীলাভ মুখটা মাস্ক দিয়ে ঢেকে ফেললো।চোখে কালো সানগ্লাস পরে নিলো।নয়তো রাস্তার সব মানুষ তাদের কাজকর্ম ফেলে ওর দিকে হা করে তাকিয়ে থাকবে।যা নীলাভের সবচেয়ে বেশি অসহ্য লাগে।তাই সবসময় নিজেকে লুকিয়ে রাখে।তাছাড়া অন্য কারণও আছে।
সেটা নাহয় আমরা পরে জানবো।

ভাবনা থেকে ফিরে নিজের মনে হেসে উঠলো নীলাভ। মুচকি হেসে নিজের কাজে চলে গেল সে।

💗💗💗

সেদিনের পর থেকে কোনকিছু ভালো লাগে না সাহিয়ার।কিরকম মনমরা হয়ে গেছে সে।আসলে বিষয়টা নিয়ে সে অনেক বেশি চিন্তিত। যার কারণে অন্য কোন দিকে নজর দিতে পারছে না। কলেজ থেকে বাবার সাথে ফিরছিলো।দুই গালে হাত দিয়ে গাড়ির কাচ খুলে এক ধ্যানে বাইরে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ একটা ছেলেকে দেখে জোরে চেঁচিয়ে উঠলো।

সাহিয়াঃ বাবাই,বাবাই গাড়ি থামাও। আমি বলছি গাড়ি থামাও।ঐ যে ঐ পুতুলটা।

তানজিল আনজুম সাহেব গাড়ি ব্রেক কষে তার মেয়ের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন।

তানজিলঃ কোন পুতুল হিয়া মা-মণি?

সাহিয়াঃ ঐ যে শপিংমলে যে পুতুলটাকে দেখেছিলাম।মাত্র সে ঐ দেয়ালের আড়ালে চলে গেল।

তানজিলঃ কোন শপিংমল, কোন পুতুল তুই কি বলছিস? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

সাহিয়াঃ আমি তোমাকে পরে সব বুঝিয়ে বলছি। তুমি এখানে বসো আমি এই যাবো এই আসবো।

তানজিলঃ হিয়া শোন,যাক বাবা চলে গেল। এই মেয়েটার আবার কি হলো?

সাহিয়া গাড়ির দরজা খুলে হন্তদন্ত হয়ে সেদিকে দৌড়ালো।যেদিকে সেই পুতুল ছেলেটাকে দেখেছে।জুতা পরে দৌড়াতে পারছে না বলে জুতা খুলে হাতে নিয়েই দৌড় দিলো। কিন্তু সেখানে গিয়ে নিরাশ হতে হলো।কারণ কোন ছেলেই নেই। এবারো নিজের চোখের ভুল বলে, নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে, গাড়ির দিকে পা বাড়ালো।

তানজিলঃ গাড়ি মাঝ রাস্তায় দাঁড় করিয়ে মেয়েটা কোথায় গেলো? এতবড় হয়েছে কিন্তু এখনো বাচ্চামো স্বভাব যায়নি।কিছু দিন পর ওর বোনের বিয়ে।কত কাজ বাকি?সেখানে এই মেয়ের জন্য দেরী হবেই হবে।

সাহিয়াঃ চলো বাবাই।কেউ ছিলো না। হয়তো আমি ভুল দেখেছি।আমার যে কি হয়েছে আমি নিজেও জানি না।

তানজিলঃ কোথায় গিয়েছিলি?

সাহিয়া কোন উত্তর না দিয়ে তানজিল সাহেবের পাশের সিটে গোমড়া মুখে বসে পরলো।তানজিল সাহেবের দেরী হয়ে যাচ্ছে বলে সেও কথা না বাড়িয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো।

আড়াল থেকে নীলাভ পুরো বিষয়টা দেখে বড় করে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো।আজও সে বেঁচে গেছে। মনে মনে আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া জানালো।

নীলাভঃ আল্লাহ আজও বাঁচিয়েছো।এই মেয়েটার সাথে এমন হুটহাট করে দেখা কেন হয়ে যায়?বুকের বা পাশটা এখনো ধুকপুক করছে।ওকে দেখলে সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে যায় কেন?নিজের আশেপাশের কোন খবর থাকে না।হৃৎপিণ্ডটাও অবাধ্য হয়ে যায়।এর আগে তো কখনো কোন মেয়েকে দেখে এমন ফিল করিনি।তাহলে এমনটা কেন হচ্ছে? ও আশেপাশে থাকলে আমি টের পাই।বুকটা হুট করে ধুক করে উঠে।নিশ্বাস ঘন হয়ে যায়।রিলেক্স নীলাভ।এটা তোর মনের ভুল ছাড়া অন্য কিছু নয়।তুই এসবকে পাত্তা না দিয়ে নিজের কাজে মনোযোগ দে।

আড়াল থেকে বের হলো নীলাভ।দুপুরের কাঠ ফাটা রোদে রাস্তায় কোন মানুষ না দেখে মুখের মাস্ক ও সানগ্লাসটা খুলে ফেলেছিলো।কিন্তু কে জানতো এই বাচ্চা মেয়েটার সাথে আবার দেখা হয়ে যাবে।সাত-পাঁচ না ভেবে বুকে ফুঁ দিয়ে তাড়াহুড়ো করে স্থান ত্যাগ করলো সে।

💗💗💗

রকিং চেয়ারে খুব গম্ভীর মুখে বসে আছেন হাবিব রহমান।রাত হয়েছে বেশ। কিন্তু তার চোখে ঘুম নেই। থাকবে কি করে?তার পাপের সম্রাজ্য যে ধ্বংসের পথে নামছে।তার আগাম আভাস সে পাচ্ছে। হন্যি হয়ে পুতুলের মতো দেখতে ছেলেটাকে সারা বাংলাদেশ খুঁজে হয়রান হয়ে গেছে সে।কিন্তু সেই নীল রঙা চোখের পুতুল ছেলেটির কোন খবর কেউ এনে দিতে পারছে না।অথচ সে পুতুল ছেলেটি তার ও তার লোকের আগেচরে তার সমস্ত তথ্য জোগাড় করে ফেলছে।কিন্তু সে হাত-পা গুটিয়ে বসে আছে। কপাল ডলছে আর নানা বিষয় চিন্তা করছে।টেবিল থেকে নিজের মোবাইলটা নিয়ে তার সহকারি রবিনকে কল করলো।

রবিনঃ আসসালামু আলাইকুম চাচা।

হাবিবঃ অলাইকুম আস সালাম। খবর কি?আর কতদিন লাগবে ঐ ছেলেকে খুঁজতে? ও আড়ালে থেকে আমাদের সব তথ্য জোগাড় করে ফেলছে। আর আমরা হাত-পা গুটিয়ে কলের পুতুলের মতো বসে আছি। তোদের কিসের জন্য রেখেছি আমি?একটাও কাজের কাজ করতে পারিস না।একটা ভিন্ন দেশের ভিন্ন রকম পুতুলের মতো দেখতে ছেলে আমাদের নাকের ডোগা দিয়ে সব কিছু করে ফেলছে।আর তোরা এখনো সারা ঢাকা শহর খুঁজে ওকে বের করতে পারছিস না।তোদের একেকটাকে ইচ্ছে করছে জ্যন্ত পুঁতে ফেলতে।(রেগে)

রবিনঃ চাচা,আপনি রাগবেন না।আমরা আমাদের সাধ্যের মধ্যে সব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু ব্যাটা অনেক চালাক।তাই বারবার পিছলিয়ে যাচ্ছে আমাদের হাত থেকে। কিছু দিন সময় দিন। আমরা ঐ ব্যাটাকে আপনার পায়ের সামনে হাজির করবো।

হাবিবঃ তোরা যে কি করবি তা আমার বোঝা হয়ে গেছে। আমাকে অন্য ব্যবস্থা করতে হবে। তোদের আশায় থাকলে আমার সম্রাজ্য খুব শীঘ্রই গুড়িয়ে যাবে।আমি আর তোদের আশায় থাকছি না।(রেগে)

রবিনঃ চাচা আপনি খামোখা এত চেঁচামেচি করছেন।শালা,অন্য দেশে জন্ম হলেও কিন্তু বাঙালী। দাদা বাংলাদেশী ছিলো দাদী বিদেশী।ছেলেটার দাদা বিদেশি মেয়ে বিয়ে করে সেখানেই স্যাটেল হয়ে গিয়েছিল।ওর বাবা-মা পিউর বিদেশী।সেই হিসেবে দাদার দিক বিবেচনা করলে বাঙালি হবে।তাছাড়া মুসলিম ছেলে।শুধু দেখতে পুরো পুতুল। এটাই আমাদের থেকে আলাদা। অন্য কিছু তো নয়।

হাবিবঃ আমি তোকে ওর সাফাই গাইতে বলিনি।যেখান থেকে পারিস, যেই শহর থেকে পারিস ঐ ছেলেকে তুলে নিয়ে আয়।এট এনি কস্ট,আমার ঐ ছেলেকে চাই। কারণ আমার বিরুদ্ধে অনেক প্রমাণ ওর কাছে আছে।তাছাড়া কিছু ইমপর্টেন্ট এভিডেন্স।পুলিশের হাতে সেগুলো লাগলে এতদিন আমি জানতে পারতাম এবং আমার কাছে চলেও আসতো।কিন্তু ও পুলিশের কাছে যায় নি।তার মানে সবকিছু ওর কাছে আছে। ওকে ধরতে পারলেই আমি আমার বিরুদ্ধের প্রমাণগুলো পেয়ে যাবো।তারপর না হয় ওকে মেরে গুম করে ফেলবো।

রাবিনঃ আমি আরো লোক পাঠাচ্ছি। ঢাকার অলি-গলি খুঁজে ওকে আমরা নিয়ে আসবোই আসবো।আপনি নিশ্চিন্তে নাকে সরিষার তেল দিয়ে ঘুমান।এই রবিনের কাছে কোন কিছু অসম্ভব নয়।

হাবিবঃ এই লাস্ট বারের মতো আমি তোকে সুযোগ ও সময় দিচ্ছি। এবার যদি না পারিস তাহলে তোর ঐ বাঁদড় মুখ খানা আমাকে দেখাস না।যদি দেখাস তাহলে সেদিনই হবে তোর শেষ দিন।

রবিন একটা শুকনো ঢোক গিলে কলটা কেটে দিলো।তাকে আরো সতর্ক থাকতে হবে।চারিদিকে কড়া নজরদারি দিতে হবে। নয়তো ওর ব্যন্ড বেজে যাবে।হয় হাসপাতালে এডমিট নয়তো চিরতরে কবরে এডমিট হতে হবে।

রবিন কল কাটার পর হাবিব রহমান হাতে থাকা মোবাইলটা সোফায় ছুঁড়ে মারলো।সারা শরীর তার রাগে থরথর করে কাঁপছে।এখন এই মুহুর্তে রবিনকে পেলে মেরে কবর দিয়ে ফেলতো।

কিন্তু পরেরদিন………….

#চলবে

#পুতুল_ছেলেটি
#Part_03
#Writer_NOVA

আজকাল কাজের চাপ একটু বেশি পরে গেছে নীলাভের।ওর যদিও কোন নির্দিষ্ট কাজ নেই। যখন যেই কাজ পায় তাই করে।কোন কাজকে নীলাভ ঘৃণা করে না।প্রত্যেক কাজকে সে সম্মানের চোখে দেখে।তাই বর্তমানে একটা অনলাইন পিৎজা ডেলিভারি বয় হিসেবে কাজ করছে। পাশাপাশি ওর সিক্রেট কাজ তো আছেই। সকালে মালিক কল করে বললো এক জায়গায় পিৎজা ডেলিভারি করতে হবে। তাড়াহুড়ো করে গোসল করে রেডি হতে লাগালো ।যাওয়ার আগে কিছু কাজ ওর বন্ধু আকিবকে বুঝিয়ে দিলো।

আকিবঃ সন্ধ্যায় দেখা হচ্ছে তাহলে।তাড়াতাড়ি ফিরে আসিস।তুই ছাড়া আমি অচল।

নীলাভঃ তুই চিন্তা করিস না।আমি ঠিক সময় চলে আসবো।তুই শুধু ওদের ওপর নজর রাখিস।

আকিবঃ কিছু খেয়েছিস।নাকি না খেয়েই দৌড় মারছিস।তোর তো সকাল হলেই ডিউটি শুরু হয়ে যায়।তখন খাবারের কথা ভুলেই যাস।

নীলাভঃ রাস্তার দোকান থেকে খেয়ে নিবো।তুই কিছু একটা বানিয়ে খেয়ে নিস।কাজ ছাড়া বাসায় বসে থাকতে আমার একটুও ভালো লাগে না। মনে রাখিস, পৃথিবীর কোন কাজই ছোট নয়।কাজ ছোট কিংবা বড় সেটা কথা নয়। কথা হলো আমি বাসায় বসে না থেকে কাজটা করছি।অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা।বাসায় খামোখা শুয়ে, বসে না থেকে পিৎজা ডেলিভারির কাজটা করলেও আমার হাতে সামান্য টাকা আসবে।কিন্তু বাসায় বসে থাকলে সেই টাকাটা কি তোর শ্বশুর এসে দিয়ে যাবে??(বিরক্তির সুরে)

আকিবঃ আমার শ্বশুর দিবে কেন?তুই একটা বিয়ে কর।তাহলে তোর শ্বশুরই দিবে।ঐ মেয়েটার কি খবর রে? যে তোকে দেখে ফিদা হয়ে গিয়েছিল।

নীলাভ হাতে ঘড়ি পরতে পরতে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আকিবের দিকে তাকিয়ে বললো।

নীলাভঃ কোন মেয়েটা?তুই কার কথা বলছিস?আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।

আকিবঃ ঐ যে সেদিন বসুন্ধরা শপিংমলে দেখা হয়েছিলো।যে তোকে নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ করছিলো।যাকে দেখে তোর দিলের ধরকান বেড়ে গিয়েছিল।আমি তার কথা বলছি।আমার মনে হয় তার সাথে তোকে ভালোই মানাবে।যদিও তুই মেয়েটার থেকে দ্বিগুণ সুন্দর।

নীলাভঃ জানিস কি হয়েছে?

আকিবঃ না বললে জানবো কি করে?

নীলাভঃ শোন তাহলে।গতকাল দুপুরেও ঐ মেয়েটার সাথে আমার দেখা হয়েছে। এবারো আল্লাহ বাঁচিয়েছে।নয়তো অল্পের জন্যে ধরা খেয়ে যেতাম।ভাগ্যিস ওকে দেখেছিলাম।তাই দেয়ালের আড়ালে লুকিয়ে পরেছিলাম।মেয়েটা গাড়ি থামিয়ে আমাকে খুঁজতে এসেছিলো।

আকিবঃ আল্লাহ কি বলিস!!! দেখেছিস মেয়েটা তোকে নিয়ে কতটা সিরিয়াস।তোকে না বলছি,এরকম অর্ধেক কথা বলতে না।আমি কিছুই বুঝি না। পুরো ঘটনা খুলে বল।

নীলাভ খাটের ওপর বসে জুতো পড়তে পড়তে পুরো ঘটনা আকিবকে খুলে বললো। আকিব এক লাফে খাটের ওপর বসে পরলো।ভ্রু নাচিয়ে নীলাভকে বললো।

আকিবঃ বুঝতে পারছি না। ঘুরে ফিরে মেয়েটার সাথেই তোর দেখা কেন হচ্ছে? দেখ, আজকেও নাকি ঐ মেয়ের সাথে দেখা হয়ে যায়।নীলাভ, তুই যদি দেখলি ঐ মেয়েটার বাড়িতে তুই পিৎজা ডেলিভারি করতে গিয়েছিস।তখন তোর ফিলিংসটা কেমন হবে রে? যাকে দেখলে তুই নার্ভাস হয়ে যাস।সে তোর পুরো মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। তুই একটু ভেবে দেখ।

নীলাভঃ বাজে একটা ফিলিংস হবে।গত দুই দিন যাস্ট এক্সিডেন্টলি মেয়েটার সাথে আমার দেখা হয়েছে। যাতে আমার কোন হাত ছিলো না। গত ২ দিন দেখা হয়েছে বলে যে আজও হবে তার কোন গ্যারান্টি নেই। এসব আজগুবি কথা বাদ দিয়ে যে কাজ দিয়েছি তাতে নিজেকে ফোকাস কর।নয়তো তোকে মোয়া বানিয়ে বাজারে বিক্রি করবো।(বিরক্তির সুরে)

আকিবঃ এখন তো কথা ঘুরাবিই।তুই জীবনে কোন কথা আমার কাছে সহজে স্বীকার করতে চাইলি না।আমি জানি তুই ঐ মেয়েটার জন্য নিজের মনের মধ্যে একটা আলাদা ফিলিংস পাস।কিন্তু তাতো আমাকে মুখ ফুটে কখনও বলবি না।বললে আবার মেয়েদের দিকে না তাকানো ভদ্র ছেলে, নীলাভ সফওয়াতের জাত চলে যাবে তো।আমি তো আবার এই কথাটা ভুলেই গিয়েছিলাম।

নীলাভঃ ইদানীং তুই একটু বেশিই কথা বলিস।কাজের সময় তো ঠনঠনাঠন ঘন্টা। কথা বলার সময় মুখে খই ফুটে।তিলকে তাল বানাতে তোর কয়েক সেকেন্ড লাগে।আমার পিছে না লাগে নিজের কাজে মনোযোগ দে।তাহলে তোর জন্য মঙ্গল।

আকিবঃ এখন সব দোষ তো আমার। শাক দিয়ে আর মাছ ঢাকতে হবে না। আমার যা বোঝার আমি বুঝে গেছি।তুই তোর কাজে যা।

নীলাভ মুচকি হেসে তার প্রিয় Duck ব্যাগটা দুই কাঁধে নিয়ে নিলো।মাথায় কালো টুপি আর মুখে মাস্ক পরলো।সানগ্লাসটা পকেটে ঢুকিয়ে, ড্রয়ার থেকে বাইকের চাবি নিয়ে বের হয়ে গেলো।আঙুলের ডোগায় চাবি ঘুরাতে ঘুরাতে শিস বাজিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেল।নিজের লাইফের প্রতি কোন অভিযোগ নেই নীলাভের।বিন্দাস আছে সে।

বাবা-মা থাকলে হয়তো এতটা স্বাধীনতা সে পেতো না।তারা যখন নেই তখন আর ঐসব ভেবেও লাভ নেই তার।তবে বাবা-মা হীন ছেলে হিসেবে নীলাভ যথেষ্ট ভালো ছেলে।কারণ সে কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হয়ে বড় হয়েছে। সে জানে কি করে বড়দের শ্রদ্ধা ও ছোটদের স্নেহ করতে হয়।ওর বন্ধুসুলভ আচরণের জন্য খুব সহজে সবার সাথে মিশে যেতে পারে। সবাই ওকে এর জন্য অনেক পছন্দও করে।কিন্তু নীলাভ মানুষের সাথে খুব কম মিশে।ওর সব কথা ও অভিমান শুধু আকিবকে ঘিরে।কারণ নীলাভের মতো আকিবও কঠিন বাস্তবতার স্বীকার।

💗💗💗

বিকালে বিষন্ন মনে জানালার ধারে বসে আছে সাহিয়া।কিছু দিন ধরে কোন কিছুতেই মনোযোগ দিতে পারছে না সে।তার কল্পনা -জল্পনা,স্বপ্ন, সবকিছুতে এখন পুতুল ছেলেটি। বারবার শপিংয়ের সেই দিনটার কথা চোখে ভেসে আসে। শুক্রবার হওয়ায় কলেজ বন্ধ। সাজিয়া ওর মায়ের সাথে রাতের খাবার বানাতে হাতে হাতে কাজ করে দিচ্ছে। ওর বাবা বিয়ের জন্য ডেকোরেশনের মানুষদের সাথে কথা বলতে গিয়েছে। আর সাহিয়া বিষন্ন মনে বসে আছে জানলার ধারে।মনের আকাশে তার কালো মেঘ হানা দিয়েছে।

জানালা দিয়ে যত দূর চোখ যায় শুধু উঁচু উঁচু দালান দেখা যায়।এসব হিয়ার একটুও ভালো লাগে না। ওর ইচ্ছে করে প্রকৃতির মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দিতে।এই ব্যস্ত, কোলাহলপূর্ণ শহর তার বিরক্ত লাগে। বাবাকে সে বলেছে, তার একটা গ্রাম অঞ্চলে, ছোট একটা টিনের পাকা বাড়ি চাই।তাহলে বৃষ্টির দিনে ঝমঝম বৃষ্টির আওয়াজ সে শুনতে পাবে।টিনের চালে বৃষ্টি পরার শব্দটা মন্ত্রমুগ্ধকর লাগে সাহিয়ার কাছে।তার বাবা বলেছে তার কথা রাখবে।শত হোক ছোট মেয়ের আবদার বলে কথা।গ্রামের বাড়ি যাওয়া হয় না বিগত কয়েক বছর ধরে। গ্রাম অনেক পছন্দের সাহিয়ার।

সাজিয়াঃ নে ধর।তোর জন্য গরম গরম কফি করে নিয়ে এলাম।

বোনের কথায় ভাবনায় ছেদ পরলো সাহিয়ার।মুখ ঘুড়িয়ে বোনের দিকে তাকালো। হাত বাড়িয়ে কফির মগটা নিয়ে নিঃশব্দে চুমুক দিলো ধোঁয়া উঠা গরম কফিতে।সাথে সাথে মন অনেকটা ভালো হয়ে গেলো।

সাজিয়াঃ তোর কি হয়েছে রে হিয়া?কয়েকদিন ধরে খেয়াল করছি তুই অনেক চুপচাপ। সবসময় গম্ভীর হয়ে থাকিস। খুব মনোযোগ দিয়ে কি জানি ভাবিস?আগে তো এরকম ছিলি না।হুট করে কি হলো?কারো প্রেমে পড়েছিস নাকি।

সাহিয়াঃ কিছু হয়নি।

সাজিয়াঃ কিছু তো একটা হয়েছে।কিছু না হলে সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখার মতো চঞ্চল মেয়েটা এভাবে নিজেকে গুটিয়ে নিতো না।

সাহিয়াঃ বললাম তো দিদিয়া কিছু হয়নি।তোমার বিয়ে হয়ে যাবে, আমি পুরো একা হয়ে যাবো। তার জন্য খারাপ লাগছে। (কথা ঘুরিয়ে)

সাজিয়াঃ ধূর,বোকা মেয়ে।এত তাড়াতাড়ি মন খারাপ কেন করছিস?আমি তো আরো কতদিন আছি তোর সাথে। তার জন্য এখন মন খারাপ করে থাকলে আমার কি ভালো লাগবে বল।

সাহিয়াঃ তোমার কত ভাগ্য দিদিয়া।নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে পাচ্ছো।আর আমার এই পোড়া কপালে ভালোবাসার ছিটেফোঁটা তো দূরেই থাক,নাম-গন্ধও নেই। তোমার মতো আমার জীবনে ভালোবাসার মানুষ কবে আসবে বলো?

সাজিয়াঃ আসবে আসবে।আমার ছোট বোনের জন্য পুতুলের মতো দেখতে একটা রাজপুত্র আসবে।যে তোকে অনেক ভালোবাসবে।

সাহিয়াঃ পুতুলের মতো দেখতে রাজপুত্র!!!!

সাজিয়ার কথা শুনে অনেকটা চমকে উঠলো সাহিয়া।তাহলে কি ওর জন্য সত্যি ঐ পুতুল ছেলেটি এসেছে। এই কয়েকদিনে হিয়া বেশ বুঝতে পেরেছে ঐ ছেলের জন্য তার আলাদা একরকম ভালো লাগার ফিলিংস তৈরি হচ্ছে। আদোও হিয়া জানে না এই ফিলিংসের কি নাম।ভালোলাগা,ভালোবাসা নাকি খানিকের মোহ্।তবে তাকে নিয়ে ভাবতে খুব ভালো লাগে সাহিয়ার।

সাজিয়াঃ এই হিয়া, কোথায় হারিয়ে যাস কিছু সময় পর পর?(ধাক্কা দিয়ে)

সাহিয়াঃ কোথাও না।বলো আমি শুনছি।

সাজিয়াঃ আমি অনলাইনে পিৎজা ডেলিভারি দিয়েেছি।তোর পছন্দের চিকেন পিৎজা। অনেক সময় হয়েছে। এর মধ্যে নিশ্চয়ই ডেলিভারি বয় চলেও এসেছে।

সাহিয়াঃ ওহ্ আচ্ছা।

সাজিয়াঃ তুই খুশি হোস নি?

সাহিয়াঃ হ্যাঁ হয়েছি।(কৃত্রিম হাসি দিয়ে)

অন্য দিন হলে সাহিয়া খুশিতে দুইটা লাফ দিতো।কিন্তু আজ তেমন কিছুই করতে ইচ্ছে হচ্ছে না।বড্ড খারাপ লাগা ঘিরে ধরেছে তাকে।মন বলছে আরেক পলক যদি সেই পুতুল ছেলেটিকে দেখতে পারতো।বড় করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বোনের দিকে তাকাতেই সে দেখতে পেলো,সাজিয়া বড় এক প্রশ্নবোধক চিহ্ন মুখে এঁকে হিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। যেই কিছু একটা বলবে, তখুনি ওদের মা মিসেস নিশাতা রহমান সাজিয়াকে ডেকে উঠলো।

নিশিতাঃ জিয়া এদিকে একটু আয় তো।আমাকে পেঁয়াজগুলো কুঁচি করে কেটে দিয়ে যা।আমি একা পারছি না।পেঁয়াজ কাটতে গেলে চুলোর তরকারি পুড়ে যাবে।

সাজিয়াঃ আসছি মা।হিয়া,আমি মাকে সাহায্য করতে যাচ্ছি। ডিলেভারি বয় এলে তুই একটু কষ্ট করে অর্ডার কনফার্ম করিস।ধ্যান মেরে এখানে আবার বসে থাকিস না।

সাজিয়া কফির মগ দুটো নিয়ে ছুট লাগালো কিচেনের দিকে।সাহিয়া নিষ্পলক চাহনিতে তা দেখলো।মিনিট পাঁচেক পরেই কলিং বেল বেজে উঠলো। সাহিয়ার না চাইতেও উঠতে হলো।নয়তো সাজিয়া ও তার মা দুজনে মিলে ইচ্ছে মতো ওকে বকবে।ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে দরজাটা খুললো সাহিয়া।তবে ঝামেলা বাঁধালো সিল্কের ওড়নাটা।দরজার ছিটকিনির সাথে বেজে গেল।মিনিট তিন পর অনেকটা টানাটানির পর ছুটাতে পারলো।কিন্তু সামনে তাকিয়ে সে অনেকটা অবাক হয়ে গেলো।কারণ……………

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে