পুতুল ছেলেটি পর্ব-০১

0
1658

#পুতুল_ছেলেটি
#Part_01
#Writer_NOVA

“রংবেরঙের সাজ” স্টোরের সামনে ডিসকাভারিতে থাকা ছেলে পুতুলটাকে চোখের পলক ফেলতে দেখে অবাক হয়ে গেল সাহিয়া।না,ভুল নয় স্পষ্ট খেয়াল করেছে পুতুলটা চোখের পলক ফেলেছে। তাছাড়া ঘন ঘন নিশ্বাস ছাড়ার শব্দ ও বুকের ওঠানামাও সে দেখতে পেয়েছে। অবাক চোখে তাকিয়ে আছে সাহিয়া।কারণ পুতুলটাকে জ্যন্ত মানুষ মনে হচ্ছে। হাত বাড়িয়ে যেই ধরে দেখতে যাবে তখনি সাহিয়ার বড় বোন সাজিয়া ডেকে উঠলো।

সাজিয়াঃ হিয়া, এদিকে একটু আয় তো।তুই এই জয়গায়?আমি তোকে সারা শপিংমল খুঁজে হয়রান হয়ে গেছি।আর তুই এখানে?একটু জলদী আয়।

সাহিয়াঃ আসছি দিদিয়া।

একবার পুতুলের দিকে তাকিয়ে আরেকবার বোনের দিকে তাকালো সাহিয়া।পুতুল ছোঁয়ার ইচ্ছাকে দমিয়ে বোনের ডাকে সারা দিলো।দৌড়ে বোনের কাছে চলে গেল। মিনিট পনেরো পর যখন সাহিয়া এবার সেই স্থানে এলো তখন তার চোখ চড়কগাছ। এখানে তো সেই ছেলে পুতুলটা নেই। তন্নতন্ন করে আশেপাশে খুঁজেও সেই পুতুলটা চোখে পরলো না।তখন স্টোরের ভেতরে গিয়ে ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করলো।

সাহিয়াঃ আসসালামু আলাইকুম।

ম্যানেজারঃ অলাইকুম আস সালাম।কি লাগবে বলুন ম্যাম?আমাদের স্টকে ভালো জর্জেটের, লিনেন, সুতি,সিল্কের থ্রি পিস কালেকশন আছে।তাছাড়া কিছু ভালো মডেলের শাড়িও আছে।খুব উন্নতমানের।গতকালই ইন্ডিয়া থেকে আনিয়েছি আমরা।এছাড়া হাই লেভেলের অনেক গাউন আছে।আপনার কোন কালেকশন লাগবে?

সাহিয়াঃ না না আমার কিছু লাগবে না।আমি একটা প্রশ্ন করতাম।যদি আপনি অনুমতি দিতেন।

ম্যানেজারঃ নিশ্চয়ই বলুন।

সাহিয়াঃ আপনাদের স্টোরের সামনে যে ছেলে পুতুলের ডিসকাভারি ছিলো সেই পুতুলটা কোথায়?মেয়েদের ড্রেস পরা পুতুলের মাঝখানে ছিলো ঐ পুতুলটা।

ম্যানেজারঃ সরি ম্যাম।আমাদের এখানে কোন ছেলে পুতুল ডিসকোভারিতে দেওয়া ছিলো না।

সাহিয়াঃ ছিলো,আমি ১৫/২০ মিনিট আগে এখানে দেখেছি। আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে?

ম্যানেজারঃ ভুল আমার নয়, আপনার হচ্ছে ম্যাম।আমাদের স্টোরটা শুধুমাত্র লেডিস্ ফ্যাশনের।আমরা সেখানে ছেলে পুতুল কেন রাখবো?আমরা ছেলেদের কোন পোশাক বিক্রি করি না।তাহলে ডিসকাভারিতে ছেলেদের পোশাক পরিহিত পুতুল রাখা নিতান্ত বোকামী ছাড়া অন্য কিছু নয়।

সাহিয়াঃ আমি স্পষ্ট দেখেছি।এখানে একটা পুতুল দেখেছি।যেটার মাথায় গেরুয়া রঙের একটা হ্যাট,গায়ে সুরমা কালারের বডির সাথে লাগানো পাতলা লং হাতা গেঞ্জি,কালো প্যান্ট পরহিত, অতিরিক্ত সাদা বর্ণের একটা ছেলে পুতুল ছিলো।

ম্যানজারঃ ম্যাম আপনার হয়তো দেখায় ভুল হয়েছে। এখানে কোন ছেলে পুতুল ছিলো না।আপনি তাকিয়ে দেখুন পাঁচটা মেয়ে পুতুল ছিলো বিভিন্ন ফ্যাশনের পোশাক পরা। তারাই আছে।অন্য কিছু নেই।

সাহিয়াঃ ওহ আচ্ছা। সরি,আমার হয়তো ভুল হয়েছে। আপনার সময় নষ্ট করার জন্য আবারো সরি। কিন্তু আমি একটা ছেলে পুতুল সত্যি দেখেছিলাম।

ম্যানেজারঃ ইটস ওকে ম্যাম।আশা করি আমি আপনার ভুলটা ভেঙে দিয়েছি।

💗💗💗

সাহিয়া মন খারাপ করে চলে এলো।কিন্তু ওর তো দেখার ভুল ছিলো না।এক হাতে মাথায় থাকা হ্যাট-টাকে ধরে খুব সুন্দর একটা স্টাইল নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো পুতুলটা।

সাহিয়াঃ আদোও কি সেটা পুতুল ছিলো নাকি অন্যকিছু।আচ্ছা এমন নয়তো পুতুলটা হেঁটে হেঁটে চলে গেছে। কিন্তু পুতুল আবার হাঁটবে কি করে? আমি কি কোন ভূত-টূত দেখলাম না তো।হরর মুভিগুলোর মধ্যে তো এরকমি দেখায়।পুতুল সেজে কিংবা পুতুলের ভেতরে আত্মা ভর করে প্রতিশোধ নেয়।আমার কাছে পুতুলটাকে জীবন্ত মনে হচ্ছিলো।ওর নীল চোখের পলক ফেলানো,নিশ্বাস নেয়া,ফুসফুস উঠানামা করা সবকিছু আমার চোখে পরেছে।সেটাকি মানুষ ছিলো?ইউরোপীয় অনেক ছেলেও তো এরকম পুতুলের মতো দেখতে হয়।কিন্তু বাংলাদেশে ঐরকম ছেলে কোথা থেকে আসবে?ধূর, দিদিয়ার জন্য। নয়তো আমি ছুঁয়ে বুঝতে পারতাম ঐটা কি ছিলো?মাথা ঝিম ঝিম করছে। কি অদ্ভুত সমস্যায় পরলাম।

সাহিয়া বিরবির করতে করতে ওর বোনের সামনে গেলো।সাজিয়া তখন বিয়ের জন্য শাড়ি পছন্দ করছে।সাহিয়া কে বিরবির করতে দেখে জিজ্ঞেস করলো।

সাজিয়াঃ কি বিরবির করছিস হিয়া?কোথায় ছিলি এতক্ষণ?তুই না থাকায় আমি একটা শাড়িও চয়েজ করতে পারিনি।তুই একটি চয়েজ করে দে না?আমার একটাও পছন্দ হচ্ছে না।

সাহিয়াঃ পাশের স্টোরে ছিলাম।এখানে বসে থাকতে থাকতে বোর হয়ে যাচ্ছিলাম।তাই বাইরে থেকে একটু হাওয়া খেয়ে আসলাম।মম,ড্যাড কোথায়?তোর হবু বর তুরাগ ভাইয়াকে যে দেখছি না।তোর হবু শ্বশুর, শাশুড়ী বা কোথায়?

সাজিয়াঃ তুরাগের একটা জরুরি কল এসেছে। তাই বাইরে গেছে। মম,ড্যাড,তুরাগের বাবা-মা পাশের স্টোরে গিয়েছে তাদের জন্য পোশাক কিনতে।এদিকে আমি শাড়ির স্তুপ বানিয়েও একটা শাড়ি পছন্দ করতে পারলাম না।তুই একটু পছন্দ করে দে না?

সাহিয়া স্তুপের থেকে গাঢ় লাল রঙের মধ্যে গোল্ডেন পাথরের বেশ গর্জিয়াস কাজ করা একটা শাড়ি বের করলো।সাজিয়ার গায়ে ধরতেই ওর পছন্দ হয়ে গেলো।আয়নায় গিয়ে নিজেকে দেখে একটা লাফ দিয়ে খুশি মনে বললো।

সাজিয়াঃ ওয়াও হিয়া,তোর পছন্দ তো অনেক সুন্দর। আমি এত সময় ধরে একটাও পছন্দ করতে পারলাম না।আর তুই নিমিষেই একটা পছন্দ করে বসলি।এই জন্যই তো তোকে আমার এতো ভালো লাগে।

সাহিয়া ওর বোনের কথা কিছুই শুনতে পেলো না।সে শাড়ির স্তুপ থেকে না দেখে একটা শাড়ি টান দিয়ে বের করে ওর বোনের হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলো।সে এখনো মাথা থেকে পুতুলের ভূতটা ঝাড়তে পারেনি।

💗💗💗

একটা প্রাইভেট ভার্সিটির বেশ নামকরা প্রফেসর তানজিল আনজুম।তার দুই কন্যা।বড় মেয়ে সাজিয়া আনজুম ও ছোট মেয়ে সাহিয়া আনজুম।তাদের মা নিশিতা রহমান।তিনি গৃহিণী। বাবা-মা ও বড় বোন নিয়ে ছোট্ট পরিবার সাহিয়ার।সাহিয়া এবার অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে।বাংলা ডিপার্টমেন্ট পড়াশোনা করছে।২৩ বছর এই মেয়েটাকে দেখলে সবাই বাচ্চা বলে।মুখের মধ্যে বাচ্চা বাচ্চা ভাব আছে। কাজকর্মও তার বাচ্চাদের মতো।পরিবারের ছোট বলে সবার আদরের।সাজিয়া ও তুরাগের ৪ বছরের সম্পর্ক।ওদের দুজনের পরিবার সেটা মেনে নিয়ে ঘটা করে বিয়ে দিচ্ছেন তারা।যেহেতু মেয়ে ও ছেলের দুজনের পরিবার বেশ স্বচ্ছল। তাই কেউ অমত করেনি।

বোনের বিয়ের শপিং করতে পুরো পরিবারকে সাথে নিয়ে বসুন্ধরা শপিংমলে এসেছে সাহিয়া।সাথে ওর হবু জিজু তুরাগ ও তার পরিবার।সবাই মিলে বিয়ের শাড়ি পছন্দ করছিলো।সাহিয়া বিরক্ত হয়ে সেখান থেকে উঠে বাইরে গিয়েছিল। ঘুরতে ঘুরতে “রংবেরঙের সাজ” স্টোরের সামনে থমকে গেলো। সেখানে দেখেছিলো পুতুলটাকে। কিন্তু ওর কাছে মনে হচ্ছিলো এটা একটা পুতুল নয় বরং জীবন্ত মানুষ। ভীষণ ভালো লাগেছে ওর পুতুলটাকে।তাই ঘুরে ঘুরে খুটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলো।

সাহিয়াঃ আল্লাহ কত সুন্দর দেখতে ছেলে পুতুলটা!!! ইস,আমার যদি এরকম একটা বর থাকতো।তাহলে আমি তাকে বলতাম পুতুল বর।কিন্তু এটাতো একটা পুতুল।কোন মানুষ নয়?মানুষ হলে এটাকে আমি বিয়ে করেই ছাড়তাম।ওয়াও,ঠোঁট দুটো টকটকে লাল। ইচ্ছে করছে জোরে টান দিয়ে দেই।চোখের মনির রংটা তো মাশাল্লাহ। নীল রঙা চোখ, সরু ভ্রু,চোখা নাক,দুধের মতো সাদা গায়ের রং সব মিলিয়ে মাশাল্লাহ। এ যদি মানুষ হতো তাহলে সব মেয়েরা এর জন্য হুমড়ি খেয়ে পরতো।চুলের রংটা কি কালার হবে?হ্যাট টা দিয়ে পুতুল তৈরি করায়, কোম্পানির লোকেরা চুলের ঝামেলা থেকে বেঁচে গেছে। নয়তো আমি জানতে পারতাম এত সুন্দর পুতুলের কি রঙের চুলে মানাবে?

তখনি মনে হলো পুতুলের চোখের পাপড়িগুলো কেঁপে কেঁপে নড়ে উঠলো। হালকা করে পলক ফেললো।সাহিয়া চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকালো।আবারো চোখের পলক পরলো।এবার সে দুই হাত দিয়ে দুই চোখ ডলে আবার তাকালো।এবার দেখলো পুতুলটা খুব ঘনঘন নিশ্বাস ছাড়ছে।তার তালে তালে বুকটা উঠানামা করছে।নিজের কানটা পুতুলের বুকের কিছুটা সামনে নিয়ে যেতেই হৃৎপিণ্ডের ঢিপঢিপ শব্দ শুনতে পেলো।ভয় পেয়ে কেঙ্গারুর মতো দুটো লাফ দিয়ে পিছিয়ে গেল।তারপর বুকের মধ্যে কয়েকটা ফুঁ দিলো।সামনে এসে হাত বাড়িয়ে যেই পুতুলটাকে স্পর্শ করবে তখনি ওর বড় বোন ওকে ডাকে।তারপরের ঘটনা তো আগেই বলে দিয়েছি।

সারা শপিংয়ে সাহিয়া মনযোগ দিতে পারলো না। ওর মাথায় এখনো পুতুলের কান্ড কারখানা ঘুরছে।চোখ দুটো এদিক সেদিক ঘুরিয়ে বারবার সেই পুতুলের খোঁজ করছে।কিন্তু তার দেখা পেলো না। ঘন্টাখানিক শপিং করার পর সবাই বাসার দিকে রওনা দিলো। গাড়িতে ওঠার আগেও একবার এদিক সেদিক তাকিয়ে নিলো। সব দিকে তাকালেও শপিংমলের উত্তর দিকে সে তাকালো না।তাকালে হয়তো দেখতে পেতো একজোড়া নীল রঙা চোখ মুগ্ধ দৃষ্টিতে ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে রয়েছে।

#চলবে

❤️NOVA❤️

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে