#পাষাণে_বাঁধে_যে_হৃদয়
#পর্বঃ৫
#Jhorna_Islam
সুপ্ত কে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়ানো হয়েছে। এখন পুরো বাড়িতে থমথমে পরিবেশ বিরাজমান। কোনো সারা শব্দ নেই। দেখে মনেই হচ্ছে না বাড়িতে কেউ আছে এতোটাই নিরব পরিবেশ। অনেক সময় হয়ে গেছে সুপ্ত ঘুমিয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে উঠে যেতে পারে। নির্দিষ্ট সময় থেকে আজ একটু বেশিই ঘুমিয়েছে সুপ্ত। রাত এখন দশটা প্রায়।
আহিয়া? এইই আহিয়া আমার খুব কষ্ট হচ্ছে জানো? বুকটা ফেটে যাচ্ছে কষ্টে। এতো কষ্ট হচ্ছে আমি শ্বাস নিতে পারছি না। এরকম কষ্ট আমার জীবনে হয়নি আহিয়া। আমাকে একটু অক্সিজেন দিবে আহিয়া? আমাকে তোমার বুকে খুব খুব খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরবে? ধরোনা গো একটু। আগের মতো একটু ধরো।
তুমি এমন কেন করছো সুপ্ত? তুমি এমন করলে আমার কতো কষ্ট হয় তুমি জানো?এইতো আমি তোমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছি দেখো।
সুপ্ত চোখ খুলে দেখার চেষ্টা করে। কিন্তু একি তার আহিয়া কোথাও নেই মনে হচ্ছে হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে।
সুপ্ত ঘুমু ঘুমু চোখে এদিক ওদিক খুঁজে বেড়ায় তার আহিয়া কে কিন্তু খুঁজে পায় না। খুব পানি তেষ্টা পেয়েছে সুপ্তর। পাশের টেবিলে হাত দিয়ে গ্লাস নিতে গিয়ে দেখে গ্লাস নেই। পাশে পানির জগ টা ও নেই। সুপ্ত ব্রু কোচকে ভাবে আজ তার মা পানি দিতে কি করে ভুলে গেলো? সুপ্তর এটা মনে নেই কয়েক ঘন্টা আগে সে কি তান্ডব চালিয়েছে তার রুমে। এখন যে কেউ দেখলে মনে করবে সুপ্ত একদম সুস্থ স্বাভাবিক। তাকে দেখে মনেই হচ্ছে না সে একজন মানসিক রোগী।
সুপ্ত গুটি গুটি পায়ে রুম থেকে বের হয় পানি আনার উদ্দেশ্যে। তার রুম এখন পরিষ্কার তাই ঘুমানোর আগে কি ঝড় তুলেছিল সেটা তার মাথায় নেই।
রিপ্ত প্রতি রাতে উঠে পানি খায়। তার পানি না হলে চলে না। আর আহিয়ার আজ মনে ছিলো না পানি নিয়ে রাখতে রুমে। তাই খালি জগ নিয়ে রুম থেকে বের হয়েছে পানি নেওয়ার জন্য। আজ সকলেই একটু আগে আগে শুয়ে আছে। অনেক ধকল গেছে সারাদিন। সুপ্তর মা উনার রুমে গেছে সুপ্তর বাবা কে ঔষধ খাওয়ানোর জন্য । উনি সুপ্তর সাথেই ঘুমাবেন কে জানে কখন হয়তো পাগলামি শুরু করে দিবে।
আহিয়া জানে না এই সময় সুপ্ত রুম থেকে বের হবে। তাহলে সে এই ভুল জীবনেও করতো না। সুপ্ত এখন তাকে দেখলে সুনামি শুরু হবে আবার। দুইজনই খাবার টেবিলের উদ্দেশ্যে হাঁটছে। সুপ্ত হাঁটছে কম আর কি যেনো ভাবছে। সুপ্ত আস্তে ধীরে নিজের কদম ফেলছে শরীরটা খুব দূর্বল মনে হচ্ছে চলছেই না। আহিয়া টেবিল থেকে পানি নিয়ে জগে ভরছে। সুপ্ত হাঁটতে হাঁটতে বেখেয়াল বসত তার হাত থেকে জগ টা পরে যায়। আহিয়া পিছনে ঘুরে দেখার আগেই সবকিছু অন্ধকার হয়ে যায়।
সুপ্তর খুব অস্বস্তি হতে থাকে অন্ধকারে। কিছুই দেখতে পাচ্ছে না সে। ফোনটা ও সাথে আনেনি। সুপ্ত চিল্লিয়ে মা কে ডাকতে থাকে।
মা? মা কোথায় তুমি? মা? শিফা আলো জ্বালা বোন।কারেন্ট চলে গেছে নাকিরে। এতো অন্ধকার কেন মা?
সুপ্তর মা চিল্লানি শুনে রুম থেকে বের হয়ে আসে। হাতে মোবাইল টর্চ জ্বালিয়ে তারাতাড়ি সুপ্তর সামনে এসে দাঁড়ায়।
‘ তুই উঠে গেছিস বাবা? কখন উঠলি? আর রুম থেকে বের হতে গেলি কেন? আমি এখনই তোর খাবার নিয়ে যাচ্ছিলাম রুমে। ‘
আমিতো এখনই উঠলাম ঘুম থেকে মা। পানি রাখোনি রুমে খুব তেষ্টা পেয়েছিল আমার।
+-‘ওহ ভুলে গিয়েছি বাবা। নিয়েছিস পানি?
— নাহ্ তার আগেই তো কারেন্ট চলে গেলো।সুপ্ত কথাটা বলতে বলতেই কারেন্ট চলে আসে।
সুপ্তর মা পানি আর খাবার নিয়ে রুমে যাচ্ছে বলে সুপ্ত কে রুমে পাঠিয়ে দেন।
সুপ্ত রুমে চলে যেতেই সুপ্তর মা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়েন।ছেলেটা কে এখন কতো স্বাভাবিক মনে হচ্ছে অথচ কোন সময় যেনো আবার পাগলামো শুরু করে দেয়।
সবকিছু সাইডে রেখে সুপ্তর জন্য তিনি খাবার আর পানি নিয়ে রুমের দিকে হাঁটা দেন।
অন্য দিকে আহিয়া এতো সময় ধরে আহাম্মকের মতো দাঁড়িয়ে আছে। শিফা তাকে অন্ধকারে এখানে এনে দাঁড় করিয়েছে। দাঁড় করিয়ে কোথায় যেনো গেলো।
কয়েক মিনিট পর শিফা এসে বলে,,তুমি কি পাগল হয়ে গেছো ভাবি? তুমি আবার তান্ডবের সূচনা করতে যাচ্ছিলে।
আহিয়া বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করে মানে?
আশেপাশে দেখে কাজ করবে না? তোমার পিছনে সুপ্ত ভাইয়া ছিলো। যদি তোমাকে দেখতে পেতো ভাবতে পারছো কি হতো?
ক-কই আমি তো খেয়ালই করিনি। (আহিয়া)
ভাগ্যিস আমি ঠিক সময়ে সেখানে উপস্থিত হতে পেরেছি।তাইতো তারাতাড়ি গিয়ে মেইন সুইচ অফ করে তোমাকে সেখান থেকে সরিয়ে আনতে পারলাম।
আহিয়া ও যেনো স্বস্তি পায়। আজ এমনিতেই সকলের অবস্থা করুন। এখন আবার সুপ্ত দেখলে পাগলামি করতো।
শিফা চলে যাওয়ার পর আহিয়া পানি নিয়ে রুমে ফিরে আসে। নানান ধরনের ভাবনা ভাবতে ভাবতে তার ফ্রেন্ড কে মেসেজ পাঠায়,,,, কাল শিউর আসবিতো?
অপর পাশ থেকে রিপ্লাই আসে,,,, ” হ্যা কাল আমি আসছি টেনশন নিস না।”
আহিয়া মেসেজ দেখে মনে মনে দোয়া পরতে থাকে এবার যেনো সবকিছু ঠিক হয়ে যায়।সুপ্ত যেনো স্বাভাবিক হয়ে যায়।
*********
সকালে উঠে সুপ্ত পাইচারি করছে আর কি যেনো বিরবির করছে। মনে হচ্ছে কিছু তার থেকে হারিয়ে গেছে। সুপ্তর মা কিছু সময় সুপ্ত কে লক্ষ করে। আমতা আমতা করে জানতে চায়,,,, কি হয়েছে আব্বা? দেখে মনে হচ্ছে খুব টেনশন করছিস।
“– টেনশন করবো না মা? দেখো তোমার বৌমা আমার কল রিসিভ করছে না। আর না আমাকে কল দিচ্ছে। ”
সুপ্তর মা বুঝতে পারে সুপ্ত তার ঐ আহিয়া নামের মেয়েটার কথা বলছে। সুপ্ত প্রায়ই আহিয়া কে নিয়ে গল্প করতো এটা ওটা বলতো উনার কাছে। আর সব সময় বলতো মা তোমার বৌমা। উনি এটা জানেন না যে সুপ্ত তার আহিয়াকে বিয়ে ও করেছিলো।
রিপ্তর আহিয়া কে নিয়ে বর্তমানে পাগলামি কমেছে। এখন সে আহিয়া কল ধরছে বা দিচ্ছে না কেনো এটা নিয়ে পরে আছে। আপাতত এই আহিয়ার দিকে তার নজর নেই।
সুপ্ত কল দিচ্ছে আর আস্তে আস্তে আবার পাগলের মতো আচরণ করা শুরু করছে। কিছু সময় কল দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পথ ধরে তাকে আহিয়ার কাছে যেতে হবে। সুপ্তর মা কোনোভাবেই সুপ্ত কে আটকাতে পারছেন না। তিনি নানা ধরনের বাহানা দিচ্ছে আহিয়া হয়তো ব্যস্ত এসে পরবে খুব তারাতাড়ি। কিন্তু সুপ্ত সেই এক কথা তার আহিয়ার হয়তো কোনো বিপদ হয়েছে। নয়তো আহিয়া তো এরকম করার মেয়ে না।
“সুপ্ত রেডি হতে হতে বলে,,মা আমাকে যেতে দাও।আটকিও না।”
সুপ্ত আমার কথাটা শোন কোথায় যাচ্ছিস তুই বাবা? তোর শরীর বেশি ভালো না। মায়ের কথা শোন বাবা।
আমার কিছু হবে না মা বলেই সুপ্ত তার জোতার ফিতা বাঁধতে থাকে।
“কোথায় যাওয়া হচ্ছে শুনি?”
এরমধ্যে কারো কন্ঠ স্বর শুনে মা ছেলে দরজার দিকে তাকায়। সুপ্ত সোজা হয়ে সামনের দিকে তাকায়।তার রুমের দরজার সামনে হাসি মুখে এক রমনি দাঁড়িয়ে আছে।
#চলবে?,,,