#পাষাণে_বাঁধে_যে_হৃদয়
#পর্বঃ৪
#Jhorna_Islam
রিপ্ত যখন রুমে এসে সব কাপড় চোপড় গুছাতে ব্যস্ত আহিয়া তখন চুপটি করে কি যেনো ভাবছে। রিপ্ত কাপড় গুছাতে গুছাতে বলে,,কি হলো তৈরি হচ্ছো না কেন আহিয়া? আমি কিন্তু সিরিয়াস যেতে চাই। এইবার আর কারো কথা শুনতে চাই না।
আহিয়া কিছু সময় নীরব থেকে বলে,,আমরা কোথাও যাচ্ছি না রিপ্ত।
রিপ্ত কাপড় গোছানো রেখে বলে,,,মানে? আমি কিছু বুঝতে পারছি না।
আমি সহজ ভাবেই বলছি আমি কোথাও যাচ্ছি না।
–মানে টা কি?
— তুমি স্বার্থপরের মতো কথা বলতে পারো না রিপ্ত। উনি তোমার বড় ভাই। নিজের রক্ত। লোকটা ভালো নেই। ভালোবাসা হারানোর যন্ত্রনায় লোকটা পাগল প্রায়। একটা মানুষ কতোটা ভালোবাসলে নিজের ভালোবাসার নামটা মিল দেখে কিরকম পাগলামো করছে।তুমি কি করে বুঝবে কাউকে কখনো এমন করে ভালোবেসেছো?
রিপ্ত মাথায় হাত দিয়ে মনে মনে বলে,, এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ও মেয়েদের খোঁচা মারা স্বভাব গেলো না।
আহিয়া আবার বলে,,আর তাছাড়া আমি তখন বেশ অবাক হয়েছি তুমি জানো ওটা সুপ্ত ভাই তাহলেও কেন ওরকম ভাবে বললে যে ছদ্মবেশ ধারণ করে এসেছে তিনি।
আরে ধূর তোমরা খালি এটা ওটা নিয়ে পেচ ধরো। ওটা আমি বলেছি দেখছিলাম হাসপাতালে গিয়ে আবার আগের স্মৃতি ভুলে গেছে কিনা। কিন্তু মা কি করলো হুদাই গালে মেরে দিলো।
আহিয়া রিপ্তর গালের দিকে তাকিয়ে দেখে এখনো দাগ বসে আছে গালে। কিন্তু কি করার মায়ের তো এমনিতেই মাথা ঠিক নেই বড় ছেলে কে নিয়ে। তারউপর রিপ্তর এমন কথায় রাগ সামলাতে পারছে না। আহিয়া এসব কথা বাদ দিয়ে এখন চিন্তায় আছে কি করে কি করা যায়। কি করে সুপ্ত কে সুস্থ স্বাভাবিক করে তোলা যায়।
কিছুতেই কিছু করা যাচ্ছে না। এর পূর্বে অনেক মানসিক ডাক্তার দেখানো হয়েছে সুপ্ত কে তবে কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। দিন দিন আহিয়া কে নিয়ে পাগলামো টা বেড়েই চলেছে সুপ্তর। কি মানুষ কি হয়ে গেলো ভালোবাসা কে নিজের চোখের সামনে মরতে দেখে। আজ সুপ্তর আহিয়া বেঁচে থাকলে হয়তো কতো সুখে শান্তিতে সংসার করতো তারা।
রিপ্ত ও চুপটি করে ভাবলো ঝোঁকের বসে কি করতে যাচ্ছিলো সে।তার ভাই তো অসুস্থ। আগের স্মৃতি চোখে ভেসে ওঠে মুহূর্তের মধ্যে। দুই ভাই কতো মিল ছিলো। কতো হাসি খুনসুটিতে মেতে থাকতো দুইজন। কিন্তু জবের কারণে কিছু টা দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল। তাই বলে নিজের ভাই কে এভাবে ফেলে যেতে পারে না সে।
এরমধ্যে হুট করেই আহিয়ার মাথায় একটা বুদ্ধি আসে।তার একটা ফ্রেন্ড কতোদিন আগে দেশের বাইরে থেকে পড়াশোনা শেষ করে এসেছে। সে এসব মানসিক রোগীদেরই ট্রিটমেন্ট করে। তার সাথে কথা বলতে হবে। মোবাইল টা হাতে তুলে নেয় কল করার জন্য।
কিন্তু নাম্বার বের করে ডায়াল করার আগেই শ্বাশুড়ি মায়ের কান্না কাটি আর চিৎকার ভেসে আসে সাথে শিফাও ডাকছে বড় ভাইয়া বলে।
আহিয়া আর রিপ্ত একে অপরের দিকে তাকিয়ে দুইজনই ছোটে।
রিপ্ত গিয়ে জানতে চায় কি হয়েছে মা?
তোরা চলে যা সবাই চলে যা।আমার ছেলেটা এইদিকে এখনও দরজা খুলছে না সেটা তোদের ভাবতে হবে না। সবাই নিজেদের কথাটা শুধু ভাবিস আমার ছেলের কথা তোদের ভাবতে হবে না।
রিপ্ত কয়েকবার ডাকে কিন্তু কোনো সারা পায় না। এবার সিধান্ত নেয় দরজা ভাঙার। কিন্তু আহিয়া বাঁধা দিয়ে বলে,, আমাকে একবার দেখতে দাও তোমরা।
আহিয়া গলা ভিজিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে দরজায় টোকা দিয়ে ডাক দেয়,,
সু-সুপ্ত ভা,, বলতে গিয়েও বলে না। শুধু সুপ্ত বলে কয়েকবার ডাকার পর খট করে দরজা খুলে যায়। দরজা খুলতে দেখে সকলের দেহে প্রাণ ফিরে আসে।
সকলেই রুমের দিকে উঁকি দিয়ে দেখে সুপ্ত দরজা খুলে দিয়ে বিছানার পাশে মেঝেতে বসে বিছানায় মাথা হেলিয়ে মাথায় হাত দিয়ে চুপটি করে বসে আছে।
সুপ্তর মা দৌড়ে ছেলের কাছে যায়। সুপ্তর চেহারা দেখে মনে হচ্ছে অনেক কান্না করেছে। চোখের কোণ ভিজা। চোখ মুখ কেমন লাল হয়ে আছে। সুপ্তর মা নিজের আঁচল দিয়ে মুখ মুছিয়ে দেয়।
সবই ঠিক ছিলো কিন্তু হুট করেই সুপ্ত কেমন হিংস্র হয়ে উঠে। মাকে নিজের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। চোখ মুখে রাগ ফুটিয়ে বলে,, তোমরা আমার কেউ না। সবাই তোমরা স্বার্থপর। তোমরা আমার আপন কেউ না। হলে আমার ভালোবাসা কে কেঁড়ে নিয়ে আমার ছোট ভাই কে খুশি করতে পারতে না। তোমরা কি করে পারলে? কি করে পারলে আমার আহিয়া কে রিপ্তর সাথে বিয়ে দিতে? জাস্ট তিন মাসের ব্যবধানে তোমরা আমাকে ভুলে গেলে? আর কয়েকটা দিন তোমাদের সহ্য হলো না?
এ-এইই এইই এইই একটা সত্যি কথা বলোতো তোমরা কি আমার আহিয়া কে জোর করে বিয়ে দিয়েছো রিপ্তর সাথে? ন-না না জোর করবে কেন? আমার আহিয়া কে তো মতের বিরুদ্ধে জোর করা যায় না। ওকে তো আমি স্ট্রং করে গড়ে তুলেছিলাম।
ওরও মত ছিলো। ওর ও মত ছিলো বলেই বিরবির করতে থাকে। তারপর হুট করে রুমে থাকা জিনিসপত্র ভাংচুর করতে থাকে। সব কিছু আবার ছুঁড়ে ফেলতে থাকে। কোনো ভাবেই সুপ্ত কে আটকানো যাচ্ছে না। রিপ্ত তারাতাড়ি গিয়ে সুপ্ত কে ইনজেকশন পুশ করে দেয়। সুপ্ত আস্তে আস্তে শান্ত হতে থাকে। এক পর্যায়ে ঘুমে তলিয়ে যায়। রিপ্ত সুন্দর করে সুপ্ত কে শুইয়ে দিয়ে সেখানেই বসে থাকে।
সকলেই খুব ক্লান্ত হয়ে যায়। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। ছেলেটার পাগলামি দিন দিন বেড়েই চলেছে। সুপ্তর চিন্তায় সুপ্তর মা ও শুকিয়ে গেছে অনেকটা। হাসি খুশি পরিবারে কে জানে কার নজর লাগলো।
আহিয়া সকলকে তার ফ্রেন্ডের কথা বলে। সকলেই শুনে সুপ্তর মা বলে,,কি হবে আর ডাক্তার দেখিয়ে? কতো ডাক্তার তো দেখালাম কিছুতেই কিছু হয়নি।এবার কি হবে।
আহিয়া বলে,,একবার চেষ্টা করে দেখি না মা যদি সে কিছু করতে পারে। এমনও তো হতে পারে ভাইয়া ওর জন্য সুস্থ হয়ে গেলো। একবার চেষ্টা করলে ক্ষতি কি? অনেক তো ডাক্তার দেখালেন এবার ও দেখাই না।
যা ভালো মনে হয় করো মা। আমার ছেলেটা ভালো হলেই হলো। আবার আগের মতো হয়ে গেলেই হলো বলেই উনি নিজের রুমের দিকে চলে যায়। রিপ্ত ও বলে,,আহিয়া কে তার ফ্রেন্ড কে সুপ্ত কে দেখার কথা বলে। আহিয়া মাথা নাড়িয়ে চলে যায় কথা বলার জন্য। সুপ্ত এখন অনেক সময় টানা ঘুমাবে। তাই সকলে নিশ্চিন্তে নিজেদের রুমে চলে যায়। দেখা যাক কি আছে কপালে।
আহিয়ার ফ্রেন্ড পারে কি না অসাধ্য সাধন করতে।
#চলবে?,,,,,,