পাষাণে বাঁধে যে হৃদয় পর্ব-০৩

0
566

#পাষাণে_বাঁধে_যে_হৃদয়
#পর্বঃ৩
#Jhorna_Islam

সুপ্ত একজন আর্মি অফিসার। কাজের ব্যাপারে সে খুবই দায়িত্বশীল লোক। নিজের দায়িত্ব খুবই নিষ্টার সাথে সে পালন করতো।এজন্য বড় বড় অফিসারদের খুবই প্রিয় একজন ছিলো সুপ্ত। সুপ্তর যখন কাজে বছর তিন পেরুলো এরমধ্যে কয়েকজন মেয়ে সিলেক্ট করে আনা হয় ট্রেনিংয়ের জন্য। তারমধ্য একজন ছিলো আহিয়া।

সুপ্ত কে আরো কয়েকজন কে দায়িত্ব দেওয়া হয় ওদের ট্রেনিংয়ের। ট্রেনিংয়ের মধ্যে সবচেয়ে ভিতু আর নরম স্বভাবের মেয়ে ছিলো আহিয়া। যেকোনো টাস্ক দিলেই খুব ভয় পেতো। সুপ্ত সব লক্ষ করে আহিয়া কে আলাদা করে ডেকে সিধান্ত নেয় মেয়েটার সম্পর্কে জানবে।যখন এতোই ভয় পায় তাহলে এই পেশায় আসার মানে কি। আহিয়ার সাথে আলাদা করে দেখা করার আর কথা বলার সুযোগ খুব তারাতাড়িই পেয়ে যায় সুপ্ত।

মেয়েটা সুপ্তর সামনে দাঁড়িয়ে হাত কচলাচ্ছে আর মৃদু কাঁপছে সেটা সুপ্ত বুঝতে পারে।

” রিলেক্স আমি বাঘ ও না ভাল্লুক ও না সো এভাবে কাঁপা কাপি বন্ধ করো।আমি তোমাকে এখানে শাস্তি দিতে আসিনি। তোমার সাথে কিছু কথা আছে, আশা করি ঠিক ঠাক উত্তর দিবে?”

আহিয়া মাথা নেড়ে বোঝায় উত্তর দিবে।

গুড। বলেই সুপ্ত খুব শান্ত গলায় বলে,, তুমি কি নিজের ইচ্ছে তে এই প্রফেশনে এসেছো হিয়া?

আহিয়া সুপ্তর মুখে হিয়া নাম শুনে যতটা না চমকায় তার চেয়ে বেশি চমকায় সুপ্তের প্রশ্ন শুনে।

সুপ্ত এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আহিয়ার কার্যগুলো লক্ষ করছে। আহিয়া হকচকিয়ে আছে প্রশ্ন শুনে। বার বার ঢুক গিলছে। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সবকিছুই সুপ্তর চোখে ধরা পরে।আহিয়ার কান্ডে সুপ্ত মুচকি হেসে বলে,, তুমি আমার কাছ থেকে কিছুই লুকোতে পারবে না সো বেটার হবে ভালোয় ভালোয় বলে দাও।আমাকে কঠোর হতে বাধ্য করো না।

আহিয়া তবুও চুপ করে থাকে।

সুপ্ত এবার একটু কঠোর হয়ে বলে,,তোমার এই অবাধ্যতার জন্য তোমার ধারণা নেই হিয়া আমি কি করতে পারি।তোমার জব পর্যন্ত,,,,

সুপ্তর আর কিছু বলতে হয়নি। আহিয়া এবার ভিতু স্বরে বলে,,ন-না স্যার এরকম কিছু প্লিজ করবেন না।আমার জব চলে গেলে আমায় মে’রেই ফেলবে আমার বাবা প্লিজ স্যার।অনেক কষ্টে আমি জব টা পেয়েছি স্যার কথাগুলো বলেই কেঁদে দেয় আহিয়া।

তুমি তোমার বাবার চাপে পরে এখানে এসেছো? দেশকে ভালোবেসে দেশের সেবা করার জন্য না?

এরকম ভাবে বলছেন কেন স্যার? আমিও আমার দেশকে যথেষ্ট ভালোবাসি।তবে আমি একটু ভিতু টাইপ মানুষ খুব ভয় আমার। আমি চেয়েছিলাম টিচার হবো কিন্তু বাবার সেই এক কথা আমাকে সেনাবাহিনী তে কাজ করতে হবে। বাবার কথার উপর দিয়ে যাওয়ার সাধ্য আমার নেই। তাই যথেষ্ট শ্রম দিয়ে আমি এই পর্যন্ত এসেছি।তবে আমার ভয় এখনও কাটেনি।যদিও আমি যথেষ্ট চেষ্টা করি কেউ না বুঝুক আমি যে ভয় পাই তবুও আপনি যেনো কি করে বুঝে গেলেন। আমি চেষ্টা করছি স্যার ভয় দূর করার জন্য। এখন আমিও এই জবটা কে ভালোবেসে ফেলেছি।

সুপ্ত কিছু সময় চুপ থেকে বলে,,,তোমার শেষের কথা টা আমার ভালো লেগেছে। তুমি এগিয়ে যাও কোনো সমস্যা হলে আমাকে বলবে।সব সময় আমাকে পাশে পাবে বলেই সুপ্ত সেখান থেকে চলে যায়। আহিয়া সুপ্তের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে নিজেও নিজের কাজে চলে যায়।

সময় যতো চায় আহিয়া ততো ভালো করে ট্রেনিং নিতে থাকে।নিজের ভয় কে ধীরে ধীরে কাটিয়ে তুলছে সুপ্তর সাহায্যে।সুপ্ত আহিয়াকে যথেষ্ট সাহায্য করে। ওদের মধ্যে এখন খুব ভালো একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ওদের দেখলে এখন মনেই হয় না ওরা জুনিয়র সিনিয়র। মনে হবে ওরা একটা কাপল কতো মিল ওদের।দেখে মনে হবে কতো বছরের জানা শুনা।সকলেই ওদের মিলামিশা নিয়ে কানাঘুষা করে ওদের আড়ালে। মাঝে মাঝে ওদের কানেও সে সব এসে পৌঁছায়। কিন্তু দুইজনেই কিছু বলে না চুপ করে থাকে। কেজানে কি আছে ওদের মনে।

কিন্তু কয়েক মাস পেরুতেই আহিয়া আর সুপ্ত নিজে সকলকে অফিসিয়ালি জানায় তাদের সম্পর্কের কথা। কেউই এতে অবশ্য বেশি অবাক হয় নি। ওদের মধ্যে দিন দিন ভালোবাসা বেড়েই চলেছে কোনো কমতি নেই।এমনকি ওরা নিজেরা বিয়ে ও করে। দিন যতো যায় একজন আরেকজনের প্রতি আরো বেশি করে আসক্তি হয়ে পরে। সবকিছুর মধ্যেও দুইজনের দেশ সেবায় কোনো কমতি নেই। জান প্রাণ দিয়ে দেশের সেবা করে।

এমনি এক গুরুত্বপূর্ণ মিশনে সুপ্তর সাথে আহিয়ারও যাওয়ার আদেশ আসে।সকলেই নিজেদের ভালো মতো তৈরি করে নেয়। কে জানতো এই এক মিশন সবকিছু বদলে দিবে।জীবন কেড়ে নিয়ে নিশ্ব করে দিবে। আহিয়া তার জীবন দেয় মিশনে। তার ভালোবাসার মানুষকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের বুকে গুলি খেয়ে নিজের ভালোবাসা কে বাঁচাতে চেয়েছিল কিন্তু আহিয়া জানতো না তার ভালোবাসা কে বাঁচাতে গিয়ে বেঁচে থেকেও মরার মতো করে দিবে। সুপ্তকে ধাক্কা দিয়ে নিজে গুলি খেয়েও বাঁচাতে পারেনি গুলি থেকে। সুপ্তর বুকেও এসে লাগে তবে সুপ্ত বেঁচে গেলেও আহিয়া কে বাঁচানো যায়নি। সে সেখানেই সুপ্তর সামনে নিজের জীবন হারায়।সুপ্ত চোখের সামনে ভালোবাসাকে শেষ হতে দেখেও কিছু করতে পারে না। সে সেখানেই লুটিয়ে পরে।আরেকজন অফিসার সুপ্ত কে সেখান থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যায়। সুপ্ত কে নিয়ে যাওয়ার সময় শুধু এক পলক চোখ খুলে সেই অফিসার কে দেখতে পায়।

এতোবড় ধাক্কা সুপ্ত নিতে পারে নি।নিজের হিয়াকে হারিয়ে পাগল প্রায় অবস্থা। সুপ্তর জীবনে এতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটে যাওয়ার বছর পেরুলেও সুপ্তের মনে হয় মাস তিনেক হয়েছে। আর তার ছোট ভাই রিপ্তর বউয়ের নাম ও আহিয়া।

আহিয়া নাম টাই যেনো তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন সুপ্ত রিপ্তর বউ আহিয়াকেই সুপ্ত তার আহিয়া মনে করে। এমনকি সে নাকি তার বউ এটাও মনে করে। আগের আহিয়ার সাথে এই আহিয়ার যে কোনো মিল নেই সেটাও সুপ্তর মাথাতে কাজ করে না। ওর নাম আহিয়া মানে সুপ্তর আহিয়া তার আদরের বউ এটাই তার ধারণা। সে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে এসে মনে করছে এতোদিন মিশনে ছিলো। আর আহিয়া তার সাথে ছিলো না বিয়ে করে রেখে গেছে।

সুপ্তর বুকের গুলিটা এখনও পুরোপুরি শুকোয়নি।কারণ সুপ্ত একি জায়গায় নানা ভাবে আঘাত করে যার ফলে গুলি লাগার স্থানে এখনও একটু আঘাত লাগলে রক্ত পরে।এটার জন্যই কয়েকদিন আগে সুপ্ত কে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু সুপ্ত হাসপাতাল থেকে পালিয়ে আসে। আজ সুপ্তর মামা ছিলো তার সাথে হাসপাতাল তার চোখে ধূলো দিয়ে পালিয়ে আসে।

বাড়ির গেটের সামনে দারোয়ান ফোনে তার এক পরিচিত লোককে তাদের গ্রামের এক ভাইয়ের কথা বলছিল,, উনার কিরকম ভাই যেনো হয় এক্সিডেন্টে মা’রা যায়। তার দুইটা ছেলে মেয়েও আছে। সব কিছু বিবেচনা করে ঐ ভাইয়ের ছোট ভাই বিয়ে করে নেয়। এই কথাটা সুপ্ত ভালোভাবে না শুনে ভেবেছে সুপ্তর বউ কে তার ছোট ভাই বিয়ে করে নিয়েছে। এমনিতেই সুপ্তর মাথা বেশি কাজ করে না তাই তার মাথায় যতোটুকু ঢুকেছে ততোটুকুই সে বুঝেছে।

সুপ্ত বাড়িতে আহিয়া কে নিয়ে খুব ঝামেলা করে। আহিয়া প্রেগনেন্ট।সুপ্তর জন্য আহিয়ার নাজেহাল অবস্থা তাই এই সুযোগে আহিয়া কে একটু খুশি করার জন্য আয়োজন করা হয়েছিল কিন্তু কে জানতো শেষ পর্যন্ত এসব ঘটবে?

আহিয়া খুবই বিপাকে আছে। সুপ্ত কে প্রথমে সকলেই বলেছিলো মারা গেছে কারণ কয়েকদিন তারা কোনো খোঁজ খবর পায়নি। ওদের বিয়েটা হুট করেই হয় তাই আহিয়া জানতো সুপ্ত মৃত। পরে যখন খোঁজ খবর পেয়ে সুপ্ত কে বাড়ি আনা হলো তারপর থেকে রিপ্তর বউ আহিয়া কে নিয়ে তার পাগলামি শুরু। নিজেকে এখন আহিয়ার মানসিক রোগী মনে হয়। এমনিতেই প্রেগ্ন্যাসির কতো কমপ্লিকেশন তার উপর মাঝে মাঝে আহিয়ার মাথা থেকে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো মুছে যায়। এটা ছোট বেলা থেকেই তার সমস্যা। মাথায় ছোট বেলা আঘাত পাওয়ার ফলে এরকম হয়েছে। তাই হুট করে দরজা খুলে সুপ্ত কে দেখে সবকিছু মাথা থেকে বের হয়ে যায়।শুধু ঐসময় এটা কাজ করছিল যে সুপ্ত মারা গেছে।

#চলবে,,,?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে