#পারফেক্ট_কাপল
#পর্বঃ২
#ইনান
তারাতারি রেডি হয়ে ভার্সিটিতে গেলাম । ভার্সিটিতে গিয়ে দেখি গেইটে অগ্নি দাড়িয়ে আছে । আমার মাথায় শয়তানি বুদ্ধি উকি মারছে । কিন্তু ইনার থেকে দূরে থাকতে চাই তাই শয়তানকে সাইডে রেখে ভদ্র মেয়ের মতো গিয়ে ওর সামনে গিয়ে দাড়ালাম ।
“হোয়াট
“আপনার খাতা
“ওহ থ্যাংকস
আমি খাতা গুলো দিয়ে চলে আসছিলাম তখনি পিছন থেকে অগ্নি আবার ডাক দেয় ।
“নিধি
“জ্বী ভাইয়া কিছু বলবেন
উনি আমার দিকে একনজর তাকিয়ে বলে
“পরের বারের এসাইন্টমেন্ট গুলো তুমিই করে দিও ।
আমার চোখ বড় বড় হয়ে যায় । এই ছেলে বলে কী! পরবর্তী সময় আমাকে আর খোজে পাওয়া যাবে না । আমি এক চিত্কারে না বলে ঐখান থেকে চলে আসি ।
ক্লাসে এসে দেখি রিমি আর ইশা বসে আছে গালে হাত দিয়ে । দেখে মনে হচ্ছে কিছু একটা চিন্তা করছে খুব গভীর ভাবে । আমি গিয়ে ওদের পিছনে দাড়িয়ে ওদের মাথায় মেরে বলি
“কীরে কী ভাবস এতো
রিমি বলে
“তুই এসাইন্টমেন্ট করে বেঁচে আছিস নাকি তাই ভাবি
ইশা বলে
“তুই বেচে আছিস । আল্লাহ আমার দোয়া শুনছে ।
আমি রেগে বলি
“ঐ তোরা চুপ থাকতে পারিস না
ব্যস লেগে গেলাম তিনজনে ঝগড়া । তখন ক্লাসে স্যার চলে আসায় চুপ হয়ে যাই ।
খুব মনযোগ দিয়ে ক্লাস করছিলাম । তখন কেউ বলে উঠে
“মে আই কাম ইন স্যার
“ইয়েস কাম ইন
গলাটা পরিচিত লাগায় সেদিকে তাকায় । তাকিয়ে দেখি অগ্নি, রিয়াদ আর আরিশ দাড়িয়ে আছে । স্যারের অনুমতি পাওয়াই তারা ক্লাসে ঢুকে ।
“সবাই কেমন আছো ?
সবাই একত্রে বলে উঠে
“ভালো
“৫ দিন পর আমাদের ভার্সিটির ১০০ বছর ফুর্তি ।সো সবাইকে পার্টিসিপেট করতে হবে । আর যারা ভার্সিটি সাজাতে সাহায্য করবে তাদের নাম আরিশ বলে দিবে ।
অগ্নির অনুমতি পেয়ে আরিশ বলতে শুরু করে ।কিছুক্ষণের মাঝে আমার নামাটাও বলে উঠলো । আমি দাড়াতেই অগ্নি আমার দিকে তাকিয়ে বাকা হাসলো । আমি বুঝতে পারলাম এই ব্যাটা ইচ্ছে করে আমার নামটা রাখছে । একে একে সবার নাম বলা শেষ । আমার ২ পেতনি বান্ধুন্নির নাম নেয় নি । তাই তারা নাচে নাম দিবে বলে ঠিক করেছে ।
ভার্সিটি ছুটির পর
একটা রিক্সাও পাচ্ছি না । রিমি আর ইশার বাসা কাছে হওয়াই ওরা হেটে চলে গেছে । আমি একবার এদিক আরেকবার অদিক তাকিয়ে দেখি কোন রিক্সা আসছে নাকি । কিন্তু রিক্সার ‘র’ টাও দেখা যাচ্ছে না । হঠাত্ করে কোথা থেকে অগ্নি এসে আমার সামনে বাইক থামায়
“কী চাই ?
“তোমাকে ।
“মানে ?
“কিছুনা চলো তোমাকে তোমার বাসায় পৌছে দেই
“নো থ্যাংকস
“ভেবে বলছো তো । আজকে কিন্তু একটা রিক্সাও পাবা না
আমি কিছুক্ষণ ভেবে দেখলাম । তারপর ওর বাইকে উঠে বসলাম কিন্তু দূরত্ব রেখে ।
.
.
.
বাইক থেকে নেমে অগ্নিকে থ্যাংক ইউ বলে ই দৌড়ে বাসায় চলে আসি । কলিংবেল চাপতেই আম্মু দরজা খোলে দেয় । আমি সোজা নিজের রুমে গিয়ে দেখি সানাই বিছানায় বসে আছে । বার বার মাথা তুলে দরজার দিকে দেখছে ।
“কীরে সানাই কাকে খুজ্জিস ?
সানাই আমার কথা শুনে লাফিয়ে আমার দিকে তাকালো । আমাকে দেখে সে লাফাতে শুরু করলো । আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে যায় ফ্রেশ হতে ।
ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখি নিয়ান কালার পেন দিয়ে সানাই গায়ে আকিঝুকি করছে । আমি রেগে এগিয়ে গিয়ে ওর কানে ধরলাম
“ঐ ফাজিল ছেলে তুই কী জীবনে শোধরাবি না
“আপু ছাড় ব্যাথা লগছে ।
“লাগুক । আগে বল সানাই এর গায়ে এমন আকিঁঝুকি করছিস কেন
“তোর বিড়াল আমার ড্রয়িং নষ্ট করে দিছে ।
“এদিক সেদিক ফেলে রাখছিলি নিশ্চয় ।
সে আমার কথায় মাথা চুলকায় যার মানে আমার কথায় ঠিক । এবার কানটা একটু জোরে ধরে ছেড়ে দিয়ে সানাইকে ওয়াশরুমে নিয়ে আসি । সানাইকে ওয়াশ করে ঘরে নিয়ে এসে হেয়ের ড্রায়ার দিয়ে শুকিয়ে নিয়ে রুমের দিকে তাকাতেই আমার চোখ চড়ক গাছে । আমার রুমের সব জিনিস এলোমেলো । আমি জোরে এক চিত্কার দিলাম ।
“নিয়াআআন
আমি সোজা আম্মুর কাছে গেলাম । আম্মু আমাকে দেখে এক ভ্রু উচিয়ে ফেলে । আমি তা দেখে বিরক্তি নিয়ে বলি
“সবসময় কী এরকম রিয়েকশন দেওয়া জুরুরি
“না! আচ্ছা কিছু বলবি ?
“হুম
“বল
“তোমার ছেলে আমার রুম এলোমেলো করে চলে আসছে
“তো গুছিয়ে নে
“মানে তুমি ওকে কিছু বলবে না!
“ও ছোট এরকম দুষ্টুমি করবেই
“ধুর কাকে কী বলি
রাগে ফুসতে ফুসতে নিজের রুমে চলে আসি । এসে চুপচাপ সব গুছিয়ে বিছানায় শুয়ে পরি । ক্লান্তি লাগায় সাথে সাথে ঘুম চলে আসে ।
পরের দিন
আজ ভার্সিটিতে একটু তারাতারি চলে আসি । একটা গাছের নিচে বসে আছি । আমাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে কোথা থেকে অগ্নি এসে আমার পাশে বসে পরে ।
“এই আপনি আমার পাশে বসলেন কেন উঠুন বলছি ।
“না । এখানে তো লেখা ছিল না যে এখানে নিধি বসছে সো তুমি বসতে পারবে না ।
“লেখা নেই তো কী হয়েছে আমি তো এখন মুখে বলছি উঠুন ।
“সরি পারবো না
আমি রেগে উঠে ঐখান থেকে চলে আসি । এই লোকটার সাথে তর্ক করা বৃথা । এই ছেলে এতো ঝগড়ুটে বাবা রে । আমি সোজা কেন্টিনে গিয়ে বসলাম । ঐখানে বসে কফি খাচ্ছি আর গল্পের বই পড়ছি । তখন কেউ একজন আমার ঠিক সামনের চেয়ারটাতে বসল । কিন্তু আমার তাকাতে ইচ্ছে হলো না কারণ আমি পুরোপুরি গল্পের মাঝে ডুবে আছি । কিন্তু অস্বস্তি হচ্ছে মনে হচ্ছে কেউ আমার দিকে তাকিয়ে আছে তাই না পেরে চোখ তুলে তাকালাম । তাকিয়ে দেখি অগ্নি ।
“কী ব্যাপার আপনি এখানে কী করছেন ?
“কেন এখানে আসা যাবে না নাকি
“না আসা যাবে না কেন অবশ্য ই আসা যাবে কিন্তু এতো টেবিল রেখে আমার টেবিলে কেন বসলেন বাই ইনি চান্স আপনি কী আমাকে পছন্দ করেন
আমার কথা শুনে অগ্নি মুখ বাকিয়ে বলে
“চেহারার নাই চিরিবিরি আমি নাকি ওরে পছন্দ করবো ।
“কী কী বললেন আমার চেহারার খারাপ । বেটা নিজের চেহারা যায়া আয়নায় দেখিস হুহ ।
এই বলে ভেংচি কেটে ঐখান থেকে চলে আসলাম আমি । বেটা কচ্ছরের সাহস কত বড় । আমাকে বলে আমার চেহারা খারাপ দেখিস তোর বউ আমার থেকে দেখতে খারাপ হবে ।
আমি ক্লাসে এসে চুপ করে বসে রয়লাম । এখন রিমি আর ইশা থাকলে ওদের উপর রাগটা ঝাড়তে পারতাম । কিন্তু ঐ পেত্নি দুইটা আসার নামই নিচ্ছে না ..
চলবে ?