পরিশিষ্ট পর্ব-২০

0
1250

#গল্পের_নাম: পরিশিষ্ট
#লেখিকা: অজান্তা অহি (ছদ্মনাম)
#পর্ব_২০

দরজা খুলে অহিকে দেখেই রোদ্দুরের বুকে ব্যথা শুরু হলো।অহির হাসিতে সে নিশ্চিত খুন হয়ে যাবে।সে অপলক অহির দিকে চেয়ে রইলো।অহির পাশ থেকে অপূর্ব বলল,

—“ভাইয়া, দরজা থেকে সরে দাঁড়ান।নাকি ভেতরে ঢুকতে দিবেন না?”

রোদ্দুর থতমত খেয়ে সরে দাঁড়াল।সবাই ভেতরে ঢুকলো।রোদ্দুর অপূর্বর মাথায় হালকা করে চাটি মেরে শাহানাকে বলল,

—“খালামণি,মা রান্নাঘরে!বাকি সবাই ঘুমায়!”

শাহানা বলল,

—“রোদেলারা এখনো এসে পৌঁছায়নি?”

—“না!”

শাহিনুর আর কিছু বলল না।রোদ্দুর অহির দিকে চেয়ে কিছু একটা ইশারা করলো।অহি তাকে পাত্তা দিল না।

অহির কলেজ টিচার বাবা আশরাফ হোসেন রোদ্দুরকে তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ করে বলল,

—“তোমার মা বলল যে তোমার পাগলামি সেরে গেছে।এখন সুস্থ হয়ে গেছো।কিন্তু আমার তো মনে হচ্ছে না!এতবড় মুরুব্বি মানুষকে দেখেও সালাম দিচ্ছো না!তোমার সাথে আমার বহুদিন পর সাক্ষাৎ হলো!”

রোদ্দুর হিমশিম খাচ্ছে।তার টিচারবেশী খালুর সবার থেকে শ্রদ্ধা আর সালাম পেয়ে অভ্যস্ত।একটু তো খেয়াল রাখা উচিত ছিল!সে ঝটপট বলল,

—“আসসালামু আলাইকুম বাবা!স-স্যরি!খালুজি!”

আশরাফ হোসেন গম্ভীর চোখে সোফায় গিয়ে বসলেন।হাত নেড়ে রোদ্দুরকে পাশে বসতে বললেন।হঠাৎ পাশে কুটিকে শুয়ে দেখে চমকে বলল,

—“হলি কাউ!এ এখানে ঘুমিয়ে কেন?”

তার মৃদু চিৎকারে কুটির ঘুম ভেঙে গেল।সে উঠে আশরাফের দিকে আগুনঝরা দৃষ্টিতে তাকাল।তার কত সাধের ঘুম!আশরাফের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিজের রুমে গেল।ফ্রেশ হতে হবে!

ততক্ষণে রোদ্দুর খালুর পাশে বসে গেছে।আড়চোখে রান্নাঘরের দিকে বার বার তাকাচ্ছে।কারণ অহি আর ছোটখালা রান্নাঘরে ঢুকেছে।

—“রোদ্দুর! ”

—“জ্বি খালুজি!”

—“শাহিনুর আপা বহুদিন আগে মাঝরাতে ফোন দিয়ে প্রচুর কান্নাকাটি!তোমার নাকি মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে।ঠিকমতো খেতে পারছো না,কোনো কাজে মনোযোগ দিতে পারছো না,হুটহাট গান ধরো,রাত জেগে চোখের নিচে কালি ফেলো,হুট করে কবিতা আওড়ায়,বিড়বিড় করে কার সাথে যেন কথা বলো ইত্যাদি!তোমার মায়ের ধারণা তোমায় মহিলা জ্বীনে ভর করেছে।সেজন্য তিনি পীরসাহেবের শরণাপন্ন হয়েছিলেন।কিন্তু আমার ধারণা তুমি নতুন করে কারো মায়ায় জড়িয়েছো!”

রোদ্দুর খুকখুক করে কাশলো।আশরাফ হোসেন চশমাটা খুলে বুকপকেট থেকে টিস্যু বের করে তার কাচ পরিষ্কার শুরু করলেন।তারপর গম্ভীর গলায় বললেন,

—“তোমার খালার প্রেমে যখন আমি পড়ি তখনও আমার সেইম অবস্থা হয়েছিল।খেতে পারি না,কিচ্ছু করতে পারি না,সারাক্ষণ মাথার মধ্যে শাহানা ঘুরে বেড়ায়,দৌঁড় ঝাপ করে!কি এক্টা অবস্থা।তুমি এর আগে ভুল মানুষের প্রেমে পড়ে নিজেকে কষ্ট দিয়েছো।সাথে আমাদের সবার বেইজ্জতি করেছো।এখন বলো,তুমি এবার কোন শয়তানের বাচ্চার প্রেমে পড়েছো?মেয়ের বাবা-মার ব্যাকগ্রাউন্ড পরীক্ষা করতে হবে!বাবা মা পাগল ছাগল কি না,বেদ্দপ কি না,রাজনীতির সাথে জড়িত কি না ইত্যাদি আরো অনেক কিছু!বুঝতে হবে আম গাছে আম ধরে,আঙ্গুর ধরে না!”

রোদ্দুরের প্রচুর হাসি পাচ্ছে।সে নিজেকে সামলে রান্নাঘরের দরজায় আরেক নজর দিল।অজান্তার ওড়নার ঝুলন্ত এক অংশ চোখে পড়ছে।তারপর শান্ত কন্ঠে বলল,

—“খালুজি,আপনি ঠিক ধরেছেন।নতুন করে ইয়ে মানে…বুঝতেই পেরেছেন।তবে মেয়ে অনেক ভালো।পৃথিবীতে একজনই আছে।কিন্তু সমস্যা হলো মেয়ের বাবাকে নিয়ে।”

—“হলি কাউ!মেয়ের বাবা চোর ডাকাত,গুন্ডা-বদমাশ রাইট?”

—“ইয়ে মানে!তেমন না!এমনিতে অনেক ভালো।কিন্ত মাথায় একটু গোলমাল আছে।দু একটা নিউরনে সমস্যা! তাছাড়া মন ভালো! ”

—“চিন্তার বিষয়!আচ্ছা যাও!সমস্যা নেই।মেয়ের বাবার সাথে কথা বলিয়ে দিয়ো আমায়।মেয়ে পাগল না হলেই হলো।তুমি তো আর মেয়ের বাবাকে বিয়ে করবে না।বিয়ে করবে মেয়েকে!মেয়ের বাবা পাগল হলেও সেটা ফেস করবে তোমার শ্বাশুড়ি!কি বলো?”

—“একদম খাঁটি কথা বলেছেন খালুজি!”

আশরাফ হোসেন চোখে চশমা দিয়ে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালেন।যাওয়ার আগে বললেন,

—“তোমার বাবাকে ঘুম থেকে টেনে উঠিয়ে নিচে পাঠাও তো।নয়টা বাজতে চলল!”

রোদ্দুর মাথা নেড়ে ধুপধাপ পা ফেলে উপরে গেল।কয়েক মিনিট আগে অহি রান্নাঘর থেকে বের হয়ে উপরে উঠেছে।সে প্রায় দৌঁড়ে রোদেলা আপুর রুমে ঢুকলো।কিন্তু আশাহত হলো সে।রোদেলা আপুর রুমে অপূর্ব শুয়ে শুয়ে ফোনে গেইম খেলছে।

রোদ্দুরকে দেখেই অপূর্ব বলল,

—“বুবু এ রুমে নেই!”

রোদ্দুর পাত্তা না দিয়ে বলল,

—“কি রে অপূর্ব!তুই নাকি ইদানীং তোর স্কুলের একটা মেয়েকে লাইন মারার চেষ্টা করছিস?”

—“ভাইয়া,সব মেয়ের তো আর অপূর্বর মতো ভাই নেই যে লুকিয়ে দরজা খুলে নিজের বোনকে দেখার ব্যবস্থা করে দিবে!উল্টো আমাকে গাছে ঝুলিয়ে রাখবে!”

রোদ্দুর মাথা চুলকাতে চুলকাতে বের হয়ে আসলো।অহি কোথায় গেল?সে দ্রুত ছাদেও একটা চক্কর দিয়ে আসলো।নাহ!নেই!পরমুহূর্তে ক্ষীপ্রপায়ে নিজের রুমে ঢুকলো।

অহি ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে হিজাবে পিন গাঁথছিল।অহিকে দেখে যেন তার মনের ভেতর শান্তির বন্যা বয়ে গেল।রোদ্দুর বিছানায় বসে আড়চোখে অহির দিকে তাকিয়ে বলল,

—“কি করছিস অজান্তা?”

অহি শান্ত গলায় বললো,

—“হিজাব খুলে নতুন করে বাঁধছি।”

রোদ্দুর বিরক্ত কন্ঠে বলল,

—“বাসায় কি রুম টুমের অভাব পড়েছে?তোর যত খোলাখুলির কাজ সব আমার রুমে করতে হবে?”

অহি হাসতে নিয়েও হাসলো না।গম্ভীর কন্ঠে বলল,

—“আপনি কেমন আছেন রোদ্দুর ভাই?”

অহির ছোট্ট একটা প্রশ্নে রোদ্দুরের হার্টবিট দ্বিগুণ বেড়ে গেল।সে শক্ত হাতে বেডশিট চেপে বলল,

—“রাতে ফোন করলাম,ধরিসনি কেন?”

অহির হিজাব বাঁধা শেষ।সে ঘুরে দাঁড়িয়ে রোদ্দুরের দিকে তাকালো।হাসিমুখে বলল,

—“আপনি সারাদিন আমার খোঁজ নেননি সেজন্য!আমি এতগুলো কল করলাম!টেক্সট করলাম বাট আপনি?একটারও উত্তর দিলেন না!তারপর আপনার হুট করে গভীর রাতে মনে পড়বে আর ফোন দিবেন!আমি রিসিভ কেন করবো?”

—“আমি দিনে ব্যস্ত ছিলাম।”

—“আমিও রাতে ঘুমাতে ব্যস্ত ছিলাম।”

অহির হাসিমুখের এই উত্তর যেন রোদ্দুরের বুকে আগুন ধরিয়ে দিল।এই আগুন সে অহিকে দিয়েই নেভাবে।জ্বলন্ত চোখে একবার দরজার দিকে তাকালো।দরজা ভেড়ানো!

সে সটান উঠে অহির দিকে এগিয়ে গেল।এক টানে অহির হিজাব এলোমেলো করে দিল।অহি বিস্ময় ভরা কন্ঠে বলল,

—“এত কষ্ট করে বাঁধলাম আপনি এলোমেলো করে দিলেন কেন?”

—“আমি যে এত কষ্টে নিজেকে গুছিয়ে রাখি,সেই আমিকে এলোমেলো করে দেয়ার সময় একবার মনে হয় না আমারো কষ্ট হয়?”

অহি মায়াভরা দৃষ্টিতে রোদ্দুরের চোখে চোখ রাখলো।আলতো করে ডান হাতটা রোদ্দুরের বুকে ছোঁয়াল।রোদ্দুর আর সইতে পারলো না।এক ঝটকায় অহিকে বুকে জড়িয়ে নিল।

রোদ্দুরের হাত ক্রমেই শক্ত হয়ে আসছে।অহির গলার কাছে একটা সুঁচ পিন বিঁধছে অনেকক্ষণ হলো।সে সরে আসতে চাইলো।কিন্তু রোদ্দুর ছাড়লো না।সুঁচ পিন গেঁথে যাচ্ছে গলায়।সে হাঁসফাঁস করে বলল,

—“রোদ্দুর ভাই ছাড়ুন!সুঁচ পিন আমার গলায় বিঁধে যাচ্ছে।”

—“বিঁধুক!আমারো বুকে বিঁধছে।”

—“আমি ব্যথা পাচ্ছি।”

—“আমিও পাচ্ছি!”

—“আমি সহ্য করতে পারছি না।”

অহি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে রোদ্দুর আরো চেপে ধরে বলল,

—“আমিও সইতে পারছি না।”

অহি আর পারলো না।রোদ্দুরের বুকে এক কামড় বসাতে সে ছেড়ে দিয়ে ছিটকে সরে গেল।তোতলানো স্বরে বলল,

—“অজান্তা,তুই কি পাগল?”

অহি সেদিকে কান না দিয়ে ডান হাতের আঙুল গলায় বুলালো।একটা আঙুল সামনে এনে দেখে এক ফোঁটা রক্ত!সে চমকে বলল,

—“রোদ্দুর ভাই, আপনি একটা পাগল!শুধু পাগল নয়!মহাপাগল!এই দেখুন সুঁচ বিঁধে আমার কাঁধের কাছে থেকে রক্ত বের হয়েছে।”

—“আমারো তো বুকে বের হয়েছে।পিন এখনো গেঁথে রয়েছে।”

সত্যি সত্যি রোদ্দুরের বুকের ডান পাশে একটা সুচ খাড়া হয়ে গেঁথে আছে।কিন্তু রোদ্দুরের মুখে কোনো অভিব্যক্তি নেই।অহি মৃদু চিৎকার করে বলল,

—“আপনি একটা পাগল!বদ্ম উন্মাদ।আপনাকে আমি মরে গেলেও বিয়ে করবো না।”

বলেই এক দৌঁড়ে বের হয়ে গেল অহি।রোদ্দুর বাঁধা দিল না।সে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পিনটা খুললো।রক্ত বের হয়নি।তবে একটু ব্যথা পেয়েছে।সে তো ভেবেছিল, এমনেই বুকে জ্বালাপোড়া করছিল।সত্যি সত্যি সুঁচ গেঁথে গেছে ধারণাতে ছিল না।

ড্রেসিং টেবিলের উপর অনেকগুলো সুঁচ পিন, সেফটিপিন এখনো ছড়ানো ছিটানো।অহি তুলে নিতে হয়তো ভুলে গেছে।

রোদ্দুর বিছানায় বসে দরজার দিকে তাকালো।দরজা সামান্য খোলা।অহি রাগ করেছে কি না সে বুঝতে পারছে না।যদি রাগ করে সত্যি সত্যি?তাহলে কিভাবে ভাঙাবে?হঠাৎ রোদ্দুরের মুখে হাসি ফুটে উঠলো।

দ্রুত বিছানা থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে ওয়াইফাই অন করলো।তারপর ইউটিউবে ঢুকে হিজাব টিউটোরিয়াল দেখা শুরু করলো।অহি তো সবসময় হিজাব পড়ে।তার রাগ ভাঙ্গানোর জন্য হিজাব পড়া শেখা যায়!

টেনে টেনে তিনটে ভিডিও দেখে রোদ্দুর রুমে ওড়নাজাতীয় কিছু খুঁজলো।প্র্যাক্টিকাল শিখতে হবে।কিন্তু রুমে কোনো ওড়না না পেয়ে সে লম্বা টাওয়ালটা হাতে নিল।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভিডিও টা অন করে ফোনটা চোখের সামনে রেখে নিজের মাথায় টাওয়াল পেঁচালো।

অনেক চেষ্টার পর, প্রায় চল্লিশ মিনিট পর রোদ্দুর মাথায় পাওয়ালটা হিজাবের মতো পেঁচাতে সক্ষম হলো।আয়নায় সামনে পিছে ঘুরে ঘুরে,বিভিন্ন ভঙ্গি করে নিজেকে দেখতে লাগলো।পরমুহূর্তে হাসিমুখে বলল,

—“বাহ!সুন্দর তো!ছেলেদেরও এভাবে হিজাব বেঁধে বাইরে বের হওয়া উচিত।অজান্তাকে হিজাব বেঁধে দিলে নিশ্চিত অনেক খুশি হবে!”

হঠাৎ কারো গগনবিদারী চিৎকারে ভ্রু কুঁচকে তাকায় রোদ্দুর।এক হাত দরজাতে রেখে বিস্ফারিত নয়নে,মুখ হা করে রোদ্দুরের দিকে তাকিয়ে আছে অপূর্ব!

অপূর্ব এসেছিল ব্রেকফাস্টের জন্য রোদ্দুরকে ডাকতে।রোদ্দুর ভাইয়াকে এভাবে সাদা ফুলেল ট্রাউজার,কালো ফতুয়ার সাথে মাথায় হিজাব পড়তে দেখে ভয় পেয়ে গেল।রোদ্দুর কয়েক পা এগিয়ে এসে অপূর্বকে বলল,

—“হেই ব্রোহ!দেখ তো হিজাব বাঁধা কেমন হয়েছে?”

অপূর্ব এক চিৎকার দিয়ে রুম থেকে বের হলো।নিচে নামতে নামতে বলল,

—“রোদ্দুর ভাই আবার পাগল হয়ে গেছে!তার মাথা এখনো ঠিক হয়নি।”

——————–

বাস আগে থেকেই ভাড়া করা ছিল।প্লান ছিল সকাল নয়টার বাসে সবাই রাজশাহী যাবে।কিন্তু সবাই এক জায়গা হতে হতে সাড়ে নয়টা বেজে গেল।দশটার দিকে তারা সবাই বাসে উঠলো।

বাস ছেড়ে দিয়েছে।জানালা দিয়ে ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে।এতক্ষণে শাহিনুর স্বস্তি পেল।সে বসেছে জানালা ঘেঁষে।তার বাম পাশে কুটি।কুটি শাহিনুরকে অভারটেকে করে মুখ বাড়িয়ে জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

শাহিনুর বিরক্ত হয়ে বলল,

—“এই কুটি!মুখের সামনে এসে নিঃশ্বাস ছাড়বি না।পৃথিবীতে কি জায়গা কম পড়েছে যে তোর বিষাক্ত গরম কার্বনডাই-অক্সাইড আমার মুখে ফেলতে হবে?”

কুটি শাহিনুরের দিকে চেয়ে বলল,

—“বড় মা এমন করেন ক্যা?একটা জিনিস শান্তিতে দেখতে দেন না।আপনে একটা অশান্তি!”

—“কুটি খবরদার!আমার রাগ উঠাবি না।তোকে কিন্তু জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিব।”

কুটি সোজা হয়ে বসে বলল,

—“আমারে ফ্যালতে গিয়া নিজেও পইড়েন না আবার!আপনার যা শরীল!”

—“কি!তুই আমাকে মোটা বললি?আমি তোর কাছে বসবো না।ড্রাইভার গাড়ি থামান।এক্ষুণি থামান!আমি সিট পাল্টাব!”

শাহিনুরের চিৎকারে বাসের সবাই নড়াচড়া শুরু করেছে।ছোট্ট একটা বাসভর্তি শুধু তারা নিজেরাই।অহির পরিবার,রোদেলার নতুন পরিবার, অহির ফুপুর পরিবার আর রোদ্দুর রা!সবমিলে বিশ জনের মতো!সবগুলো চোখ শাহিনুরের উপর।

ততক্ষণে ড্রাইভার গাড়ি সাইড করেছে।পান খাওয়া কুচকুচে ঠোঁটের মাঝবয়েসী এক ড্রাইভার ঘাড় ঘুড়িয়ে বলল,

—“কেউ কি পিচ্ছাব করবনি?তাড়াতাড়ি শ্যাষ করেন ভাইসাবগণ!”

ড্রাইভারের পাশে বসেছিল অপূর্ব।ড্রাইভার আরো কিছু বলতে নিতে সে কনুই দিয়ে গুঁতো দিয়ে থামিয়ে দিল।দুই মিনিটের মধ্যে সিট পরিবর্তন করা হলো!মাঝামাঝি জায়গা রোদেলা আর সাদিদ পাশাপাশি বসেছিল।শাহিনুর উঠে গিয়ে সাদিদকে উঠিয়ে দিয়ে বলল,

—“সবসময় বউয়ের আঁচল ধরে থাকতে হবে কেন?বাসেও পাশাপাশি বসতে হবে?যাও তোমার শ্বশুর মশাইয়ের পাশে গিয়ে বসো।উনি একা আছেন!”

রোদেলা মায়ের হাত চেপে অনুরোধের স্বরে বলল,

—“মা!একটু থামো!”

সাদিদ লজ্জা মিশ্রিত মুখে উঠে একদম পেছনের সিটে গিয়ে তার নিঃসঙ্গ শ্বশুর মশাইয়ের পাশে বসলো।শাহিনুর রোদেলার পাশে ধপ করে বসে পড়লো।হঠাৎ করেই তার চোখ বামপাশের তিন নাম্বার সারিতে গেল।রোদ্দুর আর অহি পাশাপাশি বসে আছে।শাহিনুর বাজখাঁই গলায় বললো,

—“এই রোদ্দুর! তুই এত মানুষের মধ্যে অহির কানে কানে কি কস?যা,উঠ!পিছনে তোর খালুর পাশে গিয়ে বস!”

রোদ্দুর অসহায় মুখ নিয়ে উঠে গিয়ে তার খালু আশরাফ হোসেনের পাশে বসলো।শাহিনুর ঠিকমতো বাসে বসে বলল,

—“ড্রাইভার সাব!গাড়ি ছাড়ুন!আর কোনো থামাথামি নাই!”

(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে