#গল্পের_নাম: পরিশিষ্ট
#লেখিকা: অজান্তা অহি (ছদ্মনাম)
#পর্ব_১৯ (বোনাস পার্ট)
রোদেলা কলেজ থেকে ফিরলো ক্লান্ত শরীরে।ড্রয়িং রুমের টেবিল থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে খেয়ে সোফাতে বসে পড়লো।সে এখন আছে সাদিদের বাড়িতে!
তাদের বিয়ের আজ একুশ তম দিন।বাবার বাড়িতে সাত দিনের মতো থেকে গত সপ্তাহে ফিরেছে এখানে।আশপাশে চোখ ঘুরিয়ে সে ছিনজাকে খুঁজলো।কোথাও দেখতে পেল না।উঠে রান্নাঘরে এগিয়ে গিয়ে বুয়াকে বলল,
—“খালা,ছিনজা কোথায়?”
মধ্য বয়স্কা এক মহিলা কাজ করে এ বাড়িতে।তিনি ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল,
—“ছিনজা তো ঘুমায়।সেই এগারোটার সময় ফিরছে স্কুল থেকে! ”
—“আর বাবা কোথায়?”
—“বড় সাব তো বাইরে বের হইলো দেখলাম।”
রোদেলা আর ঘাঁটলো না।নিজের রুমে ঢুকে গেল।ছিনজা বিছানায় হাঁটু মুড়ে শুয়ে আছে।রোদেলার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।ছিনজার কপালে চুমু দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।কি সুন্দর নিষ্পাপ চেহারা!এত সুন্দর একটা মেয়েকে পাশে নিয়েই তো কয়েক জনম কাটিয়ে দেয়া যায়!
সাদিদ এখনো ফেরেনি কলেজ থেকে।তার কাজ আছে আরো!কলেজ যাওয়ার সময় তারা একত্রে যায়।কিন্তু ফেরার পথে আলাদা ফেরে।প্রায় দিনই সাদিদের কাজ পড়ে যায়।
রোদেলা ওয়াশরুমে ঢুকলো।শাওয়ার ছেড়ে তার নিচে দাঁড়াল।ঠান্ডা পানির স্পর্শ পেতেই তার ক্লান্তিভাব অনেকখানি উবে গেল।
সাদিদের সাথে তার সম্পর্কের তেমন উন্নতি হয়নি।এক বাসায় রয়েছে, কলেজ করছে নিয়মিত,টুকটাক প্রয়োজনীয় কথা হচ্ছে, ছিনজার সাথে হৈ হুল্লোড় হচ্ছে! ব্যস!এইটুকুই।
রোদেলা মাথায় টাওয়াল পেঁচিয়ে বের হলো।তার পরণে সবুজ রঙের সুতি শাড়ি।বিয়ের পর থেকে সে শাড়ি পরা শুরু করেছে।মাথার চুল ঝেরে এক পলক ছিনজার দিকে তাকালো।ছিনজা ঠোঁট উল্টে ঘুমাচ্ছে।এগিয়ে গিয়ে গায়ে চাদর টেনে সে নিচে নামলো কিছু খাওয়ার জন্য!
আধঘন্টা ধরে রোদেলা ছিনজার পাশে ঘুমানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু দু চোখে ঘুম ধরা দিচ্ছে না।আরো কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করে সে উঠে দাঁড়ালো।
সাদিদের রুমটা বেশ বড়।দক্ষিণের দেয়াল ঘেঁষে একপাশ করে দুটো বুকশেলফ।প্রচুর বই তাতে!রোদেলা এগিয়ে গিয়ে পুরো বুকশেলফ ঘাঁটাঘাঁটি করলো।কিছু একটা পড়ে দু চোখকে ক্লান্ত করতে হবে।দু চোখ ক্লান্ত হলেই ঘুম আসবে!
হঠাৎ অনেকগুলো বইয়ের আড়ালে মোটা ফ্রেমের পুরনো এক ফটো এলবাম নজরে এলো রোদেলার।আগ্রহ নিয়ে ময়লা ঝেরে হাতে নিল সে!যাক!কিছুটা সময় কাটানোর সঙ্গী পাওয়া গেল।
রোদেলা ফটো এলবামটা হাতে নিয়ে ছিনজার পাশে খাটে হেলান দিয়ে বসলো।তারপর এলবাম খুললো।
প্রথম বেশকিছু পাতায় সাদা কালো ছবি।সাদিদের নানা-দাদার কারো।কয়েক পাতা উল্টাতে সে সাদিদের মায়ের ছবিও দেখতে পেল।সাত-আট বছরের সাদিদকে পাশে নিয়ে উঠা ছবি।রোদেলা ছবিটাতে পরম মমতায় হাত বুলালো।এরপর সাদিদের প্রাপ্ত বয়সের বহু ছবি।যার বেশিরভাগ বিদেশে তোলা।কিছু ভার্সিটি লাইফের।ঢাকা ইউনিভার্সিটির কার্জল হল ব্যাকগ্রাউন্ডে দেখে চিনলো।
শেষের দিকে একটা ছবি উল্টো করে রাখা।সাদা পৃষ্ঠা দেখা যাচ্ছে শুধু।কৌতুহল নিয়ে ছবিটা টেনে বের করলো রোদেলা।চোখের সামনে মেলে ধরতেই তার পিলে চমকে উঠলো।কারণ ছবিখানা তার।তাও আবার কলেজ লাইফের।যখন তার সতেরো বছর বয়স ছিল!
কাঁপা কাঁপা হাতে ছবিটা উল্টে পাল্টে দেখা শুরু করলো রোদেলা।ছবিতে হোয়াইট কালারের কলেজ ড্রেস পরিহিত কিশোরী রোদেলা।
রোদেলার দু চোখ ফেটে অশ্রু ঝরা শুরু হলো।কত শত স্মৃতি তার এই সতেরো বছর বয়সটাকে ঘিরে।হঠাৎই তার মাথায় এলো এই ছবিটা সাদিদের কাছে কেন?এমন ছবি তো রোদেলার কাছে কখনো ছিল না।সত্যি বলতে সে নিজে থেকে ইচ্ছে কৃতভাবে কলেজের কোনো স্মৃতি রাখেনি।তাহলে সাদিদ তার ছবি পেল কোথায়?তাছাড়া ছবিটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে আড়ালে থেকে লুকিয়ে তোলা।ছবিতে রোদেলা কলেজ লাইব্রেরীতে বই খুঁজছিল।তখন আড়ালে থেকে তোলা।তার সম্পূর্ণ মুখটা আসেনি!
তবে কি সাদিদ রোদেলার থেকে সত্যি কিছু লুকিয়ে রেখেছে?এর উত্তর একমাত্র সাদিদ দিতে পারবে।রোদেলা ছটফটে মন নিয়ে সাদিদের জন্য অপেক্ষা শুরু করলো!
———————–
সন্ধ্যাবেলা সাদিদ ফিরলো।ঘর্মাক্ত ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় মেলে দিল।পায়ের জুতা পর্যন্ত খুললো না।রোদেলা ছিনজাকে ড্রয়িং রুমে পড়াচ্ছিল।সাদিদকে রুমে ঢুকতে দেখে সেও এলো।
সাদিদ অর্ধেক শরীর বাইরে আর অর্ধেক শরীর বিছানায় রেখে শুয়ে আছে।মুখটা কেমন চুপসানো।অনেক ধকল যাচ্ছে হয়তো।কিছুদিন পর স্টুডেন্টদের ফাইনাল এক্সাম!রোদেলার বড্ড মায়া হলো!
সে টাওয়ালটা হাতে ধরে বলল,
—“ফ্রেশ হয়ে আসুন।হালকা নাস্তা করে রেস্ট নিন!”
সাদিদ চোখ না খুলেই বলল,
—“রোদ,রোদ্দুর ফোন দিয়েছিল।আগামী শুক্রবার সবাই মিলে গ্রামে যাবে।তোমাদের নানুবাড়ি!রাজশাহীতে আর কি!আমাদেরও যেতে বলল সাথে।তোমায় কিছু বলেছে?”
—“না তো!হঠাৎ নানুবাড়ি যাবে কেন?কেউ তো বেঁচে নেই।অবশ্য নানুর ভিটেতে জামাল চাচা তার পরিবার নিয়ে থাকে।নানুর কোনো ছেলে নেই।আমার মা আর শাহানা খালামণি শুধু!”
—“তোমার মা নাকি কিসের মানত করেছে।রোদ্দুরের জন্য।গরু জবাই করে গ্রামের দুঃস্থ মানুষকে খাওয়াবে।কোন পীরসাহেব যেন বলেছে!”
রোদেলা ব্যাপারটা জানতো না।সে ভীষণ অবাক হয়ে বলল,
—“রোদ্দুরের আবার কি হয়েছিল?মানত করেছে কেন?”
সাদিদ বিছানায় উঠে বসলো।রোদেলার দিকে চেয়ে বলল,
—“জানি না।ফোন দিয়ে বিস্তারিত শুনে নাও।যাবে?চলো ঘুরে আসি!শুক্রবার তো হলিডে।সাথে শনিবার আর রবিবার দুজন লিভ নেই?”
রোদেলা ভেবে বলল,
—“ঠিক আছে।ছিনজা কখনো গ্রাম দেখেনি।অনেক খুশি হবে ও!”
—“তাহলে আমরাও যাচ্ছি।পাক্কা!এখন দেখো তোমার শ্বশুর মশাই সাথে যাওয়ার বায়না ধরে কি না!”
—“সমস্যা কি!বাবাও যাবে!”
সাদিদ উবু হয়ে পায়ের জুতা খুলল।তারপর মুচকি হেসে রোদেলার থেকে টাওয়ালটা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো।ছিটকিনি লাগাতে নিতে রোদেলা হঠাৎ মনে পড়ায় চেঁচিয়ে বলল,
—“ছিটকিনি লাগাবেন না!কথা আছে!”
সাদিদ অবাক হয়ে বলল,
—“গোসল করে এসে শুনি!”
—“নাহ!এক্ষুনি শুনবেন!আপনি একটা বজ্জাত! ”
—“তারপরের টুকু বলো!”
—“আপনি বলেছিলেন যে আমার সতেরো বছর বয়সের সময় আপনি আমাকে অন্যান্য স্টুডেন্টদের মতোই সাধারণ ভাবে ট্রিট করতেন।আমার আর অন্য দের মধ্যে আলাদা কোনো অনুভূতি কাজ করতো না।তাহলে আমার কলেজের ছবি আপনার কাছে এলো কি করে?তাও আবার লাইব্রেরি থেকে লুকিয়ে তোলা?”
সাদিদের চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল।সে বিস্ফারিত কন্ঠে বলল,
—“তুমি জানলে কি করে?তুমি কি আমার পুরো শেলভ তন্নতন্ন করে ঘেঁটেছো?”
—“আপনি বলুন,আমার ছবি আপনার কাছে ছিল কেন?”
সাদিদ কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলল,
—“আরে ধুর!কি দেখতে কি দেখেছো।ওসব কিছু না!”
—“একদম কথা ঘোরানোর চেষ্টা করবেন না।”
সাদিদ অসহায়ের মতো চেয়ে বলল,
—“আসলে তুমি আমার প্রথম ভালোলাগা ছিলে।কলেজ প্রথম দিন ক্লাসে ঢোকার সময় তুমি বললে,’স্যার আসতে পারি?’ চিকন সুতীক্ষ্ম মিহি সুর আমার যুবক মনে গিয়ে আঘাত করলো।আমি ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখি ফুটন্ত গোলাপ দাঁড়িয়ে আছে।প্রথম দেখাতেই তোমায় আমার ভালো লেগে গেল।প্রচন্ড ভালো লেগে গেল।সেদিনের পর থেকে সবসময় আমার মাথায় তোমার ভয়ার্ত চেহারাটা ভেসে বেড়াতো!তোমার চাহনি আমাকে ঘায়েল করে দিতো।আমি বুঝতে পারতাম তুমিও আমায় নিয়ে স্বপ্ন দেখো!কিন্তু আমি জানতাম কিছুদিন পর আমাকে বিদেশে বিভুইয়ে পাড়ি জমাতে হবে।সেজন্য নিজে থেকে আর হাত বাড়াই না।তোমার সাথে অন্যান্য মেয়েদের মতোই বিহেভ করি!তাছাড়া ওটা তোমার অল্প বয়সের আবেগ মনে করেছিলাম।
কিন্তু তুমি তখনো আমার মাথায় জোঁকের মতো বসেছিলে।জীবনের প্রথম ভালোলাগা,প্রথম ভালো বাসা যে ছিল!সেদিন লাইব্রেরিতে তোমাকে দেখে লুকিয়ে ফোনে একটা ছবিও তুলে ফেলি।কেন তুলি জানি না!শুধু এটুকু জানতাম তোমার সাথে আমার মিল হবে না!
বিদেশে যাওয়ার আগে তোমার ছবি প্রিন্ট করি।তুমি প্রিয়জনদের ফটো এলবামের বিশেষ জায়গায় জায়গা করে নাও।কিন্তু বিদেশে গিয়ে পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি।কিচ্ছু পারি না।সারাদিন ক্লাস,নতুন ভাষা শেখা,ইংলিশ শেখা,ল্যাব,থিসিস সব নিয়ে চরম ব্যস্ত হয়ে পড়ি।আস্তে আস্তে তোমার থেকে দূরত্ব সৃষ্টি হয়।মাঝে মাঝে মন খারাপ হলে বা যেদিন তুষারপাত হয় বা কখনো মাঝরাতে ফট করে এলবাম খুলে বসতাম।তোমাকে তখন অনেক কাছের মনে হতো!
এরপর চার বছর পর যখন বাড়িতে আসি তখন কয়েক ঘন্টার মধ্যে ছিত্তিমার সাথে বিয়ে হয়ে যায়।ছিত্তিমাকে আমি বিয়ের পর ভালোবাসি!তারপরের গল্প তো তোমার জানা!”
সাদিদ দ্রুত ওয়াশরুমের দরজা আটকে দিল।এপাশে রোদেলা ধপ করে মেঝেতে বসে পড়লো।সাদিদ তার থেকে সবসময় কেন সব লুকিয়ে রাখে?তার দু চোখ বেয়ে জল গড়ে।বুকের ভেতর ভালোলাগার অনুভূতি হয়।তাহলে সেও সাদিদের প্রথম ভালো লাগা ছিল?
চোখ মুছে সে চিল্লিয়ে বলে,
—“আপনি একটা বজ্জাত!সেদিন ছাদে কেন মিথ্যে বললেন?”
সাদিদ ওয়াশরুমের ফ্লোরে হাঁটু ভাজ করে বসে ছিল।সে দরজার দিকে চেয়ে বলল,
—“আমি সেদিন সত্যিটা বললে তুমি বিশ্বাস করতে না রোদ!তোমার মনে সন্দেহ হতো,আমি হয়তো নিজের জন্য মিথ্যে বলছি!আমার জীবন থেকে অনেক প্রিয় মানুষ হারিয়ে গেছে।নতুন করে আর কাউকে হারাতে চাই না!”
—“আপনি একটা ফাজিল, বেহায়া বজ্জাত লোক।আপনাকে আমি কখনো ক্ষমা করবো না।আপনি আজ পর্যন্ত কোনোদিন আমার সালামের উত্তর দিননি!যেন সালামের উত্তর দিলেই রোদেলাতে ফেঁসে যাবেন!”
—“আজ সালাম দাও!উত্তর দিবো!”
রোদেলার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।সে চোখ মুখ মুছে বলল,
—“আমি আর কোনোদিন আপনাকে সালাম দিবো না!”
——————–
আজ শুক্রবার!শাহিনুর সকাল থেকে চেঁচামেচি শুরু করেছে।কিন্তু কাউকে জাগাতে পারছে না!কেউ ঘুম থেকে উঠছে না কেন?রেডি হচ্ছে না কেন?সবাইকে তো নয়টার বাসে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে!
শাহিনুর রান্নাঘরের সাথের লাগোয়া ঘরটার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রেগে চিৎকার করলো,
—“এই কুটি?ফজিলা?তোরা কি খাবি বল?আমি রান্না করি!তোরাই তো এ বাড়ির মানুষ।আমি তো কাজের লোক।বল কি খাবি!”
কুটি ঢুলুঢুলু চোখে বের হয়ে আসলো।শাহিনুরকে দেখেও না দেখার ভান করলো।সে শাহিনুরকে অভারটেক করে সোফায় শুয়ে পড়লো।শুয়ে একটা হাই তুলে বলল,
—“বড় মা!গরম গরম পরোটা আর গরুর কলিজা ভুনা করেন তো!”
শাহিনুরের রাগে ফেটে পড়বে অবস্থা!এ বাড়ির কেউ তাকে মান্য করে না।সে এতটা ভালোবাসা দিয়ে ফেলেছে?কেউ তাকে গোণতির মধ্যে রাখে না।সে অচিরেই এ ‘পাগলের কারখানা’ ছাড়বে!
সে কি!বাড়িটার নাম তো চেঞ্জ করা হয়নি!তার রোদ্দুর তো ভালো হয়ে গেছে।এখন সবসময় হাসিখুশি থাকে।বৃষ্টি নামক ঝঞ্ঝাটের কথাও স্মরণ করে না।এ সব কিছু পীরসাহেবের উছিলায় হয়েছে।শাহিনুর মনে মনে পীরসাহেবকে ধন্যবাদ দিল।
সোফার দিকে চেয়ে মাথা গরম হয়ে গেল। কুটি আবার ঘুমিয়ে পড়েছে।রান্না না করুক,ফ্রেশ হয়ে রেডি হবে তো!ওকেও তো যেতে হবে!শাহিনুর রাগান্বিত গলায় বললো,
—“আমি এখন পাতলা খিচুড়ি রান্না করবো।দেখি তোদের দেয় কে?একা রান্না করবো,একা খাবো!তারপর একা রাজশাহী যাব।তোরা সব কটা মরার মতো ঘুমা!”
তিনি রান্নাঘরে ঢুকে গেলেন।কুটি এক চোখ খুলে একবার রান্নাঘরের দিকে তাকালো।পরমুহূর্তে মুখ হাত দিয়ে চেপে হেসে ফেলল।মানুষটা এত ভালো কেন?
রোদ্দুর নিচে নেমে রান্নাঘরে উঁকি দিল।তার চোখে মুখে বিন্দু বিন্দু জলরাশি।এগিয়ে গিয়ে শাহিনুরের শাড়ির আঁচলে মুছে ফেলল।
রোদেলা,রোদ্দুর দুটোই দিনের মধ্যে অন্তত একবার তার শাড়ির আঁচলে মুখ মুছবে।শাহিনুর এতে প্রচুর খুশি হয়।কিন্তু ছেলেমেয়ের বুঝতে দেয় না।আজও বিরক্ত গলায় বলল,
—“বাড়িতে কি কাপড়চোপড়ের অভাব পড়েছে?পড়লে বল! ভিক্ষা করতে বের হই।”
রোদ্দুর, রোদেলাও মিথ্যের আড়ালে লুকিয়ে থাকা সত্যটা বুঝতে পারে।সে জন্য বার বার একই কাজ করে।রোদ্দুর দু হাত ঘষে বলল,
—“মা,অজান্তার সাথে কথা হয়েছে?”
—“একি কান্ড!আমার তো ধারণাতেই ছিল না।এই,তুই বেশ কিছু দিন হলো খালি অহি অহি করিস কেন?হুট করে ও বাড়ি চলে যাওয়া,এটা ওটা করা!কি সাংঘাতিক!পীর সাহেবের কাছে যেতে হবে আবার!”
রোদ্দুর বিড়বিড় করে বলল,
—“তোমার পীরসাহেবকে বলো,আমি যেন খুব তাড়াতাড়ি অজান্তাকে বুকে জড়িয়ে ঘুমাতে পারি।মানে বিয়েটা যেন হয়।”
মুখে বলল,
—“তোমার রুচি এত খারাপ মা?ইয়াক থু!অজান্তার চেহারা তো ছাগলের মতো।ওকে আমি পছন্দ করবো!ছি!আমি রুচি এত খারাপ নয়!”
—“এক চড় খাবি!তোর চেহারা দেখেছিস?তিন রাস্তার মোড়ে ছেঁড়া জামা গায়ে ভিক্ষা করা ছেলেটার চেহারাও তোর চেয়ে সুন্দর! ”
রোদ্দুর কিছু বলার আগেই কলিং বেল বাজলো।শাহিনুর ইশারা করতে রোদ্দুর দ্রুত পায়ে হেঁটে গেল।সে জানে কে এসেছে!চারদিন পর আজ সরাসরি দেখবে!
দরজা খুলে অহিকে দেখেই রোদ্দুরের বুকে ব্যথা শুরু হলো।
(চলবে