গল্প: #পরিত্যাক্ত_প্রাসাদ পর্ব: ৭ম (অন্তিম পর্ব)
লেখক: #হাসান
ঐ খুনী জ্বীনটা আমাদের দুজনকেই হত্যা করবে। এটা ভাবতেই আমার শরীর বরফের মতো জমে গিয়েছিলো। আমি কবিরাজের দিকে তাকিয়ে বললাম দয়াকরে আমাদেরকে বাঁচান। বলেই আমি মাটিতে নেতিয়ে পড়ি। আর সেখানেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।
যখন চোখ খুললাম দেখি আমি কবিরাজের বাড়ির বাড়ান্দায় শুয়ে আছি। আর রাকিব আমার পাশে বসে আছে। আমি রাকিব কে জিজ্ঞেস করলাম কবিরাজ কোথায়??
রাকিব বললো: কবিরাজ ভিতরে আছে।
কবিরাজ কি আমাদের বাঁচাতে পারবে??
হ্যা পারবে।
অনেকক্ষন পর কবিরাজ ভিতর থেকে বেরিয়ে আসলো। আর দু’টো তাবিজ বের করে আমাদের বললো:
এই তাবিজ দুটো সবসময় তোদের সাথে রাখবি। তাহলে ঐ জ্বীনটা তোদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। আর ৬ মাস পর এই তাবিজ ফেলে দিবি। ততদিনে জ্বীনটা তোদের ছেড়ে চলে যাবে।
কবিরাজের কথামতো ঐ তাবিজ দুটো আমরা দুজন দুজনের হাতে বেঁধে নিলাম। আর তখন রাকিব অনেক খুশী ছিলো। রাকিব কে দেখে মনে হচ্ছিলো রাকিব নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে।
★★
আমি রাকিব কে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসি।যেহেতু আর কোনো সমস্যা নেই। তাই রাকিব কে ওদের বাড়িতে রেখে আমি চলে আসি। বাড়িতে এসে ভাবছি, রাকিব অনেক বড় পাপ করেছে। নিজের ভালবাসার মানুষ কে নিজেই হত্যা করেছে। রাকিব কে বাচানো আমার ঠিক হয়নি। রাকিব তো তার পাপের কোনো শাস্তিই পেলো না।
এভাবেই কেটে গেলো কয়েক মাস। রাকিব বা আমি কেউই আর কোনো কিছুই দেখিনি। তখন আমাদের মন থেকে ঐ খুনী জ্বীনের ভয়ও চলে গিয়েছিলো। এর মধ্যেই আমি একটা চাকরির সুবাদে ঢাকা চলে আসি। সব ভয় ভীতি দূর হয়ে গিয়েছিলো। তাই নিজের মতো করে কাজ করছিলাম। কিছুদিন পর শুনি রাকিব বিয়ে করবে, আমাকে যেতে বলেছে। কিন্তু আমার কাজের চাপ থাকায় না করে দেই। বলেই থামলো নাহিদ নামের লোকটি।
কী হলো নাহিদ ভাই থামলেন কেনো??
এর পর যা ঘটেছে, বলার সাহস পাচ্ছিনা #হাসান ভাই।
সব যেহেতু বলেই ফেলেছেন। এটাও বলে ফেলুন।
সব বাধা বিপত্তি কাটিয়ে রাকিব বিয়ে করলো। কিন্তু বিয়ের দু’দিন পরই রাকিবের লাশ পাওয়া যায় ঐ পরিত্যাক্ত প্রাসাদে।
কি রাকিব মারা গেছে। ঐ জ্বীনটা রাকিব কে মেরে ফেলেছে। রাকিবের হাতে তো তাবিজ ছিলো। তাহলে ঐ জ্বীনটা রাকিব কে কীভাবে মারলো??
রাকিব ঐ জ্বীনটার হাতে মারা যায়নি।
তাহলে কীভাবে মারা গেলো?? কে মারলো রাকিব কে?
আগেই বলেছিলাম পাপ কখনো পাপকেও ছাড়ে না। রাকিবের বেলায়ও তাই হয়েছে। রাকিব মারা গেছে তার নব স্ত্রীর বয়ফ্রেন্ডের হাতে।
কী বলছেন এসব নাহিদ ভাই?? রাকিব মারা গেছে তার স্ত্রীর বয়ফ্রেন্ডের হাতে?? এটা কীভাবে ঘটলো??
এবার আপনাকে যা বলবো হাসান ভাই আপনি হয়তো সহ্য করতে পারবেন না। তাই বলছি আপনি যদি হার্টের রোগী হয়ে থাকেন। তাহলে আপনার না শুনাই ভালো। যদি পেসারের রোগী হয়ে থাকেন, তাহলে ঔষধ হাতে নিয়ে নিন। যদি শ্বাস কষ্ট থেকে থাকে, তাহলে ইনহিলার কাছে রাখুন।
কেন কি হয়েছিলো সেদিন??
রাকিবের স্ত্রীর বয়ফ্রেন্ডের নাম কি জানেন?? তার নাম নাহিদ।
তো কি হয়েছে?? নাহিদ নামের বয়ফ্রেন্ড….
কথা শেষ করার আগেই মনে পড়লো, আমার সামনে যে দাঁড়িয়ে আছে সেই তো নাহিদ। তার দিকে তাকিয়ে ভয়ে আঁতকে উঠলাম। আমার মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। শরীর ঘামতে শুরু করলো। কাঁপা কাঁপা গলায় ধীরে ধীরে জিজ্ঞেস করলাম:
এমন কেন করলেন নাহিদ ভাই?? সে তো আপনার বন্ধু ছিলো।
হ্যা রাকিব আমার বন্ধু ছিলো। কিন্তু রাকিব যাকে বিয়ে করেছিলো, সে আমার ভালোবাসা ছিলো।
কীভাবে করলেন এই কাজ??
একটু অপেক্ষা করুন তাই বুঝতে পারবেন। তার আগে আপনার জানা উচিত। উঠতি বয়সী যুবক-যুবতীদের জীবনে সবচেয়ে বড় ভুল কী জানেন??
কী??
বিয়ের আগে প্রেম করা। আপনি হয়তো আমায় পাগল ভাববেন। কিন্তু এটাই সত্যি। প্রেম কারো জীবনে ভালো কিছু বয়ে আনে না। মানুষের জীবনে করা প্রত্যেকটা কাজেরই ভালো আর মন্দ দিক রয়েছে। কিন্তু এই প্রেমের কোনো ভালো দিক নেই। আপনি ভাবছেন এটা আমার ভূল ধারনা। কিন্তু দিন শেষে সবাই বুঝতে পারে, প্রেম করে শুধুই সময় নষ্ট হয়। আমি আগে ভাবতাম প্রেম হয়তো পবিত্র, স্বর্গ থেকে আসা। কিন্তু পরে বুঝতে পারলাম, বিয়ের আগের প্রেম হলো যুবক যুবতীদের নষ্ট আবেগের ফল। এই আবেগ কেটে গেলেই সব সম্পর্ক শেষ। সেজন্যই রাকিবের হাতে নীলা আর আমার হাতে রাকিব খুন হয়েছে। আপনি ভাবছেন সবাই তো রাকিবের মতো খারাপ না। আমার মতো পাগল না। কিন্তু দিন শেষে প্রেম করা সবাই, দুশ্চরিত্র নর-নারীতে পরিনত হয়। আর এটাই বাস্তব।
আপনি কীভাবে মেরেছিলেন রাকিব কে??
বিয়ের দিন সন্ধ্যায় আশা আমায় কল করে কান্না করতে করতে বলে: তাকে জোর করে বিয়ে দিচ্ছে তার বাবা। (বিয়েটা হুটহাট ঠিক হয়ে যায়। তাই আশা আমায় আগে জানাতে পারেনি।)
আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম কার সাথে বিয়ে??
আশা বললো রাকিবের সাথে। (রাকিব আমার আর আশার সম্পর্কের কথা জানতো না)
আমি তখন রাকিব কে অনেকবার কল করার পর, রাকিব আমার কল রিসিভ করে। আমি রাকিব কে বললাম তুই এই বিয়ে করিস না। আমি আশাকে ভালোবাসি।
রাকিব বললো: আমি তো বরযাত্রী নিয়ে আশাদের বাড়িতে চলে এসেছি। এখন বিয়ে না করে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। কারন বাবা এটা কিছুতেই মেনে নিবে না। তাই আমি তোর এই কথা রাখতে পারবো না। তবে তুই আগামীকাল বাড়িতে আসলে, আমি তোর হাতে আশাকে তুলে দিবো। আর বাবাকে বলবো আশা তোর সাথে পালিয়ে গেছে। তখন কোন সমস্যা হবে না।
আমি তখন আশাকে কল করে বললাম: তুমি চিন্তা করো না। এই বিয়েটা করে নাও। রাকিব তোমার সাথে কিছু করবে না। আমি আগামীকাল এসে তোমায় নিয়ে যাবো। (আর আমি এই বিষয়ে বেশি কিছু ভাবিনি। কারন আমি বিশ্বাস করতাম রাকিব আমাদের সম্পর্ক মেনে নিবে।)
কিন্তু জানেন হাসান ভাই পরেরদিন আমি ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরি। আর আশার সাথে দেখা করি।
আশা আমায় দেখা মাত্র কেঁদে কেঁদে বলে; আমি বাসর রাতে রাকিব কে তোমার কথা বলেছিলাম।
কিন্তু রাকিব বললো: বিয়ের আগে কি হয়েছে না হয়েছে। এসব নিয়ে তার মাথা ব্যথা নেই। এখন থেকে আমি তার বউ। আমি অনেক মানা করা সত্বেও রাকিব জোর করে আমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেছে। আর আমি কান্না করায় আমাকে মেরেছে।
একবার ভেবে দেখুন হাসান ভাই, যে বন্ধুর জন্য আমি নিজের জীবন বাজি রেখেছিলাম। সেই বন্ধু আমার গার্লফ্রেন্ড কে একা পেয়ে জোর করে শারীরিক সম্পর্ক করেছে। এটা শুনে কি আমার মাথা ঠিক থাকতে পারে??
তাই আশাকে বলেছিলাম সন্ধ্যার দিকে রাকিব কে বুলিয়ে-বালিয়ে নয়ানগর গ্ৰামের পরিত্যাক্ত প্রাসাদের দিকে নিয়ে আসবে। আশাও তাই করেছিলো।
সন্ধ্যার দিকে গ্ৰাম ঘুরে দেখার বাহানায় রাকিব কে পরিত্যাক্ত প্রাসাদের সামনে নিয়ে এসেছিলো। আর তখন আশা রাকিব কে বললো: এই প্রাদাসটা ঘুরে দেখতে চাই।
যেহেতু রাকিবের মনে তখন ঐ জ্বীনের বয় ছিলো না। তাই রাকিব রাজি হয়ে যায়। কিন্তু রাকিব ভিতরে ঢুকতেই আমাকে দেখতে পায়। আমাকে সেই পরিত্যাক্ত প্রাসাদে দেখে রাকিব চমকে উঠে। কি বলবে বুঝতে পারছিলো না।
আমি জিজ্ঞেস করলাম: কিরে কেমন আছিস??
রাকিব ধীর গলায় বললো: ভালো। কিন্তু তুই এখানে কি করছিস??
আমার একটা কাজ আছে, তাই এসেছি।
এখানে কি কাজ??
দেখতো জায়গাটা চিনতে পারিস কিনা?? এটাই তো সেই জায়গা, যেখানে তুই নীলাকে পুড়িয়ে মেরেছিলি। এখন মনে কর নীলার পেটে থাকা তোর সেই অবৈধ সন্তান ফিরে এসেছে। তাহলে তোর কি অবস্থা হবে??
এসব তুই কি বলছিস??
আমি তোকে নীলার মতোই বিশ্বাস করেছিলাম। নীলা যেমন তোকে বিশ্বাস করে নিজের জীবন হারিয়েছিলো। আমিও তেমনি তোকে বিশ্বাস করে, আমার ভালোবাসার সম্মান হারিয়েছি। হয়তো তোর সন্তান তার মাকে হ*ত্যার প্রতিশোধ নিতে পারেনি। কিন্তু আমি আমার ভালোবাসার সম্মান হারোনোর জন্য প্রতিশোধ নিবো। বলেই পেছন থেকে ছুরি বের করে রাকিবের লম্ব চওরা কলিজা বরাবর ঢুকিয়ে দেই। আর রাকিব সেখানেই ছটফট করতে করতে মা*রা যায়। বলেই থামলো নাহিদ
নাহিদের কথা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেছি।কথা বলার শক্তি হারিয়ে হারিয়ে ফেলেছি। শুধুই দাঁড়িয়ে কাঁপছি।
নাহিদ আবারো বলতে শুরু করল: জানেন হাসান ভাই, আমি এর আগে কোনো দিন কারো গায়ে হাতও তুলিনি। কিন্তু সেদিন নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে পারিনি। তাই নিজের হাতে রাকিবকে খু*ন করেছি। যদি রাকিবের সাথে নীলার কোনো সম্পর্ক না থাকতো। তাহলে আজ নীলা বেঁচে থাকতো। আর ঐ অবুঝ শিশু যার জন্মই হয়নি, তার এভাবে জীবন হারাতে হতো না। আর আজ যদি আমি আশাকে ভালো না বাসতাম। তাহলে রাকিবকেও এইভাবে প্রান দিতে হতো না। বলেই থামলো হলো নাহিদ।
আমি কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলাম: তাহলে কি সব দোষ ভালোবাসার??
নাহিদ বললো: না ভালোবাসার কোনো দোষ নেই। দোষ আমাদের। আমরা নিজের মনকে বুঝতে শিখিনি। আমরা আবেগের বসে ভুলে যাই, বিয়ে ছাড়া সব ভালোবাসা অবৈধ। আমরা ভুলে যাই কেউ একজন আমাদের জীবনসঙ্গী হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। আমাদের সমস্ত ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার শুধু তারাই। আপনি জেনে রাখুন হাসান ভাই, আপনি আজ একটা মেয়েকে পাগলের মতো ভালোবাসবেন। কিন্তু তার সাথে যদি আপনার বিয়ে নামক ছোট্ট সম্পর্ক না থাকে। তাহলে একদিন আপনি ঠিকই তাকে ভুলে যাবেন।
নাহিদ ভাই, বিয়ের আগে প্রেম করলে তো, যাকে বিয়ে করবো তার সম্পর্কে জানতে পারবো।
এটা আমাদের ভুল ধারণা। কারন আপনি কখনোই আপনার গার্লফ্রেন্ড কে আপনার খারাপ সাইট দেখাবেন না। আর আপনার গার্লফ্রেন্ড কখনো আপনাকে তার খারাপ দিকটা দেখাবে না। কিন্তু বিয়ের পর একজন আরেকজনের ভালো মন্দ দুটো দিকই জানতে পারবেন। তখন আপনার মনে হবে আপনি ভুল করছেন। তাই আপনাকে বলছি হাসান ভাই। আপনার পাঠকদের বলে দিন, তারা যেন তাদের সমস্ত আবেগ ভালোবাসা তাদের স্বামী/স্ত্রীর জন্য রেখে দেয়। (কান্না জড়িত কন্ঠে বললো নাহিদ)
নাহিদের কথা শুনে আমার চোখ থেকে দু-এক ফোঁটা করে জল গড়িয়ে পরছে। আমি কিছু বলার সাহস পাচ্ছিনা।
নাহিদ আবারো বললো: আজ আমি চলে যাচ্ছি হাসান ভাই। হয়তো আমার জেল কিংবা ফাঁসি হবে। কারন পুলিশ আমাকে খুজছে। কিন্তু আপনি আপনার পাঠকদের বলে দিবেন, তাদের ভালোবাসা তাদের স্বামী/স্ত্রীর আমানত। তাঁরা যেন এই আমানত তাদের গফ/বফ দের কাছে বিলিয়ে না দেয়। বলেই নাহিদ চলে যেতে লাগলো।
একটু দূরে যাওয়ার পর, নাহিদ আমার দিকে ফিরে বললো: #হাসান ভাই হাসপাতালের সামনে ডাস্টবিনে পড়ে থাকা নবজাতক গুলো মায়ের গর্ভে এসেছিলো সিরিয়াস ভালোবাসার জন্যই। কিন্তু দুনিয়া দেখার আগেই তাদের মরতে হলো। কারন বিয়ের আগে সিরিয়াস ভালোবাসা বলতে কিছুই নেই। বলেই চলে যাচ্ছে নাহিদ।
আর রাস্তায় তার চোখ থেকে গড়িয়ে পরছে দু এক ফোঁটা জল। আমিও অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছি, নিজের হুশ ফিরে পাওয়া একজন যুবকের দিকে। আর ভাবছি যদি সে আগে বুঝতে পারতো, বিয়ের আগে এসব পবিত্র প্রেম মানেই ধোঁকা। তাহলে হয়তো তার জীবনটা আজ সুন্দর থাকতো।
_____________________সামাপ্ত_____________________