গল্প: #পরিত্যাক্ত_প্রাসাদ ৬ষ্ঠ পর্ব
লেখক: #হাসান
হঠাৎ একটা দমকা হাওয়ায় রাকিবের দেহটা মাটিতে পড়ে গেলো। দেহটা মাটিতে পড়ার শব্দে, আমার রুহটা প্রায় বেরিয়ে যাচ্ছিলো। আর তখনই রাকিবের গোঙ্গানোর আওয়াজ আরো বেড়ে গেলো। আমি ভয়ে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। একটা প্যারালাইসিস রোগীর মতো।
আমি অনেক চেষ্টা করেও, সেখান থেকে এক চুল পরিমান সরতে পারছিলাম না। আমার গায়ের সমস্ত শক্তি গায়েব হয়ে গিয়েছিল। আমি বরফের মতো জমে গিয়েছিলাম। এরমধ্যেই সামনে থাকা রাকিবের মৃত দেহটা দাঁড়িয়ে গেলো। তার মুখ থেকে বিকট শব্দে গোঙ্গানোর আওয়াজ আসছিলো। রাকিবের গোঙ্গানোর আওয়াজ এতোটাই ভয়ংকর ছিলো যে, আমার হার্ট-বিট প্রায় থেমে গিয়েছিলো। রাকিব আমার দিকে এগিয়ে আসছে। কি ভয়ংকর চেহারা তার। সারা শরীর ক্ষতবিক্ষত। গাঁ থেকে র*ক্ত ঝরে পড়ছে। চোখ দুটো ঠিক জায়গায় নেই। নাকটা আগুনে পুড়া। ঠোঁটের নিচ টা ছিঁড়ে গেছে।
বিশ্বাস করেন #হাসান ভাই আমি সেখান থেকে পালাতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু আমার গায়ে তখন পালানোর মতো শক্তি ছিলোনা। আমার সারা শরীর কাপছিলো। শার্ট টা ঘেমে ভিজে গিয়েছিলো। আর মুহূর্তের মধ্যেই রাকিব ঠিক আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। একবার ভেবে দেখুন: একটা লাশ যদি আপনার সামনে এসে দাঁড়ায়। আপনার কি অবস্থা হতে পারে সেই মুহূর্তে। জানি এটা ভাবতেই আপনার শরীর শিউরে ওঠবে। অথচ আমার সাথে সেটাই হয়েছিলো।
আর রাকিব আমার চোখে চোখ রেখে রাগী গলায় বললো: আজ রাতে রাকিব মারা যাবে। তুই ওর থেকে দূরে থাকবি। যদি ওকে বাঁচাতে চাস, তাহলে আগামীকাল সন্ধ্যায় তোর লাশ এই তেঁতুল গাছে ঝুলানো থাকবে।
আমি তখন কি বলবো?? ভয়ে কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলিছি। কারন রাকিবের লাশ আমাকে বলছে আজ রাতে রাকিব মারা যাবে। আর তখনই কেউ আচমকা আমার হাত ধরে টান দিলো। আমি তাকিয়ে দেখি, আমার সামনে রাকিব নেই, সেই পরিত্যাক্ত প্রাসাদও নেই। আমি বসে আছি নয়াবাজারের একটা চায়ের দোকানে। আমি মাথাটা ঝেকে চারিপাশটায় আবারো চোখটা বুলিয়ে নিলাম। আর দেখলাম আমি কোনো পরিত্যাক্ত প্রাসাদের সামনে নেই, আমি নয়া বাজারে বসে আছি। আর আমার সামনে রাকিব নেই, দাঁড়িয়ে আছে চায়ের দোকানদার। তবে আমার শরীরটা ঘামে ভিজে গেছে। আর সেই ভয়টা এখনো কাটেনি। আমি ভাবছি, এসব কি দেখলাম। এটা কি মনের ভুল নাকি সত্যি ছিলো??
আর তখনই চায়ের দোকানদার বললো: ভাই আপনি এমন কাঁপছেন কেন?? আপনি কি অসুস্থ।
চায়ের দোকানির কথায় আমার মনে পড়লো অসুস্থ রাকিবের কথা। সেই ভয়ংকর লাশের দেওয়া হুমকির কথা। আমি আর সেখানে এক মুহূর্তের জন্যও দাঁড়ালাম না। দৌড় দিলাম রাকিবের বাড়ির দিকে। দৌড়ে রাকিবদের বাসায় এসে পড়লাম। তবে বাড়িতে কেউ নেই, বাড়ি তালা। পাশের বাড়িতে থাকা লোকজন কে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম, রাকিবের মা বাবা রাকিব কে আনতে হাসপাতালে গেছে। আমি সেখানে বসেই অপেক্ষা করা শুরু করলাম। কিন্তু আমার মাথা থেকে তখনও রাকিবের ঐ বিভৎস চেহারা যাচ্ছিলো না। বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠছিলো: রাকিবের ঐ ঝুলন্ত মৃত*দেহটা। যার একটা চোখ থেকে র*ক্ত পড়ছিলো। আর একটা চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে। আর সেই ক্ষতবিক্ষত শরীরটা। তবে সবচেয়ে বেশি ভয় পাচ্ছিলাম: লাশটার বলা কথাগুলো শুনে। কারন সে বলেছে আজ রাতে রাকিব মারা যাবে। আর আমি যদি রাকিবের কাছে থাকি তাহলে আগামীকাল আমার দেহটা ঐ তেঁতুল গাছে ঝুলানো থাকবে। এসব ভাবতেই ভয়ে আমার কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছিলো। আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। রাকিব কে বাঁচাবো, নাকি আমার জীবন বাঁচাতে পালাবো এখান থেকে??
শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিলাম আমি রাকিব কে বাঁচাবো। কারন রাকিব তার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। রাকিবের কিছু হয়ে গেলে, রাকিবের বাবা মা বাঁচবে না।
★★
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে গেছে। আমি রাকিবদের বাড়ির সামনে বসে আছি, রাকিবের অপেক্ষায়। একটু পর রাকিব তার বাবা মায়ের সাথে বাড়িতে ফিরলো। আমায় দেখেই রাকিবের মা বল উঠলো: তুমি এখানে কি করছো??
আমি বললাম: রাকিবের সাথে দেখা করতে এসেছিলাম। কিন্তু বাড়ি এসে দেখি আপনারা তখনও আসেননি। তাই বসে অপেক্ষা করছিলাম।
কোনো দরকারি কথা বলবে?? (রাকিবের মা)
হ্যা একটু দরকারিই বলতে পারেন। আগামীকাল রাকিবকে নিয়ে আমার একজন পরিচিত কবিরাজের কাছে নিয়ে যাবো।
ও আচ্ছা। তারমানে এই অল্প সময়ের মধ্যে, তুমি একজন ভালো কবিরাজও খুঁজে বের করে ফেলেছো। (রাকিবের বাবা)
জ্বী আংকেল। এখন রাকিব তারাতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে।
বলেই রাকিবের সাথে আমি ওর রুমে গেলাম।
রাকিব জিজ্ঞেস করলো: কিছু বলবি??
আমি বললাম: হ্যা তর অনেক কিছুই জানার আছে । ঐ বাচ্চাটা আমায় সাবধান করে দিয়েছে। ও তোকে আজ রাতে মেরে ফেলবে। আর আমাকে তোর থেকে দূরে থাকতে বলেছে।
আমার কথা শুনে রাকিব ভয়ে আঁতকে উঠলো। আর কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলো: ও তোর সাথে দেখা করেছিলো?
আমি বললাম: হ্যা! আজ সন্ধ্যায় ও আমাকে সেই পরিত্যাক্ত
প্রাসাদে নিয়ে গিয়েছিলো। আর প্রচন্ড ভয় দেখিয়েছে।
তাহলে এখন আমার কি হবে??
তুই চিন্তা করিস না। আগামীকাল তোকে কবিরাজের কাছে নিয়ে যাবো।
আর আজ রাতে কি হবে??
তোর সাথে যখন কোনো মানুষ থাকে। ঐ বাচ্চাটি তোর কাছে আসে না। আর তুই যখন একা থাকিস, ঐ বাচ্চাটা তখনই আসে। তাই আজ রাতে আমি তোর সাথে থাকবো।
আমার কথা শুনে রাকিব প্রচুর খুশী হয়। কারন রাকিব জানে, তার এই এই বিপদের মূহুর্তে তার পাশে একজন লোক থাকা প্রয়োজন।
★★
সারারাত আমি রাকিবের সাথেই ছিলাম। রাকিব কোনো অস্বাভাবিক আচরণ করেনি। সকাল হতেই রাকিব কে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম কবিরাজের উদ্দেশ্য। রাকিব সেদিন খুশী ছিলো এই ভেবে যে, তার সব বিপদ কেটে যাবে। আর রাকিব যে নীলাকে খুন করেছে। সেটাও কেউ জানতেই পারবে না।
কিন্তু জানেন কি হাসান ভাই?? একটা কথা আছে পাপ কখনো পাপকেও ছাড়ে না। রাকিবের সাথেও ঠিক তাই হয়েছিলো।
কি হয়েছিলো রাকিবের সাথে?? (আমি জিজ্ঞেস করলাম)
সেদিন আমি রাকিব কে নিয়ে কবিরাজের কাছে যাচ্ছিলাম। যদিও তখন আমার ভয় হচ্ছিলো। কারন আমি রাকিব কে সাহায্য করার কারনে, ঐ বাচ্চাটা যদি আমায় মেরে ফেলে। তবুও রাকিব আমার বন্ধু এই ভেবে আমি রাকিব কে সাহায্য করি।
★★
অবশেষে রাকিব কে নিয়ে কবিরাজের বাড়ি পৌঁছালাম। কবিরাজ আমাদের কে দেখেই বলে উঠলেন: আসো আমি তোমাদের জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।
আমি কবিরাজের কথা শুনে খানিকটা চমকে উঠলাম। কবিরাজ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলো মানে কি?? কবিরাজ কি জানতো আমরা তার এখানে আসবো??
আমাকে হা করে তাকিয়ে থাকা দেখে, কবিরাজ বললেন: অবাক হওয়ার কিছু নেই। আমি তোদের সম্পর্কে সব জানি।
আমি জিজ্ঞেস করলাম: কীভাবে জানলেন??
কবিরাজ বললো: ঐ বাচ্চাটি আমার কাছে এসেছিলো। আমাকে সাবধান করতে??
আমি কবিরাজের কথা শুনে ভয় পাচ্ছিলাম। তাই কবিরাজ কে জিজ্ঞেস করলাম: ঐ বাচ্চাটার আত্মা আপনার কাছেও এসেছিলো??
কবিরাজ বললো: ও কোনো আত্মা নয়। আত্মা বলে কিছুই নেই। ঐ বাচ্চাটি হলো একটা জ্বীন।
তাহলে বলুন, ঐ জ্বীনটা ভালো না খারাপ??
ঐ জ্বীনটা ভালো আর খারাপের মাঝখানে রয়েছে।
মানে??
মানে হলো ঐ জ্বীনটা খুনী জ্বীন। সে মানুষ হত্যা করতে ভালোবাসে। তবে জ্বীনটা কোনো সাধারণ মানুষ কে হত্যা করে না। সে শুধু অপরাধী দের হত্যা করে। সে ভালো মানুষ হত্যা করতে ভয় পায়। আর সে রাকিব কে হত্যা করার কারন খুঁজে পেয়েছে। তাই এবার সে রাকিব কে হত্যা করবে। আর তুই রাকিব কে সাহায্য করার কারনে, তুইও মারা যাবি।
কবিরাজের কথা শুনে ভয়ে আমার কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছিলো। কারন আমি নিজের ঘাড়ে নিজেই বিপদ ডেকে এনেছি। এবার ঐ খুনী জ্বীনটা আমাদের দুজনকেই হত্যা করবে। এটা ভাবতেই আমার শরীর বরফের মতো জমে গিয়েছিলো। আমি কবিরাজের দিকে তাকিয়ে বললাম দয়াকরে আমাদেরকে বাঁচান। বলেই আমি মাটিতে নেতিয়ে পড়ি। আর সেখানেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।
চলবে……..??