গল্প: #পরিত্যাক্ত_প্রাসাদ ৫ম পর্ব
লেখক: #হাসান
ওয়ার্ড বয় আমাকে বললো: রাকিব সম্পর্কে আপনার অনেক কিছু জানা প্রয়োজন।
জানেন হাসান ভাই, ঐ ওয়ার্ড বয় আমাকে যা বললো। তা শুনে আমার গা শিউরে উঠলো! আমি কয়েক মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।
আপনাকে কি বলেছিলো ঐ ওয়ার্ড বয়??
ওয়ার্ড বয় কে আমি জিজ্ঞেস করলাম: রাকিবের সম্পর্কে কি বলতে চান??
ওয়ার্ড বয় বললো: আপনি কি জানেন?? আপনার বন্ধু রাকিব পুরোপুরি সুস্থ।
আমি জিজ্ঞেস করলাম: আপনি বুঝলেন কিভাবে??
ওয়ার্ড বয় বললো: আমি এখানে কয়েক বছর ধরে আছি। তাই আমি চিনি কোনটা পাগল আর কোনটা ভালো?? আপনার বন্ধু রাকিব এই তিন মাসে একবারের জন্যও পাগলদের মতো আচরণ করেনি। সে একদম সুস্থ স্বাভাবিক। তবে তার সাথে কিছু একটা হচ্ছে??
কিছু হচ্ছে মানে??
এই তিন মাসে রাকিব কখনো, অস্বাভাবিক আচরণ করেনি। তবে আমি খেয়াল করেছি, যখন রাকিব একা থাকে। তখন রাকিব তার হুশে থাকে না। মনে হয় কেউ রাকিব কে কমান্ড করছে। আর রাকিব তার কথা মতো নিজের শরীরে নিজেই আঘাত করছে। কিন্তু যখনই আমি রাকিবের সামনে আসি। রাকিব নরমাল হয়ে যায়। তখন তাকে জিজ্ঞেস করলে কিছু বলে না। তবে রাকিব অনেক ভিত থাকে। মনে হয় রাকিব অনেক ভয় পাচ্ছে। আর তাকে অনেক ক্লান্ত দেখায়। তবে সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো: যখন রাকিবের আশেপাশে কেউ থাকে। তখন রাকিব নরমাল থাকে। আর একা হলেই রাকিব তার হুশ হারিয়ে ফেলে। তাই আমি বলছি আপনারা রাকিব কে কবিরাজের কাছে নিয়ে যান। তাহলে রাকিব তারাতাড়ি সুস্থ হতে পারে।
আমি ওয়ার্ড বয়ের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলাম। আর ভাবতে লাগলাম: তারমানে রাকিব যা বলেছে সব সত্যি ছিলো। রাকিব নীলাকে খুন করেছে। আর নীলার গর্ভে থাকা বাচ্চা ফিরে এসেছে প্রতিশোধ নিতে। এসব ভাবনার মাঝেই ওয়ার্ড বয়ের ধাক্কায়, আমি হুশে ফিরি।
ওয়ার্ড বয় জিজ্ঞেস করলো: কি ভাবছেন??
কিছুই না। বলেই আমি দৌড়ে রাকিবের কাছে গেলাম।
রাকিব আমায় দেখে বললো: তুই এতো ঘামছিস কেন??
আমি জিজ্ঞেস করলাম: তুই আর নীলা কি সত্যিই দুজন দুজনকে ভালোবাসতি??
রাকিব বললো: প্রথম প্রথম আমি নীলাকে ভালোবাসতাম। কিন্তু ধীরে ধীরে নীলার প্রতি বিরক্ত হতে শুরু করি। আর যখন শুনি ও প্রেগন্যান্ট। তখন আমি নীলাকে অ্যাবরশন করতে বলি। কিন্তু নীলা রাজী হয়নি। তাই নীলার থেকে বাঁচতে নীলাকে খুন করেছি।
রাকিবের কথা শুনে, আমার প্রচন্ড রাগ হয় রাকিবের উপর। নিজের অন্তঃসত্ত্বা গার্লফ্রেন্ড কে, রাকিব কীভাবে খুন করতে পারলো?? আর সেদিনই আমি মনে মনে ঠিক করেছিলাম, পৃথিবীতে যদি কেয়ামতও এসে পড়ে। তবুও নিজের গার্লফ্রেন্ড কে কখনো ধোঁকা দিবো না। আর আমার এই ভাবনাই আমার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে??
মানে? আপনার আবার কি হলো নাহিদ ভাই?? এতোক্ষন তো রাকিবের ঘটনা বলতেছিলেন।
সেটা খুব শ্রীঘ্রই জানতে পারবেন #হাসান ভাই। আমার সাথে কি ঘটেছে। আগে রাকিবের ঘটনা শুনুন।
★★
রাকিব আমায় রিকোয়েস্ট করে, তার বাবা মাকে বলে তাকে বাড়ি নিয়ে যেতে। আমি প্রথমে রাকিবের উপর রেগে থাকলেও, রাকিবের দুঃখি মুখের দিকে তাকিয়ে, রাকিব কে সাহায্য করতে রাজি হয়ে যাই।
রাকিবের সাথে কথা বলে, মেন্টাল হাসপাতাল থেকে বেড়িয়ে আসি। এবং রাকিবের মা বাবাকে বলি রাকিব পাগল নয়। সে মোটামুটি সুস্থ। তাকে একজন কবিরাজের কাছে নিয়ে গেলেই সে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে। আর রাকিব কে ঐ হাসপাতালে রাখলে রাকিব পুরোপুরি পাগল হয়ে যাবে।
★★
সারাদিন অনেক দৌড়া দৌড়ি করেছি। তাই ক্লান্ত হয়ে সন্ধ্যা বেলা নয়া বাজারে বসে চা খাচ্ছিলাম। আর ভাবছিলাম রাকিব কে কোন কবিরাজের কাছে নিয়ে যাবো?? কোথায় ভালো কবিরাজ পাবো। তখনই হঠাৎ পেছনে তাকিয়ে দেখতে পেলাম: রাকিব বাইক নিয়ে নয়ানগর গ্ৰামের শেষের দিকে যাচ্ছে। রাকিব কে দেখে চমকে উঠলাম। আর ভাবতেছিলাম এতো তাড়াতাড়ি রাকিব কে মেন্টাল হাসপাতাল থেকে কে নিয়ে আসলো?? আর রাকিব আবার নয়ানগর গ্ৰামের শেষের দিকে যাচ্ছে কেন?? রাকিব কি আবার তার হুশ হারিয়ে ফেলেছ। আমি রাকিবের পেছনে দৌড় দিলাম। আর রাকিব কে থামতে বললাম। কিন্তু রাকিব থামছে না। রাকিব বাইক নিয়ে এগিয়ে চলছে ঐ পরিত্যাক্ত প্রাসাদের দিকে। দৌড়াতে দৌড়াতে আমিও সেই পরিত্যাক্ত প্রাসাদের সামনে এসে পড়লাম। প্রাসাদের সামনে দাঁড়িয়ে হাপাচ্ছি। আর এদিক সেদিক তাকিয়ে রাকিব কে খুজতেছি। কিন্তু রাকিব কোথাও নেই। বাইরে শুধু রাকিবের বাইক দাঁড় করানো। তখন আমার ভয় হচ্ছিলো। রাকিব যদি ভিতরে গিয়ে কোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেলে। তাই আমি ভেতরে ঢুকার সিদ্ধান্ত নিলাম। যদিও তখন আমার ভয় করছিলো ঐ বাচ্চাটার কথা ভেবে। তবুও মনে সাহস নিয়ে সামনে একপা বাড়ালাম। তখনই আমার চোখ চলে গেলো প্রাসাদের পাশে থাকা তেঁতুল গাছের দিকে।
আর তেঁতুল গাছের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম: একজন লোক তেঁতুল গাছে ঝুলছে। ভয়ে আমি আঁতকে উঠলাম। তবুও রাকিবের কথা ভেবে, মনোবল শক্ত করে একটু এগিয়ে গেলাম। আর দেখতে পেলাম রাকিব গলায় দড়ি দিয়ে তেঁতুল গাছে ঝুলছে। রাকিবের একটা চোখ দিয়ে রক্ত পড়ছে। আর একটা চোখ বাইরে বেরিয়ে এসেছে। ভয়ে আমার কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছিলো। আর তখনই রাকিবের মুখ থেকে গোঙ্গানোর আওয়াজ পেলাম। রাকিব গোঙ্গানো শুরু করলো।
বিশ্বাস করেন হাসান ভাই, সেই মুহূর্তে আমার যে অবস্থা হয়েছিলো। তা বর্ণনা করা অসম্ভব। শুধু একবার ভাবেন, একটা পরিত্যাক্ত প্রাসাদের পাশে কোনো তেঁতুল গাছে, আপনার সামনে একজন মৃত মানুষের মুখ থেকে গোঙ্গানোর আওয়াজ আসতেছে।
জানি এটা ভাবতেই আপনার শরীর শিউরে উঠবে। অথচ সেই মূহূর্তে আমি সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তখনই হঠাৎ একটা দমকা হাওয়ায় রাকিবের দেহটা মাটিতে পড়ে গেলো। রাকিবের দেহটা মাটিতে পড়ার শব্দে, আমার রুহটা প্রায় বেরিয়ে যাচ্ছিলো। আর তখনই রাকিবের গোঙ্গানোর আওয়াজ আরো বেড়ে গেলো। আমি ভয়ে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। একটা প্যারালাইসিস রোগীর মতো।
চলবে………??
(