গল্প: #পরিত্যাক্ত_প্রাসাদ ১ম পর্ব
লেখক: #হাসান
রাকিব তার প্রেগন্যান্ট গার্লফ্রেন্ড কে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে, তার একবছর পূর্ণ হলো সেদিন।
তবে এতে রাকিবের মনে নেই কোনো অনুশোচনা। বরং রাকিব খুশী এইভাবে যে, এই একবছরে কেউ জানতেই পারেনি, রাকিব তার প্রেগন্যান্ট গার্লফ্রেন্ড নীলাকে খুন করেছে। এমনকি নীলার বাবা-মা জানেই না যে, নীলা মারা গেছে।
ভাবছেন এটা কীভাবে সম্ভব?? মেয়ে মারা গেছে একবছর। অথচ মা-বাবা জানেই না, তাদের মেয়ে মারা গেছে। হ্যা এমনটাই ঘটেছে। আমি যখন রাকিবের মুখে এই ঘটনা প্রথম শুনেছিলাম। তখন আমিও আপনার মতো অবাক হয়েছিলাম। রাকিব নীলাকে মারার জন্য একটা মাষ্টার প্লেন করেছিলো। জানেন হাসান ভাই এটা রাকিব কীভাবে করেছিলো?? (নাহিদ নামের একটা লোক, তার বন্ধুর জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা শেয়ার করছে আমার কাছে)
একবছর আগে
এক রাতে রাকিব নীলাকে কল করে। নীলা ফোন রিসিভ করতেই রাকিব বলে উঠে:
নীলা আমি বাড়িতে তোমার কথা জানিয়েছিলাম। কিন্তু আমার বাড়ির কেউ তোমাকে মেনে নিবে না। বাবা তোমাদের মতো গরিব ঘরের মানুষের সাথে সম্পর্ক করবে না।
নীলা রাকিবের কথা শুনে কেঁদে কেঁদে বলে: তাহলে আমার কি হবে রাকিব?? আমার গর্ভে তো তোমার সন্তান। তুমি যদি আমাকে বিয়ে না করো, তাহলে তো আমি সমাজে মুখ দেখাতে পারবো না। এই মুহূর্তে আমার বাড়ির কেউ জানেনা, আমি প্রেগন্যান্ট। কিন্তু তারা খুব শ্রীঘ্রই জানতে পারবে। আর তখন বাবা আমায় মেরে ফেলবে। প্লীজ তুমি এমনটা করো না।
আমি তোমাকে বিয়ে করবো না, সেটা তো বলিনি। আমি প্রতিষ্ঠিত হলেই তোমাকে বিয়ে করবো। কিন্তু এখন সম্ভব না। তাই তোমাকে এই বাচ্চা নষ্ট করে ফেলতে হবে।
এটা তুমি কি বলছো রাকিব। আমার গর্ভে তোমার ভালোবাসার চিহ্ন। আমি সেটা নষ্ট করে ফেলবো??
এটা তোমাকে করতেই হবে নীলা। যেকোনো ভাবেই হোক এই সন্তান তোমাকে নষ্ট করতেই হবে।
একজন মা হয়ে নিজের সন্তান কে কীভাবে হত্যা করবো?? এটা আমি পারবো না।
তুমি যদি এই সন্তান নষ্ট না করো। তাহলে কিন্তু আমি তোমাকে কখনই বিয়ে করবো না।
এই সন্তান নষ্ট করলে যে, তুমি আমাকে বিয়ে করবে?? তার কী কোনো গেরান্টি আছে??
তুমি আমাকে অবিশ্বাস করছো নীলা??
আমি তোমাকে অবিশ্বাস করি না। কিন্তু এই মুহূর্তে আমি যে পরিস্থিতিতে আমি। এই পরিস্থিতিতে, আমার তোমাকে বিয়ে করতেই হবে। তা ছাড়া আমার বেঁচে থাকার অন্য কোনো উপায় নেই। আর তুমি ভেবো না, তুমি আমাকে বিয়ে না করলে, আমি গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করবো। আমি সেরকম মেয়ে নই। বরং আমি তোমার বাড়িতে গিয়ে অনশন করবো। আর পুলিশে জানাবো।
ঠিক আছে, ঠিক আছে। তোমার অনশন করতে হবে না। আর কাউকে জানাতেও হবে না। আমি তোমাকে বিয়ে করবো।
তুমি সত্যি বলছো রাকিব, তুমি আমাকে বিয়ে করবে।
হ্যা আমি তোমাকে বিয়ে করবো। কিন্তু আমি তোমাকে আমার বাড়িতে তুলতে পারবো না। তোমাকে নিয়ে পালিয়ে যাবো। নয়তো বাবা এই বিয়ে কিছুতেই হতে দিবে না।
ঠিক আছে। আমি তোমার সাথে পালিয়ে যেতে প্রস্তুত। কবে পালাবো আমরা??
আগামীকাল রাতে আমরা পালিয়ে যাবো। তুমি তৈরি হয়ে রাত ১২টায় নয়া বাজারে(ছদ্মনাম) এসো। তখন বাজারের সব দোকান বন্ধ থাকে। তাই কেউ জানতেও পারবে না। আর তুমি আসার আগে বাড়িতে একটা চিঠি লিখে আসবে। সেখানে বলবে তুমি তোমার ভালোবাসার মানুষের সাথে পালিয়ে যাচ্ছো। আর কোনোদিন বাড়িতে ফিরবে না।
রাকিবের কথা শুনে সেদিন নীলা অনেক খুশি হয়েছিলো। নীলা ভেবেছিলো রাকিব তাকে বিয়ে করবে। আর তার গর্ভে থাকা সন্তান বাবার স্বীকৃতি পাবে। কিন্তু নীলা জানতো না, তার সামনে অপেক্ষা করছে এক ভয়ংকর মৃত্যু।
★★
পরেরদিন রাতে নীলা বাড়িতে একটা চিঠি লিখে আসলো। সেই চিঠিতে নীলা লিখেছে।
প্রিয় বাবা-মা তোমরা আমাকে খুজো না। আমি চলে যাচ্ছি আমার ভালোবাসার মানুষটির সাথে। আর কোনোদিন এই বাড়িতে ফিরবো না।
জানেন হাসান ভাই, সবচেয়ে বেশি অবাক করা বিষয় হলো। আমাদের বাড়ি পাশাপাশি গ্ৰামে। তারপরও রাকিব আর নীলা যে, দু’জন দু’জনকে ভালোবাসতো আমারা ফ্রেন্ড সার্কেলের কেউ জানতাম না। অথচ তাদের মধ্যে শুধু প্রেমের সম্পর্কই ছিলো না, তারা রুমডেটও করতো।
এটা কি করে সম্ভব?? রাকিব আর নীলা আপনাদের বন্ধু। আর নীলাদের বাড়ি পাশের গ্ৰামেই অথচ আপনারা জানতেন না। রাকিব আর নীলা দুজন দুজনকে ভালোবাসতো??
না ভাই! আমরা এসব কিছু জানতাম না। জানলে হয়তো এতোকিছু হতো না। জানেন সেদিন রাতে কি ঘটেছিল??
নীলা নয়া বাজারে রাকিবের জন্য অপেক্ষা করছিলো।একটু পরেই রাকিব নয়া বাজারে এসে উপস্থিত হয়। নীলা খুশিতে রাকিব কে জরিয়ে ধরে বলে।
আমি জানতাম! তুমি কখনো আমাকে ঠকাবে না। তাইতো আমি তোমায় এতো ভালোবাসি।
রাকিব নীলার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে। আমি কি কখনো আমার বউ কে ঠকাতে পারি?? তুমি জানো না, খুব শ্রীঘ্রই তুমি আমার বউ হবে?
তারপর রাকিব নীলাকে নিয়ে হেঁটে চলেছে শহরের উল্টোদিকে নয়ানগর গ্রামের শেষ দিকে। (বলে রাখা ভালো, রাকিব আর নীলাদের গ্ৰামের মাঝখানে নয়ানগর গ্ৰাম।
আর নয়ানগর গ্ৰামের নয়া বাজার দিয়েই তাদের শহরে যেতে হয়। আর নয়ানগর গ্ৰামের শেষের দিকে একটা পরিত্যাক্ত প্রাসান আছে। যে স্থানটা খুবই নির্জন। যার আশেপাশে কোনো বাড়ি ঘর নেই )
নীলা রাকিব কে জিজ্ঞেস করলো আমরা উল্টোদিকে যাচ্ছি কেন??
রাকিব বললো: ঐ দিকের পরিত্যাক্ত প্রাসাদের সামনে আমার বন্ধুরা বাইক নিয়ে অপেক্ষা করছে। সেই বাইক নিয়েই আমরা পালিয়ে যাবো।
নীলা একবারও ভেবে দেখেনি, যদি বাইক নিয়ে পালানোর ইচ্ছে থাকতো। তাহলে বাইক নয়া বাজারেই আনতে পারতো। কিন্তু তাকে যেতে বলছে পরিত্যাক্ত প্রাসাদে। নীলা এসব না ভেবেই খুশি মনে রাকিবের সাথে চলছিল।
★★
রাকিব নীলাকে নিয়ে পরিত্যাক্ত প্রাসাদের সামনে এসে পড়লো। আর নীলা জিজ্ঞেস করলো তোমার বন্ধুরা কোথায়??
রাকিব বললো: হয়তো ভিতরে আড্ডা দিচ্ছে। তুমি দাঁড়াও আমি দেখে আসছি। তাই বলেই রাকিব ভেতরে চলে গেলো।
আর নীলা বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। এই নির্জন জায়গায়, একটা পরিত্যাক্ত প্রাসাদের সামনে নীলা দাড়িয়ে আছে। এই রকম গাঁ ছমছমে পরিবেশে নীলার ভয় করছে। তবুও দাঁড়িয়ে আছে রাকিবের জন্য। কিন্তু হটাৎ…..
নীলা রাকিবের চিৎকার শুনতে পায়। নীলা ভেবেছিলো রাকিব বিপদে পড়েছে তাই দৌড়ে ভিতরে যায়। আর যে রুম থেকে চিৎকার আসলো। নীলা সেই রুমে গিয়ে দেখে রাকিব দাঁড়িয়ে আছে। রাকিব কে দেখে নীলা দৌড়ে জরিয়ে ধরে। আর বলে: চিৎকার করলে কেন?? আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
তুমি এখনো ভয়ের কিছু দেখোনি নীলা। কিন্তু খুব শ্রীঘ্রই দেখবে।
মানে??
রাকিব আর কথা বললো না। নীলাকে সাথে সাথে বেঁধে ফেললো রাকিব। আর ধাক্কা মেরে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে, অঝরে নীলার পেটে লাথি মারছিলো।
নীলা চিৎকার করে কেঁদে কেঁদে বললো:
আমাকে মেরো না। আমি তো তোমায় ভালোবাসি।
রাকিব রাগী গলায় বললো: তুই আমাকে ভালোবাসলেও, আমি তোকে ভালোবাসি না।
আমাকে ভালোবাসতে না পারো। তবে আমার গর্ভে থাকা তোমার নিষ্পাপ সন্তান, তার জন্য হলেও আমাকে ছেড়ে দাও। আমি কথা দিচ্ছি, আমি এই গ্ৰাম ছেড়ে চলে যাবো। আর কাউকেই বলবো না, এই সন্তান তোমার। প্লীজ আমাকে ছেড়ে দাও।
রাকিব নীলার কোনো কথাই শুনলো না। নীলার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিলো। নীলা আগুন থেকে বাঁচতে চিৎকার করছে। আর গলা কাটা মুরগীর মতো লাফাচ্ছে। আর সেখানেই মারা গিয়েছিলো নীলা। রাকিব সেদিকে আর ফিরেও তাকায়নি সোজা চলে এসেছিলো তার বাড়িতে।
★★
দেখতে দেখতে একবছর কেটে গেছে। কিন্তু তখনো আমরা কেউ জানিই না নীলা মারা গেছে। আমরা ভেবেছিলাম নীলা গোপনে তার কোনো বয়ফ্রেন্ডের সাথে পালিয়ে গেছে। আর নীলার চিঠি পড়ে নীলার বাবা-মা নীলাকে আর খুঁজেনি। তারাও ভেবেছে নীলা তার বয়ফ্রেন্ডর সাথে পালিয়েছে।
অন্যদিকে রাকিব খুব খুশি ছিলো। কারন একবছর আগে সে তার প্রেগন্যান্ট গার্লফ্রেন্ড নীলাকে খুন করেছে। তা কেউ জানতেই পারেনি! বলেই থামলো নাহিদ নামের লোকটি।
আমি জিজ্ঞেস করলাম: তারপর আপনার বন্ধু রাকিবের কী হয়েছিলো নাহিদ ভাই??
তারপর রাকিবের সাথে যা ঘটেছিলো, তা অকল্পনীয় ছিলো হাসান ভাই।
“সেদিন রাতে রাকিব নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছিলো। কিন্তু হঠাৎ….
মাঝরাতে রাকিবের ঘুম ভেঙ্গে যায়। রাকিব চোখ খুলে দেখে সে তার রুমে নেই। রাকিব প্রথমে ভাবলো সে ভুল দেখেছে। তারপর তার চোখ ভালো করে ঢলা দিলো। আর সামনে তাকিয়ে দেখে, সে পড়ে আছে সেই পরিত্যাক্ত প্রাসাদে। যেখানে সে একবছর আগে তার প্রেগন্যান্ট গার্লফ্রেন্ড নীলাকে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে। ভয়ে রাকিব আঁতকে উঠে । রাকিব ভাবছে সে এখানে আসলো কিভাবে। সে তো তার রুমে ছিলো। এসব ভাবতে ভাবতেই,
রাকিবের কানে ভেসে আসলো, অদ্ভুত সুরে ডাকা বাবা ডাক। কেউ রাকিব কে বলছে
” বাবা, ও বাবা দেখো আমি ফিরে এসেছি। আমি তোমার কাছে ফিরে এসেছি।
তারপর রাকিব যা দেখলো, তাতে রাকিবের আত্মা বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম।
চলবে…….??