পরিণতি
পর্ব – ৫
তোমার সাথে আরিফের কতদিনের সম্পর্ক?
এমন প্রশ্নে রীতিমতো হকচকিয়ে উঠলো ফারিয়া।
সকাল বেলা বাড়ির সবাই নতুন বৌ এর হাতে চা খাওয়ার আবদার করলো,তার জন্যই রান্না ঘরে আসা ফারিয়ার।শাশুড়ি মা ফারিয়ার মেজো জা, কে বললো
– তুমি নতুন বৌ কে গিয়ে সাহায্য করো,কোথায় কি আছে ও তো আর জানেনা,তুমি দেখিয়ে দিও।
– জী, মা।
ফারিয়া যখন একমনে চা বানাতে ব্যাস্ত,তখনই সুযোগ বুঝে প্রশ্নটা করে ফেললো রিনা, মানে ফারিয়ার মেজো জা।
– কি হলো চুপ করে আছো কেনো,কত দিনের প্রেম তোমাদের?
– জী,আসলে তেমন কিছুনা।আরিফ আর আমি জাস্ট গুড ফ্রেন্ড।
– গুড ফ্রেন্ডের সাথে বুঝি পালিয়ে যাওয়ার প্ল্যান করছিলে?
– এমন প্রশ্নে,কোনো উত্তর খুঁজে পাচ্ছিলো না ফারিয়া।ভয়ে কেমন যেনো গলা শুকিয়ে আসছিলো।
– কয়টায় জানি দেখা করার কথা ছিলো?ওও মনে পরেছে,সন্ধ্যা সাতটায়। তা দেখা কি করেছিলে?নাকি তোমার অপেক্ষা করতে করতে তোমার প্রেমিক একাই পালিয়ে গেছে?
– আমি কিছু বলতে পারছিলাম না,পাথরের নেয় দাড়িয়ে ছিলাম।
– আমি তো ভেবেছিলাম,রিহান কে রাতে একাই ফিরতে হবে,তুমিও সাথে এসেছো দেখে তো আমি রীতিমতো শকড হয়ে গিয়েছিলাম।
– ফারিয়া শুধু ভাবছিলো,উনি এসব কিভাবে জানলেন!
– এই নাও তোমার প্রাণ প্রিয় প্রেমিকের চিঠি,যেটা কাল সকালে আমাদের বড় জা এর,ছোট্ট ছেলেটার হাতে পেয়ে ছিলাম।
– উনি হাত বাড়িয়ে আমাকে চিঠিটা দিলেন,আমি ওনার হাত থেকে চিঠিটা নিতে চাইলে,উনি দিয়েও আবার খপ করে নিয়ে নিলেন।
– থাক তুমি তো কাজ করছো,কাজ করো,আমি পড়ে শুনাই।উনি পড়তে লাগলেন।
প্রিয় ফারিয়া।
আমার এখন মনে হচ্ছে আমি তোমাকে বিয়ে করতে বলে ভুল করেছিলাম।ভেবেছিলাম তুমি কাছাকাছি থাকলে,তোমাকে হারানোর কষ্ট কিছুটা কম হবে বাট এখন দেখছি,কষ্টটা আরো বহুগুণ বেড়ে গেছে।জিজ্ঞেস করবো না তুমি কেমন আছো,কারণ আমি জানি তুমি ভালো নেই।
জানো আমিও ভালো নেই।তোমাকে বলে বুঝাতে পারবোনা কালকে রাত টা আমার কিভাবে গেছে।শুনেছিলাম,সিগারেটের ধোয়ার সাথে নাকি কষ্ট মিলিয়ে যায়,কালকে রাতে তো সিগারেট খেয়ে দেখলাম, কই কষ্ট একটুও কম হলোনা বরং মাথায় ভিশন ব্যাথা ধরলো,জীবনের প্রথম খেয়েছি বলেই হয়তো।তোমাকে কবুল বলতে নিষেধ করার পরেও,তুমি কবুল বলে দিলে,অবশ্য এখানে তোমারও কিছু করার ছিলোনা। জানো?তোমার বিয়ের মিষ্টিটা আমি পিঁপড়া দের মাঝে একটু একটু করে বিলিয়ে দিয়েছি কারণ ওইটা আমার কাছে মিষ্টি নয়, বিষ মনে হচ্ছিলো।আসলে আমরা যতক্ষণ পরিস্থিতির উপর দিয়ে না যাই,ততক্ষণ বুঝতে পারিনা আমরা এই পরিস্থিতির উপযুক্ত কি না,আমিও তেমনি আগে বুঝতে পারিনি যে এতোটা ভেঙ্গে পরবো।যাই হোক ভুল তো মানুষেরই হয়,আমাদের ও হয়েছে,বিশেষ করে আমার ভুল হয়েছে, যার মাশুল তোমাকেও দিতে হচ্ছে।এখন আমি সেই ভুলটাই শুধরাতে চাই।আজকে রাতে আমরা ঢাকায় পালিয়ে যাবো,পরে বিয়ে করে নিবো।আমি আমার বন্ধুদের বলে সব কিছু ম্যানেজ করে রেখেছি।বাসের টিকিট ও কাটা হয়ে গেছে।হয়তো তুমি যেদিন সব ছেড়ে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলে,সেদিন পালিয়ে গেলেই ভালো হতো,আপাতত এতো কষ্টের মধ্যে দিয়ে যেতে হতোনা আমাদের।যাইহোক সন্ধ্যা সাতটায় দেখা করবে,তারপর আমরা আরেকটু ভালোভাবে আলোচনা করে রাতে রওনা হবো ঢাকার উদ্দেশ্যে।ঢাকায় এক বন্ধুর বাসায় উঠবো,তারপর ওইখানেই আমাদের পরবর্তী প্ল্যান হবে।খুব সাবধানে করতে হবে সব কিছু।
ইতি
আরিফ মাহমুদ।
*****
চিঠিটা পড়াও শেষ,শাশুড়িও রান্না ঘরে এসে হাজির।
– কি গো নতুন বৌ,চা এখনও হয়নি?তোমার শ্বশুর চায়ের অপেক্ষায় বসে আছে।
– জী হয়েছে।
– আচ্ছা তাহলে নিয়ে এসো।
– জী আসছি।
মেজো জা এর দিকে তাকাতেই,উনি আমাকে বললেন
– যাও তাড়াতাড়ি চা দিয়ে এসো,সবাই অপেক্ষায় আছে,নতুন বৌ এর হাতে চা খাবে বলে।
– আমি তাই করলাম।
চা খেয়ে সবাই অনেক প্রশংসা করলো।চা এতোটাও ভালো হয়নি, যতোটা উনারা বলছেন।তবে আমাকে খুশি করার জন্যই তাদের এই প্রশংসা।তাদের এমন ব্যাবহারে আমি অনেক খুশি হলেও,চিঠিটা নিয়ে অনেক টেনশন হচ্ছিলো।
আপু আসলো মাত্র,আমি কি করছি দেখার জন্য।বিয়ের পরদিন তো অনেক কেঁদেছিলাম, আজকেও কাঁদছি কি না,তাই সকাল সকাল আপুর আগমন।আপুদের বাড়ি নাকি কাছেই,পাঁচ, সাত মিনিটের রাস্তা।আপু আসতেই বড় জা,আপুকে চা এনে দিয়ে বললেন
– খেয়ে দেখো তোমার বোন চা বানিয়েছে, ভালোই হয়েছে।
– যাক আপনাদের বাড়িতে এসে চা বানানো শিখে গেছে,বাড়িতে তো কোনো কাজ ই করতোনা।
– শাশুড়ি মা বললেন,আস্তে আস্তে সব শিখে যাবে,সংসার সামলাতে হবে তো।
– জী জেঠিমা,আপনারা একটু দেখিয়ে দেখিয়ে দিলে, ও সব ই করতে পারবে।
– ঘরে যাও মা,দুই বোন একসাথে গিয়ে কিছুক্ষন গল্পঃ করলে ফারিয়ার ভালো লাগবে।
– আচ্ছা জেঠিমা।
আমি কি খেয়েছি,এই বাড়িতে কেমন লাগছে আপু এইসব জিজ্ঞেস করলো আমাকে,আমি শুধু আপুর প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেলাম।অনেক্ষন থাকার পর আপু বললো
– এখন চলে যাই,পরে আবার আসবো।
– আমি তখন কাঁদতে লাগলাম।এই বাড়িতে আমি নতুন,তাই মন টিকছেনা এখানে।
– আপু বললো, কাঁদিস না,কালকে তো বাবা নিতে আসবে,তখন বাড়ী যেতে পারবি।
– আমি আপুকে বিদায় দিয়ে যখন দরজার সামনে দাড়িয়ে ছিলাম,মেজো জা এসে বললো
– নতুন বৌ এভাবে দরজার সামনে দাড়িয়ে থাকলে,মানুষ খারাপ বলবে।যাও ভিতরে যাও।
– আমি তার কাছে চিঠির ব্যাপারে বলতে গিয়েও বলতে পারছিলাম না।উনি মনে হয় সেটা আঁচ করতে পেরেই জিজ্ঞেস করলেন
– কিছু বলবে?
– আপু চিঠিটা?
– পুড়িয়ে ফেলেছি।
– থ্যাংক ইউ আপু।আর সরি,আসলে ওইসব কিছুই আমার অতীত,এখন আমি নতুন ভাবে জীবন শুরু করতে চাই।
– সেটাই করা উচিত।
– দোয়া করবেন আপু।
– অবশ্যই।
এই বলে মেজো জা চলে গেলেন,আমিও আমার ঘরে চলে আসলাম।উনি চিঠিটা পুড়িয়ে ফেলার কথা বললেও,আমার কেনো জানি একটু সন্দেহ লাগছে,আসলেই কি চিঠিটা পুড়িয়ে ফেলেছে,নাকি….
অবশ্য উনি যেটা বলেছেন সেটা বিশ্বাস করা ছাড়া আমার কাছে আর অন্য কোনো অপশন নেই।
বিয়ের চারদিনের মাথায় রিহান ঢাকা চলে গেলো।আমি শ্বশুর বাড়িতে রয়ে গেলাম।বাবা এসে আমাদের নিয়ে গিয়েছিলো,দুই দিন থাকার পর শ্বশুর গিয়ে নিয়ে এসেছে।রিহান চলে যাওয়ার সময়,স্বাভাবিক ভাবেই আমার খারাপ লাগছিলো,কারণ এই বাড়ীতে রিহান ই একজন,যাকে আমি খুব কাছ থেকে চিনি,আপন মনে হয়।ও ছিলো বলে এই বাড়ীতে একটু ভালো লেগেছিলো,এখন ও চলে গেলে আমি একা হয়ে যাবো।মন খারাপ দেখে রিহান বললো
-মন খারাপ করো না, আমি আবার সামনের মাসে আসবো।যদি বেশি খারাপ লাগে,আপুর কাছে গিয়ে কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে আসবে ভালো লাগবে।আর আমি তো ফোন করবোই।
– ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে বিদায় জানালাম রিহান কে।
রিহান চলে যাওয়ার পর এই ঘরটাতে আমার একা একা থাকতে হবে ভেবে ভয় লাগছে।এমনিতে আমি তেমন ভয় পাইনা, কিন্তূ নতুন জায়গা তো তাই আর কি।শাশুড়ি জিজ্ঞেস করলো
– তোমার একা থাকতে সমস্যা হবে না তো?
– আমি চুপ করে রইলাম।আমার চুপ থাকা দেখে শাশুড়ি বুঝলেন,আমি একা থাকতে চাইছিনা।
– তাহলে তুমি রিমি কে সাথে নিয়ে ঘুমিও।
– জী,মা।
রিমি হলো আমার ননদ।একটাই বোন রিহানের।মাত্র বারো বছরের মেয়ে হলেও,কথা বলে পাকা বুড়ির মতো।
রিমি কে নিয়েই আমি রাতে ঘুমাই।ও অনেক কথা বলে,গল্পঃ করে।রাতে খুব বায়না ধরে আমার কাছ থেকে গল্পঃ শুনার জন্য,কখনো কখনো বলি আবার কখনো কখনো এড়িয়ে যাই।মাঝে মাঝে বলি,আজকে তুমি গল্পঃ বলো,আমি শুনি।রিমি আপন মনে বলতে থাকে রূপকথার গল্পঃ,আর আমি পুরনো কিছু স্মৃতি ভুলার চেষ্টা চালিয়ে যাই অবিরত।কখনো কখনো কান্না আসে খুব,যদি দেখি রিমি ঘুমিয়ে পড়েছে,তাহলে কিছুক্ষন জোরে জোরে কেঁদে হালকা হই।
প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে রিহানের ফোন কলে।সকাল শুরু হয় ওর সাথে ফোনালাপে।এভাবেই দিন গুলো কেটে যাচ্ছিলো।
একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে যখন রান্না ঘরে ঢুকছিলাম,রিমি কে বলতে শুনলাম
– মা জানো,ভাবি না প্রায় রাতে কান্না করে।
– কান্না করে?
– হ্যা।কালকে রাতে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম,ভাবির কান্নার শব্দে আমার ঘুম ভেংগে গেছে, কিন্তূ আমি কোনো শব্দ করিনি,চুপ করে শুয়ে ছিলাম।
– তাই নাকি?
– হ্যা,শুধু কালকেই নয়,এর আগেও কান্না করতে শুনেছি।আমার অনেক ভয় লাগে ভাবির কান্না শুনে, ওনাকে জিন টিন ধরে মনে হয় রাতে।
– না রে,মনে হয় ওর মায়ের জন্য মন খারাপ হয় তাই কাঁদে।
আমি রিমির কথা শুনে,একটু ভয় পেলাম।জানিনা শাশুড়ি এখন এটাকে কিভাবে নিবে।আমি যে এতো রাতে মায়ের জন্য কাঁদবো না,এটা বুঝার যথেষ্ট জ্ঞান উনার আছে।
এর মধ্যেই ফোন টা বেজে উঠলো,রিহানের ফোন।আমি রিসিভ করতেই শাশুড়ি বললেন,তোমার কথা বলা শেষ হলে আমাকে একটু দিয়ো ফোনটা,কথা আছে।আমি কথা না বলে,শাশুড়িকে আগে কথা বলতে দিলাম।শাশুড়ি আর রিহানের মধ্যে কথা চলছিলো
– কি রে বাবা,কেমন আছিস?
– ভালো আছি।তুমি কেমন আছো?
– ভালো।কবে আসবি বাড়িতে?
– কি বলো মা,বাড়ি থেকে আসলাম মাত্র এগারো দিন ধরে, এখনি জিজ্ঞেস করছো বাড়ি যাওয়ার কথা।
– একটু ছুটি নিয়ে আয় না বাবা, বৌ টা একা একা থাকে,তোর জন্য অনেক কান্না করে।
– আমার জন্য কান্না করে!
– হ্যা তোর জন্যই।একদিনের জন্য ছুটি নিয়ে হলেও আয়,পরে আবার বেশিদিনের ছুটি নিয়ে আসিস।
– আচ্ছা।বাবা কেমন আছে?
– হ্যা, ভালোই আছে।
ওনাদের কথা শেষ হলে,শাশুড়ি আমার কাছে ফোনটা দিয়ে চলে গেলেন উঠানে।আমি হ্যালো বলতেই,রিহান বললো
– তুমি নাকি আমার জন্য কান্না করো?
– আমি চুপ করে থাকলাম,কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না।
– কান্না করোনা,দেখি আমি কাল পরশু একদিনের ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসবো,কেমন?
– হুম
আমি একটা দিকে নিশ্চিন্ত হলাম,ভাগ্যিস শাশুড়ি ব্যাপারটাকে এইভাবে নিয়েছেন,অন্য ভাবে নিবেন বলে আমার ভয় ছিলো।রিহানের কথা শুনে মনে হলো,আমার ওর জন্য কান্না করার কথা শুনে,ও খুশীই হলো।আসলে শাশুড়ি মা আমাকে ভুল বুঝছেন,আমি আসলে রিহানের জন্য না,অন্য কোনো কারনেই কান্না করি,সেটা শাশুড়ি বা রিহানের অজানা।তবুও আমার ভালোই হলো ভুল বুঝে। কিছু ভুল বুঝাবুঝি যদি সংসারে শান্তি এনে দেয়,ভালোবাসা বাড়িয়ে,তাহলে ক্ষতি কি!
এই বাড়ীর সবাই অনেক ভালো।শ্বশুর,শাশুড়ি,ননদ,ভাসুর, বড় জা,শুধু মেজো জা,একটু অন্যরকম।ওনার সাথে সবার ই একটু বনিবনা কম।আমার উপর তো উনি রীতিমতো হুকুম জারি করেই রাখেন,সবার চেয়ে আমাকেই তার অত্যাচার বেশি সইতে হয়। আরিফের চিঠির ব্যাপারে উনি জানেন বলে,একটু বেশিই হুকুম চালান আমার উপর।আমিও কিছু বলতে পারিনা,ভয় হয়,কিছু বললে যদি চিঠির ব্যাপারটা সবাই কে বলে দেয়!
বিয়ের ছয় মাস পর বুঝতে পারলাম,আমি কনসিভ করেছি।খবরটা শুনে আমার বা শ্বশুর বাড়ির মানুষ অতোটা খুশি না হলেও,রিহান অনেক খুশি ছিলো।শ্বশুর বাড়ির সবাই চেয়েছিলো,আমি পড়াশুনা কন্টিনিউ করি,আমারও বিয়ের আগে সেই ইচ্ছাই ছিলো,কিন্তু বিয়ের পর মনে হলো,লেখাপড়া করে আর কি হবে,যতটুকু করেছি,সন্তান মানুষ করার জন্য এটুকুই যথেষ্ট।
তাই বলে আমি ইচ্ছা করে বাচ্চা নেইনি,ভুলবশতঃ হয়ে গেছে।শ্বশুর বাড়ির প্রতিক্রিয়া দেখে,মা ও ওনাদের মতো বললেন
– বাচ্চাটা না হয় নষ্টই করে ফেল।
– মা!তুমিও?
– ওরা যখন চায় তুই পড়াশুনা চালিয়ে যা,তাই বললাম।
– মায়ের কথা শুনে আমার অনেক রাগ হলো।একসময় আমিও মনে মনে চিন্তা করতে লাগলাম বাচ্চাটা নষ্ট করে ফেলবো কিনা, কিন্তূ বান্ধবীরা বললো,বিশেষ করে যারা আরিফের ব্যাপারটা জানে,তারা বাচ্চা নষ্ট করতে নিষেধ করলো,বললো
– বাচ্চাটা নষ্ট করবি কেনো,এটা তোর প্রথম বাচ্চা,মা হওয়া যে কত সৌভাগ্যের জানিস!
– আমি বললাম, এমন কিছু ভাবতে গেলেই আমার কলিজা ছিড়ে যায়, কিন্তূ মা যখন বললো,তাই…
– তোর স্বামী যখন খুশি,তাহলে অন্যকারো কথা শুনার কোনো দরকার নেই।আর এমনও হতে পারে,এই বাচ্চার উছিলায় তোদের সম্পর্ক অন্যরকম হয়ে গেলো।বাচ্চা মানুষ করতে করতে তুই ব্যাস্ত হয়ে,আরিফের কথা একদম ভুলে যাবি।আর বাচ্চা আসার পর দেখবি,জীবন টা অনেক সুন্দর হয়ে যাবে।
সেদিন বান্ধবীর কথাটা আমার অনেক পছন্দ হলো,ওর বলা কথা আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছে।তাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম,আমি বাচ্চাটা রাখবো।
এই গর্ভকালীন অবস্থায় রিহানের অনেক যত্ন পেয়েছি আমি।বাড়ির সবাই প্রথমে একটু দ্বিমত থাকলেও এখন সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে গেছে।রিহান দূরে থাকায়, আমাকে তেমন সময় দিতে না পারলেও,যে কয়দিন বাড়ি এসে থাকে,খুব যত্ন নেয় আমার।
দেখতে দেখতে আমার কোল আলো করে,ফুটফুটে একজন মেয়ে সন্তান আসলো। সবাই দেখে বলে,একদম মায়ের মতোই সুন্দরী হয়েছে।এই কথাটা রিহানের অনেক ভালোলাগে,আমারও।নিজেকে অনেক সুখী মনে হতে লাগলো। কিন্তূ যখনই নিজেকে সুখী ভাবি তখনই মনের ভিতর আতঙ্কের ঝড় বয়ে যায়,মনে পড়ে যায় ওই চিঠির কথা টা।
আমি জানি এই চিঠির কথা একদিন সবার সামনে আসবেই।আমি যখন আমার জা এর কথা মতো চলতে না পারবো,তখন তিনি একটা দুর্ঘটনা ঘটানোর সম্ভাবনা আছে।আর উনি যেভাবে আমার উপর হুকুম চালান,তাতে মনে হয় না,খুব বেশিদিন আমি তার কথা মতো চলতে পারবো।সবসময় অন্য একজনের মন মতো চলা সম্ভব না,আমি মানুষ কোনো রোবট না।মাঝে মাঝে ভাবি নিজের থেকেই সব বলে দেই রিহান কে, কিন্তূ বলার সাহস আর হয়ে উঠে না।
একদিন মেজো জা এর সাথে আমার খুব কথা কাটাকাটি হলো…
চলবে
সালমা আক্তার।