পরিণতি পর্ব – ৩

0
1058

পরিণতি
পর্ব – ৩

সেদিনের পর থেকে আরিফ আর আমার মধ্যে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হলো।ওর প্রতি রাগ গুলো ভালোলাগায় পরিণত হচ্ছিলো।ওর প্রতি ভালো লাগা দিন দিন বেড়েই চলেছে, কিন্তূ ভালো লাগার মুহূর্ত গুলো শেষ হয়ে আসছিলো।
আপু বললো,কালকে সকালে নাকি চলে যাবে,কথা টা শুনে খুব খারাপ লাগছিলো।আমি আপুকে বললাম,আর কয়েকদিন থেকে যেতে কিন্তূ আপু বললো এখন নাকি আর থাকা সম্ভব না।

**********
আপুরা চলে যাচ্ছিলো দেখে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিলো।বুক ফেটে কান্না আসছিলো,কান্না থামাতে চেয়েও পারলাম না, কেঁদেই ‌দিলাম।আপু বললো
– এভাবে কান্না করছিস কেনো,আমি আবার কিছুদিন পরে আসবো।তোর পরীক্ষা শেষ হলে,তোকে এসে নিয়ে যাবো।
আরিফ আমার হাতে একটা ছোটো কাগজ ধরিয়ে দিলো।আমি জিজ্ঞেস করলাম
– কি এইটা?
– আমার ফোন নাম্বার।যদি কখনো কোনো প্রয়োজন পরে আমাকে ফোন দিয়ো।
– আমার তো মোবাইল ই নেই।
– তোমার আব্বুর টা দিয়ে দিবে।
– আচ্ছা।
তারপর ওরা বিদায় নিয়ে চলে গেলো।আমি অনেকদূর পর্যন্ত ওদের এগিয়ে দিয়ে আসলাম।যতক্ষণ না চোখের আড়াল হলো,দাড়িয়ে দাড়িয়ে ওদের যাওয়া দেখছিলাম।

বাড়িতে আসতেই বুকের ভিতরে হাহাকার দিয়ে উঠলো,সব কিছু কেমন খালি খালি লাগছে।দাদীর অভাবটা এই কয়েক দিনে,ব্যাস্ততার ভিড়ে বুঝতে না পারলেও এখন খুব মিস করছি দাদীকে।কোনো কিছুই ভালো লাগছেনা।চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে করছে, শুয়ে শুয়ে কাঁদছিলাম।দাদী নেই বলে ঘরটা খালি খালি লাগছে,আপু চলে গেছে বলে খারাপ লাগছে কিন্তূ কান্না?আমি কি সত্যিই আপু বা দাদীর জন্য কাঁদছি?তাহলে দাদী যেদিন মারা গেলো সেদিন ও তো আমার এতোটা কান্না আসেনি।আপু তো প্রায় ই আসে যায়,কই তখন তো কান্না করিনা,তাহলে?নিজেকে যখন একাধারে প্রশ্ন গুলো করে যাচ্ছিলাম, মন তখন বলে উঠলো,আরিফ!
নামটা মনে পরতেই,বুকের ভিতরে একটা ঝড় বয়ে গেলো।এলোমেলো প্রশ্নের উত্তর পেয়ে,মনে একটা প্রশান্তি অনুভব করলাম।
হ্যা,আরিফ,ওর জন্যই আমার এতো মন খারাপ। কিন্তূ কেনো?
আবারও কাঁদতে লাগলাম।

শুয়ে থাকতে ভালো লাগছিলো না,তাই একটু বাইরে গিয়ে বসলাম। কিন্তূ না,কোথাও একটু শান্তি খুঁজে পাচ্ছিনা আমি,দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার।কেনো এমন হচ্ছে,এর আগে তো কোনো ছেলের জন্য এমনটা অনুভব করিনি।
বার বার আরিফের সাথে‌ কাটানো মুহূর্তগুলোর কথা খুব মনে পরছে।একদিন ওর যেই কথা গুলো আমাকে খুব রাগাতো,আজ সেই কথা গুলো ভেবেই আনন্দ অনুভব করছি।খুব আফসোস হচ্ছে ওর সাথে করা খারাপ ব্যাবহারের জন্য।ও যে যে জায়গা গুলোতে বসে থাকতো,যেখানে আমাদের কথা হয়েছিলো,ওই জায়গা গুলোতে একটা আলাদা শান্তি খুঁজে পাচ্ছিলাম।

সারাদিন কিছু খাইনি বলে মা বকছে।আমি মা কে কিভাবে বুঝাবো আমার পেটে ক্ষুধা নেই।মন খারাপ থাকলে যে,পেটের ক্ষুধা ও চলে যায়,এই প্রথম জানলাম।এর আগেও তো আমার অনেক মন খারাপ হয়েছে,কই তখন তো না খেয়ে থাকতে পারিনি!বরং মা যখন রাগে বলতো,আজ তোকে খেতে দিবো না,আমি তখন জোর করেই খেয়ে নিতাম।না খাওয়া রোগ টা তো আমার আগে ছিলো না,আজ থেকেই কি জন্ম নিলো তাহলে!
সন্ধ্যায় টেবিলে বসে পড়ছিলাম,যদিও পড়ায় কোনো মন নেই।এরই মধ্যে আপু ফোন দিলো।মা আমার হাতে মোবাইলটা দিয়ে গেলেন কথা বলার জন্য।আমি ফোনটা কানে ধরতেই আপু বললো
– কি রে,কি খবর তোর?সারাদিন নাকি কিছু খাসনি?
– আমি কথা বলতে পারছিলাম না,কথা বলতে গেলেই গলা ভারী হয়ে আসছিলো।
– কি করছিস এখন শুনি?
– কাঁদো কাঁদো গলায় বললাম,পড়ছি।
– বাহ্,আমার বোন আজ এতোই ভদ্র হয়ে গেছে যে,খাওয়া পানি বাদ দিয়ে লেখাপড়া শুরু করে দিয়েছে।শুন আগে খেয়ে নে,পরে পড়তে বসবি। মন খারাপ করিস না,আমি কিছুদিন পরে আবার আসবো বলেছি তো!
– হুম।
– আচ্ছা,শুন আরিফ নাকি তোর সাথে কথা বলবে,ওর নাকি আমাদের বাড়িতে অনেক ভালো লেগেছে।সময় পেলে নাকি আবার যাবে।বাবা,মা আর তোর কথা অনেক সুনাম করলো।আর শুন কথা শেষ হলে আগে খেয়ে নিবি কেমন?আমি কিন্তূ রাতে আবার ফোন দিবো।নে এখন আরিফের সাথে কথা বল।আপু আরিফের কাছে ফোনটা দিলো,আরিফ ফোন ধরে বললো
– হ্যালো!
– হুম?
– সারাদিন কিছু খাওনি কেনো?
– আমি কথা বলতে পারছিলাম না,হেঁচকি তুলে কান্না শুরু করলাম।
– এভাবে কাঁদছো কেনো পাগলী?
– আমি চুপ।চোখের পানি অঝোরে ঝরেই যাচ্ছিলো।
– এভাবে কেঁদো না প্লিজ।আমার কিন্তূ কষ্ট হচ্ছে,আমারও কান্না আসছে।
– আমি চুপ
– আচ্ছা তুমি কাঁদতে থাকো,আমি ফোন রাখছি।
– না।
– তো কি করবো?তুমি তো কথা না বলে শুধু কেঁদেই যাচ্ছো।তুমি কি ভাবছো,তোমার একাই কষ্ট হচ্ছে,আমার হচ্ছেনা?আমারও কষ্ট হচ্ছে তফাৎ শুধু তুমি কাঁদতে পারো,আমি কাঁদতে পারিনা,আমার অনেক কষ্টেও কান্না আসেনা।পুরুষ রা মেয়েদের মতো কষ্ট পেলেই কাঁদতে পারেনা,বুঝেছো?
– হুম।
– কি হুম?
– মিস ইউ।
– সেম।
– আচ্ছা শুনো,কালকে আমি ঢাকা চলে যাবো,তুমি সুযোগ বুঝে আমাকে ফোন দিয়ো।শুক্রবার সারাদিন ফ্রী থাকি যখন খুশি ফোন দিতে পারো।এখন রাখছি পরে কথা হবে।
– আচ্ছা।
– শুনো!অনেক তো কাঁদলে,এখন একটু হাসো তো দেখি।
– আমি হাসলে কি আপনি দেখতে পাবেন?
– দেখতে না পারলাম,অনুভব তো করতে পারবো।
– হাহাহা,হইছে?
– হ হইছে।এখন রাখি বাই।
– বাই।
আরিফের সাথে কথা বলার পরে,মুহূর্তেই মন ভালো হয়ে গেলো।কি আশ্চর্য ক্ষুদা ও লেগে গেছে এখন।অবশেষে পাথর চাপা কষ্টের বিলীন হলো।একটা জিনিষ বুঝতে পারলাম,শুধু আমিই নই আরিফ ও আমাকে মিস করছে।

আরিফের সাথে‌ আমার প্রতি শুক্রবার ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা হতো। এতো কথা বলি, তাও যেনো কথা শেষ ই হতে চায়না।সারা সপ্তাহ শুক্রবারের অপেক্ষায় থাকতাম,কি কি কথা বলবো একটু একটু করে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতাম।এই অপেক্ষা আমাকে অনেক আনন্দ দিতো।ওর সাথে যখন কথা বলতাম,নিজেকে পৃথিবীর সব চেয়ে সুখী মনে হতো।ওর কথা বলা,ওর চলাফেরা সব কিছুই আমার ভালো লাগতো। আপনি ডাক টা আস্তে আস্তে তুমিতে পরিণত হলো। ওর সাথে যখন কথা বলতাম, সে এক আলাদা অনুভুতি।যেই অনুভূতি গুলো লিখে বা বলে প্রকাশ করা যাবে না।এ এক অন্যরকম চাওয়া।অন্যরকম অনুভূতি,অনেক কিছু পাওয়ার অনুভূতি।প্রথম প্রেমের অনুভূতি…
আমি ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম,আমি আরিফের প্রেমে পরে গেছি, কিন্তূ আরিফ কে কেনো জানি বলতে পারছিলাম না।একটা ভয়,যদি ও রিজেক্ট করে।আর আমাদের সম্পর্ক ও তো মিলেনা।যদিও বিয়ে জায়েজ আছে, কিন্তূ আমাদের পরিবার কখনোই সেটা মেনে নিবেনা।

দেখতে দেখতে আমি এসএসসি দিলাম।এইচএসসি শেষ করলাম। রেজাল্ট ভালো হওয়ায়,বাবা আমাকে একটা টাচস্ক্রিন ফোন কিনে দিলো।বাবা এখন বলছে আমাকে বিয়ে দিয়ে দিবে,বিয়ের পর যদি স্বামী পড়াশুনা করতে দেয় করবো আর না হলে নাই।আমি বাবা কে বলেছি আরো পড়তে চাই, কিন্তূ বাবার সেই এক কথাই,বিয়ের পরে স্বামী চাইলে পড়বে।আরিফের সাথে পরিচয়,প্রায় দুই বছর।
এই দুই বছরে আরিফের সাথে দুই একবার দেখা হয়েছিলো।এসএসসি এর পর আপুদের বাড়ি গিয়ে কিছুদিন ছিলাম,তখন আরিফের সাথে দেখা হয়ে ছিলো,তখনও ওর সাথে ভালো সময় কেটে ছিলো।এখনও যখন আরিফের সাথে কথা বলি,অনেক ভালো লাগা কাজ করে কিন্তূ জানিনা এই ভালোলাগা আর কতদিন টিকবে।বাবা যেভাবে আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে,মনে হচ্ছে আরিফের থেকে অতি শিগ্রই অনেক দূরে চলে যাবো।প্রতিদিন ই,বিভিন্ন জায়গা থেকে বিয়ের প্রস্তাব এসেই চলেছে। কিন্তূ আমি মত না দেওয়ার কারনে বাবা এগোতে পারছেন না।

দিন গুলো চলে যাচ্ছিলো কোনো মতো।আরিফের সাথে নিয়ম করে শুক্রবার কথা বলা,খাওয়া,ঘুম এগুলোই ছিলো আমার রুটিন।কিন্তূ হঠাৎ এই নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটলো,এই শুক্রবার আরিফ আর ফোন দিলো না।আমি ফোন দিলেও রিসিভ করেনা।আরিফ কেনো এমন করছিলো,আমি বুঝতে পারছিলাম না।মনে হাজার টা প্রশ্ন জাগতো,উত্তরের জন্য ওর ফোনের অপেক্ষা করতাম কিন্তূ না,ওর ফোন আর আসেনা।তবুও অপেক্ষা করে থাকতাম।নিজেকে চ্যালেঞ্জ করতাম,যদি আরিফ আমাকে ভালোবেসে থাকে তাহলে অবশ্যই একদিন না একদিন ফোন দিবে।মাঝে মাঝে নিজেকে বুঝাতাম আবার মাঝে মাঝে,এই বুঝ গুলো মন মেনে নিতো না।না থাকতে পেরে ফোন করে বসতাম কিন্তূ আরিফ ফোন রিসিভ করতো না।চিন্তায় আমি দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়ছিলাম।ঠিক মতো খেতে পারতাম না,ঘুমাতে পারতাম না।এভাবে দুই সপ্তাহ যাওয়ার পর,সেই চেনা নাম্বার থেকে ফোন আসলো।

আমি ফোনটা রিসিভ করে বললাম
– আরিফ?
– হুম।
– কোথায় ছিলে তুমি এতোদিন?কতবার ফোন করেছি তোমায় দেখেছো?টেনশনে আমার,খাওয়া ঘুম সব উঠে গেছে।অসুস্থ হয়ে গেছি আমি।তুমি কেনো এমনটা করলে?তোমার যদি কোনো সমস্যা হয়ে থাকে, আমাকে ফোন করে একবার বলতে পারতে,তাহলে এতোটা টেনশন হতোনা।
– আমাকে নিয়ে শুধু শুধু তোমাকে টেনশন করতে কে বলেছে?
– আমি শুধু শুধু টেনশন করছি?
– হ্যা, শুধু শুধুই টেনশন করছো।ফোন দেইনা বলে,খাওয়া দাওয়া ছেড়ে অসুস্থ হয়ে পড়তে হবে?আমি তো আর মরে যাই নি,মরলে অবশ্যই খবর পেতে।কেনো করো তুমি এমন?
– কেনো করি সেটা কি তুমি বুঝোনা?
– না বুঝিনা।
– সত্যিই কি বুঝোনা?
– জানিনা।
– আরিফ প্লিজ তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলো না,আমি সহ্য করতে পারিনা।অনেক কষ্ট হয় আমার।তোমাকে ছাড়া আমি অন্য কিছু ভাবতে পারিনা।তুমি ছাড়া আমার বাঁচা অসম্ভব হয়ে পরছে।
– এই অসম্ভব কেই সম্ভব করতে হবে।
– কেনো আরিফ,আমরা কি একসাথে বাঁচতে পারিনা?
– সেটা সম্ভব না।
কেনো সম্ভব না?
– সেটা তুমি ভালো করেই জানো।
– আরিফ সত্যি করে একটা কথা বলো তো,আমার জন্য কি তোমার মনে কিছুই নেই?
– আছে। উই আর গুড ফ্রেন্ড।
– শুধু ফ্রেন্ড আর কিছুনা?
আর কিছু থাকলেও সেটা এখানেই মাটিচাপা দিতে হবে।যা সম্ভব নয়,সেটা কে মনে জায়গা দিয়ে আর কষ্ট বাড়াতে পারবোনা।

– সব কিছু এখানেই মাটি চাপা দিয়ে দিলেই কি কষ্ট কমে‌ যাবে?
– না,তবে আর এগোতে চাইনা।
– চলো না আরিফ আমরা দূরে কোথাও পালিয়ে যাই।
– পালিয়ে গেলেই বা, কোথায় যাবো?আর তুমি কি ভাবছো,আমরা পালিয়ে গেলে কিছুদিন পর সবাই আমাদের মেনে নিবে?নাহ,কখনোই সেটা হবেনা।বরং আমাদের জন্য আমাদের পরিবারের লোকজন কষ্ট পাবে।তোমার বোন, মানে আমার কাকী মা,উনি আমাকে কতোটা ভালোবাসেন জানো?আমি তার ভালবাসার পরিবর্তে তাকে এতো বড় কষ্ট দিতে পারবোনা।তুমি কি চাও,তোমার জন্য তোমার বোনের সংসারে অশান্তি হোক?আমাদের জন্য তার জিবনে অন্ধকার নেমে আসুক?
– না আরিফ আমি এটা চাইনা, কিন্তূ তোমাকে ছাড়াও আমি বাঁচতে পারবো না।
– বাঁচতে হবে।নিজেদের জন্য না,আমাদের পরিবারের জন্য হলেও আমাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
– না আরিফ এমনটা বলোনা।যেই আমি তোমাকে ছাড়া একটা মুহূর্ত থাকতে পারছিনা,সেই আমি সারাটাজীবন তোমাকে ছাড়া কিভাবে থাকবো?
– থাকতে হবে।শুধু নিজেদের কথা ভাবলেই চলবে না,আমাদের পরিবারের কথা ও ভাবতে হবে।আমার বাবা, মানে যে আমাকে রাস্তার ধারে পেয়ে,কোনো কিছু না ভেবেই বুকে জড়িয়ে নিয়েছিলো পরম আদরে,আমি কিভাবে সেই বাবাকে কষ্ট দিতে পারি বলো?আমি যদি এমনটা করি,তাহলে আর কখনো কোনো বাবা,কোনো অসহায় শিশুকে আশ্রয় দিবেনা।আমার দিকে মানুষ আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে বলবে,ওই দেখ কুড়িয়ে পাওয়া ছেলেরা কেমন বেঈমান হয়।আমি পারবোনা তাদের সাথে বেইমানি করতে।আমাকে মাফ করে দাও প্লিজ।
– চলেই যখন যাবে,তাহলে কেনো জীবনে এসেছিলে?
– তখন বুঝিনি,বন্ধুত্ব ভালোবাসায় রূপ নিবে।
– প্লিজ আরিফ আরেকবার ভেবে দেখো,আমাদের ভালোবাসা এভাবে শেষ হয়ে যেতে পারেনা।
– কে বলেছে ভালোবাসা শেষ হয়ে যাবে?ভালোবাসা টা আজীবন ই রয়ে যাবে,শুধু দুটো শরীরের মিল হবেনা। আত্মার মিল তো আমাদের রয়েই যাবে।
– আমি পারবোনা আরিফ তোমাকে ছাড়া থাকতে,এই কষ্ট যে সহ্য করার মতো না।
– সহ্য করতে হবে। দেখোনা আমি কিভাবে সহ্য করে যাচ্ছি।এই দুই সপ্তাহ তোমার সাথে কথা না বলে থাকতে যে কতোটা কষ্ট হয়েছে,সেটা তোমাকে বুঝাতে পারবোনা।শেষ বারের মতো একটা কথা বলবো,রাখবে?
– কি বলো।
– তুমি রিহান কে বিয়ে করে নাও।রিহান কে বিয়ে করলে,আর কিছু না হোক তোমাকে মাঝে মাঝে দেখতে পারবো তো।এটুকু নিয়েই না হয় বেঁচে থাকবো।
– কোন রিহান?
– যে পরিবার গত সপ্তাহে তোমাকে দেখতে এসেছিলো,আজকে বিকেলেও আবার যাবে।যেই ছেলে কে তোমার দুলাভাই পছন্দ করেছেন।রিহান ছেলেটা ভালো।ভালো চাকরি করে।ওর বাড়ি আমাদের বাড়ির পাশেই,সম্পর্কে আমার কাকা হয়।আর সব চেয়ে বড় কথা,রিহান আর আমি খুব ভালো বন্ধু।অনুরোধ রইলো তোমার কাছে, এই বিয়েতে মত দিয়ে দাও।
এই বলে আরিফ ফোন রেখে দিলো।আমি চিৎকার করে কাঁদতে লাগলাম।ইস কি কষ্ট,বুকের ভিতর টা দুমড়ে মূচড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে।সব কিছু কেমন অন্ধকার লাগছে।

********

আরিফের কথা মতো,সত্যিই বিকেলে আমাকে দেখতে আসলো।আমি যখন মায়ের মুখে শুনলাম,এরা আপুদের বাড়ির কাছের লোক,ওদের আসে পাশের আত্মীয়,তখন বুঝে নিলাম এরাই রিহানের পরিবার।এইবার আর আপত্তি করলাম না,বিয়েতে মত দিয়ে দিলাম।ওনারা আমাকে আংটি পরিয়ে দিয়ে গেলেন।শুনছি,ছেলে নাকি ছয় মাস পরে ডিপার্টমেন্ট থেকে বিয়ের অনুমতি পাবে,তখন আমাকে বৌ করে ঘরে তুলে নিয়ে যাবেন।রিহানের পরিবার আমাকে জিজ্ঞেস করলো,আমার এই বিয়েতে কোনো আপত্তি আছে কি না।আমি মাথা নাড়িয়ে,না করলাম।
আপত্তি থাকলেই কি,আমি তাদের সেটা বলতে যাবো?আরিফ যখন চেয়েছে আমি বিয়েটা করি,তাহলে সেটাই হোক।আর আমিও ভেবে দেখলাম একেবারে দূরে যাওয়ার চেয়ে যদি আরিফের কাছাকাছি থাকতে পারি,তাহলে তো কখনো না কখনো আরিফ কে দেখতে পারবো।রিহান কে বিয়ে না করলেও কাউকে না কাউকে তো বিয়ে করতেই হতো।তাই আরিফের পছন্দ মতোই করলাম।

একজন কে ভালবেসে,আরেকজন কে বিয়ে করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।এইটা যে কতোটা কষ্টের কিভাবে বুঝাবো।মাঝে মাঝে যখন খুব বেশি কষ্ট হতো,আরিফ কে ফোন দিয়ে কান্না করতাম।আরিফ আমাকে বুঝাতো,আর বলতো
– যখন খুব বেশি কষ্ট লাগবে,তখন আমাকে না,রিহান কে ফোন দিবে।ওর সাথে যখন সারাটা জীবন কাটাবে,তাই ওর কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করো।আমার সাথে কথা বললে,তোমার কষ্ট বাড়বে বৈকি কমবেনা।
তাই এখন আর আরিফ কে ফোন দেইনা,খুব কষ্ট হলে চিৎকার করে কাঁদি,তবুও আরিফ কে ডিস্টার্ব করিনা।
রিহান প্রতিদিন চার থেকে পাঁচবার ফোন দেয় আমার কাছে,কথা বলি।মন চায়না কথা বলতে তবুও বলি।রিহান বলে,বিয়ের যখন ছয় মাস দেরিই আছে,তাহলে এই ছয় মাস প্রেম করে নেই।আমিও হুম,হুম,করে যাই,রিহান ভাবে আমি সত্যিই হয়তো ওর সাথে প্রেম করছি।লজ্জা পাই বলে বেশি কথা বলিনা। কিন্তূ আমার মনের ক্ষতটা ও কখনোই বুঝতে পারবেনা,বুঝতে দিবো ও না।

এভাবেই আমাদের বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসলো।অবশেষে বিয়ে সম্পন্ন ও হয়ে গেলো।আর বিয়ের দিন কবুল বলার সময় আরিফ কি না আমাকে,কবুল বলতে নিষেধ করছে।কি হাস্যকর না ব্যাপারটা?
দরজার অপর পাশে,আপুর কণ্ঠে ভাবনা থেকে ফিরে আসলাম।আপু আমাকে ধমকাচ্ছে
– কি হয়েছে তোর,কাল থেকেই কতো গুলো আজব কান্ড করে যাচ্ছিস।দের ঘণ্টা ধরে ওয়াশ রুমে কি করছিস তুই?
– আমি চিঠি টা লুকিয়ে ফেললাম।তারপর দরজা খুলে বললাম,কিছুনা।এই বলে ঘরে এসে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলাম।বিয়ের পরদিন সকালে,আমাকে এভাবে কাঁদতে দেখে অনেকেই ব্যাপার টা স্বাভাবিক ভাবে নিচ্ছেনা। কিন্তূ আমার ও কিছু করার নেই।

অপেক্ষায় আছি সন্ধ্যা সাত টার জন্য।আরিফ আমাকে কেনো বাগানে দেখা করতে বললো,সেটা জানতে হবে।

চলবে…..
সালমা আক্তার

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে