#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০
পরম শ্রদ্ধেয় জাতির জনক,
সশ্রদ্ধ সালাম গ্রহণ করবেন। ‘কেমন আছেন?’ প্রশ্নটা অবান্তর কারণ আমার বিশ্বাস, শহীদের আত্মা আল্লাহ্ ‘র কাছে ফিরে গিয়ে জান্নাতি প্রশান্তিতে অবস্থান করেন। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান অনেক ভালো আছেন।
প্রিয় বঙ্গবন্ধু,
আমার জন্মের অনেক আগেই আপনাকে চলে যেতে হয়েছে এ পৃথিবী থেকে। আপনাকে স্বচক্ষে দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি, কিন্তু জ্ঞান হবার পর থেকেই আপনার সাথে পরিচিত হয়েছি মা-বাবার কাছে, জেনেছি বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসের সাথে আপনার অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের কথা। আপনার সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হবার মনোকষ্ট লাঘবের উদ্দেশ্যেই আজকের এই চিঠি লেখা। আপনার কাছে এ চিঠি কখনো পৌঁছাবেনা জেনেও লিখছি শুধু জাতীয় বীরকে না দেখতে পাওয়ার আক্ষেপ প্রকাশের উদ্দেশ্যে।
হে বিজয়ী বীর,
মাতৃভূমিকে ভালোবেসে যে স্বাধীনতার ডাক আপনি দিয়েছিলেন তা উদ্দীপনার জোয়ার এনেছিল তের কোটি বাঙ্গালীর প্রাণে। ” এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। ” – আপনার বজ্রকণ্ঠের এই আহ্বান ধ্বনিত হয়েছিল বাংলার আকাশে বাতাসে। মনে আক্ষেপ জাগে কেন আমি ছিলামনা তখন আপনার আন্দোলনের মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে দেশের মুক্তির লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে! সশরীরে উপস্থিত না থেকেও আপনি মিশে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের টগবগে রক্তে। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে মিশে ছিল আপনার উদ্দীপ্ত কণ্ঠের বাণী।
আপনার সাহিত্যিক সত্তার সাথে পরিচিত হলাম আপনার অমর লেখনী ‘কারাগারের রোজনামচা’ এবং ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ‘র মাধ্যমে। কত দরদের সাথে বন্দীদের জীবণধারাকে লিপিবদ্ধ করেছেন আপনি! ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ তে আপনি লিপিবদ্ধ করেছেন ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত আপনার জীবণের কথা। আজ আপনি আমাদের মাঝে থাকলে এর সম্পূর্ণ রূপ হয়তো আমরা পেতাম।
১৯৭২ সালে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর আপনি যেভাবে এই ভাঙাচোরা জাতির হাল শক্ত হাতে ধরেছিলেন তা অতুলনীয়। ধীরে ধীরে গড়ে তুলছিলেন আপনার সোনার বাংলা। কিন্তু কিছু লোভী রাষ্ট্রদ্রোহীর ষড়যন্ত্রের কারণে আপনাকে চলে যেতে হল। নিজের মানুষদের এমন কালো রূপ দেখে আপনার হৃদয়ে তখন রক্তক্ষরণ হয়েছিল, তাইনা?
আপনাকে স্বপরিবারে যারা হত্যা করেছিল তারা তো নরকের কীট। বাঙ্গালী জাতির এক কলঙ্কের অধ্যায় এটি। জাতি হিসেবে এ দায় আমাদের সবার। আপনার মহানুভবতা দিয়ে আমাদের ক্ষমা করুন।
ইতি
আপনার এক উত্তরসূরী।।