পতিতা মেয়ে part_9

0
1804

#পতিতা_মেয়ে
#writter_Tannoy_Hasan
#part_9

অনেকক্ষন পর আনিকা আবারও নিজেকে ছুটিয়ে নিল৷ঠিক তখনই আনিকা বলে উঠল
,
–আবিদ,তুমি সব সময় তোমার ওই বুকে আমাকে আগলে রাখবে তো?কখনও আমাকে ছেড়ে যাবে না তো?(আনিকা)
.
–এই সেইম প্রশ্নগুলো তো আমারও,
.
–আমি তোমাকে কখনই ছেড়ে যাবো না৷এক মাত্র মৃত্যু ছাড়া আমাকে তোমার কাছ থেকে আলাদা করতে পারবে না
.
–আমারও সেইম কথা৷
.
তখন আনিকা আবারও আমার কপালে একটা চুমূ দিল৷
.
একটু পর ডাক্তার এসে আমাকে ঘুমের ইংজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে চলে গেল৷আমার আর কিছুই মনে নেই৷
হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে গেল৷চারিদিকে একদম নিশ্চুপ৷হাতটা উঠাতে যাবো কিন্তু পারলাম না৷ঝাপসা ঝাপসা চোখেই ঝাপসা ভাবেই দেখতে পেলাম আনিকা আমার হাতটাকে তার মূখের ওপর রেখে আমার বেডের নিচেই শুয়ে আছে৷
ওকে মাত্র একটা ডাক দিতেই ও সজাগ হয়ে গেল৷
.
–আনিকা?
.
–কি?তুমি ঘূম থেকে কেন উঠছো?আর তোমার কি কিছু লাগবে?
.
–না,কিন্তু দেখো তো এখন কয়টা বাজে
.
–রাত ৩টা
,
–কিহহহ,তুমি এত রাতে এখানে কেন?বাসায় যাও নি?
.
–বাসা?কোথায় আমার বাসা?আমার বাসা তো তুমি৷তুমি যেখানে থাকবে,সেখানে আমিও থাকব
.
তখন বেড থেকে উঠতে চাইলাম কিন্তু উঠতে পারছিনা কেন?পা দুটো যেন শক্ত কোনো কিছুর সাথে বেধে রাখা হইছে৷গতকাল কি এমন ছিল না৷তাহলে আজকে এমন লাগছে কেন
,
–আনিকা দেখো তো,আমার পা কিসের সাথে বাধা?
.
–ফুপানোর আওয়াজ
.
–এই তোমাকে জিজ্ঞাসা করছি,আমার পা কোথায় বাধা,পা দুটো একদমই নাড়াতে পারছিনা,কিন্তু তুমি কান্না করছো কেন?
,
–পা দূটো এখন নাড়ানোর দরকার নেই
,
–কেন?
,
–আসলে
,
বলেই আবারও কান্না শুরু করে দিল
,
–আরে কান্না করছো কেন?বলবে তো আমার পায়ের কি হইছে?
,
–এক্সিডেন্টে তোমার দুটো পা ই ভেঙে গেছে৷আর এখন ব্যান্ডেজ করা আছে,তাই পা নাড়াতে পারছো না
,
কথাটা শুনেই কিছুক্ষনের জন্য নিঃস্তব্দ হয়ে গেলাম৷
গতকালও মনে করেছিলাম,হয়ত শরীর ব্যাথার কারনে পা নাড়াতে পারছিনা৷আর আজ আমি এটা কি শুনছি?আমার পা ভেঙে গেছে?
.
পোড়া কপাল আমার৷ছোটবেলায় মা বাবাকে হারিয়ে এতিম হয়ে বহুকষ্টে জীবনযাপন করলাম৷বড় হয়ে হলাম একটা বাজে ছেলে৷যখনই ভালো হতে চাইলাম৷ঠিক সেই মূহুর্তে কত ঝড় ছুটে আসলো আমার জীবনে৷চোখের সাথে যে পায়েরও এমন অবস্থা হবে,ভাবতেই পারিনি৷
ওপরের দিকে তাকিয়ে বললাম,,আল্লাহ,তুমি পারই বটে,তবে আমার আজ কোনো কষ্ট নেই৷সব কিছুর বিনিময়ে তুমি আমার পাগলিটাকে আমার বুকে ফিরিয়ে দিছো,এটাই আমার কাছে অনেক৷
,
**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**

–আবিদ,তুমি কান্না করোনা৷দেখবে আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে
,
–হয়তবা,কিন্তু আনিকা,আমার মনে হয় তোমার চলে যাবাই ভালো,আমার মত একটা অচল…..(আমার মুখে হাত দিয়ে কথা বলতে দিব না)
.
–দেখো আবিদ,উল্টা পাল্টা কথা বলবে না,এই একই কথা যদি আমিও বলি,যখন তোমার সব কীছু ঠিক ছিল,তোমার কোনো সমস্যা ছিল না,তখন আমার মত হতদরিদ্র একটা পতিতাকে কেন ভালোবেসেছিলে?একটা পতিতাকে এতটা ভালোবাসা পায়?
.
–যায়,মন থেকে চাইলে,সব কিছুই সম্ভব
.
–ঠিক একই কথা আমারও৷মন থেকে চাইলে একটা অচল মানুষকেও ভালবাসা যায়৷আর হ্যা তোমাকে আমি আবার আগের মত গড়ে তুলব৷তুমি একদমই ভেঙে পরবে না৷
.
কি বলব বুঝতেই পারছিনা৷এই ভালোবাসাটা যদি আগে দেখাতো,তাহলে হয়ত এত কিছু হত না৷তারপরও আমি সুখি,কারন ও তো আমাকে এখন ভালবাসে
.
–আচ্ছা আনীকা ঘুমীয়ে পড়ো
.
–তুমিও ঘূমাও
,
–দুজনেই শুয়ে পরলাম,কিন্তু দুজনেই জায়গাটা একদমই ভিন্ন,আমি শুয়ে আছি হসপিটালের বেডে,আর পাগলিটা শুয়ে আছে,অর্ধেক বসে৷মাথাটা আমার বেডের আমার মাথার সাইডে,আর শরীরটা হসপিটালের ফ্লোরে৷
.
গভীর রাত৷হয়তবা রাতটা প্রায় শেষ৷চোখে ঘূম নেই৷শুধু আনমনে তখণ আনিকার কথাই ভাবছি,মেয়েটার সুন্দর জীবনটা আমার মত একটা অচলের সাথে শেষ করে দিবে?
চাইলে তো,ওর জীবনটা ও এখন ভাল কহে সাজাতেও পারে কীন্তূ তা করছে না কেন?
তাহলে কি ভালোবাসার জোড়েই ও এমন করছে?
,
ভাবতে ভাবতেই ফজরের আযান৷আযান শুনে চোখটা বন্ধ করে ফেললাম আর ঘুমানোর মিথ্যা অভিনয় করলাম কারন আনিকা ইতিমধ্যেই জেগে গেছে৷ও উঠেই বাহিরের দিকে গেল৷আর একটূ পর আবারও ফিরে এল৷দরজাটা অফ করে ও বেডের একসাইডে চলে গেল৷চোখে ঝাপসা থাকার কারনে তেমন স্পষ্ট ভাবে দেখতে পারছিনা৷তবে যতটা বুঝতে পারছি ও হয়তবা নামাজ পরছে৷
,
কিছুক্ষন পরই আমার ধারনাটা ঠিক হলো৷কারন ও কান্না করছিলো আর আমার জন্যে আল্লাহর কাছে দোয়া করছিল৷
বার বারই বলছিলো,আল্লাহ,তুমি আবিদকে ভালো করে দাও,সুস্থ করে দাও৷দরকার পরলে আমার জীবন নিয়ে নাও,তবুও ওকে ভালো করে দিও,সুস্থ করে দাও
.
আনিকার কান্নাটা কেন জানি সহ্য করতে পারছিনা৷নিজের ঝাপসা চোখ দুখানা!আরও ঝাপসা হয়ে গেল৷একদন নিঃস্তব্দ হয়ে যাচ্ছি ওর এমন কীর্তি দেখে৷
.
হঠাৎই ওর নামাজ শেষ করে হয়ত আমার দিকে তাকিয়েছে৷আর আমাকে কান্না করতে দেখেই ও আমার কাছে আসল আর বলতে লাগল
.
–কান্না করছো কেন?খূব বেশি কষ্ট হচ্ছে তোমার?অনেক খারাপ লাগছে তোমার তাই না?দেখবে আল্লাহ ঠিক তোমাকে ভালো করে দিবে৷
.
–হুম(মাথা নাড়িয়ে)
.
–একদম কান্না করবে না,আমি তো তোমার পাশেই আছী,তাই না?
.

**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**

–হুম
.
–তূমি কান্না করলে যে আমার খূব কষ্ট হয় আবিদ,অনেক কষ্ট লাগে,নিজেকে অনেক বড় অপরাধি মনে হয়,প্লীজ কান্না করো না
.
কিছুই আর বললাম না৷একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে,চোখ দুটো বন্ধ করে রাখলাম৷
এভাবেই হসপিটালেই কেটে গেল প্রায় একটা মাস৷
এই একটা মাসে আনিকার সেবা,আর ট্রিটমেন্ট সব মিলিয়ে আমার অবস্থা খুবই ভালো৷তবে চোখে এখনও ঝাপসা দেখি৷চোখে ঝাপসা দেখলেও সব কিছু বুঝতে পারি৷আর পায়ের অবস্থাও অনেক ভালো৷হয়ত সামনের সপ্তাহে আমাকে বাসায় নেবার কথা বলেছে ডাক্তার৷
.
দেখতে দেখতে একটা সপ্তাহ কেটে গেল৷
এতগুলি দিন কেটে গেল বুঝতেই পারিনি৷আর বুঝবই বা কিভাবে?যার পাশে এমন একজন আছে,সে কষ্টে থাকলেও তো অনেক সুখি৷সত্যি বলতে এতগুলো দিন আনিকা আমাকে ছাড়া একটা মুহুর্তও আমার কাছ থেকে দুরে যায়নি৷ওর আম্মু সহ দুজনেই একের পর এক আমার সাথে সময় দিয়েছে৷সেবা করেছে৷আর আনিকার কথা কি বলব?সকাল থেকে শুরু করে আর রাত শেষ হওয়া অব্দি মেয়েটা আমার পাশেই থাকত৷অনেক উৎসাহ দিতে৷বার বারই বলত আবিদ,তুমি আবারও ঠিক হয়ে যাবে৷তোমার কিছুই হবে না৷
.
আজ আমাকে বাসায় নিয়ে যাবে৷এখনও পা ঠিক হয়নি৷তবে বাসায় নেওয়া যাবে আমাকে৷তাই আনিকাকে বললাম,এই চার দেয়াল ছেড়ে যেন ,আমাকে বাসায় নিয়ে যেতে৷আর তাই আমাকে বাসায় নিয়ে যাচ্ছে৷
পায়ে এখনও ব্যান্ডেজ৷
এমন অবস্থায় বেডে করে গাড়িতে করে আমাকে বাসায় নিয়ে যাচ্ছে
.
অবশেষে আবারও আমাকে বাসায় নেওয়া হলো৷আর আনিকার আম্মুও আমাদের সাথেই থাকবে৷ওহ ভালো কথা,আপনাদের তো বলাই হয়নি,আনিকার আম্মুকে আমাদের বিয়ের কথা বলে দিয়েছি৷আর উনি তখন আমাদের মেনে নেয়৷
.
যাই হোক আমাকে বেডে করেই আমার রুমে নেওয়া হলো৷রুমে নেওয়ার পরই সবাই চলে গেল৷আর আনিকার আম্মু তখন ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে যায়৷কিন্তু আনিকা তখনও আমার পাশেই দাড়িয়ে আছে৷
.
–আনিকা,দাড়িয়ে আছে কেন?আমার পাশে বসো
,
–হুম৷
.
**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**

–আচ্ছা আনিকা,তোমার বিরক্ত লাগে না?
.
–বিরক্ত?কিন্তূ কেন?
.
–এইযে এতটা দিন ধরে আমার মত একটা অচলের পাশে সময় দিচ্ছো?
.
–এই একদম উল্টা পাল্টা কথা বলবে না,তাহলে কিন্তু….
.
–আচ্ছা আর বলব না,একটু কাছে আসবে?
.
–হুম
.
আনিকা আমার কাছে আসতেই ওর কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিলাম৷
আর তখন আনিকাও আমার কপালে একটা চুমু দিয়েই বলে উঠল,,এই পাগলটাকে বড্ড বেশিই ভালোবাসি,অনেক বেশিই ভালোবাসি,খুব ভালোবাসি,,
.
ভালোবাসা কি জিনিস,হয়ত আনিকাকে আমার জীবনে না পেলে কখনই বুঝতে পারতাম না৷
মানুষ পতিতাদের ঘৃনা করে,কিন্তু মানুষগুলো কেন পতিতা হয়?হয় আমাদের মত কিছু মানুষদের জন্যই৷
তবে হ্যা,এসকল মানুষদেরকে ভালোবাসতে পারলে,কখনই বৃথা যাবেনা৷কারন তাদের জীবনে একটু ভালবাসার আলো ফুটাতে পারলে,তারাও সব কিছু ছেড়ে দিয়ে,সমাজকে,আপনার আমার জীবনকে সুন্দর করার আলোতে নিজেদের পরিনত করে৷
ভালোবাসি আনিকাকে,খুব বেশিই ভালোবাসি….
.
.
.
.
চলবে…….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে