পতিতা মেয়ে part_8

0
1755

#পতিতা_মেয়ে
#writter_Tannoy_Hasan
#part_8

চোখ খুলতেই কেমন ঝাপসা ঝাপসা দেখতে লাগলাম৷কিছুই ভালো করে দেখতে পারছিনা৷
চোখটা আস্তে আস্তে ঘুরাতে ঘুরাতে দেখলাম ,আমি কোনো হসপিটালে আছি৷কিন্তু আমি এখানে কেন?আর কেনই বা ভালো করে স্পষ্ঠভাবে কিছুই দেখতে পারছিনা?
ঠিক তখনই আপন কোনো মানুষের কান্নার আওয়াজ৷আর তার সাথে শুনতে পেলাম
,
–আবিদ,তোমার জ্ঞান ফিরছে?আবিদ তোমার কেমন লাগছে?আর সেদিন কি হইছে?(কান্না করতে করতে)
.
মাণুষটার দিকে তাকালাম কিন্তু চোখে ঝাপসা দেখার কারনে চেহারা বুঝতে পারছিনা৷তবে কন্ঠ শুনে বুঝা যায়,এটা আনিকা৷কিন্তু আমি ভালোভাবে দেখতে পারছিনা কেন?
ঠিক তখনই চিৎকার দিয়ে উঠলাম৷আর আমার মুখ থেকে আপনা আপনিই বের হয়ে গেল,
.
–আমি ভালো করে দেখতে পারছিনা কেন?সব কিছু এমন ঝাপসা লাগছে কেন?(আমি)
.
–কি বলছো আবিদ?তুমি ভালো করে দেখতে পারছো না?(কান্না করতে করতে)
.
–না,আমি কাউকেই ভালোভাবে দেখতে পারছিনা৷আমার চোখের কি হলো(কান্না করে দিলাম)
.
–না,তোমার কিছুই হতে পারেনা৷ডাক্তার,
ডাক্তার(চিৎকার করে)
.
ঠিক তখনই ডাক্তার এসে হাজির
,
–কি হইছে?আর রোগীর জ্ঞান কখন ফিরছে?(ডাক্তার)
.
–একটু আগেই ফিরছে৷ডাক্তার আবিদ ভালো করে কিছু দেখতে পারছে না কেন৷ওর চোখের কি হইছে?(কান্না করতে করতে)
.
–আসলে……….আচ্ছা আপনি আমার সাথে আমার চেম্বারে আসুন৷(ডাক্তার)
.
–ডাক্তার সাহেব,সমস্যা নাই৷আপনি এখানেই বলুন৷আমিও শুনতে চাই(আমি)
.
–আসলে আবিদ সাহেব,এক্সিডেন্টের সময়,আপনার মাথায় অনেকটাই আঘাত পরে৷কিন্তু তার চাইতে বেশি আঘাত পরে আপনার দুই চোখে৷চোখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে গিয়েছিল৷আর আপনার চোখে প্রচন্ড আঘাত পরার কারনে চোখের রেটিনা,কর্নিয়ার মারাত্মক ক্ষতি হয়ে গেছে৷যার কারনে আপনি ঠিকমত,ভালভাবে দেখতে পারছেন না৷
.
–না,এ হতে পারেনা৷ডাক্তার আপনি বলে দেন,ওর চোখ আবার আগের মত ঠিক হয়ে যাবে(আনিকা)
.
–দেখুন,আমি তো ভেবেছিলাম,ও আর চোখেই দেখতে পাবেনা৷কারন চোখের যেই ক্ষতি হইছে,তাতে যে উনি এখনও দেখতে পাবে,সেটা আমি নিজেও ভাবিনি৷তবে হ্যা ,যদি চোখ পাল্টানো যায়,তখন হয়ত ওনি চোখে পূরোপুরি দেখতে পারবেন৷তাও সিউর না
.
–(আনিকা উচ্চস্বরে কান্না করতে লাগল)
.
–আর একটা কথা,ওনাকে কিছু চোখের ড্রপস আর ঔষধ লিখে দিচ্ছি,এগূলো রেগুলার ঠিকঠিক মত,ব্যবহার করলে,হয়তবা চোখের আলো ফিরে আসতে পারে৷আর চোখের ট্রিটমেন্ট ঠিকঠাক মত চালাবেন৷
.
–হুম
.
–আর ওনার সাথে সবসময় একজন মানূষ থাকতে হবে৷এতে ওনার জীবন নাশের ঝুকি কমে যাবে
.
বলেই ডাক্তার চলে গেল৷ঠিক তখন আনিকা অনেক জোড়ে জোড়ে কান্না করতে লাগল৷আর বলতে লাগল
.
–সব দোষ আমার,আমারাজন্যই তোমার এই অবস্থা হইছে৷সেদিন আমার কারনেই তুমি রাতে উল্টা পাল্টা জিনিস খেয়ে টেনশন নিয়ে গাড়ি ড্রাইব করে নিজের এত বড় ক্ষতি করলে৷
কেন এমনটা করলে?(কান্না করতেই লাগল)
.
–দেখো আনিকা,যা হবার হয়ে গেছে,আসলে তোমার কোনো দোষ নেই৷সব দোষ আমার কপালের৷এটা নিয়ে মন খারাপ করো না৷বাসায় যাও৷গিয়ে রেষ্ট নাও
.
–বাসায় যাবো?
.
–হূম৷বাসায় গিয়ে তোমার আম্মুর সাথে সময় কাটাও৷এতে ওনার অনেক ভাল লাগবে৷
.
–না,আমি তোমাকে ছেড়ে যাবোনা৷আর মা অনেক ভালো আছে,
.
–হুম৷খুব ভালো৷তবে আমার কাছে তোমার থাকার দরকার নেই৷আমি একাই ভালো থাকব৷
.
–একা ভালো থাকবে মানে?ডাক্তার কি বলছে শুনছো?
.
–হুম৷তবে আমার পাশে তোমার থাকার দরকার নেই৷বেঁচে তো আছি,মরে তো আর যাই নি?
.
–প্লীজ আবিদ,এভাবে বলো না,কষ্ট লাগে,,
.
–কষ্ট?কষ্ট লাগবে কেন?আমি তোমার কে?যে তোমার কষ্ট লাগবে?
.
–আবিদ,তুমি আমার স্বামি৷আর তোমার সব কষ্টের জন্য আমার কষ্ট তো লাগবেই.,..
.
–এই আনিকা কি বললে এটা?স্বামি?????
আমি কারও স্বামি টামি না৷আর হ্যা,আমার কাছে না এসে,তোমার ভালোবাসার মানুষের সাথে সুখে সংসার করো(খুব কষ্ট লাগছিল,কথাগুলো বলতে)
.
–প্লিজ আবিদ,এভাবে বলো না,আসলে তুমি যেন,আমার মত একটা খারাপ মেয়ের সাথে লাইফে না জড়াও,সেজন্য সেদিন মিথ্যা কথা বলেছিলাম৷
.
–খূব ভালো করছো৷এখন তুমি আসতে পারো(মনের ভিতর চাপা কষ্ট রেখে)
.
–প্লীজ,আবিদ এমন করো না৷আর আমার কিই বা করার ছিল?একটা মেয়ের অনেক কষ্টের সঞ্চিত সম্পদ হলো,তার ইজ্জত,যেটা প্রত্যেকটা মেয়ে অনেক কষ্টে আগলে রাখে,আর তার স্বামির হাতে সেটা তূলে দেয়,আর আমার কাছে কিই বা ছিল?যেটা তোমাকে দিবো?আমি তো তোমার হক অক্ষত অবস্থায় রাখতে পারিনি৷আমি চাইনি তোমাকে ঠকাতে৷আমিতো একটা পতিতা৷আর পতিতাদের তো সংসার করা মানায় না৷যার কারনেই এগূলো বলেছিলাম৷
আবিদ আমাকে তুমি মাফ না ই করো,মেনে নাই নাও,তবুও তোমার এই সময়টাতে তোমার পায়ের নিচে আমাকে একটু ঠাই দাও,
.
বলেই মেয়েটা অনেক কান্না করতে করতে পায়ে পড়ে গেল৷আর অনেক ফুপাতে ফুপাতে কান্না করতে লাগল৷
পূরো শরিরটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে৷শোয়া থেকে তখনও উঠতে পারিনি৷আর আনিকার এমন কীর্তি দেখে ,আমার ঝাপসা চোখ গুলো আরও বেশিই ঝাপসা হয়ে গেল৷
.
চাইলেই আনিকাকে আজ অনেক কিছু বলতে পারতাম৷কারন তার একটা মিথ্যা কথার জন্যই আমার আজ এই অবস্থা৷সেদিন রাতে এত ড্রিংক না করলে ,হয়ত আজ এমন হতো না৷
কিন্তু আনিকাকে কিছুই বলতে পারলাম না৷কারন ভালোবাসার টান যে এতটা ভয়াবহ,যেটা সত্যিকারের প্রেমিক ছাড়া আর কেউ অনুভব করতে পারেনা৷
.
–আনিকা পা ছেড়ে দাও,আসলে কি বলব বুঝতেই পারছিনা৷সেদিন তুমি তোমার অবস্থানের কথা চিন্তা করে,আমার কাছ থেকে দুরে সরে গিয়েছিলে৷আজ যদি আমি আমার এই করুন অবস্থার কথা চিন্তা করে,তোমাকে আমার জীবনে আর নাই জড়াই?
.
কথাটা বলতেই আনিকা চিৎকার দিয়ে কেদে উঠল৷
.
–প্লিজ আবিদ,এমনটা করো না৷দরকার পড়লে তোমার যত প্রকার শাস্তি আছে,সব আমাকে দাও!তারপরও এমন করো না৷আর তুমি হয়ত জানোনা,তোমার বুকে মাথা না রাখলে,এখন আর ঘূমই আসেনা৷খূব কষ্ট হয়,বুক ফেটে কান্না আসে,অসহ্য মরন যন্ত্রনা লাগে,এই গূলোর একটাই কারন আমিও যে তোমায় ভালোবাসি.কিন্তু নিজে একটা পতিতা বলে,সেগূলো প্রকাশ করতে কখনই সাহস পাইনি৷প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিও না৷আমাকে না হয় তোমার এই দিনগূলোতে তোমার পাশে থাকার সুযোগ দাও,তুমি সুস্থ হলে,না হয়,আমাকে তাড়িয়ে দিও,কিন্তু প্লিজ আমাকে এখন তোমার পাশে থাকতে দাও.
.
বলেই আনিকা গলাকাটা মুরগীর মত ছটফট করতে লাগল৷আর কান্নার পরিমান আরও বাড়িয়ে দিল৷
.
কি করব বুঝতে পারছিনা৷আমার এই অবস্থা দেখে,যে মেয়ে আমার পাশে থাকতে চাচ্ছে,সে মেয়ে নিঃসন্দেহে আমাকে ভালোবাসে৷
.
–আচ্ছা আনিকা,আমার শরীর ভালো হলে,তুমি চলে যাবে তো?
.
একটু নিরবতা পালন করে,বলে উঠল
.
–তুমি যদি,চাও,তুমি সুস্থ হলে,আমি চলে যাই,তাহলে তাই হবে
.
–এক্কেবারে থাপ্পর দিয়ে দাত ফেলে দিব,তাহলে আসারই দরকার নেই৷যদি সারাজীবনের জন্য আমার কাছে আসতে পারো,তাহলে এসো,আর যদি না পারো,ক্ষনিক সময়ের জন্য আসার দরকার নেই৷
.
–আমি রাজি,কখনই তোমাকে ছেড়ে যাবোনা৷জীবন থাকতে তোমাকে একা করব না
.
–হুম৷আর আমাকে অনেক ভালোবাসতে হবে কিন্তু
,
–নিজের চাইতেও বেশি ভালোবাসব তোমায়৷
.
–হুম
.
–একটা কথা বলব?
,
–হূম৷
.
–তোমার শরীরে খুব ব্যাথা করছে,তাই না?
.
–হুম
.
–যদি অনুমতি দাও,তাহলে তার অর্ধেক ভাগ আমি নিবো
.
–কিভাবে?
.
–আগে অনুমতি দাও
,
–হুম দিলাম
.
এরপর কি হলো বুঝতেই পারলাম না৷কারন কিছু বুঝে উঠার আগেই আনিকা আমার মাথার পাশে এসে বসল৷আর আমার মাথার পাশে বসেই,ওর ঠোট আর আমার ঠোট এক করে নিল৷
.
এই প্রথম আনিকা নিজ ইচ্ছায়,আমার সাথে এমন করায় খুব অবাক হয়ে গেলাম৷একটু পর ও নিজেকে ছাড়িয়ে বলল
.
–এখন কি কিছুটা কমছে
.
–কমেনি,উল্টো বেড়ে গেছে
,
–কিহহহহ
.
–মনের ভিতর খা খা শুরু হয়ে গেছে৷
,
–কেন
.
–যদি,আরও কয়েকটা পাওয়া যেত,তাহলে খুব ভালো হতো
.
–যাও দুষ্টু কোথাকার
.
–দাও না,
.

–প্লীজ,
.
তারপর আর কি?আনিকাকে নিয়ে চলে গেলাম ভালোবাসার রাজ্যে৷শরীরে ব্যাথা,অসুস্থতা যে কোথায় হারিয়ে গেল,সেটা অজানাই রয়ে গেল৷
,
,
.
চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে